Friday, February 27, 2015

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে- অভিজিৎ রায়

লেখকের জবানবন্দী
 
আমি কোন প্রথাগত রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ছিলাম না। এখনো নই। আমি মূলত একজন কাটখোট্টা বিজ্ঞান লেখক। যারা আমায় চেনে এই পরিচয়ই হয়তো কিছুটা চেনে। তবে কাঠখো...ট্টা বিজ্ঞানের লেখা লিখলেও রবীন্দ্রনাথকে একদম জানিনা তা তো নয়। তবে সে জানাটাও বিজ্ঞানের মাধ্যমেই। তাঁর শেষ বয়সে লেখা ‘বিশ্বপরিচয়’ নামের প্রিয় বইটা তো সেই ছোটবেলাতেই পড়া হয়ে গিয়েছিল, তারপর ‘বড় হয়ে’ বিজ্ঞানের নানা বিষয় আশয় নিয়ে পত্র-পত্রিকা এবং ব্লগে লিখতে গিয়েই রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে আবিষ্কার করা আমার। ততদিনে কেবল বিশ্বপরিচয়ের সাথেই পরিচয় ঘটেনি, পাশাপাশি জানা হয়েছে বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে বন্ধুত্বের কথা, জেনে ফেলেছি আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীর সাথে বাস্তবতা, দর্শন এবং প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সুরের মূর্ছনা নিয়ে কী ভীষণ নিগূঢ় আলোচনা করেছিলেন কবি। এগুলো নিয়ে আমার কিছু বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ এখানে ওখানে প্রকাশিতও হয়েছে ততদিনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ আমি কখনো লিখব তা মাথায়ই ছিলো না কখনো।
কিন্তু এ দৃশ্যপট পালটে গেল এ বছরের (২০১৪) সালের জুন মাসে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের সময়। সে ভ্রমণের অংশ হিসেবে আর্জেন্টিনা এবং পেরুতে সপ্তাহ খানেক থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এক ফাঁকে ঢু মেরেছিলাম আর্জেন্টিনার ‘রবি-তীর্থে’ অর্থাৎ, রবিঠাকুরের আর্জেন্টিনীয় বান্ধবী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাড়ি ‘ভিলা ওকাম্পো’তে। আমার মেয়েকে নিয়ে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়েছিলাম সে বাড়িতে। বার হাজারের ওপর বইপত্র, নানা পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র এবং ভিক্টোরিয়ার প্রকাশিত পত্রিকার পুরনো সংখ্যা এবং সে বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে আপ্যায়িত মনীষীদের ছবি সম্বলিত সেই বাড়ি দর্শনের অভিজ্ঞতাটা অনেকটা তীর্থস্থান ভ্রমণের সাথে তুলনীয় ছিল যেন।
 
‘ভিলা ওকাম্পো’তে প্রবেশের আগে অনেকের মতো আমিও ভাবতাম ওকাম্পো বোধ হয় কেবল রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য অনুরাগীদের মধ্যে অন্যতম একজন নারী ছিলেন। হয়তো একটু আধটু সাহিত্য রসিক, এবং সাহিত্য অনুরক্ত নারী ছাড়া তিনি তেমন কিছু নন। এছাড়া ওকাম্পোর বলার মতো পরিচয়ই বা আছে কী? কিন্তু সে ধারণা আমূল বদলে গেল আর্জেন্টিনা ভ্রমণ শেষ করে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির সন্ধান আমি পেলাম, যার আলোকে ওকাম্পোকে জানার চেষ্টা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে জানলাম, দক্ষিণ আমেরিকার সাহিত্য সংস্কৃতিতে আধুনিকতা আনয়ন এবং নারীবাদ প্রতিষ্ঠায় ওকাম্পোর কতখানি অবদান ছিল। পাশাপাশি তিনি ছিলেন ভীষণ এক উদ্যমী নারী। তিনি ‘সুর’ নামে একটি পত্রিকা বের করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ত্রিশের দশকে, এবং এর ডাকসাইটে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। বুয়েনোস আইরেস থেকে স্প্যানিশ ভাষায় ছাপানো এ পত্রিকাটি কেবল আর্জেন্টিনায় নয়, সারা দক্ষিণ আমেরিকাতেই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল পঞ্চাশ, ষাট এবং সত্তরের দশকের তাল-মাতাল সময়গুলোতে। হর্হে লুইস বর্হেস, মার্সেল প্রুস্ত, টমাস মান, টি এস এলিয়ট, হেনরি মিলার, জ্যাক মারিত্যাঁ, পল ক্লোদেল, অল্ডাস হাক্সলি, সিমোন ওয়াইল, লিউইস মামফোর্ড, আঁদ্রে জিদ, মার্টিন হাইডেগার, এজরা পাউন্ড সহ সারা পৃথিবীর বিখ্যাত লেখকেরা সে পত্রিকায় লিখতেন। এই পত্রিকার মাধ্যমেই ভার্জিনিয়া উলফের নারীবাদী লেখার সাথে দক্ষিণ আমেরিকার পাঠক-পাঠিকাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ওকাম্পো। পত্রিকা প্রকাশ ছাড়াও সাহিত্য এবং সামাজিক অঙ্গনে তাঁর অবদানের খোঁজ পেলাম ব্যাপক পরিসরে। ভিলা ওকাম্পোর লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখলাম- রবীন্দ্রনাথ, কাইজারলিঙ, ভার্জিনিয়া উলফের মত প্রথিতযশা মানুষদের নিয়ে তিনি বই প্রকাশ করেছেন। অনুবাদ করেছেন কাম্যু, টি ই লরেন্স, ফকনার, ডিলান টমাস, গ্রাহাম গ্রিন সহ অনেকের কাজ। অসংখ্য পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন সারা জীবনে। ১৯৬৭ সালে বিশ্বভারতী থেকে তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টাইন একাডেমি অব লেটার্স’ এর সভানেত্রী (Alberdi Chair) নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এত শত পুরস্কারের ভিড়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত এবং উদ্বেলিত করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মাননাটি। আমি খুঁজে দেখলাম, ওকাম্পোর আগে বিগত ৩৩০ বছরে মাত্র দশজন নারী এই সম্মাননা লাভ করতে পেরেছিলেন।
তবে পুরস্কার নয়, সবকিছু ছাপিয়ে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে আসলো তার নারীবাদী এবং মানবতাবাদী ভূমিকাটি। বিশেষত নারীদের অধিকারের উপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছিলেন, যেগুলো ছিল তখনকার সময়ের তুলনায় যথেষ্ট সাহসী। সে সমস্ত লেখায় তিনি নারী-পুরুষের সাম্যের কথা বলেছেন, নারীর ভোটাধিকারের কথা বলেছেন, নারীর যৌন স্বাধীনতার কথা বলেছেন, বিয়ে এবং পরিবার নিয়ে সনাতন ধারণার বাইরে গিয়ে লিখেছেন, নারীদের উপর পুরুষদের ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছেন, এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণ, একক মাতৃত্ব,গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন (‘নারী: তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ’ শিরোনামের তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখার অনুবাদ এই বইয়ের পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত হয়েছে)। ১৯৩৬ সালে তিনি আর্জেন্টিনা মহিলা সমিতি স্থাপন করেছিলেন, সে সময় পি.ই.এন-এরও সহ-সভানেত্রী ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি আর্জেন্টিনায় নাৎসি অনুপ্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে নিয়ে ‘একশন আর্জেন্টিনা’ (Acción Argentina) গঠন করেছিলেন। এ করতে গিয়ে সামরিক জান্তার রোষানলে পড়েছিলেন তিনি তখন। বিশেষত পেরন সরকারের (১৯৪৬-১৯৫৫) আমলে তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী মুক্তমত প্রচার এবং প্রকাশের অভিযোগে। সেসময় জহরলাল নেহেরু, ওয়ালদো ফ্রাঙ্ক, গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ওকাম্পোর অসংখ্য বন্ধুবান্ধবদের প্রচেষ্টা এবং দাবীর মুখে ছাব্বিশ দিনের মাথায় সরকার ওকাম্পোকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ওকাম্পো আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সহমর্মী বান্ধব ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী গণহত্যার প্রতিবাদে ওকাম্পো প্রতিবাদলিপি দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন সরকারের কাছে। এ নতুন নতুন তথ্যগুলো আমাকে আনন্দিত এবং গর্বিত করেছে।
আর্জেন্টিনা ভ্রমণ থেকে ফিরে এসে আমি বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বিডিআর্টসের জন্য একটি লেখা লিখেছিলাম – ‘ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন’ শিরোনামে। আমার ভিলা ওকাম্পো ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া নতুন সব তথ্যের আলোকে নতুনভাবে রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পোর সম্পর্ককে বুঝবার প্রয়াস ছিল সে লেখায়। আমি লেখাটিতে দেখিয়েছিলাম ওকাম্পোর সাথে রবীন্দ্রনাথ কেবল ‘প্লেটোনিক ধরণের’ রোমান্টিক সম্পর্কে জড়াননি, কিংবা ‘বিজয়ার করকমলে’ লিখে ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেই তাঁর আর্জেন্টিনা অধ্যায় শেষ করে দেননি, বরং পূরবী পরবর্তী বহু কবিতা, গল্প এবং উপন্যাসে ওকাম্পোর উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়। ওকাম্পোর প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্মেও। শুধু তাই নয়, আমি লেখাটিতে কিছু উপকরণ হাজির করেছিলাম, যার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয় যে, ওকাম্পোর সংশ্রব রবীন্দ্রনাথের প্রথাগত নারীভাবনা শেষ বয়সে এসে কিছুটা হলেও পাল্টাতে সাহায্য করেছিল। লেখাটির শেষদিকে এসে আমি আধুনিক বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের প্রেক্ষাপট থেকে রবীন্দ্রজীবনে নারী এবং প্রেমকে বিশ্লেষণ করেছিলাম, যা এর আগে কেউ করেছিলেন বলে আমার জানা নেই। লেখাটি ছিল বেশ দীর্ঘ। আমি ভেবেছিলাম এ ধরণের একঘেয়ে নিরস লেখা পড়তে পড়তে হয়তো পাঠকদের ক্লান্তি চলে আসবে। কিন্তু পাঠকদের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তাতে মনে হয় সেরকম কিছু হয়নি। বরং, যে কোন কারণেই হোক, লেখাটি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। অনেক পাঠক সে লেখায় মন্তব্য করে লেখাটিকে পূর্ণাঙ্গ বইয়ে রূপ দিতে অনুরোধ করেন। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করব বিডিআর্টসের সম্পাদক রাজু আলাউদ্দিনের কথা। বিডিনিউজ পত্রিকায় আমার পাঠানো প্রবন্ধটি পড়ে সেটিকে আরও কিছুটা বিবর্ধিত করার পরামর্শ দিয়ে পরবর্তীতে একটি বই প্রকাশের কথা বলেছিলেন। এবং সেটি তিনি বলেছিলেন প্রবন্ধটি পত্রিকায় প্রকাশের পূর্বেই। শুধু তাই নয়, আমাকে চাপ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পোর মধ্যকার সারাজীবনে প্রেরিত পত্রাবলীর অনুবাদ করিয়ে নিলেন। কেবল তাঁর কারণেই ওকাম্পো-রবীন্দ্রনাথের মধ্যকার পঞ্চাশটি হাতে লেখা চিঠির অনুবাদ এই গ্রন্থের শেষে সন্নিবেশিত হতে পেরেছে। এখানেই শেষ নয়, বইয়ের পাণ্ডুলিপি হয়ে যাবার পর তিনি পুরো পাণ্ডুলিপিটি পড়ে একটা চমৎকার মুখবন্ধ লিখে আমাকে অসীম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন তিনি।
রাজু আলাউদ্দিন ছাড়াও আরো দু’জনের কথা আমার আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে। একজন হলেন বন্ধু রাজর্ষি দেবনাথ। তিনি আটলান্টা থাকাকালীন সময়ে আমার পাণ্ডুলিপিটি মন দিয়ে পড়েছেন এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পরামর্শ দিয়েছেন। বস্তুত প্রাথমিক প্রুফ-রিডিং এর কাজটুকু হয়ে গিয়েছিল ‘বানান-বিশারদ’ রাজর্ষি থাকার কারণেই।
আর অন্যজন আমার স্ত্রী বন্যা আহমেদ। আমার লেখালিখির সবচেয়ে বড় সমালোচক সে। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় প্রেরণাদাতাও। অফিসের ব্যস্ততা, কাজ কর্ম আর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বইটার ব্যাপারে যখন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম, তখন বন্যা আমাকে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত ওকাম্পোর ‘নারী: তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ’ শিরোনামের লেখাটার পুরোটা অনুবাদে সাহায্য করেছে নিজের সমস্ত কাজকর্ম শিকেয় তুলে রেখে। বন্যা না থাকলে বইটা আদৌ বের হতো কিনা আমি একেবারেই নিশ্চিত নই।
আর আছেন অবসর প্রকাশনীর সর্বেসর্বা আলমগীর রহমান। এই আলমগীর ভাইকে আমি ভীষণ ভয় পাই। উনি একসময় আমার ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ এবং আমার স্ত্রী বন্যার ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বই দুটো প্রকাশ করেছিলেন। সে প্রায় সাত আট বছর আগের কথা। এর পর থেকে বই প্রকাশের জন্য উনার দ্বারস্থ হয়ে উঠা হয়নি। আমার বরাবরই মনে হত, আমার লেখা টেখা উনি বিশেষ পছন্দ করেন না। কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে এবার বিডিনিউজে আমার লেখাটি প্রকাশের পর তিনি এ নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, এই পাণ্ডুলিপি যেন তাকে ছাড়া আর কাউকে যেন না দেয়া হয়, দিলে ‘ছিল্লা কাইট্টা’... বলে মহা ভয় দেখিয়েছেন। সেই ভয়ে যার পর নাই ভীত হয়ে পাণ্ডুলিপি তার হাতেই তুলে দিলাম। তবে কানে কানে বলে রাখি বাজারে একটা কথা প্রচলিত আছে যে আলমগীর ভাই নাকি নারকোলের মত। উনার কেবল বাইরের খোলসটাই শক্ত, ভিতরটা নাকি একদম নরম। তবে অনেকেই ভিতরের খবর পায় না। আমি পেয়েছি কিনা বলতে পারব না, তবে বুঝতে পেরেছি তিনি ভাল বই প্রকাশের ব্যাপারে কেবল আন্তরিকই নন, সেই সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রফেশনাল এবং সবচেয়ে ভাল প্রকাশক - উনার কাজের সাথে যারা পরিচিত তাঁরাই বলতে পারবেন। বইটি অবসরের কাছে তুলে দিতে পেরে গর্বিত এবং আনন্দিত বোধ করছি।
বিডিআর্টসে প্রকাশের কিছুদিন পর মুক্তমনা ব্লগেও আরেকটু বিবর্ধিত আকারে লেখাটি প্রকাশ করেছিলাম – ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে’ শিরোনামে। বইটির জন্য এ শিরোনামটিই যুক্তিযুক্ত মনে হওয়ায় সেটাই রেখে দিলাম। নতুন শিরোনাম খোঁজার যন্ত্রণা থেকে অন্তত বাঁচা গেল! বইটি পাঠকদের ভাল লাগলে আনন্দিত বোধ করব।
অভিজিৎ রায়
ইমেইল – charbak_bd@yahoo.com
ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
==================

Thursday, February 26, 2015

স্যালুট হুমায়ুন আজাদ স্যার ,আপনার পথে অভিজিৎ - ঘাতকদের ক্ষমা নেই-সুমি খান

প্রথাবিরোধী লেখক, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবি ড. হুমায়ুন আজাদের উপর জঙ্গী হামলার আজ ১১ বছর পার হয়ে ১২ তম দিন । এর মধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারী রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হলো মুক্তমতের পথিকৃৎ অভিজিৎ রায়কে। ঘাতকদের কোনভাবেই পার পেতে দেয়া যাবে না।এ পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল শক্তির বিচ্ছিন্নতা এবং দায়িত্বহীনতা সর্বনাশকেই ত্বরান্বিত করছে।
 কিন্তু ফারাবী যখন সরাসরি হত্যার হুমকি দেবে, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, জামায়াত, শিবির সহ উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীরা যখন হত্যার হুমকি দেবে কিংবা সরাসরি হত্যা করবে, তাদের নিম্নাঙ্গের কেশ ছেঁড়ার ক্ষমতা বা সদিচ্ছা এই রাষ্ট্রের নেই। আবার এ দেখে অনেকের ধর্মাঙ্গ দাঁড়িয়ে সালাম ঠুকে বেহেস্তে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করবে।
৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাঙলাদেশে যখন অন্ধকারের শক্তি  মৌলবাদ বিস্তারলাভ করতে থাকে, বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, তখন ২০০৪ এ প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' বইটি।বইটিতে  তিনি মৌলবাদীদের ফ্যাসিবাদীদের চরিত্রের শৈল্পিক রূপ দেন। মুখোশ খুলে ফেলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল ফ্যাসিবাদী জামাতে ইসলাম এবং তাদের দোসরদের । তারই জের ধরে ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয় । বইটি প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের  মৌলবাদীরা মসজিদে এবং বিভিন্ন স্থানে ড.হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ।পরবর্তীতে জামায়াতুল মুজাহেদীন জেএমবি'র জঙ্গীরা এই হামলার দায় স্বীকার করে। 
২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। বিদেশে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। এর কিছুদিন পরেই জার্মান সরকার তাকে গবেষণা বৃত্তি প্রদান করে।
ষাটের দশকের কবিদের সমপর্যায়ী আধুনিক কবি। সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবি সত্বার প্রধান নিয়ামক। তার প্রথম কাব্যগন্থের নাম অলৌকিক ইস্টিমার যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালেরে জানুয়ারি মাসে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে মার্চে। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ '’যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল'’। তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর আট বছর পর ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু। তার সপ্তম কাব্যগ্রন্থ পেরোনোর কিছু নেই প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে। এটিই হুমায়ুন আজাদের জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষ কাব্যগ্রন্থ। তবে হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর ফেব্রুয়ারি ,২০০৫ সালে এই সাতটি কাব্যগ্রন্থ সহ আরো কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা নিয়ে তাঁর কাব্যসমগ্র প্রকাশিত হয়।

Wednesday, February 25, 2015

খোকা মান্না ফোনালাপ: বিএনপি কর্মীদের দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার পরিকল্পনা

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমানকে একটি অডিও টেপে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বলতে শোনা গেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে রাজধানীতে মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য আয়োজিত গণমিছিলের পরিকল্পনা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে ওই অডিও টেপে শোনা যায়।
 বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান আন্দোলন নিয়ে দুই নেতার দীর্ঘ কথোপকথন রয়েছে ওই টেপে। বিএনপি নেতা খোকা আট মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
 টেপ বিষয়ে মান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘খোকা ভাইয়ের সঙ্গে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। তিনিই আমাকে ফোন করেন।’
এক সময়ের বামধারার ছাত্রনেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না নব্বইয়ের দশকে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
 ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান। ওই সময় তিনি ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক।
 ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর দল থেকে পদ হারান মান্না। এরপর গত মহাজোট সরকারের আমলে তিনি নাগরিক ঐক্য গঠন করেন।

 গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মান্নার উল্লেখযোগ্য কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা না গেলেও গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ‘মাঠে নামার’ ঘোষণা দেন তিনি।
 ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘বিএনপি রোজার পর আন্দোলন করবে। রোজার পর আমরাও মাঠে থাকব। আমাদের অভিভাবক ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’মূলত ওই সময় থেকেই গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও সিপিবি-বাসদের সঙ্গে জোট করে তৃতীয় শক্তি গঠনের উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন মান্না।
 সম্প্রতি বিএনপির টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে সুশীল সমাজের একাংশকে নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক’ নামের একটি মঞ্চ গঠন করেন কামাল-মান্না।
 এই মঞ্চ থেকে বিএনপির সঙ্গে আগাম নির্বাচন বিষয়ে সংলাপের চিঠি প্রদানসহ একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে আহ্বান জানান মান্না, কামাল ও কাদের সিদ্দিকী।
 মান্না সম্প্রতি বলেছেন, সরকার সংলাপের ক্ষেত্রে নমনীয় না হলে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 কথোপকথনের প্রথম অংশ
 খোকা : হ্যালো
 মান্না : জ্বি, সøামালাইকুম।
 খোকা : হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম, কেমন আছেন? ভাল?
মান্না : হ্যাঁ, আছি ভাল, ভাল আছেন?
খোকা : এই.. চলছে আর কী।
 মান্না : ডিস্টার্ব করলাম না তো, কোন্ সময় যে কী তা তো বলতে পারি না।
 খোকা : এখন তো এখানে বাজে রাত সাড়ে ১০টা।
 মান্না : তার মানে ঘুমাতে যাননি এখনও?
খোকা: না না, আমি তো ঘুমাই অনেক রাতে। দুইটার আগে তো ঘুমাই না।
 মান্না : আচ্ছা আচ্ছা আচ্ছা, এমনে শরীর-টরীর কী অবস্থা আপনার?
খোকা: শরীরটা আগের চেয়ে খারাপ হয় নাই, এইটাই ওরা বলে যে, ভাল।
 মান্না : ওই যে কী রিপোর্ট পাওয়ার কথা যে, সেটার কী অবস্থা?
খোকা : পেয়েছি, ওইটা স্ট্যাবল আছে। ডেটরেট করে নাই।
 মান্না : তাইলে তো ভাল। ওদিকের খবর-টবর তো সব বোধ হয় পেয়েছেন যে, টুকু ভাইসহ একদিন কথাও বলেছি।
 খোকা : হ্যাঁ, আমাকে ফোন করল একটু আগে, আপনার সাথে কথাটথা যেটা বলল জানাল আর কী আমাকে।
 মান্না : এখন এ ব্যাপার হলো যে, ধরেন শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা তো এখন ওরকম করে বলা যায় না। বাট দেখা যাচ্ছে যে, কূটনীতিকরা অন্যান্যরা যথেষ্ট পরিমাণে ইনিশিয়েটিভ।
 খোকা : হ্যাঁ, ইনিশিয়েটিভ তো কিছুটা হচ্ছে দেখা যায়।
 মান্না : জ্বি। আবার প্রতিবেশীদেরও দৃষ্টিভঙ্গির বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। আমি খবরটবর পাচ্ছি। এই মুহূর্তে আসলে দরকারটা হলো মাঠে যাওয়া। আমি আপনাদের অসুবিধাটা বুঝতে পারছি, যদিও আমি দেখতে পাচ্ছি যে, চেষ্টা করছেন আপনারা। আমি একটা প্রোগ্রাম করলাম সোহরাওয়ার্দীতে। এখন ধারণা করছি যে, এ প্রোগ্রামটার একটা কন্টিনিউটি রাখতে হবে।
 কারণ, বিদেশী কূটনীতিকরা এটার ওপরও জোর দিচ্ছে যে, বিরোধীদেরকে সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করতে দিতে হবে। এটায় বাধা দেয়া যাবে না। সরকারের ওপর একটা চাপও রয়েছে। আমি এটা করতে পারব, দেখা যাক কতদূর কী করা যায়।
 খোকা : অ্যাকচুয়ালি আমাদের জেলা পর্যায়ে বা অন্যান্য দিকে নিচের দিকে যে নেতাকর্মীরা আছে ওরাতো প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। ওরাতো অ্যাগজস্টেড হয়ে যাচ্ছে। এখন এটা কতদিন কনটিনিউ করা যাবে। আবার না করেও তো কোন উপায় দেখছি না।
 মান্না : আরও কিছুদিন তো কনটিনিউ করতেই হবে। খোকা ভাই আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি।
 খোকা : আপনার ওপিনিয়নটা কী... আরও কিছুদিন কনটিনিউ করি, নাকি?
মান্না : হ্যাঁ, আমি যেটা বলতে শুরু করেছি ত হলো যে, এখানে মাঝখানে যে একটা গ্রে এরিয়া বা ভয়েড আছে এই জায়গাটাতে এখন আমাদের নামা দরকার। আমাদের বলতে... সিপিবি বা ওদের পজিশন কিন্তু বেশ ফেসিনিটিং। অনেকটা ওই দিকে আর খানিকটা এই দিকে এই রকম। তার মানে আমরা যে কয়জন আছি এই কয়জনই। তার মধ্যে আবার দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু এখানে কাউকে টানতে হবে। এরমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রোগ্রামটা আমি করেছি যে এইটাতে অন্যরা খুব চাঙ্গা হইছে। বিকজ এটার সাথে পাবলিক রেসপন্সটা খুব ভাল ছিল। আমাদের তুলনায় খুবই ভাল ছিল।
 খোকা : আমরা কিছু কর্মী পাঠিয়েছিলাম।
 মান্না : হ্যাঁ হ্যাঁ, গেছে ওরা গেছে। যোগাযোগ হয়েছে। তার পরেও ধরেন আপনাদের এরাও যদি বোঝে যে, এখানে তারা পার্টিসিপেট করলে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের লাভ হবে তাইলে কিন্তু পার্টিসিপেশন অনেক বড় হতে পারে। ওই রকম হয়নি। হয়েছে, ওই রকম না। আপনি যাদের যাদের বলেছেন ওরা কয়েকজন আমাদের সাথে কথাও বলেছে। ওইটা ভাল আরকি। আমি এখন ৩ বা ২৩ তারিখে একটা গণমিছিলের প্রোগ্রাম করতে চাচ্ছি আমার সুবিধার জন্য। টিভির টকশোতে বলেছি, লিখেছি, ফরমাললি এ্যানাউন্স করব হয়ত, এক দিন দুই দিন পরে, ভাবলাম আপনার সঙ্গে একটু আলাপ করি। কারণ এখন পরিস্থিতিটা একটু সামনে নাজুক কী, ধরেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যদি ছয় হাজার লোক থেকে থাকে, মিছিলে তো এক হাজার লোক আসতে ভয় করে। মিছিল আর ওটা ডিফ্রেন্ট জিনিস। তারপরেও এটা আনতে হবে কারণ রাস্তার ভয়টাই তো ভাঙ্গার দরকার এবং এইটাতে আমি কথাবার্তা বলছি, আমি মনে করি মিটিং মিছিলটা করলে পুলিশ হয়তো বাধা দেবে না বা দিলেও আমরা তো থাকব সেখানে। দেখা যাক কী হবে।
 তো.. আপনার কাছে আমি দুইটা সাপোর্ট চাইছি, একটা হল যে, মাঝে আপানি তো দূরে থেকেও যেটুকু কিছু একটা ইয়ে করেছেন, আমার উপকারও হয়েছে। যে জিনিসটা একটু বেশি আমার জন্য কষ্টসাধ্য হচ্ছে যে, মানে খুবই কমিটেড লোক আনতে হবে আর ব্যাপক একটা পাবলিসিটি করতে হবে। মানুষ জানুক যে না রাস্তায় আছে লোকজন। সেøাগানটা এরকম দেব যে, শান্তি ও সংলাপের দাবিতে গণমিছিল। মানে দুটো জিনিস কম্বাইন করা যায়। আপনি ওখান থেকে প্রোগ্রাম-টোগ্রাম দেখতে পান কিনা, সেটা হলো টকশো এখন আমরা ডমিনেট করি। ওরা রাফলি চেষ্টা-টেষ্টা করে সেটা।
 আর আরেকটা ব্যাপার খোকা ভাই, আমি বলি আপনাকে সেটা হচ্ছে যে, আপনি তো দূরে থেকে যেটুকু ইনফ্লুয়েন্স করতে পারেন, আপনাদের লোকজনকে এইটা একটু বলেন, সেটা হলো যে, যদি অনেকটা নিউট্রাল পজিশনে পার্টিসিপেট করি সেটা কিন্তু ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টটাকে হেল্পই করবে। মিছিল মিটিং যদি আমি ১০ হাজার লোকের করতে পারতাম তাইলে একটা আওয়াজ উঠত। সাড়া পেতাম। সেটা হয়ত পারব না। কিন্তু পারব নাই বা কেন? একবার না পারি দু’বার তিনবার চেষ্টা করেও যদি পারি। ব্যানারটা যাই থাকুক। ব্যানার আর যাই হউক না কেন ব্যানারের ভেতরে অন্তত বিরোধী আন্দোলনকে কোন সমালোচনা করা হচ্ছে না।
 কালকে আমি আর নূরুল কবীর আরটিভির টকশোতে ছিলাম। এর আগে ইন্ডেপিন্ডেন্ট-এ ছিলাম। মানে এটাই বলেছি যে, এই ক্রাইসিসটার গোড়া তো ৫ জানুয়ারি, সেটা বাদ দিয়ে এগুলো আলোচনা করতে হবে কেন। ওইটা করেন তার সাথে এই যে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ঢুকেছে সেটাও আলোচনা করেন।
 মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বিদেশী কূটনীতিকরা গতকালকে এই যে ব্যবসায়ীদের সাথে বসেছিল। আজকে আপনি যদি পারেন তাইলে প্রথম আলোর ফার্স্ট নিউজটা পড়ে দেখবেন, হুবহু একই কথা বলেছে তারা।
 পরিস্থিতিটা বেশ ফেভারেবল আছে আমার মনে হয়। যদিও আমি জানি না যে গভর্নমেন্টের এ্যাটিচিউটের জন্য ভাল হবে নাকি মন্দ হবে। প্রাইম মিনিস্টার আমার ব্যাপারে খুব অ্যালার্জি হয়ে গেছে। মনে করছে যে, এই সব কাজ ভেতরে ভেতরে আমি করে দিচ্ছি। নইলে ড. কামাল আর নাগরিকরা কি এগুলো পারে নাকি...? আমি এগুলো করাচ্ছি। এরকম একটা ধারণা হয়েছে।
 আপনার ভাইবার ঠিক আছে, এই জন্য কথা বলতেছি। না হলে তো কথা বলতেও ভয় লাগে। আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে বলছে যে আপনি একটু কেয়ারফুল থাকেন। আপনাকে যদি সুবিধাজনকভাবে পায় তাহলে ইউ উইল ইন ট্রাবল। তো ওইটাও একটু কেয়ারফুল থাকার চেষ্টা করছি। সব মিলায়ে আর কি, এখন দোয়া করেন কি করা যায়। আর কোন পরামর্শ যদি থাকে আপনার সেইটা বলেন।
 খোকা : আমি আপনাকে ফোন করতাম এই জন্য যে, আমাদের গ্রোগ্রাম নিয়ে আমরা একটু দ্বিধাগ্রস্ত, এইটা কি করা যায়।
 মান্না : শোনেন, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক থেকে আমি একটা কথা বলি। আই মে বি রং। কারণ এটা তো আপনার ডেফিনেট কথা ছাড়া বলা যায় না। তার পরেও আমি মনে করছি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকান এ্যাম্বাসেডর- সব কথাবার্তা সূক্ষ্মভাবে দেখেন- মনে হচ্ছে যে তারা কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সংলাপ করতে হবে। অপজিশনকে ডেমোক্র্যাটিক এ্যাটমোসফেয়ার দিতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এটা তোমাদেরই কাজ, করতে হবে, নইলে তোমাদের ক্ষতি হবে। এখন এই কথাটা শুধু কথার মধ্যে কি?
এটার সঙ্গে যদি ইন্ডিয়ানদের একটা যোগসাজশ হয়, তাহলে এইখানে একটা চেঞ্জের বাতাস বয়ে যাবে। আমি বলছি আমার নলেজ অনুযায়ী বন্ধুদের পরিবর্তন হচ্ছে, এখন যদি আপনি, মানি এটার ইউজ করেন, তাবে রংটা কিন্তু শেষ হয়ে যাবে। যদি থাকে, থাকলে যেটা হবে এটা আমি বল এটা আমি বলছি না। কিন্তু যদি না থাকলে হবেই না সেটা সিউর, না থাকলে ইউ জাস্ট ডিফিটেড, আপনাদের এটা উইথ ড্র করার জায়গা নেই আর। বরং আরও ভাল করে করার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা যদি একটু দুর্বলও হয়, তারপরও কিন্তু। ....
দেখেন, এতগুলো লোক পেট্রোলবোমায় মারা গেছে, কিংবা এতো প্রপাগা-ার পরেও মানুষের আন্দোলন, বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে। (না, আন্দোলন তো জাস্টিফাইড : খোকা) মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, বিরক্ত হচ্ছে, ভাল লাগছে না। তারপরেও মানুষ বলছে না সব দমন করে ফেলো, বিএনপি খুব অন্যায় করছে।
 খোকা : বলছিলাম, ধরেন আপনাদের মুভমেন্ট, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক যে একটা তৎপরতা চলছে আরকি। তারপরও তো সরকারের অবস্থানের কোন রকম কোন ইয়ে নাই, কোন রকম অবস্থানের পরিবর্তন নাই। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের সাইড থেকে কি ম্যাডামের অবস্থান থেকে স্টেজে কি কোন কথা বলা কি ঠিক হবে যে, কি পরিস্থিতিতে আমাদের এই মুভমেন্টটা কন্টিনিউ করতে হচ্ছে।
 খোকা : একটা হলো যে, গবর্নমেন্ট এই ধরনের জাতীয় আন্তর্জাতিক চাপের পরও তারা আলোচনার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে তাদের কোন ভ্রƒক্ষেপ নাই। এমতাবস্থায় আমাদের আন্দোলন চালায়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের জন্য কোন উপায় খোলা নাই।
 মান্না : না না, খোকা ভাই না। মানে আপনি যেটা বলতে চেয়েছিলেন, সেটা বলেন। কিন্তু টোনটা একটু ডিফরেন্ট থাকতে হবে। সেটা হচ্ছে কি, একটা যে, আমরা কোন সহিংসতার মধ্যে নাই। আমাদের এ রকম একটা অন্দরের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এটা একটা অবৈধ সরকার। অনির্বাচিত সরকার। আমরা তার কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করিনি। আমরা শুধু বলেছি, তুমি ভুল করেছ, কারেকশন করো।
 মান্না : সেই জন্য এই আন্দোলন। সেই আন্দোলনটাকেও তারা এই এই ভাবে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। সেখানে আপনার এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের উদাহরণগুলো সব তোলেন। তোলার পর বলেন, এটা একটা ন্যায্য আন্দোলন। এই ন্যায্য আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার কোন পথ আসে না।
 মান্না : ওরা যে এত সহিংসতা সহিংসতা করেছে। এই সহিংসতা তারা নিজেরাও যে করেছে কত? এটা আপনাকে ক্লিয়ার করতে হবে যে, আপনি কোনভাবেই সহিংসতার পক্ষে নন। কিন্তু ডেমোক্রেসির প্রশ্নে ...
মান্না : ... এই সমস্যার সমাধান হতে পারে, সরকার যদি সংলাপের উদ্যোগ নেয়, কথা বলে, এটার একটা বাস্তবসম্মত সমাধান করে। ব্যাকফুটে যাওয়ার কোন টোন থাকা যাবে না। কিন্তু আপনার বক্তব্যটা বোঝা যাবে।
 মান্না : এখন কিন্তু আমি দেখছি, সালাউদ্দিন সাহেবের যে স্টেটমেন্ট যাচ্ছে, দিজ আর ফাইন। খুবই সুন্দর স্টেটমেন্ট যাচ্ছে আমি দেখছি। ওই জায়গাটা ধরে রেখে ম্যাডাম সমস্ত পরিবেশই বিবেচনা করছে জনগণকে বলবেন, এই কষ্টটুকু স্বীকার করতে হচ্ছে, আমরা জনগণের কষ্টের জন্য দায়ী না। দায়ী তারা। তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। সরকার এটা তাদের মানতে হবে।
 মান্না : যেমন ধরেন, আমরা এইখানে যেই ক্যাম্পেইনটা করছি। ক্যাম্পেইন মানে কথা বলছি। সেখানে আমরা বলেছি, সমস্যাটা শুরু হয়েছে এইখানে। ৯৬’র নির্বাচনের পরে তখন আমরা সঙ্গে ছিলাম, আমরা বলেছি, গবর্মেন্ট মানি না একদিনের জন্য। তুমি যাও। তারা ৩ সপ্তাহের মধ্যে মধ্যে সংসদ ভেঙে তা করে ফেলেছিল। কিন্তু এখন তুমি কথা দিয়েছিলে, এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দিবে। কিন্তু তা করতেছো না। তুমি ৫ বছর চলতে চাও। এটাই কারণ। তুমি এটাই মিটাও। বাকি যেটা বলছো, আমরা এটারও বিরুদ্ধে। আমরা দরকার হলে সবাইকে বলব, সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়েন। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, তুমি ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলতে হবে। সেই রাইটও তোমার নেই।
 খোকা : না না ভয়াবহ অবস্থা। এটাতো স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশের চরিত্রইতো থাকছে না আর। যেখানে সেখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এই হচ্ছে, এটা কি হলো একটা দেশের?
মান্না : এইটা দুইটাতে প্লে করে ওইটা বলতে হবে, আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি।
 খোকা : হ্যাঁ, সেটাই সেটাই।
 মান্না : এই জায়গাটাই একটু ইয়ে করতে হবে যে, আমরা বড় ঠেকায় পড়ে গেছি, তাই এটা করতেছি। মানুষ চায় না। মানুষ এখানে চায় বিনয়ী ...। ওইভাবে আমি মনে করি একটা দিতে পারেন। আর বাকিটা আপনিই বুঝবেন, সেটা হলো, আসলে কতখানি ধরে রাখতে পারবেন। আর কতখানি নিতে পারবেন? ভেঙে পড়া যাবে না। তার আগে আপনার বুঝতে হবে। কিন্তু আমি এখনও ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি দেখছি না।..
খোকা : না, সেটা না। কিছু কিছু ডিস্ট্রিক্ট থেকে বোধ হয়, একটু বিরক্ত মানে। এখন ধরেন মুভমেন্ট চালানো, প্রতিদিন একটা হিউজ কর্মযজ্ঞ হয়। একটা মানুষ জেল জুলুম পালায়া থাকা, এই করা সেই করা, আবার এ্যাকটিভিটিজ করা, এটার জন্য যোগান দেয়া এগুলো একটু ইয়ে হয়ে আসছে আরকি। ...
মান্না : হু হু হু। ... সহসাই আপনাদের দেবে না। কিন্তু আমরা যদি একটা দুইটা বড় প্রোগ্রাম করে ফেলতে পারি। তাহলে ব্রেক থ্রু হয়ে যাবে। আপনারা তখন পেছনে পেছনে নিজেদের মতই নামতে পারবেন। ওকে নামতে পারলেই কেইস শেষ।
 মান্না : ... এই প্রোগ্রাম আমি ডিক্লেয়ার করেছি। ড. কামাল এ্যাগ্রি করেছেন। হি উইল লিড দ্য প্রোসেশন। তিনি এখন দেশের বাইরে যেমন ধরেন কালকে একটা প্রশ্ন করেছিলো সরকার কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঠেকাচ্ছে? আমি বললাম, না, এটাতো কোন প্রশ্ন হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঠেকাচ্ছে না।
 মান্না : কিন্তু অন্যান্য শক্তিকেও ঠেকাচ্ছে। সেটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নয়। এই ক্যাম্পেইনগুলো করা, যতটুকু পারা যায়। তার সঙ্গে সঙ্গে এ্যাকশন নিবেন। আর যেটাই হোক, পাবলিকের কিলিংয়ের ঘটনা ডেফিনিটলি এ্যাভয়েড করতে হবে। এটা করা যাবে না।
 মান্না : গত চার পাঁচ দিনে পেট্রোলবোমায় মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু নেই এখন আর। এটা ভালো।
 খোকা : সেটাও গবর্মেন্টের অপপ্রচার। তারা বলবে, আমরা কন্ট্রোল করে ফেলছি। সব ঠিক হয়ে গেছে।
 মান্না : না না, তা করতে পারছে না। তা করেনি এখন পর্যন্ত। হয়তো তারা করবে। তারা ভালভাবে খেয়ালই করেনি এখনও। ... এটা আপনারা বলতে পারবেন। এটা আমাদের বলতে হবে। আমি দুইটা টক শোতে বললাম। অন্যদেরও বলতে বলেছি। ... কিন্তু আন্দোলন বাকিটা চলতে থাকবে।
 খোকা : আপনার প্রোগ্রাম কি ২৩ তারিখে।
 মান্না : জ্বি ২৩। ২৩।
 খোকা : এটা কি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই।
 মান্না : এটা প্রেস ক্লাব থেকে হয়তো মিছিল করব। মতিঝিলের দিকে যাব চিন্তা করছি।
 খোকা : এটা কি বিকালের দিকেইতো হবে, নাকি?
মান্না : জ্বি, বিকালে। তিনটার দিকে জমায়েত। এরপর আমরা মিছিল করব। ধরেন আমার মিছিল এক হাজার লোকেরই হলো। এক হাজার না পাঁচ হাজার সেটা বলতে পারব না। ঢাকা শহরের সব লোককে জানাতে হবে যে, এই মিছিলটা হচ্ছে। যাতে মানুষ হতাশ হয়ে না যায়। এই জায়গাটাতো ভেঙে গেছে। এটা ধরে রাখতে হবে ... স্পিরিট অব মুভমেন্ট না হলে মানুষ টিকবে না।
 মান্না : ঢাকা সিটির মনে হয় না। আপনাদের এখানে যারা সিটিতে আছে, তাদের নিজেদের মতো করে ভাবতে হবে। শহরের তারা কোথায় কিভাবে কি করতে পারে? এই জন্য টিউনিং দরকার। একটু বোঝানো দরকার। গেলেইতো গুলি খাবে এই কথা বলেতো আপনি দেড় বছর চুপ থাকতে পারবেন না। নামতে হবে তো আপনাকে। সেটা আপনি কৌশলে নামেন, সতর্কতা, তৈরি করে নেন কিভাবে এটা আপনি অত দূর থেকে বলবেন। এটা নিজেদের ফিল করতে হবে।
 মান্না : আরেকটা বিষয় আমি ওই যে বলেছিলাম। কোনভাবে ইউনিভার্সিটি নাকি এটা ভাবেন। দ্যাট শুড বি এনি কস্ট। যদি পারা যায়। আমি জানি না। এটা আরও আগে, মাস তিনেক আগে।
 খোকা : করে ওরা। বাট এটা খুবই সীমিত।
 মান্না : ওটাতো ট্রাডিশনাল হয়েই গেছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগকেতো ডিভিডে- দিচ্ছে...।
মান্না : ধরেন, ইউনিভার্সিটিতে একটা মিছিল হলো। ধরেন যা মারামারি বাইরে হচ্ছে। ইউনিভার্সিটিতে মারামারিতে গেলো দুই তিনটা। কি করা যাবে? কিন্তু হল ... আপনারা গভমেন্টকে শেইক করে ফেললেন।
 মান্না : আমি মাস তিনেক আগে ... কে বলেছিলাম, যে কোনভাবেই হোক আপনি আগে ইউনিভার্সিটিতে দুই তিনটা হল দখল করেন। আগে এ রকম ছিলোতো আমাদের। এই পাঁচটা হল আমাদের। ওই তিনটা হল তোমাদের। ওই দুইটা ওদের।
 মান্না : তখন উনি বলেছিলেন, না আমাদের ছাত্রদলের এ রকম স্ট্রেন্থ এখন আর নাই।
 খোকা : ছাত্ররা হয়তো ছাত্র-ছাত্রের লড়াইতে কুলাইতে পারবেন। কিন্তু পুলিশ টুলিশ আইসা ইউনিভার্সিটি অথরিটি আইসা, ঢুইক্যা-ফুইক্যা রুম-টুম ইয়ে টিয়ে করে, বড় ধরনের একটা ইয়ে হয়ে যাবে।
 মান্না : একটা বড় ধরনের কিছু হলেই ঘটনাই পাল্টে যাবে। গভমেন্ট সুতার উপরেই ঝুলছে এখন। যে টোনে কথা বলতে দেখছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, গভমেন্ট রিয়াল একটা শেকি পজিশনে আছে। আমি জানি না, কেরির সঙ্গে ওখানে কি কথা হচ্ছে বা হবে। দ্যাট উইল বি ভেরি ভাইটাল।
 খোকা : এখানে বিভিন্নভাবেতো আমরা কিছু ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করছি। আমি ওসমান ফারুক যাই হোক জানা থাকলো আর কি।
 মান্না : খোকা ভাই দোয়া করবেন, আবার কথা হবে। আমি আবার আপনাদের ... যাব। এইরকম যদি হয় আপনাদেরও কিছু কিছু জায়গা আছে। যারা উদ্যোগী করবে। তাদের দিয়ে কথা বলাতে হবে। দলের কোন ক্ষতি হয় এমন না। যেমন আগামীকাল অলি আহাদ সাহেবের উপর উনার মেয়ে করছে। সেখানে এমাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবও আছেন।
 খোকা : ওই মেয়েটা কালকেতো আরটিভিতে দেখলাম আপনার প্রোগ্রাম, ভালই হয়েছে।
 মান্না : ওকে তো আমি নিয়েছি। ওকে আমি একদিন বাংলাভিশনে একটা প্রোগ্রামে দেখেছি। ওই যেটা বড় প্রোগ্রামটা হয়। আমার ভাল লাগল, শুনি। এরা যখন জিজ্ঞেস করলে বললাম ওকে দাও।
 খোকা : কালকে রাতে ওকে ফোনও করলাম।
 মান্না : এটা যদি পারেন। ওই মেয়েটা আছে, পারভেজ আছে। এইরকম ৫টা ৭টা ছেলে মেয়ে তৈরি করেন। যারা সব জায়গায় যেতে পারে। কথা বলুক তারা। এটা কিন্তু খুব ম্যাটার করে।
 খোকা : পলিটিক্স কিন্তু মাঠের থেকে চুরি হবার আরেকটা কারণ টকশো। মানুষের এটেনশনটা টকশো’র দিকে চলে গেছে।
 মান্না : ইন স্পাইট অফ অল দ্য প্রেসার এই জায়গাটা কিন্তু এখনো ডেমোক্রেটিক ফোর্সের প্রভাব বেশি। ধরেন যে পরিচালনা করে, যে প্রডিউশার তারাও আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওরাও ভাবে বিএনপির কথা আসা দরকার। ওরাও একোমোডেট করবে। কিন্তু এইজন্য তো মানুষ নাই এখন। কেউ তো যাচ্ছে না।
 মান্না : আচ্ছা, লাস্ট একটা কথা বলি। আমাকে দুই একজন এইরকম বলেছে আপনি একটু ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি হয়তো একটু ভাল ফিল করবেন। উনি একা আছেন, পরিস্থিতি কি জানান। তো আমার হয়তো ফোন করা হবে বলে মনে হয় না। আমি হয়তো শিমুলের সঙ্গে কথা বলবো। আপনি যদি পারেন আমার সালাম দিয়েন। আই এম নট বিএনপি ম্যান বাট আমি ডেমোক্রেসির কোয়েশ্চেনে ফাইট করছি।
 খোকা : আমি তো বলতে পারি। আপনারা যেহেতু কামাল হোসেন সাহেবসহ আপনারা দেখা করলেন। উনি বিদ্যমান বিষয় নিয়ে আপনাদের ফোন দিতে পারেন। একটু আলোচনা করি বা এটা সেটা। এইরকম করলে কি আপনারা কিÑ
মান্না : মনে হয় তা পারবো না। আমি তো একা যেতে পারবো না। ড. কামাল হোসেন সাহেব তো রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কাজেই উনাকে একটু বলেন। ... উনাকে পারসু করছেন বললে আমরা কথা বলতে পারি।
 খোকা : উনি যদি ইয়ে হয় ... ম্যাডাম.. দাওয়াতই দিল ... যে আসেন।...
মান্না : আপনার কনভেশনের জন্য একটা কথা বলি। খেয়াল করে দেখেন এই যে নাগরিক সমাজের যে উদ্যোগটা সংলাপের পক্ষে একটা সাড়া ফেলে দিল না ... এটা হলো কি ... হবার পর দেখলাম বান কি-মুনের চিঠিটা ... বান কি-মুনের চিঠি ও এই উদ্যোগটা কিন্তু প্রায় একই জিনিস ছিল।
 খোকা : হু হু হু ... হু হু
 মান্না : বান কি-মুনের চিঠিটা প্রথম আলোতে যেদিন প্রকাশিত হলো তার সাতদিন আগে মতিভাই বললেন, এই রকম একটা চিঠি আসছে ... নিউজ তো করতে পারছি না বিকস ডকুমেন্ট নাই। কি কি ডকুমেন্ট দেখেন চেষ্টা করে। মানে মতিভাই সম্ভবত জানতেন বান কি-মুন এই রকম বলছে। তার আগে হয়তো ড. কামালও জানতেন। হয়তো তাকে ফলো করে সে কাজটা করেছেন।
 তাহলে হলো কি, ড. কামাল যেটাকে না বলেন আমি তা পারসু করতে চাই না। ... উনি উনার মতো যা করেনÑ যেমন নারায়ণগঞ্জে উনি কোর্টে না দাঁড়ালে র‌্যাব-ট্যাব অ্যারেস্ট হতো না। যাকে যতখানি পাওয়া যাবে তাকে ততখানি নেওয়াই ভাল। তার বাইরে প্রেসার করতে চাই না।
 খোকা : হু হু ...
মান্না: তারপরে আওয়ামী লীগ একদম লেগে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে। পার্লামেন্টের মধ্যেই প্রাইমমিনিস্টার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করলেন। আমাদের তো আওয়ামী লীগের মধ্যে প্লে করতে হবে। ওই জায়গাটা থাকতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগের অনেক লোক বিরক্ত, অনেক লোক মনে করে যে বাড়াবাড়িটা ঠিক হচ্ছে না। তারাও ভিন্ন রকম চিন্তা করে। ওরা আমাদের ব্যান্ড করে দিতে পারলে ওদের লাভ। ... আপনি যদি বলেন ঠিক আছে। তবে ওটা আমি পারসু করতে চাই না। ... আপনি উনাকে বলেন। দেখেন কি হয়...
খোকা : আচ্ছা আচ্ছা...

Sunday, February 22, 2015

মমতার সফর : ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে-মানস ঘোষ

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জোট সরকার তাঁকে লাল গালিচার অভ্যর্থনায় স্বাগত জানিয়েছে একই সঙ্গে। অভিনন্দন জানিয়েছে জামায়াত ও খালেদার কট্টর মুসলিম মৌলবাদীদের দল ও সংগঠনগুলো। 
 
কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা, অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনার ছোঁয়া থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন। কারণ তিনি বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল তো ননই, বরং পুরোপুরি যে বৈরী মনোভাবাপন্ন তা তাঁর কাজেই প্রমাণিত। তিনি বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনের সমর্থক বলেই চিহ্নিত। বাংলাদেশের মানুষের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে বিশেষ করে আহমেদ হাসান ইমরান ও খাগড়াগড় বিস্ফোরণকান্ডে মমতার ভূমিকা দেখে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মসজিদ ও মাদ্রাসায় জামায়াতের মতো আন্তর্জাতিক মুসলিম সন্ত্রাসবাদী চক্রকে নিরাপদে ঘাঁটি গাড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ধারণা। যাতে ওই চক্র এপারে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থেকে ওপার বাংলায় নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতানেত্রীদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা তাদের পক্ষে সহজ হয়ে ওঠে। এর ফলে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটবে এবং তাদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে বলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধারণা।

 প্রশ্ন উঠছে, ২০১১-এর সেপ্টেম্বরে যে নেত্রী তিস্তার জলবণ্টনের বিষয়ে ‘অসম চুক্তির’ বিরোধিতা করে অভিযোগ করেছিলেন যে এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ মনমোহন সিং বাংলাদেশের কাছে বেচে দিচ্ছেন, যার প্রতিবাদে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরসঙ্গী হতে অস্বীকার করেন, আজ সেই তিনিই চার বছর পরে শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ বাগিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে হঠাৎ এতটা আগ্রহী হয়ে উঠলেন কেন? তিনি তো ২০১১-য় মনমোহনের সফরসঙ্গী না হয়ে এবং ‘আমরা বাঙালী’র স্টাইলে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করে মনমোহন সিংয়ের মুখ পুড়িয়েছিলেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে টর্পেডো করতে ছাড়েননি।
 
টর্পেডো করার নেপথ্যে মুখ্য কারণ ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ইগো বা অহংবোধ। তিনি নিজেকে মেঘালয়ের মুকুল সাংমা, মিজোরামের লালথানহাওলা বা অসম ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মানিক সরকারের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূণ রাজনীতিক বলে মনে করেন। মনমোহন সিং তাঁকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য চার মুখ্যমন্ত্রীর মতো সফরসঙ্গী করে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস করতে চেয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ ছিল। মমতা তখন আমায় বলেছিলেন,‘বাজারে মুড়ি মিছরির 'এক দর' হয় না। তাই আমি ওদের সঙ্গে যাচ্ছি না।’ মমতা আমাকেও বলেছিলেন মনমোহনের সফরসঙ্গী না হতে। এমনকি আমাকে তখন এটাও বলেন, ‘আমি যখন ঢাকায় যাব, তখন আপনি আমার সঙ্গে যাবেন। দিল্লীকে 'না 'বলে দিন।’লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এবার তিনি তিস্তা জলবণ্টনের ব্যাপারে কোন সমাধানসূত্র প্রকাশ্যে ঘোষণা না করেই ঢাকা সফর করছেন। শোনা যাচ্ছে জলবণ্টনের সমাধানসূত্রে এবার তিনি রাজি হয়েছেন। এটা তো তিনি চার বছর আগেই মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসে চূড়ান্ত করতে পারতেন। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে তিনি এক সদস্যের কমিটি গঠন করে তাঁকে সমাধানসূত্র বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট এখন ঠান্ডা ঘরে। ফাইলের ওপর ধুলো জমেছে, কিন্তু সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তিনি চুপিসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বার্তাই দিতে যাচ্ছেন যে, দ্বিপাক্ষিক স্তরে দু’ দেশের সরকার কোন সমাধানসূত্র বের করলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই? অর্থাৎ চার বছর আগে জলচুক্তি সম্পাদনে তিনি যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন সেই পথ থেকে তিনি এখন সরে আসছেন। এটা কি তিনি করছেন বাংলাদেশে নিজের ধসে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে? নাকি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নিজের গুরুত্ব জাহির করতে? তিনি ঢাকাকে কি এই বার্তা দিতে চাইছেন যে মমতাকে বাদ দিয়ে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়? অনেকে মনে করছেন নিজের জন্য বাহবা কুড়োতেই তাঁর এই বাংলাদেশ সফর।
 আরও প্রশ্ন উঠছে দিল্লীর চাপেই কী তাঁর এই বাংলাদেশ সফর? শেখ হাসিনার কানে কানে তিস্তার সমাধানসূত্রে রাজি হওয়ার কথা বলে আসার জন্য? শুধু তিস্তা কেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্বন্ধেও তিনি তাঁর আপত্তি তুলে নেয়ার কথা শেখ হাসিনাকে শুনিয়ে আসবেন। যদিও তাঁর নির্দেশে তাঁর দলের চার রাজ্যসভা সদস্য ২০১৩ সালে সংসদ চলাকালীন স্থলসীমান্ত চুক্তির খসড়া তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে কাগজের গোলা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। তিস্তার মতো স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়েও মমতার একই বক্তব্য ছিল- চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হচ্ছে, ভারতের কোন সরকার দেশের জমি এইভাবে অন্য দেশকে ‘ভেট’ দিয়ে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে না। এখন শোনা যাচ্ছে তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তিতেও রাজি। এই রাজি হওয়ার বার্তাও তিনি শেখ হাসিনাকে জানিয়ে আসবেন। 

 প্রশ্ন উঠছে, মমতার এই ‘পাল্টি’ খাওয়ার আসল কারণ কী? আসলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মুসলিম মৌলবাদীরা নিজেদের ভুল রাজনৈতিক চালের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। তা দেখে মমতা ও তাঁর ইমরান-ফিরহাদ হাকিমরা খুবই হতাশ। তাঁরা বুঝে গেছেন, মৌলবাদীদের পক্ষও সাহায্য নিয়ে তাদের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করা খুবই কঠিন কাজ। তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার দিন শেষ হবে এবং নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে ক্ষমতায় আসবে খালেদা-জামায়াত জোট। আমাকে তো তৃণমূলের মন্ত্রী ও আমলারা টিপ্পনী কেটে বলতেন, হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ক্ষমতার থাকার দিন শেষ। এখন খালেদা-জামায়াতের জমানা আসছে। তারাই বাংলাদেশের উদীয়মান শক্তি। কিন্তু শেখ হাসিনার বিপুল জয়ে তাদের সব অঙ্ক বানচাল হয়ে যায়।
 মমতা খাগড়াগড় বিস্ফোরণকান্ড নিয়ে যে ভাষায় ভারতের জাতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-কে দোষারোপ করেছিলেন তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে হতবাক করে।
 
তাদের মতে, মমতা যেন পাকিস্তানীদের ভাষায় কথা বলছেন। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে জামায়াতী সন্ত্রাসের নেটওয়ার্কের খবর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঢাকার রিক্সাওয়ালারা পর্যন্ত বিশ্বাস করে যে মমতা ইমরানের মাধ্যমে জামায়াতীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বাংলাদেশে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তাদের দেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে চান। না হলে ইমরানের মতো কট্টর জামায়াতীর খপ্পরে তিনি পড়েন কেমন করে? আর সেই ইমরানকে এত গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যসভায় সদস্যই বা কিভাবে করেন?
 
সাম্প্রতিককালে ইমরান বিষয়ক খবর বাংলাদেশের মিডিয়ার শিরোনামে স্থান পাচ্ছে। অথচ সিমি’র এই প্রাক্তন নেতা তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইমরানকেই মমতা তাঁর সফরসঙ্গী করবেন বলে জেদ ধরে বসেন। যদিও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব, যাদের সঙ্গে ইমরানের ওঠাবসা ও নিবিড় সম্পর্ক ছিল, তারা এখন সবাই জেলে। বাংলাদেশ সরকার আকারে ইঙ্গিতে ইমরানকে সফরসঙ্গী না করার জন্য মমতাকে বার্তাও দেয়। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। ইমরানকে সঙ্গে নেয়ার জন্য তিনি গোঁ ধরে বসেন। বাংলাদেশ সরকার যখন দিল্লীর বিদেশমন্ত্রককে জানায় যে, ইমরান সঙ্গে থাকলে ঢাকায় অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে তখন দিল্লী বাধ্য হয়ে মমতাকে জানায় ।বাধ্য হয়েই মমতা ইমরানকে তাঁর দঙ্গল থেকে বাদ দেন। মমতা যদি ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তাহলে তাঁকে এইসব স্পর্শকাতর বিষয়ে অনেক অপ্রিয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে।
 আমার প্রচুর বাংলাদেশী বন্ধু একসময় মমতাকে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মিত্র বলে জানতেন। শেখ হাসিনাও তাঁকে নিজের ‘কাছের মানুষ’ বলে পরিচয় দিতেন এবং ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অভাবনীয় সাফল্যের পর কূটনৈতিক প্রোটোকল ভেঙ্গে তাঁকে ব্যক্তিগত অভিনন্দনবার্তা ও পাঠান ।সেই ব্যক্তিই যে রাতারাতি পার্শ্বচরদের পরামর্শে ‘পাল্টি’ খেয়ে পশ্চিমবঙ্গকে 'বাংলাদেশ থেকে খেদানো' খুনি জামাতি সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘরে পরিণত করবেন ,তা তারা স্বপ্নে ও ভাবতে পারেননি।
 
শেখ হাসিনা সরকার সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন তা লক্ষ্য করা গেল ।বাংলাদেশের ঐতিহ্য ছিল কোন বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান শহরে এলে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
 মমতা জানেন কিনা জানি না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাভাষী রাজ্যের রাজনীতির ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। বলতে গেলে, এ সব রাজ্যের হাঁড়ির খবর তাদের নখদর্পণে।
 
বাংলাদেশে একসময় অভিনেতা তাপস পালের খুবই জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের বাড়িতে ঢুকে তাদের মা-বোনেদের রেপ করানোর হুমকি দেয়ার পর তিনি বাংলাদেশে আজ এক ঘৃণ্য ব্যক্তি। যার জন্য মমতার দঙ্গলে তাপস পালের ঠাঁই হয়নি, হয়েছে দেবের। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ঢাকার প্রথম সারির দৈনিকগুলো মমতার সফর সম্পর্কে যতটা অনীহা দেখাচ্ছে, জামাতপন্থী মৌলবাদী মিডিয়া, যেমন, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত তাঁর এই সফরকে শিরোনাম করে ততোধিক আগ্রহ ও উৎসাহ প্রকাশ করছে।

 মমতার ঢাকা সফর সরকারী হলেও এতে পশ্চিমবঙ্গের কোন লাভ হবে না। কারণ তাঁকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেই বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ আলী এখন সরকারী সফরে আমেরিকায়। সুতরাং তাঁর অনুপস্থিতিতে এই সফরে ঢাকায় বাংলাদেশের কোন মন্ত্রীর সঙ্গে মমতার কোন সিরিয়াস বৈঠক হওয়ার সুযোগ নেই। আর ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বসবে না। সুতরাং এই সফরে তাঁর সঙ্গী কলকাতার কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের বণিকসভার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। এই সফরে রাজ্যের প্রাপ্তির চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাছাড়া বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলা ও শহীদ মিনারে অমর একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনই হবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের মূল কর্মসূচী। 

 তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে কাজটি মমতা চার বছর আগে করে দেখাতে পারতেন, সেটা তিনি চার বছর পরে করে কী লাভ পেলেন? কারণ ওই দুই চুক্তি ২০১১-য় মনমোহনের সফরের সময়ে সম্পাদিত হলে এতদিনে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেত যা পশ্চিমবঙ্গ এবং ওইসব রাজ্যগুলোর অর্থনীতির পক্ষে অভাবনীয় আশীর্বাদ বয়ে আনত। কিন্তু মমতা নিজের গোঁয়ার্তুমির জন্য সেই সুযোগ হেলায় হারালেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যে সুবর্ণ সুযোগ চার বছর আগে এসেছিল যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতো, তা কি ২০১৫তে আদৌ বাস্তবায়িত হবে?
 
মমতা তাঁর অপরিণামদর্শিতার জন্য দু’দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে আগেই স্তিমিত করে দিয়েছেন। এই দুই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে প্রভৃত সুযোগ-সুবিধার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো মমতা তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশেরর মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের সুবিধা ভারত নিতে পারলে উত্তর-পূর্বের ‘সাত বোন’ ও পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির চেহারাটাই বদলে যেতে পারে- এই কথা লিখেছিলাম বলে মমতা আমাকে 'হাসিনার দালাল' বলেও কটূক্তি করেছিলেন। আমি এর প্রতিবাদ করে রাজভবনের এক সরকারী ভোজসভা থেকে ওয়াকআউট করতে গেলে তদানীন্তন রাজ্যপাল এমকে নারায়ণন আমাকে নিবৃত্ত করে বলেন, এমন কিছু করবেন না ,যা রাজ্যপালকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে।’ পরিশেষে প্রশ্ন থেকেই যায়, মমতার এ সফর সত্যি কি তাঁর বিলম্বিত বোধোদয়? নাকি তাঁর সিঙ্গাপুর সফরের মতো শুধুই ‘বেড়াতে যাওয়া’, যা থেকে রাজ্যের নীট লাভ হবে শূন্য?

 লেখক :  পশ্চিমবঙ্গের বাংলা স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক