Friday, September 11, 2020

ছাত্র ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ চাই- সুমি খান


মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে কলঙ্কিত করার কোন অধিকার বর্তমান প্রজন্মের নেই। এই পার্টির লাল পতাকা হাতে কমরেড পূর্নেন্দু কানুনগো ( আমার সেলিম চাচ্চু) , কমরেড অনঙ্গ সেন,কমরেড হেনা দাস, বারীন দাস (আমাদের সালাম চাচ্চু), আমার ছোটমামা ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, কমরেড অশোক সাহা কে দেখেছি তাঁদের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন পার্টির জন্যে। মনোরমা বসু মাসীমা সহ লাখো কোটি মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন!

তাঁদের মহান আত্মদানের সম্মান না করেন, অবমাননা করার কোন অধিকার কোন প্রজন্মের কারো নেই! আপনারা ঠগবাজ,মিথ্যুক আর ক্রীমলোভীদের লালন করেন নিজেদের স্বার্থে।

কিন্তু আমাদের রক্তক্ষরণ হয় প্রাণে সংগঠনকে এভাবে কলংকিত করলে!!

বুকে যে এখনো বাজে-আমরা তাজুলের সহযোদ্ধা, শাহাদাত আমাদের ভাই!

এই মোর্শেদ যে তাজুল শাহাদাতের ঘাতকদের সহযোগী শক্তি, সেটা কি বর্তমান প্রজন্ম জানে না? ইতিহাস কথা বলে! রক্তের সাথে কতো আর বেঈমানী করবেন? কতোদিন??

কমিউনিস্ট পার্টি বর্তমান নেতৃত্ব যদি ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে, এই সিদ্ধান্তে একমত হয়, তবে তাদের ও আমি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্ব বলেই মনে করি এবং সংশ্লিষ্ট দের অপসারণ দাবি করছি!!
আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান সেই গেরিলা বাহিনীর বীর যোদ্ধা। তিনি একজন রাজাকারকে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমার দাদা বরউঠানের জমিদার এবং সাবেক গভর্ণমেন্ট প্লীডার (জিপি)ফজলুর রহমান খান ১০০ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মী এবং তাঁদের পরিবার ছিলেন ৯৫%। বাবা এবং বড়ো চাচা ডা. কামাল এ খানের খোঁজে পাকিস্তানী সেনা রা আমাদের বাড়ি আক্রমন করে, লুঠতরাজ চালায়। আমার বড়ো ভাইদের বেয়নেটের খোঁচায় রক্তাক্ত করেছে পাকি সেনারা। আমার দাদা তখন মৃত্যুশয্যায়। তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান কামাল কে আর দেখতে পান নি। আমাদের বাপ্পু ডা. কামাল এ খান ও তাঁর পিতাকে শেষ দেখা দেখতে পান নি! আমার মা নূরজাহান খান তাঁর জীবন কমিউনিস্ট পার্টি, মহিলা পরিষদ আর ছাত্র ইউনিয়নের জন্যে উৎসর্গ করেছেন, এখনো পার্টির যে কোন সংকটে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। তার সাক্ষী কেন্দ্রীয় নেতা দের অনেকেই, যদিও জানি, তাঁদের কেউ কেউ স্বীকার না ও করতে পারেন। তিনি এই পোস্ট পড়লে আমাকে তিরস্কার করবেন, তাঁর আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করছি বলে।এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস যে আমি ধারণ করি! আর তাই গর্বের সাথে উল্লেখ করি, যেন পরবর্তী প্রজন্ম কখনো ভুলে না যায় এমন নিঃস্বার্থ ত্যাগী মানুষদের অবদান যেন ধুলায় না লুটাই!
দেশের আরো অনেক পরিবারের মতো আমাদের পরিবারের ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মাতৃভূমি এবং প্রিয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্যে।
তাই বলে এই পরিবারের কেউ কখনো পার্টি থেকে ন্যূনতম সুবিধা নিয়েছে- এমন কখনো হয় নি। শুধু সেবা দিয়ে গেছেন প্রত্যেকে। নীরবে, গোপনে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাঁরা।
আর তাই পার্টির মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং ক্ষতিকর অবস্থানের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই বলার আছে! সেই সৎসাহস আমি ধারণ করি!
তার জ্বলন্ত সাক্ষী মতিয়া চৌধুরী, কমরেড তপন দত্ত, কমরেড অশোক সাহা, কমরেড আহসানউল্লাহ চৌধুরী নিজে এবং তাঁর লেখা।যে লেখায় কমরেড আহসানউল্লাহ চৌধুরী সাইফুদ্দিন খানকে ষাটের দশকের কমিউনিস্ট পার্টির বৃহত্তর চট্টগ্রামের 'পিলার ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাবা। তাঁর কৈশোর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত সেই বীরোচিত আত্মত্যাগের গৌরব এবং নির্যাতনের ক্ষত তিনি বহন করে গেছেন। এসব তুলে ধরার কারণ, ইতিহাসের যারা জ্বলন্ত সাক্ষী তাঁদের দ্বারস্থ হওয়া এবং ইতিহাস যেন কখনো বিকৃত না হয়, সে ব্যাপারে বাম নেতৃত্ব কে সতর্ক করা।
এই ইতিহাস বিকৃতকারীদের নেতা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মীর আরাধ্য পুরুষ, আমার বাবা মা'র কন্ঠে উচ্চারিত 'বড়োভাই' কমরেড মণি সিংহকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলো। এই ইতিহাস উল্লেখ করেছিলেন কমরেড শেখর দত্ত তাঁর একটি কলামে।
কখনো যেন না ভুলে যাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে সাইফুদ্দিন খান, গোলাম আরিফ টিপুর মতো লাখো কোটি দেশপ্রেমিক মানুষের রক্তে এবং আত্মদানে আমরা পেয়েছি জাতীয় পতাকা এবং স্বাধীন মাতৃভূমি।
লাখো নেতা কর্মীর আত্মদানের গৌরবে ৬০ বছরের বেশি পথ এগিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন! তাঁদের প্রতি ও এই বিবৃতি চরম অবমাননা।
আওয়ামী লীগের সমর্থন বা বিরোধিতা ভিন্ন বিষয়। তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে মেলানো হবে কেন?? সেটা কোন সুস্থ রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দর্শন হতে পারে না- এটুকু বোধ কি বর্তমান নেতৃত্বের নেই??
ঢাবি শিক্ষক বিএনপি নেতা- একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের পত্রিকা ইনকিলাব এবং জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখাতে বিএনপি নেতা মোরশেদ তার নেতা জিয়াকে 'মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে 'সপরিবারে ভারতে পলায়নকারী ' হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং যায় যায় দিন পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে 'জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিথ্যের চাষের অংশ হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন মোর্শেদ হাসান খান।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, 'আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে(?) চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও(?)। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে 'ত্রাতারূপে'(?) আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। "দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত"(??) এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। "
স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান লেখেন, 'দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে 'বাক-স্বাধীনতা' বলতে কিছুই ছিল না। '
একইভাবে ২০১৬ সালের ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘স্মৃতিময় জিয়া’ শিরোনামে এক লেখায়ও মোর্শেদ হাসান খান একই ধরনের বক্তব্য লিখেন।
তার বক্তব্য কি মিথ্যার বেসাতি নয়?? ষড়যন্ত্র মূলক নয়??
তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিল ছাত্রলীগ।
কিন্তু আমার প্রশ্ন,ছাত্রলীগ একা কেন প্রতিবাদ করবে?
এই দাবি কি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালীর নয়?
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অন্যায়, অপরাধ কখনো সমর্থনযোগ্য নয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সকল প্রগতিশীল শক্তি মাঠে নামবেন না কেন?
জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামের কলামে ইতিহাসবিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন মোর্শেদের লেখার প্রতিবাদ করে নি??

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। তাদের সাথে একাত্ম ছাত্র ইউনিয়ন ও!!

আজ ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সংগঠনের বিবৃতি প্রথম আলো, এনটিভি অনলাইন সহ অনেক মিডিয়া ছাপালো!

ভয়ঙ্কর এই ইতিহাস বিকৃতিকারীকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের দাবি করছে আমার তিন প্রজন্মের দায়িত্বশীল ভুমিকায় সমৃদ্ধ প্রাণের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ??

হায় রে রাজনীতির দুরাচার!!

কেন বাম নেতা কর্মীরা একাত্তরের ঘাতক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পুনর্বাসনকারী ঘাতক জিয়ার রাজনীতি লালন করবে??

এই রাজনীতি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তো নয়ই, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থনে লালিত।
ছাত্র ইউনিয়নের এই বিবৃতি দেশমাতৃকার প্রতি কতো বড়ো অসম্মান - সেই বোধ ও কি তাদের বিলুপ্ত??
ধিক্কার জানাই এমন বিএনপিপ্রেমী নেতৃত্বকে!

একে কখনো মুক্তচিন্তা বা freedom of speech বলে না। তাহলে তো পৃথিবীকে কোন অপরাধই নেই!
অপরাধীকে সমর্থন freedom of Speech?? হতে পারে না কখনো!
ইতিহাস বিকৃতিকারীকে সমর্থন করে ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করলো ছাত্র ইউনিয়ন।
রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরশাসক এবং ঘাতক জিয়া বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করেছে খালেদ মোশাররফ সহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে! সেসব ভয়াবহ ইতিহাস কি একক ভাবে শুধু আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে?
সেসব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব কি বাম দলগুলোর নয়??
জিয়ার ষড়যন্ত্রে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা যদি তর্কের খাতিরে বাদ ও দিই, জিয়ার ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কারাগারে জিয়ার পেটোয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে বর্বরভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের অসহায় পরিবার গুলোর হিসাব কখনো নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন??
খালেদার শাসনামলে জামাত বিএনপির বর্বর নির্যাতনে নিহতদের কতোটা খবর নেন তারা? কখনো প্রতিবাদ করেছেন??
বরং জিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধের 'মহানায়ক' সাজানোর ষড়যন্ত্র কে সমর্থন দিচ্ছে!!
বলিহারি এসব নষ্ট রাজনীতির!! দেশকে ভালোবেসে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরুন আপনারা। গঠনমূলক প্রতিবাদে গর্জে উঠুন।
ইতিহাস বিকৃতকারীর প্রচলিত আইনে সাজা দাবি না করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করবেন কেন?? কোন্ উদ্দেশ্যে??
এই ছাত্র ইউনিয়নের জন্য আমার ছাত্রজীবন আমি উৎসর্গ করি নি।
এবং এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বকে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে মনে করি না!
ধিক্কার জানাই কোন 'প্রগতিশীল শক্তি'র এমন সিদ্ধান্তের!!
একই সাথে এমন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ দাবি করছি!!
সুমি খান, সকাল ১১টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 আওয়ামী লীগের সমর্থন বা বিরোধিতা ভিন্ন বিষয়। তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে মেলানো হবে কেন?? সেটা কোন সুস্থ রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দর্শন হতে পারে না- এটুকু বোধ কি বর্তমান নেতৃত্বের নেই??

 ঢাবি শিক্ষক  বিএনপি নেতা- একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের পত্রিকা ইনকিলাব এবং জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখাতে বিএনপি নেতা মোরশেদ  তার নেতা জিয়াকে 'মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে 'সপরিবারে ভারতে পলায়নকারী ' হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং যায় যায় দিন পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে 'জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিথ্যের চাষের অংশ হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল  ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন মোর্শেদ হাসান খান। 

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, 'আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে(?) চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও(?)। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে 'ত্রাতারূপে'(?) আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। "দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত"(??) এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। "

স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান লেখেন, 'দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে 'বাক-স্বাধীনতা' বলতে কিছুই ছিল না। '

একইভাবে ২০১৬ সালের ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘স্মৃতিময় জিয়া’ শিরোনামে এক লেখায়ও মোর্শেদ হাসান খান একই ধরনের বক্তব্য লিখেন।

তার বক্তব্য কি মিথ্যার বেসাতি নয়?? ষড়যন্ত্র মূলক নয়??

 তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিল ছাত্রলীগ।

কিন্তু আমার প্রশ্ন,ছাত্রলীগ একা কেন প্রতিবাদ করবে?

 এই দাবি কি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালীর নয়?

 ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অন্যায়, অপরাধ কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। 

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সকল প্রগতিশীল শক্তি মাঠে নামবেন না কেন?

জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামের কলামে ইতিহাসবিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।

ছাত্র ইউনিয়ন কেন মোর্শেদের লেখার প্রতিবাদ করে নি??

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। তাদের সাথে একাত্ম ছাত্র ইউনিয়ন ও!!

আজ ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সংগঠনের বিবৃতি প্রথম আলো, এনটিভি অনলাইন সহ অনেক মিডিয়া ছাপালো! 

ভয়ঙ্কর এই ইতিহাস বিকৃতিকারীকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের দাবি করছে আমার তিন প্রজন্মের দায়িত্বশীল ভুমিকায় সমৃদ্ধ প্রাণের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ??

হায় রে রাজনীতির দুরাচার!! 

কেন বাম নেতা কর্মীরা একাত্তরের ঘাতক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পুনর্বাসনকারী ঘাতক জিয়ার রাজনীতি লালন করবে??

এই রাজনীতি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তো নয়ই, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থনে লালিত।

 ছাত্র ইউনিয়নের এই বিবৃতি দেশমাতৃকার প্রতি কতো বড়ো অসম্মান - সেই বোধ ও কি তাদের বিলুপ্ত??

ধিক্কার জানাই এমন বিএনপিপ্রেমী নেতৃত্বকে!

  একে কখনো মুক্তচিন্তা বা freedom of speech বলে না। তাহলে তো পৃথিবীকে কোন অপরাধই নেই! 

অপরাধীকে সমর্থন freedom of Speech?? হতে পারে না কখনো!

ইতিহাস বিকৃতিকারীকে সমর্থন করে ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করলো ছাত্র ইউনিয়ন। 

রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরশাসক এবং ঘাতক জিয়া বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করেছে খালেদ মোশাররফ সহ  হাজার হাজার  মুক্তিযোদ্ধাকে! সেসব ভয়াবহ ইতিহাস কি একক ভাবে  শুধু আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে? 

সেসব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব  কি বাম দলগুলোর নয়??

 জিয়ার ষড়যন্ত্রে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা যদি তর্কের খাতিরে বাদ ও দিই, জিয়ার ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কারাগারে জিয়ার পেটোয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে বর্বরভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা,  অসংখ্য  মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের অসহায় পরিবার গুলোর হিসাব কখনো নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন??

খালেদার শাসনামলে জামাত বিএনপির বর্বর নির্যাতনে নিহতদের কতোটা খবর নেন তারা? কখনো প্রতিবাদ করেছেন??

 বরং জিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধের 'মহানায়ক' সাজানোর ষড়যন্ত্র কে সমর্থন দিচ্ছে!! 

বলিহারি এসব নষ্ট রাজনীতির!! দেশকে ভালোবেসে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরুন আপনারা। গঠনমূলক প্রতিবাদে গর্জে উঠুন। 

ইতিহাস বিকৃতকারীর  প্রচলিত আইনে সাজা দাবি না করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করবেন কেন?? কোন্ উদ্দেশ্যে??  

এই ছাত্র ইউনিয়নের জন্য আমার ছাত্রজীবন আমি উৎসর্গ করি নি। 

এবং এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বকে  আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে মনে করি না!

 ধিক্কার জানাই কোন 'প্রগতিশীল শক্তি'র এমন সিদ্ধান্তের!!

    একই সাথে এমন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ দাবি করছি!!

    সুমি খান,  সকাল ১১টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০