Saturday, August 16, 2014

সরস আড্ডার মধ্যমণি চিরজীবি ওবায়দুল গনি চন্দন –শরতের প্রথম দিনেই বিদায় নিলেন -সুমি খান

এই শরতের প্রথম দিনেই বিদায় নিলেন ওবায়দুল গনি চন্দন ।   একালের ছড়া সাহিত্যের তরুণ সেনা ওবায়দুল গনি চন্দন  ছড়া সাহিত্যে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করার পাশাপাশি  ক্রাইমরিপোটিং ও করতেন । একুশে টেলিভিশনে ও এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্রাইমরিপোর্টিং আর আদালত পাড়ায় আমার ব্যস্ত পদচারণা ।   টেলিভিশনে  অনেক সময়ে  ক্রাইম রিপোর্টিং আর আদালত একসাথে এ্যাসাইনমেন্ট থাকে । সেই নিয়মে ২০০৭ থেকে ২০১০ একুশে টেলিভিশন থেকে আমি ক্রাইম রিপোটিং , সিএমএম কোর্ট, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, উচ্চ আদালত, কারাগারে একাধারে এ্যাসাইনমেন্ট করেছি। 
এমন নিরস জায়গায় এক বিরল বিনোদন ছিল ওবায়দুল গণি চন্দন।  তিনি তখন বাংলাভিশনে কাজ করতেন। 
আমার এমনিতেই হাসির বাতিক আছে। যেদিন এ্যাসাইনমেন্টে চন্দন ভাই থাকতেন-অন্যান্য রিপোর্টার দের সব ক্লান্তি আর অবসাদ কেটে যেতো এক লহমায়। 

 চন্দন ভাই অনর্গল সরস গল্প বলে  যেতে পারতেন। আকাশ থেকে শব্দ নিয়ে যেন গল্প বানাতেন । এ এক অনন্য গুণ।  ওবায়দুল গণি চন্দনের সরস  ভঙ্গিও অনায়াস  গল্পে রামগড়–রের ছানাও অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে বাধ্য। চন্দন ভাইয়ের গল্পের  অনেক মজার কিছু স্মৃতি আছে। যা মনে করে বারবার হাসি পায়। এরকম একটা গল্প এখানে তুলে ধরছি, যাতে চন্দন ভাইকে যারা দেখেননি, তারা তার  সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারবেন। 

একদিন এনটিভি থেকে রাজু এসেছিলো সিএমএম কোর্টে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমরা একটু আগেই রওনা দিতাম।  তখনো মামলা আদালতে উঠেনি। চন্দন ভাই , আমরা সবাই বটতলায় দাঁড়ানো। চন্দন ভাই হঠাৎ রাজুর দিকে তাকিয়ে এনটিভির দিদারের কথা জানতে চাইলেন। বললেন, “ আচ্ছা , দিদার কেমন আছে?“  আমরা সবাই একটু চমকে গেলাম। দিদারের অসুস্থতার কথা তো শুনিনি, হঠাৎ কী হলো তার? রাজু বেশ স্বল্পভাষী। চন্দন ভাইয়ের কথার জবাবে বললো, “ হ্যাঁ, ভালো আছে। “   “ভালো আছে? যাক॥” বলে একটু নিশ্চিন্ত ভাব দেখিয়ে চন্দন ভাই বটতলার নিচের গোল চত্বরে পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে বসলেন।  চানাচুর মুড়ি ভাজা নিলেন হাতে। খুব সিরিয়াস ভং্গি কওে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,” দিদারের কিডনীতে পাথর হইছিলো। সেই পাথ্থর বেইচ্চা দিদারে তিনটা বিল্ডিং বানাইছে। “  আমি তো এ কথা শুনে  বেকুব বনে তাকিয়ে রইলাম- ভাবছিলাম,  কী বলে এসব চন্দন ভাই??   অন্যেরা হো হো করে হেসে উঠলো।  এর পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ আরে , সুমি আপা, এই গল্প যে কতোজনরে কইছি, আমি । অনেকে বিশ্বাস ও করছে।... “ এবার আমি হা হা  করে হেসে উঠলাম।  গন্ডার  আর কাকে বলে! এভাবে সেদিন এ্যাসাইনমেন্টের ফাঁকে ফাঁকে  বিকেল পর্যন্ত মাতিয়ে রাখলেন চন্দন ভাই । এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার দিদার চোধুরী বেশ ভদ্র, বিনয়ী এবং মৃদুভাষী। আমাদের মতোই ক্রাইম আর আদালত পাড়ায় তার নিয়মিত পদচারণা ছিল।  চন্দন ভাইয়ের সেদিনের গল্পের কয়েকদিন পর  সিএমএম কোর্টেই এনটিভির দিদারের সাথে দেখা।সেদিন তার ও এ্যাসাইনমেন্ট ছিল। আমি তাকে এ গল্প বলতে যেতেই হো হো কওে হেসে উঠলো দিদার। বলে উঠলো, “ ও, আমার কিডনী বেচার গল্প?” আমি অবাক হলাম, এই গল্প সত্যিই চন্দন ভাই অনেক জায়গায় বলেছেন এবং দিদারেরও জানা। দিদার বললো , “ আমি শুনেছি চন্দন ভাই এই গল্প করেছেন।“ অন্যান্য রিপোর্টার দের মধ্যে চ্যানেল আই য়ের পরাগ আজিম সহ আরো কারা যেন ছিলেন। এবার আরেক প্রস্থ হাসির ঢেউ উঠলো সবার মধ্যে। 
 আরেক দিনের কথা মনে পড়ছে খুব। দেশাল  মুক্তিযুদ্ধের সময়ের পত্রিকা  দিয়ে প্রথম যেবার ফতুয়া বানায়, আমি খুব শখ করে  কিনেছলিাম।  সাদাকালো সেই ফতুয়া পরে এ্যাসাইনমেন্ট করতে যাই একদিন। 
সেদিন সিএমএম কোর্টে চন্দন ভাই , দিদার দু’জনেই সম্ভবত ছিলেন। যথারীতি আড্ডায় গল্পে সবাইকে মাতিয়ে রেখেছেন চন্দন ভাই। আমি , আরো কয়েকজন রিপোর্টার একটু দূরে দাঁড়িয়ে  চন্দন ভাইয়ের রসালো গল্প শুনছিলাম। উনি হঠাৎ স্বভাবসুলভ ভং্গিতে হাত নেড়ে নেড়ে বলে উঠলেন, “ আইচ্ছা, দিদার , সবাই তো পত্রিকা পড়েন। পড়েন না?” সবাই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। চন্দন ভাই বলে উঠলেন, “ আইচ্ছা, সুমি আপাওে দেখছেন আপনারা আইজকা? গুমি আপা পুরা পত্রিকাটা গায়ে পইড়া চইলা আসছে!” এবার তো হাসির হুল্লোড় । এখানেই শেষ হলো না। আবার বললেন, “ আইচ্ছা পরাগ, আপনার সঙ্গে আমার ১শ’ টাকার বাজি- যদি আপনে সুমি আপার গায়ের পত্রিকা টা পড়তে পারেন. . . . .” 
সেদিন ও সবার কাজের ক্লান্তি কেটে গিয়েছিলো চন্দন ভাইয়ের এমন হাস্য রসাত্মক গল্পে!

এই ক্ষণজন্মা  নানান গেিণ গুণী ছিলেন । গান ও গাইতেন বেশ। একটি গানে তিনি বলেছেন- কত দুর তুমি যাবে প্রিয়া/তত দুর যাবো আমি/তোমার পথের বাঁকের শেষে/পাখিদের কানাকানি হবে/জানি পাখিদের কানাকানি।

---ওবায়দুল গনি চন্দন কম্পিউটারে লিখবার  ফন্ট নিয়ে লিখেছেন , ছয় বান্ধবী- 
সুলেখা আমার সবচেয়ে প্রিয়
ভালোবাসি খুব তাকে,
তাইতো দেখি সে অনেক ব্যাপারে
সঙ্গী হয়েই থাকে।

সুশ্রীকে লাগে মোটামুটি ভালো
মেঘনাকে নয় মন্দ,
সুতন্বীর মুখ দেখা ইদানীং
করেই দিয়েছি বন্ধ!

সাবরীনা খুব পপুলার নয়
মাঝে মাঝে দেখা হয়,
চন্দ্রাবতীও নজর কেড়েছে
মনকে করেছে জয়!

বান্ধবী এরা? ধূর বোকা!
নাম
কম্প্যুটারের ফন্টের,
বুদ্ধিমানের দ্বিতীয় লাইনে
পেয়েছে হয়তো মন টের!

২০০৮ সালে যেদিন তার সাথে আমার অত্যন্ত স্নেহের ছোটবোন রুবিনার বিয়ে হয়, তার পর দিনই এ্যাসাইনমেন্টে রুবিনার সাথে দেখা হয়। রুবিনা আমাকে বলে , চন্দন ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। এর পর রুবিনার বাচ্চা হলো। সবই যেন আমাদের সামনেই,  সবই যেন সেদিনের ঘটনা। গত ২৩ জুলাই রাত একটা বাজে  পুত্র রাফীকে নিয়ে  ফেসবুকে  চন্দন ভাই লিখেছেন,  এইটা আমার দুষ্ট একটা  মিষ্টি বাচ্চা , এই বাচ্চাটা আমারেই চুরি করছে। “
নিজের এমন সর্বনাশ করা চরম অন্যায় হয়েছে তার । একবার রুবিনা আর তাদেও মিষ্টি সোনা বাচ্চাটার কথা ভাবলেন না। দেশের এমন মেধাবী সন্তান এমন অকালে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন-কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না চন্দন ভাই। 
চন্দন ভাই তার লেখায়  বলেছিলেন, যেখানে পাখিদের কানাকানি হবে, যাবেন সেখানে।  সবকিছু রেখে সবার অলক্ষ্েয নিজেই চলে গেলেন, না ফেরার দেশে। তার কাজ আর লেখার মাঝে রয়ে যাবেন ওবায়দুল গণি চন্দন আর রয়ে যাবেন তার সহকর্মীদেও আড্ডায়!! ওুবিনা আর ছোট্ট রাফীর জন্যে গভীর সমবেদনা। এই শূণ্যতা কোনভাবেই পূরণ হবার নয়! 
  সুমি খান, বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক জনকন্ঠ 

আজমেরীসহ ১১ আসামি: নয়জন বিদেশে

অভিযোগপত্র অনিশ্চিত: আজমেরীসহ  জড়িত ;৯ জনই এখন বিদেশে

নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় জড়িত হিসেবে আজমেরী ওসমানসহ ১১ আসামির মধ্যে নয়জনই বিদেশে পালিয়ে গেছেন। একজন অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। আরেকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের তদন্ত দলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
র‌্যাবের সূত্র আরও বলছে, তদন্ত গুছিয়ে এনে তারা একটি খসড়া অভিযোগপত্রও তৈরি করেছে। তবে কবে নাগাদ অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে, তা কেউই বলতে পারছে না। মামলার বাদীপক্ষের অভিযোগ, ওসমান পরিবার এই হত্যায় জড়িত থাকায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
গত ৬ মার্চ ত্বকী হত্যার এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে র‌্যাবের সহকারী মহাপরিচালক (এডিজি) জিয়াউল আহসান বলেছিলেন, শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অবশ্য এরপর সাড়ে চার মাস পার হলেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
র‌্যাবের সূত্র জানায়, তদন্তে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আজমেরীর বাবা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান। আর তার দুই চাচা হলেন বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান।
তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, ত্বকী হত্যায় অংশ নেওয়া বাকি ১০ জন হলেন রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন, জামশেদ হোসেন, ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। র‌্যাব ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে মাদক মামলায় লিটন কারাগারে আছেন। আর কালাম শিকদার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন। র‌্যাবের সূত্র জানিয়েছে, তিনি নিহত হয়েছেন এবং তাঁর লাশ গুম করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি আজমেরী ওসমান এখন কলকাতায় আছেন। এই হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া একমাত্র আসামি সুলতান শওকত আছেন দুবাইয়ে। বাকি সাতজন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পালিয়ে আছেন বলে র‌্যাব ও পুলিশ জানতে পেরেছে।
অভিযুক্ত ১১ জনের মধ্যে প্রথম আলো ছয়জনের পরিবারের সদস্য ও দুজনের ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে সাতজনের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনেরা তাঁদের বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোকলেছুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তে র‌্যাব অনেকটাই এগিয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, কিছু সম্ভাব্য আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।’
তবে পলাতকদের মধ্যে কালাম, শিপন, জামশেদ, লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে শিপন ও জামশেদকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভ্রমর ও ও জ্যাকি আদালত থেকে জামিন নিয়ে গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ভ্রমর গত মার্চে এবং জ্যাকি গত জুনে জামিন পান। র‌্যাব সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
মামলার প্রধান আসামি আজমেরী গত ১ মে নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। ওই দিন তিনি বাবা নাসিম ওসমানের জানাজায় ও দাফনে অংশ নেন। এরপর আবারও তিনি কলকাতায় পালিয়ে যান বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন। হত্যার পর কিংবা বাবার মৃত্যুর পর কলকাতা থেকে দেশে ঢুকলেও তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বা র‌্যাব কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
র‌্যাবের তদন্ত নথিতে বলা হয়েছে, হত্যায় অভিযুক্ত ইউসুফ হোসেন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এবং আজমেরীর ঘনিষ্ঠজন। সুলতান শওকত নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভানেত্রীর ছেলে। অপরাধজগতে আজমেরীর ডান হাত বলে পরিচিত তিনি। অভিযুক্ত তায়েবউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে ওসমান পরিবারের রয়েছে পুরোনো সম্পর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসেরও অভিযোগ আছে। অভিযুক্ত কালাম শিকদার আজমেরী ওসমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন ও চাঁদাবাজ। আরেক অভিযুক্ত মামুন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই। কাজলকে চাঁদাবাজ ও আজমেরীর অন্যতম ঘনিষ্ঠজন বলে বর্ণনা করা হয়েছে নথিতে। তাঁর ভাই স্থানীয় যুবলীগের একজন নেতা। অভিযুক্ত অপু আজমেরীর তথ্যদাতা। রাজীব ও শিপন আজমেরীর বেতনভুক্ত ক্যাডার। অভিযুক্ত জামশেদ আজমেরীর গাড়িচালক।
এই হত্যাকাণ্ডে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও র‌্যাব দাবি করেছে, তারা তাঁর সম্পৃক্ততা পায়নি। অয়নের দুই সহযোগী সালেহ রহমান ওরফে সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমান বিষয়েও র‌্যাব একই কথা বলেছে। এই দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এর মধ্যে সীমান্ত এখনো কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত র‌্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ত্বকীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের এখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুবই কঠিন হবে। কেননা, মূল আসামিদের কেউই দেশে নেই। বিদেশ থেকে আসামিদের ফিরিয়ে এনে বিচার করা অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রায় অসম্ভব।
মামলার বাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকারী সংস্থা খুনিদের চিহ্নিত করেছে। অভিযোগপত্র দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, হত্যায় ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমান জড়িত থাকায় বিচার পাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে। নয়তো কোনো দিনই দেওয়া হবে না।’
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য র‌্যাবের ওপর উচ্চ আদালত বা অন্য কোনো স্থান থেকে নির্দেশনা এলে অভিযোগপত্র দেওয়া সহজ হবে। তাঁরা অভিযোগপত্র প্রায় প্রস্তুত করে বসে আছেন।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, স্পর্শকাতর এই মামলার অভিযোগপত্র শিগগিরই দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, ‘হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশে থাকুক আর দেশের বাইরে থাকুক, তাদের বিচার করা হবে।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকীকে নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার কাছ থেকে অপহরণ করা হয়। ৮ মার্চ তার লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। উচ্চ আদালত র‌্যাবকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

ছড়াকার-সাংবাদিক ওবায়দুল গনি চন্দন আর নেই

ওবায়দুল গনি চন্দন.--যেখানেই অবস্থান করতেন হতেন সবার মধ্যমনি। এই ক্ষণজন্মা গান গাইতেন বেশ। একটি গানে তিনি বলেছেন- কত দুর তুমি যাবে প্রিয়া/তত দুর যাবো আমি/তোমার পথের বাকের শেষে/পাখিদের কানাকানি হবে
জানি পাখিদের কানাকানি।-তবে তিনি আর গেলেন না হাজার প্রিয়ার অবস্থানের লক্ষ্যে। অলক্ষ‌্যে নিজেই চলে গেলেন, না ফেরার জন্য। বলেছিলেন, যেখানে পাখিদের কানাকানি হবে, যাবেন সেখানে। কিন্তু আজ এমন জায়গায় কেন গেলেন?আপনার বিরহে আজ পাখিরা কানাকানি করছে না, এই বিচ্ছেদে তারা আর্তনাদ করছে!
ছয় বান্ধবী- ---ওবায়দুল গনি চন্দন.
সুলেখা আমার সবচেয়ে প্রিয়
ভালোবাসি খুব তাকে,
তাইতো দেখি সে অনেক ব্যাপারে
সঙ্গী হয়েই থাকে।

সুশ্রীকে লাগে মোটামুটি ভালো
মেঘনাকে নয় মন্দ,
সুতন্বীর মুখ দেখা ইদানীং
করেই দিয়েছি বন্ধ!

সাবরীনা খুব পপুলার নয়
মাঝে মাঝে দেখা হয়,
চন্দ্রাবতীও নজর কেড়েছে
মনকে করেছে জয়!

বান্ধবী এরা? ধূর বোকা!

নাম
কম্প্যুটারের ফন্টের,
বুদ্ধিমানের দ্বিতীয় লাইনে
পেয়েছে হয়তো মন টের!


About Only child Obaidul Gani Chandan Wrote on July 23
Nipa Nipobithi asked -tui ki bachha churi korsis? cheledhora lagtese
July 23 at 11:04pm
ওবায়দুল গনি চন্দন - Hahaha.sobai age tai bolchhe.tar mane tor dristio besh prokhor.eita amar dustu ekta misti bachcha.ei bachchata amarei churi korchhe. July 24 at 12:54am ·

১৫ আগস্ট পঁচাত্তর ভোররাত

Friday, August 15, 2014

একটি অসাধারণ আত্মজীবনী- -ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল


আগস্ট ১৪, ২০১৪

Md. Jafar Iqbal ১.
মাঝে মাঝেই আমার মনে হয় আমাদের কত বড় সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষের জন্ম হয়েছিল। ঠিক সেই সময়টিতে দরকার হয়েছিল তখন যদি তাঁর মতো একজন মানুষের জন্ম না হত তাহলে কী হত? তাহলে কি বাঙালিরা নিজের একটা দেশের স্বপ্ন দেখতে পারত? সেই দেশের জন্যে যুদ্ধ করতে পারত? অকাতরে প্রাণ দিতে পারত?
যদি আমরা নিজের একটি দেশ না পেতাম, এখনও পাকিস্তান নামের সেই বিদঘুটে দেশটির অংশ হিসেবে থাকতাম তাহলে আমাদের কী হত, সেই কথা চিন্তা করে আমি আতঙ্কে শিউরে শিউরে উঠি।
এই মানুষটিকে পঁচাত্তরে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক মহামানবকে নিজের দেশ কিংবা দেশের মানুষের জন্যে প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিষয়টি ছিল অবিশ্বাস্য। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেই হত্যাকারীরা দাায়িত্ব শেষ করেনি, এই দেশের ইতিহাস থেকে তাঁর চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্যে একুশটি বছর এমন কোনো কাজ নেই যেটি করা হয়নি। যে মানুষটির কারণে আমরা আমাদের দেশটি পেয়েছি সেই দেশের রেডিও টেলিভিশনে কোনোদিন তাঁর নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি।
আমার মনে আছে প্রথমবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম, “চল আমরা একটা টেলিভিশন কিনে আনি, এখন নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুকে টেলিভিশনে দেখাবে।” শুধুমাত্র তাঁকে দেখার জন্যে আমরা একটা টেলিভিশন কিনে এনেছিলাম!
যে মানুষটির কারণে আমরা আমাদের দেশটি পেয়েছি সেই দেশের রেডিও টেলিভিশনে কোনোদিন তাঁর নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নিযে মানুষটির কারণে আমরা আমাদের দেশটি পেয়েছি সেই দেশের রেডিও টেলিভিশনে কোনোদিন তাঁর নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি- আমরা আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশকে জন্ম নিতে দেখেছি, আমরা এই দেশের ইতিহাসের সাক্ষী, ইতিহাসের অংশ।
আমাদের চোখের সামনে বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। শৈশব কৈশোরে তাঁর সবকিছুর গুরুত্ব সবসময় বুঝতে পারিনি, এখন বড় হয়ে যখন পিছনে ফিরে তাকাই কখনও বিস্মিত হই, কখনও রোমাঞ্চিত হই, কখনও হতচকিত হয়ে যাই।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে একজন মানুষ হিসেবে অনুভব করার অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটেছে ২০১২ সালে, যখন তাঁর নিজের হাতে লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি হাতে পেয়েছি। আমি যখন নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনীটি পড়ছিলাম তখন আমার বার বার মনে হয়েছিল, বছরের হিসেবে আমাদের বঙ্গবন্ধু তো নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে খুব একটা কম সময় জেলে ছিলেন না, অবদান হিসেবে তাঁর অবদান তো নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে কোনো অংশে কম নয়, তাহলে তিনি কেন তাঁর মতো করে নিজের আত্মজীবনী লিখে গেলেন না, আমরা কেন সেটি পড়ে রোমঞ্চিত হবার সুযোগ পেলাম না। তাই শেষ পর্যন্ত যখন বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা আবিষ্কৃত হল, সেটি প্রকাশিত হল আমার আনন্দের সীমা ছিল না।
শিশু-কিশোরেরা যেভাবে রুদ্ধশ্বাসে ডিটেকটিভ বই পড়ে আমি ঠিক সেভাবে রুদ্ধশ্বাসে বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীটি পড়েছি। আমি মনে করি এই বইটি আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। যারা দেশকে ভালোবাসে তাদের সবাইকে এই বইটি পড়তে হবে। যারা রাজনীতি করে তাদেরকে এই বই পড়তে হবে। যারা রাজনীতি করতে চায় তাদেরকে এই বই পড়তে হবে। যারা দেশ শাসন করে তাদেরকে এই বই পড়তে হবে। যারা দেশ শাসন করতে চায় তাদেরকেও এই বই পড়তে হবে। এই বইটি পড়লেই শুধুমাত্র একজন মানুষ বুঝতে পারবে কীভাবে একজন মানুষ একটি জাতি হয়ে উঠে, একটি জাতি কীভাবে দেশ হয়ে উঠে।
বইটিতে অসংখ্য বিষয় আছে, যেমন ধরা যাক বাঙালিদের কথা। তিনি বাঙালিদের কীভাবে দেখেছেন? বইয়ের অনেক জায়গায় তাদের কথা লেখা আছে। আমার পছন্দের একটা অংশ যখন তাদেরকে পাকিস্তানিদের সাথে তুলনা করেছেন (পৃষ্ঠা ২১৪)–
‘‘প্রকৃতির সাথে মানুষের মনেরও একটা সম্বন্ধ আছে। বালুর দেশের মানুষের মনও বালুর মত উড়ে বেড়ায়। আর পলিমাটির বাংলার মানুষের মন ঐ রকমই নরম, ঐ রকমই সবুজ। প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্যে আমাদের জন্ম, সৌন্দর্যই আমরা ভালবাসি।”
আমি মনে করি এই বইটি আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই
বাঙালির চরিত্রের নিখুঁত ব্যাখ্যাও করেছেন অন্য জায়গায় (পৃষ্ঠা ৪৭)–
‘‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান, আর একটা হল আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোনো ভাষাতেই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, ‘পরশ্রীকাতরতা’। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষাতেই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।…. যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদর মুক্তি আসবে না।”
আমি মনে করি এই বইটি আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই
বাঙালিদের নিয়ে এর চাইতে খাঁটি মূল্যায়ন আমার চোখে আর কখনও পড়েনি!
এই বাঙালিদের জন্যে তাঁর বুকে ছিল গভীর ভালোবাসা। নির্বাচনের সময় একবার হেঁটে হেঁটে প্রচারণার কাজ চালাচ্ছেন, তখন এক হতদরিদ্র বৃদ্ধা মহিলার সাথে দেখা। বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্যে কয়েক ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁকে ধরে নিজের কুঁড়েঘরে নিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান আর চার আনা পয়সা দিয়েছেন, বলেছেন, “খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছু নেই।”বঙ্গবন্ধু সেই পয়সা না নিয়ে উল্টো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন, লাভ হয়নি। 

সেই হতদরিদ্র মহিলার বাড়ি থেকে বের হবার পর, বঙ্গবন্ধু লিখছেন (পৃষ্ঠা ২৫৬)–
‘‘নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেইদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘মানুষরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।”আমরা সবাই জানি বঙ্গবন্ধু তাঁর এই প্রতিজ্ঞা কখনও ভঙ্গ করেননি। 

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এই পুরো বইটার একটা বড় অংশ হচ্ছে কীভাবে বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের গুণ্ডা আর পুলিশের নির্যাতন সহ্য করছেন, জেল খাটছেন, পাকিস্তানের জন্যে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু দেশবিভাগের পরপরই খুব দ্রুত মুসলিম লীগের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছেন। আর এই মুসলিম লীগ সরকার তাঁর উপর নির্যাতন করছে, বিনা বিচারে দিনের পর দিন জেলখানায় আটকে রেখেছে। এক জায়গায় বর্ণনা আছে মাওলানা ভাসানিকে নিয়ে শোভাযাত্রা করছেন, তখন পুলিশ আক্রমণ করেছে।
বঙ্গবন্ধু লিখছেন (পৃষ্ঠা ১৩২)–
“আমার উপর অনেক আঘাত পড়ল। একসময় প্রায় বেহুঁশ হয়ে এক পাশের নদর্মায় পড়ে গেলাম।…. আমার পা দিয়ে খুব রক্ত পড়ছিল। কেউ বলে গুলি লেগেছে, কেউ বলে গ্যাসের ডাইরেক্ট আঘাত, কেউ বলে কেটে গেছে পড়ে যেয়ে।”
তারপর কীভাবে তাঁকে ধরাধরি করে পার্টির অফিসে নিয়ে যাওয়া হল তার বর্ণনা আছে। সেখানে একটু চিকিৎসা করে বেদনায় কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হল। কিন্তু গভীর রাতে পুলিশ এল তাদের গ্রেপ্তার করতে। মাওলানা ভাসানি খবর দিয়েছিলেন যেন কোনোভাবে গ্রেপ্তার না হন, তাই লিখছেন,
“আমার শরীরে ভীষণ বেদনা, জ্বর উঠেছে, নড়তে পারছি না। কী করি! তবুও উঠতে হল এবং কী করে ভাগব তা ভাবছিলাম।… তিনতলায় আমরা থাকি, পাশেই একটা দোতলা বাড়ি ছিল। তিন তলা থেকে দোতলায় লাফিয়ে পড়তে হবে। দুই দালানের ভিতর ফারাকও আছে। নিচে পড়লে শেষ হয়ে যাব। তবুও লাফ দিয়ে পড়লাম।”
আমরা হলিউডের ছবিতে এরকম দৃশ্য দেখে অবিশ্বাসের হাসি হেসে থাকি। কিন্তু এটা হলিউডের ছবি নয়, বঙ্গবন্ধুর নিজের জীবনের ঘটনা, নিজের হাতে লেখা!
একবার পাকিস্তান থেকে দিল্লি হয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলায় ফিরে আসছেন, তিনি জানেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, তিনিও প্রস্তুত আছেন, তাঁর ভাষায় (পৃষ্ঠা ১৪৫)–
‘‘আমিও প্রস্তুত আছি, তবে ধরা পড়ার পূর্বে একবার বাবা, মা, ভাইবোন, ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করতে চাই।”
কারণ (পৃষ্ঠা ১৪৬)–
‘‘কয়েক মাস পূর্বে আমার বড় ছেলে কামালের জন্ম হয়েছে, ভাল করে দেখতেও পারি নাই ওকে। হাচিনা তো আমাকে পেলে ছাড়তেই চায় না।” (এই বইয়ে শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু সবসময় হাচিনা লিখেছেন)
এরপর পুলিশের চোখে ধূলা দেওয়ার জন্যে ট্রেনে, স্টেশনে কী করেছেন তার চমকপ্রদ বর্ণনা আছে। সবচেয়ে বিচিত্র বর্ণনা হচ্ছে জাহাজে ওঠার অংশটুকু। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় (পৃষ্ঠা ১৪৬)–
‘‘সকল যাত্রী নেমে যাওয়ার পরে আমার পাঞ্জাবি খুলে বিছানার মধ্যে শুয়েছিলাম। লুঙ্গি পরা ছিল, লুঙ্গিটা একটু উপরে উঠিয়ে বেঁধে নিলাম। বিছানাটা ঘাড়ে, আর সুটকেসটা হাতে নিয়ে নেমে পড়লাম। কুলিদের মত ছুটতে লাগলাম, জাহাজ ঘাটের দিকে। গোয়েন্দা বিভাগের লোক তো আছেই। চিনতে পারল না।”
বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছিলেন। অল্প কিছুদিন স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সাথে কাটাতে পেরেছিলেন। যখন যাবার সময় হয়েছে তখন লিখছেন (পৃষ্ঠা ১৬৪)–
‘‘ছেলেমেয়েদের জন্য যেন একটু বেশি মায়া হয়ে উঠেছিল। ওদের ছেড়ে যেতে মন চায় না, তবুও তো যেতে হবে। দেশসেবায় নেমেছি, দয়া-মায়া করে লাভ কী? দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে ত্যাগ তো করতেই হবে এবং সে ত্যাগ চরম ত্যাগও হতে পারে।”
বঙ্গবন্ধু যখন এই বাক্যটি লিখেছিলেন তখন কি তিনি জানতেন তাঁর জন্যে একদিন এটি কত বড় একটি সত্য হয়ে দাঁড়াবে!
বঙ্গবন্ধু যখন এই বাক্যটি লিখেছিলেন তখন কি তিনি জানতেন তাঁর জন্যে একদিন এটি কত বড় একটি সত্য হয়ে দাঁড়াবে!
বঙ্গবন্ধু যখন এই বাক্যটি লিখেছিলেন তখন কি তিনি জানতেন তাঁর জন্যে একদিন এটি কত বড় একটি সত্য হয়ে দাঁড়াবে!
জেলখানায় থাকতে থাকতে তাঁর ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, অনেক কষ্টে একবার ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসে সকালবেলা বিছানায় বসে স্ত্রীর সাথে গল্প করছেন, তার ছেলেমেয়ে নিচে বসে খেলছে। বঙ্গবন্ধু লিখছেন (পৃষ্ঠা ২০৯)–
‘‘হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’, ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ ’’
বঙ্গবন্ধু তখন বিছানা থেকে নেমে ছেলেকে কোলে নিয়ে বললেন, “আমি তো তোমারও আব্বা।”
তাঁর ছেলে তাঁকে চেনে না, তাই কাছে আসতে চাইত না। এই প্রথমবার বাবার গলা ধরে পড়ে রইল। লেখক সাহিত্যিকেরা বানিয়ে বানিয়ে কত কী লিখে পাঠকদের মন দুর্বল করে ফেলে, কিন্তু এ রকম সত্যি ঘটনা কি তারা লিখতে পারবে?
ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু জেলে, দুই বছর থেকে বেশি সময় বিনা বিচারে জেলে আটকা পড়ে আছেন, তখন ঠিক করলেন মুক্তির জন্যে আমরণ অনশন করবেন। খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁকে এবং তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীকে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনশন শুরু করার দুইদিনের ভেতর খুব শরীর খারাপ হলে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হল।
চারদিন পর তাঁদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। বঙ্গবন্ধুর নাকে ঘা হয়ে গেছে, রক্ত আসে, যন্ত্রণায় ছটফট করেন। যখন বুঝতে পারলেন আর বেশিদিন বাঁচবেন না, গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনিয়ে বাবা, স্ত্রী এবং তাঁর দুই রাজনৈতিক নেতা সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানিকে চিঠি লিখলেন; কারণ তখন বুঝে গেছেন কয়েকদিন পর আর লেখার শক্তি থাকবে না।
বঙ্গবন্ধু অনশনে কীভাবে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। চিঠি চারটি ঠিক জায়গায় পৌছানোর ব্যবস্থা করেছেন। লিখছেন (পৃষ্ঠা ২০৪)–
‘‘আমাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তিছায়ায় চিরদিনের জন্যে স্থান পেতে পারি। সিভিল সার্জন সাহেব দিনের মধ্যে পাঁচ সাতবার আমাদের দেখতে আসেন। ২৫ তারিখ সকালে যখন আমাকে তিনি পরীক্ষা করছিলেন হঠাৎ দেখলাম তার মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে। তিনি কোনো কথা না বলে, মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলেন। আমি বুঝলাম আমার দিন ফুরিয়ে গেছে।… ডেপুটি জেলর সাহেব বললেন, ‘কাউকে খবর দিতে হবে কি না? আপনার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী কোথায়? আপনার আব্বার কাছে কোনো টেলিগ্রাম করবেন?’ বললাম, ‘দরকার নাই। আর তাদের কষ্ট দিতে চাই না।’ আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল।….”
এভাবে আরও দুদিন কেটে গিয়েছে। বঙ্গবন্ধু লিখছেন (পৃষ্ঠা ২০৫)–
“২৭ তারিখ রাত আটটার সময় আমরা দুইজন চুপচাপ শুয়ে আছি। কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছাও নাই, শক্তিও নাই। দুইজনই শুয়ে শুয়ে কয়েদির সাহায্যে ওজু করে খোদার কাছে মাপ চেয়ে নিয়েছি।….”
বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কিছু শেষ পর্যন্ত অনশনে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়নি, এই জীবন-বাজি ধরা আন্দোলনের কাছে সরকার মাথা নত করে তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
পুরো বইটিতে এরকম অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা আছে। কীভাবে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে একটা রাজনৈতিক দল গড়ে তুলেছেন তার নিখুঁত বর্ণনা আছে। ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, বাধা বিপত্তি, ভয়ংকর অর্থকষ্ট, পুলিশের নির্যাতন, বিশ্বাসঘাতকতা সবকিছুকে সামাল দিয়ে কীভাবে একটা রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হয় সেটি এর চাইতে সুন্দর করে আর কোনো বইয়ে লেখা আছে বলে আমার জানা নেই।
মাঝে মাঝে যে হাস্যরস বা কৌতুক নেই তা নয়। রাতের বেলা নৌকা করে যাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছেন, তখন ডাকাত পড়েছে। এলাকার সবাই বঙ্গবন্ধুকে চেনে, তাঁকে ভালোবাসে, ডাকাতেরা যখন জানতে পারল নৌকায় বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন তারা ডাকা না করেই মাঝিকে এক ঘা দিয়ে বলল, ‘শালা, আগে বলতে পার নাই শেখ সাহেব নৌকায়’। ঘুম থেকে উঠে ঘটনাটা শুনে বঙ্গবন্ধু বললেন, (পৃষ্ঠা ১২৫)–
‘‘বোধ হয় ডাকাতরা আমাকে ওদের দলের একজন বলে ধরে নিয়েছে!”
আরেকবার জনসভায় মাওলানা ভাসানিকে নিয়ে বক্তৃতা করতে গিয়েছেন, পুলিশ তখন ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে, কেউ আর বক্তৃতা করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু তেজস্বী মানুষ, বললেন (পৃষ্ঠা ১২৮)–
“’মানি না ১৪৪ ধারা, আমি বক্তৃতা করব।’ মাওলানা সাহেব দাঁড়িয়ে বললেন– ‘১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। আমাদের সভা করতে দেবে না। আমি বক্তৃতা করতে চাই না, তবে আসুন আপনারা মোনাজাত করুন, আল্লাহ আমিন।’ মাওলানা সাহেব মোনাজাত শুরু করলেন। মাইক্রোফোন সামনেই আছে। আধা ঘণ্টা চিৎকার করে মোনাজাত করলেন, কিছুই বাকি রাখলেন না, যা বলার সবই বলে ফেললেন। পুলিশ অফিসার ও সেপাইরা হাত তুলে মোনাজাত করতে লাগল। আধা ঘণ্টা মোনাজাতে পুরা বক্তৃতা করে মাওলানা সাহেব সভা শেষ করলেন। পুলিশ ও মুসলিম লীগওয়ালারা বেওকুফ হয়ে গেল!”
পুরো দৃশ্যটা কল্পনা করে এতদিন পরেও আমরা হেসে কুটি কুটি হই।
৩.
এই অসাধারণ বইটি সম্পর্কে লিখে শেষ করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমি বই থেকে নানা বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর কিছু কথা তুলে দিই। যেহেতু তিনি আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ, তাই তার রাজনীতি নিয়ে কথাগুলো সবচেয়ে সুন্দর। রাজনীতিটা কখনও দলবাজি হিসেবে দেখেননি। লিখেছেন (পৃষ্ঠা ২৩৯)–
‘‘ম্যানিফেস্টো বা পোষণাপত্র না থাকলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।”
আমলাতন্ত্র দুই চোখে দেখতে পারতেন না, তাই বলেছেন (পৃষ্ঠা ২৩৫)–
“রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র সফল হতে পারে না।”
আবার একই সাথে অযোগ্য রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এভাবে সতর্ক করেছেন (পৃষ্ঠা ২৭৩)–
‘‘অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনোদিন একসাথে হয়ে দেশের কোনো কাজে নামতে নেই।”
বামপন্থী রাজনীতি সম্পর্কে বলেছেন, (পৃষ্ঠা ২৩৪)–
‘‘আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না।”
আমাদের দেশে বামপন্থী রাজনীতি কেন কখনও বেশি সুবিধে করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু সেটি অর্ধশত বছরেরও আগে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর বামপন্থী বন্ধুদের উল্লেখ করে বলেছেন, (পৃষ্ঠা ১০৯)–
‘‘জনসাধারণ চলছে পায়ে হেঁটে, আর আপনারা আদর্শ নিয়ে উড়োজাহাজে চলছেন। জনসাধারণ আপনাদের কথা বুঝতেও পারবে না, আর সাথেও চলবে না। যতটুকু হজম করতে পারে ততটুকু জনসাধারণের কাছে পেশ করা উচিত।”
অতিপ্রগতিবাদীদের সম্পর্কেও তাঁর কথাটা তখনও সত্যি ছিল, এখনও সত্যি! বঙ্গবন্ধু বলেছেন (পৃষ্ঠা ২৪৫)–
‘‘অতি প্রগতিবাদীদের কথা আলাদা। তারা মুখে চায় ঐক্য। কিন্তু দেশের জাতীয় নেতাদের জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলে, চেষ্টা করে সেজন্যে!”
তবে বঙ্গবন্ধুর কাছে রাজনীতির বিষয়টি ছিল খুবই স্পষ্ট, সেটি ছিল একটা মহৎ কাজ। বার বার বলেছেন (পৃষ্ঠা ১২৮)–
“যে কোনো মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা জীবনে ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তারা জীবনে কোনো ভাল কাজ করতে পারে নাই।”
রাজনীতি করে তাঁর জীবনে এক ধরনের পূর্ণতা এসেছিল, কারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পুরোপুরি ধরাশায়ী করে লিখছেন (পৃষ্ঠা ২৫৭)–
“আমার ধারণা হয়েছিল মানুষকে ভালবাসালে মানুষও ভালবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্যে জীবন দিতেও পারে।”
“আমার ধারণা হয়েছিল, মানুষকে ভালবাসালে মানুষও ভালবাসে
“আমার ধারণা হয়েছিল, মানুষকে ভালবাসালে মানুষও ভালবাসে
বঙ্গবন্ধু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন, একবার নয় বার বার।
৪.
এই লেখার শুরুতে আমি বলেছিলাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি সবার পড়া উচিত, যারা দেশ চালাচ্ছে তাদেরও। আমার কেন জানি মনে হয় যারা দেশ চালাচ্ছেন তাদের সবাই এই বইটি পড়েননি, কিংবা তার চাইতেও দুঃখের ব্যাপার হয়তো বইটি পড়েছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো বিশ্বাস করেননি। আমার এরকম মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে এই বইয়ে সবচেয়ে বেশিশীবার যে কথাটি লেখা হয়েছে সেটি হচ্ছে (পৃষ্ঠা ১২৬)–
‘‘শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র চলতে পারে না।’’
কিংবা (পৃষ্ঠা ১২০)–
‘‘বিরোধী দল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কত্ব চলবে।’’
শক্তিশালী বিরোধী দল দূরে থাকুক আমরা কি এই দেশে কোনো বিরোধী দল দেখতে পাচ্ছি? দেশে আসলে কোনো বিরোধী দল নেই, একটা গৃহপালিত বিরোধী দল আছে, তাদের থাকা না থাকাতে কিছু আসা যায় না। জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনীতি করে এবং বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে বলে আমি মনে করি এই দেশে বিএনপির রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
এখন বাকি আছে সংবাদমাধ্যম। যতই দিন যাচ্ছে আমরা দেখছি সংবাদমাধ্যমকে কেমন জানি গলা টিপে ধরা হচ্ছে। মন্ত্রীরা কারণে অকারণে আজকাল সাংবাদিকদের গালাগাল করেন, ভয়ভীতি দেখান। গণজাগরণ মঞ্জ যখন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করল তখন তাদেরকেও দুই টুকরো করে দেওয়া হল। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে আমি যখন চেঁচামেচি করছিলাম তখন আমাকে নানাভাবে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, আমি যেন সরকারকে বিপদে না ফেলি।
বঙ্গবন্ধু বার বার বলেছেন সরকারকে ঠিক রাখতে হলে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। আমি এই দেশে তাই একটা বিরোধী দল খুঁজে বেড়াই। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের একটা বিরোধী দল। সেটি কোথায়?
১১.০৮.১৪
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Tuesday, August 12, 2014

ফিরে দেখা পঁচাত্তর- খুনিদের প্রস্তাবতাজউদ্দীন নাকচ করে দিলেন -মহিউদ্দিন আহমদ ।


বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি ফারুক, রশিদ ও নূর চৌধুরী

 পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে আসবেন -এ রকম একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ধোয়ামোছার কাজ চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন এমএ দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা চলছিল। ছাত্র-শিক্ষক সবাই ব্যস্ত।
বিপ্লবী গণবাহিনীর ঢাকা নগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। শেখ মুজিবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন উপলক্ষে একটা শক্তির মহড়া দেওয়ার চিন্তা করা হয়। কিন্তু তেমন কোনো বিক্ষোভ বা মিছিলের পরিকল্পনা করা যায়নি।
চুয়াত্তরের নভেম্বরে বোমা বানাতে গিয়ে তরুণ জাসদ নেতা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের লেকচারার নিখিল রঞ্জন সাহা নিহত হন।তাঁর নামে ওই বোমার নামকরণ হয় ‘নিখিল’।নিখিলের প্রস্তুতপ্রণালি ছিল স্থূল। ঢাকা নগর গণবাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ‘নিখিল’ ইমপ্রুভাইজ করেন।আনোয়ার হলেন গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের ছোট ভাই, তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে লেকচারার হিসেবে কর্মরত। রসায়ন তিনি ভালো বোঝেন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের আগমন যাতে নির্বিঘ্ধসঢ়;ন না হয়, সে জন্য তাঁর নির্দেশে গণবাহিনীর সদস্যরা ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তিনটি ‘নিখিল’ ফোটায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের কাছে, একটি সায়েন্স অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের চত্বরে এবং তৃতীয়টি কার্জন হলের সামনে। এর ফলে কিছু হুড়োহুড়ি এবং হইচই হয়। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।
১৫ আগস্ট ভোরবেলা ঢাকা শহরের অনেক অধিবাসীর ঘুম ভাঙে গোলাগুলির আওয়াজে। দিনটি ছিল ৩০ শ্রাবণ, শুক্রবার। রেডিওতে ঘোষণা শোনা যাচ্ছিল: আমি মেজর ডালিম বলছি। স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে উৎখাত করা হয়েছে। সারা বিশ্বে কারফিউ জারি করা হয়েছে। উত্তেজনার বশে ডালিম সারা বিশ্বে কারফিউ জারি করে দিলেন। তিনি ঘোষণা শেষ করলেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিয়ে। ঢাকা বেতারে ‘জিন্দাবাদ’ শোনা গেল প্রায় ৪৪ মাস পরে।
ধীরে ধীরে ১৫ আগস্টের ঘটনার বিবরণ প্রকাশ হতে থাকল। জানা গেল, সেনাবাহিনীর একদল জুনিয়র অফিসার এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। তাঁদের নেতা মেজর ফারুক রহমান ও মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন আরও কয়েকজন মেজর, ক্যাপ্টেন, লেফটেন্যান্ট ও জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার। তাঁদের অনেকেই সেনাবাহিনী থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন। এই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা। পরে তাঁকে মেজর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। হুদা ১৯৬৫-৬৭ সালে ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্র থাকাকালীন তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কলেজজীবনের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের একজন ছিলেন আবদুল বাতেন চৌধুরী। বাতেন জাসদের ঢাকা নগর পার্টি ফোরামের অন্যতম সদস্য। তিনি মুহসীন হলের ৩-এ নম্বর কক্ষে থাকতেন। হুদা বাতেনের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। বাতেন স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের সদস্য এবং ১৯৭২-৭৩ সালে এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর স্মৃতিচারণা থেকে এখানে উদ্ধৃত করা হলো:
১৩ আগস্ট বিকেল তিনটায় সেনা গোয়েন্দা দপ্তরের (ডিএমআই) ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা অসামরিক পোশাকে মুহসীন হলে আমার কক্ষে এল। সে ঢাকা শহরের দায়িত্বে ছিল। আমরা সূর্য সেন হলের ক্যানটিনে গিয়ে চা খেলাম এবং তারপর রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে একটা গাছের নিচে ঘাসের ওপর বসলাম। তারপর শুরু  হলো কথাবার্তা।
হুদা: তোরা যেভাবে চেষ্টা করছিস, তাতে কিছু হবে না। লেট আস ইউনাইট অ্যান্ড গিভ হিম এ ব্লো।
বাতেন: ইউনাইট হতে পারি, কিন্তু ব্লো দিতে পারব না। আমরা বিপ্ল­বে বিশ্বাস করি। তুমি যা বলছ, সে পথ আমাদের নয়।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সন্ধ্যা হয়ে এল।তাঁরা দুজন বলাকা বিল্ডিংয়ের দোতলার একটা চায়নিজ রেস্তোরাঁয় খাবার খেলেন। হুদা চলে যাওয়ার সময় বাতেনকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘কাল-পরশু দুদিন হলে না থাকাই ভালো। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। নানা ধরনের চাপ থাকবে। রাতে বাইরে থাকিস।’ হুদা বাতেনকে যোগাযোগের জন্য একটা টেলিফোন নম্বর দিলেন।
বাতেন সে রাতে মুহসীন হলেই ছিলেন।১৪ আগস্ট তিনি আজিমপুর কলোনিতে তাঁর বোনের বাসায় যান এবং সেখানেই রাত কাটান।
১৫ আগস্ট সকালে ঘুম ভাঙতেই রেডিওতে তিনি অভ্যুত্থানের সংবাদ পান। তিনি হেঁটে হেঁটে নিউমার্কেট-নীলক্ষেতের মোড়ে বিউটি রেস্টুরেন্টে যান এবং সেখানে নাশতা করেন। তারপর মুহসীন হলের দিকে রওনা হতেই দেখলেন বেশ কয়েকজন ছাত্র ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। তারা অত্যন্ত ভীতসন্ত্রন্ত।বাতেন এদের মধ্যে ফকির গোলেদার রহমানকে দেখলেন। গোলেদার মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং সরকার-সমর্থিত ছাত্রলীগের একজন নেতা গোছের ছিলেন।তাঁর পরনে লুঙ্গি এবং গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। গোলেদার বললেন, তিনি হলের গ্রিলবিহীন জানালা দিয়ে হল অফিসের একতলার ছাদে লাফিয়ে নেমেছেন এবং এখন যতদূর সম্ভব চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বাতেনকে তিনি বললেন, ‘আমারে মাপ কইরা দিস।’
বাতেন মুহসীন হলে তাঁর কক্ষে গেলেন।তিনি ঘরে জাহাঙ্গীর ও রুবেলকে পেলেন।ওঁরা ওই কক্ষেই থাকতেন। জাহাঙ্গীর গণবাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বাতেন বললেন, ‘তোরা আমার বোনের বাসায় চলে যা।’ তিনি নিজেই তাঁদের আজিমপুরে বোনের বাসায় নিয়ে এলেন।
বেলা ১১টার দিকে বজলুল হুদা বাতেনের বোনের বাসায় এসে হাজির হলেন।তিনি বাতেনকেনিয়ে বেরোলেন। তিনি নিজেই একটা জিপ চালাচ্ছিলেন। জিপের পেছনে একটা পিকআপে কয়েকজন সিপাহি।হুদা বললেন, ‘জাসদের সাপোর্ট দরকার, এটার ব্যবস্থা করো।’ বাতেন বললেন, ‘জাসদ সাপোর্ট দেবে না। জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করো। তাজউদ্দীনকে আনো, রাজ্জাককে আনো।’
হুদা বাতেনকে নিয়ে গণভবনের পেছনে একটা সেনা ক্যাম্পে গেলেন। সেখানে একটা ক্যানটিনে তাঁরা পরোটা-মাংস খেলেন। তারপর বাতেনকে আসাদগেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে তাজউদ্দীনের বাসার দিকে রওনা হলেন। হুদা পরে তাজউদ্দীনের বাসায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বাতেনকে বলেছিলেন। তাজউদ্দীনকে হুদা সরকার গঠনের অনুরোধ জানালে তাজউদ্দীন জবাবে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে আমি প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট হতে চাই না।’
বাতেনকে হুদা মুজিব হত্যার বিবরণ দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়িতে ওরা আক্রমণ চালায় মেজর (অব.) নূর চৌধুরীর নেতৃত্বে। গোলাগুলির শব্দ শুনে শেখ কামাল বেরিয়ে আসেন। একতলা থেকে তিনি প্রথমে গুলি ছোঁড়েননি। হুদা তৎক্ষণাৎ কামালকে গুলি করে হত্যা করেন। গোলাগুলির শব্দ শুনে শেখ মুজিব ওপর থেকে চিৎকার করে তাঁদের গোলাগুলি থামাতে বলেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কোনো কিছু বলার থাকলে ওপরে এসে আমাকে বলো।’ হুদারা তখন দোতলায় ওঠেন। শেখ মুজিবকে দেখে হুদা স্যালুট দেন। রাষ্ট্রপতিকে সামনাসামনি দেখে ভয়ে এবং উত্তেজনায় তাঁর পা কাঁপছিল। সাহস সঞ্চয় করে হুদা বলেন, ‘আমরা আপনাকে নিতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে।’ শেখ মুজিব ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘কোথায় যাব? কেন যাব? না, আমি যাব না।’
হুদা সাহস সঞ্চয় করে বলেন, ‘আপনাকে যেতেই হবে।’ তিনি শেখ মুজিবের গলার কাছে রিভলবারের নল ঠেকালেন। শেখ মুজিব বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি একটু চেঞ্জ করে আসি।’ তাঁর পরনে লুঙ্গি, হুদা সময় নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। বললেন, ‘এ পোশাকেও আপনি বঙ্গবন্ধু, চেঞ্জ করলেও বঙ্গবন্ধুই থাকবেন। পোশাক বদলানোর দরকার নেই।’ মুজিব তাঁদের সঙ্গে যেতে রাজি হলেন। বললেন, ‘দাঁড়াও, আমার পাইপ আর তামাক নিয়ে আসি।’ এই বলে তিনি তাঁর ঘরে গেলেন এবং পাইপ নিয়ে বেরিয়ে এলেন। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মাঝামাঝি জায়গায় পৌঁছালে পেছন থেকে একজন একটা গামছা বের করে মুজিবের চোখ বাঁধতে যান। মুজিব হাত দিয়ে এক ঝটকায় তাঁকে সরিয়ে দেন। হাতের আঘাত থেকে বাঁচতে হুদা হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন। তখন পেছন থেকে একজন মুজিবের ওপর ব্রাশফায়ার করেন। মুজিব ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা এ সময় দোতলায় গিয়ে বাড়ির সবাইকে হত্যা করেন। ‘অপারেশন’ শেষ করে ফেরার সময় হুদা কামালের টয়োটা গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে আসেন এবং সেনানিবাসে তাঁর মেসের সামনে রেখে দেন।
বাতেন হুদাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তাঁকে তোমরা কোথায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলে?’ হুদা বলেছিলেন, ‘রেডিও স্টেশনে। সেখানে তাঁকে অ্যানাউন্সমেন্ট দিতে হতো, ‘বাকশাল বাতিল করা হয়েছে, খন্দকার মোশতাককে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ হুদা আরও বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম না, তাঁকে মেরে ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল। আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল, তাঁকে ধরে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া।’ বাতেন জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোমরা তো তাঁকে পেয়েছিলেই, অন্যদের মারতে গেলে কেন?’ হুদা জবাব দিল, ‘শেখ মুজিবকে মেরে ফেলার পর আমরা আর কোনো সাক্ষী রাখতে চাইনি।’

শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের আকস্মিকতায় অনেকেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তেমন উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়নি। হুদা বাতেনকে বলেছিলেন, এ রকম একটা ঘটনা দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবার কাম্য ছিল। শুধু দুটো বিষয়ে তাঁদের অনেকের অজ্ঞতা ছিল। প্রথমত, ঘটনাটি কবে ঘটানো হবে এবং দ্বিতীয়ত, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে কি না। রশিদ-ফারুকের পরিকল্পনায় এই অভ্যুত্থানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই হত্যা পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
মেজর নুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি সর্বহারা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সিরাজ শিকদারের নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। ১৫ আগস্টের কয়েক দিন পর সর্বহারা পার্টির কয়েকজন নেতা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটা বাসায় সন্ধ্যাবেলা বৈঠক করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন, আকা ফজলুল হক ও মহসীন আলী। তাঁরা নূর ও ডালিমকে ডেকে পাঠান। নূর একাই এসেছিলেন। শেখ মুজিবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর বলেন, ‘ওরা আমার নেতাকে খুন করেছে, আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি।’ নূরের উদ্ধত আচরণে এবং নৃশংসতার পরিচয় পেয়ে জিয়াউদ্দিন ক্ষুব্ধ হন।
অনেক দিন পর বনানী ডিওএইচএসে কর্নেল ফারুকের বাসায় ফারুক ও রশিদের সঙ্গে আলাপ করার সময় আকা ফজলুল হককে কর্নেল রশিদ বলেছিলেন: শেখ মুজিবকে রেখে ক্যু করা যাবে কি না, তা নিয়ে আমরা অনেক ভেবেছি। কিন্তু দেখলাম তা সম্ভব নয়। রক্ষীবাহিনীর চিফ ব্রিগেডিয়ার নুুরুজ্জামানকে আগেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়। মুজিব পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সিদ্ধান্তটি অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়েছিল।
মুজিব হত্যার পরিকল্পনায় বিমানবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তাঁদের বাদ দিয়েই এই অপারেশন চালানো হয়। এ রকম একটা ‘অ্যাডভেঞ্চারে’ শরিক হতে না পেরে তাঁরা মনঃক্ষুণ্ধসঢ়; সঢ়;ন হয়েছিলেন। এর প্রকাশ ঘটেছিল নভেম্বরে।

কর্নেল তাহের সম্ভবত জানতেন না, ১৫ আগস্ট তারিখটিই অভ্যুত্থানের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে এ রকম একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। কোটি টাকার প্রশ্ন ছিল, কবে, কখন?

শেখ মুজিবের সরকারকে উৎখাতের জন্য তাহেরের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ছিল অপরিসীম।
তাহের মনে করতেন, ‘মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে চরম অবহেলা দেখিয়েছে এবং রক্ষীবাহিনীর মতো একটা কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে করা গোপন চুক্তির ব্যাপারেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
বাহাত্তর সালের নভেম্বরেই এসব ঘটেছিল এবং এ কারণেই লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন এবং তিনি যাঁর যাঁর রাজনৈতিক লাইন বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করতেন।’ ছিয়াত্তরে তাহের ও অন্যদের বিচারের সময় ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে তাহের এসব কথা উল্লেখ করেন।
শেখ মুজিব সম্পর্কে কর্নেল তাহেরের মূল্যায়ন ছিল এ রকম: শেখ মুজিব জনগণের নেতা ছিলেন। এটা অস্বীকার করার অর্থ হবে সত্যকে অস্বীকার করা। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তাঁর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার জনগণের ওপরই বর্তায়। জনগণের জন্য সঠিক পথ হবে জেগে ওঠা এবং প্রতারণার দায়ে মুজিবকে উৎখাত করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে জনগণ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে, তারাই একদিন স্বৈরাচারী মুজিবকে ধ্বংস করবে। জনগণ কাউকে ষড়যন্ত্র করার অধিকার দেয়নি।
হুদার সঙ্গে কথাবার্তায় বাতেনের মনে হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। সবাই সবটা জানেন না। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তাঁদের সবার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল।

আওয়ামী লীগ-বাকশালের বাইরে ওই সময় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ছিল জাসদ। জাসদের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন দেশে নেই। দলে একাধিক ‘কেন্দ্র’। গণবাহিনীর ইউনিটগুলো বিভিন্ন জেলায় মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হকচকিত, বিহ্বল। জাসদের মধ্যে যাঁরা ষাটের দশকের রাজনৈতিক সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন, ১৫ আগস্টের মতো একটা ঘটনা ঘটতে পারে, এটা তাঁরা কখনো চিন্তাই  করেননি।

১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা নগর গণবাহিনীর অন্যতম সদস্য মীর নজর–ল ইসলাম বাচ্চুর নেতৃত্বে তিতুমীর কলেজের সহসভাপতি কামালউদ্দিন আহমদ, গণবাহিনীর আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়াহিদুল ইসলাম সুটুল ও রতন ধানমন্ডিতে তাজউদ্দীনের বাসায় যান। কামালের বাড়ি ঢাকার কাপাসিয়া থানায়। তাঁর বড় ভাই নৌবাহিনীর প্রাক্তন লিডিং সি-ম্যান সুলতানউদ্দিন আহমদ আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এবং জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীনের সঙ্গে তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল এবং একই এলাকায় বাড়ি বলে তাঁদের মাঝেমধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হতো।

তাজউদ্দীনের বাসায় গিয়ে তাঁরা শুনলেন, তিনি গোসল করছেন। তাঁরা বাইরের ঘরে অপেক্ষা করতে থাকলেন। মিনিট দশেক পর তাজউদ্দীন এলেন। পরনে একটা পায়জামা, গায়ে হাতাওয়ালা গেঞ্জি। সিলিং ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে দুই হাতের আঙুল দিয়ে ব্যাকব্রাশের মতো ভঙ্গিতে চুল থেকে পানি ঝরাচ্ছিলেন। পানির ঝাপটা কামালের চোখে-মুখে এসে লাগছিল।
তাজউদ্দীন উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকলেন, ‘বোকার দল লাল বাহিনী বানায়, নীল বাহিনী বানায়। কোনো বাহিনী তাঁকে বাঁচাতে পারল?’
বাচ্চু বললেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ তাজউদ্দীন বললেন, ‘কোথায় যাব? কেন তোমাদের সঙ্গে যাব?’ বাচ্চু বারবার বলছিলেন, ‘যেতেই হবে।’

তাজউদ্দীন বললেন, ‘এটা কারা করল? রাইটিস্টরা না লেফটিস্টরা? লেফটিস্টরা হলে আমাকে আর জীবিত রাখবে না।’ লেফটিস্ট বলতে তিনি পিকিংপন্থীদের বোঝাচ্ছিলেন। বাচ্চুর কথার জবাবে তিনি বললেন, ‘সিরাজ কোথায়? ও যদি বলে তাহলে যেতে পারি। তাকে নিয়ে আসো।’ বাচ্চু বেরিয়ে গেলেন। আধঘণ্টা পর তিনি ফিরে এসে জানালেন, সিরাজুল আলম খান কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। বাচ্চু জানতেন না, তিনি দেশে নেই। অগত্যা তাজউদ্দীনকে ছাড়াই তাঁরা ফিরে এলেন।

তাজউদ্দীনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং কেন, এটা বাচ্চু ছাড়া তাঁর অন্য সহযোগীরা জানতেন না। পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বরে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযানের ঘটনায় বাচ্চু নিহত হলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এটা আর হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না, কে বাচ্চুকে পাঠিয়েছিল এবং কী উদ্দেশ্যে।

বাকশাল বাদ দিয়ে তাহেরের জাতীয় সরকার?

১৫ আগস্ট সকালে মুহসীন হলের ছাত্র নূর মোহাম্মদ ঢাকা গণবাহিনীর উপপ্রধান আবুল হাসিব খানের কাছে ঢাকা নগর গণবাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের একটা চিরকুট নিয়ে আসেন। চিরকুটে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের অফিসে ঢাকা নগর গণবাহিনীর জরুরি সভা হবে বলে উল্লেখ ছিল। সভা শুরু হলে আনোয়ার হোসেন উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘ভাইজান (লে. কর্নেল আবু তাহের) সকালে রেডিও স্টেশনে গিয়েছিলেন। তিনি মেজর ডালিমকে বকাঝকা করে বলেছেন, ‘...র মেজর হয়েছ, এখন পর্যন্ত একটা মার্শাল ল প্রক্লেমেশন ড্রাফট করতে পারলে না। জানো, কাল ইউনিভার্সিটিতে কারা বোমা ফাটিয়েছিল? দে আর মাই বয়েজ।’
লে. কর্নেল আবু তাহের মেজর রশিদের অনুরোধে সকাল নয়টায় ঢাকা বেতারকেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম ও মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে দেখতে পান। তাঁর পরামর্শে ডালিমরা সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানকে বেতার ভবনে নিয়ে আসেন অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্য। তিনি খোন্দকার মোশতাককে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলো ছিল:
১. অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করতে হবে;
২. সারা দেশে সামরিক আইন জারি এবং এর প্রয়োগ করতে হবে;
৩. দলনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে;
৪. বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে;
৫. অবিলম্বে একটি গণপরিষদ তথা পার্লামেন্টের জন্য সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সামরিক শাসন জারির দাবি ছিল তাহেরের একান্ত নিজস্ব। এ বিষয়ে তিনি গণবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড কিংবা জাসদের পার্টি ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেননি এবং এসব প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য পার্টি তাঁকে কোনো ম্যান্ডেট দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে এই প্রস্তাব ছিল জাসদের মূলনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে, সামরিক আইন জারির প্রস্তাবটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা যেকোনো সুস্থ রাজনৈতিক দলের জন্যই অপমানজনক এবং প্রগতিশীল রাজনীতির চেতনাবিরোধী। তাহের সব সময় শেখ মুজিবের ‘ফ্যাসিবাদী’ রাজনীতির বিরোধী ছিলেন এবং তাঁর সরকারের উৎখাত চাইতেন। জাসদও একই দাবি করেছে। কিন্তু জাসদ কখনোই দেশে সামরিক শাসন চায়নি।
সন্ধ্যায় খোন্দকার মোশতাক আহমদ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাহের উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি মেজর খোন্দকার আবদুর রশিদসহ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বঙ্গভবনেই বৈঠক করেন। বৈঠকের একপর্যায়ে তিনি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও ডেকে আনেন। দুই দিন পর ১৭ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের বাসায় যান পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে। ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।’

১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে—অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।’

শেখ মুজিব যখন নিহত হন, জাসদের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন কলকাতার ভবানীপুরে চিত্তরঞ্জন সুতারের বাড়িতে। চুয়াত্তরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে সিরাজুল আলম খান ভারতে চলে যান। মাঝে দুবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। শেষবার পঁচাত্তরের জুলাই মাসে। তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ভিসা নবায়নের জন্য তিনি কলকাতায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন। ১২ আগস্ট তাঁকে জানানো হয়, তাঁর পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার বাতিল করে দিয়েছে।

ফলে তিনি বাংলাদেশে ‘পারসন নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হয়ে যান। সচরাচর তিনি বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত ঘুমান। সকাল ১০টার দিকে সুতারের স্ত্রী মঞ্জুশ্রী দেবী তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে শেখ মুজিবের মৃত্যুসংবাদ দেন।


সিরাজুল আলম খান শেখ মুজিবকে জানতেন ১৯৬১ সাল থেকে। সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে তিনি শেখ মুজিবের ছায়াসঙ্গী ছিলেন ইতিহাসের একটা বিশেষ পর্বে, যখন বাংলাদেশ পাকিস্তানি উপনিবেশের জঠরে থেকে জেগে উঠছে। বেগম মুজিবও তাঁর ওপর আস্থা রাখতেন। শেখ মুজিব যখন জেলে, বিশেষ করে ১৯৬৬-৬৯ সালে, বেগম মুজিবের মাধ্যমে শেখ মুজিব ও সিরাজের যোগাযোগ হতো। সিরাজ যে কথা শেখ মুজিবকে বলতে পারতেন না, সে কথা বেগম মুজিবকে দিয়ে বলাতেন। বেগম মুজিব যে কথা স্বামীকে বলতে পারতেন না, সিরাজকে দিয়ে তা বলাতেন। খবরটা শুনে সিরাজুল আলম খান হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের শেখ মুজিবের প্রতি আনুগত্য যতটা ছিল, ততটা ভালোবাসা ছিল না। শেখ মুজিব এটা জানতেন এবং সিরাজুল আলম খানের ওপর নির্ভর করতেন। শেখ মুজিবের কাল্ট তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সিরাজুল আলম খান। মুজিব তাঁকে একরকম ব্লাংক চেক দিয়েছিলেন। এককথায় সিরাজ ছিলেন শেখ মুজিবের সবচেয়ে ‘আস্থাভাজন শিষ্য’। এটাই ছিল সিরাজুল আলম খানের ক্ষমতার ভিত্তি। দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় দুজনই দুর্বল হয়ে পড়েন।

শেখ মুজিব নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে সিরাজুল আলম খান দুঃখ পেয়েছিলেন সন্দেহ নেই। তবে তিনি মনে করতেন, এটা ছিল অনিবার্য। মুজিব নিজেই এই পরিণতি ডেকে এনেছিলেন। অক্টোবরে সিরাজুল আলম খান কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। বাংলাদেশ তখন অনেকটাই বদলে গেছে।


প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য বই জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি থেকে নেওয়া অংশবিশেষ।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।