Saturday, November 7, 2015

আমরা নিশ্চয়ই নন্দলাল হতে চাই না-, সাহসে ভর করে চলতে হবে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

_hasinaসংলাপে বসতে চান খালেদা। এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বললেন, "যেদিন খালেদা জিয়া বলবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনিও চান,সেদিন সংলাপে বসবো। কারণ, এই ঘাতকেরা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে,গণহত্যা করেছে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যখন সুখে আছে তখনই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এগুলো আর্টিফিসিয়ালি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এমন না। ইমামবারাতে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষ লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের কাছে বেশকিছু তথ্য এসেছে। এসব ব্যাপারে অর্থায়ন ও নির্দেশনা আমরা খুঁজে দেখছি। তিনি বলেন, আমরা বেতন বৃদ্ধি করলাম। মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ১৪০০ তে উন্নীত করেছি।

বিএনপির জাতীয় ঐক্যমতের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি করলেও আমি মানুষ। কাউকে যদি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আপনি কী তার কাছে যাবেন। কেউ যদি ফোনে ঝারি মারে তাহলে কী আপনি কথা বলবেন? আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমি তাকে (খালেদা জিয়া) ফোন করি। তার ছেলে মারা গেলো, আমি গেলাম তিনি আমাকে ঢুকতে দিলেন না। একজন খুনির সঙ্গে আমাকে বসতে হবে। যার হাত দিয়ে মানুষ খুন হয় তার সঙ্গে বসার ইচ্ছে নেই। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত নেদারল্যান্ড সফরের অর্জন ও সফলতা নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তিনদিনের সফর শেষে গত শুক্রবার বিকালে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  বাংলাদেশে আইএস আছে। এটা যদি স্বীকার করানো যায় তবে বাংলাদেশের উপর  হামলে পড়তে সুবিধা হবে। অনেকে এই ধরনের চিন্তা করছে। বাংলাদেশ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে এই স্বীকৃতি আদায় করতে পারে তাহলে কী হবে ভাবতে পারেন। সিরিয়া, পাকিস্তানের মতো আমাদের সর্বনাশ করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আমি ভেবে পাইনা ,একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করছে। সারা  বিশ্বে এটা হচ্ছে। কেন এটা হবে?প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন,  এর পেছনে কারা? সুতাটা কার হাতে?’
নেদারল্যান্ডের সাথে চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ডেল্টা প্ল্যান অনেক আগেই গ্রহণ করেছি। তবে চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়ে কাজ করা হচ্ছে, সেটাই  বড় কথা। আমাদের আছে ১২শ' নদী। আরো ছোট ছোট নদীগুলোকে ড্রেজিং করার আওতায় আনতে হবে। আমাদের সম্ভাবনা নেদারল্যান্ডস এর চেয়ে  বেশী বলে মনে করি। আমরা যে বিশাল সমুদ্রসীমা পেয়েছি , সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।’তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা চলমান থাকবে। অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডস এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উষ্ণ ও আন্তরিক। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সহযোগিতার জন্য তাকে অনুরোধ করি। উল্লেখ্য, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের আমন্ত্রণে গত মঙ্গলবার এই সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে ইউরোপের দেশটির সঙ্গে চারটি চুক্তি সই হয়েছে।
গণভবনে এই সাংবাদিক সম্মেলনে  প্রধানমন্ত্রীকে এটিএন বাংলার বার্তাপ্রধান জ.ই.মামুন বললেন," আপনি রাষ্ট্রের প্রধান আপনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং এর সাফল্যে আমরা গর্ব বোধ করি। কিন্তু একের পর এক হুমকি এবং হত্যার কারণে আমরা 'অনিরাপদ' বোধ করছি। আমার পুলিশ 'অনিরাপদ 'বোধ করে।  " প্রধানমন্ত্রী এর জবাবে দৃঢ়তার সাথে বললেন,   কথায় বলে, 'বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়'- দেখছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে হরতাল ও আহ্বান করা হয়েছে। এই চক্রান্তের অংশ প্রকাশক, সাংবাদিকদের হুমকি। নিরাপত্তা আমরা দিচ্ছি;তা দিয়ে যাবো। তবে জানেন তো, সব তালিকার শীর্ষে আমি আছি। এখন নাহয় প্রধানমন্ত্রী , তাই নিরাপত্তা আছে । একসময়ে তো  আমার থাকার বাড়ি ছিলনা, চলাফেরা করার গাড়ি ছিল না; জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ১৯৮১ সালে দেশে এসেছি। সে সময়ে আমাকে বলা হয়েছিলো, আমি  এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে আমাকে গুলি করে ফেলে দেয়া হবে;পরোয়া করিনি। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, সেক্যুলার দেশ। এখানে সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা নিরাপত্তা দেবার চেষ্টা করছি, জানেন। কারা একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের চিহ্ণিত করে রুখে দাঁড়াতে জনগণকে সচেতন করুন। আমরা সেক্যুলার ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। আমি একটা ধর্ম পালন করি। আমার এ ধর্ম নিয়ে যদি কেউ বিকৃত লেখা লিখে, তাদের লাগবেই । সতর্ক করা হয়েছে, কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন লেখা লিখবেন না। কেউ ধর্ম না মানলে তার ব্যাপার। অন্যের ধর্মে আঘাত দিতে পারেন না। বিকৃত লেখা এক ধরণের বিকৃতি ;বিকৃত মানসিকতা। আমি খোলামেলা কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব ধর্মকে সম্মান করি। গীর্জা, মসজিদ, প্যাগোডাতে গেছি। আমার ধর্মপালনে কোন ব্যাঘাত এতে হয়নি।
সকল ধর্মের প্রতি সম্মান রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেক্যুলারিজম মানে অন্যকে আঘাত দেয়া নয়, অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান জানানো। ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে মারা হচ্ছে। পুলিশ কনস্টেবল ইব্রাহিমকে মারার পর জানা গেলো আশুরার সময়ে কী নাশকতার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আপনার নিরাপত্তা রাষ্ট্র যেমন দেবে, নিজেকে ও সচেতন হতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই নন্দলাল হতে চাই না, (হেসে)"নন্দলালা একদা করিলো পণ, যে করেই হোক্, রাখিবো এই জীবন!" প্রশ্ন -আপনাকে 'লেডি হিটলার ' বলেছেন খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য!-" এএই বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পায় , তিনি কী করছেন ? আর যে মন্তব্য তিনি করলেন, সেটাই যদি হবে, তাহলে আর সংলাপে বসতে চান কেন? আমি বুঝতে পারি না , এতো দুর্নীতি , এতো হত্যা, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা, তার পর ও তার (খালেদা জিয়া) প্রতি  এতো 'দুর্বলতা' কেন? এদের হাতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী নিহত হয়েছে। কক্সবাজারে হত্যা করে এসিড ঢেলে দিয়েছে, যাতে মুখ চেনা না যায়। এ নিয়ে কারো যেন কোন বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগের লোক মারা গেলে আমরাই কাঁদি, কোন জ্ঞানী গুণীর কান্নাকাটি নেই, আমরা ই কাঁদি। অনেকে দলে  যোগ দেয় খুন করার জন্যে। জামাত বিএনপি কোন ভালো কাজ করে নি, দলে অনেক লোক আছে নতুন করে এদের দরকার নেই। এরা দলে এসেই কোন খুন করে প্রচার করে 'আওয়ামী লীগ খুন করেছে'। আমি জামাত-বিএনপি কে দলে নেবার বিরোধী। প্রকাশক, লেখক দের হত্যা করছে এরাই । সাহসে ভর করে চলতে হবে। আ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে। মানিলন্ডারিং করে এতো টাকা হয়েছে ওদের (জামাত-বিএনপি) !আ্যামনেষ্টি টাকার বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলছে। কে কী বলছে, তাতে কিছু আসে যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা !বেলা ১২টা ১০ থেকে ১২টা ৪২ মিনিটপর্যন্ত এ সংবাদ সম্মেলনে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।