Friday, November 9, 2012

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারঃ কবীর চৌধুরী , মার্চ ১৯৯৪





বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ, সুখ্যাত লেখক, ব্যতিক্রমী অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী গেল ১৩ ডিসেম্বর'১১, ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিস্ময়কর এক সৃষ্টিশীল মানুষ।

মাসে (আজ থেকে প্রায় আঠারো বছর আগে) জাপান সফরের সময়, মাসিক মানচিত্র'র জন্য তাঁর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন -টোকিওর লেখক-সাংবাদিক সজল বড়ুয়া। আমরা কৌতূহলি পাঠকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, আবারও সেই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করছি। -সম্পাদক, কমিউনিটি।



'ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে টোকিও এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক, সুখ্যাত প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর কবীর চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রায় ৮০টি গ্রন্থের লেখক প্রফেসর কবীর চৌধুরীকে ১লা মার্চ '৯৪ এশিয়া বুনকা কাইকানের ৭০৭ নম্বর কক্ষে স্বাধীনতাত্তোর ও সমকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। একই সময়ে আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন জাপানের জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকীর সম্পাদিকা মায়ুমি মুনাকাতাও। টেপ-রেকর্ডারে ধারণকৃত প্রফেসর কবীর চৌধুরীর সাক্ষাৎকারের সারাংশ নিম্নরূপঃ

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান করুণ অবস্থা যেমনঃ সন্ত্রাস, সেশন জট, পড়াশুনার প্রতিকূল পরিবেশ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

কবীর চৌধুরীঃ সন্ত্রাস, মারপিট গোলাগুলি প্রায়ই হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এ ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত -সরকার, অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে অধ্যাপক মহলেরও যে ত্রুটি নেই -এমন কথা বলা যায় না। আগের দিনে অনেক অধ্যাপক ছিলেন, যাঁদেরকে অকৃত্তিমভাবে শ্রদ্ধা করা যেত। সে রকম শিক্ষকের সংখ্যাও আজকাল কমে এসেছে। তবে একটি কথা আমি বলবো -দোষ অনেকের থাকলেও, এর দায়-দায়িত্ব সরকারের। সরকার আন্তরিকভাবে যে কোন দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করলেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চয়ই অতি অল্প সময়েই ফিরে আসবে।

* বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা নীতি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

ক.চৌ.: খুব একটা সামঞ্জস্য আছে বলে, আমার মনে হয়না। দীর্ঘকাল ধরেই আমরা অনেকে শুধুমাত্র মুখে বলে যাচ্ছি 'জীবিকার সাথে সংযুক্ত করতে না পারলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবেনা।' কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোন উদ্যোগ বা প্রয়োগ নেই। ড. কুদরত-ই-খুদার শিক্ষা নীতি বিভিন্ন কারণে অবহেলিত হয়েছে বাংলাদেশে। চালু হয়েছে নতুন নতুন আজগুবি সব শিক্ষা পদ্ধত। সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, 'A' লেভেল, 'O' লেভেল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আমার নিজের বিবেচনায়, এগুলোর খুব একটা শুভ দিক নেই।

* একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবীদের 'মুক্তবুদ্ধি চর্চা'র ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.: খুব একটা অসুবিধে আর নেই। কারণ, আজকাল বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারছেন। লিখতেও পারছেন নানান বিষয়ে। তবে মৌলবাদীদের যদি সরকার আরো কঠোর ভাবে প্রতিহত করেন তাহলে তাঁদের জন্য ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে ওঠে। আর যেটুকু প্রতিবন্ধকতা আছে, আমি বলবো, অনেকের ক্ষেত্রে তা স্ব-আরোপিত। নাম সর্বস্ব সুবিধাবাদী অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ব্যক্তি-স্বার্থের কারণে মাঝেমাঝে দল পরিবর্তন করেন। নিজেদেরকে অনেক সময় তারা বিতর্কিত করে তোলেন - অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তারপরও কিছু বুদ্ধিজীবী তো আছেন, যাঁরা আমাদের সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছেন। তাঁদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রতিকূল পরিবেশে নির্ভয়ে লিখে যাচ্ছেন -ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে। দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার অনুকূলে তাদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

* প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার ২৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি। এ প্রসঙ্গে আপনার নিজস্ব মন্তব্য জানতে চাই।

ক.চৌ.:মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক মূল্যায়ন দীর্ঘকাল বাংলাদেশে হয়নি এটা ঠিক। '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর থেকে, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপরিকল্পিতভাবে মলিন করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি তারা বিভেদও সৃষ্টি করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা বড় আদর্শ ছিলো 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। কিন্তু, 'ধর্মনিরপেক্ষতাকে লালন করলে ইসলাম বিপন্ন হবে' এই ভাওতাবাজি দিয়ে '৭৫ পরবর্তী সময়ে 'ইসলাম ধর্ম'কে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপ দেয়া হলো। ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ 'গণতান্ত্রিক চেতনা'কে। আমরা মুখে শ্লোগানের মত বলছি বটে, 'গণতন্ত্রের কথা'। কিন্তু প্রশাসনকে দলীয়করণ করে, গণতান্ত্রিক চেতনার তো বিকাশ হয় না। অথচ বর্তমানে প্রশাসনকে নিষ্ঠুরভাবে দলীয় করণ করা হচ্ছে -এটা বি.এন.পি.র অনেক প্রভাবশালী নেতারাও অগোচরে বলছেন। এসবই তো মুক্তিযুদ্ধের অবমূল্যায়ন। তবে আশার কথা এই যে, গত পাঁচ সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর লেখা হয়েছে। 'প্রজন্ম ৭১' নামে একটি সংগঠনও সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর আগে। এসবকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফসল বলা যায়। তাই সব মিলিয়ে বলবো -ব্যাপকভাবে না হলেও একেবারেই যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি, তা ঠিক নয়।

* স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপরিচালনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ভুল কি আপনার চোখে পড়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সবদিক দিয়ে সঠিক ছিলেন, তা নয়। সাধারণতঃ স্বাধীনতার পর তাঁর সাধারণ ক্ষমার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত্পক্ষে ঐ সময় সকলকে তিনি নির্বিচারে ক্ষমা করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে (যেমন লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, হত্যার পেছনে চক্রান্ত) তারা এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেনা। অন্যদিকে এটাও সত্য যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে শেখ মুজিব যদি সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তখন হয়তো তাঁকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখিও দাঁড়াতে হতো। আমার মনে হয়, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে এই দিকটাও তিনি ভেবে দেখেছিলেন। তারপরও তিনি যদি সে সময় সারা দেশের চিহ্নিত কিছু ঘৃণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ গতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তাহলে হয়তো আজ এই ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ আর থাকতো না। এটা তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমি বলবো। বঙ্গবন্ধুর আরেকটা ভুল দিক হলো, তিনি 'বাকশাল' গঠন করেছিলেন বটে, কিন্তু বাকশালের নীতি-আদর্শকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে কোন ক্যাডার তৈরী করলেননা। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাঁর উচিত ছিল প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিষ্ঠিত করা। এসবই শেখ মুজিবের ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে যেহেতু ভুলের কথা উঠেছে, পাশাপাশি তার অসংখ্য গুণের কথাও আংশিকভাবে না বল্লে নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান পেয়েছিল। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের পর অতি দ্রুত ভারতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আদেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ কর্মতৎপরতায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি মোটামুটিভাবে দাঁড়ানোর মত একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মত্যাগ ও অবিস্মরণীয় অবদান চিরকাল কী উজ্জ্বল হয়ে থাকবেনা?

* '৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জননিন্দিত ও ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে দয়া করে কিছু বলবেন কি?

ক.চৌ.: মুজিব হত্যার ১৯ বছর পর আমি মনে করি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পটভূমিকা আজ আর কারো অজানা নেই। স্বাধীনতার পর জামায়াতীরা বলতে গেলে, প্রায় ইঁদুরের মত গর্তে ঢুকে গিয়েছিলো। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রশাসন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করা হয়। শাহ্ আজিজের মত স্বাধীনতা-বিরোধী একজন জঘন্য পাপিষ্ঠকে বানানো হয় 'প্রধানমন্ত্রী'। সত্যিকারভাবে এর সূত্রপাত ঘটে ৭৫ এর পরে সরকার ও প্রশাসনের বলিষ্ঠ সহযোগিতায়। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে আমরা নরঘাতক গোলাম আযমের বিচার দাবী করছি। অথচ তার জন্য দেশদ্রোহী হিসেবে মামলা দায়ের করা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এমন কি এখনো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসে আছেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও জামায়াতীদের দৌরাত্ম্য এবং বর্তমান কালের এই ধরনের অপকর্মের পরিকল্পনা তো শুরু হয়েছিলো শেখ মুজিব হত্যার পর থেকেই।

*স্বদেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা সর্বসমক্ষে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এ পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নিয়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধুর ওপর আমরা ইংরেজি ও বাংলায় বেশ কিছু বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অডিও ও ভিডিও ক্যাসেটও বের করা হয়েছে। চেষ্টা করছি, একটি যাদুঘরও নির্মাণ করার জন্য। তবে as a symbol of liberty অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে আমরা শেখ মুজিবের ওপর কাজ করে যাচ্ছি। তারই পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতির লক্ষ্যেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ম্যালা পরিকল্পনা রয়েছে।

* বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালের প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে, দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?

ক.চৌ.: আপাতঃ দৃষ্টিতে মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতি মনে হলেও, আমার মনে হয়, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ভবিষ্যত প্রায় অন্ধকার। মৌলবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, রগকাটা, নরহত্যা, বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চালিয়ে গেলেও, প্রকৃতক্ষে দিন দিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে -তাদের বিরুদ্ধে। তারা মুখে যতটুকু লাফালাফি করে, কার্যক্ষেত্রে তাদের দৌড় তত নয়। বরং বলা যায়, বিপরীত দিকে মৌলবাদ- বিরোধী চেতনাই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মৌলবাদীদের ফ্যাসিস্ট চিন্তাধারা ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বিশেষ করে, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে হামলা ও নারকীয় হত্যাকান্ড, অশিক্ষিত অসহায় মানুষের ওপর তথাকথিত ইসলামী আইন কানুন আরোপ ইত্যকার অমানবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার ও আইন কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হওয়া উচিত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে যদি সরকার এ ব্যাপারে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেয় বা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়, তবে নিঃসন্দেহে বর্তমান ক্ষমতাসীন বি.এন.পি. ও বাংলাদেশের বিপর্যয় অচিরেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।

* বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.:অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বল্লে অত্যুক্তি করা হবেনা। বৈদেশিক বিনিযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, বলা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম খুব একটা না বাড়লেও, প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য আংশিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও, অধিকাংশ লোকই তার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেনা। কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আশাতীত ফসল উৎপাদিত হয়েছে, বলা যায়। অথচ তারপরও সেই কৃষকরাই পাচ্ছেনা তাদের উপযুক্ত মূল্য। আর বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে -দারিদ্র সীমার অনেক নীচে। আজকাল বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, বেসরকারী সংস্থা অর্থাৎ N.G.O. রাই সরকারের ভূমিকা নিয়ে, নানান প্রতিকূল অবস্থায় সাফল্যজনকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বলবো, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারেরও উচিত -এন.জি.ও.দের কর্মপদ্ধতি অনুসারে বিভিন্ন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহন করা।

* বর্তমান সরকার ও তার মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছেন 'দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে, বৈদেশিক বানিজ্যের বিভিন্ন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে' -একজন অভিজ্ঞ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।

ক.চৌ.: আমি আগেও বলেছি বর্তমান সরকারের অতঃপতনের একটা বড় কারণ হচ্ছে -'ক্রমাগত নির্লজ্জ মিথ্যাচার'। এটা ফ্যাসিবাদীরও একটা লক্ষণ। সরকার ও তার মন্ত্রীবর্গ দেশ-বিদেশে বড় গলায় বলে বেড়াচ্ছেন -বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমে গেছে ও বৈদেশিক বানিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। আর তারই সাথে বাড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগও। আমার জানা মতে, প্রকৃত অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান সরকার বলতে গেলে, বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ এর প্রেসক্রিপশন অনুসারেই কাজ করছে। আসলে ঐসব সংস্থাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে তারা সে পরিমানই ঋনদেবে যাতে সোমালিয়ার মতো একটি দুর্ভিক্ষ দেশে সৃষ্টি না হয়, আর কোন রকমে মানুষ 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থায় যেনো বেঁচে থাকতে পারে। বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে তারা ব্যবহার করবে বাংলাদেশকে। সৃষ্টি করবে নিজেদের পণ্যের অবাধ বাজার। এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র 'আশার ফানুস' হিসেবেই মানুষের চোখে ভাসবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই অস্থিতিশীল ও করুণ অবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন কোনদিনই আসবেনা বাংলাদেশে।

শেষের কথাঃ

[দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমি বিদায় নেয়ার ঠিক অল্প আগে প্রফেসর কবীর চৌধুরী বিনীত কন্ঠে বললেন- "বাংলাদেশের সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে তুমি আজ আমার কাছে এই দূর প্রবাসেও অনেক কিছুই জানতে চেয়েছো। আমার স্বল্পজ্ঞানের আলোকে আমি চেষ্টা করেছি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সচেতন বাঙালীদের কাছে তুলে ধরতে।" প্রতিত্তরে আমি তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ফুলেল অভিনন্দন জানালাম।

ফেরার পথে কবীর স্যারের একটা কথাই বার বার মনে আসছিল শুধু -'আমার সল্পজ্ঞানের আলোকে.....।' আমি নিজেই এ কথা ভেবে মৃদু হাসলাম মনে মনে। "সাগরের গভীরতা বিশাল। অথচ সাগর কী জানে তার সেই গভীরতার কথা"! মিনিট পাঁচেক কথা না বলায় আমার হাসি দেখে মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নিরবতা ভাঙলো সঙ্গী মায়ুমি। 'কি ব্যাপার? হাসছো যে! বাংলাদেশের কি কোন সুসংবাদ শুনেছ?' সুসংবাদ! বাংলাদেশের!! বুকটা আমার ব্যথায় ভরে উঠলো এই বিদেশীনীর সামনে। মায়ুমিকে পাশাপাশি রেখে চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলাম সুগামো ষ্টেশনের দিকে। বাংলাদেশের সুসংবাদ!!! কী বলবো এ ব্যাপারে একজন জাপানি সাংবাদিককে?]' কমিউনিটি নিউজ, জাপান

একান্ত আলাপচারিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতা বিভাস ভট্টাচার্য: পৈতৃক ভিটে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়।


http://community.skynetjp.com/index.htm




দীপক রায়, কলকাতা, ভারত ।।

১৬ই আগষ্ট সুকান্তের ৮৭ তম জন্মদিন পালন হয়েছে সাড়ম্বরেই। কিন্তু প্রচারের বৃত্তের বাইরে থাকা সুকান্তের পরিবারের খোঁজে গিয়েছিলাম। সেই বিখ্যাত কলকাতার বেলেঘাটার হরমোহন ঘোষ লেনে বিকেলটা কাটালাম সুকান্তের অনুজ বিভাস ভট্টাচার্যের সাথে। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এলো নানা অজানা কথা। ৮৪ বছর বয়সী বিভাস ভট্টাচার্য, তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্য জানালেন সেইসব কথা। যার পৈতৃক ভিটে রয়েছে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়। কিন্তু বার্ধক্যের কারনেই আর যেতে পারবেন না ভেবে যন্ত্রনা পান তিনি। যন্ত্রনা পান তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্যও।

টানা দুই ঘন্টা ধরে বিভাস ভট্টাচার্য একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য অভাবে, অনাহারে মারা গিয়েছেন, এটা সত্য নয়। শরীরের প্রতি যত্ন না নিয়ে অবিরাম কমিউনিস্ট পার্টি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজ করতে গিয়েই তার দেহে বাসা বেধেছিল দুরারোগ্য ক্ষয়রোগ, যার থেকে আর মুক্তি পাননি তিনি। একুশ বছর পুর্ন হবার আগেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি দেশের স্বাধীনতাও দেখে যেতে পারেননি তিনি।

সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন মারা যান, তখন বিভাস ভট্টাচার্যের বয়স ছিল ১৮ বছর। ফলে সুকান্তের সব স্মৃতিই তার মনে আছে। তিনি জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যই তাকে রাজনীতিতে এবং কিশোর বাহিনী সংগঠনে এনেছিলেন। তবে তিনি সুকান্তের মত সর্বক্ষনের পার্টি কর্মী ছিলেন না। তিনি পারিবারিক প্রকাশনা ব্যবসার সাথে যুক্ত থেকেই রাজনীতি করে গিয়েছিলেন। তাদের পরিবার ছিল পুরোদস্তুর রাজনীতির পরিবার। পুরানো দিনের সেইসব স্মৃতি অনর্গল বলে গেলেন তিনি।

ভাবলে অবাক হতে হয়, এখনো ছোট্ট একতলা বাড়িতেই সাধারন মানুষের মত বাস করে এই পরিবার। সুকান্তের পরিবার বলে অবশ্যই গর্ব আছে, কিন্তু কখনো সেটাকে নিয়ে প্রচারের আলোয় আসেননি তারা। তার নাতি ছোট্ট রূপায়ন ভট্টাচার্য ঘরে টাঙ্গানো সুকান্তের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে জানালো সে সুকান্তকে "ভালো দাদু'' বলে ডাকে। সুকান্ত যে কারো দাদু হতে পারে এটা আগে কখনো ভাবিনি। আলাপচারিতার মাঝেই চা-বিস্কুটে জমে উঠল গল্প। তার মতে সুকান্ত রাজনীতিতে এসেছিলেন সেই সময়ে বিশ্বযুদ্ধের কারনেই। সেই ঘটনা তাকে রাজনীতি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজে বিলিয়ে দিয়েছিল।

বর্তমান সরকারের পাঠ্যসূচি থেকে সুকান্তের কবিতা বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। তার মতে, এতে কিছু যায় আসে না। তিনি জনতার কবি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। মানুষের ভালোবাসা কেউ আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করে সংস্কার করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফরিদপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানান।

তবে তার একটি ক্ষেদ এখনো রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি যদি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করতে পারে, তাহলে কেন ভারত সরকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৩৪ নং হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িটি অধিগ্রহন করে সংস্কার করবে না। সেটি এখনো ভাঙ্গা হয়নি। অধিগ্রহন করা এখনো সম্ভব।

পড়ন্ত বিকেলে, বৃষ্টির মাঝে তার আলাপচারিতা ভিত্তিক সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুকান্তের নাতি, সুকান্তের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রূপায়নকে দেখে মনে হল সুকান্ত তো এমন বয়সেই আগুন ঝরানো সব কবিতা লিখতেন। বৃষ্টি থামতেই বেরিয়ে এলাম। বাইরে রাস্তার ধারে সুকান্তের আবক্ষ মুর্তি হাসি মুখে বৃষ্টিস্নাত। তার গলায় ঝুলছে জন্মদিনে দেওয়া ফুলের মালাগুলি। কমিউনিটি নিউজ, জাপান


Thursday, November 8, 2012

৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী গ্রেপ্তার





ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীকে একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. শাজাহান নামের এক ব্যক্তি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কয়েকদিন আগে আদালতে সালাহ উদ্দিন শোয়েবের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ খান থানা পুলিশ।সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২০০৩ সালে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে বিমানবন্দর থেকে বিদেশি পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার এর সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোকে জড়িয়ে ব্লিটজে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পুরো উপমহাদেশে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে সেই খবর ফলাও প্রচার পায়। হিনার স্বামী ফিরোজ গুলজার ওই প্রতিবেদনকে স্রেফ কুৎসা বলে উড়িয়ে দেন। উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। এর এক দিন আগে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) জানান, বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে হজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার


চট্টগ্রাম, নভেম্বর ০৮ - চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ইসলামী ছাত্র শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেনকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি সাজ্জাদ আলী খানের গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) বনজ কুমার মজুমদার ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার তারেক আহমেদ জানান,বুধবার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হলে বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানান তারেক আহমেদ।

২০০০ সালের জুলাই মাসে বহদ্দারহাটে একটি চলন্ত মাইক্রোবাসে গুলি করে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজনকে সাজ্জাদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের এপ্রিলে সাজ্জাদকে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে সাজ্জাদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরো তিন শিবির কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্র আইনের আরেকটি মামলায় ১০ বছরের জেল হয় সাজ্জাদের। তার বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে বসেই নগরীর পাঁচলাইশ, চালিতাতলী, অক্সিজেন, মুরাদপুর, চকবাজার, বায়েজিদ, হাটহাজারীসহ বিশাল এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। তার নামেই এসব এলাকায় এখনো ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চলছে। এ কাজে সাজ্জাদ এলাকার উঠতি যুবকদের ব্যবহার করছিলেন বলে নগর পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তবে সাজ্জাদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারিক আহম্মদ খান বলেন, “সাজ্জাদের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। বিশেষত জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এ চাঁদাবাজিটা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেলেও কেউ সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেননি।”
এ বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে গুলি চালান একদল ক্যাডার। এ সময় তারা চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় অনেকদিন পর আবারও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নাম আলোচনায় উঠে আসে। নগর পুলিশ কর্মকর্তারাও সাজ্জাদের বিষয়ে তৎপর হন। পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রায় এক দশক দুবাই ছিলেন সাজ্জাদ। সেখানে বাঙালি এক তরুণীকে তিনি বিয়ে করেন। পরে বাঙালি স্ত্রীকে সন্তানসহ দেশে পাঠিয়ে ভারতের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে ভারতে যান তিনি।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে তার সহযোগীরা ব্যাপক অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। জমির মালিকদের কাছ থেকে বিক্রির সময় টাকা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতার কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন সাজ্জাদ বাহিনীর ক্যাডাররা।গত বছরের আগস্টে সাজ্জাদের দুই সহযোগী সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বায়েজিদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম।

নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী উপজেলার সঙ্গে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।ওই এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)‘অনন্যা’ নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে।

মূলত সংযোগ সড়ক এবং আবাসিক এলাকা পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার দৃশ্যপট। বর্তমানে ওই এলাকায় জমির দাম বাড়ছে। এতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ওই এলাকায় জমি কেনাবেচা নিয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেন। ফলে ওই এলাকায় জায়গা জমি কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে একটি চক্রও গড়ে ওঠে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদ সর্বশেষ ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর বন্দুকযুদ্ধের পর তার সহযোগী ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার দেলোয়ার হোসেন ওরফে আজরাইল দেলোয়ারসহ নগরীর চালিতাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে পুলিশ একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে।

তিন বছর জেল খেটে দেলোয়ারের আগেই সাজ্জাদ ২০০৪ সালে জামিনে মুক্তি পান।৫৪ ধারায় আবার গ্রেফতার এড়াতে কুমিল্লার জামায়াতের তৎকালীন সাংসদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের গাড়িতে করে জেলগেট থেকে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।২০০৪ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মুখে তৎকালীন জোট সরকার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পর  দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খান দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খুন হন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলী। লিয়াকত হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় সাজ্জাদ ও আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জসিম উদ্দিন ওরফে ফাইভ স্টার জসিম। মূলত এ ঘটনার পরই অপরাধ জগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সাজ্জাদের নেতৃত্বে মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের ৬ নেতা সহ ৮জনকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। আলোচিত এইট মার্ডারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিবিরের আরেক ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে গিট্টু নাছির এবং ফাইভ স্টার জসিম পরবর্তীতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ২০০৫ সালে আজরাইল দেলোয়ার জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ আজরাইল দেলোয়ার নিহত হয়।
এরপর নিজের দল জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শক্তিশালী অংশীদার হলেও পরিস্থিতি প্রতিকূল মনে করে  সাজ্জাদ আর দেশে ফেরেননি।০৮/১১/২০১২

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলবে বাংলাদেশ-দীপু মনি


ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। সকাল ১১টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীপু মনির সঙ্গেও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠক করবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি বলেন, “বৈঠকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের দাবি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আবারো তুলে ধরব আমরা।”

একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাসহ আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়া এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের হিস্যা পাওয়ারও দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি বিশেষ বিমানে করে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা পৌঁছাবেন হিনা রাব্বানি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বেলা ১২টায় গণভবনে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডি-এইট সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবেন তিনি।

আগামী ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে ডি-এইটভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের এই সম্মেলন শুরুর কথা রয়েছে।

সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বেলা ৩টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে পাকিস্তানি মন্ত্রীর। এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর হিনার ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদে গত চার বছরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেছেন। এছাড়া ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়।

Sunday, October 28, 2012

‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন"- বাঙালি মুসলমানের প্রতারণা



নিউইয়র্ক থেকে:কোরবানির ঈদের দিনেও কয়েকজন বাঙালি মুসলমানের প্রতারণায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে। অনেকের খুশির ঈদ ম্লান হয়েছে। অনেকেই গরু কিনেও কোরবানির দিনে কোরবানি করার জন্য গরু খুঁজে পাননি। ফলে তারা আর কোরবানি দিতে পারেননি।

কোরবানির দিনে দেখা গেছে, একই কোরবানির গরুর মালিক একাধিক। এমনও দেখা গেছে, জবাই করবেন বলে এক পক্ষ গরু দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে, আরেক পক্ষ এসে বলছেন, ‘‘এটা আমাদের গরু, আপনারা বাঁধছেন কেন?’’ ঠিক সেই সময়েই তৃতীয় পক্ষ এসে বাঁধা গরুটি জবাই করে নিয়ে চলে গেলো গায়ের জোরে।

এ নিয়ে বাদানুবাদও বেঁধে যায় কোরবানিদাতাদের মধ্যে। অনেকেই গরু কোরবানি দিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতে। আবার অনেকেই সারাদিন অপেক্ষা করে ফার্মের মালিক যা দিয়েছেন তাই নিয়ে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে মধ্যরাত পর্যন্তও সেখানে গরু জবাই করতে দেখা গেছে।

এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটে ল্যারি সামস নামক এক ব্যক্তির ফার্মে। জানা গেছে, ঈদের দিনে মুসলিম নামধারী কিছু লোক নির্ধারিত সময়ের আগেই ফার্মে গিয়ে সবচেয়ে বড় বড় কোরবানির গরু তাদের কেনা বলে দাবি করেন! ফার্মের মালিক ল্যারি সামস দুর্বৃত্তদের কথামতো গরুগুলো জবাই করে দেন। কিন্তু তারা

কোরবানির মাংস নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন মালিককে পাওনা টাকা না দিয়েই। পরে গরুগুলোর প্রকৃত ক্রেতারা সেখানে এলেও গরু খুঁজে না পাওয়ায় ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

কোরবানির ঈদের দিন বিকেলে ফার্মের মালিক ল্যারি, তার স্ত্রী ও মেয়েকে কাঁদতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফার্মের কর্মচারী, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে চোখ মুছতে দেখা যায়। ল্যারির মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘দেখুন, আমার বাবা খুব মর্মাহত ব্যাপারটি নিয়ে। আমরাও দুঃখিত খুব। আমরা পরিবারের সবাই আজকে এখানে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিলাম কোরবানি ঈদ উপলক্ষে। এখানে আমরা সবাইকে খাবার, স্ন্যাক্স, পানি ফ্রি খাইয়েছি। বাচ্চাদের জন্য খেলার পার্ক দিয়েছিলাম আমাদের নিজ খরচে। আর দেখুন বিনিময়ে আমরা কি পেলাম? আমরা আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’’

ঈদের পরের দিনও সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেখানে কোরবানি দিচ্ছেন। আবার অনেকেই আগের দিনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া মানুষ, যারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। সাংবাদিকদের দেখে তারা ছুটে আসেন এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। তারা অনুরোধ জানান, সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করার জন্য; ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। এদিনও ফার্মের মালিক ল্যারি সামসকে বিষণ্ণ দেখায়।

‘‘কেউ এসে বললেন, গরুটি আমার আর আপনি তা কেটে দিয়ে দিলেন কেন? কেন আগে টাকা নিলেন না?’’ এমন প্রশ্ন করলে ল্যারি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষ। পারলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি, না পারলে চুপ থাকি। কোনো মানুষ ঈদের দিনে যা আল্লাহকে কোরবানি দেবেন সেটা নিয়েও প্রতারণা করবেন তাই কি হয়? এ-ও কি সম্ভব? আমার মনে কখনো এই চিন্তাই আসেনি যে কোনো মুসলমান তার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এমন তামাশা করতে পারে! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না। তারা হয়তো আবার ফিরে এসে আমার টাকাটা দিয়ে যাবেন, আমার বিশ্বাস এমনই!’’

ল্যারি জানান, ‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। আমিও তাদের কেনা গরুগুলো দেখাই। কিন্তু তারা ফার্মের সব থেকে বড় গরুগুলো তাদের বলে দাবি করেন। এতে যারা প্রকৃত ক্রেতা তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। এতে আমার এখানে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়। আসল ক্রেতাদের আমার আবার নতুন করে গরু এনে দিতে হয় এবং সেগুলো নতুন করে কাটতে কাটতে অনেকের রাত ১২টা বেজে যায়!’’

‘‘আপনি পুলিশ ডাকলেন না কেন?’’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, ঈদ আনন্দের, খুশির। এই দিনে পুলিশ ডেকে আমি কারোর আনন্দ মাটি করতে চাইনি। আমার তো সব রেকর্ড আছে। কারা এগুলো করেছেন তার তালিকা আছে। কিন্তু আমি কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি না আপাতত। তারা হয়তো জানেন না ‘কোরবানি’ মানে কি? কিন্তু আমি তো জানি। তারা টাকা না দিলে আমি মনে করবো এটা আমার জন্য স্যাক্রিফাইস! কেউ চাইলে আমি সব তথ্য দিতে পারি। আমার ১৫ হাজার ডলার লোকসান হয়েছে আজ, এতে আমার কোনো কষ্ট নেই। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন।’’

তবে ল্যারি জানান, ‘‘দ্বিতীয় দিনে কোরবানি দিতে আসা মুসলমানেরা অনেক ধর্মপ্রাণ। তারা জানেন, ত্যাগের মহিমা কি! এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম আজ দেখা যায়নি।’’

এ কথা বলে প্রাণ খুলে হাসতেও দেখা গেলো তাকে। তিনি সাংবাদিকদের নিউজটা করার অনুরোধ জানান।

সেখানে ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক পারভেজ ও মেট্রো ওয়াশিংটন বিএনপির সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে প্রবাসে থেকেও আমরা কোরবানি দিতে পারছি।’’ তবে দু`জনেই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। সেখানে কমিউনিটির নেতা, সাংবাদিক কবি বাবুল নকরেকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক


নয়া দিল্লি, অক্টোবর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সফরের প্রথম দিনে ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বিজেপি নেত্রী সুষমা এই উদ্বেগের প্রতি সহমর্মী হয়ে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার দুপুরে নয়া দিল্লি পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকালে দিল্লির ৮ নম্বর সবদরজং সড়কে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবনে যান তিনি।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন তাজ প্যালেসে যান। তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু সেখানে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা সীমান্তে হত্যা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা বলেছেন। জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কমে এসেছে। তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি (লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা) এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসা উচিৎ বলে মনে করেন।”

সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে তা দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে খালেদাকে জানিয়েছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা।

বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন জানান।

“সৌহার্দ্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে সুষমা স্বরাজ বাসার আঙিনায় এসে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানান।”

দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার ওপর দুই নেতা আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে সুষমা বলেন, ভারতের বিরোধী দল বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তিনি।

সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া দিল্লির যোগাযোগের অংশ।

অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়ে শমসের মবিন বলেন, “এই বিষয়ে খালেদা জিয়া লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান আশা করে বিএনপি।”

এজন্য দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের প্রতি সুষমা স্বরাজ একমত পোষণ করেন বলে শমসের মবিন জানান।

বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আরো বেশি বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চান বিরোধীদলীয় নেতা।

খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে সন্ধ্যায় হোটেলে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।

ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।

বিরোধীদলীয় নেতা সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।

দুপুরে নয়া দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে পৌঁছলে খালেদাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপ হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাস কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।

ভারত সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা রাব্বানী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।

খালেদার এই সফরের সংবাদ জানাতে তার সঙ্গে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ।

সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রেসসচিব জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০৬ সালে ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর। বিডিনিউজ

Friday, October 26, 2012

সঠিকভাবে গরু বা ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে- ত্রুটি থাকলে সেই চামড়ার মূল্য থাকে না


এই ঈদে পশু কোরবানির পর মূলত চামড়াটি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে সময়মতো বিক্রি করা না গেলে সঠিকভাবে গরু বা ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।কেননা, ত্রুটি থাকলে সেই চামড়ার মূল্য থাকে না।বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আনসারী বলেন, চামড়ার দাম অনেকটাই চামড়ার মানের ওপর নির্ভর করে। চামড়া ছাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সংরক্ষণে অবহেলা করলে মান নষ্ট হতে পারে।
পশু কোরবানির পর জরুরি কাজ পশুর চামড়া সংরক্ষণ। চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির (প্রস্তাবিত) প্রভাষক আবদুল্লাহ-আল-মাহমুদ।
 প্রথমেই চামড়াটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে চামড়ায় কোনো ধরনের ময়লা, রক্ত, চর্বি বা মাংস লেগে না থাকে। এভাবে পরিষ্কার করার পর চামড়া সংরক্ষণের উপযোগী হয়।
 কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর সাত-আট ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আবহাওয়া বেশি শুষ্ক ও গরম হলে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।
 চামড়া সাধারণত লবণ-পদ্ধতি, রোদে শুকানো পদ্ধতি ও হিমাগার-পদ্ধতি—তিনভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
 লবণ-পদ্ধতিতে চামড়ার মাংসল পিঠে লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ জন্য মাংসল পিঠে চামড়ার ওজনের ৪০ শতাংশ লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। লবণ লাগিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। লবণ লাগানোর পর দেখতে হবে, পুরো চামড়ায় পরিপূর্ণভাবে লবণ লেগেছে কি না। কারণ, লবণ ঠিকমতো না লাগলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 রোদে শুকিয়েও চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। পুরো চামড়াটি কাঠের বা বাঁশের কোনো ফ্রেমের ওপর রেখে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়। তবে রোদে শুকিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করলে চামড়ার গুণাগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 চামড়া যেকোনো শুকনো ও আলোযুক্ত ঘরে সংরক্ষণ করতে হবে। ঘরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে হলে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যায়।
 কোনো বদ্ধ ঘরে চামড়া রাখলে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দূর করতে বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাস দিতে হবে।
 সাধারণত একসঙ্গে অনেক চামড়া সংরক্ষণ করতে হিমাগার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। হিমাগারে মূলত ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরক্ষণ করে থাকেন। তবে আমাদের দেশে সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায় হলো লবণ-পদ্ধতি।

কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুন্দর রাখতে কিছু পরামর্শ


পশু কেনা আর যত্ন-আত্তিতে ব্যস্ত সময় পার করেছন অনেকে। কারণ, কদিন বাদেই ঈদ। কিন্তু পশু কোরবানিতে পরিকল্পনার অভাব আর কোরবানির বর্জ্যে অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। তাতে ফিকে হবে আপনার ঈদের আনন্দ। আর কোরবানির বর্জ্য দূষিত হয়ে তা থেকে ছড়াতে পারে রোগবালাই। তবে একটু সময় নিয়ে আর কিছু নিয়ম মেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলেই এসব সমস্যা এড়ানো যাবে। এ নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বিপন কুমার সাহা। তিনি বলেন, সামান্য অসচেতনতায় একজনের কারণে অনেকের কষ্ট হতে পারে। অথচ একটু খেয়াল রাখলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর পরিবেশ সুন্দর রাখতে তাঁর কিছু পরামর্শ দেখুন।
 কোনো এলাকার লোকজন বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে একস্থানে কোরবানি করা ভালো। যেমন, মিরপুরের কোনো এলাকার কয়েকটি পরিবার মিলে একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে কোরবানি দিতে পারেন। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাটি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছাতে সহজ হবে।
 কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে রাখা যাবে না। এগুলো গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে। কারণ, রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর যদি রক্ত মাটি থেকে সরানো সম্ভব না হয়, তা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 এবার সিটি করপোরেশনের হাটগুলোয় প্রত্যেক ক্রেতাকে কোরবানির শক্ত বর্জ্য রাখার জন্য একটি বিশেষ পলিথিন দেওয়া হবে। মূলত ঈদের দিন বিকেল থেকেই কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও অব্যবহূত বর্জ্য সংগ্রহ কাজ শুরু হবে।
কোরবানির বর্জ্য পলিথিনে করে রেখে দিতে হবে, যাতে ময়লা পরিবহন দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। যাঁরা পলিথিন পাবেন না, তাঁরা এ রকম পলিথিন কিনে ময়লা রাখতে পারেন।
 যেসব এলাকায় গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য এ পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। পশুর হাড়সহ শক্ত বর্জ্যগুলোও পলিথিনে দিয়ে দেওয়া ভালো।
 নাড়িভুঁড়ি বা এ জাতীয় বর্জ্য কোনোভাবেই পয়োনিষ্কাশন নালায় ফেলা যাবে না।
 যাঁরা চামড়া কিনবেন, তাঁরা কোনো বদ্ধ পরিবেশে চামড়া পরিষ্কার না করে এমন খোলামেলা স্থানে করতে পারেন, যেখানে ময়লা জমে দুর্গন্ধ হবে না। আর চামড়ার বর্জ্যগুলোও অপসারণের জন্য জমিয়ে রাখতে হবে।
কোরবানির পশুর বর্জ্য নিজের উদ্যোগে পরিষ্কার করাই ভালো।

অতিরিক্ত ভাড়া ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ যোগাযোগমন্ত্রীর


গাবতলী, ঢাকা : যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফেরৎ দেওয়ার জন্য বাস মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘‘যদি ভাড়া ফেরৎ না দেওয়া হয় তাহলে ‍তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এদের সাথে নিয়ে কোনো কাজ করা হবেনা ।

রাজধানীর গাবতলীর পশুরহাট পরিদর্শনে এসে যোগাযোগমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘‘যানজট পরিস্থিতি নিয়ে আমি সন্তষ্ট নই। বিশ বছরের জঞ্জাল সরাতে একটু সময় লাগবে।’’

যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘‘চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ এসব লোকদের গলায় গলায় ভাব। এরা বিভ্ন্নি দল করে রাজনৈতিক ময়দানে একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে আসলে এদের গলায় গলায় ভাব। কোরবানি আমাদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়। এই ত্যাগের মধ্যে পশুর মনোবৃত্তি থাকবে কেন।’’

যোগাযোগমন্ত্রী ঝটিকা সফরে গাবতলী আসলে বেশ কয়েকজন যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। এ সময় বাড়তি ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। রাতারাতি কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো কেটে যাবে।’’

টার্মিনাল ও যানজট পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সন্তষ্ট কিনা এ পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি সন্তষ্ট নই। তবে আগের চেয়ে কিছুটা ‍অগ্রগতি হয়েছে।

যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় যানজট খুব একটা নেই বললেই চলে। আমি খবর নিয়েছি। একই সাথে রাস্তায় কোনো পশুর হাট নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ড্রাইভার এবং যাত্রীদের সতর্কভাবে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ড্রাইভার এবং যাত্রী উভয়েই বেপরোয়া। সবাই পড়িমরি করে বাড়ি ছুটছে । যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে।’’

এসব থেকে সাবধান হওয়ার জন্য সকলকে আহবান জানান তিনি। বাংলানিউজ

সবাইকে নিয়ে পরিমিত খান- ডা. শুভাগত চৌধুরী



অক্টোবর ২৫, ২০১২
আর দু’দিন বাদেই (২৭ অক্টোবর) মুসলমানদের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। উৎসবের সময় খাওয়াটা একটু বেশি হবেই। কোরবানির উৎসবের সময় মাংস বেশি খাওয়া হয়। বিশেষ করে চর্বিওয়ালা গোশত। একে বারণ করা যাবে না। কারণ এটা উৎসবের অংশ। তবে আমার মতে, আজকাল মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছেন। তাই পরিমিত ও সীমিত খাওয়ার দিকেই ঝুঁকছেন।

স্বাভাবিকভাবে যদি খান, সমস্যা নেই। মানে, গোশতটা একটু কম খান। পরিমাণে কম। তাহলে ক্যালোরি-ইনটেক একটু কম হল। দু’টুকরোর জায়গায় এক টুকরো। ব্যস, তাহলেই চলবে। যদি রয়ে-সয়ে খান, শেয়ার করেন, তাহলে ভয় নেই। বাইরে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে কী করেন? প্লেটে যা ছিল তার পুরোটা খান না, বাসায় নিয়ে যান, পরে খান বা বাসার অন্যরা সেটা খায়- সে রকমভাবে যদি পুরোটা দিলেই খেয়ে ফেলব–এই মানসিকতা না থাকে তাহলে সমস্যা হবে না।

খাওয়াটা উপভোগ করুন কিন্তু কম খান। অল্প-অল্প করে বারবার খান। স্বাভাবিকভাবে যা খান ততটুকুই। একেবারে বুভুক্ষুর মতো না। প্লেটে দিলেই খেতে হবে তা নয়।

ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন। খাসির চর্বিটা যেমন খুব ক্ষতিকর। এটা ঈদের সময় খেলে পরের এক মাস আর খেলেন না। এটাও একটা কৌশল হতে পারে।

আরেকটা কৌশল হল পরিমাণে কম খাওয়া। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হল ‘পোরশন সাইজ।’ এটা কমানো দরকার।

যে জিনিসটা একা খেতেন সেটা বাসার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে খান। তাহলে আপনার খাওয়ার পরিমাণটা একটু কমল।

কেউ কেউ তিন-চারদিন একটানা মাংস খেতে থাকেন। এটাই ক্ষতিকর। আমি বলব, প্রথমদিনের পর আর মাংস না খেতে। এরপর সবজি বা মাছ খাওয়া যেতে পারে। তাতে শরীরের উপকার। প্রোটিন খেতে চাইলে চিকেনের ব্রোস্ট খান। তাতে ক্যালোরি-ইনটেক কম হবে। চর্বি কম খাওয়া হবে।

ধর্মীয় বিধানেও তো বলা হয়েছে, মাংস বণ্টন করে দিতে। তাই যত বেশি পারা যায়, গরীবদের মধ্যে মাংস বিলিয়ে দিলে ধর্মের নিয়ম মানা হল। ওদিকে শরীরও বেশি-বেশি রেডমিট খাওয়ার ঝুঁকি থেকে বেঁচে গেল।

উৎসবের দিন খান। অল্প করে। ধর্মরক্ষা হল, উৎসব উদযাপনও হল। প্রতিদিন টানা মাংস খাওয়া, মাংস ফ্রিজভর্তি রেখে দিয়ে প্রতিদিন বা মাসের পর মাস খাবেন- এর তো কোনও ধর্মীয় যুক্তি নেই। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই।

রান্নার প্রস্তুতিতেও একটা সাবধানতা দরকার। বেশি করে মসলা দিয়ে কষিয়ে তেল-চর্বি সহযোগে রান্না উপাদেয় হবে, স্বাস্থ্যকর নয়। তার বদলে গ্রিল করে মাংস খাওয়া যেতে পারে। তাতে চর্বিটা মাংস থেকে সরে যাবে। গ্রিলে চর্বি মাংস থেকে ছেঁকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সেটাও পরিমিত। কারণ চর্বি-ছাড়া রেডমিটও তো ক্ষতিকর।

রোগীদের বেলায়ও একই পথ। পরিমিত খাওয়া। শুধু একটুখানি টেস্ট করা। যাদের ডায়াবেটিস আছে, কিডনি ফেইলিওরের রোগী বা প্রেশার যাদের উচ্চ তাদের জন্য রেডমিট বা চর্বিওয়ালা মাংস খুব ক্ষতিকর। কিডনি ফেইলিওরের রোগীদের তো নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন খেতে হয়। এর বেশি খাওয়া বারণ। ওরা কেবল স্বাদ নেয়ার জন্য খেতে পারেন।

আরও ভালো হয়, ডায়াবেটিস বা কিডনি স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া। তাহলে যারা মাংস খেতে উৎসাহ দেবেন, তারা অন্তত ডাক্তারের পরামর্শ শুনে আর কিছু বলবেন না।

আজকাল আমরা বলছি, শুধু নিজেরা স্বাস্থ্যসচেতন হলে চলবে না, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বানাবেন। যার হার্ট ডিজিজ হয়েছে বা ডায়াবেটিস আছে তিনি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ- যার এখন এমন কোনও রোগ নেই তার যে কোনওদিন এটা হবে না তা তো বলা যায় না। তাই সাবধান থাকতে হবে পরিবারের সবাইকেই। বেশি-বেশি চর্বি বা ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে অন্যরা কেন বিপদ ডেকে আনবেন?

সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।

মানতে হবে, আজকাল সব বয়সের সব মানুষের হার্টের অসুখ হচ্ছে। এবারকার হার্ট দিবসের প্রতিপাদ্য তাই ছিল নারী ও শিশুদের হার্টের অসুখ সম্পর্কে সচেতন করা। আগে মনে করা হত, হার্টের অসুখ মূলত পুরুষদের অসুখ। এবং অবশ্যই পরিপূর্ণ বয়সী পুরুষদের। আজকাল উন্নত এমনকী উন্নয়শীল বিশ্বের দেশগুলোতেও যে-হারে নারী ও শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

যেহেতু উন্নয়নশীল বিশ্বের নারীরা এখন বেশি হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই তাদের খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতার প্রয়োজন আছে।

নারীদের বেলায় একটা বিষয় হল তারা পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠিত বা সচেতন হলেও, নিজেদের স্থাস্থ্য নিয়ে তেমন ভাবেন না। ফলে রোগটা গোপনে রয়ে যায়। নারীদের বেলায় লক্ষ্মণগুলোও একটু অন্যরকম। অনেকের দেখা যায় বদহজম হয়। ব্যথা হয় চোয়ালে বা থুতনিতে। মাথা ঝিমঝিম করা বা দুর্বল লাগাটাও অনেকের থাকে।

দেখা যায় ডাক্তাররা বদহজম হলে তার অষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। অথচ রোগীর হয়তো ততদিনে ম্যাসিভ বা ইনফেকশন কিছু একটা হয়ে গেছে। সমস্যাটা হচ্ছে ডাক্তাররাও মনে করেন মেয়েদের হার্টের অসুখ হয় না। বিশেষ করে ঋতুমতী নারীদের হার্টের অসুখ কম হয়। ফলে তাদের বেলায় ডাক্তাররা এই ভুলটা করে ফেলেন।

আর এখন তো আমাদের জীবনযাপনের কৌশল, রীতিনীতি বদলে যাচ্ছে। আমরা ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি খাচ্ছি। বাইরের খাবারের দিকে মনোযোগ বাড়ছে। কাজ করছি অফিসে বসে। ডেস্কে। ব্যায়াম, শরীরচর্চা বা শরীরের কোনও নড়াচড়া নেই। হাঁটাহাটি হয় না। এ সব কারণে বড়দের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক।

ছোটরাও একই কারণে নিরাপদ নয়। ওরা এখন কেবল স্কুল আর কোচিংয়ে দৌড়ায়। বাসার খাবারের চেয়ে বাইরের খাবারের দিকে ঝোঁক বেশি। ফাস্টফুডের ভক্ত হয়ে উঠছে। খেলার জায়গা পায় না ওরা। সারাদিন হয় পড়াশুনা নয়তো সোফায় আধাশোয়া হয়ে টিভি দেখা, কম্পিউটারের সামনে বসে গেম খেলা বা ডিভিডিতে গান শোনা, ছবি দেখা– এই প্রজন্মের শিশুরা বড় হচ্ছে খুব ঝুঁকির মধ্যে।

‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে মেকস জ্যাক আ ডাল বয়’– কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললে এটাই যে, শহরের লাইফস্টাইল শিশুদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে।

আজকাল টাইপ-টু ডায়াবেটিসটা তরুণদের খুব বেশি হচ্ছে। আগে এটাকে ভাবা হত বয়স্কদের রোগ। এটি ‘লাইফস্টাইল ডায়াবেটিস।’ ওই একই কারণ। লাইফস্টাইল বদলে যাওয়া। শুয়ে-বসে থাকা, অলস জীবনযাপন।

টাইপ টু ডায়াবেটিস কিন্তু আবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফাস্টফুড কম খাওয়া, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস বাড়ানো, চিনি ও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শাকসবজি-ফলমূল খাওয়া বাড়ানো, সক্রিয় জীবনযাপন– এ সবই হল সমাধান।

নগরায়ন বাড়ছে। বাড়ছে আয়ু। তাই অসুখ-বিসুখেরও প্রতাপ বেশি। এ সবই তো নন-ক্রনিক ডিজিজ। মানে, কোনওটিই ছোঁয়াচে নয়। সবই লাইফস্টাইল ডিজিজ।

তাই সাবধানতাও বেশি দরকার। কখনও-ই লাগাম ছাড়া যাবে না। এই ঈদেও না। উৎসব করুন। উৎসবেরর আনন্দটা পুরোদমে নিন। ধর্মের রীতি মেনে চলুন। নিজে খান পরিমিত। সবাইকে বলুন পরিমিত খেতে। আর শেয়ার করুন। খাবার এবং আনন্দ দুটোই।

সুস্থ থাকুন এই ঈদে। সব ঈদেই। বিডিনিউজ
ডা. শুভাগত চৌধুরী:চিকিৎসক, অধ্যাপক ও লেখক।

Thursday, October 25, 2012

সুনীল মারা গেছেন শুনে আমি মর্মাহত, আমরা দু'জনেই নাস্তিক এবং দৃঢ়ভাবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে-তসলিমা নাসরিন


সুনীলের সঙ্গে আমার অনেক মিল ছিল: তসলিমা


Thu, Oct 25th, 2012 6:57 pm BdST

ঢাকা, অক্টোবর ২৫ - এতো তাড়াতাড়ি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চলে যাবেন তা কখনোই ভাবতে পারেননি তার এক সময়ের বন্ধু বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিন।

সুনীলের মৃত্যুতে ইন্ডিয়া আউটলুক ডটকমকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন কিছুদিন আগেই তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা তসলিমা।

ভারতীয় সাময়িকীটির দোলা মিত্রকে টেলিফোনে তসলিমা নাসরিন বলেন

মর্মাহত। এতো তাড়াতাড়ি তিনি মারা যাবেন ভাবিনি। তিনি যা করেছেন সেজন্য আমি তার সমালোচনা করেছি, কিন্তু কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না যে এতো দ্রুত তার মৃত্যু হবে। আমি তার লেখা পড়ে বেড়ে উঠেছি এবং লেখক হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করতাম।”

‘নির্বাসিত’ জীবনে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত তসলিমা গত মাসের শুরুতে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখেন, সুনীল তাকে এবং অন্যান্য তরুণী লেখক ও কবিকে ‘যৌন হয়রানি’ করেছেন। তসলিমার এ অভিযোগ ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

নয়াদিল্লিতে তাকে দেখতে আসা কলকাতার এক বন্ধুর মারফত সুনীলের মৃত্যু সংবাদ পান তসলিমা। ওই বন্ধুকে কলকাতা থেকে কেউ ফোন করে এ খবর জানানোর পরপরই টেলিভিশন খুলে বসেন তারা।

তসলিমা জানান, “তার এখনকার ছবি দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। আমি বুঝতেই পারিনি উনি এতোটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু না, আমাকে তার যৌন হয়রানি করার কথা প্রকাশ করা নিয়ে আমি এতোটুকুও অপরাধ বোধ করিনি।”

“আমাদের দেশে সমস্যা হল কেউ যখন কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে তখন তাকে এমন এক আসনে বসানো হয় যে, তিনি যেন কোনো ভুল করতে পারেন না। তাকে সন্ত বানিয়ে ফেলা হবে এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলাটা তখন পাপ হয়ে যাবে। আর কেউ যদি সাহস করে সদ্যপ্রয়াত কারো সম্পর্কে সমালোচনা করে বসেন তাহলে মৃত ব্যক্তির অপরাধ যতো বড়ই হোক না কেন সমালোচনার অপরাধের আর কোনো ক্ষমা থাকবে না। যেমন আমি নিশ্চিত আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।”

খোলামেলা প্রতিক্রিয়া জানালে মানুষ কী ভাববে তা নিয়ে তিনি কখনোই ভীত ছিলেন না জানিয়ে তসলিমা বলেন, “সুনীলের সঙ্গে আমার অনেক মিল ছিল। আমরা দু’জনেই নাস্তিক। বাংলা সহিত্যের প্রতি আমাদের দু’জনেরই ভালোবাসা অনেক। আমার বই নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার সমর্থনের আগ পর্যন্ত আমি ভাবতাম আমরা দ’জনেই দৃঢ়ভাবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে। তার চরিত্রের এই দুটি কালিমা তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি এখনো এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।”

তসলিমা যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পরপরই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমি এসবকে একেবারে পাত্তা দিচ্ছি না। ও বহুবার এসব কথা বলেছে। কলকাতায় এসে একেকবার একেকজনের নামে এসব কথা বলেছে। আমি আমার কাজে ব্যস্ত আছি।”

মসলার দাম বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ


ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম মসলার দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মসলার দাম কেন অস্বাভাবিক বেড়েছে তা জানার চেষ্টা করছি। এর পেছনে যে কারণ রয়েছে তা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ১৪ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে এক সভায় ঈদের আগে পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসলার দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির পরও বাজারে বিভিন্ন রকম মসলার দাম বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় ভোক্তা সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধি যদি অযৌক্তিক হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১০০ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স : অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে


ঢাকা, অক্টোবর - চলতি অক্টোবর মাসের ১৯ দিনেই (১৯ অক্টোবর পর্যন্ত) ১০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে, যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান সোমবার রাতে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি টাকা পাঠানোয় রেমিটেন্স প্রবাহে এই রেকর্ড হয়েছে।”

একক মাস হিসেবে চলতি অক্টোবর মাসে রেমিটেন্স প্রবাহে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে বলেও আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। সাইদুর রহমান জানান, অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১০০ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

এদিকে প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ১৮ অক্টোবর রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে জানুয়ারিতে ১২২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে আসে, যা একক মাস হিসাবে রেমিটেন্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড।

চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২৫৫ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। গত ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ২৯৬ কোটি ডলার।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ ছাড় বেড়েছে ৩ গুণ- বিডিনিউজ





Thu, Oct 25th, 2012 11:07 am BdST


ঢাকা, অক্টোবর ২৫ - এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা চললেও বিদেশি সাহায্যে এর প্রভাব পড়েনি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১৮ কোটি (১৮০ মিলিয়ন) ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় করেছে বিশ্ব ব্যাংক। অর্থ ছাড়ের এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।

২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬ কোটি ৭৮ লাখ (৬৭৮ মিলিয়ন) ডলারের ঋণ ছাড় করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান মনে করেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে সরকার-বিশ্ব ব্যাংক দুপক্ষই বিগত কিছুদিন ধরে সতর্ক রয়েছে। এ কারণেই ঋণ সহায়তায় কোনো প্রভাব পড়েনি।তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে থাকার কারণে এ সংস্থার সহায়তা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকও নতুন কোনো সমালোচনায় জড়াতে চায়নি।”

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “পদ্মা সেতুর জটিলতা অন্য প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ বরং আরো বেড়েছে।”

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ৫০ কোটি ডলারের অর্থ ছাড় করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। যা ছিল আগের বছরের (২০১০-১১) তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

শুধু বিশ্ব ব্যাংক নয়; বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য দাতাদেশ ও সংস্থার ঋণ-সহায়তাও এবার বেড়েছে।

ইআরডি চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিদেশি ঋণ সহায়তার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা মোট ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এর মধ্যে আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ চলে যায় ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করার জন্য সরকারের হাতে থাকে ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১৬৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সুদ-আসল পরিশোধে ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার চলে যাওয়ার পর সরকারের হাতে ছিল ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

জাহিদ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ভাগে বাংলাদেশে বিদেশি সাহায্যের অর্থ ছাড় কম হলেও শেষ দিকে এসে তা পুষিয়ে যায়। এবার দেখা যাচ্ছে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেশ ভাল।

“এটা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে”, বলেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। অবশ্য গত বছর সেপ্টেম্বরেই এই ঋণচুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সরকারের নানা তৎপরতার পর নতুন কিছু শর্তে এ বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত কীভাবে চলবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- তা নিয়ে বর্তমানে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিশ্ব ব্যাংকের একটি পর্যবেক্ষক দল ইতোমধ্যে ঢকায় এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করতে বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রতিনিধিদলটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদ।

Tuesday, October 23, 2012

আলপনা ভালো আছে: আলপনাদের ভালো রাখতে হবে- সুমি খান



আলপনা ভালো আছে। বাংলানিউজে প্রকাশিত কলাম এবং প্রতিবেদন তাকে সুরক্ষা দিয়েছে। আলপনা নেত্রকোনায় তার বাড়িতে পরিবারের সাথে আগের মতোই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন। স্থানীয় সাংসদ নিজে আলপনাকে বাসায় পৌছে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের স্থানীয় ক্যাডাররা ক্ষমা চেয়েছে আলপনার কাছে। আলপনা আমাকে কয়েকটি চিঠি দিয়েছন, মোবাইলে কথা হয়েছে কয়েকবার।আমার প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা তার বিনয়ের প্রকাশ। বলেছেন এখন ভালো আছেন তিনি। দু:খ করে বলেছেন হুমকিদাতা এই ছেলেরা কেউ এলাকার নয়।প্রশ্ন উঠে তাহলে এই ক্যাডারেরা কী করে সুযোগ পায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গাতে? তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসন কে। প্রতিটি এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ ক্যাডারদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী। নাহয় মহাজোট সরকারকে অনেক বড়ো খেসারত দিতে হবে।
১৩ সেপ্টেম্বর আলপনা একটি চিঠি পাঠায় আমাকে। চিঠিটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।
" সুমি আপু,
আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।
সত্তের জয় হয় ই হয়। আপনারা আমার পাশে না থাকলে হয়তো সম্ভব ছিল না।
আমি এখন বাসায় এম পি নিজ দায়িত্তে অফিস থেকে নিয়ে এসেছেন।
ছাত্র লীগ দের দিয়ে মাফ চায়্যেছেন
আপনি দীঘ হন ।।
আমি আপ নাকে জিবনেও ভুলতে পারব না।
স শ্রদ্ধ সালাম রইল -আলপনা বেগম"

আমার ভালো লাগছে ভাবতে আলপনা অন্তত এতোটুকু সাপোর্ট প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে পেয়েছেন। আমাকে এবং আমার মতো অনেক সংবাদকর্মীদের বার বার যে সাংসদ , জামাত বিএনপি ক্যাডারেরা জামাত-বিএনপি চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে হুমকি দিয়েছেন তারা কখনো ভাবতেও পারেননি তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল জামাত –বিএনপির সাংসদ অথবা তাদের এপিএস অথবা ক্যাডারেরা আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন বার বার । সেটাকে অপরাধ মেনে ইহজনমে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, হুমকির বাস্তবায়ন কবে করবেন সেই অপেক্ষাতেই তারা আছেন।
আমি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য বসবাস করি। ল্যাপটপে কারিগরী ত্রুটি তার মধ্যে অন্যতম। আলপনার ভালো থাকার কথা উদ্বিগ্ন পাঠকদের জানানো উচিত ছিল অনেক আগে। পারি নি। এজন্যে প্রিয় পাঠকদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । অনেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আলপনা কেমন আছেন এখন। তাদের মধ্যে চ্যানেল আই য়ের জাপান প্রতিনিধি কাজী ইনসানুল হক অন্যতম। মানবতাবাদী এই পাঠক দের সকলের কাছে আমার এবং আলপনার পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
গণতন্ত্র তখনই সফলতার দিকে এগোয়, এ ধরণের হঠকারী রাজনীতিকেরা যখন তাদের অপরাধ মানতে বাধ্য হয়। আলপনার সাথে আমার বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। বাংলানিউজ কতৃপক্ষ এবং এর সাংবাদিকেরা প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে আলপনার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এদেশের মিডিয়া ওয়ার্ল্ডে এ দৃষ্টান্ত নিসন্দেহে অভাবনীয় ব্যাপার। অন্যদিকে সময় টেলিভিশনের প্রতিনিধি আলপনার বিপন্ন সময়ে সময় টেলিভিশনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব এড়ানো হয়েছে নানান অজুহাতে, যা আমাদের করুণ বাস্তবতা। এ বিষয় গুলো আমাদের ভাবতে হবে। আমার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, গোলাম মোর্তোজা, মোহসিউল আদনান ২০০১-২০০৪ সময়ে সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে নিয়মিত খোজ নিয়েছেন। আমাকে গ্রেফতার করার পর ততকালীন প্রশাসনের সাথে উচ্চপর্যায়ের সাথে তুমুল লড়াই করেছেন। মোর্তোজা ভাই কলাম লিখেছেন। আমি বরাবর সেই দু:সময়ের সহযাত্রী এবং দায়িত্বশীল সহমর্মীদের আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি বারবার।
তাই আমার মতো ক্ষুদ্র এক সংবাদকর্মী এই অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে যাবো। একই সাথে আমি মনে করি মুখে বড়ো বড়ো কথা বলা যারা বলেন বা লিখেন, তারা আলপনার মতো বিপন্ন সংবাদকর্মীদের পাশে থেকে কিছু দায়িত্ব অন্তত পালন করার চেষ্টা করা জরুরী।
Sumikhan29bdj@gmail.com

Saturday, October 20, 2012

১২ শ’ কোটি ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ


ঢাকা, অক্টোবর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২ শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৪০ বছরের ইতিহাসে এটা রেকর্ড রিজার্ভ।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই প্রথমবারের মতো এক হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরতদের পাঠানো রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, ‘রবি’ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তি এবং আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এক্সপোর্ট বিল দ্রুত সময়ে নিস্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াতে খাদ্যদ্রব্য আমদানি কমার পাশাপাশি আমদানিযোগ্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমে আসা এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি নিরূৎসাহিত হওয়ায় সার্বিক আমদানি ব্যয় কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়।

আর এই সব কারণে রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। সন্তোষজনক রিজার্ভের পরিমাণ অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১২ দিনেই ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ১২ দিনে এ পরিমাণ রেমিটেন্স এর আগে কখনো আসেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।”

সাইদুর রহমান জানান, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সোমবার তা আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার তা ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে (৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ২০৩ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। আর ৬ থেকে ১২ অক্টোবর (৬ থেকে ১২ অক্টোবর) এই সাত দিনে এসেছে ৩৯০ মিলিয়ন ডলার।

একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ অতীতের যে কোনো মাসকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাইদুর রহমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের আগে রিজার্ভ ১১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর ৭০০ মিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসে।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ বেড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) ইসিএফ (বর্ধিত ঋণ সুবিধা) তহবিলের দ্বিতীয় কিস্তির ১৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে পারে। তখন রিজার্ভ আরো বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা তিন দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

চলতি অক্টোবর মাসের পাঁচ দিনেই (৫ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব পাওয়া গেছে) ২১০ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

গত ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার পঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এর মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে এসেছিল ১ দশমিক ০১৫ লাখ ডলার। এছাড়া অগাস্টে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে আসে, যা একক মাস হিসাবে রেমিটেন্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড।

Thursday, October 18, 2012

উত্তমের মা-মাসীকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ :খাদ্য ও নিরাপত্তা দেবে রাষ্ট্র


Thu, Oct 18th, 2012 7:09 pm BdST

ঢাকা, অক্টোবর ১৮ - কক্সবাজারের রামুর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় আলোচিত উত্তম বড়–য়ার মা ও মাসীকে আটক রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণার পাশাপাশি তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বসবাসে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমদের বেঞ্চ আদেশে বলেছে, ওই দুই নারী যে কোনো স্থানে বসবাস করতে করতে পারবে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তমের ফেইসবুক পাতায় একটি অবমাননাকর ছবি দেখে রামুতে মিছিল বের হয়। পরে উগ্রপন্থিরা বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালায়। আগুনও দেয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।ঘটনার পর থেকে উত্তমের কোনো সন্ধান পাওয়া না গেলে তার মা মাধু বড়ুয়া (৪১) এবং খালা আদি বড়ুয়াকে (২৬) ঘটনার পরদিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। কোনো অভিযোগ না থাকার পরও গ্রেপ্তারের এই খবর সংবাদপত্রে দেখে হাই কোর্টের ওই বেঞ্চ বুধবার মাধু ও আদিকে মুক্তি দেয়ার মৌখিক নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ওই আদেশের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে জানাতে বলা হয় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদারকে। বৃহস্পতিবার অমিত তালুকদার জানান, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেই তাদের দুজনকে আটক করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলে, নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা হালকভাবে নিতে পারি না। ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের (মাধু ও আদি) সম্মতি সাপেক্ষে চট্টগ্রাম সার্কিট হাইজে অথবা মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের সেফ হাউজে তাদের রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খাদ্য ও নিরাপত্তা দেবে রাষ্ট্র। সেখানেও থাকতে তারা রাজি না হলে অন্য যে কোনো স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে তাদের রাখতে সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত।

আদালত আদেশে আরো বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাদের আটক রাখা ও রিমান্ডে নেয়া অবৈধ ও অসাংবিধানিক। যতদ্রুত সম্ভব তাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। যে কোন মূল্যে তাদের জীবনের সুরক্ষা দিতে হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, মেরে ফেললেও তারা নিজেদের বাড়িতেই থাকতে চান।” তখন আদালত বলে, পরিস্থিতি খুবই নাজুক। তাদের স্বাধীনতা রয়েছে, কোথায় তারা বসবাস করবেন। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার বিষযটিও ভাবতে হচ্ছে। তাদের স্বাধীনতা আমরাও খর্ব করতে পারি না।

এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৪ নভেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক হয়েছে।

নাফিজের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ | বাংলাদেশ | bdnews24.com

নাফিজের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ | বাংলাদেশ | bdnews24.com

Monday, October 8, 2012

ব্রিটেনের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে মধুসূদন দত্ত


ব্রিটেনের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে মধুসূদন দত্ত

কৃষ্ণভাবিনীর লেখা ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’র প্রচ্ছদ

‘বঙ্গভূমির প্রতি’ তাঁর আকুতি ছিল

‘রেখো মা দাসেরে মনে...’। বঙ্গভূমি তাঁকে ভোলেনি। এবার জানা গেলে, মনে রেখেছে তাঁকে বিলেতও। মৃত্যুর ১৩৯ বছর পর ব্রিটেনের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে ঠাঁই পেলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবির আফসোস ছিল, ‘আশার ছলনে’ ভুলে বৃথাই জীবন কাটালেন বিলেতে, যাপন করলেন বিদেশির জীবন। ইংরেজি সাহিত্যের সাধনায় যে যশ তিনি আশা করেছিলেন, তা হয়তো পাননি, তবে বাঙালি কবি হিসেবেই এ বার তাঁর নাম উঠে এল ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ন্যাশনাল বায়োগ্রাফিতে’ (অক্সফোর্ড ডিএনবি)।

প্রসঙ্গত, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু ব্যক্তিত্বই ব্রিটিশ ইতিহাস এবং সমাজে নানাভাবে ছাপ রেখে গিয়েছেন। তাঁদের সেই অবদানকে সম্মান এবং স্বীকৃতি জানাতেই এই অভিধান। রোমান আমল থেকে শুরু করে একবিংশ শতক পর্যন্ত ব্রিটিশ সমাজে গভীর অবদান রেখে যাওয়া ৫৮,২০২ জনের জীবনী ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে এখানে। তাঁদের মধ্যে নাম রয়েছে মেদিনীপুরের এক কন্যারও। কৃষ্ণভাবিনী দাস। বাংলা ভ্রমণকাহিনির প্রথম লেখিকা। বিলেতে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’। অবশ্য শুধু লেখিকা নয়, কৃষ্ণভাবিনীকে সমাজকর্মী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে ‘অক্সফোর্ড ডিএনবি’-তে।

২০০৪ সালে বইয়ের আকারে এবং অনলাইনে প্রথম প্রকাশিত হয় এই অভিধান। তারপর থেকে প্রতি বছর জানুয়ারি, মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে নতুন জীবনী জুড়ে আপডেট করা হয় অভিধানটি। এরই ধারাবাহিকতায় এ মাসে এতে যোগ হল দুই বাঙালির নাম। অভিধানে মধুসূদনকে (১৮২৪-১৮৭৩) বর্ণনা করা হয়েছে কবি ও নাট্যকার হিসেবে। তাঁর জীবনীতে লেখা হয়েছে, বর্তমান বাংলাদেশে অবস্থিত যশোহর জেলার সাগরদারি গ্রামে বিশিষ্ট, উচ্চবর্ণের কায়স্থ আইনজীবী রাজনারায়ণ দত্ত এবং জাহ্নবী দেবীর সন্তান ছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল বয়সে অনেক ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে। তিনি তাতে রাজি না হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন ১৮৪৩ সালে। নাম হয় মাইকেল। এ ঘটনায় বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। এই সময়ে বাড়ি ছেড়ে তিনি চলে যান মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই)। কয়েকটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করার পাশাপাশি তিনি মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাই স্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৮৪৮ সালে বিয়ে করেন রেবেকা টমসনকে।

এরপর, কলকাতায় ফিরে আসেন ১৮৫৬ সালে। দু’বছর পর লেখেন ‘শর্মিষ্ঠা’, মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে লেখা পাশ্চাত্য শৈলি অনুকরণে প্রথম বাংলা নাটক।

অক্সফোর্ড ডিএনবি’তে বলা হয়েছে, মধুসূদনের যুগান্তকারী রচনা ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) মিলটনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। বহু বাঙালি সাহিত্যিক মনে করেন এটি বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক কবিতা। যদিও সেই সময়ে রামের বদলে রাবণকে নায়ক বানিয়ে দেওয়ায় ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা যারপরনাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

অভিধানে স্থান পাওয়া আর এক বাঙালি কৃষ্ণভাবিনী দাস (১৮৬৪-১৯১৯) ছিলেন মেদিনীপুর জেলার এক হিন্দু জমিদার পরিবারের মেয়ে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা জয়নারায়ণ সর্বাধিকারীর কাছেই লেখাপড়া শিখেছিলেন। ১৮৫৭ সালে দেবেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৮২ সালে স্বামীর সঙ্গে বিলেতে যান। তিন বছর পর প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা’। বাংলা ভাষায় এই প্রথম কোনও মহিলা লিখলেন ভ্রমণকাহিনি। যদিও লেখিকার নাম ছাপা হয়নি তাতে। ১৮৯০ সালে স্বামীর সঙ্গে দেশে ফিরলেও নিয়মনীতির বেড়া না মেনে পাশ্চাত্য পোশাকেই রাস্তায় একা বেরোতে দ্বিধা করতেন না কৃষ্ণভাবিনী। ১৯০৯ সালে দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর অবশ্য হিন্দু বিধবার বেশেই দেখা যেত তাঁকে।

সারাজীবন ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করে গিয়েছেন কৃষ্ণভাবিনী। ১৯১০ সালে তাঁর আরও একটি বই ‘জীবনের দৃশ্যমালা’ প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণভাবিনীর উদ্যোগে প্রকাশিত হয় তাঁর স্বামীর আত্মজীবনী ‘পাগলের কথা’।

ব্রিটেনের যে কোনও গ্রন্থাগারের সদস্যই ‘অক্সফোর্ড ডিএনবি’ অনলাইনে দেখতে পারেন। নতুন আপডেটগুলি-সহ অক্সফোর্ড ডিএনবি দেখা যাবে বৃহস্পতিবার থেকে।

সৌজন্য: আনন্দবাজার পত্রিকা

Tuesday, September 25, 2012

হিনা রব্বানি খার- বিলাওয়াল ‘আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং শিগগিরই আমরা এক হতে যাচ্ছি।’


প্রেমে বাদ সাধায় দলের প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে চেয়েছেন এক প্রেমিক। ঘটনাটি প্রতিদিন নানা ঘটনার জন্ম দেওয়া পাকিস্তানের। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার এবং দেশটির ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোর মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া চলছে। এখন তাঁরা ঘর বাঁধতে চান। তা-ও আবার সুদূর সুইজারল্যান্ডে। আর এতে বাদ সেধেছেন বিলাওয়ালের বাবা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। তবে সাহসী প্রেমিক বিলাওয়াল বাবাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে পিপিপির প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দেবেন তিনি।
প্রেমের ক্ষেত্রে বয়সকে হার মানিয়েছেন হিনা-বিলাওয়াল। বিলাওয়ালের চেয়ে ১১ বছরের বড় হিনা। তবুও বয়সের এই ব্যবধান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়নি।
হিনার অনন্যা ও দিনা নামের দুটি সন্তান আছে। এই প্রেমের জন্য কোটিপতি ব্যবসায়ী স্বামী ফিরোজ গুলজারকে তালাক দেওয়ারও চিন্তা করছেন হিনা। বিয়ের পর দুই সন্তানকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডেই থাকতে চান বিলাওয়াল।
জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভবনে হিনা ও বিলাওয়ালকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। এর পরই প্রেমের ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায়। আসিফ আলী জারদারি নানাভাবে এ দুজনকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁরা মানার পাত্র নন।
বিলাওয়ালের জন্মদিনে হিনা একটি বার্তাসহ কার্ড পাঠান। কার্ডে হিনা নিজ হাতে লেখেন ‘আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং শিগগিরই আমরা এক হতে যাচ্ছি।’

‘২০২১ নাগাদ সংসদে ও নেতৃত্বের সব পর্যায়ে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার পুরুষের সমান দাঁড়াবে’ - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


নিউইয়র্ক, সেপ্টেম্বর ২৫- ২০২১ সাল নাগাদ প্রশাসন, চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার পুরুষের সমান দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সংসদে ও নেতৃত্বের সব পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ব্যাপারে অঙ্গীকার করছি।”

এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক হবে নারী এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও গৃহে নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

নিউইয়র্কের ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলে হোটেলে সোমবার ‘সমঅংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও সা¤প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপি নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে, কিন্তু এখনো তা যথেষ্ট নয়।”

বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নারীরা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক। তাদের সমঅংশীদারিত্ব বিশ্বে কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।”

নারী উন্নয়ন নীতিমালায় উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১২ হাজার ৮৩৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে নারীরা উচ্চ পদে আছেন উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি চাকুরির ৩০ ভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত।

গ্রামীণ নারীদের জন্য শতকরা পাঁচ ভাগ সার্ভিস চার্জসহ সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই নারীদের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এর বাইরে বর্তমানে ৩০ লাখ নারী তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত আছেন এবং অনেকে বিদেশে কাজ করছে ও বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন।

২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর তার সরকার নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় মানব পাচার বিরোধী আইন এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

Tuesday, September 18, 2012

বাংলাদেশ পরপর তিনবার স্থিতিশীল অর্থনীতি সমেত বিএ৩ রেটিং পেয়েছে



ঢাকা: ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- আন্তর্জাতিক ঋণমাণ সংস্থা মুডি’স এর রেটিংয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি তৃতীয়বারের মতো বিএ-৩ রেটিং অর্জন করেছে, যা অর্থনীতির সুষ্ঠু ও জোরালো অগ্রগতির জন্য স্বীকৃতি।

তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির উপর ভিত্তি করে মুডি’স বাংলাদেশের সার্বভৌম রেটিং নির্ধারণ করেছে।

‘ঋণ পর্যালোচনা: বাংলাদেশ সরকার’ শীর্ষক মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশকে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চলমান ধারা অর্জন করলেও রেটিংয়ে থাকা সবগুলো দেশের চেয়ে এর মাথাপিছু জিডিপি কম।

এ ছাড়াও প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীলতা ও স্বল্প বৈচিত্র্যের রপ্তানি খাত নিম্নমুখী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১১ সাল পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যেও পতন অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি এসব উপাদান নিয়ন্ত্রণে এলেও বছরে প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যুত খাতের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মৌলিক সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে; যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পর্যালোচনায় আরো বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বাংলাদেশের রেটিংয়ের জন্য প্রতিবন্ধক। দুর্বল শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নের পথে বাধা এবং তা বিনিয়োগের পথে ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে মনে করে মুডিস। তবে এপ্রিলে শুরু হওয়া আইএমএফের কর্মসূচি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গতি এনেছে।

এদিকে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও মুডিস মূল্যায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে শুধু ভারত এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।


বিএ রেটিং প্রাপ্ত গ্রুপের দেশগুলোর গড় বার্ষিক মাথাপিছু আয় চার হাজার ৬২০ ডলার। সেই তুলনায় বাংলাদেশের গড় বার্ষিক মাথাপিছু আয় সাড়ে পাঁচগুণ কম। এতো কম আয়ের দেশ হয়েও বাংলাদেশের রেটিং ওই সব সমৃদ্ধ দেশের সমান।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। মঙ্গলবার মুডিস বাংলাদেশের ওপর তাদের বার্ষিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ স্থিতিশীল অর্থনীতি সমেত বিএ৩ রেটিং পেয়েছে। পরপর তিনবার বাংলাদেশ একই রেটিং পেল।এই রেটিং বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান অগ্রগতি প্রকাশ করে।

শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে , ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত বেড়েছে ;আমি যখন আছি- তখন আপনাদের সমস্যা দেখব"-প্রধানমন্ত্রী


ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৮ -মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে পার্বত্য জেলাগুলোর তিন সার্কেলের হেডম্যানদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আশ্বাস দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন। আমি যখন আছি- তখন আপনাদের সমস্যা দেখব।”

পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

“আমি চাই- আপনাদের ঐতিহ্য, নিয়ম ও প্রথা যেন বজায় থাকে”, হেডম্যানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন “আমি তো চাই- আপনাদের ঐতিহ্য, নিয়ম ও প্রথা যেন বজায় থাকে”,।
চিরদিন থাকব না। বার বার এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।” ভূমির মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনাদের ভরসা থাকা উচিত- আমরা যখন শান্তি চুক্তি করেছি, তখন তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের।”

“আগের সরকার সমস্যা জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। আর এই সমস্যা তাদেরই সৃষ্টি”, অভিযোগ করেন তিনি।

সবাইকে সহনশীল আচরণ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজের দেশে কেন সংঘাত হবে? রক্ত ঝরবে?”কোনো গোষ্ঠী, সংস্থা বা উন্নয়ন সহযোগীর নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদেরও ছাড় দিতে হবে। আপনাদেরও দেখতে হবে, আপনারা কতোটা ছাড় দিতে পারেন। অনেকে বন্ধু সেজে কাছে আসবে। কিন্তু মঙ্গল হবে না।”


এর আগে চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় পার্বত্য এলাকার খাজনা সীমিত পরিমাণে হলেও বাড়ানোর কথা বলেন। সার্কেল চিফ, হেডম্যান ও কারবারীদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান খাগড়াছড়ি জেলার হেডম্যান শক্তিপদ চাকমা।

বান্দরবান জেলার হেডম্যান মাসৈড়ি মারমা পার্বত্য এলাকায় শিক্ষার প্রসার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে খাগড়াছড়ির ১৯ মৌজার হেডম্যান আন্নাইউ চৌধুরী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধনসহ সবার পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাতা বৃদ্ধি করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।“কিঞ্চিৎ হলেও বাড়ানো হবে”, বলেন তিনি।

এর আগে গত ৬ জুলাই হেডম্যানদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সার্কেল চিফদের মাসিক ভাতা এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার, হেডম্যানদের ভাতা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা এবং কারবারিদের জন্য মাসিক পাঁচশ টাকা ভাতার ব্যবস্থা করার কথা বলেন


পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “ভূমি কমিশনের বৈঠকে তো আপনাদের সমস্যার কথা বলতে হবে। যোগ না দিলে তো সমস্যা জানা যাবে না।” শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত বেড়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভবনের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরাকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিবাহ নিবন্ধন ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিল পাস


হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ নিবন্ধনের বিধান ঐচ্ছিক রেখে ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিল-২০১২’ সংসদে পাস হয়েছে। এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে হিন্দু ধর্মমতে অনুষ্ঠিত বিয়ে এ আইনের অধীনে নিবন্ধন করা যাবে বলেও বিধান রাখা হয়েছে।মঙ্গলবার বিলটি জাতীয় সংসদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পক্ষে পাসের প্রস্তাব করেন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। উল্লেখ্য, ভারতে ১৯৫৫ সালে ‘হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট’ প্রণীত হয়েছে।

গত ৩ জুলাই বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে এটি পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।হিন্দু বিবাহের দালিলিক প্রমাণ রাখা ও বিবাহ সংক্রান্ত প্রতারণা থেকে হিন্দু নারীদের রক্ষা করতে এ বিল পাস করা হয়েছে।

বিলের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব উত্থাপনের সময় একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম ‘ঐচ্ছিক’ বিধান বাদ দেওয়ার দাবি জানান। পরে সংশোধনী প্রস্তাব ওঠানোর সময়েও তিনি বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। পরে সেটি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ তাদের শাস্ত্রমতে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর কোনো দালিলিক প্রমাণ থাকে না। দালিলিক প্রমাণ না থাকার কারণে বিবাহ পরবর্তী বিবাহ সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বিবাহের যে কোনো পক্ষ বিশেষত: হিন্দু নারীরা বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাদের সহজে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, অভিবাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধন সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ একটি অপরিহার্য বিষয়।

আরো বলা হয়েছে, প্রতারণার সুযোগ বন্ধ করা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা সৃষ্টির লক্ষ্যে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন। বিলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ ঐচ্ছিকভাবে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় থেকে দাবিও উত্থাপিত হয়েছে।

বিলের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে সময় সময় নির্ধারিত এলাকা এবং সিটি করপোরেশন বহির্ভূত এলাকার ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলা এলাকায় একজন ব্যক্তিকে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক হিসেবে নিয়োগ দেবে।বিলের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক না কেন, ২১ বছরের কম বয়স্ক কোনো হিন্দু পুরুষ বা ১৮ বছরের কম বয়স্ক কোনো হিন্দু নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তা এ আইনের অধীন নিবন্ধনযোগ্য হবে না।

প্রস্তাবিত আইনের ৬ ধারায় বিবাহ নিবন্ধনের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্ম, রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর ওই বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে যে কোনো পক্ষের নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধক নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিবাহ নিবন্ধন করবেন।

Sunday, September 16, 2012

সমঝোতার ফলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্তি পেয়েছে :পিলখানা হত্যাকাণ্ড: জেরায় সাক্ষী প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির



পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষী স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সেদিন সমঝোতার ফলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্তি পেয়েছে। সমন্বয় না থাকায় সেদিনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি—জেরায় আসামিপক্ষের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতে গতকাল সোমবার প্রথমে জবানবন্দি দেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাঁকে জেরা করেন। এই মামলার সাক্ষী আওয়ামী লীগের সাংসদ মির্জা আজমও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর কবির জবানবন্দিতে বলেন, বাসা থেকে সচিবালয়ে যাওয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে মৎস্য ভবনের কাছে টেলিফোনে জানতে পারেন, পিলখানায় গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজমকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বাসভবন যমুনায় যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনিও গাড়ি ঘুরিয়ে যমুনায় যান।

পরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ও মির্জা আজমকে পিলখানায় গিয়ে বিডিআরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করে দেখতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে ব্রতী হয়ে তাঁরা পিলখানার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি বলেন, ‘পিলখানার ফটকে গিয়ে মাইকে আমার ও মির্জা আজমের নম্বর জওয়ানদের দেই। আমরা সাদা পতাকা হাতে এগোতে থাকি। একপর্যায়ে তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা এগিয়ে যাই। জওয়ানরা আমাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে পাঠান, তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আমরা সেনাবাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী। আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। ঢাকা শহর তামা করে দেব।” একপর্যায়ে আমাদের দিকে রাইফেল তাক করে বলে, “তোদের মেরে ফেলব।”’
জেরা: জবানবন্দির পর জাহাঙ্গীর কবিরকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম।
প্রশ্ন: যেসব সৈনিককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং হোটেল আম্বালায় আলোচনায় বসেছিলেন, তাঁদের কারও নাম কি আগে থেকে জানতেন?
নানক: না।
প্রশ্ন: গন্ডগোলের খবর পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসায় ঢোকার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও কাছে কি ফোন করেছিলেন?
নানক: না, করিনি।
প্রশ্ন: যমুনায় যাওয়ার পর আপনার মোবাইলে বারবার ফোন আসছিল, এ কথা তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, যা তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় নথিভুক্ত করেছেন।
নানক: এটা মনে নেই।
প্রশ্ন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে একটি ও সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল, জানতেন?
নানক: সেনাবাহিনীরটা জানতাম।
প্রশ্ন: সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি আপনাকে কি ডেকেছিল?
নানক: হ্যাঁ, আমি সেখানে জবানবন্দি দিয়েছি।
প্রশ্ন: সেনাবাহিনীর তদন্ত দলের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে আসার পর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন?
নানক: আমি কবে গেলাম বলেন? এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন: ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় প্রধানমন্ত্রীর রাতের খাবারের দাওয়াত ছিল। ২৪ তারিখে সেটা বাতিল করা হয়েছিল, জানেন?
নানক: জানা নেই।
প্রশ্ন: বিদ্রোহ শুরুর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাংসদ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে সৈনিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা হয়েছিল?
নানক: জানা নেই।
প্রশ্ন: পিলখানার ভেতরে হত্যাযজ্ঞের খবর কখন পেয়েছিলেন?
নানক: ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার দিকে পিলখানার ভেতরে যাওয়ার পর হত্যাযজ্ঞের খবর জানতে পারি।
প্রশ্ন: বাইরে কিছু লোক মারা যাওয়ার খবর?
নানক: পিলখানার বাইরে কিছু বেসামরিক লোক, পুলিশ আহত হওয়ার খবর আগে পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি তো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ‘আমরা বাসার ভেতর গিয়ে দেখি, যমুনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানগণ এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন।’
নানক: এটা স্মরণে নেই।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী তো তাঁর বক্তৃতায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন?
নানক: এটা ছিল শর্ত সাপেক্ষে।
প্রশ্ন: আপনারা যাঁদের মুক্ত করেছিলেন, তাঁদের নাম বলতে পারবেন?
নানক: না, মনে নেই।
প্রশ্ন: বিদ্রোহের পর ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে দরবারে গিয়েছিলেন, জানেন?
নানক: আমি যাইনি।
প্রশ্ন: সেনাকুঞ্জে আপনার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
নানক: সেটা আমি জানি না।
মাসুদের জবানবন্দি: নানকের জেরা শেষে আদালত কিছু সময় মুলতবি হয়। এরপর বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার (বর্তমানে চীনে বাংলাদেশের দূতাবাসে সহকারী সামরিক উপদেষ্টা) সৈয়দ ফখরুদ্দিন মাসুদ জবানবন্দি দেন। মাসুদ বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় একটি হেলিকপ্টার নিয়ে পিলখানার ওপর দিয়ে উড়ে যান। পরে তাঁকে বলা হয়, পিলখানা থেকে হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি হচ্ছে। তখন তিনি তিন হাজার ফুট ওপরে চলে যান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জানতে চান, হেলিকপ্টারে কজন বসতে পারেন? জবাবে মাসুদ বলেন, দুজন পাইলটসহ আটজনের বসার ব্যবস্থা আছে। আইনজীবী বলেন, ‘আপনারা হেলিকপ্টার থেকে পিলখানায় বৃষ্টির মতো গুলি করেছিলেন।’ সাক্ষী বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
পরে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল মুনিরা জবানবন্দি শুরু করার কিছুক্ষণ পর আদালতের কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী দ্রুত বক্তব্য দেওয়ায় বিচারক জহুরুল হক তাঁকে আস্তে বলার অনুরোধ করে বলেন, ‘ব্রিটিশ পদ্ধতিতে আদালত চলছে। মাননীয় মন্ত্রী দেখে যান, বিচারব্যবস্থা কীভাবে চলছে।’

শিক্ষানীতির জন্য ছাত্রসমাজের সংগ্রামের ৫০ বছর নুরুল ইসলাম নাহিদ |




আজ ১৭ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের শিক্ষানীতির জন্য গৌরবময় সংগ্রামের অর্ধশতাব্দী পূর্ণ হলো। ১৯৬২ সালের সেই গৌরবের দিনটি আমরা প্রতিবছর ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছি।
ষাটের দশকে আমাদের দেশের গৌরবময় ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষানীতি প্রতিরোধ করা এবং একটি গণমুখী, অগ্রসরমাণ, বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম করা। ১৯৬২ সালে তথাকথিত জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান কমিশনের শিক্ষানীতি, ১৯৬৯ সালে এয়ার মার্শাল নূর খানের নেতৃত্বে শিক্ষানীতি—সবই তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাতিল করতে পাকিস্তানি সরকার বাধ্য হয়েছিল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে আনলেও তাঁকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর, তা আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরপর প্রায় তিন দশক ধরে পাঁচ-ছয়টি শিক্ষানীতি প্রণয়নের চেষ্টা করা হলেও কোনোটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বাষট্টির গৌরবময় ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে আমি শিক্ষানীতির আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলাম। আজ অর্ধশতাব্দী পর সফল শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গেও আমি সরাসরি সম্পৃক্ত আছি। আজকের এই শিক্ষা দিবসে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেদিনের শহীদ বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহসহ শিক্ষা আন্দোলনের সব নেতা-কর্মীকে।
জাতীয় শিক্ষানীতি দু-এক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার বিষয় নয়। ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন। ২০১১ সালের মধ্যে সব শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যেই ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্যটির জন্য বহু কার্যক্রম ও প্রস্তুতি চলছে।
অনেকে বলেন, শিক্ষানীতি তো বাস্তবায়িত হলো না। তাঁদের ধারণা, কোনো এক সরকারি ঘোষণায় এক দিনে সবকিছু বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের এই দরিদ্র দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিক্ষার্থী। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নিরক্ষর, বহু ধারার শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। দুনিয়ার মধ্যে শিক্ষায় সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ করা হয় যেসব দেশে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। পুরোনো পদ্ধতি, পুরোনো পাঠ্যক্রম, পুরোনো ধ্যান-ধারণার অধিকাংশ শিক্ষক, সুযোগ-সুবিধার অভাব, বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষমতাবানদের চাপ এবং তার ফলে যথাস্থানে উপযুক্ত লোক নিয়োগদানে বাধা, এমনকি আইন ও বিধিমতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি করাও বড় বাধা ইত্যাদি হাজার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা এবং একদিকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, অন্যদিকে দক্ষ জনবল, দক্ষ শিক্ষক, দক্ষ পরিচালকসংকট ইত্যাদি তো সচেতন মহলের একেবারেই অজানা নয়।
এসব বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সীমাবদ্ধ সম্পদের ব্যবহার করে আমাদের এগোতে হচ্ছে। অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করে একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার কাজ শুরু থেকেই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অনেক ত্রুটি, সীমাবদ্ধতা ও বাধা রয়েছে, তা আমরা বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সংশোধন করে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
নিচে বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা খাতে অগ্রগতির কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:
১. সব মত-পথ, শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে প্রচার, আলোচনা, সভা-সেমিনার, ওয়েবসাইটে মতামত, লিখিত মতামত গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রথম একটি জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
২. ২০১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশের বেশি শিশু স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। ঝরে পড়ার হার ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।
৩. আন্তর্জাতিকভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নির্ধারিত বছর ২০১৫ সাল। কিন্তু আমরা তার অনেক আগেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের সংখ্যাসমতা অর্জন করেছি এবং তা এখন স্থিতিশীল। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শিক্ষায় ছেলেমেয়েদের সমতা অর্জন এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আদর্শ (মডেল) দেশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
৪. ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি মোট ৬৫ কোটির অধিক পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুধু প্রাথমিক স্তরে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হতো। তা-ও মার্চ-এপ্রিলের আগে সম্ভব হতো না। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন পাঠক্রম (কারিকুলাম) অনুযায়ী লিখিত প্রায় ২৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
৫. বর্তমানে যেসব পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়, তা লেখা হয়েছে ১৬ বছর আগে। ইতিমধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশেষ করে প্রযুক্তির জগতে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটে গেছে। এর প্রভাব আমাদের পাঠ্যপুস্তকে নেই। আমরা পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত বছর নতুন পাঠক্রমে সাতটি নতুন বই দিয়েছি। ২০১৩ সালে আরও ৮৬টি নতুন পাঠক্রমের বই তুলে দেওয়ার কাজ চলছে।
৬. সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণী শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখা, সারা দেশে সমমান অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন আর ভিন্নভাবে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। পরীক্ষার সংখ্যাও কমে গেছে।
৭. এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এনে সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রতিবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করা হয় ১ এপ্রিল। এসব পরীক্ষার ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু। ফলাফল ৩০ দিনের মধ্যে। প্রথম বছর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ, পরে ইন্টারনেট, টেলিকনফারেন্স এবং এ বছর পেপারলেস অনলাইনে এসএসসি-এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে।
৮. পাসের হার সারা দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও প্রতিবছর বেড়ে চলেছে।
৯। অনুরূপভাবে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায়ও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর হার লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।
১০. সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষার ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে বোঝা ও উপস্থাপনের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে একটি যুক্তিনির্ভর সমাজ তৈরি হচ্ছে।
১১. প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষক-প্রশিক্ষককে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
১২. স্কুলে ১ জানুয়ারি এবং কলেজে ১ জুলাই ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়েছে। আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে নিয়মিত ক্লাস শুরু হতো না।
১৩. প্রায় ৭৮ লাখ প্রাথমিক ও প্রায় ৪০ লাখ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। মেধা তালিকায় প্রায় ১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে।
১৪. প্রাথমিক স্তরে ৮৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় দুই হাজার এবং স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
১৫. ৪৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় আট হাজার নতুন ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে অথবা চলছে। সরকারি উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে দুই শিফট খোলা হয়েছে।
১৬. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। নতুন আরও আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়ে চালু হয়ে গেছে।
১৭. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬টি গবেষণা উপপ্রকল্পে ১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের গবেষণায় এর আগে এত বেশি বরাদ্দ আর কখনো দেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৮. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে ব্যাপক প্রচার, জনমত গড়ে তোলাসহ বহু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীসংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৯. ২০ হাজার ৫০০ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তৈরি করা হচ্ছে ডিজিটাল কন্টেন্ট।
২০. কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য ১৭টি মাইক্রোবাসে মোবাইল কম্পিউটার ল্যাব এক বছর ধরে দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে।
২১. শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, পরীক্ষার ফরম পূরণ প্রভৃতি কাজ এখন অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যাবতীয় কাজ, নিয়োগ, মন্ত্রণালয়ের সব সিদ্ধান্ত, পরিপত্র, সার্কুলার, প্রজ্ঞাপন, বদলি, প্রমোশন, ছুটি, অবসরভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্ট এখন বেসরকারি শিক্ষকদের অনলাইনে আবেদন গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় অনলাইনে মুহূর্তের মধ্যেই সবাই জানতে পারছেন।
২২. ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২৩. বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি বিষয়ে যেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ শুদ্ধ করে সঠিক তথ্য ও ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
২৪. ভর্তি-বাণিজ্য, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
২৫. মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
২৬. দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপচয় ও অপব্যবহার বন্ধের জন্য সদা সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুরু থেকেই আমি বলে আসছি, জনগণের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তাই এক টাকা দিয়ে দুই টাকার কাজ করতে হবে, এ জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩২। প্রথম থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বাবধানে বছরে দুবার স্কুল-মাদ্রাসা থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হচ্ছে। শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য এটা জরুরি।
৩৩। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচলিত নানা অনিয়ম, অসংগতি দূর করা এবং আরও উন্নত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, বিশেষ করে শিক্ষানীতি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ‘নতুন শিক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
এখানে সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিগত সাড়েতিন বছরে শিক্ষা খাতে সাধিত কতিপয় অগ্রগতির বিষয় উল্লেখ করা হলো। সহজেই এ রকম তালিকা বহু গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ধরনের বহু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ সবকিছুই জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর বাস্তবায়ন। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার লক্ষ্য এবং মৌলিক নীতিগুলো ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্য ও নীতি বাস্তবতার ভিত্তিতে সৃজনশীলভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটাই সঠিক পন্থা। শুধু স্লোগান দিয়ে নয়, এর ফলাফল দেখেই বিচার করতে হবে। এভাবেই শিক্ষা দিবসের লক্ষ্য ও তাৎপর্য অর্জন সম্ভব।
নুরুল ইসলাম নাহিদ: শিক্ষামন্ত্রী। প্রথম আলো

নো ইজি ডে :লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-৪: হ্যাঁ, ওসামা বিন লাদেন : মশিউল আলম



আকাশে চাঁদ নেই, অ্যাবোটাবাদ শহরে লোডশেডিং চলছে। সর্বাধুনিক সমরপ্রযুক্তিতে সুসজ্জিত মার্কিন কমান্ডো বাহিনী পুরো অভিযান চালাচ্ছে পিচকালো আঁধারে নিমজ্জিত বাড়িটির ভেতরে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী ২৪ জন কমান্ডো, অভিযান পরিচালনাকারী অফিসার ও সিআইএর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বেতারযন্ত্রের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘ট্রুপ নেট’।
অন্ধকার আকাশের কোথাও চিলের মতো চক্কর খাচ্ছে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন), সেখান থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে পুরো অভিযানের ভিডিওচিত্র। ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিসহ পেন্টাগন-সিআইএর কর্তারা। লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে—অভিযান পরিচালনাকারীর মুখ থেকে তাঁরা এই নিশ্চিত ঘোষণা শোনার জন্য উদগ্রীব।
কিছুক্ষণ আগেই নিথর হয়ে গেছে লাদেনের বিধ্বস্ত-রক্তাক্ত দেহটি; মেঝেতে নিজের রক্তের ধারায় ডুবে যাচ্ছে তাঁর লাশ। খাটে নিজের একটি পায়ের কবজি চেপে ধরে পাগলের মতো চিৎকার করছে একটি মেয়ে; দূরের এক কোণে, ব্যালকনিতে যাওয়ার স্লাইডিং কাচের দরজার গোড়ায় গুটিসুটি বসে আছে তিনটি ভয়ার্ত, নির্বাক শিশু।
ম্যাট বিসোনেট লিখছেন, ‘লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াল্ট। এখনো অন্ধকার, লোকটির মুখ দেখে তাকে চেনা যাচ্ছে না।..আমি আমার হেলমেটের রেইল সিস্টেমের সঙ্গে লাগানো লাইটটি জ্বালালাম।... বাড়ির সব জানালায় পর্দা টানা, বাইরে থেকে কেউ আমাদের দেখতে পাচ্ছে না, সুতরাং এখন আলো জ্বালানো চলে।
‘..বুলেটের আঘাতে চুরমার হয়ে গেছে লোকটির মুখমণ্ডল। কপালের ডান পাশে একটা গর্ত, মাথার ডান অংশটি উড়ে গেছে। ঝাঁজরা হয়ে গেছে বুকের বুলেটবিদ্ধ জায়গাগুলো। সে পড়ে আছে, রক্তের ধারা বেড়ে চলেছে তার চারপাশে। আমি উবু হয়ে আরও কাছে থেকে তাকে দেখার জন্য তাকালাম, আমার পাশে টমও তাই করল।’
‘টম বলল, “আমার মনে হচ্ছে, এ সে-ই।” কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে কথা বেতারে জানিয়ে দিল না টম, কারণ ও জানে এই খবর ওয়াশিংটনে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ-স্ফুলিঙ্গের মতো। আমরা জানি, প্রেসিডেন্ট ওবামা শুনছেন। সুতরাং আমাদের কোনো ভুল না হয়ে যায়।
‘আমি আমার মাথার ভেতরের চেকলিস্টগুলো একবার উল্টেপাল্টে দেখে নিলাম: লোকটা বেশ দীর্ঘ। প্রায় ছয় ফুট চার ইঞ্চি। ঠিক আছে, মিলে যাচ্ছে। তিনতলায় পুরুষ লোক থাকার কথা মাত্র একজন, তিনি লাদেন। মিলে যাচ্ছে। দুই বার্তাবাহক যে দুই জায়গায় থাকবেন বলে সিআইএ আমাদের বলেছিল, তাঁরা ঠিক সেই দুই জায়গাতেই ছিলেন। মিলে যাচ্ছে।
‘যতই তাঁর মুখের দিকে দেখি, আমার চোখ আকৃষ্ট হয় নাকটির দিকে। নাকটি অক্ষত আছে, আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কিট থেকে বুকলেট বের করে কমপোজিট ফটোগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে লাগলাম। লম্বা নাকটি মিলে যাচ্ছে। দাড়ি ঘনকালো, আমি যেমন ভেবেছিলাম, সে রকম পাকা চুল একটাও চোখে পড়ল না।...
‘রাবারের গ্লাভস হাতে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে শুরু করলাম, ওয়াল্ট তৈরি হতে লাগল কয়েক সেট ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য।..খাটের ওপর যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন যে মহিলা, তাঁর পায়ের জখমের শুশ্রূষা করছিল উইল, ও আরবি বলতে পারে। আমরা পরে জেনেছি, মহিলার নাম আমাল আল-ফাতাহ, লাদেনের পঞ্চম স্ত্রী। আমি জানি না কখন কীভাবে তিনি জখম হয়েছেন, কিন্তু জখমটা খুবই সামান্য। সম্ভবত বুলেটের টুকরা বা ভাঙা কোনো কিছুর টুকরার আঘাত লেগেছে তাঁর পায়ের কবজিতে..।”
ঘটনার পরদিন লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে লেখা হয়, মহিলার নাম আমাল আহমেদ আল-সাদাহ, বয়স ২৯, একজন ইয়েমেনি, লাদেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় আফগানিস্তানে, ১১ বছর আগে। তিনি তাঁর পঞ্চম স্ত্রী। হোয়াইট হাউসের সূত্রে গার্ডিয়ান লেখে, তিনি পায়ে বুলেটবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। পত্রিকাটির একই প্রতিবেদনে লেখা হয়, ওই ঘরেই আহত হয়েছিল লাদেনের ১২ বছর বয়সী মেয়ে সাফিনা/সাফিয়া বা আয়েশা। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লেখা হয়, মেয়েটির জখম ছিল পায়ের গোড়ালিতে; মার্কিন কমান্ডোরা লাদেনের শোবার ঘরে ঢোকার আগে সম্ভবত গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
লাদেনের মুখমণ্ডলের ছবি তোলার চেষ্টা করছেন ম্যাট। তিনি লিখছেন, ‘ওয়াল্ট তার কিট থেকে ক্যামেলব্যাক হোস টেনে বের করে লোকটার মুখে পানি ছুড়তে লাগল। আমি খাট থেকে একটা কম্বলের এক অংশ ব্যবহার করে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে রক্ত মুছে দিতে শুরু করলাম। প্রতি ঘর্ষণে মুখটি আরও পরিচিত মনে হতে লাগল। আমি তাঁকে যে রকম বয়স্ক ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশ কম বয়সী দেখাচ্ছিল তাঁকে। তাঁর দাড়ি কালো, মনে হয় কলপ লাগানো হয়েছে।’
অভিযানের প্রস্তুতির সময় এক রাতে ম্যাট, ওয়াল্ট ও চার্লির মধ্যে গল্প হচ্ছিল: লাদেনকে পাওয়া গেলে তাঁর শরীরের কোন অংশে গুলি করা উচিত হবে, কার কী মত। ম্যাট লিখছেন: “‘ওয়াল্ট বলেছিল, ‘চেষ্টা কোরো, [মুদ্রণ-অযোগ্য] ..টার মুখমণ্ডলে গুলি না করার। কারণ, ওর ছবি সবাই দেখতে চাইবে।’ চার্লি বলেছিল, “কিন্তু যদি অন্ধকার থাকে, আর আমি ওর মাথা ছাড়া আর কিছুই দেখতে না পাই, তা হলে আত্মঘাতী বোমায় মরার অপেক্ষা করব না।” আমি বলেছিলাম, ‘..সুযোগ যদি পাওয়া যায়, আমি বলব, বুকে গুলি চালানোই ঠিক হবে।’
ম্যাট দেখতে পেলেন, সেই এখন মুখটা সত্যিই বিধ্বস্ত। ছবি তোলার জন্য রক্ত পরিষ্কার করতে করতে তিনি ভাবছেন: ‘এ রকম জঘন্য একটা মুখ এমন কাছে থেকে দেখা কী অদ্ভুত! গত এক দশক ধরে আমরা যুদ্ধ করে চলেছি যে লোকটার কারণে, সে এখন আমার সামনে পড়ে আছে। ছবি তোলার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দাগি আসামির মুখমণ্ডলের রক্ত পরিষ্কার করার চেষ্টা কেমন পরাবাস্তব মনে হচ্ছে!...এখন আমার দরকার ভালো মানের কিছু ছবি...
‘কম্বল সরিয়ে রেখে আমি আমার ক্যামেরাটা টেনে বের করলাম। এই ক্যামেরায় গত কয়েক বছরে শত শত ছবি তুলেছি আমি।..প্রথমে তুললাম পুরো শরীরের ছবি। তারপর হাঁটু গেড়ে তাঁর মাথার কাছে বসে তুললাম মুখের কয়েকটি ছবি। তাঁর দাড়ি ডানে ও বাঁয়ে সরিয়ে প্রোফাইলের কয়েকটি ছবি নিলাম। আমি আসলে চাচ্ছিলাম তাঁর নাকের ওপর ফোকাস করতে...আমি ওয়াল্টকে বললাম, “ওর ভালো চোখটা খুলে ধরো।” ওয়াল্ট নিচু হয়ে তাঁর চোখের পাতা টেনে ধরল, খুলে গেল প্রাণহীন খয়েরি চোখটি। আমি জুম ইন করে চোখের একটা ছবি নিলাম।...’
নিহত লাদেনের ছবি যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবে প্রকাশ করেনি। কিন্তু ইন্টারনেটে অনেক ছবি বেরিয়ে পড়েছিল। সেগুলোর অধিকাংশই নকল, বানানো ছবি। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ফ্রিডম অব ইনফরমেশন আইন ব্যবহার করে নিহত লাদেনের ছবি প্রকাশ করার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ছবি প্রকাশের অনুমতি দেননি এই যুক্তি দেখিয়ে যে তার ফলে আমেরিকার প্রতি বিদ্বেষ বেড়ে যাবে। ম্যাট বিসোনেট (মার্ক ওয়েন) তাঁর নো ইজি ডে বইটিতেও কোনো আলোকচিত্র প্রকাশ করেননি।
তিনতলায় লাদেনের শোবার ঘরে ম্যাট যখন নিহত লাদেনের ছবি তোলায় ব্যস্ত, তখন বাইরে অভিযান শেষ করে কমান্ডোদের আফগানিস্তান ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানে একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই লেখার আগের পর্বগুলোতে উল্লেখ করা হয়নি যে কমান্ডোদের বহনকারী দুটি ‘ব্ল্যাক হক’ হেলিকপ্টারের একটি নামার সময় লাদেনের বাড়ির বাইরের প্রাচীরের সঙ্গে তার পুচ্ছদেশের আঘাত লেগে ক্র্যাশ করে। সেটি অচল হয়ে সেখানেই পড়ে আছে। কমান্ডোদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবশিষ্ট হেলিকপ্টারটি যথেষ্ট নয়। তাই তাঁদের নিতে আসছে একটি চিনুক হেলিকপ্টার। কিন্তু তার আগে অচল হেলিকপ্টারটিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। বাইরে সেসব আয়োজন চলছে, ম্যাট বিসোনেট তাঁর হেলমেটের সঙ্গে যুক্ত ‘ট্রুপ নেটের’ মাইক্রোফোনে অন্য কমান্ডোদের কথাবার্তা শুনছেন, আর লাদেনের ছবি
তুলছেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি ছবি তুললেন, সিল বাহিনীর ক্যামেরায়।
ওপাশে তাঁর সহযোদ্ধা ওয়াল্ট সংগ্রহ করছেন লাদেনের ডিএনএ নমুনা: ‘ওয়াল্ট লাদেনের রক্তে তুলা চুবিয়ে নিল, আর কিছু তুলা তাঁর মুখে গুঁজে দিয়ে নিল লালার নমুনা। অবশেষে ও বের করল সিআইএর দেওয়া স্প্রিং লাগানো একটা সিরিঞ্জ, অস্থিমজ্জার নমুনা সংগ্রহের জন্য। ঊরুর হাড়ে এই সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে অস্থিমজ্জার নমুনা কীভাবে সংগ্রহ করতে হয় তা আমাদের শেখানো হয়েছে। ওয়াল্ট লাদেনের ঊরুতে সিরিঞ্জ ঢোকানোর চেষ্টা করল, কিন্তু সুঁই কিছুতেই হাড়ের ভেতরে ঢুকছে না...’
অভিযানের এ পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তখনো বাকি। সেটি করার চেষ্টা করছেন ম্যাটের আরবি-জানা সহযোদ্ধা উইল। মেঝেতে যে লাশটি পড়ে আছে, সেটি যে সত্যিই ওসামা বিন লাদেনের, এটা নিশ্চিত করতে হবে। ম্যাট লিখছেন, ‘লাদেনের স্ত্রী আমাল পায়ের জখম নিয়ে এখন ছটফট করে চলেছেন, তিনি কোনো কথা বলতে নারাজ। অন্য মহিলার চোখ দুটি কান্নায় ফুলে উঠেছে, উইল আরবিতে তাঁকে বারবার জিজ্ঞেস করছে, মৃত লোকটি কে? কিন্তু মহিলা কিছু বলছেন না, শক্ত হয়ে আছেন।
“তাঁর নাম কী?”
‘মহিলা বললেন, “শেখ।”’
‘উইল বলল, “শেখ কে?” মহিলা আরও কয়েকটি ডাক নাম বা ছদ্মনাম বললেন। উইল তখন সেখান থেকে গেল ব্যালকনিতে, শিশুদের কাছে। ওরা তখনো সেখানে দেয়ালের পাশে চুপ করে বসে আছে। উইল হাঁটু গেড়ে ওদের সামনে বসে একটি মেয়েকে বলল, “কে এই লোক?”
‘মেয়েটি মিথ্যা বলতে জানে না, সে বলল, “ওসামা বিন লাদেন।”
‘উইলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি সত্যিই জানো তো, এটা ওসামা বিন লাদেন?”
মেয়েটি বলল, “হ্যাঁ।”
‘...ব্যালকনি থেকে ফিরে আসার সময় উইল হলওয়েতে লাদেনের এক স্ত্রীর হাত চেপে ধরে জোরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “এখন তামাশা বন্ধ করেন!”
আগের চেয়ে কঠোর কণ্ঠে সে জিজ্ঞেস করল, “শোবার ঘরে লোকটি কে?”
মহিলা কাঁদতে শুরু করলেন। ভীষণ ভয় পেয়ে বললেন, “ওসামা।”
উইল বলল, “ওসামা কী?”
মহিলা বললেন, “ওসামা বিন লাদেন।”’
মশিউল আলম: সাংবাদিক।#প্রথম আলো