Friday, November 9, 2012

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের দায় মাথায় নিয়ে সিআইএ প্রধানের পদত্যাগ


ঢাকা:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার তিনদিন পরেই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের দায় মাথায় নিয়ে সিআইএ প্রধানের পদত্যাগ করলেন।



বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (সিআইএ) প্রধান ডেভিড পেট্রাউস পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

নিজের আচরণের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার কথা প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে ডেভিড পেট্রাউস জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। বিবৃতিতে নিজের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় সাবেক এ চার তারকা জেনারেল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বিয়ের ৩৭ বছর পর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে চরম বোকামির পরিচয় দিয়েছি আমি’’।

একজন স্বামী এবং সিআইএর মত সংস্থার প্রধান হিসেবে তার এমন আচরণ একদমই অপ্রত্যাশিত ছিলো বলে বিবৃতিতে স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট সহানুভূতির সঙ্গে আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।’’

এদিকে পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিআইএ ও মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ডেভিড পেট্রাউসের পালন করা দায়িত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক দশক ধরে অসামান্য সেবা দিয়ে গেছেন ডেভিড পেট্রাউস। নিজের দায়িত্বপালনকালে পেট্রাউস আমাদের দেশকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করেছেন।’’

পেট্রাউসের পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় ওয়াশিংটনসহ দেশটির সংশ্লিষ্ট সব মহলে। পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয় তার জীবনী লেখক পাউলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে পেট্রাউসের গোপন সম্পর্কের বিষয়টি।

ডেভিড পেট্রাউসের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি এখন এফবিআইয়ের তদন্তাধীনে রয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ব্রডওয়েল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে পিএইচডিও করছেন বলে জানা গেছে।

২০১১ সালে আফগানিস্তানে দায়িত্বপালনের সময়েই ব্রডওয়েলের সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন পেট্রাউস। অবশ্য ওই বছরই সিআইএ প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান পেত্রাউস। এর আগে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

৯/১১ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফল শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় পেট্রাউসকে। ইরাক ‘অভিযান’-এ নেতৃত্বদানে বিশেষ ভূমিকা পালন ও আফগানিস্তানে কার্যকর সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসিত হন তিনি।

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারঃ কবীর চৌধুরী , মার্চ ১৯৯৪





বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ, সুখ্যাত লেখক, ব্যতিক্রমী অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী গেল ১৩ ডিসেম্বর'১১, ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিস্ময়কর এক সৃষ্টিশীল মানুষ।

মাসে (আজ থেকে প্রায় আঠারো বছর আগে) জাপান সফরের সময়, মাসিক মানচিত্র'র জন্য তাঁর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন -টোকিওর লেখক-সাংবাদিক সজল বড়ুয়া। আমরা কৌতূহলি পাঠকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, আবারও সেই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করছি। -সম্পাদক, কমিউনিটি।



'ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে টোকিও এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক, সুখ্যাত প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর কবীর চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রায় ৮০টি গ্রন্থের লেখক প্রফেসর কবীর চৌধুরীকে ১লা মার্চ '৯৪ এশিয়া বুনকা কাইকানের ৭০৭ নম্বর কক্ষে স্বাধীনতাত্তোর ও সমকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। একই সময়ে আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন জাপানের জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকীর সম্পাদিকা মায়ুমি মুনাকাতাও। টেপ-রেকর্ডারে ধারণকৃত প্রফেসর কবীর চৌধুরীর সাক্ষাৎকারের সারাংশ নিম্নরূপঃ

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান করুণ অবস্থা যেমনঃ সন্ত্রাস, সেশন জট, পড়াশুনার প্রতিকূল পরিবেশ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

কবীর চৌধুরীঃ সন্ত্রাস, মারপিট গোলাগুলি প্রায়ই হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এ ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত -সরকার, অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে অধ্যাপক মহলেরও যে ত্রুটি নেই -এমন কথা বলা যায় না। আগের দিনে অনেক অধ্যাপক ছিলেন, যাঁদেরকে অকৃত্তিমভাবে শ্রদ্ধা করা যেত। সে রকম শিক্ষকের সংখ্যাও আজকাল কমে এসেছে। তবে একটি কথা আমি বলবো -দোষ অনেকের থাকলেও, এর দায়-দায়িত্ব সরকারের। সরকার আন্তরিকভাবে যে কোন দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করলেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চয়ই অতি অল্প সময়েই ফিরে আসবে।

* বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা নীতি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

ক.চৌ.: খুব একটা সামঞ্জস্য আছে বলে, আমার মনে হয়না। দীর্ঘকাল ধরেই আমরা অনেকে শুধুমাত্র মুখে বলে যাচ্ছি 'জীবিকার সাথে সংযুক্ত করতে না পারলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবেনা।' কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোন উদ্যোগ বা প্রয়োগ নেই। ড. কুদরত-ই-খুদার শিক্ষা নীতি বিভিন্ন কারণে অবহেলিত হয়েছে বাংলাদেশে। চালু হয়েছে নতুন নতুন আজগুবি সব শিক্ষা পদ্ধত। সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, 'A' লেভেল, 'O' লেভেল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আমার নিজের বিবেচনায়, এগুলোর খুব একটা শুভ দিক নেই।

* একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবীদের 'মুক্তবুদ্ধি চর্চা'র ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.: খুব একটা অসুবিধে আর নেই। কারণ, আজকাল বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারছেন। লিখতেও পারছেন নানান বিষয়ে। তবে মৌলবাদীদের যদি সরকার আরো কঠোর ভাবে প্রতিহত করেন তাহলে তাঁদের জন্য ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে ওঠে। আর যেটুকু প্রতিবন্ধকতা আছে, আমি বলবো, অনেকের ক্ষেত্রে তা স্ব-আরোপিত। নাম সর্বস্ব সুবিধাবাদী অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ব্যক্তি-স্বার্থের কারণে মাঝেমাঝে দল পরিবর্তন করেন। নিজেদেরকে অনেক সময় তারা বিতর্কিত করে তোলেন - অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তারপরও কিছু বুদ্ধিজীবী তো আছেন, যাঁরা আমাদের সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছেন। তাঁদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রতিকূল পরিবেশে নির্ভয়ে লিখে যাচ্ছেন -ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে। দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার অনুকূলে তাদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

* প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার ২৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি। এ প্রসঙ্গে আপনার নিজস্ব মন্তব্য জানতে চাই।

ক.চৌ.:মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক মূল্যায়ন দীর্ঘকাল বাংলাদেশে হয়নি এটা ঠিক। '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর থেকে, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপরিকল্পিতভাবে মলিন করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি তারা বিভেদও সৃষ্টি করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা বড় আদর্শ ছিলো 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। কিন্তু, 'ধর্মনিরপেক্ষতাকে লালন করলে ইসলাম বিপন্ন হবে' এই ভাওতাবাজি দিয়ে '৭৫ পরবর্তী সময়ে 'ইসলাম ধর্ম'কে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপ দেয়া হলো। ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ 'গণতান্ত্রিক চেতনা'কে। আমরা মুখে শ্লোগানের মত বলছি বটে, 'গণতন্ত্রের কথা'। কিন্তু প্রশাসনকে দলীয়করণ করে, গণতান্ত্রিক চেতনার তো বিকাশ হয় না। অথচ বর্তমানে প্রশাসনকে নিষ্ঠুরভাবে দলীয় করণ করা হচ্ছে -এটা বি.এন.পি.র অনেক প্রভাবশালী নেতারাও অগোচরে বলছেন। এসবই তো মুক্তিযুদ্ধের অবমূল্যায়ন। তবে আশার কথা এই যে, গত পাঁচ সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর লেখা হয়েছে। 'প্রজন্ম ৭১' নামে একটি সংগঠনও সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর আগে। এসবকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফসল বলা যায়। তাই সব মিলিয়ে বলবো -ব্যাপকভাবে না হলেও একেবারেই যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি, তা ঠিক নয়।

* স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপরিচালনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ভুল কি আপনার চোখে পড়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সবদিক দিয়ে সঠিক ছিলেন, তা নয়। সাধারণতঃ স্বাধীনতার পর তাঁর সাধারণ ক্ষমার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত্পক্ষে ঐ সময় সকলকে তিনি নির্বিচারে ক্ষমা করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে (যেমন লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, হত্যার পেছনে চক্রান্ত) তারা এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেনা। অন্যদিকে এটাও সত্য যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে শেখ মুজিব যদি সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তখন হয়তো তাঁকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখিও দাঁড়াতে হতো। আমার মনে হয়, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে এই দিকটাও তিনি ভেবে দেখেছিলেন। তারপরও তিনি যদি সে সময় সারা দেশের চিহ্নিত কিছু ঘৃণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ গতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তাহলে হয়তো আজ এই ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ আর থাকতো না। এটা তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমি বলবো। বঙ্গবন্ধুর আরেকটা ভুল দিক হলো, তিনি 'বাকশাল' গঠন করেছিলেন বটে, কিন্তু বাকশালের নীতি-আদর্শকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে কোন ক্যাডার তৈরী করলেননা। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাঁর উচিত ছিল প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিষ্ঠিত করা। এসবই শেখ মুজিবের ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে যেহেতু ভুলের কথা উঠেছে, পাশাপাশি তার অসংখ্য গুণের কথাও আংশিকভাবে না বল্লে নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান পেয়েছিল। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের পর অতি দ্রুত ভারতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আদেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ কর্মতৎপরতায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি মোটামুটিভাবে দাঁড়ানোর মত একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মত্যাগ ও অবিস্মরণীয় অবদান চিরকাল কী উজ্জ্বল হয়ে থাকবেনা?

* '৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জননিন্দিত ও ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে দয়া করে কিছু বলবেন কি?

ক.চৌ.: মুজিব হত্যার ১৯ বছর পর আমি মনে করি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পটভূমিকা আজ আর কারো অজানা নেই। স্বাধীনতার পর জামায়াতীরা বলতে গেলে, প্রায় ইঁদুরের মত গর্তে ঢুকে গিয়েছিলো। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রশাসন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করা হয়। শাহ্ আজিজের মত স্বাধীনতা-বিরোধী একজন জঘন্য পাপিষ্ঠকে বানানো হয় 'প্রধানমন্ত্রী'। সত্যিকারভাবে এর সূত্রপাত ঘটে ৭৫ এর পরে সরকার ও প্রশাসনের বলিষ্ঠ সহযোগিতায়। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে আমরা নরঘাতক গোলাম আযমের বিচার দাবী করছি। অথচ তার জন্য দেশদ্রোহী হিসেবে মামলা দায়ের করা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এমন কি এখনো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসে আছেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও জামায়াতীদের দৌরাত্ম্য এবং বর্তমান কালের এই ধরনের অপকর্মের পরিকল্পনা তো শুরু হয়েছিলো শেখ মুজিব হত্যার পর থেকেই।

*স্বদেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা সর্বসমক্ষে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এ পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নিয়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধুর ওপর আমরা ইংরেজি ও বাংলায় বেশ কিছু বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অডিও ও ভিডিও ক্যাসেটও বের করা হয়েছে। চেষ্টা করছি, একটি যাদুঘরও নির্মাণ করার জন্য। তবে as a symbol of liberty অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে আমরা শেখ মুজিবের ওপর কাজ করে যাচ্ছি। তারই পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতির লক্ষ্যেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ম্যালা পরিকল্পনা রয়েছে।

* বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালের প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে, দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?

ক.চৌ.: আপাতঃ দৃষ্টিতে মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতি মনে হলেও, আমার মনে হয়, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ভবিষ্যত প্রায় অন্ধকার। মৌলবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, রগকাটা, নরহত্যা, বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চালিয়ে গেলেও, প্রকৃতক্ষে দিন দিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে -তাদের বিরুদ্ধে। তারা মুখে যতটুকু লাফালাফি করে, কার্যক্ষেত্রে তাদের দৌড় তত নয়। বরং বলা যায়, বিপরীত দিকে মৌলবাদ- বিরোধী চেতনাই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মৌলবাদীদের ফ্যাসিস্ট চিন্তাধারা ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বিশেষ করে, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে হামলা ও নারকীয় হত্যাকান্ড, অশিক্ষিত অসহায় মানুষের ওপর তথাকথিত ইসলামী আইন কানুন আরোপ ইত্যকার অমানবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার ও আইন কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হওয়া উচিত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে যদি সরকার এ ব্যাপারে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেয় বা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়, তবে নিঃসন্দেহে বর্তমান ক্ষমতাসীন বি.এন.পি. ও বাংলাদেশের বিপর্যয় অচিরেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।

* বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.:অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বল্লে অত্যুক্তি করা হবেনা। বৈদেশিক বিনিযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, বলা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম খুব একটা না বাড়লেও, প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য আংশিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও, অধিকাংশ লোকই তার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেনা। কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আশাতীত ফসল উৎপাদিত হয়েছে, বলা যায়। অথচ তারপরও সেই কৃষকরাই পাচ্ছেনা তাদের উপযুক্ত মূল্য। আর বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে -দারিদ্র সীমার অনেক নীচে। আজকাল বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, বেসরকারী সংস্থা অর্থাৎ N.G.O. রাই সরকারের ভূমিকা নিয়ে, নানান প্রতিকূল অবস্থায় সাফল্যজনকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বলবো, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারেরও উচিত -এন.জি.ও.দের কর্মপদ্ধতি অনুসারে বিভিন্ন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহন করা।

* বর্তমান সরকার ও তার মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছেন 'দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে, বৈদেশিক বানিজ্যের বিভিন্ন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে' -একজন অভিজ্ঞ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।

ক.চৌ.: আমি আগেও বলেছি বর্তমান সরকারের অতঃপতনের একটা বড় কারণ হচ্ছে -'ক্রমাগত নির্লজ্জ মিথ্যাচার'। এটা ফ্যাসিবাদীরও একটা লক্ষণ। সরকার ও তার মন্ত্রীবর্গ দেশ-বিদেশে বড় গলায় বলে বেড়াচ্ছেন -বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমে গেছে ও বৈদেশিক বানিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। আর তারই সাথে বাড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগও। আমার জানা মতে, প্রকৃত অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান সরকার বলতে গেলে, বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ এর প্রেসক্রিপশন অনুসারেই কাজ করছে। আসলে ঐসব সংস্থাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে তারা সে পরিমানই ঋনদেবে যাতে সোমালিয়ার মতো একটি দুর্ভিক্ষ দেশে সৃষ্টি না হয়, আর কোন রকমে মানুষ 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থায় যেনো বেঁচে থাকতে পারে। বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে তারা ব্যবহার করবে বাংলাদেশকে। সৃষ্টি করবে নিজেদের পণ্যের অবাধ বাজার। এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র 'আশার ফানুস' হিসেবেই মানুষের চোখে ভাসবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই অস্থিতিশীল ও করুণ অবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন কোনদিনই আসবেনা বাংলাদেশে।

শেষের কথাঃ

[দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমি বিদায় নেয়ার ঠিক অল্প আগে প্রফেসর কবীর চৌধুরী বিনীত কন্ঠে বললেন- "বাংলাদেশের সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে তুমি আজ আমার কাছে এই দূর প্রবাসেও অনেক কিছুই জানতে চেয়েছো। আমার স্বল্পজ্ঞানের আলোকে আমি চেষ্টা করেছি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সচেতন বাঙালীদের কাছে তুলে ধরতে।" প্রতিত্তরে আমি তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ফুলেল অভিনন্দন জানালাম।

ফেরার পথে কবীর স্যারের একটা কথাই বার বার মনে আসছিল শুধু -'আমার সল্পজ্ঞানের আলোকে.....।' আমি নিজেই এ কথা ভেবে মৃদু হাসলাম মনে মনে। "সাগরের গভীরতা বিশাল। অথচ সাগর কী জানে তার সেই গভীরতার কথা"! মিনিট পাঁচেক কথা না বলায় আমার হাসি দেখে মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নিরবতা ভাঙলো সঙ্গী মায়ুমি। 'কি ব্যাপার? হাসছো যে! বাংলাদেশের কি কোন সুসংবাদ শুনেছ?' সুসংবাদ! বাংলাদেশের!! বুকটা আমার ব্যথায় ভরে উঠলো এই বিদেশীনীর সামনে। মায়ুমিকে পাশাপাশি রেখে চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলাম সুগামো ষ্টেশনের দিকে। বাংলাদেশের সুসংবাদ!!! কী বলবো এ ব্যাপারে একজন জাপানি সাংবাদিককে?]' কমিউনিটি নিউজ, জাপান

একান্ত আলাপচারিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতা বিভাস ভট্টাচার্য: পৈতৃক ভিটে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়।


http://community.skynetjp.com/index.htm




দীপক রায়, কলকাতা, ভারত ।।

১৬ই আগষ্ট সুকান্তের ৮৭ তম জন্মদিন পালন হয়েছে সাড়ম্বরেই। কিন্তু প্রচারের বৃত্তের বাইরে থাকা সুকান্তের পরিবারের খোঁজে গিয়েছিলাম। সেই বিখ্যাত কলকাতার বেলেঘাটার হরমোহন ঘোষ লেনে বিকেলটা কাটালাম সুকান্তের অনুজ বিভাস ভট্টাচার্যের সাথে। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এলো নানা অজানা কথা। ৮৪ বছর বয়সী বিভাস ভট্টাচার্য, তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্য জানালেন সেইসব কথা। যার পৈতৃক ভিটে রয়েছে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়। কিন্তু বার্ধক্যের কারনেই আর যেতে পারবেন না ভেবে যন্ত্রনা পান তিনি। যন্ত্রনা পান তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্যও।

টানা দুই ঘন্টা ধরে বিভাস ভট্টাচার্য একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য অভাবে, অনাহারে মারা গিয়েছেন, এটা সত্য নয়। শরীরের প্রতি যত্ন না নিয়ে অবিরাম কমিউনিস্ট পার্টি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজ করতে গিয়েই তার দেহে বাসা বেধেছিল দুরারোগ্য ক্ষয়রোগ, যার থেকে আর মুক্তি পাননি তিনি। একুশ বছর পুর্ন হবার আগেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি দেশের স্বাধীনতাও দেখে যেতে পারেননি তিনি।

সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন মারা যান, তখন বিভাস ভট্টাচার্যের বয়স ছিল ১৮ বছর। ফলে সুকান্তের সব স্মৃতিই তার মনে আছে। তিনি জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যই তাকে রাজনীতিতে এবং কিশোর বাহিনী সংগঠনে এনেছিলেন। তবে তিনি সুকান্তের মত সর্বক্ষনের পার্টি কর্মী ছিলেন না। তিনি পারিবারিক প্রকাশনা ব্যবসার সাথে যুক্ত থেকেই রাজনীতি করে গিয়েছিলেন। তাদের পরিবার ছিল পুরোদস্তুর রাজনীতির পরিবার। পুরানো দিনের সেইসব স্মৃতি অনর্গল বলে গেলেন তিনি।

ভাবলে অবাক হতে হয়, এখনো ছোট্ট একতলা বাড়িতেই সাধারন মানুষের মত বাস করে এই পরিবার। সুকান্তের পরিবার বলে অবশ্যই গর্ব আছে, কিন্তু কখনো সেটাকে নিয়ে প্রচারের আলোয় আসেননি তারা। তার নাতি ছোট্ট রূপায়ন ভট্টাচার্য ঘরে টাঙ্গানো সুকান্তের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে জানালো সে সুকান্তকে "ভালো দাদু'' বলে ডাকে। সুকান্ত যে কারো দাদু হতে পারে এটা আগে কখনো ভাবিনি। আলাপচারিতার মাঝেই চা-বিস্কুটে জমে উঠল গল্প। তার মতে সুকান্ত রাজনীতিতে এসেছিলেন সেই সময়ে বিশ্বযুদ্ধের কারনেই। সেই ঘটনা তাকে রাজনীতি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজে বিলিয়ে দিয়েছিল।

বর্তমান সরকারের পাঠ্যসূচি থেকে সুকান্তের কবিতা বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। তার মতে, এতে কিছু যায় আসে না। তিনি জনতার কবি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। মানুষের ভালোবাসা কেউ আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করে সংস্কার করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফরিদপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানান।

তবে তার একটি ক্ষেদ এখনো রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি যদি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করতে পারে, তাহলে কেন ভারত সরকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৩৪ নং হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িটি অধিগ্রহন করে সংস্কার করবে না। সেটি এখনো ভাঙ্গা হয়নি। অধিগ্রহন করা এখনো সম্ভব।

পড়ন্ত বিকেলে, বৃষ্টির মাঝে তার আলাপচারিতা ভিত্তিক সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুকান্তের নাতি, সুকান্তের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রূপায়নকে দেখে মনে হল সুকান্ত তো এমন বয়সেই আগুন ঝরানো সব কবিতা লিখতেন। বৃষ্টি থামতেই বেরিয়ে এলাম। বাইরে রাস্তার ধারে সুকান্তের আবক্ষ মুর্তি হাসি মুখে বৃষ্টিস্নাত। তার গলায় ঝুলছে জন্মদিনে দেওয়া ফুলের মালাগুলি। কমিউনিটি নিউজ, জাপান


Thursday, November 8, 2012

৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী গ্রেপ্তার





ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীকে একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. শাজাহান নামের এক ব্যক্তি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কয়েকদিন আগে আদালতে সালাহ উদ্দিন শোয়েবের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ খান থানা পুলিশ।সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২০০৩ সালে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে বিমানবন্দর থেকে বিদেশি পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার এর সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোকে জড়িয়ে ব্লিটজে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পুরো উপমহাদেশে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে সেই খবর ফলাও প্রচার পায়। হিনার স্বামী ফিরোজ গুলজার ওই প্রতিবেদনকে স্রেফ কুৎসা বলে উড়িয়ে দেন। উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। এর এক দিন আগে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) জানান, বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে হজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার


চট্টগ্রাম, নভেম্বর ০৮ - চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ইসলামী ছাত্র শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেনকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি সাজ্জাদ আলী খানের গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) বনজ কুমার মজুমদার ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার তারেক আহমেদ জানান,বুধবার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হলে বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানান তারেক আহমেদ।

২০০০ সালের জুলাই মাসে বহদ্দারহাটে একটি চলন্ত মাইক্রোবাসে গুলি করে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজনকে সাজ্জাদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের এপ্রিলে সাজ্জাদকে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে সাজ্জাদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরো তিন শিবির কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্র আইনের আরেকটি মামলায় ১০ বছরের জেল হয় সাজ্জাদের। তার বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে বসেই নগরীর পাঁচলাইশ, চালিতাতলী, অক্সিজেন, মুরাদপুর, চকবাজার, বায়েজিদ, হাটহাজারীসহ বিশাল এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। তার নামেই এসব এলাকায় এখনো ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চলছে। এ কাজে সাজ্জাদ এলাকার উঠতি যুবকদের ব্যবহার করছিলেন বলে নগর পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তবে সাজ্জাদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারিক আহম্মদ খান বলেন, “সাজ্জাদের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। বিশেষত জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এ চাঁদাবাজিটা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেলেও কেউ সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেননি।”
এ বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে গুলি চালান একদল ক্যাডার। এ সময় তারা চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় অনেকদিন পর আবারও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নাম আলোচনায় উঠে আসে। নগর পুলিশ কর্মকর্তারাও সাজ্জাদের বিষয়ে তৎপর হন। পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রায় এক দশক দুবাই ছিলেন সাজ্জাদ। সেখানে বাঙালি এক তরুণীকে তিনি বিয়ে করেন। পরে বাঙালি স্ত্রীকে সন্তানসহ দেশে পাঠিয়ে ভারতের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে ভারতে যান তিনি।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে তার সহযোগীরা ব্যাপক অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। জমির মালিকদের কাছ থেকে বিক্রির সময় টাকা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতার কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন সাজ্জাদ বাহিনীর ক্যাডাররা।গত বছরের আগস্টে সাজ্জাদের দুই সহযোগী সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বায়েজিদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম।

নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী উপজেলার সঙ্গে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।ওই এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)‘অনন্যা’ নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে।

মূলত সংযোগ সড়ক এবং আবাসিক এলাকা পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার দৃশ্যপট। বর্তমানে ওই এলাকায় জমির দাম বাড়ছে। এতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ওই এলাকায় জমি কেনাবেচা নিয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেন। ফলে ওই এলাকায় জায়গা জমি কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে একটি চক্রও গড়ে ওঠে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদ সর্বশেষ ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর বন্দুকযুদ্ধের পর তার সহযোগী ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার দেলোয়ার হোসেন ওরফে আজরাইল দেলোয়ারসহ নগরীর চালিতাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে পুলিশ একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে।

তিন বছর জেল খেটে দেলোয়ারের আগেই সাজ্জাদ ২০০৪ সালে জামিনে মুক্তি পান।৫৪ ধারায় আবার গ্রেফতার এড়াতে কুমিল্লার জামায়াতের তৎকালীন সাংসদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের গাড়িতে করে জেলগেট থেকে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।২০০৪ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মুখে তৎকালীন জোট সরকার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পর  দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খান দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খুন হন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলী। লিয়াকত হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় সাজ্জাদ ও আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জসিম উদ্দিন ওরফে ফাইভ স্টার জসিম। মূলত এ ঘটনার পরই অপরাধ জগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সাজ্জাদের নেতৃত্বে মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের ৬ নেতা সহ ৮জনকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। আলোচিত এইট মার্ডারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিবিরের আরেক ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে গিট্টু নাছির এবং ফাইভ স্টার জসিম পরবর্তীতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ২০০৫ সালে আজরাইল দেলোয়ার জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ আজরাইল দেলোয়ার নিহত হয়।
এরপর নিজের দল জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শক্তিশালী অংশীদার হলেও পরিস্থিতি প্রতিকূল মনে করে  সাজ্জাদ আর দেশে ফেরেননি।০৮/১১/২০১২

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলবে বাংলাদেশ-দীপু মনি


ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। সকাল ১১টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীপু মনির সঙ্গেও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠক করবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি বলেন, “বৈঠকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের দাবি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আবারো তুলে ধরব আমরা।”

একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাসহ আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়া এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের হিস্যা পাওয়ারও দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি বিশেষ বিমানে করে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা পৌঁছাবেন হিনা রাব্বানি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বেলা ১২টায় গণভবনে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডি-এইট সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবেন তিনি।

আগামী ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে ডি-এইটভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের এই সম্মেলন শুরুর কথা রয়েছে।

সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বেলা ৩টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে পাকিস্তানি মন্ত্রীর। এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর হিনার ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদে গত চার বছরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেছেন। এছাড়া ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়।