"গ্রামে ও শহরে মিশ্রভাবে বসবাসের ফলে আমার মধ্যে একধরনের সংমিশ্রণ
ঘটেছে। না হতে পেরেছি শহরের স্মার্ট, মেধাবী, অতি আধুনিক,
না
হতে পেরেছি গ্রামের পরিশ্রমী, গেছো, ভালো সাঁতারু।
দুই স্থানেই আমি একজন অতি বোকা। তাই আমি আজ বোকা মানব।" 'বোকা মানব'
নামে
একটি ব্লগে নিজের সম্পর্কে এভাবেই আত্মবিশ্লষণ করেছিলেন ওয়াশিকুর বাবু ।অভিজিতের
হত্যা তাকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিলো ।নিজের ফেসবুকে তাই বাবু কভার ফটো করছিলো,
'আমিই
অভিজিৎ'।
আত্মবিশ্লেষনে নিজের সম্পর্কে ব্লগে প্রকাশিত
একটি লেখায় ক্ষণজন্মা ওয়াশিকুরের গভীর অনুধাবন ফুটে ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘আমার নাম মো.
ওয়াশিকুর রহমান। জন্ম গ্রামে হলেও শৈশব কেটেছে ঢাকায়। তবে আট বছর বয়সের সময় বেশ
কিছুদিন গ্রামে কাটাতে হয়। তারপর বছর দুয়েক মফস্বল শহরে কাটিয়ে আবার ঢাকায়
প্রত্যাবর্তন করি। কিন্তু মাস ছয়েক না কাটতেই আবার গ্রামে ফিরে যেতে হয়। একটানা ছয়
বছর গ্রামে কাটিয়ে পুনরায় ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করি। এখন পর্যন্ত ঢাকাতেই আছি। এভাবে
গ্রামে ও শহরে মিশ্রভাবে বসবাসের ফলে আমার মধ্যে একধরনের সংমিশ্রণ ঘটেছে। না হতে
পেরেছি শহরের স্মার্ট, মেধাবী, অতি আধুনিক,
না
হতে পেরেছি গ্রামের পরিশ্রমী, গেছো, ভালো সাঁতারু।
দুই স্থানেই আমি একজন অতি বোকা। তাই আমি আজ বোকা মানব।’ এই ব্লগে তিনি
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে একটি
লেখা পোস্ট করেছেন।
এখন প্রশ্ন , এই 'বোকা মানব' টি’কে কারা টার্গেট
করলো?কারা এই ঘাতক?
চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার
তফসির বিভাগের ছাত্র জেএমবি জঙ্গী জিকরুল্লাহ কে শনিবার রাজধানীতে আসতে কে নির্দেশ দিয়েছিলো? যে 'বড়ো ভাই' মাসুম রবিবার বিকেলে হাতির ঝিলে তাহের ,আরিফুল এবং
জিকরুল কে ডেকে তিনটি চাপাতি দেয় এবং ওয়াশিকুর বাবুর ছবি দেখিয়ে বাবুকে হত্যার 'ঈমানী দায়িত্ব'দেয়, তার প্রকুত
পরিচয় কী?? এ প্রশ্ন খুঁজে ফিরছেন গোয়েন্দারা ।
নিহত ওয়াশিকুরের চোখ এবং মুখ বরাবর সমান্তরাল দুইটি কোপে বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেছে মুখমন্ডলের দুইটি অংশ। পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা
নিহত ওয়াশিকুরের শরীরের শুধু মুখমণ্ডল ও গলাসহ শরীরের ঊর্ধ্বাংশে আঘাত করেছিলেন।
তাঁর মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। চোখ, নাক থেঁতলে
চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা
করা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে কেন এবং কোথা
থেকে নিরীহ, শান্ত তরুণ ওয়াশিকুরকে খুন
করার নির্দেশ এসেছে ? যাঁকে হত্যা করা হলো, তিনি কোথায়,
কী
লিখেছেন? কিছুই জানা ছিল না খুনিদের।
‘ধর্মের অবমাননা’ করেছে এমন অভিযোগ এনে ওয়াশিকুর এর ছবি দেখিয়ে,তার বাসার পথ
চিনিয়ে তাকে হত্যা করার জন্যে ঘাতকদের
হাতে চাপাতি তুলে দেয়া হয়েছে । আর সেটা দিয়ে কুপিয়ে নিরীহ এক তরুণকে প্রকাশ্য
দিবালোকে নিঃশঙ্ক চিত্তে নির্বিঘ্নে হত্যা করেছে তিন তরুণ। প্রথম চাপাতির কোপ দেয়
তাহের। দ্বিতীয় চাপাতির কোপ দেয় জিকরুল।এর মধ্যে জনরোষের মুখে আরিফুলের চাপাতি আর ব্যবহার করা হয়নি।দুই কোপেই
ব্লগার ও অনলাইন লেখক ২৭ বছরের তরুণ ওয়াশিকুর রহমানের চোখ এবং মুখ বিভক্ত হয়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । ওয়াশিকুরকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়া দু'জনের একজন
জিকরুল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হাজতে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে একথা জানায়।
টেলিভিশনের স্ক্রলে ওয়াশিকুর
বাবু হত্যার সংবাদ জেনে তার শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদের অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত হয়েছেন । সোমবার দুপুর থেকে লাশ বাড়িতে
নেয়া পর্যন্ত বসেছিলেন তাদের একজন ওয়াশিকুরের পাতানো বোন তামান্না সেতু । এই
প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তার শুক্র এবং শনিবার অফিস
খোলা, ওয়াশিকুরের সেদিন আফিস বন্ধ। তাই অনেক;ইন দেখা হয় নি। ২৫ মার্চ
শেষবারের মতো তার সাথে ফেসবুকে আলাপ হয় ওয়াশিকুরের সাথে। সেদিন ওয়াশিকুর খুব
বলছিলো, "দিদি, ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে খুব। আপনি কবে সময় দেবেন, আপনার সাথে ভাত
খেতে ইচ্ছে করছে অনেক ।" ভাই হারানোর শোকে
শোকাহত সেতু বলেন," সেদিন কেন যেন
কোন রিপ্লাই দেয়া হয় নি। আর কখনো আমার কাছে ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে চাইবে না বাবু,
এটা
কী করে ভাবা যায়? " তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে
ওয়াশিকুর ফেসবুকে ‘আসুন নাস্তিকদের কটূক্তির দাঁতভাঙা জবাব দেই...’ শিরোনামে একটি
ব্যঙ্গাত্মক লেখা ১০৩ পর্ব পর্যন্ত লিখেছেন। ওই লেখায় ওয়াশিকুর বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নিয়ম নিয়ে
বাড়াবাড়ি যারা করে , তাদের খণ্ডন করার চেষ্টা
করেছেন । তামান্না সেতুসহ ওয়াশিকুরের বন্ধুরা জানিয়েছেন, অভিজিৎ খুন
হওয়ার পর ভীষণ মুষড়ে পড়েন ওয়াশিকুর। তাঁর লেখায় তিনি এর প্রতিবাদ জানান। তখন
বন্ধুরা তাঁকে সাবধান করেছিলেন। জবাবে ওয়াশিকুর বলেছিলেন, ‘আমি তো
প্রোফাইল পিকচারও দেইনি। আমারে চিনবে ক্যামনে।’ তামান্না সেতুর দু'চোখে জলের নীরব
ধারা। বললেন,‘ও এমন কিছু লিখত না, যার জন্য কুপিয়ে মেরে ফেলতে হবে। আমরা জানি না,
এরপর
কার পালা।’
হত্যার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ ও
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর
তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়ী দীপিকার মোড়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়
ওয়াশিকুরকে। জিকরুল্লাহ, আরিফুল এবং তাহের এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নীলচে ফুলশার্ট ও জিনস পরিহিত ওয়াশিকুর দীপিকার
মোড়ের দিকে যেতেই গলির মধ্যে তিনজন লোকের মধ্যে দুজন তাকে অতর্কিতে কোপাতে শুরু
করে। পাশেই কয়েকজন হিজড়া দাঁড়ানো ছিলো।কয়েকজন নারী সহ হিজড়ারা চিৎকার করতে থাকেন
। 'কোপাইয়া
মাইরা ফেললো, কোপাইয়া মাইরা ফেললো’ চিৎকার শুনে হামলাকারী দুজন ঘটনাস্থলেই
চাপাতি ফেলে দৌড় দেয়। এ সময় হিজড়ারা ঘাতকদের পিছু ধাওয়া করে। এলাকার লোকজনও
ধাওয়া করে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছিলো।তারাও দৌড়ে
ধাওয়া করে। হিজড়ারা প্রথমেই জিকরুল্লাহকে ধরে ফেলে। এরপর জনতা ও পুলিশ মিলে প্রায়
এক কিলোমিটার ধাওয়া করে একটি ব্যাগসহ আরিফুলকে ধরে ফেলে। খুনের পর রক্তের দাগ যেন
বোঝা না যায়, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁরা লাল পোশাক পরে হত্যা করতে যায়।
জিকরুল্লাহর পরনে ছিল লাল ডোরাকাটা টি-শার্ট, জিন্স, পায়ে কাপড়ের
কেডস। আর আরিফুলের পরনে ছিল লাল টি-শার্ট, কালো প্যান্ট ও
স্যান্ডেল। পুলিশ জানিয়েছে, এই দুজনের লাল গেঞ্জির নিচেই আরেকটি গেঞ্জি
ছিল। চাপাতির ব্যাগের ভেতরে অতিরিক্ত পাঞ্জাবি ছিল। পোশাক বদলে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য কৌশল করে দুই স্তরের পোশাক
পরেছিলো তিন ঘাতক। ঘটনাস্থলে থাকা দু'জন হিজড়া, স্থানীয়
ব্যক্তিরা ও পুলিশ ধাওয়া করে দু'জনকে ধরে ফেলে। ঘাতকদের বয়স ২০ থেকে ২৫-এর
কোঠায়।
বিজ্ঞানগবেষক অভিজিৎ রায় খুনের এক মাস পর ওয়াশিকুরকে হত্যা করা হলো।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা
হয় অভিজিৎকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে কুপিয়ে জখম করে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সামনেই পালিয়ে যায় খুনিরা। এর আগে
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার
আহমেদ রাজীব হায়দারকে। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি রাতে একইভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে। রাজীব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত নেতা এবং জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ
বাংলা টীমের প্রধান মুফতি মুহাম্মদ
জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৯
জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ । মামলাটি এখন বিচারাধীন। ব্লগার আসিফের
ওপরও একই সংগঠন হামলা করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৫ নভেম্বর ২০১৩ বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান
বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে প্রকাশ্য দিবালোকে তার বাড়ির সামনে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পর ‘আনসার আল ইসলাম
বাংলাদেশ-২’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। আর
সর্বশেষ অভিজিৎ হত্যার পর ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামের একটি
টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়। একজন হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার
ছাড়া পুলিশ আর কাউকেই সনাক্ত করতে পারে নি।
ওয়াশিকুর বাবুর তিন ঘাতকের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দু'জনের মধ্যে
জিকরুল্লাহ চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র ,আরিফুল রাজধানীর
মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র বলে জানায়। জিকরুল্লাহর বাড়ি নরসিংদী,
আরিফুলের
কুমিল্লা। জিকরুল্লাহ কখনো ওয়াশিকুরকে দেখেনি। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো
শত্রুতা নেই। ওয়াশিকুর কোথায়, কী লিখেছেন, তা-ও জানে না।
তাদের 'বড়ো
ভাই' ‘মাসুম ভাই’য়ের কথাতেই তারা
ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছে।। তাঁরা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি
না, জানতে
চাইলে জিকরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কোনো দল নাই।’ তাদের 'বড়ো ভাই'
বা 'মাসুম ভাইয়ের
পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানে না বলে জিকরুল্লাহ।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় জিকরুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তার পূর্বপরিচিত
‘মাসুম
ভাই’র
কথামতো শনিবার তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। যাত্রাবাড়ীর দিকে এক
মাদ্রাসায় রাত কাটায়। রোববার বিকেলে
হাতিরঝিল লেকের পাড়ে ডেকে ওয়াশিকুরকে
হত্যার দিকনির্দেশনা দেয় তাদের ‘মাসুম ভাই’ । জিকরুল্লাহ, আরিফুল ও তাহের
মিলে প্রথম বারের মতো তখন আলোচনা হয়। সহযোগী ঘাতক আরিফুল এবং তাহেরকে চিনতোনা জিকরুল। হাতির ঝিলেই তাদের
প্রথম দেখা। ওয়াশিকুরের ছবি দেখিয়ে মাসুম তাঁদের
বলে, এই লোক মহানবী (সা.)-এর অবমাননা করেছে, আল্লাহ ও
ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তাকে হত্যা করতে হবে। এরপর মাসুম তাদের নিয়ে
হাতিরঝিলের কাছাকাছি দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে ওয়াশিকুরের বাসা দেখিয়ে দেন।
ওয়াশিকুর কখন বাসা থেকে অফিসে যান, কোন্ দিক দিয়ে
কীভাবে হামলা করা হবে, সেসব বুঝিয়ে দেয় 'মাসুম'। ওয়াশিকুরের
বাসার আশপাশের এলাকা চিনে নেয় ঘাতকেরা। মাসুম তাঁদের তিনজনকে তিনটি চাপাতি দেয়।
'মাসুম' এর নির্দেশনা অন্ধের মতো
অনুসরণ করে মাথায় সাদা টুপি পরে সোমবার
সকালে তিন ঘাতক রাজধানীর দক্ষিণ বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড়ে অবস্থান নেয়। ওয়াশিকুর
অফিসে যাবার পথে জিকরুল্লাহ ও তাহের
চাপাতি বের করে কোপ দেয়। আরিফুল চাপাতি বের করার আগেই স্থানীয় মানুষ ধাওয়া দেয়।
চাপাতিসহ ব্যাগ পিঠে ছুটে পালাবার সময়ে আরিফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সূর্যবার্তা টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ওয়াশিকুরের লেখার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি
গোষ্ঠী এই হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই হত্যার ধরনের সঙ্গে অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দার হত্যার মিল রয়েছে মনে
করছে পুলিশ ।
নিহত ওয়াশিকুর বাবু
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের টিপু সুলতানের একমাত্র পুত্র। নিম্নমধ্যবিত্ত
পরিবারের সন্তান। ২০০০ সালে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে যায় । ওয়াশিকুর বাবু তার
বাবার সাথেই থাকতো।২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করেন।তেজগাঁও কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে
স্নাতক করে মতিঝিলে ফারইস্ট এভিয়েশন নামে একটি ট্রাভেল
এজেন্সিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করতো। এই প্রতিষ্ঠানে ওয়াশিকুরের খালা চাকরি
করতেন । তিনিই ওয়াশিকুর কে এই চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। সামান্য বেতনের চাকুরে
ওয়াশিকুর তার বাবার সাথে দক্ষিণ
বেগুনবাড়িতে ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম
ভাড়া নিয়ে থাকতেন।। ওয়াশিকুরের অফিস যেতে দেরি দেখে ফারইষ্ট এভিয়েশন থেকে
ওয়াশিকুরের মোবাইলে ফোন করলে পুলিশ রিসিভ করে সেই ফোন। এর পর ফারইষ্ট এভিয়েশন
থেকেই বাবুর খালাকে ফোন করে বাবুর নিহত হবার সংবাদ জানায়। সেই সংবাদ শুনে আত্মীয়
স্বজন মর্গে ছুটে আসেন। সোমবার সকালেই বাড়ি গেছেন ওয়াশিকুরের বাবা টিপু সুলতান।
ছেলে হত্যার সংবাদ শুনে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন টিপু সুলতান। এ কারণে তাঁর আর
রাজধানীতে আসা সম্ভব হয়নি। একমাত্র পুত্রের প্রাণহীণ দেহ গ্রামে নেবার জন্যে জামাতাকে রাজধানীতে পাঠিয়েছেন
তিনি।