Friday, June 27, 2014

আমার চিরবন্ধু বাবা সাইফুদ্দিন খান আমার পথনির্দেশক




এ কোন্ সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার!

 নশ্বর এ পৃথিবীতে কেউ চিরদিন থাকে না। বাবার শোকগাথায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শতবর্ষী 
বিপ্লবী  বিনোদ বিহারী চৌধুরী লিখেছেন, " জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু-জীবমাত্রেই জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যুর করাল গ্রাসে নিপতিত হতে হয় । এ সত্য জেনেও মানুষ শোকাভিভূত হয়। স্থির-প্রতিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান লোক মৃত্যুতে মূহ্যমান হন না। অমরত্বের প্রত্যাশা কারো থাকে না। আমার বাবার ও সেই প্রত্যাশা কখনো ছিল না। তবে তিনি বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে, তাঁর কর্মজগতে।তাঁর প্রিয়তম মাতৃভূমির মাটিতে। মৃত্যুকে খুব সহজে মেনে নেবার মতো মানসিক শক্তি আমি রাখিনা, তাই কাজের মাঝেও বারবার বাবার কথা ভেবে কষ্ট পাই,শোকগ্রস্থ হই।

২০০৭ সালের ২৮ জুন ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আইসিইউ বেডে আমাদের সামনেই ধীরে ধীরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান। 

সেই মুহূর্তে আমাদের মনে হচ্ছিলো, 'এ কোন্ সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার!'

 সেই মুহুর্ত টির কথা মনে হলে গভীর শূন্যতার হাহাকার বুকের গহনে  ফিরে ফিরে আসে বারবার। আমার পরিশ্রম আর কাজের দায়বদ্ধতা যার কাছে অসীম ভালোবাসা আর সম্মানের ছিল। আমার অনুসন্ধানী  রিপোর্ট,  টপটেররদের এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ ....আমার  কাজ , মেধা, শ্রম আর সততার প্রতিটি স্বীকৃতি যিনি  নিজের সম্মান ভেবে 'মাথার মুকুট' হিসেবে প'রে নিতেন-তিনি আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান!

বাবার সাথে মজা করতাম অনেক , একটা সময় পর্যন্ত সারাক্ষণ সাথে নিয়ে মিছিল , মিটিং, সহযোদ্ধা দের বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন । তাই বলে খুব মিষ্টি মধুর বন্ধুত্ব ছিল না, তর্ক-ঝগড়াও হতো অনেক। 
তবু আমার বাবা যে  আমার প্রাণের দোসর ছিলেন ! আর তাই বাবার শূন্যতা আমায় আজীবন তাড়িয়ে ফিরবে!

একমাত্র কন্যা হবার সুযোগে সেই শৈশব থেকেই আমার খেলাধুলা, দুরন্তপনা,ফাঁকিবাজি , রাজপথে এরশাদ পতনের আন্দোলন , সংগ্রাম , রিপোর্টিংয়ের চ্যালেঞ্জ, বেপরোয়া স্বভাব-সবকিছুতেই বাবার অসীম প্রশ্রয়ে মনে মনে খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম! আজ প্রতি মুহুর্তে বাবার অভাব প্রতি রক্তক্ষরণে শিরায় শিরায় উপলব্ধি করতে পারি ! স্নায়ুতে স্নায়ুতে বলে উঠি-তোমার এ অক্ষম সন্তান তোমার আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলো না বাবা! তুমি চলে গেলে! 
আর কেউ তো নেই, যে আমায় হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে আমার কাজকে 'মাথার মুকুট' করে তোমার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেবে দূর- বহুদূর !

দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে  পরাধীন দেশের মুক্তির স্বপ্নে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবার 'অপরাধে' তার সাথে যারা দিনের পর দিন অন্যায় অত্যাচার করে গেছে, সেই ঘাতকদের বিচার কাজ চলছে। নানান প্রতিকূলতার মাঝে  যদিও এই বিচার কাজ পদে পদে বাধা পাচ্ছে, মনে মনে বলি, আব্বু, তবু আমি বিশ্বাস করি যারা তোমাকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে দিনের পর দিন, তোমার সহযোদ্ধাদের ঘাতক-সেই অত্যাচারীদের বিচার হবেই ।

  সাইফুদ্দিন খানের সহযোদ্ধারা মনে করেন,সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় যে মানুষগুলোর মানবতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা  এ সমাজকে এগিয়ে নিয়েছে অনেক দূর, তাদের মধ্যে আমার বাবা অন্যতম!  আর তাই তার আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরী।  এর ফলে আমরা নতুন প্রজন্মে নিশ্চয়ই আরো অনেক সাইফুদ্দিন খান কে খুঁজে পাবো,যারা এই সমাজ কে এগিয়ে  নেবে অনেক অনেক দূর.....

সাইফুদ্দিন খানের প্রয়াণে শোকগাথায় বায়ান্নর প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী লিখেছেন," সাইফুদ্দিন যেমন মানুষকে  অকাতরে ভালোবেসেছেন, তেমনি সাম্যবাদী আদর্শকে বিশ্বাসে এবং কর্মে সারাজীবন ধরে রেখেছেন। শত নির্যাতন এবং সব ধরণের দুর্যোগের মধ্যে ও সাইফুদ্দিন কোনদিন নিজের আদর্শ থেকে সরে দাঁড়ান নি। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ কে ভালোবেসে গেছেন। সারাজীবন মানবতাবাদী থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। 

কমরেড আহসানউল্লাহ লিখেছেন, সাইফুদ্দিন খান মুসলিম লীগের দ্বি-জাতিতত্বের সমালোচক ছিলেন। তাঁর মধ্যে দ্বি-জাতিতত্বের প্রভাবের লেশমাত্র দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ব্রিটিশ শাসনের সেই সময়কালে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান , মুসলিম প্রতিক্রিয়ার ধ্যান ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তাঁর চরিত্রের এ বলিষ্ঠতা আমাকে মুগ্ধ করতো। তিনি আমার অকৃত্রিম বন্ধুদের একজন। যুদ্ধাত্তর কালে আমার কাঁধে একটি বড়ো পরিবারের দায়িত্ব নেই । পরিবারের ব্যয় , চাহিদা কিভাবে মিটাবো কখনো কখনো চিন্তামগ্ন থাকতাম। সে সময়ে অযাচিতভাবে অর্থ ধার দিতেন যারা, তাদের মধ্যে দু'টো নাম উল্লেখযোগ্য। একজন প্রয়াত ডা. আজিম, দ্বিতীয়জন তাঁর আপন ফুপাতো ভাই সাইফুদ্দিন খান। 

এ কথাগুলো বাবার জীবদ্দশায় আমরা কখনো জানতে পারিনি।বাবা জানাতে চান নি। 

   সাইফুদ্দিন খানের শোকসভায় তাঁর সহযোদ্ধা এ্যাডভোকেট শফিউল আলম  ( বর্তমানে প্রয়াত) বলেছেন, " আজীবন প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক নিষ্কলুষ স্পষ্টবাদী বন্ধু সাইফুদ্দিন খানের শোকের দিনে তার স্মুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই । ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আউয়ুব এর শিক্ষানীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আমার সংকটকালে তার সাথে আমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো, তা মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বহাল ছিল। সাইফুদ্দিন খানের চেতনার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী মূল চেতনা , ১৯৭২ এর সংবিধানের মূল চেতনা, লুটেরা অর্থনীতিা ও রাজনীতি করে কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা বিরোধী চেতনা তার মাঝে সবসময় অটুট ছিল। 

১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু 'প্রগতিশীল' রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তি এবং শক্তি যখন প্রশ্ন তুলেছিলো, "কী পেলাম?" সাইফুদ্দিন খান তখন বলতেন," আমরা আপাতত ৪টি জিনিস পেয়েছি,  (১) '৫২ র একুশের চেতনা, (২) '৭২ এর সংবিধান, (৩) একটি স্বাধীন ভূখন্ড এবং (৪) আর কিছু আশা ও স্বপ্ন । এর প্রেক্ষিতে যারা বলতো ," এই ভূখন্ড দিয়ে কি পেট ভরবে?"   এর জবাবে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বলতেন ," যদি লুটেরা অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটে, জনগণের মধ্যে চেতনার বিকাশ হয়,সমগ্র বিশ্বে লুটেরা ধনবাদী অর্থনীতির বিস্তৃত কারেন্ট জাল ছিঁড়ে ফেলা যায়, লুটেরা নেতৃত্বের পরিবর্তে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে দেশের পরিচালন কাঠামো যদি গড়ে ওঠে -তাহলে একদিন পেট ভরতে পারে এবং চেতনার বাস্তবায়ন হতে পারে।" আজকের দিনে তার একথার যথার্থতা নিয়ে কারো প্রশ্ন আছে কি? এ প্রশ্ন রাখেন এডভোকেট শফিউল আলম।

তিনি আরো বলেছেন, খান সাহেব ধর্ম সম্পর্কে বলতেন, " মুসলমান রা হলো মধ্যপন্থী, তারা ডান বা উগ্রপন্থী নয়। " আমি তার সাথে একমত ছিলাম। খান সাহেব বলতেন, " মুসলমানেরা প্রতিদিন নামাজ পড়ে, প্রতিদিন একটি সুরা পাঠ করে  তারা নামাজে , তাতে বিশ্বাসী হয়ে ও ব্যক্তি জীবনে তা লালন করে না।" আমি ইতিমধ্যে সুরা কাফিরুন পড়েছি। তার ৬ নম্বর আয়াতে  লেখা আছে ," তোমার ধর্ম তোমাদের আমার ধর্ম আমার কাছে।" এ অবস্থায় একজন মুসলমান ব্যক্তি কী করে অন্য একজন ধর্মবিশ্বাসী ব্যক্তি কে আঘাত করতে পারে? কেমন করে একটি গোষ্ঠী কে 'অমুসলিম' ঘোষণা করার জন্যে 'জিহাদ' এর ডাক দিতে পারে?  এ প্রশ্ন  ও তুলেছিলেন  সাইফুদ্দিন খানের সহযোদ্ধা বন্ধু প্রয়াত এ্যাডভোকেট শফিউল আলম। 

১৯৮৮ সালে বাবা সন্ধানীকে চক্ষু দান করেন, ২০০২ সালে (সম্ভবত ) অনেক পরিশ্রম আর ছুটোছুটি করে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে দেহদান করেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর এ মহৎ অঙ্গীকার পূরণে আমরা, তাঁর স্বজনেরা ব্যর্থ হয়েছি। এর প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আমি আমার দেহদান করেছি। জানিনা, আমার মৃত্যু কিভাবে কোথায় হবে। আমি ও জানিনা আমার অঙ্গীকার পূরণ করা হবে কিনা।সর্বান্তকরণে চাই , বিশ্বের যে প্রান্তেই আমার মৃত্যু হোক না কেন-আমার একজন শুভাকাঙ্খীও যদি সেখানে থাকেন, আমার দেহদানের অঙ্গীকার পূরণ করবেন তাঁরা!

 একাত্তরে ঘাতক আলবদর বাহিনীর নির্যাতনের শিকার সাইফুদ্দিন খান সম্পর্কে বাংলানিউজে  জুন ২০, ২০১২ সালে প্রকাশিত  রমেন দাশগুপ্তের প্রতিবেদনের কিছু অংশ-


মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। সে-হিসেবে তিনি আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ভোরে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় আজিজ কলোনিতে সাইফুদ্দিন খানের বাসা থেকে সাইফুদ্দিন খান, ইরশাদ কামাল খান, পটিয়া মহকুমা ন্যাপের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরনবীসহ বেশ কয়েকজনকে ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইরশাদ কামাল খান ছিলেন সাইফুদ্দিন খানের বড় ভাই ডা. কামাল এ খানের সন্তান।

ইরশাদ কামাল জানান, দু’হাত পেছনে নিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে তাদের ট্রাকে তোলা হয়েছিল। বাধ্য করা হয়েছিল, পাকিস্তান-জিন্দাবাদ বলতে। আলবদররা সবাই খাকি পোশাক পরা ছিল, তাদের সবার মুখে রুমাল বাঁধা ছিল। ডালিম হোটেলে নেয়ার পর তারা সবসময় নিরস্ত্র বাঙালিদের হাত রশি দিয়ে এবং চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে রাখত। আমাদের খুব দুর্গন্ধময়, অন্ধকার, স্যাতস্যাতে একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল।


আলবদররা সুযোগ পেলেই এসে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করত, অকথ্যভাবে নির্যাতন করত। পুরো কক্ষে শোনা যেত শুধু গোঙানির শব্দ। কেউ কাতরাচ্ছেন, কেউ পানি, পানি বলে চীৎকার করছেন। দু’হাত, চোখ বাঁধা অবস্থায় অনেকেই কক্ষের ভেতরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেন।’

তিনি বলেন, ‘একদিন আমি শুনতে পেলাম, একজন খুব ক্ষীণ কণ্ঠে মা, মা বলে চীৎকার করছেন। 
পরে বুঝতে পারলাম, তিনি ছিলেন আমার চাচা সাইফুদ্দিন খান। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি এভাবে চীৎকার করছেন। অবিশ্বাস্য রকমের নির্যাতন করত তারা। জীবিত ফিরতে পারব একথা কখনও কল্পনাও করিনি।’

অন্যদিকে নূরজাহান খান বলেন, ‘মুক্ত হওয়ার পর সাইফুদ্দিন খান বলেছিলেন, তাদের লাথি মারত, লোহার রড দিয়ে পেটাত। পানি চাইলে মুখের উপর প্রস্রাব করে দিত। মরে গেলে লাথি মেরে ডালিম হোটেলের পাশে টিনের ছাদের ওপর ফেলে দিত। মুখের উপর মাছি ভনভন করতে দেখলে অন্যরা বুঝতে পারত আর বেঁচে নেই। আমার স্বামীকে ফিরে পাব, এটা আমি কখনোই ভাবিনি।’

ইরশাদ কামাল খান বলেন, ‘আলবদররা কেউ এলে আর্মি স্টাইলে স্যালুট দিতেন। তবে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতেন। কারও নাম বলত না। এ কারণে সেসময় তাদের পরিচয় জানা সম্ভব ছিল না। তারা আন্ডারগ্রাউন্ড সংস্কৃতির অনুসারী। তবে তারা যে ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে জড়িত সেটা জানতাম।’

ইরশাদ কামাল খান জানান, তাকে ডালিম হোটেলে চারদিন রাখা হয়েছিল। পরে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই কাগজে লেখা ছিল, আওয়ামী লীগ ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত। আমি না বুঝে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। আমি এজন্য অনুতপ্ত।’

এসব যতো ভাবি , ততোই বেদনায় কুঁকড়ে যাই! কী করছি আমরা? এতো রক্তক্ষয়, এতো আত্মদানেরএর পরিণতি বড়ো ভয়াবহ!!  বিনিময়ে এই পতাকা, এই দেশ ! আর আমরা বীরদর্পে সব ইতিহাস আর বাস্তবতা এড়িয়ে আত্মমগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি! কেউবা আবার দু'পা বাড়িয়ে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে তৎপর! এই তো আমাদের দেশ! এই তো দেশের মানুষের মানসিক অবস্থান! নিজের অস্তিত্ব বিলীনে সক্রিয় পুরো জাতি!

 তোমার নির্যাতনকারীদের বিচার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র । তুমি দেখে যেতে পারলে না এ বিচার প্রক্রিয়া। আব্বু ,  আমায় একটু আশীর্বাদ করে যাও, যেন তোমার অসমাপ্ত কাজের কিছু অন্তত শেষ করে যেতে পারি! তোমার হাত আমার মাথায় অনুভব করছি -তুমিই আমার শক্তি ! অন্তরের অন্তঃস্থলে নিয়ত জেগে আছো আব্বু আমার! তোমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথের গানের কলিতেই বলি,
"এসেছি কি হেথা যশের কাঙালি- কথা গেথেঁ নিতে করতালি-
মিছে কথা কয়ে, মিছে যশ লয়ে, মিছে কাজে নিশিযাপনা!
কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ? "
sumikhan29bdj@gmail.com

ডালিম হোটেলে নির্যাতন ‘শুধু মীর কাসেম নন, সব নির্যাতকের বিচার চাই’

‘শুধু মীর কাসেম নন, সব নির্যাতকের বিচার চাই’ ডালিম হোটেলে নির্যাতন
ছবি: সোহেল সারোয়ার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
একাত্তর সালে ‘আলবদরের কসাইখানা’ হিসেবে পরিচিত ডালিম হোটেলের নির্যাতন কেন্দ্রে নির্যাতিত ও তাদের স্বজনরা শুধু মীর কাসেম আলী নন, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি দেখতে চান।

ডালিম হোটেলে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তখনকার চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র (বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য) ইরশাদ কামাল খান।

মঙ্গলবার বিকেলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে বসে আলাপকালে ইরশাদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধু মীর কাসেম আলী নন, যারা আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছিলেন, তদন্ত করে সবার পরিচয় বের করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। আমরা নির্যাতনের বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারা সবাই আলবদর। ডালিম হোটেলও ছিল আলবদরদের নিয়ন্ত্রণে। আর আলবদর বাহিনী যারা গঠন করেছিলেন তারা সবাই তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মী।’

অন্যদিকে একাত্তরে ডালিম হোটেলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রামে জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন খান। জীবনভর নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে বেড়িয়ে ২০০৭ সালের ২৮ জুন তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার দুপুরে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিরো’র কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী নূরজাহান খান বলেন, ‘লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে আমার স্বামীর স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি স্বাভাবিকতা হারিয়েছিলেন। ডালিম হোটেলে যাদের কাছে আমার স্বামী নির্যাতিত হয়েছিলেন, আমি তাদের সবার শাস্তি চাই।’

মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। সে-হিসেবে তিনি আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ভোরে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় আজিজ কলোনিতে সাইফুদ্দিন খানের বাসা থেকে তাকে ও ইরশাদ কামাল খান, পটিয়া মহকুমা ন্যাপের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরনবীসহ বেশ কয়েকজনকে ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইরশাদ কামাল খান ছিলেন সাইফুদ্দিন খানের বড় ভাই ডা. কামাল এ খানের সন্তান।

ইরশাদ কামাল জানান, দু’হাত পেছনে নিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে তাদের ট্রাকে তোলা হয়েছিল। বাধ্য করা হয়েছিল, পাকিস্তান-জিন্দাবাদ বলতে। আলবদররা সবাই খাকি পোশাক পরা ছিল, তাদের সবার মুখে রুমাল বাঁধা ছিল। ডালিম হোটেলে নেয়ার পর তারা সবসময় নিরস্ত্র বাঙালিদের হাত রশি দিয়ে এবং চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে রাখত। আমাদের খুব দুর্গন্ধময়, অন্ধকার, স্যাতস্যাতে একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আলবদররা সুযোগ পেলেই এসে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করত, অকথ্যভাবে নির্যাতন করত। পুরো কক্ষে শোনা যেত শুধু গোঙানির শব্দ। কেউ কাতরাচ্ছেন, কেউ পানি, পানি বলে চীৎকার করছেন। দু’হাত, চোখ বাঁধা অবস্থায় অনেকেই কক্ষের ভেতরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেন।’

তিনি বলেন, ‘একদিন আমি শুনতে পেলাম, একজন খুব ক্ষীণ কণ্ঠে মা, মা বলে চীৎকার করছেন। পরে বুঝতে পারলাম, তিনি ছিলেন আমার চাচা সাইফুদ্দিন খান। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি এভাবে চীৎকার করছেন। অবিশ্বাস্য রকমের নির্যাতন করত তারা। জীবিত ফিরতে পারব একথা কখনও কল্পনাও করিনি।’

অন্যদিকে নূরজাহান খান বলেন, ‘মুক্ত হওয়ার পর সাইফুদ্দিন খান বলেছিলেন, তাদের লাথি মারত, লোহার রড দিয়ে পেটাত। পানি চাইলে মুখের উপর প্রস্রাব করে দিত। মরে গেলে লাথি মেরে ডালিম হোটেলের পাশে টিনের ছাদের ওপর ফেলে দিত। মুখের উপর মাছি ভনভন করতে দেখলে অন্যরা বুঝতে পারত আর বেঁচে নেই। আমার স্বামীকে ফিরে পাব, এটা আমি কখনোই ভাবিনি।’

ইরশাদ কামাল খান বলেন, ‘আলবদররা কেউ এলে আর্মি স্টাইলে স্যালুট দিতেন। তবে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতেন। কারও নাম বলত না। এ কারণে সেসময় তাদের পরিচয় জানা সম্ভব ছিল না। তারা আন্ডারগ্রাউন্ড সংস্কৃতির অনুসারী। তবে তারা যে ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে জড়িত সেটা জানতাম।’
ইরশাদ কামাল খান জানান, তাকে ডালিম হোটেলে চারদিন রাখা হয়েছিল। পরে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই কাগজে লেখা ছিল, আওয়ামী লীগ ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত। আমি না বুঝে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। আমি এজন্য অনুতপ্ত।’
তিনি জানান, চারদিনে তাকে দু’একবার তাকে পান্তা ভাত আর মাছের কাঁটা খেতে দেয়া হয়েছিল। ক্ষুধার কারণে এ খাবারই তিনি তৃপ্তি নিয়ে খেতেন।
নূরজাহান খান জানান, তার স্বামীকে ২০ নভেম্বর জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৭ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
নূরজাহান খান বলেন, ‘মীর কাসেম আলীসহ যুদ্ধাপরাধীদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, বিচার শুরু হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তি দেখতে চাই। একসিঙ্গে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক। যেন তাদের অর্থের উৎস ধ্বংস হয়ে যায়। তারা যেন দুর্বল হয়ে যায়, যাতে তারা এ বিচার বন্ধের ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’
ইরশাদ কামাল খান বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি নির্যাতনকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কারা এ নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তা জানার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তখন সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর আমি বিদেশে চলে যাই। তারপর তো ১৯৭৫-এ দেশের পরিস্থিতিই পাল্টে যায়। উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করে দেশ। যা হোক, এখন ৪০ বছর পর যখন বিচার শুরু হয়েছে তখন আমি এ বিচারের শেষ দেখতে চাই।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে গত রোববার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল থেকে জামায়াতের মজলিশে শূরার সদস্য মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়।
- রমেন দাশগুপ্ত
http://www.ebanglanews24.com/Bangla/detailsnews.php?nssl=dd991b5b954e8bd574dd0e770ea07988&nttl=20062012120639

Thursday, June 26, 2014

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের সময় নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা

 সোমবার ঢাকা ৮ এপ্রিল ২০১৩, ২৫ চৈত্র ১৪১৯, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের সময় একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমীনসহ নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, কর্মজীবী নারীসহ বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক সমাবেশ করে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আরো প্রতিবাদ জানিয়েছে জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বামমোর্চা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। এদিকে নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী ৯ এপ্রিল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সমাবেশ করা হবে। নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের (আইপিআই) ভাইস চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল জলিল ভূঁইয়া, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, সহ-সভাপতি দিল মনোয়ারা মনু, সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নারীবিষয়ক সম্পাদক আইরিন নিয়াজী মান্না, নাদিয়ার বড় বোন অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিনসহ আরো অনেকে। এতে সংহতি জানিয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার ও বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টসহ আরো অনেকেই। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, তারা যে আচরণ করেছে এতে মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে তালেবানরা নারীদের যেমন পশ্চাৎপদ করে ফেলেছিল, বাংলাদেশেও তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, হেফাজতে ইসলামের দেয়া ১৩ দফা দাবি কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, তারা যে ১৩টি দাবি করেছে তার কোনোটিই বাংলাদেশের পক্ষে নয়। দেশের গার্মেন্টস শিল্পের ৯০ শতাংশ শ্রমিক নারী। এসব নারী যদি কাজ বন্ধ করে ঘরে চলে যায়, দেশের অর্থনীতির কি হবে? 
গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার নাদিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শনিবার বেলা ১২টার দিকে লম্বা পাঞ্জাবি পরা কয়েকজন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি মহিলা মানুষ, আপনার এখানে কি? আপনি এখান থেকে চলে যান। উত্তরে আমি বলি, আমি মহিলা না, একজন সাংবাদিক। সংবাদ সংগ্রহ করতে এখানে এসেছি। একথা শেষ হওয়া মাত্র হেফাজতের ৫০-৬০ জনকর্মী আমার দিকে তেড়ে আসে, আমাকে আচমকা চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। আমি সেখান থেকে দ্রুত চলে আসার চেষ্টা করি, এরপরও তারা আমাকে পেছন থেকে পানির বোতল ইট ছুড়ে মারতে থাকে।
তিনি বলেন, ওরা আমাকে পরিকল্পিতভাবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সহকর্মীরা এগিয়ে না এলে ওরা আমাকে মেরে ফেলত। পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত ওরা আমাকে মারতে মারতে ৬ থেকে ৭ বার ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি মারে। উঠে দৌড়ানো শুরু করলে পেছন থেকে আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, মাথায় লাথি মারে। বারবার তারা আমার কাপড় টেনে-হিঁচড়ে কিল ঘুষি মারে। 
নাদিয়া বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার, কর্মজীবী নারীর শিরিন আখতার, নাট্যকর্মী রোকেয়া প্রাচীসহ আরো অনেকে। হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, যারা একজন নারীকে হেফাজত করতে পারেন না তারা কিভাবে ইসলামের হেফাজত করবেন?
এছাড়া শনিবার ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক আরাফাত আরা পল্টন মোড়ে তার অফিসে যাওয়ার পথে হয়রানির শিকার হন। তিনি হেঁটে অফিস যাওয়ার পথে তার পথরোধ করে তাকে মাথায় কাপড় দিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বলে। একই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন, বাংলানিউজের চিফ ল করেসপনডেন্ট জাকিয়া আহমেদ। তিনি জানান, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির কাছে দায়িত্বপালনকালে একজন মিছিল থেকে ওই মাইয়্যা মাথায় কাপড় নাই ক্যান বলে চিৎকার করে ওঠে। একথা শুনে জাকিয়া ভয় পেয়ে যান। মিছিলের অন্যরা এ সময় নারী সাংবাদিকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাংবাদিক সুমি খান। 
নারীবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার ঘোষণা নারী সমাজের : হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক নারী সাংবাদিক নির্যাতন, পথচারী নারীদের নাজেহাল করা এবং নারীর প্রতি অবমাননামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নারীবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে নারী সমাজ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নারীদের অংশগ্রহণে এক মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় নারী মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে সমাবেশের তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।  
ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জলি তালুকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাসদের শিরিন আক্তার, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য হাজেরা সুলতানা, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের শম্পা বসু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন, জোবেদা নাসরিন কণা, রোকেয়া প্রাচী, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকী আক্তার, গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী নাসিমা আক্তার প্রমুখ। 
সমাবেশে শিরিন আক্তার বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, ধর্মের নামে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। মেয়েরা কাজ করতে পারবে না এমন কথা ইসলামে নেই। কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতি যখন সারাবিশ্বে আলোচিত, তখন নারীদের ওপর হামলা এবং তাদের অগ্রযাত্রার পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। 
হাজেরা সুলতানা বলেন, ইসলাম রক্ষার নামে নারী নির্যাতন বন্ধ করে নারীবিদ্বেষী এই দলকে প্রতিহত করতে হবে। এসব মৌলবাদীদের হাত ভেঙে দিতে হবে। তাদের ডাকা হরতাল প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি। 
সমাবেশে সংহতি জানান, সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সংগীত শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট, নারী প্রগতি, কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাবি রোকেয়া হল শাখা, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাঁচতে শিখ নারী, ইয়ুথ অ্যান্ড হাঙ্গার, হাজারীবাগ ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক জোট, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বিপ্লবী নারী ফোরাম, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ : দায়িত্বপালনকালে নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ পরিবার এ সমাবেশ করে। নাদিয়া এ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভাগের চেয়ারম্যান গীতি আরা নাসরিন,  সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম, য. আবুল মনসুর আহমদ, টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজীব মীরসহ অন্যরা। গীতি আরা নাসরিন বলেন, এই হামলা কেবল একজন নারী সাংবাদিকের ওপর নয়, দেশের সব নারীর ওপর হামলা, দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। তিনি হামলাকারী এবং তাদের সহযোগীদের শাস্তি দাবি করেন। ফাহমিদুল হক বলেন, এই হামলায় নারী সমাজকে হেয় করা হয়েছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত আনা হয়েছে। 
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নিন্দা : এদিকে একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনের ওপর বর্বোরচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন গণমাধ্যম প্রতিনিধির ওপর হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। নারী সাংবাদিকের ওপর হামলায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
- See more at: http://manobkantha.com/2013/04/08/115720.html#sthash.PHf30PbE.dpuf