Friday, November 1, 2013

আরবের বিপুল লগ্নি বাংলাদেশে, উদ্বিগ্ন ভারত:অগ্নি রায়


নয়াদিল্লি
বাংলাদেশ জুড়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে বিপুল বিনিয়োগ করছে আরব দেশের ১৮টি ইসলামি ব্যাঙ্ক। সে দেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তাদের সক্রিয়তাও তত বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট হাতে আসার পরে নয়াদিল্লির কপালের ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে। গোটা ঘটনাটির পিছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ভূমিকাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিজেদের আশঙ্কার কথা হাসিনা সরকারকেও ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছে ভারত।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জামাতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন খাতে ঢালাও ঋণ দিচ্ছে ইসলামি ব্যাঙ্কগুলি। গোয়েন্দারা অনুমান করছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে এই পুঁজি লাগানো হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক মদত দেওয়া ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাঙ্কের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। রিপোর্টে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাঙ্ককে (এসআইবিএল)।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক দেখে অবাক হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দু’টি ব্যাঙ্কে। সৌদি আরবের আল রাঝি ব্যাঙ্কও বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএল-এর ৩৭ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে আল রাঝি-র হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র মাথা শায়ক আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই-ও এক সময়ে পুঁজির জন্য এই ব্যাঙ্কটির উপর নির্ভরশীল ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এবং বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কই প্রথম কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের সন্দেহজনক কাজকর্ম লক্ষ করে। সন্দেহভাজন গ্রাহকদের লেনদেন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে তারা বেশ কিছু ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেয়।আইন ভেঙে জঙ্গি সংগঠনকে টাকা দেওয়ার জন্য এই আইবিবিএল-কে তিন-তিন বার জরিমানা করা হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লক্ষ করেছে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইসলামি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লাজনাত আল-বির আল-ইসলাম’, যারা আল কায়দার অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশে বর্তমান হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সাউথ ব্লক। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনার সঙ্গেও সম্প্রতি দিল্লিতে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের। তবে আমেরিকার বিশ্লেষণে একমত হতে পারেনি দিল্লি।
সরকারি সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও প্রকাশ্য-গোপনে ভারত-বিরোধী প্রচার যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে দিল্লিকে। ভোট পর্যন্ত এই অরাজক পরিস্থিতি চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে দিল্লির অবস্থান, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সরকার বদলায় কিন্তু বিদেশনীতির অভিমুখ একই থাকে। কিন্তু দিল্লির আশঙ্কা, মৌলবাদী রাজনীতির বাড়বাড়ন্তে ভোটের আগে ও পরে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসতে পারেন।
তা ছাড়া চলতি অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে হুজি এবং জেএমবি-র মতো জঙ্গি সংগঠনের উত্থানও নয়াদিল্লির মাথা ব্যথার বিষয়। বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতি এবং অস্থিরতা বাড়লে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আইএসআই যে পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারে।

Monday, October 28, 2013

আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি। - হাসিনা Hasina-Khaleda Phone Conversation 26 Oct 2013 5pm









দুই নেত্রীর ফোনালাপ প্রসঙ্গই এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই নেত্রীর মধ্যে প্রায় চল্লিশ মিনিটের ফোনালাপটি সম্প্রচার করেছে একটি টিভি চ্যানেল। অন্যান্য প্রচার মাধ্যমেও আংশিক প্রকাশিত হয়েছে দুই নেত্রীর কথোপকথন। পরে তা ইন্টারনেটে সকল সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলোচনার ঝড় ওঠে। এই ফোনালাপ প্রকাশ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ প্রকাশ করা যৌক্তিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুই নেত্রীর ফোনালাপ কোন ব্যক্তিগত ফোনালাপ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ফোনালাপ। এটি দেশ, জাতি, সংবিধান, রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে ফোনালাপ। এটি রাষ্ট্রীয় সংলাপ, জনগণের সম্পত্তি, জনগণের তা জানার অধিকার আছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এটি প্রকাশ করা হয়নি। যারা প্রকাশ করেছে তারাই বলতে পারবেন কার কাছ থেকে নিয়েছেন। একই দিন সকালে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, একটি টিভি চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার টেলিফোনের কথাবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ নীতিবর্হিভূত ও রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সরকার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশেই ওই কথোপকথন গণমাধ্যমে সম্প্রচার করিয়েছে।
দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিস্তারিত-
এডিসি : সমালাইকুম
শিমুল : জী এডিসি সাহেব
এডিসি : শিমুল দা, আপনি তো ফোন দিলেন না। পিএম তো মিটিং এ ঢুকে যাবে।
শিমুল : আমরা তো বসে আছি। ৬টা থেকে ম্যাডাম অপেক্ষা করছেন।
এডিসি : না না আপনাদের তো কল করার কথা।
শিমুল : না না এ রকম কোন কথা আপনাদের সঙ্গে আমার হয়নি। আপনি ৬টায় টেলিফোন দেবেন ম্যাডামকে...
এডিসি : আমি এ রকম কোন কথা দেইনি যে আমি কল দিব। বিকজ আমরা এক্সপেক্ট করছিলাম।
শিমুল : না এ রকম কথা হয়নি। আমি ম্যাডামকে বলেছি...।
এডিসি : আমিও তো বলিনি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কল দিবেন।
শিমুল : এটা তো আপনাদের ডিউটি, আপনার প্রাইওরিটি আপনি দেন, এখনি দেন। আমি ম্যাডামকে দিচ্ছি
এডিসি : আছেন ওখানে আপনারা?
শিমুল : জি ম্যাডাম এখানে আছেন
খালেদা জিয়া : হ্যালো, হ্যালো...
শেখ হাসিনা : হ্যালো...
খালেদা জিয়া : সøামালাইকুম, কেমন আছেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কেমন আছেন? আমি ফোন করেছিলাম। দুঃখিত আমি ফোন করেছিলাম, দুপুরে আপনাকে পাইনি।
খালেদা জিয়া : দেখেন এই কথাটা যে বলছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়...।
না ফাস্ট আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। আপনি যে বলেছেন দুপুরে ফোন করেছেন, কিন্তু দুপুরে কোন ফোন আসেনি। কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। দুপুরে কোন ফোন আসেনি আমার এখানে।
শেখ হাসিনা : আমি লাল ফোনে ফোন করেছিলাম
খালেদা জিয়া : লাল ফোন তো আমার অনেক দিন, বছর ধরে ডেড পড়ে আছে। আপনি গবর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গবর্নমেন্ট চালান, এ খবরটুকু রাখেন না, বিরোধীদলের নেতার ফোন ঠিক আছে কি না? আর আপনি যদি ফোন করবেনই তাহলে তো আপনার লোক এসে ফোন চেক করে যাওয়া উচিত ছিল বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কিনা।
শেখ হাসিনা : লাল ফোন সব সময় ঠিক থাকে।
খালেদা জিয়া : ঠিক নাই তো। আপনারা লোক পাঠান। আপনি এখনি লোক পাঠান। লোক পাঠিয়ে দেখে যান।
শেখ হাসিনা : আপনি তো ভাল জানেন দুই বার পিএম ছিলেন। আপনি তো জানেন লাল ফোন সব সময় ভাল থাকে।
খালেদা জিয়া : ভাল থাকে তো। আমার টাতো ভাল নাই।
শেখ হাসিনা : ভাল আছে। আমি যখন ফোন করেছিলাম তখন রিং বেজেছে।
খালেদা জিয়া : কোন রিং বাজেনি। আমি সেদিনও চেক করেছি। আপনারা যদি সত্য না বলেন তাহলে তো চলবে না। লাল ফোন ঠিক আছে এটা আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই।
শেখ হাসিনা : সত্য কথা না বলার আমার কিছু নেই। আমি লাল ফোনে বার-বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : দীর্ঘদিন ধরে আমার লাল ফোন ডেড। এখন কী ডেড ফোন জেগে উঠবে? আপনার ফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড ফোন জেগে উঠবে?
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে। যে কোন কারণে হোক আপনি ধরতে পারেননি। যাই হোক...
খালেদা জিয়া : না আমি ধরতে পারি নাই। আমি এখানে বসা। এর মধ্যেই ঘুরি। ছোট্ট জায়গা। ছোট্ট জায়গার মধ্যে ফোন বাজলে আমি না ধরার কোন কারণ থাকতে পারে না। কোন ডেড ফোন বাজতে পারে না, বুঝছেন। এটাই হলো সত্য কথা।
শেখ হাসিনা : দেখেন ডেড ছিল না ডেড করে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়া : ডেড ছিল...আমার সঙ্গে তো লাল ফোনে কথা বলার কেউ নেই। আমি কার সঙ্গে কথা বলব।
শেখ হাসিনা : আমি আগামীকাল দেখব কেন আপনার ফোন এ রকম ডেড ছিল।
খালেদা জিয়া : সেটা দেখবেন ভাল কথা।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে ফোন করলাম যে, আগামী ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় গণভবনে আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি জানেন যে আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে। আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি গণভবনে আসার জন্য। আপনি...
খালেদা জিয়া : কী বিষয়ে দাওয়াত দিচ্ছেন, সেটা তো আপনি বলবেন...
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি আপনি আমার সঙ্গে বসে রাতে একটু খাবার খাবেন।
খালেদা জিয়া : না, আমি খাবার খেতে রাজি আছি। কিন্তু ২৮ তারিখ আমি যেতে পারব না। আমাদের হরতাল আছে। ২৯ তারিখ ৬টায় আমাদের হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করেন!
খালেদা জিয়া : না, আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আমি অনেকদিন ধরে আপনাদের রিকোয়েস্ট করেছি আপনারা আসুন, আলোচনায় আসেন। আপনারা আসেননি। কাজেই আমাদের হরতালের সময় পার হওয়া পর্যন্ত। আপনারা দেখবেন...। ৬টা পর্যন্ত আমি বের হতে পারব না।
শেখ হাসিনা : ... আপনি নিজেই কালকেই বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে আলোচনা ...
খালেদা জিয়া : আলোচনা চলবে। আপনার যদি আন্তরিরকতা থেকে থাকে আমার যেতে কোন আপত্তি নেই। আমি শুধু একা যাব না। আমার সঙ্গে আরও অনেকে থাকবে।
শেখ হাসিনা : নিশ্চয়ই। আপনি যতজন খুশি নিয়ে আসতে পারেন।
খালেদা জিয়া : না আমি দলবল নিয়ে যেতে চাই না। যাদের প্রয়োজন মনে করব তাদের নিয়ে যাব। এটা হতে পারে ২৮ তারিখের পরে। ২৯ তারিখ আমার হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে আনুরোধ করব জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে... হরতাল প্রত্যাহার করে নেন। হরতাল করে মানুষ খুন করা, গানপাউডার দিয়ে মানুষ পোড়ানো ...
খালেদা জিয়া : মানুষ খুন আপনাদের অভ্যাস। আপনার ভাই বলেছে, সে গানপাউডার দিয়ে বাসে আগুন দেয় আপনার নির্দেশে। এসব অভ্যাস আপনাদের আছে। আমাদের এ অভ্যাস নেই...। আপনারা লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ মারেন। এগুলো সব রেকর্ডে আছে। আপনার নির্দেশে এই সব হয়েছে। কাজেই আপনি এগুলো অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি বলছি সে জন্য হরতাল চলবে। ২৯ তারিখ শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : দয়া করে জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করেন...।
খালেদা জিয়া : জনগণের স্বার্থেই আমি হরতাল দিয়েছি। যেহেতু আপনারা কোন আলোচনায় আসতে রাজি নন সেহেতু আমাদের হরতাল...।
আপনার মন্ত্রীরা বলেছে- কোন আলোচনা হবে না। এ বললে তো হবে না। আপনি নিজে বলেছেন- আমাদের প্রস্তাব রিজেক্ট করে দিয়েছেন। এখন আবার আলোচনার কথা বলছেন, তো সেই আলোচনা আমাদের হরতালের পর হতে পারে।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করেন। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।
খালেদা জিয়া : আপনি এই জিনিসটা যদি আর একদিন আগে নিতেন সুযোগটা ছিল। আপনি সেটা করেননি।
শেখ হাসিনা : এটা একদিন আগের বিষয় না। আপনি জানেন আমি বিভিন্ন জনের সঙ্গে মিটিং বসছি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি আপনি ব্যস্ত। কিন্তু আমাদেরও এত বেশি ব্যস্ততা না থাকলেও যথেষ্ট ব্যস্ততা আছে। কিন্তু ইচ্ছা করলে উপায় বের করা যায়। কিন্তু আপনি সেটা করেননি। আপনারা তো মিন মাইন্ডের পরিচয় দেন। কালকে যে আমাদের পারমিশন দিলেন এত দেরিতে দিলেন কেন? কতদিন আগে পারমিশন চেয়েছি, মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন নাই। মানুষ আমাদের জনসভায় আসে আমাদের কথা শোনার জন্য। আপনারা মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন নাই। মানুষ দাঁড়িয়ে আমাদের আপনারা মিটিং করতে দেবেন মাইক ব্যবহার করতে দেবেন না। এত শেষ সময়ে পারমিশন দেন যখন আবার ডায়াসটা ও আবার বানাতে পারবে না। আপনি আগে মিটিং করেননি। এগুলো তো আগে লাগে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্রের নমুনা। আমার মিটিংয়ে কেন মাইক দেয়া হলো না? দেশে কী ইমার্জেন্সি? ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যে যুদ্ধাবস্তা শুরু করে দিলেন আপনারা। এটা কী?
শেখ হাসিনা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে। গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন- গ্রেনেড হামলা আমরা করি না। এর পেছেনের লোক কারা? ...হ্যাঁ, সেদিন রাত ১১টায় আপনারা পারমিশন দিয়েছিলেন। আমাদের মনে আছে। আমি এসব বলতে চাই না। এ ধরনের কথা আপনার মুখে শোভা পায় না।
খালেদা জিয়া : আপনারা জনসভার ভেন্যু চেঞ্জ করে আপনাদের অফিসের সামনে নিয়ে গেছেন সেটা ও আমাদের জানাননি। এসব পুরনো কথা তুলে কোন লাভ নেই।
শেখ হাসিনা : আপনার মুক্তাঙ্গনে পারমিশন দেননি!
খালেদা জিয়া : আমরা পারমিশন দিয়েছি। এগুলো খুঁজে বের করেন। রেকর্ড আছে। আমরা পারমিশন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : আমি এখন আপনাকে বলছি যদি সত্যিকার আলোচনা করতে আন্তরিক হন তাহলে আমাদের কর্মসূচীর পরে।

শেখ হাসিনা : আমি ঝগড়া করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : আপনি তো ঝগড়া করছিলেননি।
শেখ হাসিনা : আপনি তো একতরফা বলেই যাচ্ছেন। আমাকে তো বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া : আমি একতরফা কথা বলব কেন? আপনি কথা বলছেন আমি তার কাউন্টার জবাব দিচ্ছি শুধু।
শেখ হাসিনা : আমি কথা বলারই আপনার কাছে সুযোগ পাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : না আপনি বার বার বলছেন হরতাল, হরতাল প্রত্যাহার এখন হবে না। আমাদের কর্মসূচী শেষ হলে তারপরও যদি ...
শেখ হাসিনা : হরতাল করে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন?
খালেদা জিয়া : আমি মানুষ খুন করছি না। আপনারা মানুষ খুন করছেন। কালকেও ৯ জন মানুষ হত্যা করেছেন আপনারা। আপনারা খুন করছেন। আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে না? আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগকে আমরা অস্ত্রসহ ছবি দেখাতে পারব। আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিভাবে খুন করে নিরীহ মানুষকে।
শেখ হাসিনা : বললাম তো খুনের রাজনীতি আমরা করি না। আমি ভিকটিম...
খালেদা জিয়া : আপনাদের তো এটা মজ্জাগত অভ্যাস। পুরনো অভ্যাস সেই আপনারা স্বাধীনতার পর থেকে ৭১ এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনও তো এই হত্যা করেছেন। এত মানুষ হত্যা করেছেন এগুলো ভুলে গেছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : ৭১ এ আমরা হত্যা করেছি?
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, অবশ্যই ৭১ এর পরে আপনারা সরকার গঠন করে...
শেখ হাসিনা : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য ...
খালেদা জিয়া : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা আমরা করছি না। আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি ঠিকমত করতেন আমরা পূর্ণ সমর্থন দিতাম। কিন্তু আপনারা সেই ট্রাইব্যুনাল করেননি। না করে একতরফা করেছেন এবং আপনার দলে যে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের একটাও ধরেননি। সেগুলোকে কেন একটাও ধরেননি? আপনি নিরপেক্ষ প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন, আপনি তো দলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারেননি। নিরপেক্ষতার উর্ধে আপনি যেতে পারেননি। তবে.... না হলে আমার সঙ্গে এই আচরণ আপনি করতেন না। যা করেছেন আপনারা, আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেই দিন আমরা পার্টি অফিসে যে আচরণ করলেন এর পরে আর বলতে হবে? বিরোধী দলের নেতাকে পর্যন্ত আপনারা সম্মান দিতে জানেন না, কিসের গণতন্ত্রের কথা বলেন আপনি?
শেখ হাসিনা : আপনার কথার জবাব দিতে গেলে তো আমাকে ২০০১ এর থেকে অনেক কথাই বলতে হয়।
খালেদা জিয়া : সেটার জবাব আমিও দিতে পারি। আপনি দেবেন আমিও দেব।
শেখ হাসিনা : ’৯৬ সালে আমার দলের এরশাদ, ৭-৮ দলের সঙ্গে কি কি করেছিলেন আর ২০০১ সালে...
খালেদা জিয়া : ’৭১ সালে আমরা কিছুই করিনি, এরশাদের সময় যত করেছিলেন আপনারা। এরশাদ যখন একটা নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল। তার পরে যখন আপনি বললেন ‘আই এম নট আনহ্যাপি’ আপনি যখন বিবিসিকে বললেন তার পরে আর কি থাকে?
শেখ হাসিনা : আমি এটা কখনও বলি নাই।
খালেদা জিয়া : একটা নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল আর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন কোন সাংবিধানিকই ছিল বলেন তো?
শেখ হাসিনা : আপনার চয়েস ছিল, আমার না।
খালেদা জিয়া : ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন আমার চয়েস ছিল না। আপনার চয়েস ছিল। আপনি নিজে বলেছেন আমার আন্দোলনের ফসল। ওথ্ সেরেমনিতে আমি যাইনি, আপনি গিয়েছিলেন এগুলো ভুলে যান কেন? এসব অপকর্ম করে ভুলে যেতে চান? কিন্তু মানুষ তো ভুলেন সেগুলো।
শেখ হাসিনা : ৯ জন অফিসার ডিঙ্গিয়ে মঈনুদ্দিনকে আপনি আর্মি চীফ বানিয়েছেন, আমি বানাইনি।
খালেদা জিয়া : সেটা আপনি করতে পারেন। আপনি এরকম অনেক অফিসারেকে বাড়ি পাঠিয়েছেন। ৯ জন কি ৭ জন সেগুলো বড় কথা না, আপনি অনেককে ডিঙ্গিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন। মঈনুদ্দিন যেই থাকুক না কেন- যখন এটা করল আপনারা সেই ইয়েতে গেলেন কেন আপনি? সেটা সংবিধান সম্মত হয়নি। সংবিধান সম্মত ছিল না। সেই ওথ টেকিংয়ে কেন গেলেন আপনি? সেই দিন তো আপনি একবারও মনে করেন নাই আমরা দুই দলই তখন ক্ষমতার বাইরে। তখন তো একবারও মনে করলেন না আমরা আলোচনা করি। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না এবং সংবিধান সম্মত নয় আপনি তো সেটা মন করলেন না। আপনি তো চলে গেলেন ওথ টেকিংয়ে, আপনি খুব খুশি হয়ে। হাসি মুখে প্রেসকে বললেন- আমার আন্দোলনের ফসল।
শেখ হাসিনা : আমি সব সময় হাসিখুসি। আমি জাহান্নামের আগুনে বসেও হাসি। আমার বাবা, মা, ভাই...
খালেদা জিয়া : এখন অতীত ছেড়ে আমি বলতে চাই যে, অতীত বাদ দিয়ে, আমি বলত চাই সামনের দিকে কি করে আগাবেন। অতীত ধরে থাকলে আমরা সামনে এগুতে পারব না। আপনার যদি সত্যিই সৎ উদ্দেশ্য থাকে সামনের দিকে আমরা কী করে এগুব?
শেখ হাসিনা : আপনি তো অনেক অভিযোগ করলেন। আমি তো অতো অভিযোগ করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : সেটাই...
শেখ হাসিনা : ছোট রাসেলের...
খালেদা জিয়া : নির্দিষ্ট প্রস্তাব কি? সেইটা বলেন।
শেখ হাসিনা : ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল...
খালেদা জিয়া : আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি। আপনি যত থাকবেন তত আমাদের জন্য ভাল।
শেখ হাসিনা : রাসেল হত্যাকারীদের?
খালেদা জিয়া : আপনি যত থাকবেন তত আমাদের জন্য ভাল। যত অশ্লীল ভাষায় কথা বলবেন তত আমাদের জন্য ভাল। আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
শেখ হাসিনা : ১৫ আগস্ট আপনি যখন কেক কাটেন...
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমার জন্মদিন, আমি কেক কাটবই...
শেখ হাসিনা : খুনীদের উৎসাহিত করার জন্য আপনি যখন কেক কাটেন। আমার বুকে এসে বিঁধে।
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমি কেক কাটবই, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোন মানুষের জন্ম হবে না? কোন মানুষ উৎসব পালন করবে না? এগুলো বাদ দেন।
শেখ হাসিনা : ............
খালেদা জিয়া : কথায় কথায় আপনারা বলেন। এগুলো বাদ দেন। জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবনদান করেছে। এগুলো কথা বইলেন না, বুঝেছেন? আপনারা তো বাকশাল ছিলেন। আপনারা আওয়ামী লীগ হলেন, জিয়াউর রহমানের জন্য। জিয়াউর রহমানের বদৌলতে আওয়ামী লীগ হতে পেরেছেন। না হলে আওয়ামী লীগ হতে পারতেন না।
শেখ হাসিনা : ছোট রাসেলকে তো আপনি এ বাসায় ঘুরতেও দেখেছেন।
খালেদা জিয়া : আমি সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমরা এগুলোকে সমর্থন করি না।
শেখ হাসিনা : জন্মদিন পালন....
খালেদা জিয়া : দুঃখিত। আপনারা এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেন আমি আমার বক্তব্যে সেদিন বলেছি এগুলো ভুলে যাই আমরা। এই কালচার বাদ দিয়ে এখন নতুন করে শুরু করি। নতুন করে শুরু করি। যদি সেটাতে আপনি রাজি থাকেন তো আসেন আমরা সুন্দর আলোচনা করি। আমার আলোচনা করতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেই ডেট হতে হবে আমার হরতাল শেষ হবার পর।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করবেন না?
খালেদা জিয়া : না আমি হরতাল প্রত্যাহার করব না।
শেখ হাসিনা : এদেশের গরিব মানুষগুলো...
খালেদা জিয়া : এটা তো আমার ডিসিশন না। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি কি করে একলা করব? আমি কিভাবে একলা করব?
শেখ হাসিনা : ১৮ দলকে ডেকে নিয়ে।
খালেদা জিয়া : তাদের নিয়ে.... এখন সময় নাই। আপনি যে তাড়া করতেছেন সবাইকে তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনি তো সব পুলিশ লাগাইয়া রাখছেন সবার পেছনে। কি করে মানুষ পাওয়া যাবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আমরা পুলিশ লাগিয়ে রাখব কেন?
খালেদা জিয়া : আপনি রাখবেন না তো কে রাখবে? পুলিশ কার কথায় চলে? আমার কথায় চলে? পুলিশ কি আমার কথায় চলে? আপনি তো সবার বাসায় বাসায় রেড করেছেন। বস্তি থেকে পর্যন্ত আপনি লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা : যেখানে বোমা ব্রাস্ট হবে সেখানে তো...
খালেদা জিয়া : বোমা ব্রাস্ট আপনারাও করেন। আর নাম দেন আমাদের। এটা তো
শেখ হাসিনা : আপনার মতো দায়িত্বশীল মানুষের কাছ থেকে এই কথা আশা করি না। আপনাদের পুরাতন ঐতিহ্য। কাজেই এগুলো কথায় আবার ফিরে আইসেন না।
খালেদা জিয়া : আমি বলতে চাই আপনারা যদি ২৯ তারিখের পরে করেন আমি রাজি আছি। ২৯ তারিখের পরে আমি নিশ্চয়ই কথা বলতে রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আলটিমেটাম দিলেন দুই দিনের, আমি দুইদিনের মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম। অথচ হরতালও করবেন আবার বলবেন ২৯ তারিখের পরে। কালকে কি বক্তৃতা দিলেন আর আজকে কি বলছেন তা ভেবে দেখেন তো?
খালেদা জিয়া : আমি তো বলেছি আলোচনাও চলবে, কর্মসূচীও চলবে।
শেখ হাসিনা : কিন্তু আপনি নিজেই বলেছিলেন দুইদিনের মধ্যে যদি আলোচনা...
খালেদা জিয়া : আপনারা তো জানেনই হরতাল। আপনি তো জানেন আমরা যখন আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ...শোনেন আপনি আমার কথাটা আগে। আপনি যখন বলছেন যে, দেখেছেন যে আমার একটা...
শেখ হাসিনা : সামনে ক্যামেরা নিয়ে কথা বলছেন!
খালেদা জিয়া : আপনি ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন।
শেখ হাসিনা : আমার এখানে কোন ক্যামেরা নাই।
খালেদা জিয়া : ...কেউ নেই। আমি নিজেই কথা বলছি। আমি বাসা থেকে কথা বলছি। অফিস হলে আমার জন্য সুবিধা হতো। ক্যামেরা ট্যামেরা থাকলে সুবিধা হতো। কিন্তু সেগুলো তো এখানে নেই। আমি এত হীন কাজ করতে চাই না। নিচু কাজ করতে চাই না। তার পরে টেলিভিশনে দেখব আপনারাই ক্যামেরা দেখাচ্ছেন। আমাদের এখানে ক্যামেরা কিছু নেই। তাহলে কেন আপনার এই যে, গুলশানে তাকে আপনি স্যাক করেন। যে বলেছে টেলিভিশন স্ক্রলে গিয়েছে যে উনার রেড টেলিফোন ঠিক আছে। আমি এটা দেখতে চাই।
শেখ হাসিনা : আমি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে খবর নিলাম যে টেলিফোন ঠিক আছে।
খালেদা জিয়া : ফোন ঠিক নাই। সব ভুল।
শেখ হাসিনা : ১০-১২ বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : আমরা তাহলে কালা হয়ে গেছি? বলতে চান যে কানে শুনছি না কেউ। আমরা কানে কেউ শুনি না? ফোন বাজলে আমরা শুনি না আপনি শোনেন?
শেখ হাসিনা : আমি কানে শুনব কি করে? জানেনই তো যে আমার এক কান এমনিই নষ্ট।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, সেটা তো আপনি শুনছেন তার পরও আপনি বলছেন টেলিফোন বাজছে। আমরা বলছি ফোন বাজছে না। ফোন ডেড।
শেখ হাসিনা : আমার শোনার বিষয় না। ফোন আমি নিজে করেছি।
খালেদা জিয়া : বাজেনি তো। আপনি নিজে করলে কি হবে? একটা যে ডেড ফোনকে আপনি বলছেন যে আপনি ফোন করেছেন?
শেখ হাসিনা : রিং হচ্ছিল...
খালেদা জিয়া : আপনি মানসিকভাবে ঠিক আছেন?
শেখ হাসিনা : ফোন রিং হচ্ছিল...
খালেদা জিয়া : না রিং হবে কি করে। যে ফোন ডেড সে ফোন রিং কি করে হবে? এটা তো মন মানসিকতার পরিচয় যে আপনি সত্যি কথা বলছেন কিনা?
শেখ হাসিনা : আমি সত্যি কথা বলছি। মিথ্যা বলার কিছু নেই।
খালেদা জিয়া : আমি কালকে পর্যন্ত চেক করেছি যে আপনি ফোন করতে পারেন এগুলো রিউমার ছড়াচ্ছে। আমি ফোন চেক করেছি। রিপোর্ট করেছি। আপনাদের লোকজন কেউ আসেওনি। তারা আমাদের মানুষ বলেই মনে করে না। কাজেই আসেও না। টেলিফোন ঠিক করার গরজ মনে করেন না। কিছুই করে না। যদি ইচ্ছে ছিল কেন রেড টেলিফোন কেন আমাদের তো মোবাইল, টেলিফোন ছিল...
শেখ হাসিনা : ..........
খালেদা জিয়া : মোবাইলে হয়। টিএনটিতে হয়...
শেখ হাসিনা : না আপনি রেড টেলিফোনের দোষ দিয়ে খামোখা মিথ্যা বলার দরকার নাই।
খালেদা জিয়া : মিথ্যা বলব কেন? যে টেলিফোন ডেড।
শেখ হাসিনা : .... আমার মনে ছিল না আপনার নাম্বার। ১৬০২
খালেদা জিয়া : আপনার মুখস্ত না থাকতে পারে। আপনার সামনে লেখা থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা : এখানে একবার ক্যামেরাম্যান এসেছিল ফটো তুলতে ছিল। আমি বিদায় করে দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : এটা সত্য কথা আপনি এইটা বলব হবে না, এই টেলিফোন বিজি ছিল। এটা বললে বিশ্বাস করব না।
শেখ হাসিনা : না ঠিক আছে। এক্সচেঞ্জে এটা কালকে খবর নেয়া যাবে।
খালেদা জিয়া : না আপনার এক্সচেঞ্জ থেকে বলেছে যে গুলশান এক্সচেঞ্জ বলেছে তার বিরুদ্ধে রীতিমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ সে সত্য কথা বলেনি।
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোন কিন্তু আলাদা এক্সচেঞ্জ। আরও ভাল করে জানবেন।
খালেদা জিয়া : আলাদা এক্সচেঞ্জই। টেলিভিশন স্ক্রল দিছে। আপনি নিজে সামনে থাকলে দেখতেন।
শেখ হাসিনা : আমি গণভবনের অফিসে বসে আছি। আমার অফিসে কোন টেলিভিশন নেই।
খালেদা জিয়া : তাহলে কেন বলা হচ্ছে, টেলিফোন ঠিক আছে। এ কথা সত্য নয়। আপনার লোককে মিথ্যা কথা বলতে বলে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা : আপনার শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : আপনার সঙ্গে কথাই ছিল যে এই টেলিফোনে কথা হবে আমাদের। আমি তো বসে আছি এখানে। আধা ঘণ্টা বসে আছি যে আপনার টেলিফোন আসবে। আমরা তো গোপন কিছু বলব না। এক সময় আমরা অনেক কথা বলেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এক সঙ্গে কাজ করেছি। কেন কথা বলব না। এখনও বলতে চাই, কাজ করতে চাই। আসুন দেশের...
শেখ হাসিনা : আগামী ২৮ তারিখ আসেন। আমরা আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না। আপনি যদি সত্যি আন্তরিক হন, ২৯ তারিখের পর ডেট দেন। আমি আসব।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে বললেন...
খালেদা জিয়া : না, আমি কর্মসূচী দিয়ে ফেলেছি। এখন সম্ভব না।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনার জন্য না ডাকলে হরতাল দেবেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল দিয়ে ফেলেছি। তার আগে বলা উচিত ছিল।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার বক্তব্যটা আবার শুনেন।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, এখন আমি নিজে শুনলেও কর্মসূচী দিয়ে ফেলেছি। সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি, কর্মসূচীও চলবে, আলোচনাও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি যেহেতু বললেন দুই দিনের মধ্যে...
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি। কর্মসূচী-সংলাপ এক সঙ্গে চলবে।
শেখ হাসিনা : এর আগেই আমি ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, হরতাল চলবে। কর্মসূচী ঠিক হয়ে গেছে। ১৮ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ দল পাব কোথায় এখন? এখন কেউ নেই।
শেখ হাসিনা : ১৮ দল আপনি পাবেন, ডাকলেই পাবেন। আপনি ডাকলে হবে না, এটা কোন কথা হলো নাকি। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
খালেদা জিয়া : বিশ্বাস করবে না ঠিক আছে। আমি ডাকলে হতো। কিন্তু এখন হবে না, এই কারণে...
শেখ হাসিনা : আপনি বললেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনা না করলে আপনি হরতাল দেবেন। এ সময়ের মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, আপনি যদি কাল রাতেও যদি আপনি ফোন করতেন, তাহলে কর্মসূচী বিবেচনা করা যেত। পুরো রাত চলে গেছে। সকালে অফিসে চলে গেছি। এখন আনেক দেরি করে ফেলেছেন।
শেখ হাসিনা : রাতে ফোন না দিলে তো আপনার হয় না। আমি রাত জাগি না।
খালেদা জিয়া : আপনি কি সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়েন?
শেখ হাসিনা : আমি নামাজ পড়ি, কোরান পড়ি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি। আপনি নামাজ পড়েন, কোরান পড়েন... করেন। ... তাদের গুলি করে হত্যাও করেন। সবই জানি। এটা তো নতুন কিছু নয়।
শেখ হাসিনা : আমি প্রতিদিন কোরান শরীফ পড়ি এটা তো সবাই জানে। আপনারা তো কোরান পুড়িয়েছেন।
খালেদা জিয়া : আমরা কোরান পুড়াইনি, আপনারা পুড়িয়েছেন। কারণ আপনারা এটা বিশ্বাস করেন না। আপনারা ২৯ তারিখের পর যদি চান আলোচনা করতে আমরা রাজি আছি। হরতাল কর্মসূচী আমার প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ নেই।
শেখ হাসিনা : আপনি যে সময়ের মাঝে বলেছেন আমি ঠিক সেই সময়ের মাঝেই ফোন করেছি আলোচনার জন্য। এখন আপনি যদি বক্তৃতা থেকে সরে যান তাহলে জনগণের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
খালেদা জিয়া : আমার সঙ্গে এখন কোন নেতা নেই। এখন স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতাদের পাব না, ১৮ দলের নেতাদের পাব না। কার সঙ্গে কথা বলে আমি প্রত্যাহার করব বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কাউকে পাবেন না এটা কোন কথা হল? আপনি হুকুম দিলেই তো সব হবে। আপনি দেশ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন আর আপনি এইটুকু পারবেন না, এটা কোন কথা হল? আপনি আপনার নেতাদের ডেকে এক করতে পারবেন না, এটা হয় নাকি?
খালেদা জিয়া : আপনার ডিবি, এসবি সব আমার বাড়ি ঘেরাও করে বসে থাকে। আমার নেতারা কি করে আসবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনার নেতারা দা-কুড়াল দিয়ে মানুষকে আক্রমন করতে বলবে, জ্বালাও পুড়াও করতে চাইবে আর পুলিশ কিছু করবে না?
খালেদা জিয়া : দা দিয়ে বিশ্বজিৎকে আপনার লোকজন হত্যা করল না?
শেখ হাসিনা : ওরা আমার লোকজন না। যারা করেছে পুলিশ তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছে এবং গ্রেফতার করার পরই জানা গেছে তারা ছাত্রলীগের নামধাম করলেও তাদের বাবা মা জামায়াত করে অথবা বিএনপি করে।
খালেদা জিয়া : সব নিরীহ মানুষকে ধরা হয়েছে। যারা মেরেছে তারা ছাত্রলীগই করে এবং ছাত্রলীগই করে। কাজেই আমি বলব, আপনি ২৯ তারিখের পর যে কোন সময় দেন আমি আলোচনায় রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার কথাতেই থাকেন। জনগণের সামনে যে কথা আপনি দিয়েছেন সেই কথাটাই রাখেন।
খালেদা জিয়া : না আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এর পর যাতে আর কোন কর্মসূচী দিতে না হয় সে জন্য ২৯ তারিখের পর আলোচনায় বসেন।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেটার কথা রাখবেন না?
খালেদা জিয়া : আমি এখন বলে দিয়েছি যে এই কর্মসূচী থেকে বেড়নোর কোন পথ নেই। আপনি ৩০ তারিখে করেন আমার কোন আপত্তি নেই।
শেখ হাসিনা : আমার একটা মিটিং আছে, আমি দুঃখিত আমাকে যেতে হবে। আমি আবারও বলব আপনি পাবলিকের সামনে যে কথা দিয়েছেন তা মানেন।
খালেদা জিয়া : আমি আবারও পাবলিকের কাছে বলব যে ৩০ তারিখের পর আমাদের আলোচনায় বসতে কোন সমস্যা নেই।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন, বাকিদের সঙ্গে কথা বলেন। জাতির সামনে যে কথা দিয়েছিলেন সেটা অনুসরণ করেন। আলোচনায় আসেন।
খালেদা জিয়া : আপনি যদি কাল রাতে ফোন দিতেন তাহলে আমি কাল রাতেই মিটিং ডাকতাম। টাইম ওভার হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা : আমি তো বলেছিই আমি রাত জাগি না। আমার এখানে আগত সবাইকে আমি দশটার মাঝে বিদায় করে দেই।
খালেদা জিয়া : দশটা কেন? আমি তো সেই সাতটার সময় আমার অফিসে চলে গিয়েছি। আমার নেতারা সাতটা থেকে বসা। আপনি বিএনপি অফিসে ফোন করেলেই তো আমাকে পেয়ে যেতেন।
শেখ হাসিনা : আমি রাতে কাউকে ফোন দেই না।
খালেদা জিয়া : সাতটা তো রাত নয়, সাতটা তো সন্ধ্যা।
শেখ হাসিনা : আমার তো নেতাদের সঙ্গে একটু আলোচনা করে নিতে হবে।
খালেদা জিয়া : আমারও তো আলোচনা করতে হবে। আপনি যদি তখন ফোন দিতেন তখন আমি সবাইকে ডেকে, ১৮ দলকে ডেকে আলোচনা করতে পারতাম।
শেখ হাসিনা : আপনি তো আলোচনা এখনও করতে পারেন। আপনি তো দুইদিন সময় দিয়েছিলেন। এর মাঝেই তো ফোন করা হলো।
খালেদা জিয়া : না, আপনি কি মনে করছেন এই তিনদিনই হরতাল শেষ হয়ে যাবে। এটা তো না।
শেখ হাসিনা : আপনি তো আরও হরতাল দিবেন। আপনি ’৯৬ থেকে ২০০১ সালে আপনি ৩৩০ দিন হরতাল দিয়েছিলেন সেটাও আমার মনে আছে।
খালেদা জিয়া : আপনারাও তো দিয়েছিলেন। ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। ’৯১-এ আপনারা আমরা মিলে এক সঙ্গে আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম। আমরা সরকারে গেলাম, আপনি বিরোধী দলে গেলেন। আমরা এক সঙ্গে মিলে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি তো তখন বলেছিলেন আপনি একদিনের জন্য আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না।
শেখ হাসিনা : না এটা আমি বলিনি।
খালেদা জিয়া : আর কেয়ারটেকার সরকার। এই সরকার জামায়াতের আন্দোলনের ফসল। আপনি তখন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া মানবেনই না।
শেখ হাসিনা : মাগুরার ইলেকশনের পর যে অবস্থা হয়েছিল তখন সেটা ছাড়া উপায় ছিল না।
খালেদা জিয়া : দেশের মানুষও এখন চায়, আপনার ডিসি ভোট চাইছে এ কথা পত্রিকায় এসেছে। আপনি যদি ৩০ তারিখে করতে চান তাহলে আমি রাজি আছি। এটা ফাইনাল এর বাইরে আমি যেতে পারি না।
শেখ হাসিনা : পত্রিকায় কি এসেছে সেটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। আমার পার্টি যথেষ্ট স্ট্রং। ভোট দেয়ার লোকের আমার অভাব নাই। আমার দল এদেশে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছে। অতএব আমাদের ভয়ের কিছু নেই।
খালেদা জিয়া : আমার দলও সংগ্রাম করেই ক্ষমতায় এসেছে। এসব কথা বলে লাভ নাই। কথার পিঠে কথা আসবে।
শেখ হাসিনার : আমি আপনাকে আবারও অনুরোধ করছি, আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করেন। যে কথা জনগণকে দিয়েছেন সেটা রাখেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না, আপনি সময় মতো ফোন করেননি। সে জন্য আমি দুঃখিত। আপনি যদি কালকে ফোন দিতেন তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
শেখ হাসিনা : আপনি তো কালকেই আল্টিমেটাম দিলেন। আর আমি আজ দুপুরেই ফোন দিলাম। আপনি ফোন ধরলেন না। শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে বার বার আমার সহকারীর কথা হয়েছে। এখন সন্ধ্যায় কথা হচ্ছে।
খালেদা জিয়া : আপনি তো আমাকে সময়ই দিলেন না। আমি নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পেলাম না। আপনি নয়টার সময় ফোন দিলে নেতারা আমার পাশে থাকত, তখন একটা ডিসিশান দেয় যেত। অথচ আপনারা বললেন সন্ধ্যা ছয়টা। ৬টা। ৬টা।
শেখ হাসিনা : আমার রাতে একটা জরুরী মিটিং আছে। আপনি জানেন কোন মিটিং এ আমি দেরি করতে পছন্দ করি না।
খালেদা জিয়া : আপনি যদি ভাবতেন মিটিং ইম্পরট্যান্ট না এটা ইম্পরট্যান্ট তাহলে আপনি সময় বের করতে পারতেন। আপনি মিটিং থেকে বের হয়ে এসেও কথা বলতে পারতেন। তখন নেতারা উপস্থিত থাকত, এটা সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকত। এখন সে সুযোগ নাই।
শেখ হাসিনা : সব মিটিংই ইম্পরট্যান্ট। এখন তো কথা হলো, আপনি আপনার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে হরতাল উইথড্র করে নিলেই পারেন। আপনি আপনার নেতাদের বলেন যে আমি আপনাকে অনুরোধ করেছি হরতাল তুলে নিতে।
খালেদা জিয়া : তাহলে আপনি বলেন আমি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, তাহলে হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : এটা নিয়েই তো আলোচনা হবে। এটা মেনে নিলে আর আলোচনার কি থাকল?
খালেদা জিয়া : নো, আলোচনার আরও অনেক বিষয় আছে। আপনি বলেন যে আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : আমার নব্বই ভাগ সিট থাকা সত্ত্বেও আমি সর্বদলীয় সরকারে আপনাদের আহ্বান করেছি। আপনি নিজের লোকদের বিশ্বাস না করে।
খালেদা জিয়া : না সর্বদলীয় সরকার হয় না। আমরা এসবে কখনও অংশগ্রহণ করিনি।
শেখ হাসিনা : আপনি তো তাহলে আপনার নিজের দলের লোকদেরই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
খালেদা জিয়া : দেখুন আপনি যদি বলেন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেবেন তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব।
শেখ হাসিনা : দেখুন যারা মাইনাস টু ফর্মুলা আনতে চেয়েছিল তাদের আবারও সুযোগ দিতে চান কেন?
খালেদা জিয়া : না সেটা আমি দিতে চাই না, আপনি দিতে চান। আপনি যে ভাষায় কথা বলছেন...
শেখ হাসিনা : না, আপনি তো খুব মধুর ভাষায় কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া : আপনি পাবলিক মিটিংয়ে যে ভাষায় কথা বলেন সেটা আমরা শুনি। শুনি না।
শেখ হাসিনা : দেখুন আমরা পার্লামেন্টে আছি। কখনও আপনি সরকারে, কখনও আমরা সরকারে। আমরা যা করব পার্লামেন্ট অনুযায়ীই হোক।
খালেদা জিয়া : আপনার মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। আপনার মিটিংয়ের সময় নষ্ট করতে চাই না। টেলিফোনে সব কথা হয় না। আপনি বলেছেন আমাকে, আমি আমার সব নেতাদের ডাকব। তাদের সঙ্গে কথা বলব।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতালটা উইথড্র করে নেন।
খালেদা জিয়া : আপনি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেন। তাহলে আমি হরতাল তুলে নেব।
শেখ হাসিনা : সেটা নিয়েই তো আলোচনা হবে। যখন কথা হবে তখন বুঝা যাবে।
খালেদা জিয়া : আলোচনা করার আরও অনেক কিছু আছে। কে নিরপেক্ষ হবে, কে হবে ন

Hasina-Khaleda Phone Conversation

হাসিনা – খালেদা ফোনালাপ ২৬ অক্টোবর ২০১৩



শেখ হাসিনা ঃ আমি নিজে ফোন করেছি। কিন্তু আপনি ধরেন নি।
খালেদা জিয়া ঃ রেডফোন তো অনেকদিন ধরে বিকল। আমার অফিস থেকে চিঠি দেয়ার পরেও এই ফোন ঠিক করা হয়নি।
শেখ হাসিনা ঃ কেন আমি তো রিংয়ের শব্দ শুনেছি। আপনি শুনেন নি।
খালেদা জিয়া ঃ না না কোন রিং হয়নি। আমিতো বাসায়ই ছিলাম। রিং হবে কিভাবে ? ওই ফোনতো নষ্ট দু’বছর ধরে।
শেখ হাসিনা ঃ ফোন নষ্ট ছিল, না নষ্ট করে রেখেছেন ?
খালেদা জিয়া ঃ কেমন কথা বলছেন। আপনার লোকদের জিজ্ঞাস করেন। লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। টিএ্যান্ডটির কর্মকর্তা বলেছেন ফোন নাকি ঠিক আছে। কিন্তু এটা মিথ্যা কথা।
শেখ হাসিনা ঃ কিন্তু আমিতো রিং এর শব্দ শুনেছি। অনেকক্ষন রিং হয়েছে। কেউ ধরে নি। আপনি মিথ্যা বলছেন কেন ? আপনার হয়তো কানে সমস্যা আছে।
খালেদা জিয়া ঃ আমার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস নেই। এসব অভ্যাস আপনার আছে।
শেখ হাসিনা ঃ আচ্ছা বিষয়টি আমি দেখবো। যদি নষ্ট হয়ে থাকে আগামীকাল ১১টার মধ্যে ওটা ঠিক হয়ে যাবে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে গণভবনে এসে কথা বলার জন্য আমি ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় আপনাকে দাওয়াত করছি। আপনি জানেন আমি ইতিমধ্যে অন্যদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আমার সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনি কি র্নিদলীয় সরকার নিয়ে আলাপ করার জন্য আমাকে ডেকেছেন ? যদি এটি নিয়ে ডাকেন তাহলে আমি আসব।
শেখ হাসিনা ঃ আমিতো সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওটা নিয়ে যদি আপনার কোন সাজেশন থাকে, আমরা সেটা শুনব।
খালেদা জিয়া ঃ এটা আপনার প্রস্তাব। জনগনের এই প্রস্তাবে সায় নেই। এতে তো সমস্যার সমাধান হাবে না। আপনি র্নিদলীয় সরকারের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নেন।
শেখ হাসিনা ঃ আমি যে প্রস্তাব দিয়েছি। তাতে তো আপনার দলের লোকও থাকবে। রাজনীতিবিদরা মিলে এই সরকার হবে। রাজনীতিবিদদের প্রতি আপনার আস্থা নেই কেন ? আপনি র্নিদলীয় সরকার দেখেন নি ? তারা কি করেছে আপনার মনে নেই ?
খালেদা জিয়া ঃ সেটা ভিন্ন বিষয় ছিল। এখন র্নিদলীয় সরকারের দাবি আমার একার না। এটা দেশের সব মানুষের দাবি।
শেখ হাসিনা ঃ আপনি আগে আসেন। আপনার দলের যতজন খুশী সব নিয়ে আসেন। তালিকাটা আগে পাঠিয়ে দেবেন। তবে আসার আগে দেশের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে আসবেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনার বাসায় আসতে আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু হরতাল এথন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। আপনি যদি আমাকে একদিন আগে বলতেন বা আজ সকালেও বলতেন, তাহলেও আমি চেষ্টা করে দেখতাম। হরতাল তো আমি একা ডাকেনি। ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের পুলিশ তাড়া করছে। তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আলোচনা করার জন্য এখন তাদেরতো পাবো না।
শেখ হাসিনা ঃ দেখেন আমি আন্তরিকতা নিয়ে ফোন করেছি। আপনিতো আমারে গ্রেনেড হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আরো কতকিছু করেছেন। তারপরেও তো আমি ফোন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া ঃ কে কি করেছে তা আপনিও জানেন, আমিও জানি, দেশের মানুষও জানে। এগুলো বাদ দেন। অতীত নিয়ে বসে থাকলে আমরা সামনে অগ্রসর হতে পারব না। আজো আমার ৮ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা : দেখেন আপনি তো ১৫ আগস্ট জš§দিন পালন করেন। কিন্তু ওটা তো আপনার জš§দিন নয়। আপনি আমাদের বাসায় বহুবার এসেছিলেন। আমার ছোট ভাই রাসেলকে দেখেছেন। ছোট্ট এই শিশুটিকে হত্যার দিনে আপনি কি করে কেক কেটে জš§দিন পালন করেন ?
খালেদা জিয়া : দেখেন ১৫ আগস্ট কারো মৃত্যুদিন যেমন হতে পারে,তেমনি অনেকেরই জš§দিনও হতে পারে। ১৫ আগস্ট কারো জš§দিন হলে সে কি দিনটি পালন করবে না ? আমার জš§দিনে আমি পালন করবো, এটা তো আমার নিজস্ব ব্যাপার। আমি তো আপনার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করি না।
শেখ হাসিনা ঃ যাই হোক, এখন আলোচনার জন্য আমার আন্তরিকতা আছে। তাই ফোন করেছি। আপনি আসেন। আমরা আলাপ-আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া ঃ আপনার আন্তরিকতা থাকলে, আরো আগেই ফোন দিতেন। এখনো যদি নীতিগতভাবে র্নিদলীয় সরকারের দাবি মেনে নেন, তাহলে হরতালসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করার দায়িত্ব আমি নেবো। সমাধান হয়ে গেলে তো আর কোন কর্মসূচির দরকার হবে না।
শেখ হাসিনা ঃ আপা আপনি আগে আসেন। হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন।
খালেদা জিয়া ঃ ২৯ তারিখ পর্যন্ত তো আমার কর্মসূচি আছে। ২৯ তারিখের পর যেকোন দিন যেকোন স্থানে আপনি ডাকলে আমি আসবো।
শেখ হাসিনা ঃ হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন। আমরা বসলে একটা সমাধান হবে।
খালেদা জিয়া ঃ না না না আগে আপনি ঘোষণা দেন। তাহলে আমার বসতে কোন অসুবিধা হবে না।
শেখ হাসিনা ঃ আপনি আপনার দলের নির্বাচিতদের নাম দেন। বাইরের লোকদের নাম প্রস্তাব করছেন কেন। দেশ চালাবো আমরা। বাইরের লোকের দরকার কি ? আমাদের উপর আস্থা রাখছেন না কেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনিও তো আমার উপর আস্থা রাখেন নি। সে কারণেই এখন দলের বাইরের লোক লাগবে। দেশের মানুষ র্নিদলীয় সরকার চায়। আপনি এ দাবি মেনে নিলেই সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। আপনি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পছন্দ নাই করেন,তাহলে কেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন ? ২০০৭ সালে কেন ওই সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটা আপনাদের আন্দোলনের ফসল। এরপর সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বলছেন অন্য কথা।
শেখ হাসিনা ঃ দেখেন আপা, অভিজ্ঞতা যেমন আমার আছে, তেমনি আপনারও আছে। আমরা তো আপনাদের লোক নিয়েই অন্তবর্তী সরকার করতে চাচ্ছি। আপনি এখন চিন্তা করে দেখেন।
খালেদা জিয়া ঃ এখানে চিন্তার কিছু নেই। আপনি দাবি মেনে নিন। দেশের মানুষকে শান্তি দিন। এই দেশটা আপনারও না, আমারও না, ১৬ কোটি মানুষের। তাদের শান্তির কথা, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। আমি তো সেসময়ে আপনার দাবি মেনে ছিলাম। আমি তো এখন আমার দলের সরকার চাই না। আমার নিজের সরকারও চাই না। চাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় লোকদের সরকার। সেটা মানতে আপনার আপত্তি কেন বুঝতে পারছি না।