Saturday, September 7, 2013

আমাদের বিবেকভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবি-দেলোয়ার হোসেন



অতীতের কথা বাদ দিলাম । বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের গৃহীত কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ , আহ্বান , অনুরোধকে বিএনপি কখনও শুধু পাত্তাই দেয়নি , উপরন্তু তাকে সব সময় বাকা চোখেই দেখে আসছে এবং সেসব ক্ষেত্রে কোমর বেঁধে তীব্র সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে । উদাহরণ হিসেবে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার সহ গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য বিষয় রয়েছে । আওয়ামীলীগ যেখানেই হাত দেয় বিএনপি সেখানেই ষড়যন্ত্র, দুরভিসনধের গন্ধ খুঁজে পায় এবং আমলে নেয়ার অনুপোযুক্ত ও অচ্ছুত বলেই উপস্থাপিত বিষয়গুলোকে স্বভাব সুলভ নিয়মে কালিমালিপ্ত করে বসে । অর্থাৎ আওয়ামীলীগের কোন কিছুই ভাল না । এমনকি যে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেটাও তারা স্বীকার করে না , স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেও কোন ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে মুল্যায়ন করে না । তারা বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে জিয়াকেই স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেস্টায় নিরন্তর লিপ্ত থেকে বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরনের দিবসে পৈশাচিক জন্মোৎসব পালন করে সহজাত ঘৃণা ও তীব্র প্রতিহিংসার বহিপ্রকাশ ঘটিয়ে আসছে দীর্ঘকাল থেকেই । সুতরাং শত্রুর অবস্থানে থেকে মনে প্রাণে জিঘাংসায় ব্রতী হলে প্রতিপক্ষের কোন কিছুকেই ইতিবাচক বলে গ্রহণ করা যায় না । তাই বলা হয়, যারে দেখতে নারি , তার চলন বাঁকা । ঠিক একই অবস্থানে রয়েছে আমাদের বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ । তারাও আওয়ামীলীগের কোন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা তো দূরে থাক, ফাঁকফোকর খুজে বের করে দলটিকে সর্বদাই আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাতে যেন সিদ্ধহস্ত। বিএনপির কলংকময় অতীত , নজিরবিহীন অপকর্ম নিয়ে তারা মোটেও টু শব্দটিও করেন না। শুধু কি তাই স্বাধীনতা কিংবা বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ এলে জাতির পিতার সম্বোধন দূরে থাক, এই বুদ্ধিজীবিদের অনেকেই বঙ্গবন্ধু নামটি মুখে উচ্চারন করতে কুন্ঠা বোধ এবং শেখ মুজিব সম্বোধনেই বেশি স্বস্তি বোধ করেন । তাদের ভয় থাকে একটাই যাতে গায়ে বিশেষ শিবিরের সিল না লেগে যায় । এছাড়া আওয়ামীলীগ বা সরকারের সমালোচনা এবং বিরোধী দলের অযৌক্তিক দাবির পক্ষে দ্রুত অবস্থান নিয়ে একজোট হয়ে সর্বত্র কথা বলে জনমতকে প্রভাবিত করার এদের একটা অপচেস্টা এখন মোটা দাগে চোখে পড়ার মত একটি নৈমিত্তিক বিষয় বা রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদি দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল প্রসঙ্গে আলোকপাত করি তাহলে দেখা যাবে, হাজার মুনীর হাজার মত । তবে সব শেয়ালের এক রা এর মতই মুল কথা একটাই, বিরোধী দলের দাবিটিই যৌক্তিক । এ প্রসঙ্গে সংলাপ বিষয়ে একটি উদাহরন দেই । কদিন আগে চ্যানেল আই এ টক শো তৃতীয় মাত্রা দেখছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষক, এক সময় যে বিভাগের ছাত্র আমি নিজেও ছিলাম তাই, যাকে নিয়ে গর্ব বোধ করছিলাম , সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যাই বলি তার একটি মন্তব্য বা মুল্যায়নে আমি এতটাই হতাশ হই যে এই ধরনের বুদ্ধিজীবিদের কথা শোনার আগ্রহ এখন একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি । দুই নেত্রীর সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, যেহেতু খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাই তার মনের ভেতর ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসা তুষের আগুনের মত জ্বলছে এবং তা সহজে নেভার মত নয় । আর অপরদিকে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত ঘটনাটি শেখ হাসিনারও সহজে ভোলার কথা নয় । তাই দুই নেত্রীর মুখ দেখাদেখি এবং সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রধাণ বাধাই হলো এটি । আমি আশ্চর্য হলাম ! কি চমৎকার সরলিকরন ! কি অদ্ভুত সমীকরন এইসব নমস্য বুদ্ধিজীবিদের । যে নেত্রী প্রতিপক্ষ নির্মূলে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তার পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই। জাতির জনকের হত্যার সাথে যে দলের পূর্বসূরী কান্ডারী ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং খুনীদের করেছে পুরস্কৃত এবং যে দল সেই খুনীচক্র এবং স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব , গনতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিপক্ষে তৎপর থেকে জাতির সব অর্জনগুলোকে নস্যাত করার কাজে লিপ্ত – সেই বিষয়গুলো তার বিবেচনা এবং মুল্যায়নে স্থান পায়নি এতটুকু । বিবেচনায় আসেনি এই দলের ঐতিহাসিক সুমহান কীর্তি এবং বর্তমানের যুগান্তকারী ইতিবাচক অর্জন ও তার সহনশীল রাজনীতি যার উল্টো পথে সব সময় চলেছে বিএনপি । বিএনপির এসব সুকীর্তির কথা তারা কখনই উল্লেখ করেন না । যত দোষ নন্দঘোষ, তার জন্যে প্রকৃষ্ট উদাহরণ একমাত্র আওয়ামীলীগই । কেবল মাত্র বাড়ি উচ্ছেদের ঘটনা দিয়েই বিএনপি নামক দলটির সকল পৈশাচিক অপকর্ম জায়েজ করে দিলেন এই বুদ্ধিজীবি তার মুল্যায়নে ! পাড়া-গ্রামে একটা প্রবচন আছে, কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি । এই বুদ্ধিজীবির মূল্যায়নটাও হয়েছে ঠিক তেমনই।

এবার আসা যাক নির্বাচন প্রসঙ্গে । এই গুণী শিক্ষকের রয়েছে দেশে-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার একটি এনজিও সংস্থা । যিনি এ বিষয়ে একজন এক্সপার্ট । এ পর্যন্ত বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার সিংহ ভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধীদল বিএনপিই জয়লাভ করেছে। সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে—যেখানে তারা শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে সেক্ষেত্রে এবং এর আগের প্রতিটি নির্বাচনে দেখা গেছে বিএনপি তার স্বভাবসুলভ বিকৃত মিথ্যাচার করে বলেছে, ব্যাপক কারচুপির নির্বাচনের নীল নকশা সরকার আগে থেকেই করে রেখেছে। ফলাফলও সরকার নির্ধারণ করে রেখেছে । কিন্তু বিএনপির সুরের সাথে সুর মিলিয়ে তথাকথিত সুশীল সমাজও পক্ষপাতমূলক নেতিবাচক পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছিল এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার বিষয়ে উভয় পক্ষ (বিএনপি এবং সুশীল) একযোগে যে মনগড়া আশংকা প্রচার করছিল তার কোনোটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি । এমনকি জয়লাভের পরেও বিএনপি তার বদ খাসলত অনুযায়ী বার বারই বলেছে সরকার ব্যাপক কারচুপি করেও বিএনপির বিজয় ঠেকাতে পারেনি । সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন আসে , এইসব নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সুশীলবেশধারী বুদ্ধিজীবি এবং গায়ে সিলমারা শ্রেনীবদ্ধ সুশীলরা একবারও ভুল করে বলছেন না , বিএনপির আমলে বিপন্ন হওয়া প্রশাসন এবং সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (যেমন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ) সাংবিধানিক নিয়ম- শৃঙ্খলার প্রবর্তন এবং সেগুলোকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর এবং শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলার যে কাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার করে যাচ্ছে তার ইতিবাচক ফল ও সুদুরপ্রসারী প্রভাবের কথা । এখনও তারা বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের পক্ষেই তুলছেন সোচ্চার আওয়াজ । অথচ এই বিএনপিই নজিরবিহীন অপকর্মের মধ্য দিয়ে ধ্বংস ও কালিমালিপ্ত করেছিল এই ব্যবস্থাকে । এটা বেমালুম ভুলে গিয়ে আবারও সেই অগণতান্ত্রিক ও পরিত্যক্ত ব্যবস্থাকেই পুনর্বহালের জন্যে প্রাণপাত করছেন আমাদের সুশীল গণতন্ত্রীরা । এই লেখা যখন লিখছি তখন টিভির খবরে ড, কামাল হোসেনের দাবি শুনছি , আরো দুই টার্মের জন্যে এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে । কি অদ্ভুত আমাদের পরম পুজনীয় সংবিধানের জন্মদাতা গণতন্ত্রীদের কথা । মুখেই গণতন্ত্রের কথা, আবার চিরাচরিত গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা মোতাবেক দেশ পরিচালনার নিয়ম প্রবর্তনে তাদের বিরোধিতা । সত্যিই সেলুকাস ! বিচিত্র এ দেশ, বিচিত্র তার বুদ্ধিজীবি ।

এখন আসি শেষ কথায় । ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার যদি শেষমেশ বিরোধী পক্ষের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি মেনেও নেয় , সেক্ষেত্রেও মানি না, মানবো না রোগে আক্রান্ত বিএনপি বাধিয়ে বসবে আরেক ফ্যাকরা । তারা বহু আগেই ঘোষণা দিয়েছে , তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধাণ যিনি হবেন বা নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খায়রুল হকের হবার কথা, তাকে তারা মানবেন না । কারণ তিনি নাকি আওয়ামীলীগের ঘুষ খাওয়া লোক । অর্থাৎ আওয়ামী ঘরানার আজ্ঞাবাহী লোক । বদ স্বভাবি বিএনপির এই অপবাদে সম্মানহানি বোধ করে বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে যাবার আগেই স্বগতচিত্তে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন তার তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধাণ হবার কোনো খায়েশ কখনই ছিল না এবং সুযোগ এলেও তা তিনি গ্রহণ করবেন না । যিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায় দিয়ে গেছেন । সুতরাং আওয়ামীলীগের জন্যে বিএনপি হয়েছে শাঁখের করাত । যাইতেও কাটে, আসতেও কাটে । অতএব উপায় নেই । শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগ নির্ধারিত নিজস্ব অবস্থানেই অনড় থাকুক । সারা বিশ্ব দেখুক বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ দলীয় সরকারের অধীনে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য , সুষ্ঠু , শান্তিপূর্ণ ও অবাধ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব । যা সবার কাছেই হবে একটি উল্লেখযোগ্য অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত ।

স্টকহোল্ম, ২০১৩, ০৯,০৭

Thursday, September 5, 2013

দুই দেশের নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থেই ছিটমহল বিনিময় : ভারতের গণমাধ্যম সোচ্চার:সুমি খান



৫১ হাজার ৫৪৯ জন ‘নাই’ দেশের নাগরিক ছিটমহলবাসী। এরা প্রত্যেকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে বিশ্ববাসী এক। মঙ্গলবার রাতে এনডিটিভি তে একটি টক শো তে উঠে আসে বাংলাদেশের সাথে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন এবং তিস্তা চুক্তি ।প্রশ্ন তোলা হয়, রাজনৈতিক হঠকারীতার কাছে খারতের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু কিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ১৯৭৫ সালে হত্যা করার কারণে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়কার আর্দশ থেকে সরে গিয়েছিল। এই ব্যবস্থা অনেকদিন চলেছে। ছিটমহলে পাকিস্তান আমলে ১৯৫১ ও ১৯৬১ সালে জনগণনা করা হয়েছিলো। এর দীর্ঘদিন পর মনমোহন- হাসিনার ২০১১ সালের চুক্তি ছিটবাসীদের আশাবাদী করেছে।
এই নিরীহ মানুষগুলোর জন্যে ও কথা বলতে হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের সচেতন নাগরিকদের। সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে এদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং নিরাপত্তাহীনতা ভারত বাংলাদেশ দুই দেশকেই চরম হুমকির মুখে রেখেছে। এই বাস্তবতা দুই দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।
ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিক হলেও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না । নেই তাঁদের ভোটার পরিচয়পত্র।একই চিত্র বাংলাদেশে থাকা ভারতের ছিটমহলেও। ছিটমহলবাসীর পরগাছা হিসেবে নিজেদের নাম-পরিচয় লুকিয়ে বাস করতে হচ্ছে ।
ভারতীয় ছিটমহল বা বাংলাদেশের ছিটমহলের প্রকৃত বসবাসকারীরা এখন আর নেই। বাংলাদেশি ছিটমহলে ভারতীয় আর ভারতীয় ছিটমহলে বাংলাদেশিরাই বর্তমানে বসবাস করেন। এটি একটি জটিল সমস্যা। ছিটমহল বিনিময় হলে ভারতের ১০ হাজার একর জমি বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে হবে। ভারতের সংবিধান অনুসারে জমি নেয়া যেতে পারে কিন্তু দেওয়া যায় না। এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখানেই তৃণমূল নেত্রী মমতা এবং ভারতীয় উগ্র মৌলবাদী সংগঠন বিজেপির আপত্তি।
বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে এবং ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার ভারত ভূখণ্ডে রয়েছে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। এর মধ্যে ৪৮টি কোচবিহার জেলায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রয়েছে ভারতের ১১১টি ছিটমহল। ১৯১১ সালের ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উভয় দেশের যৌথ আদমশুমারী অনুযায়ী, ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে রয়েছে ১৪ হাজার ২১৫ জন নাগরিক বাস করছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ভারতীয় নাগরিক ( নাগরিকত্ব না থাকলেও জন্মসূত্রে নাগরিক)।
আইন মোতাবেক ভারতের ভূখণ্ডে বসবাসকারী ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা বাংলাদেশি আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১১১টি ছিটমহলে বসবাসকারীরা ভারতীয় । ভারত-বাংলাদেশ –দুই দেশের নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থেই ছিটমহল বাসীর নাগরিকত্ব দেবার সময় এসেছে।
আর কতোকাল প্রতিহিংসার রাজনীতির বলি হতে হবে নিরীহ মানুষকে? ছিটমহলের ‘নাইদেশের নাগরিক’দের মানবেতর জীবনের জন্যে দায়ী রাজনীতিকদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সময় এসে গেছে। ছিটমহল বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক অধিকারকে সুরক্ষিত করা এবং তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবিতে বিশিষ্ট আইনজীবী অনির্বাণ দাস কোলকাতা হাইকোর্টে গত সোমবার ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন ।
বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার ছিটমহল বিনিময়ের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে রাজি থাকলেও বাদ সাধেন ভারতের আসাম রাজ্যের দুই বিজেপি সাংসদ আর পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল নেত্রী মমতার দাবি , এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।‘নিজেদের স্বার্থ’ বিসর্জন (?) দিয়ে কোনো বিনিময় চুক্তি হতে দেবেন না তিনি।মুখ থুবড়ে পড়ে ছিটমহল বিনিময়-প্রক্রিয়া।এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছিটমহলজুড়ে। ছিটমহল বিনিময়ের দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে ।
মমতা কদিন আগে হঠাৎ বলেন, “ছিটমহলবাসী চাইলে ছিটমহল বিনিময় হবে”। অথচ ১৯৯৪ সাল থেকে ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলবাসী অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন সহ নানান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। মমতা এসব না জানার ভান করলেন। মমতার এই বক্তব্যকে খণ্ডন করেছেন ছিটমহলবাসী।ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত আমাকে বলেছেন, ‘ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে দুই দেশেই আন্দোলন করছি। আমরা চাইছি, ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিটমহল বিনিময় হোক। এতে ছিটমহলের বাসিন্দারা একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক হয়ে বাস করতে পারবে। এটা তাদের মৌলিক অধিকার ।’
সম্প্রতি ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেশ করতে দেয়া হয় নি। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি র আসামের দুই সাংসদ আপত্তি করেছে।বিলটি লোকসভায় উথ্থাপন করা যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয় ছিটমহলবাসী। জ্বলছে তাঁদের মনে ক্ষোভের আগুন। তাঁরা ক্ষুব্ধ হন মমতার বিরুদ্ধে।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক জানান, ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল যদি সংসদে না ওঠে, তবে তাঁরা মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের পথে যাবেন। মামলা করবেন উচ্চ আদালতে।
নাগরিকত্ব না থাকার কারণে ছিটমহলের মেয়েদের বিয়ে হয় না। কোনো সন্তানসম্ভবা মা তার সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন না। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নেই। এ কারণে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে এই বাসিন্দারা যা এড়াতে পারে না দু’দেশ ।
এই ছিটমহল বিনিময় না হওয়ার ফলে দুদেশের সরকার যে রাজস্ব বা বিভিন্ন প্রকারের কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার হিসেব কে করবে? এই সুযোগে একদল অসাধু লোক ছিটের বাইরের লোকেদের সাহায্যে ভয় দেখিয়ে জোর করে নামমাত্র মূল্যে ছিটমহলের নামে স্ট্যাম্প পেপার তৈরি করে জমি -বাড়ি রেজিস্ট্রি করাচ্ছে। এই খবর প্রথম বাংলানিউজে প্রকাশ হবার পর ছিটমহলের নিরীহ বাসিন্দাদের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয়।
আগেই বলেছি, নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ নেই বলে বাংলাদেশের নাগরিকেরা থাকছেন ভারতের ছিটমহলে ।পরদেশে পরগাছা হিসেবে বাস করছেন তারা । ছিটমহলের ঠিকানা বদলিয়ে ভারতের কোনো ঠিকানা ব্যবহার করে ছেলেমেয়েদের ভারতীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন,দিনমজুরের কাজ করতে হচ্ছে । ভারতের এলাকায় ভুয়া ঠিকানা দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ।সন্তান প্রসবের সময় মায়েদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে ভারতের ঠিকানা দিয়ে ।
এমন ই মানবেতর জীবন যাপন করছে ছিটমহলের নিরীহ মানুষ গুলো। এই মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি চান তারা। বাস করতে চান একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে। সুযোগ-সুবিধাও চান সেই দেশের।বাংলাদেশ তাঁদের গ্রহণ না করলে তাঁরা ভারতের মাটিতেই থাকতে চান। তাই তাঁরা ছিটমহল বিনিময়ের দাবি তুলেছেন ।
আমার বিশ্বাস ,মানবতার প্রতি সম্মান করে যে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই দাবির সাথে একাত্মতা জানাবেন। কারণ, ২০১৩ সালে এসে বিশ্বের কোন প্রান্তে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক থাকবে-এটা মেনে নেয়া যায় না।
ছিটমহল বিনিময়ের অযৌক্তিক বিরোধিতা ছিটমহলবাসীর জটিল সংকট নিরসনের প্রতিবন্ধক ।তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঠেকিয়ে দেবার কারণে মমতা-বিজেপি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই ছিটমহলবাসী ক্ষুব্ধ ।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিটমহল বিনিময়ে দুই দেশ রাজি হলে ছিটমহল বিনিময়ের কয়েক দশকের আন্দোলন সফলতার পথ উন্মুক্ত হয়। সেই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয় উভয় দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবার আমন্ত্রণ জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সফরের তিনদিন আগে মমতা হঠাৎ বাংলাদেশ সফর বাতিল করেন । আপত্তি তোলেন ছিটমহল বিনিময়ের বিরুদ্ধে। স্থগিত হয়ে যায় ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া।
তবে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যাতে দুই দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তবু তখন ছিটমহল বিনিময় নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
সম্প্রতি একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, দৈর্ঘ্যে তিন কিলোমিটার আর প্রস্থে পৌনে তিন কিলোমিটার ভারতের বাত্রিগাছ ছিটমহল। এখানে বাংলাদেশের অন্তত ৫০০টি পরিবার বাস করে। ছিটমহলবাসী আজাদ হোসেন, জয়নাল মিয়া, মোহাম্মদ আলী, বকুল মিয়া ও কল্পনাথ রায় হতাশ , ক্ষুব্ধ স্বরে সাংবাদিকদের বলেছেন, “লুকোচুরি খেলে তো জীবনটা শেষ হয়ে গেল। এভাবে আর বাঁচা যায় না।এবার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে তাঁদের বেঁচে থাকার জন্য দিতে হবে ছিটমহল বিনিময়ের সুযোগ”। হচ্ছে না। এবার এই মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি চাইছেন তারা। আকুল আবেদন করেছেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে। তারা যেন ছিটমহল বিনিময়ের দাবির পাশে এসে দাঁড়ান।
তিনবিঘা করিডোরে চুক্তির সময় বলা হয়েছিল এবার ছিটমহল বিনিময় হবে। আইনি জটিলতার কারণে কখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।২০১০ সালে ভারতের জনগণনার সময় কোচবিহারের জেলাশাসক বলেছিলেন আমার জেলায় গণনা করতে গেলে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য লাগবে। কারণ বাংলাদেশী ছিটমহল এই জেলায় রয়েছে। তাদের প্রশ্ন তাহলে এই এলাকায় ভারতের সার্বভৌমত্ব কোথায় আছে? ছিটমহলবাসী প্রশ্ন তুলেন, গোয়া, সিকিম যদি ভারতের অর্ন্তভুক্ত হতে পারে তাহলে কেন ছিটমহল বিনিময় হচ্ছে না?
বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার কে বিস্তারিত সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সঠিক ভাবে জানতে হবে ছিটমহলের বাসিন্দারা কে কোথায় যেতে চান।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ছিটমহলগুলো ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক পাচারের কেন্দ্র । সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, কোচবিহার জেলার বাংলাদেশি ছিটমহলে প্রায় ১৬ কোটি রুপির গাঁজা নষ্ট করা হয়েছে ২০১২ সালে। জেলাপ্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত গাঁজার অর্ধেক নষ্ট করা যায়নি। কেন সেসব রেখে দেয়া হয়েছে-বা কোথায় সেসব –তা বিস্তারিত আসেনি কোন সংবাদমাধ্যমে।
বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে ৩৭ হাজার ৩২৯ জন বাস করেন। ছিটমহল বিনিময়ের পরে তার মধ্যে মাত্র ৭৪৩ জন ভারতে আসতে চান -এটা জরিপের তথ্য। ২০১২ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিটমহল সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় মনসুর আলি মিঞা বলেন, “আমি আজ যেভাবে এখানে এসেছি, তা রাষ্ট্রের ভাষায় অবৈধ। কারণ আমি খাতা-কলমে বাংলাদেশের বাসিন্দা। কিন্তু আমার বাংলাদেশের কোনো পরিচয়পত্র নেই। আমার জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। বাংলাদেশে গিয়ে আমি শরণার্থী হতে চাই না। আমি জন্মেছি ভারতে। ভারতেই মরতে চাই। একই ভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ছিটের বাসিন্দারাও তাই চান। একজন মুসলিম হয়ে আমার ইচ্ছা ছিল হজ্বে যাওয়া। সেই অধিকার আমার নেই ।” তিনি প্রশ্ন করেন, “আমার মতো অনেকেই হজ্বে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কি মানবাধিকার হরণের মধ্যে পড়ে না?”
৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে এনডিটিভিতে সম্প্রচারিত এক মুক্ত আলোচনায় বিজেপির মুখপাত্র তরুণ বিজয় স্বীকার করেন, ভারতের ‘জাতীয় স্বার্থেই’ বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে ভারতীয় পার্লামেন্টের বিরোধী দল বিজেপি তাদের শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে মনে হচ্ছে।যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ও আসাম গণ পরিষদ এখনো বিরোধিতা করে যাচ্ছে।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হলে রাজ্যসভা ও লোকসভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, যা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ তিন দফা বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও দুইবার বিজেপি ও আসাম গণ পরিষদ এবং একবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। মমতার ভূমিকা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভ্রান্তি হিসেবে উল্লেখ করে মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করা হয় এই টক শো তে।
টিভি টক শোতে বিজয় বলেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রশমনে সাড়া দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষকে ‘সঠিক বার্তাটি’ পৌঁছে দিতে’ ভারতেরও উচিৎ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে সই করা।
পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বরুণ গান্ধীও গত মাসে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন।
তবে এনডিটিভির টক শোতে বিজয় আবারো বলেছেন, মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের উচিৎ ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি করার আগে বিরোধী দলের মতামত নেয়া। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ চুক্তির বিষয়ে যে উদ্বেগের কথা বলে আসছেন, তাও কেন্দ্র সরকারের আমলে নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন এই বিজেপি নেতা।তবে তৃণমূল সাংসদ স্বাগত রায় এই চুক্তির চরম বিরোধিতা করে এই চুক্তির পক্ষাবলম্বীদের সমালোচনা করেন। এই টক শোতে তিনি দাবি করেন এই চুক্তি হলে ভারত ছিটমহলের ১১ হাজার একর জমি হারাবে। এটা কোনভাবেই হতে দেয়া যায় না। একই সাথে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনা কে আবারো নির্বাচিত করার জন্যে অনেকে এই চুক্তি করতে চায়, যা ভারতের দায়িত্ব নয়। তার মতে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যেই আসুক- তাদের সঙ্গেই দর কষাকষির জন্য প্রস্তুত হতে হবে ভারতকে।
কংগ্রেসের মন্ত্রী শশী থারুর ও বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি এ চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে জোরালো মত দেন।শশী থারুর বলেন, “ঢাকা আমাদের বড় বন্ধু। এখন আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার রাখতে না পারলে তা হবে একটি বিপর্যয়।”
বীণা সিক্রি বলেন, “ অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী। ভারত যদি বিশ্বের কাছে গুরুত্ব আশা করে, তাহলে কোনো দেশের সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়নের সামর্থ্য তার থাকা উচিৎ।”স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ভূমি হারাবে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল ও আসাম গণ পরিষদ করে আসছে, তাও নাকচ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
শশী থারুর ও বীণা সিক্রির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রবীণ সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, পররাষ্ট্রনীতি যদি পাকিস্তানের মতো রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়-সেটা ভয়ংকর বিপর্যয়। ভারতের ভবিষ্যত এর পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগযোগের ওপর অনেকটা জড়িত। আর এ দুটো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা দিয়ে আসছে।তার মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। আর সম্পর্ক উল্টে গেলে ক্ষতিও হবে একই মাত্রার। তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেন , খালেদা জিয়ারশাসনামলের শুরুতেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়ে যায়। বাংলাদেশে উলফার ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার সহ বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবাধ তৎপরতা ভয়ংকর পর্যায়ে যায়। তারেক জিয়া দুবাইতে দাউদ ইব্রাহিমের সাথে দেখা করেন- জঙ্গী সংগঠকদের সাথে তার সম্পৃক্ততা ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্যে উদ্ঘাটন হয়েছে । সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে হাসিনার শাসন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের জন্যে নিরাপদ। কারণ , শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সুবীর ভৌমিক আরো বলেন, “১১ হাজার একর বা কতো জমি-সেটা অতো জরুরী নয়, যতোটা জরুরী এই মুহুর্তে দিল্লীর অনুধাবন করা খালেদা চরম সাম্প্রদায়িক শক্তি জামাতের সাথে জোট করেন- যারা জঙ্গীবাদের সাথে যুক্ত। যারা সংখ্যালঘু নির্যাতন করে।”আলোচনার এই পর্যায়ে বিজেপি নেতা তরুণ বিজয় বলেন, “আমি সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে একমত।”
আলোচকদের অধিকাংশই চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দেয়ায় একপ্রকার কোনঠাসা স্বাগত রায় ‘কূটনৈতিক কৌশলের’ আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী হিসাবে শশী থারুরের এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যাতে মনে হয় যে দিল্লি ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জবাবে স্বভাবসুলভ রসিকতার সুরে শশী বলেন, “কার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হবে- মিস্টার রায় এবং তার নেত্রী (মমতা) কি তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান? তারা কি ভাবছেন যে ,কে আমার বন্ধু আর কে তা নয়- এটা বোঝার মতো বুদ্ধিও আমার নেই?”
এই টক শো দেখে ছিটমহল বাসীর মনে অন্তত আশা জাগবে তাদের দাবি এবার নীতিনির্ধারকদের নজরে আসবে। উচ্চ আদালত অথবা গণমাধ্যম – সকল প্রচেষ্টা সফল করে ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব এবং মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকার সচেষ্ট হবে এমন আশা করছে ৫১ হাজার ৫৪৯ জন ‘নাই’ দেশের নাগরিক ছিটমহলবাসী।
sumikhan29bdj@gmail.com

রাষ্ট্র-পুনর্বার ভাবো, মৌলবাদীরাই তোমার ক্যান্সার:মারুফ রসূল


চারপাশে নানা কিছু চলছে। নানা সংবাদের বাতাবরণে মুখর এখন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। সন্দেহ নেই, এগুলো প্রয়োজনেই হচ্ছে।
‘প্রয়োজন’ শব্দটি বড়ই আপেক্ষিক, নানা স্তরে-উপস্তরে তার গ্রহণযোগ্যতার গ্রাফ উঠানামা করে। এখন সময়টি বড়ো নচ্ছাড়। স্বীকার করতেই হবে, তীব্র একটি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা জাতীয় জীবন।
বিশ্বায়নবাদীরা যদি ‘জাতীয় জীবন’কে অস্বীকার করতে চান, তবে তাদেরও বলি- আন্তর্জাতিক জীবনেও অস্থিরতা দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এই স্থির-অস্থিরের দৌড়োদৌড়িতে চাপা পড়ে যাচ্ছে অনেক খবর, কিংবা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে না, যতোটা হওয়া উচিত ছিলো।
যৌনপল্লী উচ্ছেদের নানামুখী মহড়া আমরা লক্ষ্য করছি বেশ কয়েকদিন ধরে। হঠাৎ করে এমন একটি ঘটনা কেনো ঘটছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না, বা আমার মতো নগণ্য মানুষের মেধায় তা কুলোচ্ছে না।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ভয়ানক দুর্দিন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এটা কেবল এজন্য নয় যে, যৌনকর্মীদের আহত করে জোর করে উচ্ছেদের মাধ্যমে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, মাদারীপুরের যৌনপল্লী উচ্ছেদে কিন্তু অমান্য করা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ও। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ‘ইসলামে কওম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনটির জন্ম, বেড়ে ওঠা কিংবা দর্শন- নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু এরা যে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করলো, হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করলো, সে বিষয়ে আমার মাথাব্যাথা হবার ঢের কারণ আছে; কেননা, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনকে কে বা কারা বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, কোন দর্শনের ছুতোয় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি কটাক্ষ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে, তথাকথিত ‘বাংলা ভাই’ থেকে প্রায় সব ধরনের মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ইতিহাস দেখলেই তা বোঝা যায়।
এরা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, বিভ্রান্ত করছে সাধারণ মানুষকে এবং দিনের শেষে মানুষের অধিকারের বুকে পদাঘাত করে ন্যায় ও শান্তির মিথ্যা বুলি আওড়াচ্ছে। এরা মৌলবাদী, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী; অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত যাদের অর্থনীতিকে একটি ত্রিভুজের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন এবং সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুটি আর কেউ নয়, যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলাম ও তাদের পঙ্গপাল দোসররা।
মাদারীপুরে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাকে বিচ্ছিন্ন কিংবা সামান্য ঘটনা ভাবা হবে নিতান্ত একটি বোকামি। একটি দল, যাদের নাম ‘ইসলামে কওম পরিষদ’, তাদের কী এখতিয়ার আছে এ কাজটি করার? এরা কারা? এই যে মৌলবাদীদের আষ্ফালন, উদ্ধত আচরণ, এর মূলে কারণটা কী? এর কারণ খুব পরিষ্কার।
প্রথমত, রাষ্ট্র মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, এবং সেটা করেছে সে ঐতিহাসিকভাবেই। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনারত রাজনৈতিক দলগুলো এসব মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়েছে কেবল ভোটের রাজনীতিতে টিকে যাবার জন্য। মাঝখান থেকে খেসারত দিয়েছে সমাজ; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণ-বৈষম্যমুক্ত সমাজের স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি আতঙ্ক সমাজ, যেখানে জামায়াত-আতঙ্ক, শিবির-আতঙ্ক, হেফাজত-আতঙ্ক মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়। শুরু থেকেই এদের দমনে রাষ্ট্রের সক্রিয় হওয়া উচিত ছিলো, কিন্তু রাষ্ট্রের শীতনিদ্রা ভাঙে দেরিতে; আফসোস, মাদারীপুরে ততোক্ষণে লুট হয়ে যায় আমার বোনের সমস্ত সঞ্চয়।
এটা হয়তো সবাই একবাক্যেই মানবেন যে, কেউ যৌনকর্মী হয়ে জন্ম নেন না। আজ যাদের উপর অন্যায়ভাবে খড়গহস্ত চালিয়ে, মধ্যযুগীয় কায়দায় উচ্ছেদের বর্বরতা দেখানো হলো, তারা জন্মেছেন আমাদেরই দেশে, আমাদের কারো পরিবারেই। এরপর সমাজের চোরাগলিতে কতোটা পথ হারিয়ে আজ তারা জীবনের এ জটিল চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছেন, সে বিশ্লেষণটা না হয় সমাজবিজ্ঞানীরাই করবেন। কিন্তু তাঁদের এ জীবনের জন্য রাষ্ট্র কী দায়ী নয়? রাষ্ট্র কী পারবে এই নারীদের চোখের জলের দায় এড়াতে? রাষ্ট্র ও সমাজের যুগপৎ প্রতারণায় প্রতারিত হয়ে যে নারীরা খুঁজে নিয়েছে নিজস্ব জীবনের ব্যাকরণ, নিজের বেঁচে থাকার অবলম্বন, তাকে কীসের ভিত্তিতে উচ্ছেদ করবে রাষ্ট্র? কার পাপ ঢাকতে? কার লাম্পট্য রাষ্ট্রকে বড়ো বেশি বিব্রত করে তুলেছে? কেনো এই প্রসঙ্গ এলে হেফাজতের নেতা আবদুল আউয়াল ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমানের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না?
এসব উত্তর কে দেবে? বারো বছর আগে নারায়নগঞ্জে যাকে ‘পাপ’ বলে উচ্ছেদ করেছিলো রাষ্ট্র, বারো বছর পর মাদারীপুরেও তাকে ‘পাপ’ হিসেবেই দেখছে। অর্থাৎ, আহ্নিক গতি-বার্ষিক গতি বদলালেও রাষ্ট্রের কপট মানসিকতা বদলায়নি।
এবার কয়েকটি সোজা কথায় আসা যাক। সহজ কথা যেমন সহজে বলা যায় না, তেমনি সোজা কথাও সোজা করে বলা যায় না। যদি কোনো দল নিজেদের ‘ইসলামি’ দল বলে পরিচয় দেয়, তবে তার কাজ হলো ধর্ম প্রচার করা কিংবা ধর্মের যে অমোঘ বাণী, তা নিয়ে কাজ করা। কিন্তু বাংলাদেশে যারা ইসলামি দল বলে নিজেদের পরিচয় দেয়, তাদের মূল আকর্ষণটাই থাকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে একটি ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রণয়ন করা। একাত্তর-পূর্ব সময় থেকেই এ বিষয়টি লক্ষ্যণীয়, এমনকি বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, তার মূলেও ছিলো এসব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলাম এবং তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির) ধর্মের নামে বাংলাদেশ বিরোধী বর্বরতা চালিয়েছে, পাকিস্তানি হায়েনাদের সঙ্গে লাম্পট্যের কূটনীতি চালিয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও দেখা গেছে, যতোগুলো ধ্বংসযজ্ঞ, অমানবিকতা ও বিভৎস বর্বরতা ঘটেছে, তার অধিকাংশের মূলেই ছিলো কোনো না কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বা ধর্মাশ্রিত দল। এখানেই মূল খটকা। ধর্ম শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলে, কিন্তু সে-ই ধর্মের আওয়াজ তুলে যৌনপল্লী উচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটিয়ে, তাতে লুটপাট করে কী বোঝাতে চায় তারা? আমরা কয়েক মাস আগেই দেখেছি হেফাজতে ইসলাম নামে একটি মধ্যযুগীয় সংগঠন জামায়াত-বিএনপি’র প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার শাপলা চত্বরে কী অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তারপর ভাড়াটে প্রচারযন্ত্র দিয়ে তাকে জায়েজ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
এর আগে এদেরই কিছু মুর্খ পালের গোদা নারায়ণগঞ্জের যৌনপল্লী উচ্ছেদে জিহাদী ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো কি আদৌ ধর্ম প্রচারে বা ধর্মের কোনো কারণে? যে সূফীবাদের হাত ধরে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে, তাঁদের তো কখনও এমন ধ্বংসযজ্ঞ করতে দেখিনি। এই মদদপুষ্ট ইসলামি দলগুলো তবে কোন হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই কাজে নেমেছে? তারা যাকে অন্যায় বলছে, সেটা আদৌ অন্যায় কি না, সেটার বিষয়ে কোনো আলোচনা কি হচ্ছে? হচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন হলো, এতো সাহস তারা কোথায় পায়? আমি সোজা বাংলায় যা বুঝি, তা হলো- রাষ্ট্রের নির্লজ্জ প্রশ্রয়ের কারণেই এরা এতোটা বাড় বেড়েছ। হাইকোর্ট যৌনপল্লী উচ্ছেদে সময় বেঁধে দিয়েছে, এটা কোনো সভ্যতার মাঝে পড়ে না; কারণ এই উচ্ছেদেই সব সমস্যা চুকেবুকে যাবে না। আর মাননীয় আদালত কী বলবেন- পুরুষের মগজের ভেতরে যে পাপ-লাম্পট্য নষ্ট পুঁজের মতো অবস্থান করছে, তার বিরুদ্ধে রায় দেবার কিংবা না ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া সম্ভব কি না?
মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষগুলো চারপাশে ভয়ানকভাবে বেড়ে উঠছে। এদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানবিক বাঙলাদেশ। রাজনৈতিক দলগুলো যদি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ না হয়, ভুঁইফোড় মৌলবাদীদের প্রতিহত না করে; যদি এখনও ভোটের হিসেবে নির্ধারণ করে তাদের মৌলবাদঘেঁষা ভবিষ্যৎ কর্মপরিধি, তবে একদিন নমিনেশন দেবার জন্য যোগ্য-আদর্শিক নেতা খুঁজে পাবেন না। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমানের মতো নেতারা আমার এই বক্তব্যের ট্র্যাজিক উদাহরণ।
মারুফ রসূল: সাহিত্যিক ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী,

Sunday, September 1, 2013

এই লজ্জা কোথায় রাখি: মুহম্মদ জাফর ইকবাল


১.
কাক কাকের গোশত খায় না- কিন্তু এবারে মনে হয় একটু খেতেই হবে। আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে আমি সাধারণত অন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করি না। কিন্তু এবারে মনে হয় করতেই হবে।

আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি। আমার মতোন শিক্ষকরা সেই ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলরকে তার অফিসে আটকে রেখেছেন। খবরে জেনেছি এই মুহূর্তে দয়া করে পনেরো দিনের জন্যে দম নেওয়া হচ্ছে। তারপর সম্ভবত আবার নব উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া হবে।

আগেই বলে রাখি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং তার শিক্ষকদের ভিতর কী সমস্যা সেটা আমি অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারছি না। শিক্ষকরা বলছেন তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। ভাইস চ্যান্সেলর বলছেন তদন্ত কমিটি করে সেই অভিযোগ যাচাই করা হোক। তারপরেও সেখানে শিক্ষকরা কেন তাদের ভাইস চ্যান্সেলরকে আটকে রেখেছেন সেটা আমার মোটা বুদ্ধিতে ধরতে পারছি না। পত্রপত্রিকার লেখালেখি থেকে বোঝার চেষ্টা করছি কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

আমাদের দেশে লেখালেখির একটা নতুন স্টাইল শুরু হয়েছে। সবারই একটা নিরপেক্ষতার ভান করতে হবে। তাই কেউ যদি গুরুতর অন্যায়ও করে সোজাসুজি স্পষ্ট করে কেউ লেখে না। ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে গা বাঁচিয়ে লেখে- যেন কেউ কিছু বলতে না পারে। আজকাল পত্রপত্রিকায় ইলেকট্রনিক ভার্সন রয়েছে। সেখানে কোনো লেখা ছাপা হলে তার লেজে পাঠক আবার ভুল বানান এবং অমার্জিত ভাষায় যা কিছু লিখতে পারে! সবাই ভয়ে ভয়ে লেখে, কার আর সত্যি কথা বলে গালমন্দ খেতে ভালো লাগে? আমি অবশ্যি ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে দুর্বোধ্যভাবে কিছু বলার চেষ্টা করছি না- একেবারে সোজাসুজি বলছি, একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে তার অফিসে দিনের পর দিন আটকে রাখা খুব বড় একটা অন্যায় কাজ। কথাটা আরেকটু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, মানুষটি একজন ভাইস চ্যান্সেলর না হয়ে যদি একজন জুনিয়র লেকচারার কিংবা একজন অপরিচিত ছাত্রও হতো, তাকেও একটা ঘরের মাঝে আটকে রাখা গুরুতর একটি অন্যায়।

স্বাধীন একটা দেশে কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা ঘরে জোর করে আটকে রাখা যায় না। আমি আইনের মানুষ নই। কিন্তু আমার ধারণা দেশের আইনে এটা নিশ্চয়ই একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকরা এ কাজটি করছেন আমার এ লেখাটি তাদের চোখে পড়বে কিনা আমি জানি না। যদি পড়ে তাহলে তাদের প্রতি আমার একটা ছোট অনুরোধ। ঘরে তাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই কমবয়সী ছেলেমেয়ে আছে। পনেরো দিন পর তারা আবার যখন তাদের ভাইস চ্যান্সেলরকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে ফেলবেন, তখন তারা রাতে বাসায় ফিরে গিয়ে তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে নিচের এই বাক্যালাপগুলো করবেন!

তারা তাদের ছেলেমেয়েদের বলবেন, ‘বাবা, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একটা বিশাল কাজ করে এসেছি!’ ছেলেমেয়েরা তখন বলবে, ‘কী কাজ বাবা (কিংবা কী কাজ মা?)’ তখন তারা বলবেন, ‘আমাদের একজন ভাইস চ্যান্সেলর আছেন, তাকে আমরা দু’চোখে দেখতে পারিনা। তাই তাকে আমরা তার অফিসে আটকে রেখেছি। সেখান থেকে তাকে আমরা বের হতে দিই না।’

আমি ছোট বাচ্চাদের যেটুকু জানি তাতে আমার ধারণা তখন তারা চোখ বড় বড় করে বলবে, ‘বের হতে দাও না?’
‘হ্যাঁ, জেলখানায় যেরকম কেউ বের হতে পারে না, সেরকম। তাকে আমরা অফিস থেকে বের হতে দিই না। জেলখানার মতো আটকে রেখেছি।’

বাক্যালাপের এরকম পর্যায়ে শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘তোমাদের ভাইস চ্যান্সেলরের ছেলেমেয়ে নেই? তারা কী বলে?’

‘তাদের আবার বলার কী আছে? একটা মেয়ে শুনেছি লেখাপড়া করতে বিদেশে গিয়েছে। তাকেও বিদায় জানাতে আমরা ভাইস চ্যান্সেলরকে এয়ারপোর্টে যেতে দেইনি।’

বাচ্চাগুলো তখন নিশ্চয়ই শুকনো মুখে তাদের বাবা কিংবা মায়ের মুখের দিকে তাকাবে, চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করবে, ‘সত্যি?’

শিক্ষকরা তখন বলবেন, ‘হ্যাঁ। উচিৎ শিক্ষা হচ্ছে। তোমরা যখন বড় হবে তখন তোমাদের যদি মানুষকে অপছন্দ হয় তাহলে তোমরাও তাকে এভাবে একটা ঘরে আটকে ফেলবে। বের হতে দেবে না!’

আমার ধারণা শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা আলোচনার এই পর্যায়ে এক ধরনের আহত এবং আতংকিত দৃষ্টিতে তাদের বাবা (কিংবা মা) এর দিকে তাকিয়ে থাকবেন। আমার খুব জানার ইচ্ছে এবং আমি খুবই কৃতজ্ঞ হতাম যদি এই শিক্ষকদের কেউ আমাকে জানাতেন এই ধরনের একটা কথোপকথনের পর তাদের ছেলেমেয়েরা কী বলেছে।

২.
পৃথিবীর যেকোনো দেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্ভবত সেই দেশের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং গুণী মানুষ। সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবী, সবচেয়ে বড় মুক্তবুদ্ধিতে বিশ্বাসী মানুষ এবং সম্ভবত জাতির সবচেয়ে বড় বিবেক। তাই সাধারণ মানুষ যখন দেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বাধীন দেশের নাগরিককে জেলখানার মতো একটা ঘরে আটকে রাখছে তখন তারা নিশ্চয়ই হতবাক হয়ে যায়। সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়াটার নাম দেওয়া হচ্ছে ‘আন্দোলন’।

মনে হয় আন্দোলন বলা হলেই পুরো বিষয়টাকে ন্যায়সঙ্গত, প্রগতিশীল, সত্যের জন্যে সংগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই দেখা গেল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সংগ্রামী সকল নেতৃবৃন্দকে আলোচনার জন্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে গেলেন। অর্থাৎ কোনো একজন মানুষকে জোর করে একটা ঘরে আটকে রাখা হলে কাউকেই কোনো ধরনের আইনি ঝামেলায় পড়তে হয় না বরং দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তাদের নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সোজা কথায় এতো বড় একটা অনৈতিক এবং বেআইনি বিষয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে নৈতিক সমর্থন দেওয়া হয়।

এই দেশে বিষয়টা অবশ্য নতুন নয়। কাউকে জিম্মি করে কোনো একটা দাবি আদায় করে নেয়া এই দেশের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যারা ভদ্রতা করে এটা করে না তাদের মেরুদণ্ডহীন অপদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমি নিজের কানে এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষককে বলতে শুনেছি, ‘এমনিতে কাজ হবে না, গিয়ে ঘেরাও কর, রাস্তাঘাটে কিছু ভাংচুর কর তখন কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।’
তাই দাবি আদায়ের জন্যে কাউকে জিম্মি করে ফেলা যে একটি বেআইনি কিংবা অত্যন্ত অমানবিক কাজ হতে পারে সেটা কেউ মনে পর্যন্ত করে না।

শুধু যে দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী মহোদয় এই ধরনের বেআইনি কাজকে নিজের অজান্তেই গ্রহণযোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন তা নয়, আমাদের দেশের পত্রপত্রিকাও তাদের কাজকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। তারা দুই পক্ষকেই সমানভাবে নিজেদের বক্তব্য রাখতে দিচ্ছেন, পত্রিকার পাশাপাশি পৃষ্ঠায় তাদের বক্তব্য ছাপা হচ্ছে। আমি সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছি। সব কিছু যে বুঝতে পেরেছি সেটা দাবি করব না।

আমি বহুকাল থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি তাই একটা জিনিস জেনেছি, প্রকাশ্যে যে কথাগুলো বলা হয় সেগুলো সব সময় পুরো কথা নয়, আসল কথা নয়। প্রকাশ্য কথার পিছনে অপ্রকাশ্য কথা থাকে, গোপন এজেন্ডা থাকে অনেক সময় দেখা গেছে সেগুলোই মূল ব্যাপার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপরাধের ব্যাপারে কোনটা সত্যিকার কথা সেটা জানি না। তবে অভিযোগ থাকলে তদন্ত হবে শাস্তি হবে কিন্তু আগেই নিজেরা শাস্তি দিয়ে একজনকে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে সেটি কোন দেশের বিচার?

পনেরো দিন পরে কী হবে আমরা জানি না। তবে একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা খুব ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি হল। কোনো একজন মানুষকে পছন্দ না হলে তাকে সরানোর জন্যে কয়েকজন (কিংবা অনেকজন) মানুষ একত্র হয়ে তাকে একটা ঘরে আটকে ফেলতে পারবেন- এর জন্যে কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না, দেশের আইন তাদের স্পর্শ করবে না। যেসব শিক্ষকরা অপছন্দের মানুষকে ঘরের ভেতর আটকে ফেলার কালচার চালু করলেন, তাদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে ভাইস চ্যান্সলর হবেন। ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব খুব কঠিন দায়িত্ব। নিশ্চিতভাবেই তখন তারা সবাইকে সমানভাবে খুশি করতে পারবেন না। তখন তাদেরকে যখন অন্য শিক্ষকেরা ঘরের মাঝে বন্দি করে ফেলবেন তখন তারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন কী না জানার ইচ্ছে করে।

৩.
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করানোর জন্যে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখন মনে হয় সেটা কারো মনে নেই। অনেকেরই ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরিটি বুঝি তার নিজের সুখ সুবিধার জন্যে। নিজেদের ‘অধিকার’ আদায় করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার বিষয়টি যদি পুরোপুরি চাপা পড়ে যায় তাতেও কেউ কিছু মনে করে না। ছাত্রছাত্রীদের কারণে, ধর্মঘট, মারামারি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরা তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্যে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বন্ধ করে রেখেছেন সেরকম উদাহরণ খুব বেশি নেই। উদাহরণটি খুব ভালো নয়, সারা দেশে আমাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর খুব বড় একটা গ্লানি নেমে এসেছে। এই গ্লানি থেকে আমরা খুব সহজে বের হয়ে আসতে পারব বলে মনে হয় না।

৪.
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আনোয়ার হোসেনকে আজ থেকে ছয় বছর আগে ঠিক এই রকম সময়ে মিলিটারি সরকার গ্রেফতার করেছিল। তার লেখা বইয়ে আমি পড়েছি চোখ বেঁধে তাকে নিয়মিতভাবে রিমান্ডে নেয়া হতো। তাই আমরা জানি তার জেল খাটার অভিজ্ঞতা এবং মিলিটারি অত্যাচার সহ্য করার ক্ষমতা বেশ ভালো রকমই আছে। আপাতত শিক্ষকদের চারদিনের রিমান্ড থেকে মুক্তি পেয়েছেন, পনেরো দিন পর যখন আবার শিক্ষকরা তাকে তাদের জেলখানা রিমান্ডে নিয়ে যাবেন আমি আশা করছি তিনি যেন ধৈর্য ধরে সেটা সহ্য করতে পারেন।

ছয় বছর আগে তাকে যখন মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন আমি আর আমার স্ত্রী তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে সাহস দিতে তার বাসায় গিয়েছিলাম। পনেরো দিন পর যখন শিক্ষকরা আবার তাকে ঘরে আটকে ফেলবেন তখন হয়তো আমাদের আবার তার বাসায় গিয়ে স্ত্রী পুত্র কন্যাকে সাহস দেয়ার কথাÑ কিন্তু আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি তাদেরকে এবার লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব না।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখক, অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর নয় প্রীতিদের অপ্রীতিকর চলে যাওয়া:মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান



মামুন বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে ফেসবুকে আমার ওয়ালে লিখেছে, ‘ভাইয়া, আপনাকে খুব প্রয়োজন ছিল। অনেকবার কল করেছি। কিন্তু, ফোন বন্ধ পেয়েছি। প্লিজ, আমাকে কি একটা কল দেবেন?’

ছোট ভাই মামুনের কথাগুলো আকূতির মতো শুনালো। ও আমাকে ফোনে পাচ্ছে না। পুরো রমজান মাসে নাকি পায়নি। কথাটি পুরোপুরি সত্য। বিভিন্ন জায়গায় ইফতারের দাওয়াত এড়ানোর জন্যই মোবাইল বন্ধ রাখতাম। আব্বা, ড. অনুপম সেন স্যার, বড় ভাই ডা. মোস্তাফিজ, হেলাল স্যার, আসাদ স্যার, জাকিয়া, আবু হান্নান ভাই এবং আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আমার ওজন বাড়া নিয়ে খুব চিন্তিত। রোজার পুরো মাসে সিয়ামের ফাঁকে ওজন কমানোর সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম। কাজেই বেশিরভাগ সময় ফোন বন্ধ রাখতাম।

অতি প্রিয় ছোট ভাই মামুনকে সত্য স্বীকারোক্তি দিলাম তার ফেসবুকের ইনবক্সে। ও খুব দ্রুত রেসপন্স করলো। খুব আবেগ নিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, আপনি নিশ্চয় প্রীতির ব্যাপারটা জানেন?’ বললাম, ‘আমি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকমে পড়েছি’।
তাছাড়া তেহসিনের স্ট্যাটাসটা কয়েক লাইনের বেশি পড়তে পারিনি। ইদানিং নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অতো লোড নিতে পারছি না’।

মামুন ইনবক্সে লিখলো, ‘ভাইয়া, ওটা আমার স্ট্যাটাস ছিল। সবাইকে শেয়ার করার অনুরোধ করেছি। ঘটনার সময় আমি পাশে ছিলাম’।

মামুন আবেগী মানুষ। মানুষকে সম্মান দেয়। তীব্রভাবে ভালোবাসে। মামুন লিখে চলে, ‘ভাইয়া, রেলপথে পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আরম্ভ করে দিয়েছি সাইবার যুদ্ধ। ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয় - প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’ এ দাবিতে ১৭ আগস্ট শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনও করবো আমরা সবাই মিলে। এখানে আমরা ড. অনুপম সেন স্যারের মতো একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষকে পেলে ভালো হতো। স্যার যদি আসেন, তবে আমাদের আয়োজনের মেসেজটা সমাজে ভালোভাবে পৌঁছাতো। ভাইয়া, দয়া করে স্যারকে একটু দাওয়াত দেন’।

আমি মামুনকে বললাম, ‘স্যার আসবেন, তুমি নিশ্চিত থাকো। আগামীকাল আমি কথা বলবো স্যারের সঙ্গে’।

প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম। কারণ, স্যারকে যতোটুকু জানি, সময় পেলে এবং শরীর সুস্থ থাকলে তিনি যেকোনো মহৎ কাজে এগিয়ে যান এবং উৎসাহ দেন। এটা তার মজ্জাগত।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো মামুন। সেই সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপ এবং ইভেন্ট শেয়ার করতে বললো। ও ইনবক্সে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে লিখছে, ‘http://www.facebook.com/groups/justiceforpritidas/ যদি সম্ভব হয় এই গ্রুপটা একটু শেয়ার করবেন... http://www.facebook.com/events/708028025890150/ এটি ইভেন্ট...’।

ক্লিক করে দেখলাম, দু’টিতেই কভার পিকচারে লেখা আছে... ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড/এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’।

হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, মামুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ও কাভার ছবি পরিবর্তন করেছে। বোঝার চেষ্টা করলাম, বন্ধুপত্নীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ওকে কতোটা শোকাহত করেছে। মামুনের সঙ্গে চ্যাট শেষ করে প্রীতির মৃত্যু নিয়ে দেওয়া ওর স্ট্যাটাসটা পড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিলাম । ক্লিক করে ওর ওয়ালে ঢুকলাম।

নিঃশ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ও গড়িয়ে পড়া অশ্রু
মামুন লিখেছে, ‘প্রচণ্ড কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে লিখছি। গত পরশু চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম আমি, জুয়েল, মিন্টু এবং প্রীতি বউদি। বউদি বসেছিলেন জানালার পাশে। মিন্টু তার পাশে। দেখা হওয়া মাত্রই বৌদি শুভেছা বিনিময় করেছিলেন আমার সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমার বাচ্চা কেমন আছে, পরিবার কেমন আছে?’

‘মিন্টু ঘুমানোর কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয় এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে দেখা হবে বলে জানায়। মিন্টুর কর্মস্থল ঢাকা। বউদিকে নিয়ে যাচ্ছিল। ঢাকায় ভালো লাগে না বউদির। তারপরও সপ্তাহ দুয়েক থাকার ইচ্ছে আছে। নিতান্তই মন না টিকলে ১৪ তারিখেই ফিরে আসবেন। রাত আনুমাণিক সোয়া এগারোটা কিংবা এগারোটা বিশ মিনিটের দিকে ট্রেন ভাটিয়ারি ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে পৌঁছায়। আমি জুয়েলের সঙ্গে গল্প করছিলাম’।

‘হঠাৎ ‘ঠাস’ করে একটা শব্দ শুনি। সঙ্গে সঙ্গে একটা পাথর চোখের সামনে ছিটকে পড়ল। কোচের মাঝখানে সামনা-সামনি আসনগুলোর মধ্যবর্তী ফ্লোরে নিষ্ঠুর পাথরটিকে পড়ে থাকতে দেখলাম। বউদি শুধু একটা আর্তনাদ করে নুইয়ে পড়েন। মিন্টু কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে বউদিকে ধরে। বুঝতে পারি, পাথরটা বউদির মাথার বাম পাশে আঘাত করেছে। বউদির বাম গালে একটু লাল দাগ লক্ষ্য করি। মিন্টু মাথায় পানি ঢালে। সম্ভব সব রকমের চেষ্টা করা হয় বউদির জ্ঞান ফেরানোর জন্য’।

‘কিন্তু আমাদের এতো চেষ্টার পরেও বউদি কোনো কথা বলছিলেন না। চোখ দু’টো বন্ধ ছিল। চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। ২/৩ মিনিট পর পর হেঁচকি তুলছিলেন। নিঃশ্বাস নেওয়ার নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন’।

‘এতোটা খারাপ কিছু আমি তখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি চলে যাই ট্রেনের শেষ মাথায় কোনো ডাক্তার থাকলে আসতে বলার জন্য। আমি আশাহত হয়ে ফিরে আসি। এসে দেখি, বউদি অসাড় হয়ে পড়েছেন। মিন্টু বলছে, আমি পাল্স পাচ্ছি না। আমিও চেক করি, পাইনি। মনে করেছিলাম, অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে পাচ্ছি না। হয়তো মৃদু ভাবে আছে। আমি ধরতে পারছি না’।

হে প্রভু, তুমি বউদিকে নিও না
মামুন আরও লিখেছে, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সীতাকুণ্ড নেমে যাওয়ার। কোনোমতে মিন্টু, আমি মিলে বউদিকে ধরাধরি করে নামাই। জুয়েল সব ব্যাগ নামায়। বউদিকে বেঞ্চে শুইয়ে আমি দৌঁড়াই একটা ট্যাক্সি ঠিক করার জন্য। পথে একটা রিকশা পাই যাত্রীসহ। তাদেরকে অনুরোধ করলে তারা রিকশাটা ছেড়ে দেন। আমি মিন্টু বউদিকে নিয়ে মূল রাস্তায় পৌঁছে ট্যাক্সি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল, সীতাকুণ্ডে পৌঁছাই’।

‘আল্লাহ্র কাছে শুধু কায়মনোবাক্যে একটা প্রার্থনা করছিলাম। হে আল্লাহ , হে প্রভু, আমি যদি একটাও ভালো কাজ করে থাকি, আমার যদি একটা এবাদতও তুমি কবুল করে থাকো, যদি একটাও ন্যায়বিচার করে থাকি, তবে তুমি প্রীতি বউদিকে নিও না। ফিরিয়ে দাও। এটা ওর যাওয়ার সময় নয়’।

অতিরিক্ত কষ্টে-আবেগে মামুন লিখেছে, ‘হয়তো প্রার্থনা করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বা আমি এতোটাই পাষণ্ড, পাপী যে আল্লাহ শোনেননি। মিন্টু তখন শুধু বউদির হাত ধরে বসেছিল। আর কান্নাভেজা কণ্ঠে আকুতি জানাচ্ছিল, প্রিয়তমার কাছে- প্রীতি, ও প্রীতি... কথা বলো, কথা বলো। বউদি নিশ্চুপ- নির্বাক। দৃষ্টি যেন কোথায়! হয়তো অপার্থিব দৃষ্টি, আমি চিনতে পারছিলাম না’!

‘ডাক্তার পরীক্ষা করে যখন অক্সিজেন মাক্স লাগাচ্ছিলেন মিন্টু তখনো বউদির হাত ধরেছিল। আর বলছিল, আমি শক্ত আছি। ডাক্তার সাহেব, আপনি বলেন কি অবস্থা। পৃথিবীর সমস্ত অসহায়ত্ব যেন ডাক্তারের চোখে জমা হয়েছে। ডাক্তার শুধু আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছিলেন না। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদেরকে হৃদয়বিদারক সংবাদটি দিলেন। প্রীতি বউদি আর নেই!

মিন্টুর চোখের পানি প্লাবিত করেছে পুরো পৃথিবীকে
মামুন ওর স্ট্যাটাসে আরো লিখেছে, ‘মিন্টু হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। বলে, আমি ওর বাবা মাকে কি জবাব দেবো! এই মেয়েটা শুধু আমার সঙ্গে থাকার জন্য কি না করেছে। একটা বাবু, শুধু একটা বাবুর জন্য তার সে কি আকূতি! হায়রে ঢাকা! হায়রে চাকুরী! আমি কি জবাব দেবো!’

আমি পড়ছি আর দেখছি, মিন্টুর চোখের পানি মামুনের ওয়ালকে ছাপিয়ে সমস্ত ওয়েবপেজকে ভিজিয়ে পুরো পৃথিবীকে প্লাবিত করছে।

এক পর্যায়ে মামুন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য ডট দিয়ে নিজের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করেছে। অনেকটা গ্যাপ দিয়ে মামুন আবার লিখছে, ‘না । আমরা কেউ ওকে সান্ত্বনা দেইনি। সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা কারো জানা ছিল না। আমরা তখনো আশাবাদী ছিলাম। ডাক্তারকে বলে বউদিকে নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের দিকে রওনা দেই। পুরো যাত্রা পথে আমার বন্ধু বউদির হাত ধরে নির্বাক বসেছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছার পর ডাক্তারের মুখে একই কথা শুনে সবার মাঝে নেমে আসে শোকাতুর নিস্তব্ধতা। আহাজারি করে ওঠেন বউদির মা, বাবা, ভাই, মিন্টুর বাবা-মাসহ উপস্থিত সকলে। আমি হতবাক। আমার বুক যেন ভেঙে যাচ্ছিল। মুহূর্তেই একটা মানুষের জীবন কিভাবে শেষ হয়ে যায়!’

বিচার সবকিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না
মামুন প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে লিখছে, ‘মামলা হয়েছে।পুলিশ চেষ্টা করছে আসামিদেরকে গ্রেফতার করার। হয়তো আসামি ধরা পড়বে। বিচার হবে’।

বিচারক মামুনকে হয়তো মানুষ মামুন প্রশ্ন করছে, ‘মিন্টু কি ফিরে পাবে তার প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীকে ? বউদির ভাইয়েরা কি ফিরে পাবেন তাদের একমাত্র বোনকে? মা-বাবা কি ফিরে পাবেন তাদের আদরের কন্যাকে? মিন্টুর বাবা-মা কি ফিরে পাবেন তাদের প্রিয় কন্যাসম পুত্রবধূকে?’

মামুনের কম্পিউটারের বাটনগুলো অবশেষে ভাষা খুঁজে পেয়েছে, ‘এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। মানুষের জীবন কোনো ছেলেখেলা নয়। কারো নিছক খেয়ালের কারণে অন্য কারো জীবন প্রদীপ থেমে যেতে পারে না।

ইতোমধ্যেই পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে। আমরা চাই, আর কারো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, কোনো ভাই যেন তার বোনকে, স্বামী যেন তার স্ত্রীকে, বাবা-মা যেন তার মেয়েকে, শ্বশুর-শাশুড়ি যেন তাদের আদরের বউমাকে না হারান। জীবন শুরু করার বা মেহেদির দাগ মুছে যাওয়ার আগেই যেন কারো জীবনে নেমে না আসে নির্বাক দুঃসহ নির্মম নির্জনতা। আমার বন্ধুর মতো কারো জীবন যেন শ্মশানের চিতার আগুনে দাউ দাউ করে না জ্বলে’।

রুখে দাঁড়াতে হবেই
মামুনের কি-বোর্ডে প্রতিবাদের কথা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছে, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা তৈরি করেছি এই গ্রুপ। বন্ধুরা, আপনারা সবাই আপনাদের বন্ধুদের এই গ্রুপের সদস্য করে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আগামী শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আমরা সবাই সমবেত হবো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। সেখানে এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন, কালোব্যাজ ধারণ, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। বন্ধুরা, এই সামাজিক আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা এবং সবান্ধব অংশগ্রহণ চাই। এই পোস্টটি সকল বন্ধুকে শেয়ার করার অনুরোধ করছি’।

আর নয় প্রীতিদের অপ্রীতিকর চলে যাওয়া
শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে সেন স্যারকে ফোন করলাম। কুশল বিনিময়ের পর স্যারকে মানববন্ধনের কথা বললাম খুব সংকোচের সঙ্গে। বললাম, ‘খুব কম সময়ে ফ্রি করে দেবো’। স্যার খুব দরদী গলায় বললেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। যতোক্ষণ দরকার হয় থাকবো।’

ফেসবুকের চ্যাট অপশনে প্রিয় ভাই রমেনকে পেলাম। তার সঙ্গেও শেয়ার করলাম। তিনি ব্যাপারটি আগে থেকেই অবগত আছেন। আমি জানি, রমেন এই মহৎ কাজের জন্য যতোখানি সম্ভব করবেন। জহুর ভাই, বিশুদা, বাহার ভাই, শামসু ভাই, তপনদা, আরিফ ভাই, রিয়াজ ভাই, বুলবুল ভাই, সরওয়ার ভাই, সবুর ভাই, কমল, রেজা ভাই, পারভেজ ভাই, ফারুক ভাই, ফরিদ ভাই, উজ্জ্বল, নজরুল ভাই, মামুন ভাই, আসিফ ভাই, মিন্টুদা, ইমরান ভাই, বোন লিপি, বোন এমেলিয়া খানম এবং আরও অনেকের কথা মনে পড়ছে। তারাও নিশ্চয়ই জানেন। মানুষের অধিকার রক্ষায় এই ভালো মানুষগুলো ইতোমধ্যে সমাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, বীর চট্টলার সমস্ত মানব নিজেদেরকে ‘প্রীতি’র বন্ধনে আবদ্ধ করে স্লোগান তুলবেন, ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয়, প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’। বীর চট্টলার সন্তানেরা এই স্লোগান বাস্তবায়ন করেও দেখাবেন। আমরা আর প্রীতিদের অপ্রীতিকর মৃত্যু দেখতে চাই না।

মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সচিব (প্রেষণ), পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম