Tuesday, December 20, 2016

শুভ বিয়ে বার্ষিকী মা -সুমি খান


 একজন বাঙ্গালী মায়ের কোলে আমার জন্ম। আমার মা নূরজাহান খানের বিয়ে বার্ষিকী ২০ ডিসেম্বর। তাই কিছু কথা লিখবার ইচ্ছে হলো আজ।  ১৯৬৪ সালের ২০শে ডিসেম্বর তৎকালীন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা ম্যাজিষ্ট্রেট জামাল আহমেদ সিদ্দিকীর  আদরের কন্যার বিয়ে হলো আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা হোলটাইমার বিপ্লবী , জমিদার ফজলুর রহমান খানের পুত্র সাইফুদ্দিন খানের  সঙ্গে।

নূরজাহান খান ১৯৪৯ সালের ১১ আগষ্ট কোলকাতা মেডিকেল কলেজে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময়ে তাঁর মাতা জাহান আরা বেগম জটিল টাইফয়েডে আক্রান্ত হন।এর তিন দিন পর নূরজাহান খানের মা জাহান আরা বেগমের জীবন সংকটময় হয়ে গেলে তাঁকে কোলকাতা মেডিকেল কলেজের  আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।নূরজাহান খানের জন্মের ২১ দিন পর ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মা জাহান আরা বেগম কোলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
৬ নতি নাতনির সাথে ২০১৩ সালে জন্মদিনের দিন
নূরজাহান খানের পিতা জামাল আহমেদ সিদ্দিকী কোলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বাংলা এবং আইনবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণী নিয়ে ডবল এম.এ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ল্যান্ড এ্যাকুইজিশান ডেপুটি কমিশনার ছিলেন।অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ এক্সাইজ সুপারিন্টেন্ডেন্ট শফিকুর রহমান সিদ্দিকী নূরজাহান খানের পিতামহ।
নূরজাহান খানের মাতামহ অবিভক্ত বাংলার পোস্টমাস্টার জেনারেল সৈয়দ জাকির হোসেন চট্টগ্রাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।
বড়ো বোনের  বিয়েতে ছোট ভাইবোন দের প্রীতি অর্ঘ


হোলটাইমার স্বামীর রোজগার ছিল না। তাই ব্যাংকে চাকরি নিতে হলো । সেই ১৯৭০ সালে। ব্যাংকিং, মহিলা পরিষদ আর 
Saifuddin A Khan & Nurjahan Khan @ Kolkata Res of Mamata Ghosh
একেবারে বিপরীত পরিবেশে সংসার করে  তিনটি সন্তানকে জন্ম দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলেছেন। দেশমাতৃকার সংগ্রামে উৎসর্গ করলেন নিজেকেও।

সেই কৈশোরে অফ হোয়াইট বেনারসী কাতান পরে এক একান্নবর্তী জমিদার বাড়ির বৌ হতে হলো তাকে। তবু প্রবল প্রতাপে বিনয় আর পরম ধৈর্যের সাথে আকৈশোর রাজনীতির বরপুত্র হোলটাইমার একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ডালিম হোটেলের টর্চার সেলের বর্বর অত্যাচারে জীর্ণ চিররুগ্ন সাইফুদ্দিন খানের নিবিড় পরিচর্যা আর সেবা করে তাঁকে ২০০৭ পর্যন্ত জীবন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় রেখেছেন পাশে থেকে। একই সাথে সাইফুদ্দিন খানের পরিবার বন্ধু স্বজন-প্রত্যেককে আপনার চেয়ে আপন ভেবে পরিচর্যা করেছেন চিরকাল। ২০০৭ সালের ২০ মে থেকে ২৭ জুন বাবা আইসিইউ তে ছিলেন। সে সময়েও আমার মা এবং দুই ভাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার বাবার সাথে ছিলেন;তাঁর সেবা করেছেন সুস্থ করে তুলবার জন্যে। সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২৮ জুন ২০১৬ ভোরে আমাদের প্রিয় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তবে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে টের পা্ই আমার প্রতিটি সৎ কাজে বাবা আমার সাথে আছেন ।

ন্যাপ নেতা, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  মওলানা আহমেদুর রহমান আজমী ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আমাদের বাসায় ছিলেন। 

আম্মুও ব্যাংকে চাকরি করতো, আব্বুও । দু'জনেই লাঞ্চ ব্রেকে বাড়ি ফিরতেন। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে দু'জনের লাঞ্চ ব্রেক। আম্মু সোজা রান্নাঘরে ঢুকে আব্বুর জন্যে তেল মসলা ছাড়া পথ্য তৈরিতে ব্যস্ত।   নরোম ভাত, শিং মাগুর মাছের পাতলা ঝোল, হালকা রান্না সব্জি তৈরি করে তিন ছেলেমেয়ের খাওয়া তদারক করে, খাইয়ে, তাদের ঘুম পাড়িয়ে আবার অফিসে ছুটতেন। এর মধ্যে মহিলা পরিষদের দায়িত্বশীল সাংগঠনিক সম্পাদিকা, সাধারণ সম্পাদিকা এবং পর্যায়ক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন। রাজপথে মিছিল, আদালতে নির্যাতিতাদের মুক্তির আবেদন। আর অফিসে খাতা খুলে তার উপর রেখে এসেছেন চশমা । আবার তিন ছেলেমেয়ের  তিনটি স্কুলে তাদের পড়ালেখা এবং বাঁদরামীর তদারকি করতে নিয়মিত হাজিরা। এভাবেই কেটে গেলো পুরো চাকরীজীবন। অফিস থেকে লাঞ্চ ব্রেকে এসে  আম্মুকে কখনো টেবিলে বসে যত্ন করে ভাত খেতে দেখিনি। হয়তো হাতে প্লেট রেখে একটু নাড়াচাড়া করেই কোনরকমে মুখে পরে কাজে নেমে গেলো। চলে গেলেন রাজপথে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের মিছিল থেকে  মনিকা গোমেজ ( তাকে মহিলা পরিষদের সাথে সম্পৃক্ত করেন নূরজাহান খান), নূরজাহান বেগম সহ মাত্র ৪ নারী উদ্যত কামানের মুখে মিলিটারীর হাত থেকে ছাত্রদের কেড়ে নিয়েছেন অনেকবার । যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নূরজাহান খান শ্লোগানমুখর ঝাঁঝালো মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে প্রকম্পিত করেছেন রাজপথ , এখনো অব্যাহত সেই ধারাবাহিকতা। তবে নেতৃত্বের লোভ কখনো ছিলনা , এখনো নেই। তাই মিছিলের পেছনে থাকতেই আজীবন ভালোবাসেন আমার মা নূরজাহান খান । 
আদরের বোনপো নোটন হাসনাতের জন্মদিনে সুমনা হাসান এর আমন্ত্রনে তাদের বাড়িতে  সাথে  বড়ো পুত্রবধু এবং ছোট পুত্র 


বড়ো বোন রওশন আরা , মেজো বোন শওকত আরা জাফর এবং বেআইনের সাথে ভাগ্নী ইসরাত জাহান এর আমন্ত্রনে তার বাড়িতে



আবার ছেলে মেয়ের বিয়ে হবার পর কুটুম্ববাড়ির প্রতি দায়িত্বশীলতার বিন্দু মাত্র ত্রুটি যেন না হয় সেই খেয়াল। কন্যার শ্বশুর বাড়ি বা পুত্রের শ্বশুরবাড়ি র প্রত্যেকের প্রতি সমান দায়িত্বশীল। জামাতা বা পুত্রবধু- প্রত্যেকের  মা , তাদের প্রতিটি সুখ-দুঃখের যেন নিরন্তর সঙ্গী তিনি। জামাতার সখ ছিল তিনি হোলটাইমার হবেনন চাকরি করবেন না। তাকে বাস্তবতায় আনলেন , প্রথমে বেসরকারী কলেজে চাকরি এবং পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ালেন ।
চট্টগ্রামের বাতিঘরে নাতি নাতনির সাথে ২০১৩


দুই পুত্র এবং পুত্রবধুদের সাথে

 আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান খুব বদমেজাজী ছিলেন । মায়ের প্রতিটি কাজে ভুল ধরা আর দোষ ধরা যেন বাবার প্রধান কাজ ছিল। আর সেই ধারাবাহিকতাতেই নূরজাহান খানের কঠিন সমালোচক ছিলেন। তবু একটি কথা সবসময়ে বলতেন, "অনেক দায়িত্বশীল কাজের মধ্যে আলীমকে বিসিএস দিতে রাজি করিয়ে  'বাসুর মা  ( আমাদের বাড়িতে নূরজাহান খানের যেন প্রথম পরিচয় -তিনি 'বাসুর মা' )  বিশাল কাজ করেছে ।" সত্যিই, একথা বলতেই হবে, মায়ের দূরদর্শীতার কোন তুলনা নেই ।
মায়ের দুই কৃতি পুত্র তাদের সততা, নিষ্ঠা, নিরন্তর শ্রম, মেধা আর মননে বিশ্বজয় করেছে। পায়ের নিচে তাদের সর্ষে । তাদের জগত এখন বিশ্বময় । বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নিরন্তর ছুটে বিস্তৃত করেছে তাদের কর্মপরিসর ; জয় করেছে মানুষের মন।
    স্বভাবতঃই পুত্র গরবে গরবিনি আমার মা ।   আমার দুই ভাইও তাদের প্রতিটি কাজে, প্রতি মুহূর্তে মায়ের আশীষ নিয়ে শুরু করেন। মানুষের জন্যে কাজ করতে দূর দূরান্তে ছুটে যান মা। মায়ের কাজ করতে অনেক কষ্ট হয় । তাই পুত্রদের উদ্বেগ অনেক।
প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা মনে পড়ছে, মায়ের কাজে যেন কষ্ট না হয় , তাই  মায়ের পুত্রেরা হ্যারিয়ার গাড়ি কিনে দিলো মা'য়ের জন্যে। একথা মনে পড়ছে কারণ,  সেদিন ফেসবুকে একজন কবি পোস্ট করলেন, তাঁর কবিতা লিখবার জন্যে কবিদের সাথে বসতে হয়, বিভিন্ন বৈঠকে যেতে হয়। তাঁর গাড়ি তিনি অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছিলেন। 
সেই মা'য়ের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ পুত্রেরা তাঁর জন্যে নতুন গাড়ি কিনে দিয়েছেন, যাতে তাঁদের মা কবিতার আড্ডায় নিয়মিত যেতে পারেন। ভীষণ গর্বিত সেই কবি মা সাথে সাথে ফেসবুকে পোষ্ট দিলেন। সবাই আশীর্বাদ করলেন তাঁর সন্তানদের।

 আমার মায়ের কৃতি পুত্রদ্বয় মায়ের মতোই নিভৃতচারী। তাদের  ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা অসাধারণ। তাদের এতো এতো ভালো কাজ, মানবতার সেবা- কিছু নিয়েই ফেসবুকে লিখা যাবে না। কারণ , তারা বিশ্বাস করেন, অন্তরের সততা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা অনেক বেশি জরুরী।  তারা বলে , মানুষের কাছে বলে বেড়ানো কাজে কখনো সততা থাকে না; লোকদেখানো হয় মাত্র। তবু তাদের না বলা কিছু কথা এই লেখাতে তুলে ধরার অপরাধে আমি দায়ী হয়ে রইলাম। 
কথাগুলো অবধারিত ভাবে চলে এসেছে এই বলতে যে, এভাবেই একজন  নিভৃতচারী মায়ের একাকী সংগ্রাম, একনিষ্ঠতা, সততা, দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসের স্বীকৃতি দিলো সময়।
 ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ জামাতা আলেক্স আলীম এবং  দৌহিত্র ঋতবান আলীমের শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন বিনয়ের সাথে

সেই  যে  মায়ের ব্যাংকার জীবনের গল্প বলছিলাম, একদিন পুত্রবধু ঘরে এলো । বড়ো আদরের বৌ। ফুলকিতে মহিলা পরিষদের মিটিং করে বেরিয়ে একদিন দেখলো, শ্যামলা বরণ একহারা গরনের মিষ্টি একটি মেয়ে গান শিখছে, আর হেসে গড়িয়ে পড়ছে । মা ভাবলেন, "এমন হাস্যোজ্জ্বোল আর প্রাণোচ্ছল মেয়েই তো চাই আমার ছেলের জন্যে" । মালিহা শফিক নতুন বৌ হয়ে ঘরে এলো।
 নতুন বৌয়ের নিজের মতো করে তৈরি হবার সময় দিতে হবে। তাই আম্মু সকালে অফিস যাবার সময়ে টেবিলে মালিহার নাশতা তৈরি করে অফিসে যেতো।চকলেট খুব পছন্দ মালিহার। তাই অফিস থেকে ফিরবার সময়ে দোকান থেকে চকলেটের প্যাকেটের  লহর কিনে আনতো। এর পরে ছোট বৌ মাকসুরা সুমন এলো ঘরে । এ্ই দুই বৌই  তাদের স্বভাবজাত গুণ দিয়ে আমাদের বাড়ির সকলের মন জয় করেছে। আর তাই তারা আমার মায়ের চোখে পৃথিবীর সেরা বৌ, যারা  পুত্র কন্যার চেয়ে ও অনেক বেশি আমার মায়ের কাছে। তাদের দু'জনের সাথেই আমার  মায়ের বন্ধুত্ব এতো নিবিড়, যা আমাদের বাড়িতে সবসময়েই অন্যদের উৎসাহ দিয়েছে।  সুদূর বিলেতে বসেও এই দুই বৌ প্রতি মুহূর্তে আমার মায়ের খোঁজ খবর নিচ্ছে , পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের কোন কিছুতে মায়ের পরামর্শ নিচ্ছে।এইতো জীবনের সৌন্দর্য । 

যা বলছিলাম, মায়ের সেই ব্যাংকার জীবনের ধারাবাহিকতায় -নাতি নাতনি হবার পরের লাঞ্চব্রেকগুলো তে যুক্ত হয়েছে তাদের জন্যে তাদের প্রিয় খাবার রান্না এবং সেসব আবার গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে খাওয়ানো। ৬ জন নাতি নাতনি কখনো ঈদে বা  পারিবারিক অনুষ্ঠানে ঢাকা বা চট্টগ্রামে এক হলেই সবাইকে একসাথে খাইয়েছেন মা। এখনো আমার ৪ ভাইপো ভাইঝি কঙ্কা, যুবরাজ, অপলা, অনিন্দ্য  তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়  দাদিবুজির কোল আর  দাদিবুজির রান্নার জন্যে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে ছুটে আসতে যেন এক পায়ে খাড়া। 

     বাবা-মা বরাবরই তাদের পরিবারের সাথে মিলিয়েছেন রাজনীতির সহযোদ্ধাদের । দেশের কাজ করা বা  রাজনীতি  করা মানে 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো'. বলা হতো! সেই অর্থে বনের মোষ কে ঘরে আশ্রয় দদেবার কথা ভেবেছেন ক'জন?  
বাবার প্রতিটি কাজ মা নিজের বলে অন্তর থেকে মেনে নিয়েছিলেন। স্বজন, পরিবার, পরিজন , বন্ধু , রাজনৈতিক সহযোদ্ধা বা শীর্ষ নেতারা -সবকিছু মায়ের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঠাঁই নিয়েছে । 
 নীরব, তবে নিরন্তর সেবাযত্নে সেই ষাটের দশক থেকে দেশের তাবৎ তাবত বড়ো  নেতা, নেত্রী, সাধারণ তৃণমূল  কর্মীদের অনেকে আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়েছেন,মায়ের সেবা যত্নে আমাদের বাড়িতে অনেক রাত কাটিয়েছেন। ১৯৬৮-১৯৭০ মওলানা ভাসানী, হেনা দাস, কমরেড আবদুস সালাম (বারীণ দত্ত) ,বেগম সুফিয়া কামাল,  বেগম মতিয়া চৌধুরী , সাংবাদিক বজলুর রহমান, দৈনিক সংবাদের প্রকাশক এবং সম্পাদক আহমেদুল কবির, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,  পংকজ ভট্টাচার্য, মালেকা বেগম ,  বেলা নবী , ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, আয়েশা খানম , ডা. ফওজিয়া মোসলেম,  রাখী দাশ পুরকায়স্থ,  মালেকা বানু, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , মঞ্জুরুল আহসান খান ,  রাশেদ খান মেনন , হায়দার আকবর খান রনো, সাইফুদ্দিন মানিক,  খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী, ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টি গেরিলা দলের মুক্তিযোদ্ধারা .  স্বাধীন দেশে  সিপিবি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিটি কেন্দ্রীয় নেতা , এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের অনেককে্ই আমাদের ছোট্ট সাধারণ বাড়িতে  দেখেছি সেই ছোটকাল থেকে । তাঁদের  কারো কারো ছবি আছে এখনো । কারো কারো অটোগ্রাফ ও আছে। ছোটবেলায় শখ ছিল অটোগ্রাফ নেবার । 
 অনেকের মতো ক্যারিয়ারিস্ট হয়ে একজন সফল ব্যাংকার হতে পারতেন নূরজাহান খান।
না, তা তিনি হন নি। কেবল ত্যাগ আর তিতিক্ষা যার জীবনের ব্রত। তিনিই আমার মা , বিশ্বভূবন মাঝে যাহার নাইকো তুলনা। 

যিনি  হাসতে হাসতে কৃতঘ্নদের  আঘাতের গভীর ক্ষত  হৃদয়ে বয়ে যেতে পারেন জীবনভর।  জন্মের সাথে সাথে যিনি মা'কে হারিয়েছেন।

শত সহস্র সন্তানের 'মা' হয়ে উঠেছেন তাঁর কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে। 
জীবনভর বিনা অপরাধে নিরন্তর ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগের রক্তাক্ত কাঁটা নীরবে বয়ে মানবসেবা করে যাচ্ছেন -তিনি আমার মা। আমার অহংকার  আমার মা'য়ের বিনয়, ত্যাগ আর সীমাহীন ধের্য!
আদরের দৌহিত্রের থেকে বিয়ে বার্ষিকীর শুভেচ্ছা নিতে গিয়ে  সাথে রসিকতা-" ক্ষমা করা যায় না?"

 আজ বাবা থাকলে অনেক অনেক সুখী হতেন নিঃসন্দেহে। মনে মনে শুধু বলি, মা তুমি শতায়ু হও -সকলকে ভালোবেসে সকলের সাথে এভাবেই  চিরদিন হাসি আনন্দে মেতে  থাকুক তোমার মানবতায় উৎসর্গিত জীবন।  আজকের দিনে আব্বু আম্মু দু'জনের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা!!