Friday, October 25, 2013

খালেদা-পুত্রের সহযোগী আইএসআই, উদ্বিগ্ন দিল্লি :আনন্দবাজার পত্রিকা


শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি

৯ কার্তিক ১৪২০ শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০১
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার গড়া নিয়ে শুরু হয়েছে সংঘাত। শুক্রবার ঢাকার সোহরাবর্দি উদ্যানে জনসভা করে রবিবার থেকে টানা তিন দিন হরতালের ডাক দিয়েছেন বিরোধী বিএনপি-নেত্রী খালেদা জিয়া। দেশের বিভিন্ন শহরে সরকার ও বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এ দিনই মারা গিয়েছেন সাত জন। আহত শতাধিক। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাঠানো বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়ে দিল্লির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের কার্যকলাপ।



ঢাকার পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই পুরোদস্তুর সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছে লন্ডনের এডমন্টনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা তারেক ও তার দলবলকে। একই সঙ্গে উপমহাদেশে সক্রিয় মৌলবাদী ও জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিএনপি-র এই নেতা। গোয়েন্দা সমন্বয়ের মাধ্যমে দিল্লির হাতে আসা এই সব তথ্যের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে। লন্ডন থেকে ঢাকা, সিঙ্গাপুর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় করা তারেকের যাবতীয় ফোন কলের রেকর্ডও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা দিল্লিকে দিয়েছেন। সেই ‘কল লিস্ট’-ও এখন খতিয়ে দেখছেন দিল্লির কূটনৈতিক কর্তারা।
বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেখানে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, বাংলাদেশের মানুষই তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করবেন। কোনও বিশেষ দলের প্রতি নয়াদিল্লির পক্ষপাতের প্রশ্ন নেই। বিরোধী নেত্রী হিসেবে দিল্লি সফরে আসা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং তৎকালীন কেন্দ্রের শীর্ষ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। শাসক দল আওয়ামি লিগ নেতৃত্বের তাতে গোঁসা হলেও দিল্লি আমল দেয়নি।
কিন্তু ভারতের উদ্বেগের কারণটা অন্য। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাঠানো তথ্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশে ক্ষমতায় ফিরতে আইএসআই ও মৌলবাদী শক্তির সাহায্য নিচ্ছেন বিএনপি-র উদীয়মান নেতা তারেক রহমান। বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, আগের বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ কার্যত মৌলবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত শুধু বাংলাদেশের প্রশাসনকেই চ্যালেঞ্জ জানায়নি, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলেছিল। ভারত-বিরোধী নানা জঙ্গি গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি গাড়তে দিয়েছিল বিএনপি-জামাত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের ওই অফিসার বলেন, খালেদা জিয়া দিল্লিতে এসে অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন, ফের ক্ষমতায় এলে অতীতের সে-সব ভুল তাঁর দল আর করবে না। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, তারেকের কার্যকলাপ মোটেই তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বিএনপি-র মুখপাত্র তথা কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম অবশ্য মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামি লিগ সরকার। মির্জা বলেন, “তারেকের জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই এই সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসায় নেমেছেন। তিনি মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। পড়াশোনাও করছেন। আইএসআই বা জঙ্গি শক্তির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই।”
কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের থেকে তারেকের আইএসআই-সংস্রব ও মৌলবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়ার পর আশু ও দীর্ঘমেয়াদি দু’ধরনের বিপদই দেখছে দিল্লি।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সংঘাত যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। বিএনপি-র সহযোগিতায় মৌলবাদীরা এই সুযোগে সক্রিয় হলে সেই অশান্তি যত বাড়বে, সংখ্যালঘুদের জীবন-জীবিকাও বিপন্ন হয়ে পড়বে। অশান্ত আবহাওয়ার সুযোগে ফের সেনা-অভ্যুত্থানের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এটা আশু বিপদ। দীর্ঘমেয়াদি বিপদটির প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী।
কী সেই দীর্ঘমেয়াদি বিপদ?
ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, কংগ্রেসের মতোই নেতৃত্ব পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া চলছে বিএনপিতে। কংগ্রেসে যেমন সনিয়া গাঁধীর পরের প্রজন্মের নেতা হিসেবে রাহুলকে তুলে আনা হচ্ছে, ৬৮ বছরের খালেদা জিয়াও তেমনই বিএনপি-র দায়িত্ব ধীরে ধীরে তুলে দিচ্ছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন ৪৬ বছরের তারেকের হাতে। বস্তুত ২০০১ সাল থেকেই রাজনৈতিক ভাবে অতিসক্রিয় তারেক রহমান। সেই সময়ে ঢাকায় খালেদার বাড়ি ‘হাওয়া ভবন’-এ বসে নির্বাচন পরিচালনায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের জমানায় তিনি ছিলেন ক্ষমতার দ্বিতীয় কেন্দ্র। পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সরকার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার ঠিক আগে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে লন্ডনে চলে যান তারেক। কিন্তু বিএনপি-র শীর্ষ নেতারা মাঝেমধ্যেই লন্ডন গিয়ে তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে বিএনপি-র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাত দিন ধরে নানা অনুষ্ঠানে তারেকের জন্মদিন পালন করে। খালেদা জিয়া নিজেও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের এমন এক ভাবী নেতার সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগাযোগ নিশ্চিত ভাবেই ভারতের পক্ষে সুসংবাদ নয়। কারণ ভবিষ্যতে বিএনপি-র নীতি-নির্ধারণেও এই পাক ও মৌলবাদী-ঘেঁষা স্বর শোনা যেতে পারে। বাংলাদেশ ফের জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠুক এটা কখনওই দিল্লির কাম্য নয়।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে ঢাকার সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসারের কথায় তবে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্পর্শকাতরতার বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখেই দিল্লি যা পদক্ষেপ করার করবে। Daily Anandabazar

নষ্ট গিয়াস কামালের চোখে : একুশে টিভি, ড. হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা -তার কন্যার প্রেমিক রিক্সাচালকের হামলা এবং সালীম সামাদ তথ্যসন্ত্রাসী

ড. হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন -
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে-চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা।

কবিতাটা মনে পড়লো এক নষ্ট লোকের মৃত্যুর খবর শুনে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একুশে টেলিভিশন এক যুগান্তকারী অধ্যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে দেয়ার প্রত্যয়ে মানবতার কল্যাণে সায়মন ড্রিংয়ের নেতৃত্বে এই টেলিভিশন গণমানুষের অধিকারের কথা বলতো। জাতীয়তাবাদী-জামায়াত চক্রের সাংবাদিকদের শীর্ষ সর্দার গিয়াস কামাল চৌধুরী একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য হাইকোর্টে ১৯৯৯ সালে 'জনস্বার্থে' একটি মামলা দায়ের করেন। বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয়তাবাদী সরকার বন্ধ করে দেয় এই টেলিভিমন। এর নাট বল্টু খুলে নিয়ে এনটিভি -আর টিভি শুরু করেন বেগমের উপদেষ্টা ফালু সাহেব। এই ইতিহাস সবার ই জানা। আরো জানা আছে সেই একুশে টিভি এখন জাতীয়তাবাদী-জামায়াতী শক্তির মিথ্যাচারের শক্ত হাতিয়ার। সত্যি সেলুকাস! মঙ্গলযাত্রা কী আর মঙ্গলেই থাকে? অমঙ্গলেই যাত্রা হলো তার!এখনো তবু আমরা স্বপ্ন দেখি -শুভ শক্তির জয় হবেই একদিন!!
হুমায়ুন আজাদ স্যারের উপর হামলার পর কোন একদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক খবরপত্র হেডলাইন পড়ে চমকে উঠি। গিয়াস কামাল চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকাটির রিপোর্টের ভাষা এবং তথ্য এতোটাই নোংরা এতোটাই ঘৃণ্য , যা সভ্য সমাজের কলংক। তবু এই ঘৃন্য ব্যক্তিদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্যেই তুলে ধরলাম তার মূল অংশ।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের কন্যার সাথে এক রিক্সাচালকের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন নি হুমায়ুন আজাদ। তার কারণে সেই রিক্সাচালকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। এর প্রতিশোধ নিতেই সেই রিক্সাচালক তার সঙ্গীদের নিয়ে হুমায়ুন আজাদের উপর রাতের অন্ধকারে এই হামলা করে। " খবরপত্রের পুরনো সংখ্যা সংগ্রহ করে বিশাল লীড রিপোর্টে রগরগে বর্ণনার এই মিথ্যা গল্প পড়ে পাঠক বুঝে নিতে পারেন গিয়াস কামাল চৌধুরীর চরিত্র।
সাংবাদিক সালীম সামাদ কে 'তথ্য সন্ত্রাসী ' হিসেবে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি বিএসএস থেকে। এর পর ই সালীম সামাদ কে গ্রেফতার করা হয়। একুশে টেলিভিশন
একাত্তরে নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। তার মা নাকি কবি ছিলেন । ধিক্ এমন জন্ম কে! যে সন্তান মাতৃহন্তা,যে সন্তান মাতৃভূমির প্রতি, জাতীয় পতাকার প্রতি কলংক লেপন করে দেয়-এমন সন্তান কে ধিক্কার জানাই।

খন্দকার মোশতাকের অনুসারী এই প্রবঞ্চক মিথ্যাবাদী এবং তার সমর্থকদের প্রতি যাদের এখনো শ্রদ্ধা আছে- তাদের বাস্তববাদী হয়ে আরেকবার ভেবে দেখবার অনুরোধ রইলো আমার। হুমায়ুন আজাদ স্যারের কবিতার ভাষায় আবার বলতে হয়,

অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।

তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের কথা: তার রাজনীতিঅর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমলিন জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করে আমাকে পীড়ন কোরো না!!

আরো বলে যাই-
আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,আমি পোশাক পরতে চেয়েছিলাম একান্ত আপন রীতিতে,
আমি চুল আঁচড়াতে চেয়েছিলাম নিজের রীতিতে,আমি উচ্চারন করতে চেয়েছিলাম আন্তর মৌলিক মাতৃভাষা-আমি নিতে চেয়েছিলাম নিজের নিশ্বাস।
আমি আহার করতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত মৌলিক খাদ্য,আমি পান করতে চেয়েছিলাম আমার মৌলিক পানীয়।
আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।আমি ভুল বৃক্ষে ফুটেছিলাম। আমার বৃক্ষ তখনো অঙ্কুরিত হয় নি।
আমি ভুল নদীতে স্রোত হয়ে বয়েছিলাম। আমার মেঘ তখনো আকাশে জমে নি।আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি গান গাইতে চেয়েছিলাম আপন সুরে,ওরা আমার কন্ঠে পুরে দিতে চেয়েছিলো ওদের শ্যাওলা-পড়া সুর।
আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওদের মতো ময়লা-ধরা স্বপ্ন দেখতে।
আমি আমার মতো দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো ওদের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়াতে।
আমি আমার মতো কথা বলতে চেয়েছিলাম,ওরা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলো ওদের শব্দ ও বাক্যের আবর্জনা।
আমি খুব ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে ওদের মতো করেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলো বাইরে।
ওরা মুখে এক টুকরো বাসি মাংস পাওয়াকে বলতো সাফল্য,ওরা নতজানু হওয়াকে ভাবত গৌরব,
ওরা পিঠের কুঁজকে মনে করতো পদক,ওরা গলার শেকলকে মনে করতো অমূল্য অলংকার।
আমি মাংসের টুকরা থেকে দূরে ছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি নতজানু হওয়ার বদলে নিগ্রহকে বরণ করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি পিঠ কুঁজের বদলে বুকে ছুরিকাকে সাদর করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি গলার বদলে হাতেপায়ে শেকল পড়েছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।.....

আদালতে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে হুমায়ুন আজাদ স্যারকে যারা হামলা করেছিলো , তারা জেএমবির জঙ্গী। পুলিশ হেফাজতে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে- জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজে নির্দেশ দেবার পর তারা এই হামলা করে। জেএমবি জামাত খুনি জারজ ঘাতকদের সহযোগী গিয়াস কামাল চৌধুরী যে তথ্য তুলে ধরেছিলেন তার 'খবরপত্রের' লীড নিউজে আদালতে সেই তথ্য তুলে ধরার সৎসাহস ছিল না তো! পারেন নি, পারবেন ও না। কারণ, মিথ্যুকেরা কোন সৎসাহস ধারণ করে না। তবু এই মিথ্যাবাদী - ধর্মেও যার স্থান নেই- তিনি এই নষ্ট সমাজের সমাজপতিদের দ্বারা বিশেষ'সম্মানিত' হবেন- নরঘাতক কুমিরদের চোখে জল ও ঝরবে বটে তার জন্যে!!অবাক হই,তার দীর্ঘ জীবদ্দশায় তার অপরাধের কোন বিচার কেউ চাইলো না । এ কারণেই তার অনুসারীদের এতো দাপট! আবারো ধিক্কার জাতির এই কুলাঙ্গার সন্তানের প্রতি!!

রানা প্লাজা ধ্বসে দুই পা হারানো রেহানা আবার হাঁটতে পারছেন:১০৭ জন ফিরে পেলেন হাঁটবার ক্ষমতা


সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থাই সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃত্রিম পা লাগানোয় সহযোগিতার প্রস্তাব করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১০৭ জন পেলেন কৃত্রিম পা। রোগী বাছাইয়ের কাজ করেছে পঙ্গু হাসপাতাল আর পুরো কর্মসূচিটিতে সমন্বয়কের কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জুলফিকার আলী।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর বিমের তলায় আটকা পড়েছিলেন সপ্তম তলায় কর্মরত শ্রমিক রেহানা আক্তার (২০)।
পরদিন ভোরবেলায় উদ্ধার হলেও হারিয়েছেন দুই পা। সেই রেহানা নতুন এক জোড়া পা পেয়েছেন। নতুন পায়ে সবার সামনে কারও সাহায্য ছাড়া হেঁটেছেনও। রেহানাসহ রানা প্লাজা ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পা হারানো ১০৭ জনকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রোসথেসিস ফাউন্ডেশন অব এইচআরএইচ দ্য প্রিন্সেস মাদার। ১০৭ জনের মধ্যে পাঁচজন রানা প্লাজার ধসে পা হারিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের ৬৩ জন চিকিৎসক ও কারিগরি কর্মী রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) একটি ভ্রাম্যমাণ কারখানা বসিয়ে টানা এক সপ্তাহ কাজ করে এসব কৃত্রিম পা তৈরি করেন। স্বল্পমূল্যে কৃত্রিম পা বানানো বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশে আসা ৬৩ সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দেন ফাউন্ডেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ভাজারা রুজিওয়েতপংসতোরা।


নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাপজোক নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের পা হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজনকে পা পরিয়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম পা পরে হাঁটার জন্য অনুশীলন করতে হয়। যাঁরা এখনো হাঁটার চর্চা করেননি, তাঁরা পা না পরে বাড়ি নিয়ে গেছেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিয়োজিত থাই রাষ্ট্রদূত মাদুরোপোসানা ইত্তারং বলেছেন, বাংলাদেশের পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য থাই সরকার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি এ দফার কর্মসূচিকে বলেছেন প্রথম পর্বের কাজ। পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা কৃত্রিম পা লাগিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘দৃঢ় মনোবল দরকার। তাহলেই আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। কৃত্রিম পা নিয়ে অনেকে খেলাধুলাও করেছেন। আপনারাও পারবেন।’

রেহানা আক্তার বলেন, ‘দুই দিন প্র্যাকটিস কইরাই আইজকা হাঁটছি। খুবই ভয় পাইছি, যদি পইড়া যাইতাম। তবু মেলা দিন পরে একা একা হাঁটলাম।’ রেহানা এখনো সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসাধীন। হাঁটুর ওপর থেকে বাঁ পা হারিয়েছিলেন রানা প্লাজার শ্রমিক শিল্পী বেগম। গতকাল তিনিও পেলেন কৃত্রিম একটি পা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন সেটা পরে। কিন্তু মুখে ছিল হাসির আভা। বললেন, ‘নতুন পা লাগানোর পর থেকে মেয়ের সাথে দেখা হয়নি। সে স্কুলে ছিল। দেখলে যে কী খুশি হবে।’ পা পেয়েছে পাঁচ বছরের ছোট্ট ইতিমণিও। যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের তলায় পড়ে পা হারিয়েছে সে। ধুঁকে ধুঁকে কাটছিল ছটফটে শিশুটির জীবন। গতকাল এক চিকিৎসক যখন তাকে পা’টা পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন তার চোখে-মুখে হাসি। যেন পা’টা একবার ঠিকঠাকমতো লেগে গেলেই দেবে এক ছুট।

মাত্র চার বছর বয়সে গ্যাংগ্রিনে দুই পা-ই হারায় ১৬ বছরের তানিয়া আক্তার। এত দিন হাঁটুতে ভর দিয়ে বাসার ভেতরে হাঁটলেও এখন নতুন দুই পা পেয়েছে সে। তবে এখনো নতুন পায়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের লউর ফতেহপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে তানিয়া। তার মা মাজেদা বেগম বলেন, ছোটবেলায় পা কাটা পড়ার পর থেকেই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ফুটফুটে একটা মেয়ে, কিন্তু দুই পা-ই নেই। টাঙ্গাইলের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া আরেফিন রায়হান গত বছর মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে যমুনা সেতুর ওপর দুর্ঘটনায় ডান পা হারায়। অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল আরেফিন। নতুন পা পেয়ে গতকাল থেকেই হাঁটা শুরু করেছে। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেনি। এবার ভালো প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষা দেবে বলে জানায়। রানা প্লাজা ধসে হাত-পা হারানো আরও ২০ জন সাভারের দুটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জনকে সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করে দিয়েছে। আর দুই পা হারানো পাখি বেগম সিডিডিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া সিআরপিতে চলছে অঙ্গ হারানো ১০ জনের চিকিৎসা।

Wednesday, October 23, 2013

তিনি ক্ষমা করার কে- ক্ষমা তো তাঁকেই চাইতে হবে-মুনতাসীর মামুন


শাহরিয়ার কবির কয়েকদিন আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক হিন্দুপ্রীতি নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠে। খালেদার এই সদিচ্ছাকে ‘ভূতের মুখে রামনাম’ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি এক ধরনের ভাঁওতাবাজি বলে মনে করছেন। খালেদা এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খড়কুটো যা পাচ্ছেন তাই আঁকড়ে ধরছেন এবং সেটি স্বাভাবিক। এ অবস্থায় এতটা কড়া মন্তব্য না করলেও তিনি পারতেন। বরং এভাবে বললে বোধ হয় ভাল হতো যে, সব রাজনীতিবিদই এক আধটু ভাঁওতাবাজিতে অভ্যস্ত। কম আর বেশি। খালেদাও রাজনীতিবিদ, ফেরেশতা নন। আসলে, খালেদার প্রতি তার একটা ক্রোধ আছে। সেটিও স্বাভাবিক। দু’দুবার খালেদা তাঁকে জেলে পুরেছেন, অত্যাচার করেছেন তার ‘হিন্দুপ্রীতি’ ছাড়াবার জন্য। না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সেই খালেদাই হিন্দুপ্রীতিতে গলগল, এটি খানিকটা গোলমেলে তো বটেই। শাহরিয়ার কবিরের বোঝা দরকার, সিচ্যুয়েশন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। এখানে সবাই দাবার ঘুঁটি। আবার সবাই কিস্তিমাতের জন্য চাল দেয়ার সুযোগ খুঁজছে। শাহরিয়ারের মধ্যে এখনও শিশুসুলভ ইনোসেন্স বিরাজ করছে। এই যে ডেভিড বার্গম্যান, যিনি প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ডকুমেন্টারি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা তার কত না ভক্ত ছিলাম। শাহরিয়ার তো তাকে নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলেন। সেই ডেভিড এখন বাংলাদেশে বসে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নিয়ে চর্চা করছেন। আচ্ছা, আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনের কথাই ধরুন। খালেদা-নিজামীর আমলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে সংবিধানের কারণে আজ বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, সে সংবিধানের ওপর হামলা করায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে কোন আইনের শাসন নেই।... এ দেশে সাংবিধানিক শাসন নেই, আইনের শাসনও নেই। জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলে জোট সরকার ক্ষমতায় বসেছে, অথচ সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা রাস্তায় চলাচল করার উপায়ও রাখছে না।’ এখানেই থেমে থাকেননি, বলেছেন, ‘তারা [বিএনপি জোট] নাকি সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমঅধিকারের আন্দোলন করছে। ওই সকল ক্রিমিনালের সঙ্গে আমাদের সমঅধিকার হতে পারে না।’ [জনকণ্ঠ ২৪.০২.২০০৪] আর আজ ড. কামাল হোসেন কি বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিচ্ছেন না? আসলে, শাহরিয়ার অর্থ বা ক্ষমতার স্বাদ কোনদিন পায়নি।
আমার তো বেগম জিয়ার বক্তব্য শুনতে বেশ লাগে। বক্তব্য দেয়ার আগে পরিপাটি সুসজ্জিত হয়ে আসেন। তারপর সুন্দর সাজানো একটি রোবোটের মতো বলে যান। তাঁর গলা অবশ্য খানিকটা গনগনে, পরিপাটি সাজের সঙ্গে মেলে না, কিন্তু তাঁর অন্য একটি এ্যাফেক্ট আছে, কেমন যেন ক্রর, ক্রর। আর বক্তব্য তো এন্টারটেইনিং। কোন বক্তব্যের সঙ্গে পূর্ববর্তী কাজের মিল নেই। বর্তমান কাজের সঙ্গে তার অনুভবের মিল নেই। থিয়েটারের কি বলে যেন, বীভৎস রসের স্বাদ পাওয়া যায়, নাটকের দর্শকরা কি তা উপভোগ করেন না?
যাক, ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেল। কী করব, বাঙালীর টিপিক্যাল স্বভাব আর গেল না। ফিরে আসি পূর্ব প্রসঙ্গে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় যে খালেদা আগে কখনও করেননি তা নয়, করেছেন। কিন্তু বিজয়ার শুভেচ্ছা বোধহয় এই প্রথম। প্রশ্ন, হঠাৎ তিনি বিএনপির মৌলিক আদর্শ থেকে পিছিয়ে এলেন কেন? তারপরের প্রশ্ন, বিএনপির মৌলিক আদর্শ কী? দু’টি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দেয়া যায়। মৌলিক আদর্শ হলো, বাবু কালচারের বাবুদের বাংলায় বলা যায়, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ। সামনে ঘোমটাটা হচ্ছে ইসলাম, ঐ আফিম দিয়ে বা ঐ নামে জিকির তুলে মানুষকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ করা ও আওয়ামী এবং হিন্দুদের নিকেশ করা। পাকিস্তানীদের মতো আওয়ামী লীগার ও হিন্দুদের তারা একই মনে করেন। পাকিস্তানীদের মতো ভুল বললাম, এদের দেহ বাংলাদেশী, দিল পাকিস্তানী। এ কারণে তারা ব্যবহার করে দা, কুড়াল, বর্শা। খোকা বাবু এসব নিয়ে সম্প্রতি এই সব পাকিস্তানীদের তৈরি থাকতে বলেছিলেন। সুতরাং, তার এই হিন্দুপ্রীতি শাহরিয়ার কেন, সবাইকে চমকে দিয়েছে। এর কারণ, অনুমান করছি, আসন্ন নির্বাচনে, খালেদার হয়ত ধারণা, যদি হয়, তাহলে বহুল পরিমাণে অন্যান্য সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট দরকার। নির্বাচনে শুধু জয়ী হওয়ার জন্য নয়, এটাও প্রমাণ করা যে, তিনি শুধু রাজাকারদের বা পাকিস্তানীমনাদের নেতা নন, তিনি হিন্দু বা ‘ভারতীয়মনা’দেরও নেতা। এই ভঙ্গি করা বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জামায়াত পিতা মওদুদীর পুত্র সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসে বলে গেছেন, খালেদার পার্টনার জামায়াত নেতারা অবৈধ। জারজ শব্দটা তিনি বলেছেন, আমি আর সেটা উল্লেখ করলাম না। হিন্দু চাকরবাকর দু’একজন আছে অবশ্য খালেদার কিন্তু তাদের সবাইকে হিন্দু রাজাকার হিসেবেই জানে। যা হোক খালেদা যে শুধু পাকিস্তানীমনা জারজদের নয়, বাঙালীদেরও নেতা এই ইমেজটা আন্তর্জাতিক পটভূমিকায়ও খুব জরুরী হয়ে উঠেছে। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রমাণিত যে তিনি, দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসীদের নেতা, এও পাকিস্তানীদের নেতা, পুরনো পাকি বা যুদ্ধাপরাধীদের নেতা। আরও আছে, তিনি জঙ্গীদের নেতা, তিনি মৌলবাদী জঙ্গীদের নেতা, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাতা।
বিজয়ার অনুষ্ঠানে যারা গিয়েছিলেন তাদের একজন এসে বিস্ফোরিত চোখে জানালেন, ভাই একি কা-! খালেদা জিয়া হলে ঢুকলেন আর হিন্দু রমণীরা উলুধ্বনি দিয়ে উঠলেন। এই উলুধ্বনিকে হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া একসময় তুলনা করে চিৎকার করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এখন তিনি যে অবগাহন করলেন উলুধ্বনিতে তার কী হবে? তাঁর কাছে কি এই উলুধ্বনি আযানের চেয়ে মধুর শুনিয়েছে? পরে কি তিনি শুদ্ধ হওয়ার জন্য কয়েকবার স্নান করেছেন? উলুধ্বনি বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জরুরী। নাহলে প্রকাশ্যে তিনি আমাদের বলতে বাধ্য করবেন যে, তিনি একজন ভাঁওতাবাজ। মিথ্যাবাদী। অন্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাঁর কোন তফাত নেই। শাহরিয়ার লিখেছেন, এই উলুধ্বনি খালেদার কানে নিশ্চয় গরম সিসা ঢেলে দিয়েছে। হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি দিয়ে খালেদার হিন্দু নিধনের জবাব দিয়েছেন। শাহরিয়ারের জ্ঞাতার্থে বলি, ধর্মমতে, মুনাফেকদের কানে গরম সিসা আগে থেকেই ঢালা আছে।
খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু নারী ধর্ষিত হয়েছেন, সেটি ১৯৪৭ সালের পর বিভিন্ন দাঙ্গায়ও হয়নি। এই ধর্ষিতাদের প্রতীক পূর্ণিমা, সীমা আরও অনেকে। খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছেন, ১৯৪৭ সালের পর এত হিন্দু কখনও ভিটেমাটি ত্যাগ করেননি। আপনারা মফস্বলের খবর রাখেন কিনা জানি না। সাদেক হোসেন ধোঁকার দা কুড়াল বর্শার থিওরির পর বরিশালের প্রচুর হিন্দু ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। জনকণ্ঠের মফস্বলের পাতায়ই সে খবর বেরিয়েছে। যে সব হিন্দু বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন তারা যেন এসব তথ্য মনে রাখেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি খালেদার একটি বিখ্যাত উক্তি আমি ক্ষমা করে দিলামের কথা মনে হলো। নির্বাচন বিষয়ে সরকারের প্রস্তাবের বিপরীতে, না, না, না, বলার সময় তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানারকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেব না।
আমি কথা দিচ্ছি, আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও অধিক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার কাজে। প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো কোন ইচ্ছা ও সময় আমার নেই। [কালের কণ্ঠ, ২২.১০.১৩]
এ প্রসঙ্গটি ছিল সেই সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এই ক্ষমাতত্ত্ব এত জরুরী মনে হলো কেন? তার একটি কারণ, তিনি জানেন, তিনি যত পরিপাটি হয়েই বক্তৃতা মঞ্চে আসুন না কেন, তাঁর ক্ররতার যে জবাব নেই তা মানুষজন জানেন। জেনারেল জিয়া যে রকম ক্রর ছিলেন, তিনিও তার চেয়ে কম নন। জেনারেলের যোগ্য স্ত্রী। তাঁর ২০০১-০৬ সালের শাসন যে মানুষ ভোলেনি এটি আর কেউ না হলেও তিনি ভাল জানেন। অপরাধী সবসময় আগ্রাসী হয়। কেন তিনি হঠাৎ এমন বলছেন সেটি জিজ্ঞাসার দায়িত্ব ছিল ক্ষমতাবান সাংবাদিকদের। কিন্তু তারা হচ্ছেন এমবেডেড জার্নালিস্ট। খালেদা বা বিএনপির নেতারা কোন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন না। সাংবাদিকরা সেটা জেনেও যান। প্রেস রিলিজটা নিয়ে আসার জন্য। কারণ, খোকার দা কুড়াল যে সত্যি তা তারা জানেন। আরও জানেন, বিএনপি নেতারা অর্থ খরচে কার্পণ্য করেন না।
খালেদার ক্ষমাতত্ত্বে অনেকে উদ্বেলিত হয়েছেন। তার বদান্যতায় তারা আপ্লুত। সব নবীই তো ক্ষমা করে গেছেন মূর্খদের। খালেদাও করলেন। উদ্বেল অবস্থা কেটে গেলে তার বক্তব্যটি পর্যালোচনা করে দেখুন। এমন স্বার্থপর ক্ষমা প্রদর্শন আগে কেউ করেছেন কী না সন্দেহ। তিনি তাঁর ও তাঁর দুই পুত্রের যারা সমালোচনা করেছেন তাদের ক্ষমা করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন সরকারকেও। কারণ, তারা তাঁর এক পুত্রের চুরি ধরে টাকা ফেরত দিয়েছে সরকারকে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের টাকা খাওয়া ভবন, যা হাওয়া ভবন নামে পরিচিত, তার সমালোচনা করেছেন, তাদের তিনি ক্ষমা করলেন। কিন্তু এগুলো কি ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণ? না, সত্য তথ্য। সত্য তথ্যকে অবলীলাক্রমে তিনি অপবাদ আখ্যা দিলেন! তাঁর পুত্রদের প্রতি কে অন্যায় অবিচার করেছে? আমরা বা আওয়ামী লীগ? না জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল ও আদালত। তিনি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান না? তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাসই হচ্ছে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইতিহাস। এখনও তিনি বলছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন [জনকণ্ঠ, ২১.১০.১৩]। অর্থাৎ এখনও মিথ্যা বলছেন। তিনি আমলাতন্ত্রকে ইঙ্গিত করে বলছেন, তাদেরও তিনি ক্ষমা করলেন।
অথচ একতরফা ক্ষমা ঘোষণার দু’তিন দিন আগে বলছেন, কোর্ট চলছে সরকারী নির্দেশে। সরাসরি অবমাননা। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল জারী করলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে চুপ। খোকার দা কুড়াল যে কথার কথা নয় বিচারকরাও তা জানেন। সোহরাব হাসানের ভাষায় বলতে হয় ‘তিনি ক্ষমা করলেন, ক্ষমা চাইলেন না।’
না, বেগম জিয়া ক্ষমা চাইতে পারেন না। তিনি জেনারেল পত্নী, আত্মগর্বে বলীয়ান। তাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে হয়। এবং একমাত্র সাধারণ মানুষই পারে নির্বাচনে যথাযথভাবে পরাজিত করে তাঁকে ক্ষমা চাওয়াতে। এই পরাজয় হবে, তাঁর কৃতকর্মকে ক্ষমা না করা। অন্য অর্থে, তাঁর ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমতাগর্বী এই মহিলা ঘোষণা করেছেন, তাঁর ভবিষ্যত সরকার [তিনি ধরেই নিয়েছেন তিনি জয়ী হবেন] হবে সব নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার। অর্থাৎ রাজাকার জামায়াতী, হেফাজত বা এক কথায় হেজাবি ও ধর্মব্যবসায়ীদের সরকার। আসলে, তিনি কোন ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিতে রাজি নন। ছাড় অন্যদের দিতে হবে। না হয় সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক কেউ স্থান পাবে না। অর্থাৎ হেজাবিদের তিনি ছাড়বেন না।
আমি বরং বেগম জিয়াকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে [তাঁর ভাষা ধার করে বলতে হয় তখন তাঁর নির্দেশে কোর্ট চলত] জেলে পুরে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। তাঁকে তো জেলে নেয়ার নাম করে বিলাসবহুল অট্টালিকায়ই রাখা হয়েছে। রিমান্ডেও নেয়া হয়নি। তার থেকে ক্ষমা করার অধিকার আমার বেশি। আমি ব্যক্তি হিসেবে তাকে ক্ষমা করলাম। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা তাকে ক্ষমা করছে কিনা? বা অন্য কথায় তিনি ক্ষমা করার কে? এই ক্ষমার অধিকার তিনি পেলেন কীভাবে? সেটি কি ঈশ্বর প্রদত্ত না খোকা বা ধোঁকার রাম দা, চাইনিজ কুড়াল আর তীক্ষè বর্শার জোর?
সমষ্টিগতভাবে খালেদা জিয়া ও তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে দল বা বাহিনীকে ক্ষমা করা যায় না অন্তত কয়েকটি কারণে-
১. তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে মিথ্যা বলছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক এটি মানতে তিনি রাজি নন। তিনি ইতিহাস বিকৃত করছেন। অতএব বাঙালী জাতির কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ হওয়ার তারিখটি নিজের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে ৬০/৬৫ পাউন্ডের কেক কাটছেন। এটি জাতির জনকের শুধু অবমাননা নয়, তাঁর লেফটেন্যান্ট মওদুদের ভাষায় রুচি বিগর্হিত। আমরা বলব ধৃষ্টতা।
৩. তিনি যুদ্ধাপরাধী বা আলবদর রাজাকারদের ক্ষমতায় এনেছেন। তারা যখন রাষ্ট্রীয় পতাকা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তখন তা ছিল ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি ও ৬ লাখ বীরাঙ্গনার বুকে লাথির মতো। রাজাকারদের আলবদরদের নেতাকে আর যাই হোক ক্ষমা করা যায় না।
৪. ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলা যা ধর্মদ্রোহিতার সমান। যেমন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে।
অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা যাবে কিনা তা বিবেচনা করা যেতে পারে-
১. তার আমলে হিন্দু মুসলমান নারী। বিশেষ করে নির্যাতিতা হিন্দু নারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. যে সব খ্রীস্টানের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. তাঁর নির্দেশে তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীর নেতাদের অত্যাচারে যে সব হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছেন, দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের লুণ্ঠিত টাকা, মালামাল ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. তাঁর ও রাজাকারদের আমলে যে ৩২০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে ও আওয়ামী লীগার ও সমর্থকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাঁদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. জঙ্গী মৌলবাদী ও হেফাজতীদের সাহায্যে মানুষ হত্যা, দমন-নিপীড়ন, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, কোরান পোড়ানোতে সাহায্য করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. তাঁর দুই পুত্রের অপকর্মের জন্য সরকার ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অপকর্মের সাজা দিয়ে তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতাগ্রাসী প্রবণতাকে বন্ধ করতে হবে এবং এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৭. যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
না, ক্লান্ত লাগছে। বাংলাদেশে আর কোন মহিলা দেশ জাতি মানুষের এত ক্ষতি করেননি। এত দুষ্কর্মও করেননি। তাঁর ক্ষমা চাওয়ার ফিরিস্তি দিতে গেলে বড়সড় একটি বই লিখতে হবে। আমি তো মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করলাম। তিনি ক্ষমা করার কে? আমরা তাকে ক্ষমা করব কিনা সেটাই বিবেচ্য।

Tuesday, October 22, 2013

বেগম জিয়ার উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া -আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী


হাসব, না কাঁদব? আজ লিখতে বসেই চতুরঙ্গের সহৃদয় পাঠকদের কাছে এই প্রশ্নটা করছি। সোমবার (২১-অক্টোবর) ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য শুনে হাসব, না কাঁদব, তখনও স্থির করতে পারিনি, এখনও স্থির করতে পারছি না। নবপ্রযুক্তির কল্যাণে লন্ডনে বসে স্বকর্ণে তাঁর বক্তব্যটি শুনেছি।
বেগম জিয়া বলেছেন, তাঁর পরিবার পরিজনদের ওপর যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন, তাদের সকলের জন্য তিনি ক্ষমা ঘোষণা করছেন। অর্থাৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের (নিশ্চয়ই দুই পুত্রসহ) ওপর যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন তাঁদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হলো। এই ঘোষণাটি শুনেই ধান্ধায় পড়ে গেছি। ‘এ কি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে?’ এটা তো ব্যাঙদের জাতশত্রু সাপের ঘোষণার মতোÑ হে ভেককুল, আমাদের ওপর নির্যাতনের জন্য তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। এ সাপেরাই ব্যাঙ নিধন ও ভক্ষণ করে থাকে।
বেগম জিয়ার ঘোষণাটি স্বকর্ণে শুনে প্রথমে হাসব ভেবেছিলাম। কারণ বিশ্ব-রাজনীতির ইতিহাসে পীড়ক-পীড়িত সেজে ক্ষমা করার ঘোষণা দেয় আগে কোনদিন শুনিনি। প্রথমে ভেবেছি, এই ঘোষণা শুনে হাসি। তারপর ভেবেছি কাঁদি। কারণ, যে বিএনপি সরকারের হাতে দেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ধর্ষিতা নারী এবং রিক্সাচালক ও রাজপথের নিরীহ পথিকের নৃশংস হত্যার রক্ত লেগে আছে, ২৪ অক্টোবরের (২০০৪) ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার রক্ত যখন ঢাকার মাটি থেকে শুকায়নি, সেই দলের নেত্রী যদি এমনভাবে সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা না চেয়ে নিরপরাধীদের ক্ষমা করার ঘোষণা দিতে পারেন, তার নির্লজ্জতা দেখে আমার মতো কেউ কাঁদতে চাইলে অন্যায় হবে কি?
মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, যাঁরা গুরুতর অপরাধ করেন, তাঁদের অনেকে এই অপরাধের জন্য প্রকাশ্য শাস্তি এড়াতে পারলেও অপ্রকাশ্য মানসিক শাস্তি এড়াতে পারেন না। তাঁরা অপরাধ কবুল করেন না। কিন্তু এমন সব স্ববিরোধী কথাবার্তা বলেন, যাতে তাঁদের মানসিক অবস্থার কথা বোঝা যায়। এদের মধ্যে যারা নিষ্ঠুর এবং বিবেকবিহীন, তারা নিজের অপরাধ অন্যের ওপর চাপিয়ে মনের জ্বালা নিবারণের চেষ্টা করেন।
বিএনপি নেত্রীর বর্তমান মানসিক অবস্থা যদি কোন মনস্তত্ত্ববিদের দ্বারা পরীক্ষা করানো হয়, তাহলে হয়ত দেখা যাবে, তার মনে অপরাধবোধ দু’টি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এক, নিজেদের অপরাধ যে জনসাধারণের কাছে ধরা পড়ে গেছে এবং গোপন করার চেষ্টা চালিয়ে কোন লাভ নেই, সেটা বুঝতে পেরে নির্বাচনের আগে দেশের মানুষকে নতুন করে ধোঁকা দেয়ার জন্য বার বার বলছেন, ‘আমরা আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না।’ অর্থাৎ এতকাল যে তিনি এবং তাঁর দল প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছেন তার এক ধরনের প্রকাশ্য স্বীকৃতি। এটা হয়ত তিনি বুঝতে পারছেন না। তাঁর এই বক্তব্য হচ্ছে, ‘ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই না’ গোছের উক্তির মতো।
তার মনের দ্বিতীয় এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় বসে দিনের পর দিন যে নৃশংস ও ভয়াবহ অপরাধগুলো করেছেন, তার দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের ‘ভিকটিম’ সাজিয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি অর্জনের (ভোটের জন্য) চেষ্টা। এটাকে বলা হয়, ভিকটিম সিনড্রোম। এ ক্ষেত্রে অপরাধী ভাবে, তার অপরাধের কথা মানুষ ভুলে গেছে এবং নিজেকেই এই অপরাধের ভিকটিম বা শিকার সাজাতে পারলে মানুষকে প্রতারণা করা যাবে। এটা আত্মপ্রতারণাও।
নাৎসি জার্মানির কোন নেতা আজ যদি কবর থেকে উঠে এসে ইহুদি জাতিকে বলে, ‘তোমরা এতকাল আমাদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছ, যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছ, সেজন্য তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলাম’ তাহলে কেমন হয়? বিশ্বের তাবৎ মানুষ তা শুনে হাসবে, না কাঁদবে? বাংলাদেশের মানুষও আজ বেগম খালেদা জিয়ার ‘ক্ষমা ঘোষণা’ শুনে ভাবছে তারা হাসবে, না কাঁদবে? তাদের কাছে এই ধৃষ্ট উক্তির হয়ত একটিমাত্র জবাবই রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে তার এবং তার দুই আমলের সরকারের গণনির্যাতন এবং ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে কোলাবরেসনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বেগম জিয়া কোন্ মুখে বলছেন, তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের ওপর নির্যাতন চলেছে? তিনি তিন তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ক্যান্টনমেন্টে বসে রানীর হালতে রাজত্ব চালিয়েছেন। তাঁর গায়ে বা তাঁর পরিবারের সদস্য বা দুই পুত্রের গায়ে ফুলের টোকাটি পড়েনি। বরং হাওয়া ভবনে বসে তাঁর ‘যুবরাজপুত্র’ দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তাঁর দুই পুত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের মামলা আওয়ামী লীগ করেনি। করেছে সেনা তাঁবেদার এবং খালেদা জিয়ার পছন্দসই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই। তারপরও গুরুতর সব অপরাধে তাদের দ- দেয়ার বদলে অসুস্থতার ছুঁতোয় প্যারোলে বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
এক এগারোর সময় লোক দেখানোভাবে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করে সুরম্য সাবজেলে রেখে দুই বেলা পঞ্চব্যঞ্জন খাওয়ানো হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি, বিদেশে পাঠিয়ে দেশে ফিরতে না দেয়া, তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি ইত্যাদি হেন হয়রানি নেই যা করা হয়নি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন তো ছিলই।
খালেদা জিয়ার শাসনামলেই শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ ছয়বার ছোট বড় হামলা হয়েছে। এই হামলার সঙ্গে বিএনপি সরকারের কোন কোন শীর্ষ ব্যক্তি এমনকি তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বেগম জিয়ার অসংখ্য জনসভার কোনটিতে কোনদিন একটা পটকাও ফোটেনি। তাঁর গায়ে একটি ফুলের আঁচড়ও লাগেনি। তবু তিনি প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতন-নিপীড়নের ভিকটিম সেজে মায়াকান্না জুড়েছেন; তাঁর কল্পিত নির্যাতকদের জন্য ক্ষমা ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
আমাকে এক বন্ধু বলেছেন, বেগম জিয়ার এই ‘ক্ষমা ঘোষণা’র মধ্যেও দারুণ চালাকি থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে জেলে নেয়নি। নিয়েছিল এক এগারোর ক্যান্টনমেন্ট পরিচালিত সরকার। তারেক রহমানকে জেলে থাকার সময় নির্যাতনের খবরটি যদি সঠিক হয়ে থাকে, সেই নির্যাতনও চলেছে এক শ্রেণীর সেনা অফিসারের দ্বারাই। খালেদা জিয়া কি এখন সেই সেনা অফিসারদের জন্যই কৌশলে ক্ষমতা ঘোষণা দ্বারা আবার ক্যান্টনমেন্টের সমর্থন ও সহানুভূতি ফিরে পেতে চাইছেন? তবে এখন তা চাইলেও পাবেন কি?
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশে যত শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক, কৃষক হত্যা ঘটেছে, বীভৎস নারী নির্যাতন হয়েছে, তার একটিও আওয়ামী লীগ আমলে ঘটলে বিএনপির গর্জনে এখন কান পাতা দায় হতো। এক ইলিয়াস আলীর অপহরণ অথবা গুম-হত্যার অভিযোগ নিয়ে তাদের কত নর্তনকুর্দন। অথচ তাদের আমলে আহসানউল্লাহ মাস্টার, এএমএস কিবরিয়া, হুমায়ুন আজাদসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক হত্যার কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। সার চাইতে আসা ১৮ জন কৃষক-হত্যার কোন প্রতিকার করা হয়নি। আইয়ুব ইয়াহিয়ার আমলেও যা ঘটেনি, ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশ ঢুকিয়ে সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধরের ঘটনায় খালেদা জিয়া নিশ্চুপ ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে মাঝরাতে পুলিশ ঢুকিয়ে ছাত্রীদের বিবস্ত্র করা, লাঠিপেটার ঘটনা সভ্যজগতে ঘটে না। বিএনপির আমলে বাংলাদেশে ঘটেছে। সর্বোপরি ২০০১ সালে ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণিমা শীলসহ অসংখ্য নাবালিকা তরুণীর ওপর বিএনপির ক্যাডাররা যে বর্বর গণধর্ষণ ঘটিয়েছিল, তাদের কাছে বেগম জিয়া ক্ষমা চাইবেন, না, তাদেরই অপরাধী সাজিয়ে তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণার চরম নির্লজ্জতা দেখাবেন? মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধের জন্য আজ সর্বাগ্রে জাতির কাছে বেগম জিয়ার মাথা নত করে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
দেশের মানুষ দেখছেন, বর্তমান সরকার তাদের অনেক ভুলভ্রুটি সত্ত্বেও উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন, যা গত ৪০ বছরে কোন সরকারের আমলে হয়নি। কিন্তু খালেদা জিয়ার চোখে তা পড়ছে না। তার চোখে পড়েছে হলমার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদি দুর্নীতির ব্যাপার। এই দুর্নীতির সূচনা তার সরকারের আমলেই। তিনি এদের ধরার ব্যবস্থা করেননি, তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থাও করেননি। আওয়ামী লীগ আমলেই এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে এবং রাঘববোয়ালদের বিচারের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই বিচার বিলম্বিত হচ্ছে একথা সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও সত্য যে, এই বিচার নানা বাধাবিপত্তি এড়িয়ে ধীরে হলেও চলবে এবং রাঘববোয়ালদের অনেকেই দ- হতে রেহাই পাবেন না। বিএনপির আমল হলে এদের দ- দূরের কথা বিচারই শুরু হতো না। সা.কা. চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধী ও গণনিপীড়ক যে দলের অন্যতম নেতা, তারা কি করে নিজেদের নির্যাতিত সাজিয়ে মায়াকান্না কাঁদে তা এক আজব ঘটনা।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ইতিবাচক বলে সকল মহলে অভিনন্দিত হয়েছে। সেই প্রস্তাবের পাল্টা যে প্রস্তাব বেগম জিয়া সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, তা শুধু হাস্যকর নয়, ‘ডেইলি স্টারের’ মতো বিএনপি সমর্থক ইংরেজী দৈনিকটি পর্যন্ত বলেছে ‘অবাস্তব।’
বিএনপির এই প্রস্তাব যে গ্রহণযোগ্য নয় এবং অবাস্তব তা খালেদা জিয়াসহ তার দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন। তবু একটি সূক্ষ্ম চাল চালার জন্য এই প্রস্তাবটি দিয়েছেন এবং এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। তিনি সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেছেন, তিনি সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানাবেন। আজ (বুধবার) আওয়ামী লীগ যে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সম্ভবত তাতে দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির প্রস্তাব সম্পর্কে তার দলের মতামত জানাবেন।
আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে কি বলবে তা অনুমান করতে কারোই অসুবিধা নেই। কারণ, সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত বেগম জিয়ার প্রস্তাবটি একমাত্র তার নিজের দল ছাড়া আর কোন মহলেই বাস্তব প্রস্তাব বলে স্বীকৃত হয়নি। তথাপি এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ তাদের সংবাদ সম্মেলনে কি বলে তা জানার পরই এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত। আমিও তা করব। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের জবাবে বেগম জিয়ার পাল্টা প্রস্তাব পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো। দেখা যাক এই মূষিকের ভাগ্যে কি আছে?

Sunday, October 20, 2013

সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত :২০০১ থেকে ২০০৫ তার পেটোয়া বাহিনীকে ঠেকান নি কেন খালেদা ? -সুমি খান



সংখ্যালঘুদের সমাবেশে খালেদা আশ্বাস দিলেন তিনি সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত প্রতিহত করবেন। বা: বা: !! এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে!! ২০০১ থেকে ৫ বছর আপনার পেটোয়া বাহিনীকে ঠেকান নি কেন ? তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আপনাকেই তো দায় নিতে হবে। এই ৫ বছর ভয়াবহ নির্যাতন আর জীবন্ত দগ্ধ করে যাদের হত্যা করেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কি? যেদিন মন থেকে এই অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন- সেদিন বলবেন 'এ দেশ সকলের- এখানে কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নেই!' ৫০ বছরে ৫২% থেকে মাত্র ৮% য়ে নমে আসা নিরীহ জনগোষ্ঠী দের নিয়ে আর তামাশা করবেন না মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা!!

চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ঞ মুহুরীর মাথায় গুলি করে হত্যা , বাঁশখালীর দিনমজুর আরতি বালার তিন প্রজন্মকে একসাথে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা,বাঁশখালীর একই পরিবারের চারজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা,সাধনপুরের শীল পরিবারের ১১ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা র দায় আপনার ই ম্যাডাম। ১১ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আমিন চেয়ারম্যান এখনো দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ তার বটবৃক্ষ বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এখনো সাংসদ!! থানা এখনো তাদের কথা তেই চলে। এখানে ২০০১ বিএনপি শাসনামলের আরো কয়েকটি বর্বরতার ঘটনা তুলে ধরছি।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভোলাবাসীর আতঙ্ক কাটছে না !
(প্রথম আলো ৩.১০.০১)

২০ জেলায় আওয়ামি লিগের সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সংঘর্ষ : নিহত ৯
(প্রথম আলো ৫.১০.০১)

অব্যাহত হামলার মুখে উত্তরের অনেক জেলা থেকে সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছেন
(প্রথম আলো ১০.১০.০১)

গলাচিপায় অর্ধশতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি
(প্রথম আলো ১০.১০.০১)

গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার চিত্র ধানের শীষে ভোট দিয়েও সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে
(যুগান্তর ১০.১০.০১)

সংখ্যলঘুদের জন্য চনপাড়া এখন আতঙ্কের জনপদ, বিএনপির সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘরছাড়া তরুণরা, মেয়েদের "তুলে নিয়ে" যাওয়ার হুমকি
(আজকের কাগজ ১০.১০.০১)

আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘুরা বাড়ি ফিরতে চায়
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নড়াইলের কালিয়া ও নড়াগাতীতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত: গোপালগন্জ্ঞের আশ্রিতরা বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নগরকান্দায় এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা '৭১-এর ঘটনাকেও হার মানিয়েছে
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

ভাঙ্গায় মায়ের সামনেই কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ ।
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

শুধু উৎকুলই নয়, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বাগেরহাটের সকল গ্রামই কার্যত এখন অবরূদ্ধ, তীব্র আতঙ্ক
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস : চোখের সামনে বাবা-মাকে মারধর করায় শিশুরাও আতঙ্কিত ।
সংখ্যালঘু নারীধর্ষণের উন্মাদনায় মেতেছে সন্ত্রাসীরা ।
বিএনপি ক্যাডারদের অত্যাচারে কালীগন্জ্ঞের ১১ হাজার মানুষ ঘরছাড়া : পৌর চেয়ারম্যান মান্নানের অভিযোগ
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

আমি কিসের বিচার চাইবো -বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শেফালীরানী
(সংবাদ ১৫.১০.০১)

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা লুটপাট অব্যাহত
( সংবাদ ১৫.১০.০১)

মিরসরাইয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন অব্যাহত । পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
(সংবাদ ১৫.১০.০১)

নাজিরপুরে বিএনপি সন্ত্রাসীদের তান্ডব : হামলার ভয়ে বরগুনা ও যশোর শহরে সংখ্যালঘুদের আশ্রয় গ্রহণ
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

সংখ্যালঘু নির্যাতন : পরিবারের তিন নারীর সম্ভ্রমহানি
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

মতলব ও শাহরাস্তিতে প্রতিমা ভাংচুর !
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই কমলারানী তার বাড়িতে হামলার বিবরণ দিলেন
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

এই দুর্বৃত্তদের বিচার করবে কে? রামশীলের আশ্রয়কেন্দ্রে অসংখ্য নির্যাতিত মুখ
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

গৌরনদীতে সংখ্যলঘু দুই ভাইকে বেঁধে রেখে তাদের গণধর্ষণ করেছে বিএনপির ক্যাডাররা
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

চাটখিলে আওয়ামি লিগ নেতা অপহৃত :ঈশ্বরগন্জ্ঞে ৯ টি মূর্তি ভাঙচুর
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

সংখ্যলঘু ও আওয়ামি লিগের ওপর চলছে সহিংস নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ ও দেশ ছাড়ার হুমকি
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

গৌরনদী আগৈলঝাড়ার বাস্তুচ্যুত মানুষের কান্না : ' ৫ বছর চলেছে হাসানাতের সন্ত্রাস এখন চলছে স্বপনের সন্ত্রাস
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা আতঙ্কিত : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি-মধুপুরে সহিংসতা অব্যাহত
ঝালকাঠির পূর্বফুলহার গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন : বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাসীরা
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

জামালপুর, রংপুর ও নাটোরে প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

নির্বাচন-উত্তর সন্ত্রাসে স্বরূপকাঠির সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ নেতা কর্মীরা এলাকাছাড়া
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

সংখ্যালঘুর কিশোরীর সম্ভ্রমহানি : ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেন ভাঙ্গা বিএনপি সভাপতি
(প্রথম আলো ১৭.১০.০১)

কালীগণ্জ্ঞের তিল্লা গ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা : রেহাই পায়নি অন্ধ বিবেককুমারও
(প্রথম আলো ১৭.১০.০১)

বগুড়ার কাহালুতে প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক।। অনাড়ম্বর পূজার সিদ্ধান্ত
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

রায়পুরে পূজামন্ডপে মূর্তি ভাঙচুর
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

কালিয়াকৈর উপজেলার সংখ্যালঘু পরিবারগুলো এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারে নি
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

সংখ্যালঘুর নির্যাতন : পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কূটনীতিকদের উদ্বেগ প্রকাশ
(যুগান্তর ১৯.১০.০১)

সংখ্যালঘুর ওপর হামলা : ঘটনাগুলো অস্বীকার করার জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপ
(প্রথম আলো ১৯.১০.০১)

দুর্বৃত্তদের কাণ্ড : পূজামণ্ডপে গরুর হাড়
(সংবাদ ২০.১০.০১)

নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের সঙ্গে বিজয়ী দলের কর্মীরা জড়িত : ফেমার প্রতিবেদন প্রকাশ
(সংবাদ ২০.১০.০১)

মিঠামইনে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি : সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে অকথিত অত্যাচার
(সংবাদ ২০.১০.০১)

পালিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরতেও সংখ্যালঘুদের টাকা দিতে হচ্ছে (প্রথম আলো ২০.১০.০১)
নীলফামারীতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা : তদন্ত করে অবশেষে মামলা গ্রহণ
(প্রথম আলো ২০.১০.০১)

নাটোরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ । মির্জাপুরে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর । (২০.১০.০১)
রাজশাহী জেলা জুড়ে আওয়ামি লিগ নেতাকর্মী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন
(সংবাদ ২১.১০.০১)

দেবীদ্বারে আওয়ামি লিগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন । প্রশাসন নীরব
(সংবাদ ২১.১০.০১)

ফরিদপুরে ও কিশোরগণ্জ্ঞে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর : ৬ জন গ্রেপ্তার
(প্রথম আলো ২১.১০.০১)

আমার মতো কেউ যেন অত্যাচারের শিকার না হয় : পূর্ণিমা
(সংবাদ ২১.১০.০১)

রামশীলের দুঃখী মানুষের কথা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না যাওয়ার নেপথ্যে
(সংবাদ ২১.১০.০১)

কচুয়ায় মানুষ আতঙ্কে কাঁপছে : সন্ত্রাসীদের নির্যাতন সেখানে সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে
(জনকণ্ঠ ২২.১০.০১)

রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা । অনেকেই পালিয়েছেন ।
(প্রথম আলো ২২.১০.০১)

নির্বাচন বিজয়ের বেদিমূলে সংখ্যালঘু বলি
(জনকণ্ঠ ২২.১০.০১)

সিলেটে সংখ্যালঘু লোকজন আতঙ্কে আছেন
(জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

মোড়লগণ্জ্ঞে সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট চাঁদাবাজি । অভিযোগে ফল হচ্ছে না ।
(জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

হিজলায় সংখ্যালঘুর বাড়ি নিশ্চিহু : গৃহবধূ নির্যাতিত
(ইত্তেফাক ২৩.১০.০১)

ক্ষুদিরামের 'স্বাভাবিক মৃত্যু' ও প্রিয়বালার ক্ষেত্রে 'অপরাধজনিত নরহত্যা' (প্রথম আলো ২৩.১০.০১)

নৌকার ভোটার আর সংখ্যালঘুদের জন্য কালিয়াকৈর জিম্মি জনপদ (জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

ভোলার নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের আজাহারি : প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, আমরা ভোট দিইনি আগামীতেও দেবো না, শুধু এদেশে থাকতে চাই
(সংবাদ ২৩.১০.০১)

কাপাসিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ
(সংবাদ ২৩.১০.০১)

ভেগুরবাড়িতে এক বিভীষিকার রাত, ধর্ষণের মামলা একটি
(প্রথম আলো ২৪.১০.০১)

ঘটনাস্থল মিরসরাই, বাউফল, না'গণ্জ্ঞ, কালিয়াকৈর ও সৈয়দপুরের সোনাখুলি : সবখানে সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগের নেতা কর্মীদের ওপর চলছে চরম নির্যাতন । চাঁদাদাবি না হলে দেশ ছাড়ার হুমকি
(সংবাদ ০১.১১.০১)

মাকে সন্তুষ্ট করতে নয়, বিএনপিকে সন্তুষ্ট করতেই এই পূজা
(সংবাদ ০৩.১১.০১)

সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে, আওয়ামি লিগ নেতা কর্মীরা ঘরে ফিরতে পারছে না (সংবাদ ০৪.১১.০১)
মাধবপুরে আতঙ্কজনক পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন । প্রতিমা ভাঙচুর ও পূজামণ্ডপে পাটকেল ছোড়া হয়েছে
(সংবাদ ০৪.১১.০১)

বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা অব্যাহত
(সংবাদ ০৪.১১.০১)

নরসিংদীতে সংখ্যালঘুদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতন
(জনকণ্ঠ ০৫.১১.০১)

নাটোরে সংখ্যালঘু নির্যাতন কমলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হয়নি
(সংবাদ ০৬.১১.০১)

সামাজিক আন্দোলনের নেতারা- কালিয়াকৈরে নির্যাতনে হাত-পা ভাঙা হিন্দুরা এসে বিবরণ দিলেন
(প্রথম আলো ০৬.১১.০১)

মানিকগণ্জ্ঞে পরেশ হালদারকে হুমকি চাঁদা ২০ হাজার, নইলে মাথা (জনকণ্ঠ ০৬.১১.০১)
ঘটনাস্থ নীলফমারীর ডোমরা : হিন্দু বিধবার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নেয়ার পাঁয়তারা
(সংবাদ ০৬.১১.০১)

বাগেরহাটে রামকৃষ্ণ আশ্রমে সন্ত্রাসী হামলা । গ্রেফ্তার ২ জন
(ভোরের কাগজ ০৬.১১.০১)

গলাচিপার হরিপদ শীলকে দিগম্বর করে বাজার ঘোরানো হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামির ছোট ভাইয়ের নির্দেশে
(জনকণ্ঠ ০৭.১১.০১)

মিরসরাইয়ের দাসপাড়ায় মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলা সেবাইত খুন, আহত ৩০
(জনকণ্ঠ ০৭.১১.০১)

সন্ত্রাসীদের ভয়ে নরসিংদীর রাজনগরে সংখ্যালঘুরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে
(যুগান্তর ০৮.১১.০১)

গলাচিপাড় হরিদেবপুর : মহিউদ্দিন বাহিনীর হাত থেকে মেয়েদের সম্ভ্রম বাঁচাতে দুই হিন্দু পরিবারের এলাকাছাড়া
(জনকণ্ঠ ০৮.১১.০১)

সরেজমিন রাউজানের সরকারপাড়া : সন্ত্রাসীরা ঘোষবাড়িটি পুড়িয়ে দিলেও সাহায্য নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি
(সংবাদ ০৮.১১.০১)

কলাপাড়ায় এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন, ছেলেকে অপহরণ । দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি, পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন একজন বিএনপি নেতা
(সংবাদ ০৯.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ১ : অন্নদাপ্রসাদ গ্রামে এক বিভীষিকার রাত (প্রথম আালো ০৯.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ২ : ক্ষেতমজুর প্রাণকৃষ্ণও স্ত্রী কন্যা নিয়ে ভারতে চলে যাবেন
(প্রথম আলো ১০.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ৩ : পঙ্গু শেফালীর 'নাকফুল কেড়ে নেয়ার' কাহিনী
(প্রথম আলো ১১.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা : জয়ন্তীর সংগ্রামের কাহিনী
(প্রথম আলো ১২.১১.০১)

রাউজানে সা.কা. বাহিনীর নির্যাতন : ৭ ইউনিয়নের ৫ হাজার সংখ্যালঘু নাগরিক ঘরবাড়ি ছাড়া
(সংবাদ ১৩.১১.০১)

ধর্ষিত সংখ্যালঘুর সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে (জনকণ্ঠ ১৫.১১.০১)

কিশোরগঞ্জে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা, লুটপাট, আহত ৭ (যুগান্তর ১৫.১১.০১)

রাজাকারপ্রেমী খালেদা জিয়ার হিন্দুপ্রীতি - ভূতের মুখে রামনাম:শাহরিয়ার কবির


আমার বাড়িতে আর অফিসে রোজ এক ডজন দৈনিক পত্রিকা আসে। কিছু সৌজন্য সংখ্যা, কিছু কিনতে হয়। সবার আগে যে পত্রিকাটি হাতে তুলে নিই, সেটি জনকণ্ঠ। এই পত্রিকাটির প্রতি দুর্বলতা প্রধানত তোয়াব খানের কারণে। মুক্তিযুদ্ধের পর দৈনিক বাংলা এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যখন সাংবাদিকতায় হাতেখড়িÑ সম্পাদক তোয়াব ভাই শিখিয়েছেন আধুনিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকের নৈতিক, সামাজিক দায় ও অঙ্গীকার কাকে বলে। ২০ বছর পর এই দায় ও অঙ্গীকারের কারণেই খালেদা জিয়ার সরকার বিনা নোটিসে সাপ্তাহিক বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে আমাকে বরখাস্ত করেছিল।
এরপর তোয়াব ভাইয়ের সঙ্গে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশেরও চেষ্টা করেছিলাম। খালেদা জিয়ার রোষানলের ভয়ে কোন মালিক আমাকে নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাননি। এমন এক সময় ছিল তখন কোন পত্রিকা আমার লেখা ছাপতেও আগ্রহী ছিল না। তোয়াব ভাই জনকণ্ঠে যোগ দেয়ার পর তাঁরই কারণে এই পত্রিকার প্রতি আমার আগ্রহ। জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান শুধু মুক্তিযোদ্ধা নন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নিভু নিভু মশালটি তাঁরা যেভাবে জ্বালিয়ে রেখেছেন, সেই আলো মুক্তিযুদ্ধোত্তর নতুন প্রজন্মকে এখনও পথ দেখাচ্ছে, আলোকিত করছে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ার সাহস যোগাচ্ছে।
এর জন্য জনকণ্ঠকে মাসুলও কম দিতে হয়নি। খালেদা জিয়ার প্রথম আমলেই সম্ভবত ১৯৯৫ সালে তোয়াব ভাই, বোরহান ভাই ও শামসুদ্দিন ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল মৌলবাদীদের ফতোয়াবাজির বিরুদ্ধে লেখার জন্য। সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ সেবার পালিয়ে গিয়ে গ্রেফতার এড়ালেও ২০০৭ সালে ঠিকই তাঁকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল এবং ২২ মাস বিনা বিচারে কারানির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছিল।
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন ও গণগ্রেফতারসহ সারা দেশে সন্ত্রাসের যে বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিলÑ মনে হয়েছিল গোটা বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য না করা পর্যন্ত এর অবসান ঘটবে না। জনকণ্ঠে তখন ধারাবাহিকভাবে এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে লিখেছি। এসব লেখার জন্যই ক্ষমতায় আসার পর পরই খালেদা-নিজামীদের সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল। দেশে ও বিদেশে এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদও হয়েছিল। ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ যখন এই গ্রেফতারের নিন্দা করে আমাকে ‘কারাবন্দী বিবেক’বলেছিল। সেদিন জনকণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ছিল সেটি। কারাগারে এক তরুণ বন্দী কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে জনকণ্ঠের সেই সংখ্যাটি এনে লুকিয়ে আমাকে দিয়েছিল। জনকণ্ঠ তখন কারাগারেও নিষিদ্ধ। খালেদা-নিজামীদের নির্মম কারাগারের দুঃসহ পরিবেশে জনকণ্ঠের সেই সংবাদ পড়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি।

দু’ বছর পরে ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ তাদের ঘোষিত কারাবন্দী বিবেকদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিল, যাদের তালিকায় নেলসন মেন্ডেলার মতো মহাজনদের পাশে আমার মতো অভাজনও ছিল। এ্যামনেস্টির প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছিলেন আমি কখন কিভাবে জেনেছিলাম তারা যে আমাকে ‘কারাবন্দী বিবেক’ ঘোষণা করেছেন। আমি জনকণ্ঠের সেই সংবাদ শিরোনামের কথা বলেছিলাম।
খালেদা-নিজামীদের দুঃশাসনের অন্যতম বলী জনকণ্ঠ যখন টিকে থাকার জন্য হাঁসফাঁস করছে, যখন মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে এবং সরকারের রোষানলের কারণে নামীদামী সাংবাদিকরা অন্য কাগজে চলে যাচ্ছেন, যখন নিয়মিত লেখকদের সম্মানী দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে তখনও জনকণ্ঠ ছেড়ে চলে যাইনি। আমার বন্ধু মুনতাসীর মামুন, কলাম লিখিয়ে হিসেবে খ্যাতি, তাঁর গবেষক-ঐতিহাসিকের খ্যাতিকে ম্লান করে দিয়েছে, সেটাও জনকণ্ঠেরই কারণে। মাঝখানে মামুন অভিমান করে দু’বছর জনকণ্ঠে লেখেননি। পাঠকদের চাপের কারণে আবার ওঁকে জনকণ্ঠে ফিরে আসতে হয়েছে। ২০০২ সালে আমার সঙ্গে মুনতাসীর মামুনকে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে ময়মনসিংহের সিনেমা হলের বোমা হামলার কথা বলেছিল খালেদা-নিজামীদের সরকার- পাগলেও তা বিশ্বাস করেনি। মামুনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল জনকণ্ঠে লেখার কারণে।
জনকণ্ঠে যেদিন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর মুনতাসীর মামুনের লেখা ছাপা হয় অন্য সব খবর পড়ার আগে তাদের লেখা পড়ি। গাফ্ফার ভাইকে বলা হয় না বটে, মামুনকে ফোন করে বলি কোন বিষয়টি আমার ভাল লেগেছে। ভুল কিছু থাকলে শুধরেও দিই। গতকাল ও আজ মামুন পর পর দুটো লেখা লিখেছেন জনকণ্ঠে। গতকাল ১৯ অক্টোবর মামুনের লেখার শিরোনাম ছিল ‘এ দেশে কি সত্যিকারের বাঙালীরা বাস করে না’? বিষয় ছিল ইটালিতে এরিক প্রাইবেক নামের এক নাৎসি যুদ্ধাপরাধী মারা গেছে, কোথাও তার কবর হচ্ছে না। ইটালির মানুষ তাকে তাদের দেশে কবর দিতে দেবে না। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আর্জেন্টিনা থেকে, সেখানেও তার কবর হবে না- সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে দেশের সরকার। যুদ্ধাপরাধীর লাশ পড়ে আছে মর্গে, কেউ বলছে তাকে পুড়িয়ে ছাই করে এমন জায়গায় ফেলা হোক কেউ যাতে জানতে না পারে। কারণ কোথাও তার কবর হলে নব্য নাৎসিরা সেখানে মিলিত হয়ে ফুল দেয়ার সুযোগ পাবে। এরপর মামুন প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে যে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, তাদের অনেকের ফাঁসিও হবে, তাদের কবর কোথায় হবে? তার লেখায় গোলাম আযমদের মানবতাবিরোধী অপরাধের নৃশংসতার কিছু উল্লেখ করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের প্রতি যথারীতি বিদ্রুপাত্মক কিছু মন্তব্যও করেছেন। মামুন লিখেছেন‘গোলাম আযমদেরও মৃত্যু হবে। তখন কি হবে? যেহেতু যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষের সরকার, সেহেতু তাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। জেনারেল জিয়া/এরশাদ/খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলে এ প্রশ্ন উঠত না। তারা পারলে এদের কবরে স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে কসুর করবেন না।
আমেরিকা এ সব বিবেচনা করে বিন লাদেনের মৃতদেহ পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। বিন লাদেন এখন বিস্মৃত। কিন্তু, তার মরদেহ পাকিস্তানে থাকলে এখন আজমীরের মতো মাজার শরিফ বানিয়ে ফেলা হতো। আমাদের রাজাকার ও রাজাকারপন্থী পার্টিগুলো কিন্তু এখন থেকেই প্ল্যান ছকে রেখেছে, নবীনগরে গোলাম আযমের মাজার হবে, পিরোজপুরে সাঈদীর আর সাঁথিয়ায় নিজামীর। রাউজানে সাকার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ হবে। যাতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধ কোন বিষয় বলে পরিগণিত না হয়। এবং এক দশক পর হজরত শাহ গোলাম আযম পাকিস্তানীর নামে উরস হবে। যেভাবে জিয়াউর রহমানের কবর মাজারে পরিণত করা হয়েছে। এবং এখন খবরের কাগজ ও টিভি প্রতিবেদনে একে মাজার বলেও উল্লেখ করা হয়, যদিও তা শরিয়তবিরোধী। এগুলো হতে পারে, বাংলাদেশী তো। গোলাম আযমের প্রকাশ্য সমর্থনকারী যদি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন তাহলে সাকার স্মৃতিস্তম্ভ হতে দোষ কি! আর যাই হোক আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তথাকথিত মওলানাদের আর যাই থাকুক ভ্যাটিকানের মওলানাদের মতো সাহস আর ধর্মবোধ নেই। তারা যে এরিকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার কারণ নৈতিকতা, ধর্মবোধ ও মানবতা এবং সভ্যতা বোধ। একটা উপায় হতে পারে, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আলাদা ছোট গোরস্তান।’
মামুনের লেখা পড়ে বিশিষ্ট আলেম, সম্মিলিত ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসানকে ফোন করেছিলাম। তিনি জানালেন, ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরে এ নিয়ে তিনি মুক্তাঙ্গনে গণসমাবেশ করেছেন এবং পবিত্র কোরানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও গণহত্যাকারীরা আল্লাহ ও রসুলের দুষমন। তাদের জানাজাও পড়া যাবে না, কোন গোরস্তানে কবরও দেয়া যাবে না। মামুনের সঙ্গে তিনি একমতÑ ওদের জন্য নির্দিষ্ট গোরস্তান থাকতে হবে। তাঁর মতে খুলনার ডাকাতিয়া বিল রাজাকারদের গোরস্তানের উপযুক্ত স্থান। মওলানা জিয়াউল হাসান আরও জানালেন, মহানবীর (সা) এক দুষমন, গণহত্যাকারী আবু জেহেলের কবরকে গণশৌচাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

১৯৯৭-এর ৪ ডিসেম্বর ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ যুদ্ধাপরাধী এসএ সোলায়মানের লাশ মিরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের গোরস্তানে দাফন করতে দেয়নি। সোলায়মান যদিও এখানে আগে থেকে জমি কিনে রেখেছিলেন তারপরও নির্মূল কমিটির ২৪ ঘণ্টা অবরোধ অবস্থানের কারণে যুদ্ধাপরাধী সোলায়মানকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করতে হয়েছে। নির্মূল কমিটির সেই অবরোধ কর্মসূচীতে বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান, জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ হাসান ইমাম, গণআদালতের অন্যতম বিচারক ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরীসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জনকণ্ঠে ২০ অক্টোবর মুনতাসীর মামুনের লেখার শিরোনাম ছিল ‘পাকিস্তানী জারজদের রাজনীতিও মানতে হবে?’ এ লেখার শুরুতে মামুন চিলির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতীতে পিনোচেটের সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, গণস্মৃতি বলি কিংবা ‘কালেকটিভ মেমরি’ বলি একে সব সময় জাগ্রত রাখতে হয়, নাহলে মানুষ অতীত ভুলে যায়। মামুন খালেদা জিয়ার রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী-জামায়াতপ্রেমের উল্লেখ করেছেন। খালেদা জিয়ার জামায়াত ও রাজাকার প্রেমের বোধগম্য কারণ আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর পুত্র হায়দার ফারুক জানিয়েছেন, যেহেতু জামায়াত ও খালেদার অর্থের উৎস ও গডফাদার অভিন্ন সেহেতু খালেদার পক্ষে কখনও জামায়াত বা জামায়াতের দোসরদের সঙ্গ পরিহার করা সম্ভব নয়।

বিএনপি-জামায়াত আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে যে ১৯৭১ বা ২০০১-এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হবে এ বিষয়ে মুনতাসীর মামুন তাঁর কলামে লিখেছেন, আমরা যারা ভুক্তভোগী ভাবতে গেলেও আতঙ্কবোধ করি। ২০০৬ সালে নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জমানায় প্রথম ১৫০০ দিনের সংখ্যালঘু নির্যাতনের শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিলাম। প্রায় তিন হাজার পৃষ্ঠার এই শ্বেতপত্রে ধারাবাহিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলÑ এসব নজিরবিহীন নৃশংস নির্যাতনের ঘটনার অস্বীকৃতি। প্রথম থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এসব নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘পত্রিকায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতন সম্পর্কে অতিরঞ্জিত সংবাদ ছাপা হচ্ছে।
পত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অসত্য ও ভিত্তিহীন, কারণ পত্রিকার সংবাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের পাঠানো রিপোর্টের কোন মিল নেই।’ (জনকণ্ঠ, ১৮ অক্টোবর ২০০১)
খালেদা-নিজামীদের জোট সরকারের নীতি ও লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ‘হিন্দুশূন্য’ এবং ‘আওয়ামী লীগশূন্য’ করা। জেলা প্রশাসকদের কি ক্ষমতা ছিল জোট সরকারের এই নীতি ও লক্ষ্যের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবেদন প্রদানের? আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এর পুনরাবৃত্তি হবে না। খালেদা-নিজামীদের জোট সরকার কিভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়েছে, প্ররোচিত করেছে, আশ্রয় দিয়েছে এর বহু বিবরণ নির্মূল কমিটির শ্বেতপত্রে রয়েছে।
তখনকার বহুল আলোচিত ঘটনা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা শীলকে গণধর্ষণের প্রতিবেদন যখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় তখন স্থানীয় প্রশাসন সাংবাদিকদের ওপর খড়গহস্ত হয়েছিল। ঘটনা ঘটেছিল ২০০১-এর ৮ অক্টোবর, পত্রিকায় এসেছে ১৬ অক্টোবরে। স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুরোধে নির্মূল কমিটির প্রতিনিধি দল ১৯ অক্টোবর উল্লাপাড়া গিয়ে পূর্ণিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন। ২০ অক্টোবর পূর্ণিমাকে ঢাকায় এনে সংবাদ সম্মেলনে এই নৃশংস নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরা হয়। পূর্ণিমার মা বাসনা রাণী যখন কান্নাভরা গলায় নির্যাতনের বিবরণ দিচ্ছিলেন, উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকেই সেদিন অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, এটি সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা। পরে আদালতে প্রমাণ হয়েছে এটি কোন সাজানো ঘটনা ছিল না। পূর্ণিমার ধর্ষণকারীরা সাজা পেয়েছে।নির্মূল কমিটির শ্বেতপত্রে খালেদা নিজামীদের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রথম ১৫০০ দিনে ২৭৮৬টি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ২০০১-এর এই অক্টোবর মাসে আমাদের শ্বেতপত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৩৬০টি ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমান সরকারের আমলে গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদনে এর দ্বিগুণের বেশি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এসব নির্যাতনের জন্য দায়ী খালেদা জিয়ার সরকারকে কখনও কোথাও জবাবদিহি করতে হয়নি। যারা এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রধান কুশিলব তাদের বিচার হয়নি। হয়নি বলেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বাংলাদেশে এখনও বন্ধ হয়নি।
২০ অক্টোবর জনকণ্ঠে মুনতাসীর মামুনের কলাম শেষ করে প্রথম পাতায় দেখি দারুণ চমকপ্রদ এক সংবাদ, যার শিরোনাম ‘সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত এলে প্রতিহত করব ॥ খালেদা জিয়া’।
আগের দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় ২০০১-২০০৬ সালের প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই অভাবনীয় উক্তি পড়ে অনেক বাংলা প্রবাদ এবং প্রবাদসম বাক্য মনে পড়লÑ যার ভেতর বহুল প্রচলিতটি হচ্ছে ‘ভূতের মুখে রামনাম’! আরেকটি উদ্ধৃতি দেয়া যায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য থেকে ‘একি কথা শুনি আজি মন্থরার মুখে!’
যে খালেদা জিয়ার জমানায় পিতা ও স্বামীকে বেঁধে রেখে তার চোখের সামনে মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে যার জমানায় এক অসহায় হিন্দু মা আগত ধর্ষকদের জোড়হাতে মিনতি করছেনÑ ‘বাবারা তোমরা একজন একজন করে আসো, আমার মেয়েটা খুব ছোট’, সেই খালেদা জিয়া বলছেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত এলে প্রতিহত করব!’ প্রাচীন বাংলা নাটকের সেই বিখ্যাত উক্তিটি নিশ্চয় পাঠকদের মনে আছেÑ ‘কী বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস!’
আজ ২০ অক্টোবর। বারো বছর আগে এই দিন সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাতে ধর্ষিতা পূর্ণিমা সপরিবারে এসে উঠেছিল আমার বাড়িতে। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পূর্ণিমার মা তাদের গোটা পরিবারের উপর নির্যাতনের বিবরণ দেবেন। সন্ত্রাসীরা পূর্ণিমার উপর পাশবিক নির্যাতন করে ক্ষান্ত হয়নি, বাড়ির সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। পূর্ণিমা এবং তার মার পরনে শতচ্ছিন্ন কাপড়। পূর্ণিমার বয়সী আমার কিশোরী কন্যা মুমু আর স্ত্রী ডানাকে বললাম ওদের পরার মতো কিছু কাপড় দিতে। একটু পরে মুমু আমার কাছে এসে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। বলল, বাবা, তুমি দেখেছ পূর্ণিমাকে ওরা কী করেছে? আমি জানি না কী করেছে। পূর্ণিমার তখন কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। আমার মেয়ে পূর্ণিমাকে জামা পরাতে গিয়ে দেখেছে ওর সারা শরীরে খালেদা জিয়ার হিংস্র্র হায়েনাদের কামড়ের দাগ, গায়ের মাংস খুবলে নিয়েছে। মুমুর কান্না শুনে মনে হয়েছিল ওর ওপর যদি এমন অত্যাচার হতো আমি কী করতাম। পূর্ণিমাকে ডেকে বলেছি, এখন থেকে মুমুর মতো তুমিও আমার মেয়ে।

আমার পিতৃদায় মোচন করেছে নির্মূল কমিটির সহযোদ্ধারা। শেখ হাসিনা পূর্ণিমার পরিবারকে জমি দিয়েছেন, অর্থ সাহায্য করেছেন। খালেদা-নিজামীদের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত, নিহত, সম্পদহারা বহু পরিবারকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেও সাহায্য করেছেন। এসব সাহায্যের কথা কখনও তিনি গণমাধ্যমকে জানাননি।

আজ খবরের কাগজে যখন দেখি হাজার হাজার হিন্দুনারী ধর্ষকদের গডমাদার খালেদা জিয়া বলছেন, ‘সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত এলে প্রতিহত করব’, তখন তাকে সবিনয়ে বলতে চাই তিনি ও তাঁর মন্ত্রীরা তখন যদি এসব ঘটনাকে ‘অতিরঞ্জিত’ ও ‘বানোয়াট’ সংবাদ না বলতেন, যদি প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতেন, তাহলে পূর্ণিমাদের মতো হাজার হাজার মেয়ে হামলা ও নির্যাতন থেকে বেঁচে যেত, তিন লক্ষাধিক হিন্দুকে দেশ ছাড়তে হতো না। হিন্দুদের সমর্থন পেতে হলে খালেদা জিয়াকে সবার আগে পূর্ণিমাদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।
জনকণ্ঠের খালেদা জিয়ার খবরে দেখলাম, তাঁকে বরণ করার সময় আগত হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি দিয়েছেন। ধারণা করতে পারি এই উলুধ্বনি নিশ্চয় খালেদা জিয়ার কানে গলানো সিসা ঢেলে দিয়েছিল। কারণ ’৯১ সাল থেকে শুনছি নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়ার একটি প্রিয় বাক্য হচ্ছেÑ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে মসজিদে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে। মনে হয়, শুভেচ্ছা বিনিময়ে আগত হিন্দু নারীরা এভাবেই উলুধ্বনি দিয়ে খালেদা জিয়ার হিন্দুবিদ্বেষের জবাব দিয়েছেন।

জামায়াত ও আইএসআইপ্রেমী খালেদা জিয়া যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন তখন প্রমথনাথ বিশীর সরস গল্পের সেই বাক্যটি মনে পড়ে ‘বাঘে যখন ঘাস খায়, ডাক্তার যখন ভগবানের নাম নেয়, তখন বুঝতে হবে সর্বনাশের আর বাকি নেই।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের যে নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন তাঁদের দায় আমরা বুঝি। কদিন আগে কাগজে দেখেছি ভারতের গুজরাটে মুসলমানদের একটি দল নরেন্দ্র মোদীর জন্য ভোট চাইছেন। ভবিষ্যতদ্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্ভবত এমন পরিস্থিতির কথা ভেবেই লিখেছিলেন, ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়।

২০ অক্টোবর ২০১৩।

ওদের অপপ্রচার, আমাদের জবাব! - ডা : মুহাম্মদ আলী মানিক



বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নিকট রাজনীতি আর জনপ্রিয়তায় ধরাশায়ী হয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে ৷ মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের সাথে এই মিথ্যাচারে হাত মেলায় চীন সমর্থক বাম পন্থীরা। পরে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধ্বজাদারি জাসদও এতে সামিল হয়! টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত মাওলানা ভাসানীর "হক কথা" এই অপপ্রচারে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছিল সেই সময়, তার পরেই ছিল জাসদের "গণকণ্ঠ" আর ইংরেজি "হলিডে" পত্রিকা ৷ এখানে উল্লেখযোগ্য যে হক কথা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ইরফানুল বারি নামে টাঙ্গাইলের কুখ্যাত এক রাজাকার! স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সেই লাগামহীন অপপ্রচার সাধারণ মানুষদের কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত করেছিল! স্বাধীনতার এত বছর পরও সেই মহলটি একই স্টাইলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দল বদল হয়ে সেই মহলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি-জামাত চক্র! মিথ্যাচারে যদি কোনো "নোবেল পুরস্কার" থাকতো , তাহলে বিএনপি-জামাত চক্র নিঃসন্দেহে তা পেয়ে যেত ! নিচে সেই কুখ্যাত লাগামহীন অপপ্রচারের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো:

এক . রক্ষিবাহিনী নাকি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গঠিত ছিল, যা ‘হক কথা’ই বেশি প্রচার করেছিল৷ `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর একজন ভারতীয়কেও খুঁজে পাওয়া যায়নি রক্ষিবাহিনিতে! উল্টো সেই দিন পুরো বাহিনিকেই বাংলাদেশ আর্মিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো৷ যদি রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা নৈতিকতার দিক থেকে এতই খারাপ হত, তা হলেতো বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর মত প্রতিষ্ঠানে তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হতোনা!

দুই. রক্ষীবাহিনীর হাতে নাকি ত্রিশ হাজার জাসদ কর্মী নিহত হয়েছিলো! কিন্তু `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর একটি পরিবারও নিহতদের তালিকা চেয়ে এগিয়ে আসেনি বা বিচার চায়নি! (অনেকটা শাপলা চত্তরের মত মিথ্যাপ্রচার) !

তিন. বিএনপি আর তার মিত্ররা দাবি করে জিয়া নাকি `৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে! ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ১৮টি রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে গঠন করেছিলেন যুগোপযোগী "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ", তাই `৭৫ পট পরিবর্তনের পর সেই ১৮টি দলের কর্মকাণ্ডের মাথ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকার কথা ৷ অথচ সামরিক শাসক জিয়া `৭৫ এর নভেম্বরে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ চার বছর পর দেশে তথাকথিত বহু দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করে ! এই চার বছর জিয়া ভয় , ক্ষমতা আর টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন দল ভেঙ্গে , "দল ছুটদের " নিয়ে সামরিক ছাওনিতে গঠন করে "বিএনপি" ! আর দলের প্রতিকটিও হাইজ্যাক করা হয় ভাসানী ন্যাপ থেকে ! ক্যান্টনমেনটে বন্দুকের নলে দল গঠন করে জিয়া তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের লেবাসে আসলে "এক দলীয় স্বৈরশাসন" প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে মগ্ন ছিলেন ৷ তার অকাল জীবনাবসান না হলে মিসর-লিবিয়া-সিরিয়ার মত বাংলাদেশকেও এক দলীয় স্বৈরশাসকের যাতাকলে নিস্পেষিত হতে হতো! তাই বিএনপি ও তার মিত্রদের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গলাবাজি একটা মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয় !

চার. বিএনপির নেতৃত্বাধীন স্বাধিনতাবিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে অপপ্রচার করে আসছিলো যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ নাকি ভারতের করদ রাজ্যে পরিনত হয়ে যাবে আর দেশে নাকি ইসলাম ধর্ম থাকবে না , মসজিদে নাকি আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি হবে! এত সব অপপ্রচারের পরও আওয়ামী লীগ দুই দুইবার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু তার কিছুই হয়নি ! উল্টো বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই ভারতের তাবেদারি করেছে , এমনকি খালেদা জিয়া ভারত সফরের সময় পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আলোচনা করতে নাকি ভুলে গিয়েছিলেন! আসলে বিএনপি "ক্ষমতায় থাকলে ভারত তোষণ আর বিরোধী দলে থাকলে ভারত দোষন" এ বিশ্বাসী !

পাচ. ফারাক্কা বাঁধ নিয়েও কম অপপ্রচার হয়নি! আওয়ামী বিরোধীরা এতদিন বলে এসেছে যে ফারাক্কার জন্য নাকি বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে! কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুভূমির বদলে সবুজ বিপ্লব ঘটে গেছে! ফারাক্কা বাঁধের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে আবাদী জমির সীমানা বেড়ে গেছে, প্রলয়ংকরী বন্যা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, বাম্পার ফলন হয়েছে আর মঙ্গাও দূর হয়ে গেছে!

ছয়. দুর্নীতি নিয়েও কম অপপ্রচার হচ্ছে না! খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসাবে মোসাদ্দেক আলী ফালু আর হারিস চৌধুরী যে ভাবে "আঙ্গুল ভুলে কলা গাছ" হয়েছেন, শেখ হাসিনার কোনো একান্ত সচিবের বেলায় তার কিছুই হয়নি ৷ তা ছাড়া বাংলাদেশের ধনী লোকদের তালিকা করলে দেখা যাবে যে তাদের ৭০% বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, যাদের বেশির ভাগ দুর্নীতি করে ধনী হয়েছে ! দুর্নীতিতে বিএনপি পর পর তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর আওয়ামী লীগ সেই কালিমা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিয়ে দেশকে ৪০ নম্বরে নিয়ে এসেছিলো !
সাত. বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নাকি বস্তাভর্তি টাকার বিনিময়ে, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেছে! বিএনপি-জামাত গত নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই এই মিথ্যাচার করে আসছে৷ মইন -ফখরুদ্দিন গং যদি বিএনপিকে ইচ্ছে করেই হারাতো, তা হলেতো খালেদা জিয়া পাচ পাঁচটি আসনে জিততে পারতেননা! জে : মইন এর ভাই সহ তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুভাকাংখী ফেরদৌস কোরেশী, মান্নান ভুইয়া, বদরুদ্দোজারা সহজেই জিতে যেতেন যদি সত্যি কোনো ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতো! নির্বাচনে "গো হারা" হয়ে "নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা" র মতই যুক্তি দেখাচ্ছে বিএনপি !

আরো অনেক কিছু নিয়েই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত মিথ্যাচার করে আসছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে কোনো ইস্যু না পেয়ে গলাবাজি আর অপপ্রচারই তাদের একমাত্র অস্ত্র এখন! কিন্তু আগামী দিনের নেতা ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রপথিক সজীব ওয়াজেদ জয়ের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপে বিরোধীদলের লাগামহীন অপপ্রচারে ভাটা পরেছে! বিলবোর্ড , সামাজিক মিডিয়া আর টিভি টক-শোতে বর্তমান সরকারের অভূতপূর্ব সফলতার সচিত্র প্রতিবেদনে বিএনপি-জামাত এখন দিশেহারা !

সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

তুই যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি-মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান


সূর্যের সমস্ত আলো:
ভজন পূজন সাধন আরাধনা/সমস্ত থাক পড়ে।/রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে/কেন আছিস ওরে।/অন্ধকারে লুকিয়ে আপন-মনে/ কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে,/নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে-/দেবতা নাই ঘরে।/তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে/করছে চাষা চাষ-পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ,/খাটছে বার মাস। আমি নিশ্চিত পূজন রবি ঠাকুরের এই কবিতা পড়েছিল। না হয় এতোটা কর্মবীর হওয়ার কথা নয় । ভালোবাসত ও কাজ করতে ।সৃষ্টিশীল সব চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করতো।
আমি যখন চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করছিলাম তখন ও সবে কোর্টে যাওয়া –আসা শুরু করেছে। হুটহাট ছুটে আসতো আমার কাছে। বলতো –“স্যার , বাবা নাই তো তাই অস্থির লাগলে আপনার কাছে ছুটে আসি”।
ওর বাবা একজন প্রয়াত আইনজীবী। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খুব সুনাম ছিল উনার। নিজেও একই পেশাতে এসেছে বলে বাবার পরিচয়টা দিতে ও সংকোচ করত। অসম্মান করে নয়। ওর আত্মমর্যাদাবোধের কারণে।
নিজের পরিচয়েই ও বড় হতে চাইতো। আমার চেম্বারে আসলে না বলা পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতো। বসার পরও চোখ তুলে তাকাত না । মাথা নীচু করে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকতো। ওর মা’র কুশল জিগ্যেস করলেই খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। ঐ সময় সূর্যের সমস্ত আলো ওর চেহারায় দেখতে পেতাম। মা আর মানব-কল্যাণ ছাড়া অন্য কোন বিষয় ও আমার সাথে কমই শেয়ার করত।
ভালোলাগার আবেশ:
মানুষ ভালোবাসত । তাই অনেক পরিচিত জনের স্বার্থপরতা ও ও অকৃতজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করলে ও তা মনের মধ্যে গেঁথে রাখতো না। কিংবা আমাদের অনেকের মত সেটাতে পড়ে থাকতো না বুঁদ হয়ে। বরং যাঁরা ভালোবাসা দেখাতো কিংবা স্নেহ করতো তাঁদের কথা আমাকে বলতো প্রাণ খুলে ।
বলতো, “স্যার , আমিও মানুষকে নিয়ে আপনার মত আশাবাদী। এই যে স্যার, শংকর আংকেল আছেন না , উনি আমার বাবার জুনিয়র ছিলেন । আমার বাবার আদরের কথা উনার মনে আছে। প্রত্যেক সেমিস্টারের শুরুতে উনি নিজেই ফোন করেন, ‘বাবা ,তুমি সেমিস্টার ফি দিয়েছ?’ নিজের সন্তানের মত খোজ খবর রাখেন”।
সিনিয়রের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভাবি-“গাম্ভীর্যের শক্ত খোলসের মধ্যে কত মহত্ব-ঔদার্য যে লুকিয়ে থাকে!”
নিজেকে খুব হীন-নীচ মনে হয়। হঠাৎ করে বলতো, “স্যার , আপনার অনেক মুল্যবান সময় নিয়ে নিলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে প্রণাম করতো পরম ভক্তি নিয়ে । ও চলে যেত ।আমি তাকিয়ে থাকতাম । ওর বিনয়-ভরা অথচ আত্মবিশ্বাসী হেঁটে যাওয়া বড়ই ভালো লাগতো ।
সূর্য ডুবে গেলে পশ্চিম আকাশে লাল আভা বিরাজ করে অনেকক্ষণ। পূজনের প্রতিটি প্রস্থানের পরও সেরূপ ভালোলাগার আবেশ হৃদয়ে লেগে থাকতো। কোন কোন ছাত্রের বেলায় সেরূপ হয় । সব ছাত্র-ছাত্রী সমান। তারপরও কারো কারো বিশেষ স্বকীয়তা আমার মত নগণ্য মানুষের সূক্ষ্মতম অনুভুতির গভীরে চলে যায় । মানুষ হিসেবে এটা আমার দুর্বলতা। এটা আমার ত্রুটি ।

লজ্জায় ভিসি স্যারের সাথে দেখা করিনি:
একবার এমন হল যে , অনেক দিন পুজনের সাথে দেখা নেই। হঠাৎ করে দেখা হল। কোন অনুষ্ঠানে । নাকি প্রিমিয়ার ল স্কুলে! ঠিক মনে করতে পারছি না । আমি জিগ্যেস করলে জানায়, “স্যার ,সিনিয়রের সাথে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে।” আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে ও বলল, “ আমার সিনিয়র তো অ্যাডভোকেট হেনা স্যার।”এটা আমার জানা ছিল না । ও বলে চলে, “ উনার পেশাদারিত্ব অসাধারণ। অনেক জানেন। উনার কাছ থেকে প্রচুর শিখছি”।

কোথাও একবার দেখা হলে ও আমাকে বলল, “ স্যার ,আমার দুর্ভাগ্য যে আমি মাস্টার্সে আপনার ক্লাস করতে পারছি না”।
জানতে চাইলাম, “ কেন কেন?” বলল, “ স্যার , আপনাকে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না ।সংকোচ লাগছে”।
পরে আমার পীড়াপীড়িতে বলল, “ আমি প্রিমিয়ারে মাস্টার্স করছি না। অন্য ভার্সিটিতে করব। ওখানে টিউশান ফি কিছুটা ছাড় পাচ্ছি।”
আমি জিগ্যেস করলাম, “ ওখানে কি ভর্তি কমপ্লিট?” ও বলল, “ না । স্যার”।
বললাম, “আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলবো। আমি বলার আগে অন্য কোথাও ভর্তি হওয়া যাবে না ”।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. অনুপম সেন স্যারের সাথে ওর ব্যাপারে কথা বললাম।
স্যার বললেন, “ না- না এটা হতে পারে না । টাকার অভাবে আমাদের ছাত্র অন্য কোথাও চলে যাবে –তা মেনে নেয়া যায় না । ওর জন্য আমি টিউশান ফি ছাড়ের ব্যবস্থা করবো। তুমি ওকে আমার সাথে দেখা করতে বল”।
স্যারের সিদ্ধান্ত ওকে জানানোর জন্যে ফোন করলাম।ফোন বন্ধ। পাওয়া গেল না ।
ওদের ব্যাচের কোন একজনের মাধ্যমে আমি মেসেজও পাঠালাম। কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। বেশ কয়েক দিন ধরে কোন খবর নেই ওর । শেষে একদিন দেখা হল। হালকা করে বকা দিলাম । মাথা নীচু করে মিটিমিটি হেসে জবাব দিল,“স্যার , আমি আপনার মেসেজটা পেয়েছিলাম। লজ্জায় ভিসি স্যারের সাথে দেখা করিনি”।
বললাম, “ বাবার মত এই মানুষটার কাছে লজ্জা পাওয়ার কী আছে?” ও নিরুত্তর।
পূজনের পূজন:
আমি বদলি হয়ে নোয়াখালী চলে গেলাম। ওখান থেকে খাগড়াছড়ি। অনেকদিন পূজনের সাথে দেখা নেই । কথা নেই । এক সন্ধ্যায় ওর ফোন পেলাম। ঐ সময় কোন এক কাজে আমি প্রিমিয়ার ল স্কুলে ছিলাম। ল ক্যাম্পাস তখনো প্রবর্তক মোড়ে। পূজনের উচ্ছ্বাসিত গলা চিনতে অসুবিধা হল না । ও জানাল , “ স্যার , বি.এস. আর. এম – এ আমার একটি চাকরি হয়েছে। আপনাকে না জানিয়ে রেফারী হিসেবে আপনার নাম দিয়েছি। ওঁরা কিছুক্ষণ পর আপনার কাছে ফোন করবেন”।
ও অনুভব করেছিল – আমাকে না জানিয়ে রেফারী হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করার অধিকার আমি তাকে দিয়েছি।
ওর সাথে কথা বলার পর বি. এস. আর. এম অফিস থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করলেন। তাঁকে যা জানালাম তার মর্ম হল - পূজন আমার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ,ওকে পেলে আপনাদের জন্য ভালো হবে। কথা শেষ করে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। মুনাজাতের পর কম্পিউটারে বসে কাজ করছিলাম। কারো উপস্থিতি আমার মনোযোগ কেড়ে নিল। দেখলাম- পূজন পা ছুঁয়ে কদমবুচি করার জন্য হাত এগিয়ে দিয়েছে । আমি হাত ধরে পেললাম । ও খুব আবেগী গলায় বলল- “স্যার , আজকের মত করতে দেন। না হয় আমি মনে কষ্ট পাব”।
এই হল পূজনের পূজন ।

গত রমযানের কোন একদিন । নগরীর একটি হোটেলে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের ইফতার পার্টি। ওরা দাওয়াত করেছে। আমি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, ঠিক সেই সময় পূজনের ফোন। ও বলল, “ স্যার ,আপনি আসবেন শুনে আমিও ইফতার পার্টিতে চলে এসেছি। অনেকদিন পর আপনার সাথে দেখা হবে”।
ওর কথা শুনে ইফতার মাহফিলে যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। হোটেলের সামনে গিয়ে দেখলাম –পূজন আমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদের প্রিয় ছাত্র পূজন আর নেই:
আমার মোবাইল নষ্ট । সেটা জানিয়ে পরশু ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছি । গতকাল ভোরে গ্রামে যাওয়ার আগে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছি ফেসবুকে। ঈদের নামাজ পড়ে কোরবানি সেরে মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের কবর জেয়ারত করে শহরের দিকে রওনা দিলাম।
রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। বিশেষ করে চাতরী চৌমুহনীতে। যানজটের তেমন উল্লেখযোগ্য কারণ চোখে পড়ল না। যানজট ছাড়ানোর জন্য স্থানীয় কিছুলোক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু মনে হল উনারা নিজেরাই যানজটের অন্যতম একটি কারণ। বিকেল পাঁচটায় রওনা দিয়ে শহরে পৌঁছতে প্রায় নয়টা বেজে গেল।
সেন স্যার আর ইফতেখার স্যারকে মিস করছিলাম। সেন স্যারকে ফোন করে পেলাম। স্যারকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম দেরীতে হলেও। স্যারের সাথে কুশল বিনিময়ের পর স্যার স্নেহভরে বললেন, “ তুমি খুব ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়”।
স্যারের সাথে কথা শেষ করে ইফতেখার স্যারকে ট্রাই করলাম। কোন ভাবে ঢুকতে পারলাম না স্যারের ফোনে। আব্বা আর জাকিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে ঘুমাতে গেলাম।
ফজর আযানের সময় ঘুম ভাঙ্গল। নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।একটি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।জাকিয়ার কণ্ঠ কানে এল-“এই তুমি চাচাকে সকালে নাস্তার দাওয়াত দিয়েছ। উনি এসেছেন। আর তুমি ঘুমিয়ে রয়েছ”।
মনে পড়লো –চাচা শ্বশুর মাস্টার মেরিনার আজিজ সাহেবকে কাল রাতে দাওয়াত দিয়েছিলাম। সাগরে উনার বিচিত্র অভিজ্ঞতা। এজন্য আমরা উনাকে সিন্দাবাদ চাচা ডাকি।
চটজলদি বিছানা ছাড়লাম।মুখ-হাত ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসলাম।দুঃস্বপ্নের কারণে মনটা খচখচ করছে।নাস্তা ভালো লাগছিল না।চাচা-শ্বশুর থাকায় ভদ্রতার খাতিরে কোন রকমে উনার সাথে সময় পার করছিলাম । নাস্তা করা শেষ হলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপ ওপেন করলাম।
ফেসবুকে ঢুকলাম। প্রথম নটিফিকেশনটায় ক্লিক করলাম। এটা ল স্কুলের শিক্ষক প্রিয় ছোটভাই রাজীবের পোস্ট। ওখানে লেখা আছে- “আমাদের প্রিয় ছাত্র পূজন আর নেই”।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল । আমার দু’চোখে অশ্রু অঝোর ধারায় বইতে থাকল। জাকিয়া বলল- কি হল? আব্বা বললেন, “ ও ফুত কি অইয়ে?” আমি অনেকক্ষণ ওদের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়েছিলাম। আব্বা আর জাকিয়া কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়লেন। অনিচ্ছা সত্বেও দুঃসংবাদটা বললাম । উভয়ের হৃদয় থেকে হাহাকার ঝরে পড়লো। ওর বাবার নাম বলায় আব্বা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। উনি নাকি চিনতেন ওর বাবাকে। জাকিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে । ও উঠে অন্য রুমে চলে গেল।
শোয়েবদের তীব্র যন্ত্রনা ও ট্র্যাজিক হিরো সঞ্জয় গান্ধী
আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চ্যাট অপশনে চোখ রাখলাম। আরেক প্রিয় ছাত্র শোয়েবকে দেখলাম অনলাইনে আছে। টেক্সট পাঠানোর সাথে সাথে রিপ্লাই পেলাম। ও নাকি পূজনদের গ্রামে । এক পর্যায়ে শোয়েব লিখল, “তীব্র যন্ত্রনা”।
আব্বার মোবাইল নাম্বারটা ওকে দিলাম। শোয়েব ফোন করলে জানতে পারলাম- দাহ-অনুষ্ঠান প্রস্তুত। শোয়েবকে প্রশ্ন করলাম –“এতো তাড়াতাড়ি?” শোয়েব বলল, “ স্যার , ওর শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। লাংসে পানি ঢুকে গিয়েছিল”।
তাই শেষবার দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করলাম।
পূজনের ওয়ালে চোখ বুলাতে থাকলাম। সবকিছু আগের মতোই আছে। প্রোফাইল ছবিতে ছোটবেলার পূজন হাসছে। অসাধারণ নিষ্পাপ হাসি। কাভারের ছবিতে কনভোকেশনের পোশাকে দুই হাত মেলে দাঁড়ানো আমাদের পূজন।যেন স্রষ্টার কাছে বিশাল মুনাজাত-“হে প্রভু! আমি অনেক ভালো কাজ করতে চাই”।
ওর ওয়ালে চোখ রাখলেই শুনা যাবে দুঃখমাখা অশ্রুপতনের বিকট বিকট শব্দ। বিভিন্ন গ্রুপ ও ফ্রেন্ডের ওয়াল ভিজে যাচ্ছে অশ্রুর বন্যায়।এই বন্যার প্রবাহমান পানি রক্তের চেয়েও লাল। ঘুরে ফিরে পূজনের ওয়ালেই চলে আসি বার বার। সারাটা দিন এভাবেই কাটল। আবারও চোখ বুলাই । ওর ছবিগুলি বারংবার দেখছি । সারা দিন কতবার যে দেখেছি। দেখা শেষ হয় না । কত ভঙ্গীতে কত রকম পোশাকে ছবি তুলেছে ও। কোন কোন ছবি দেখে আজ কিছুটা অস্বস্থিবোধ করেছি, যে ছবিগুলো দেখে আমি আগে আনন্দ পেতাম। আমাদের সদা-পরিপাটি ছাত্রটির সপ্রতিভ স্টাইল আমার কাছে বড়ই মনোমুগ্ধকর ছিল। কোন কোন ছবি দেখে মনে হত –ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোটছেলে ট্র্যাজিক হিরো ড্যাশিং পলিটিশিয়ান সঞ্জয় গান্ধী আমার দিকে তাকিয়ে স্মার্ট ভঙ্গীতে হাসছে।
সঞ্জয় গান্ধী উচ্চশিক্ষিত ছিল না। লেখাপড়ায় ছিল অমনোযোগী কিন্তু আমাদের পূজন তো ছিল ব্যতিক্রম। এলএলএম করার উদগ্র বাসনা নিয়ে ও প্রিমিয়ার ল স্কুলে ফিরে এসেছিল । কিন্তু জীবনের শেষ পরিণতিতে কেন এমন কষ্টদায়ক মিল! টিউশান ফি ওয়েভার লাগবে কিনা জিগ্যেসও করেছিলাম। ও মিষ্টি হেসে কিছুটা দুষ্টুমি করে বলেছিল, “স্যার , চাকরি করছি না”।
এমনই ছিল আমাদের পূজন। শিক্ষক হিসেবে অনেক সম্ভাবনা দেখতে পেতাম ওর মধ্যে।কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মত তুচ্ছ মানুষ ও নগণ্য শিক্ষককে নিয়তি দেখার ক্ষমতা তো দেননি । অনেক বড় হতে পারতো। নিদেনপক্ষে দেশসেরা আইনজীবী । মহাপ্রভু হয়তো আরও ভালো কিছু দেওয়ার জন্য তাকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এই অবুঝ মনতো বুঝতে চায় না। ওর ভাইহারা বোন আর একমাত্র সন্তানহারা মাকে কী বুঝাব ?
পুনশ্চ-কেবলই তোর জন্য:
আমি সব ছাত্র-ছাত্রীর মত পূজনকেও ‘আপনি’ করে বলতাম।
পূজন তুমি তো প্রায়ই অনুযোগ করতে-“ স্যার, আমাকে আপনি করে বললে লজ্জা লাগে।পর পর মনে হয়। আমি কি স্যার এতই দূরের? প্লিজ স্যার ,আমাকে তুই বলে ডাকবেন।” আমি বলতাম, “আমার অন্য ছাত্ররা বলবে আপনাকে বেশি আদর করি। অন্ততঃ সম্বোধনের ক্ষেত্রে আমি বৈষম্য এড়িয়ে সাম্য বজায় রাখতে চাই”।
তুমি বলতে, “স্যার , এটা আমি আদায় করবই”।
হ্যাঁ –রে পূজন! তুই আদায় করেছিস। কিন্তু তুই যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি; তার কি হবে? বল্‌বল্‌! চুপ করে থাকিস না ।
লেখক: সচিব (যুগ্ম জেলা জজ) ভূমি কমিশন,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লামায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলছে প্রকাশ্যে- প্রশাসন নির্বিকার!


চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা বান্রদরবানের লামা উপজেলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গি প্রশিক্ষণের অভিযোগ করেছে স্থানিয় জনগণ।!নির্বিকার উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সংগঠনটির প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রম বন্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
২০১০ সাল থেকে লামা কোর্ট জামে মসজিদের খতিব সিহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে লামায় আফগান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার তদারকিতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। এলাকার ধর্মভীরু তরুণ ও যুবকদেরকে মোবাইল মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বাংলাদেশের আমীর (বর্তমানে কারাগারে আটক) জসিম উদ্দিন আর রাহমানি’র দেয়া বিভিন্ন সময়কার জেহাদি বক্তব্য সরবরাহ করা হয়। দেয়া হয় বিভিন্ন বই-পুস্তক।
এসব বইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা সালাহ উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোট,গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নেতা-নেত্রী ও আলেমদেরকে ' কাফের' বলে ঘোষণা দেয়া বক্তব্য শুনে ও বই পড়ে তরুণরা সংগঠনটির সাথে পরিচয় করায়। পরে পাঠানো হয় জসিম উদ্দিন আর রাহমানির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ঢাকার মোহাম্মদপুরের মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। এখানে প্রায় ৬ মাস থেকে ১ বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। কোট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিহাব উদ্দিন দায়িত্ব নিয়ে লামায় যায়। মসজিদের খতিবের দায়িত্ব নেবার পাশাপাশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন।
মসজিদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন্ন দোকানে কর্মরত অল্প শিক্ষিত তরুণদেরকে একত্রিত করে একটি বাসায় নিয়মিত বৈঠক করে আসছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।,এ ব্যাপারে বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। লামার বেশ কয়েকজন আলেম বলেন, এখানে যে শুধু জঙ্গি প্রশিক্ষণ চালানো হচ্ছে তা নয়, মুসল্লিদের মধ্যে বিভিন্ন আকিদা নিয়ে মতবিরোধও সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্কুলগামী ছাত্র, তরুণ ও বিভিন্ন পেশার যুবকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কোর্ট জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, এ ধরণের কর্মকান্ডের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাকিস্তানী জারজদের রাজনীতিও মানতে হবে? -মুনতাসীর মামুন


নাথান থর্নবার্গ চিলির সান্তিয়াগো থেকে সাপ্তাহিক টাইম পত্রিকার জন্য একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। চিলিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন। সেখানে একজন প্রার্থী মিশেল বাখেলেত। বয়স ৬২। আগেও তিনি চিলির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাঝখানে জাতিসংঘের মহিলা সম্পর্কিত বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ৬২ বছরের এই মহিলার বাবা ছিলেন এক সময় চিলির বিমানবাহিনীর একজন জেনারেল। পিনোচেট ক্ষমতা দখল করলে তাঁকে হত্যা করা হয়।
সান্তিয়াগো থেকে খানিকটা দূরে তালাগান্তে নামক ছোট এক শহরের টাউন স্কোয়ারে মিশেলের নির্বাচনী সভা। তিনি বলছিলেন কোন অপর পক্ষ [প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর ছেলেবেলার বান্ধবী, যার বাবাও ছিলেন এয়ারফোর্সের জেনারেল। এবং রটনা আছে তাঁর বাবাই মিশেলের বাবাকে নিপীড়ন করে হত্যা করেন]-কে কী কী কারণে ভোট দেয়া উচিত নয়। কারণ, মিশেলকে বলতে হলো না, নিচ থেকে একজন চিৎকার করে বললেন, ‘তাদের কোন স্মৃতি নেই।’
এই স্মৃতি এখন চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি ইস্যু। সেই স্মৃতি ইস্যুটি কী? ৪০ বছর আগে, ১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে হত্যা করে জেনারেল পিনোচেট ক্ষমতা দখল করে নেন। আমেরিকার সাহায্যে আলেন্দে চিলির অধিবাসীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন যা কহতব্য নয়। আধুনিক ইতিহাসে তা ‘ডার্টি ওয়ার’ নামে খ্যাত। ঐ সময় সরকারী হিসেবে হত্যা করা হয়েছে ৩,২০০ জন, ২৯,০০০ জনকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং নির্বাসনে গেছেন দু’ লাখ। পাবলো নেরুদাকে সে সময় নানা হেনস্থা করা হয় এবং সেই সময় তিনি মারাও যান। ঐ স্মৃতি চিলির লেখকরা, সাংবাদিকরা অমর করে রেখেছেন। ইসাবেলা আলেন্দের উপন্যাস সে সময়ের দুর্দান্ত দলিল। পিনোচেট এক সময় তাড়িত হয়, তাকে কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানো হয়। কিন্তু স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় তার বিচার সম্পন্ন হয়নি। এরপর চিলিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলছে। সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হচ্ছে। তার ঢেউ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলেও লেগেছে।
এ বছর আবারও নির্বাচনে স্মৃতি কেন ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে? কেননা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইভালিন ম্যার্থেইর ওপর আলেন্দের ছায়া। সেই ছায়ায় বড় হয়ে ওঠা কাউকে চিলির বাসিন্দারা গ্রহণ করতে রাজি নন। যদিও ইভালিন ঐ সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন এবং বলছেন এ কারণে জান্তার কৃতকর্মের জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়ারও কারণ নেই।
পিনোচেট যা করেছিলেন, আমাদের এখানে জেনারেল জিয়া তার চেয়ে ভয়ঙ্কর কা- করেছেন। পিনোচেট সেনাবাহিনী ও সিভিলিয়ান মিলে মাত্র ৩২০০ জন হত্যা করেছিলেন। জিয়া, বিভিন্ন বিবরণ অনুসারে এর চেয়ে বেশি সেনা হত্যা করেছিলেন। আমাদের সেনাদের মানস গঠন এমন ছিল যে, তাঁরা এরপরও জিয়াকে অবতার মনে করতেন। কিন্তু যে অপরাধে সবচেয়ে বেশি অপরাধী জিয়া সে কারণে তাঁর বিচার হয়নি, হওয়া উচিত ছিল। হয়ত এক সময় হবেও। তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের দল ও রাজাকার-আলবদরদের ক্ষমতায় এনেছিলেন। এবং নামডাকঅলা আলবদর রাজাকারদের মন্ত্রী, স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। অর্থাৎ ৩০ লাখ হত্যাকারীর ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন। এটি কম গুরুতর অপরাধ নয়। দেশদ্রোহমূলক অপরাধ। তাঁর কারখানা থেকে বাংলাদেশে নও মুসলিমদের মতো নও রাজাকারদের উৎপাদন করা শুরু করলেন। রাজাকার ফ্যাক্টরির উৎপাদন বেড়েছে এবং তাদের জন্য বাংলাদেশে বাজার পেয়েছে এ কথা স্বীকার না করার অর্থ বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। যারা জিয়াকে ১৯৭৫ সালের পর সমর্থন করেছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা না বলাটা শ্রেয়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা একটি প্রত্যয় যাকে খ-িতভাবে শুধু ১৯৭১ সালের ৮/৯ মাসের ঘটনায় বিচার করা যাবে না। জিয়াউর রহমানই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও লাঞ্ছিতদের স্মৃতি অবলোপনের কাজটি শুরু করেন। এ কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন নিশানই পাকিস্তান প্রাপ্ত জেনারেল এরশাদ। স্বৈরাচারী এই বৃদ্ধ এখনও রাজনীতির মাঠ দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। এরপর জেনারেলপতœী ও যুদ্ধাপরাধীদের সময়। এই সময় ঠিক কতজনকে খুন, গ্রেফতার এবং নিপীড়ন করা হয়েছে তা জানা যাবে না। এদের দোসর তখনকার সেনাপতি [নাম ভুলে গেছি] সেনাবাহিনীর সাহায্যে ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে ৪৯ জনকে হত্যা করে যার বিচার হয়নি। এই জেনারেলকে নিয়ে কিছু মানবাধিকার কর্মীর তিন উদ্দিনের সময় নাচানাচি সবার চোখে পড়েছে। শেখ হাসিনার সম্পাদনায় বেশ কয়েক বছর আগে দু’খ-ে একটি বই বেরিয়েছিলÑ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নমুনা।’ এর দু’খ-ে ৮০০ পাতায় বিএনপি-জামায়াত আমলে যেসব হত্যা করা হয়েছিল তার বিবরণ আছে। শেখ হাসিনা সম্পাদনা করেছেন দেখে তা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ, প্রতিটি ভুক্তি ডকুমেন্টেড, চিত্রের সংখ্যাও কম নয়। প্রতি পাতায় গড়ে ৪টি এন্ট্রি থাকলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,২০০।
একেবারে পিনোচেটের রাজত্বকালের সমান।
আমাদের দেশেও নির্বাচন আসন্ন [যদি হয়]।
শেখ হাসিনা প্রতিটি ভাষণে খালেদা-নিজামীদের অত্যাচারের কথা, যুদ্ধাপরাধীদের কথা তুলে ধরছেন। অনেকে বলছেন, এসব বকওয়াজ আর কত? তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি, দুর্নীতি-মামলার দাবি যদি বকওয়াজ না হয়, এটি বকওয়াজ হবে কেন? এই প্রচারের কারণ, পুরনো ডানপন্থী শক্তিশালী এস্টাবলিশমেন্ট চায় না এসব প্রসঙ্গ আবার আলোচনায় আসুক।
চিলিতে এই স্মৃতির প্রসঙ্গ আবার আসছে কেন?
কারণ, বিভিন্ন সরকার ও নাগরিকরা নিহতদের সমাধি, স্মৃতিচিহ্ন অক্ষুন্ন রেখেছেন। নিপীড়ন কেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ করেছেন। মানুষ এবং পর্যটকরা নিয়ত সেখানে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চিলির টিভিতে ‘প্রহিবিটেড ইমেজ’ বা ‘নিষিদ্ধ চিত্র’ নামে একটি সিরিজ দেখানো হচ্ছে। পিনোশের ও সেনাবাহিনীর ডার্টি ওয়ারের অনেক অজানা ফুটেজ পাওয়া গেছে, যা মানুষকে আবার ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ফলে এস্টাবপন্থী ডানে-রা খানিকটা বিপদে আছে।

আমাদের এখানে কী হচ্ছে? জিয়াউর রহমান ও তাঁর উত্তরসূরিদের কথা দূরে থাকুক যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই এস্টাবলিশমেন্ট একটি শক্তি তৈরি করেছে। এবং টাকা কিভাবে আদর্শ বদলে দেয় তার নমুনা হরদম পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় ডেভিড বার্গম্যানকে আমরা সমর্থন করেছি, তাঁর প্রচার করেছি যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন। সেই ডেভিড এখন নিয়ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লিখছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচিতদের পত্র-পত্রিকা তা ছাপছে। কয়েকদিন আগেও ডেভিড ডেইলি স্টারে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। যদ্দুর মনে পড়ে তিনি কাদের মোল্লার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিচার প্রক্রিয়ায় দু’একটি ত্রুটি থাকতেও পারে সে জন্য কাদের মোল্লা মুক্তি পেতে পারে না, কোন অনুকম্পা পেতে পারে না। কারণ, কাদের মোল্লা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেনÑ এটি তো সত্য। ডেভিড যে চারজনের ওপর তাঁর ডকুমেন্টারি করেছিলেন তার মধ্যে আশারাফ-মঈনুদ্দিন ছাড়া বাকিরা ‘নামি’ কোন যুদ্ধাপরাধী নয়। তাদের খুনী হিসেবে তুলে ধরে তখন তিনি আফসোস করেছেন তাঁদের বিচার হচ্ছে না বলে। তাঁরা খুনী হলে কাদের মোল্লা নন? বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটি ধরে যদি কাদের মোল্লা ছাড়া পান তা’হলে তা হবে ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরুদ্ধে। আজ পর্যন্ত যে সব যুদ্ধাপরাধীকে হত্যা করা যায়নি, তাদের বিচার হয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটি আছে কি না আছে সেগুলো বিচার না করে প্রত্যেকের দন্ড দেয়া হয়েছে এবং আশ্চর্য, বার্গম্যান হচ্ছেন ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই, যেই কামাল হোসেন যিনি ১৯৭৩ সালের আইনের একজন প্রণেতা।
এ প্রসঙ্গে আরেকজন ব্রিটিশ জুলিয়ান ফ্রানসিসের কথা ধরা যাক। তাঁকে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দিয়েছে। ডেভিডের প্রবন্ধ পড়ে তিনি সেই ডেইলি স্টারেই লিখেছেন [লেখাটি ছাপা হয়েছে নিশ্চয় স্টারের নিরপেক্ষতা তুলে ধরার জন্য], ‘যে একজন বাংলাদেশের জন্ম দেখেছে, তার যাছে এটি কষ্টের এবং অসুবিধাজনক এটা বুঝতে যে, অনেক বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। হ্যাঁ, ন্যায্য বিচার হতে হবে। [ডেভিডের ভাষা] অনেকে এখন গণহত্যা হয়েছে বলেও মানতে চান না। কেউ যখন এসব কথা আমাকে বলেন বা এসব কথা পড়ি তখন আমি শুধু ক্রুদ্ধ নয়, খুব অবাক হই।’ আমাদের স্মৃতিহীনতা যে আমাদের একটা বড় অংশকে অসভ্য করে তুলেছে সেটিই এ মন্তব্যে স্পষ্ট। বিদেশী ও সভ্য মানুষ দেখে জুলিয়ান আমাদের সেই অংশটিকে জারজ বা হারামজাদা বলেননি।
এ প্রসঙ্গে জুলিয়ান লেখেন, ১৯৭১ সালে শরণার্থী ক্যাম্পে তিনি ১০ বছরের এক বালিকার মুখোমুখি হলেন। সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে। বালিকাটি নিষ্কম্পস্বরে বলছিল, আমার বাবা-মা, পাঁচ ভাই ও এক বোনকে হত্যা করেছে পাকিস্তানী সেনারা। আমি এখন কী কবর? এ প্রশ্ন তার মতো ছিল আরও অনেকের। জুলিয়ান লিখেছেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয় তরুণদের ভালভাবে জানা উচিত।
শুধু জানা নয়, প্রত্যাখ্যান করা উচিত। যারা এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে নানা তর্ক করেন তাদেরও প্রত্যাখ্যান করা উচিত। রাজনীতির নামে তারা ঐসব স্মৃতিকে মুছে দিতে চায়।

বর্তমান নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু প্রধান ইস্যু নয়। অনেকে কৌশলীভাবে এটিকে মূল ইস্যু বলতে চান। এটি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ইস্যু। মূল ইস্যু, এখানে মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক রাজনীতি, যা মূল ধারার রাজনীতি চলবে, না বিচ্যুত ধারা, যার প্রতিভূ ১৮ দল, সেটি চলবে। যদি ক্ষমতায় না আসে ১৮ দল তবে তাদের রাজনীতির প্রভাব বহুলাংশে হ্রাস পাবে। আওয়ামী লীগবিরোধিতা থাকুক, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতি হবে বাংলাদেশভিত্তিক। পাকিস্তানী মানসের, যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি এখানে চলতে দেয়া যাবে না।
টাকার প্রশ্ন তুলেছিলাম। টাকা এখন যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালেও পৌঁছেছে। এতে অনেকের মতিভ্রম হবে, অনেকের মতলবী চেহারাটা পরিষ্কার হবে। হচ্ছেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, শুনেছি কাদের সিদ্দিকী আমাদের অনেকের প্রতি লেখার মাধ্যমে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করছেন। যার যা কাজ করবেন তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি যখন শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন নিজেকেই খাটো করেন। বাচ্চু আমাকে একদিন দুঃখ করে বলেছিল, কাদের সিদ্দিকী প্রশ্ন তুলেছেন আমি আবার মুক্তিযোদ্ধা হলাম কবে, কয় নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি? এ ধরনের প্রশ্ন ওঠালে তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন সে প্রশ্নও উঠবে।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বা আমাকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে থেকে আমরা অন্যায় করেছি। তা’হলে সে সময় দেশে অবস্থানরত ছয় কোটিও অন্যায় করেছিল। কবি ইকবালের ভাষায় বলতে হয়, ‘আরে ভাই হাম ওফাদার নেহিতো তুভি দিলদার নেহি।’ আমি বা ছয় কোটি বাংলাদেশের প্রতি ‘অবিশ্বস্ত’ ছিলাম, আপনি [ও কি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী ছিলেন]? থাকলে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী ১৮ দল বা তাদের চাকর-বাকরদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটির দরকার ছিল না। তিনি কি খোঁজ নিয়েছেন কেন তার উপাধি পাল্টে মানুষজন ব্রিজোত্তম সিদ্দিকী বলে? যত অপরাধই করি ভারতেশ্বরী হোমসের মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল করতে যাইনি।
স্মৃতিহীন মানুষ পরিবারেও এক সময় বোঝা হয়ে ওঠে, ঘনিষ্ঠরাও তখন তার আশু মৃত্যু কামনা করে। যাঁরা ১৯৭১ ও ২০০১-৭ সালের স্মৃতি ভুলে যাবেন রাজনীতির স্বার্থে, রাজনীতিতে এক সময় তাঁরাও বোঝা হয়ে উঠবেন। আপাতত হয়ত স্বার্থ উদ্ধার হবে। মনে রাখা দরকার, জামায়াত গত তিন বছরে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পেয়ে যা করেছে, ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের একটা বড় অংশকে হয় মরণপণ যুদ্ধ করতে হবে, নয় দেশ ত্যাগ বা মৃত্যুবরণ করতে হবে। মওদুদীপুত্র জামায়াতকে জারজ বলতে দ্বিধা করেন না আর পাকিস্তানের জারজ তাদের বন্ধু বলে ডাকতে দ্বিধা করে না।
সামনের বন্ধুর পথ মানি। ১৯৭১ ও ২০০১-৭ সালেও তাই ছিল। কিন্তু স্রেফ আদর্শ ও বিশ্বাসের জোর থাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা জিততে পারেনি। স্মৃতিও টাটকা ছিল। এ প্রসঙ্গে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কয়েকটি মন্তব্য স্মর্তব্য। লিখেছিলেন তিনি, ‘এই নশ্বর দুনিয়ায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়, সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, বেঁচে থাকে কেবল ভাবনা, আদর্শ এবং স্বপ্ন।... যে ধারণার জন্য কোনও ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত থাকে। সহস্র জীবনের মধ্য দিয়েই সেই ধারণার বারংবার পুনর্জন্ম হয়। [আর] ‘এই ভাবেই ভাবনা, আদর্শ ও স্বপ্ন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বাহিত হয়ে চলে...এ জগতে ত্যাগ ও ক্লেশ স্বীকার ছাড়া কোনও আদর্শ পূর্ণতা পায়নি।’ মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন কি এই মন্তব্যের উদাহরণ নয়?

এ দেশে কি সত্যিকারের বাঙালীরা বসবাস করে না? -মুনতাসীর মামুন


এরিক প্রাইবেক জার্মান। নাজি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। এরিক ইতালির রোমে। ১৯৪৩ সালে রোমের আর্ডিটাইনে নাজি বাহিনী গণহত্যা চালায়। ৩৩৫ জন নিহত হয়, তার মধ্যে ৭৫ জন ছিলেন ইহুদী। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এরিক ধরা পড়েন। কিন্তু ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দীদের শিবির থেকে পালাতে সক্ষম হন। এক ক্যাথলিক বিশপ তাঁকে ভ্যাটিকানের একটি ভ্রমণপাস দেন। আরও অনেকের মতো এরিক পালিয়ে যান আর্জেন্টিনায়।
লসএঞ্জেলেসের সাইমন ওয়েজেনথাল সেন্টার গত কয়েক দশক ধরে নাজি যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করছে। যুদ্ধ শেষের ৫০ বছর পর ১৯৯৪ সালে সাইমন ওয়েজেনথাল সেন্টার আর্জেন্টিনায় এরিকের খোঁজ পায়। তাঁকে গ্রেফতার করে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য ১৯৯৬ সালে ইতালি পাঠানো হয়। এরিকের বয়স তখন ৮৩।
বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয় এরিক। তবে তাঁর বয়স ও অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাঁকে তাঁর আইনজীবীর বাসায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়।
যুদ্ধাপরাধী এরিক এখন ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন। যেহেতু এরিক ক্যাথলিক, সেহেতু গির্জায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হওয়ার কথা। আর ভ্যাটিকান তো ক্যাথলিকদের সদর দফতর। কিন্তু, ভ্যাটিকান এখন বলছে, তারা গির্জায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হতে দেবে না। চার্চ সাধারণত এরকম সিদ্ধান্ত নেয় না। ইতালিতে চার্চের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ কেউ করেনি।
এরিকের আইনজীবী পাওলো গিয়াচিনি ঘোষণা করেছেন, ঠিক আছে, এরিকের মরদেহ আর্জেন্টিনায় পাঠানো হবে। সেখানে তাঁর স্ত্রীর পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে। আর্জেন্টিনায় এরিক প্রায় ৫০ বছর বসবাস করেছেন। এখন আর্জেন্টিনার সরকার বলছে, না, যুদ্ধাপরাধীর মরদেহ আর্জেন্টিনায় আনা যাবে না।
গিয়াচিনি বলছেন, এরিকের সন্তানরা চান ক্যাথলিক মতে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হোক। তাদের বাবা ছিলেন ক্যাথলিক, তাঁকে তো সম্মান দেখান উচিত। গিয়াচিনির দাবি, ক্যাথলিক মতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এরিকের অধিকার। ওয়েজেনথাল সেন্টার বলছে, এই যুদ্ধাপরাধীর মৃতদেহ জার্মানিতে পাঠানো হোক। সেখানে তাঁকে দাহ করা যেতে পারে। হিটলারের মরদেহও দাহ করা হয়েছিল। কারণ, নাজিদের কোন চিহ্ন পৃথিবীতে রাখা যাবে না।
যুদ্ধাপরাধীদেরও দু’একজন ভক্ত থাকে। যেখানে এরিক মারা গেছেন সেখানে তারা ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। ইউরোপে নিউ-নাজিদের রাজনীতির কোন অধিকার নেই।
এরিককৃত গণহত্যায় নিহত একজনের আত্মীয় বলছেন, ওই লোকটির মনে কোন করুণা ছিল না। সবচেয়ে ভাল হয় তাঁকে দাহ করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া এবং সেই ছাই কোথায় ছড়ানো হয়েছে তাও যেন গোপন থাকে। তাঁকে ভুলে যেতে হবে। তাঁর কথা কখনও উচ্চারণ করা যাবে না। রোমে তাঁকে সমাহিত করার অর্থ, নাজিবাদের চিহ্ন রাখা এবং নিউ-নাজিদের ‘শ্রদ্ধা’ জানানোর স্থান হবে সেটি। এটি হতে পারে না।
আরেকজন, যার শ্বশুর সেই গণহত্যায় নিহত হয়েছেন, বলেছেন, এই শহর কিভাবে তাঁর শত্রুর দেহকে আশ্রয় দেবে? এই ধরনের জঘন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল তো কোন শহর হতে পারে না।
১০০ বছরের যুদ্ধাপরাধী এরিক প্রাইবেকের মরদেহ এখন রোমের একটি মর্গে পড়ে আছে।এরিক ছিলেন সামান্য একজন নাজি অফিসার। উচ্চমার্গের কেউ নয়। তাঁর আজ এ পরিণতি।
গোলাম আযম বাংলাদেশের একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দন্ডিত হয়েছেন। তাঁর বয়স এরিকের থেকে কম। গোলাম আযম এ দেশে ৩০ লাখ মানুষের হত্যা, প্রায় ৬ লাখ নারী নির্যাতন, অগণতি মানুষকে আহত, এক কোটিরও বেশি মানুষের বাস্তুত্যাগের জন্য দায়ী। এরিক পালিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায়, গোলাম আযম পালিয়েছিলেন সৌদি আরবে। এরিককে আশ্রয় দিয়েছিল আর্জেন্টিনার সামরিক শাসকরা। গোলাম আযমকে পরে আশ্রয় দিয়েছিলেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। সামরিক শাসকদের আমলে আর্জেন্টিনায় সুখেই ছিলেন এরিক, তারা থাকলে আর্জেন্টিনায়ই সমাহিত হতেন। কিন্তু, আর্জেন্টিনায় এখন গণতান্ত্রিক শাসন। যুদ্ধাপরাধীর স্থান সেখানে নেই। গোলাম আযম জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদের আমলে শুধু সুখে-শান্তিতে নয়, রাজনীতি করে বাংলাদেশের নাজি পার্টি জামায়াতকে শক্তিশালীও করেছেন। প্রকাশ্যে, দম্ভভরে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তার গণবিচার করায় জেনারেল জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া এত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন যে, গণআদালতের ২৪ জন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছিলেন। জেনারেল-পতœীরা জেনারেলদের মতোই হয়, আচরণ করে, যারা এটি ভুলে যায় তারা মূর্খ এবং বেকুব দুটোই।
শেখ হাসিনার আমল সামরিক আমল নয়। তাই যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিক আছে; তারপরই আর কিছু ঠিক নেই। এই ঠিক না থাকাটা প্রমাণ করে আমরা বাংলাদেশকে এখনও সম্পূর্ণভাবে জাতিরাষ্ট্রে পরিণত করতে পারিনি; আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি আছে, আমাদের মনের গহীন গভীরে এখনও পাকিস্তানীদের প্রতি মোহ জমা আছে, বঙ্গবন্ধুর বদলে কায়েদে আযমকে জাতির পিতা বলতে পারলে আমাদের কণ্ঠ খুলে যাবে, বাইরে বেশ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা ভাব, ভেতরে হেজাবি [হেফাজত+জামায়াত+ বিএনপি]দের জন্য প্রীতি, হাড়ে হারামজাদা বলতে পারছি না, অনেকে ক্ষুব্ধ হবেন ভেবে, এই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশীদের অবস্থা।
গোলাম আযমকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়নি করুণা করে। বিচারকরা করুণার আধার। যে বৃদ্ধদের/বৃদ্ধাদের গোলাম আযমের সহযোগিতায় হত্যা করা হয়েছিল তারা অবশ্য পাকিস্তানী গোলামের করুণা পায়নি। গোলাম আযমকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বাড়ির চেয়ে ভাল অবস্থায় রাখা হয়েছে। বাড়িতে এত ভালবাসা ও যতœ এ বয়সে তিনি পেতেন কিনা সন্দেহ। ২৪ ঘণ্টা ডাক্তারি সেবা। বাড়ি থেকে প্রেরিত খাবার। প্রতিদিন ১৬টি খবরের কাগজ। শাহরিয়ার কবির এক প্রবন্ধে লিখেছেন, তাঁকে যখন জেলে নেয় এই গোলাম আযম ও খালেদার সরকার, তখন তাঁকে বিন্দুমাত্র করুণা করা হয়নি। পাকিস্তানী গোলামরা সানন্দে ঈদ করে, যুদ্ধাপরাধী হলেও। আসলে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী হওয়া খারাপ কিছু না !
এরিক কতজনকে হত্যা করেছে আর আবদুল আলীম? মুক্তিযোদ্ধাদের শরীরের চামড়া ছিলে নুন মাখাতেন আলীম। বাঘের খাঁচায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঢুকিয়েছেন। গর্ভবতী হত্যায় সাহায্য করেছেন বলেও শুনেছি। সেই আবদুল আলীমকেও মৃত্যুদ- দেয়া হয়নি তার বাতের ব্যথার কারণে। তিনিও বহাল তবিয়তে আছেন গোলাম আযমের মতো হাসপাতালে। তাঁকে কি সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা আমরা এখনও জানতে পারিনি। আলীম ছিলেন বিএনপির মন্ত্রী।
আমাদের মিডিয়া যারা এত শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা করা যাবে না। মোবাইল কোম্পানির মতো। তারা যা খুশি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর প্রসাদধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা, প্রধানমন্ত্রীর করুণায় টিভি চ্যানেল পাওয়া ব্যক্তিত্বরা, বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলে যারা যখন তখন ডুকরে ওঠেন সেইসব মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবিদার টিভির কর্তাব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে টিভিতে দেখিয়ে এসেছেন গোলাম আযম, আলীম বা কখনও কখনও সা.কা. চৌধুরী অশক্ত, নিজামী কারও কাঁধে ভর দেয়া ছাড়া সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না, হাত নেড়ে তাঁদের অভিনন্দন ও ভি-চিহ্ন দেখানোÑধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং আংশিক সফল হয়েছে যে, গোলাম আযমরা বৃদ্ধ, তারা অশক্ত, তাদের নিয়ে এত টানা হেঁচড়া কেন। তাঁরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারেন, হয়ত করেছেন ভুলবশত এখন জামায়াত করেন, করতেই পারেন তাতে দোষের কি, তারা তো আওয়ামী লীগ করেন না। আলীম মুক্তিযোদ্ধাদের চামড়া তুলে লবণ মাখিয়েছেন, মাখাতেই পারেন কারণ তারা তো ছিল আওয়ামীপন্থী, পাকিস্তানপন্থী নয়। পরে তিনি তো বিএনপি করেছেন। তাতে দোষ স্খলন হয় না? আমাদের অনেকের প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রতিটি চ্যানেলের সম্পাদক-মালিকরা এ কাজগুলো করেছেন। ইচ্ছে করেই করেছেন নিরপেক্ষতার নামে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে দেশপ্রেমের কারণে মিডিয়া এ ধরনের আচরণ করে না। টিভি/খবরের কাগজে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিভিন্ন আখ্যান, কর্মকা- প্রচার করেছে, কিন্তু কোন প্রতিবেদন কি দেখানো হয়েছে বা ছাপা হয়েছে এ বিষয়ে যে, দ-িত হওয়ার পরও গোলাম আযম বা আলীম কি আরামে আছে ? বেআইনীভাবে [আইন দেখিয়ে] যে সুবিধা পাচ্ছে বা এতদিন দেয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের তা কেউ প্রচার করেনি। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে এতদিনের সৃষ্ট ‘সমবেদনা’ যদি নষ্ট হযে যায় !
যুদ্ধাপরাধী এরিক এমন কোন নামকরা যুদ্ধাপরাধী নয়, অথচ কোন দেশে তাঁকে সমাহিত করতে দেয়া হচ্ছে না। কেননা, এইসব দেশের জনগণের দাবিÑ এদের দাহ করে মর্ত্যে যে এরা ছিল সে চিহ্ন মুছে ফেলা হোক। বাংলাদেশের মানুষ ও শাসকদের এখন একথা ভাবার সময় এসেছে। বিচারের রায়ের কপি পাওয়া যায়নি এ অজুহাতে সরকার হয়ত গোলাম আযমদের রায় কার্যকর করবে না। সরকারের ভেতর হেজাবিদের প্রতি সহানুভূতিশীলরা, অনেকের মতে, চাচ্ছেন যে, রায় কার্যকর না হোক। নির্বাচনের আগে এসব ঝামেলায় না যাওয়া ভাল। অন্যদিকে, আমজনতা মনে করে রায় কার্যকর করলে ভোটাধিক্যের সৃষ্টি হতে পারে। এ বিতর্কে নাই বা গেলাম। জীবনে একমাত্র সত্য মৃত্যু। এবং যে কোন সময় যে কোনখানে মৃত্যু। এই যে আমি, এখন এ লেখা লিখছি, লেখাটি ছাপা হলো কি না তা নাও দেখে যেতে পারি। গোলাম আযমদেরও মৃত্যু হবে। তখন কি হবে? যেহেতু যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষের সরকার, সেহেতু তাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। জেনারেল জিয়া/এরশাদ/খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলে এ প্রশ্ন উঠত না। তারা পারলে এদের কবরে স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে কসুর করবেন না। আমেরিকা এ সব বিবেচনা করে বিন লাদেনের মৃতদেহ পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। বিন লাদেন এখন বিস্মৃত। কিন্তু, তার মরদেহ পাকিস্তানে থাকলে এখন আজমীরের মতো মাজার শরিফ বানিয়ে ফেলা হতো। আমাদের রাজাকার ও রাজাকারপন্থী পার্টিগুলো কিন্তু এখন থেকেই প্ল্যান ছকে রেখেছে, নবীনগরে গোলাম আযমের মাজার হবে, পিরোজপুরে সাঈদীর আর সাঁথিয়ায় নিজামীর। রাউজানে সাকার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ হবে। যাতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধ কোন বিষয় বলে পরিগণিত না হয়। এবং এক দশক পর হজরত শাহ গোলাম আযম পাকিস্তানীর নামে উরস হবে। যেভাবে জিয়াউর রহমানের কবর মাজারে পরিণত করা হয়েছে। এবং এখন খবরের কাগজ ও টিভি প্রতিবেদনে একে মাজার বলেও উল্লেখ করা হয় যদিও তা শরিয়তবিরোধী। এ গুলো হতে পারে, বাংলাদেশী তো। গোলাম আযমের প্রকাশ্য সমর্থনকারী যদি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন তাহলে সাকার স্মৃতিস্তম্ভ হতে দোষ কি ! আর যাই হোক আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তথাকথিত মওলানাদের আর যাই থাকুক ভ্যাটিকানের মওলানাদের মতো সাহস আর ধর্মবোধ নেই। তারা যে এরিকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার কারণ নৈতিকতা, ধর্মবোধ ও মানবতা এবং সভ্যতা বোধ। একটা উপায় হতে পারে, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আলাদা ছোট গোরস্তান।
নিউ নাজিদের যাতে রবরবা না হয় সে কারণে এরিককে সমাহিত করতে কেউ রাজি নন। কারণ নিউ নাজিরা সেটিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জায়গা করে ফেলবে। আমাদের এখানেও আছে নিউ নাজিরা, যারা একত্রে ১৮ দল হিসেবে পরিচিত। এদের প্রধান বিএনপি, যার নেতারা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের দ-ের বিরোধিতা করছেন। এদের নব্য রাজাকার সংক্ষেপে রাজাকারের দল বলা যেতে পারে। গণতন্ত্রের নামে মিডিয়া এই রাজাকারদের সমর্থন করছে, রাজনীতিবিদরা করছেন, সাধারণ মানুষ করছেন, সরকারও করছে [এর প্রমাণ গোলাম আযমদের সুবিধা দেয়া। বলা হয় সৌদি আরবের ভয়ে সরকার এ কাজ করছে। সৌদিরা শক্তিশালীকে বাবা ডাকে, একটু নরম হলে পায়ের নিচে রাখতে চায়। সৌদিদের কখনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে শুনেছেন?] ইতালিতে ফ্যাসিবাদের জন্ম। সেই ইতালির মানুষরা কিন্তু ফ্যাসিবাদকে শুধু ছুঁড়ে ফেলা নয়, তার চিহ্নও রাখতে চায় না। আমরা জামায়াতকে রাখতে চাই, বিএনপিকে রাখতে চাই। বিএনপি যেন নির্বাচনে যায় সে জন্য সাধ্যসাধনা করি।

তারা যাতে জয়ী হয় সে প্রচার করি। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা তো দেশপ্রেমী হতে পারে না, রাজনীতিও করতে পারে না সভ্য দেশে। এখানে পারে। এখানেই সভ্যদের সঙ্গে, দেশপ্রেমীদের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশীদের ফারাক। এখানে বীরোত্তম সিদ্দিকী হয়ে যায় ব্রীজোত্তম সিদ্দিকী।

প্রবাসে যে সব বাঙালী আছেন ১৯৭১ সালে তারা জান প্রাণ দিয়ে দেশ মুক্ত করতে চেয়েছেন। সভ্য দেশে ছিলেন, সভ্যতা তাদের স্পর্শ করেছিল; তাই খুনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনও তারা সভ্য দেশে আছেন, তারা অন্তত ইউরোপ-আমেরিকায় এ প্রচার চালান, বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধী তো বটেই যারা তাদের সমর্থন করছে সে সব রাজনীতিক/বুদ্ধিজীবীরাও যুদ্ধাপরাধী; অতএব, তাদের ভিসা দেয়া বন্ধ হোক। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির ল-ন শাখা এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে ব্রিটেনে সাঈদীর প্রবেশ বন্ধ করেছিল। এই প্রতিবাদ প্রচার কিন্তু কাজ দেবে। আমরা সবাই মিলে এখন যে ধারণার সৃষ্টি করছি [বিচার করেও, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষেও এ দেশে রায় হয় বিচারের নামে] তাতে এ দেশ পৃথিবীর একমাত্র যুদ্ধাপরাধী সমর্থক দেশ হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, নৈতিকতা কোন নিরিখে যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের রাজনীতি করতে দেয়া যায় না। তাদের পক্ষে প্রচার চালানোও যায় না। বাংলাদেশে এ ভেদরেখা মুছে ফেলা হচ্ছে যা একটি অপরাধ।

ইতালিতে এরিকের পক্ষে কোন মিডিয়া নেই, কোন বিচারক নেই, গির্জা নেই, মানুষ নেই। কারণ সে এক ‘জঘন্য প্রাণী’ যার পৃথিবীতে থাকার অধিকার নেই। এ দেশে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে মিডিয়া আছে, বিচারক এবং বিচারকের করুণা আছে, মসজিদ আছে, মানুষও আছে।

এ দেশে গণতন্ত্রের নামে, নিরপেক্ষতার নামে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থকরা সমান স্পেস পায় তাদের বিরোধীদের সঙ্গে, সব খানে এবং এ কারণে কারও লজ্জাবোধ হয় না, ধর্মবোধ আহত হয় না। সাধারণ অপরাধী ও খুনীদের থেকেও যুদ্ধাপরাধীদের কর্মকা-কে হাল্কা করে দেখান হয়। তাদের পক্ষে বলার জন্য নানা কৌশলে টিভিতে টকশোর অনুষ্ঠান করা হয়, কাগজে নিবন্ধ ছাপা হয়। এ দেশটি কি আর বাংলাদেশ আছে? এ দেশে কি মানুষের বাচ্চারা বসবাস করে?