Sunday, October 28, 2012

‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন"- বাঙালি মুসলমানের প্রতারণা



নিউইয়র্ক থেকে:কোরবানির ঈদের দিনেও কয়েকজন বাঙালি মুসলমানের প্রতারণায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে। অনেকের খুশির ঈদ ম্লান হয়েছে। অনেকেই গরু কিনেও কোরবানির দিনে কোরবানি করার জন্য গরু খুঁজে পাননি। ফলে তারা আর কোরবানি দিতে পারেননি।

কোরবানির দিনে দেখা গেছে, একই কোরবানির গরুর মালিক একাধিক। এমনও দেখা গেছে, জবাই করবেন বলে এক পক্ষ গরু দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে, আরেক পক্ষ এসে বলছেন, ‘‘এটা আমাদের গরু, আপনারা বাঁধছেন কেন?’’ ঠিক সেই সময়েই তৃতীয় পক্ষ এসে বাঁধা গরুটি জবাই করে নিয়ে চলে গেলো গায়ের জোরে।

এ নিয়ে বাদানুবাদও বেঁধে যায় কোরবানিদাতাদের মধ্যে। অনেকেই গরু কোরবানি দিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতে। আবার অনেকেই সারাদিন অপেক্ষা করে ফার্মের মালিক যা দিয়েছেন তাই নিয়ে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে মধ্যরাত পর্যন্তও সেখানে গরু জবাই করতে দেখা গেছে।

এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটে ল্যারি সামস নামক এক ব্যক্তির ফার্মে। জানা গেছে, ঈদের দিনে মুসলিম নামধারী কিছু লোক নির্ধারিত সময়ের আগেই ফার্মে গিয়ে সবচেয়ে বড় বড় কোরবানির গরু তাদের কেনা বলে দাবি করেন! ফার্মের মালিক ল্যারি সামস দুর্বৃত্তদের কথামতো গরুগুলো জবাই করে দেন। কিন্তু তারা

কোরবানির মাংস নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন মালিককে পাওনা টাকা না দিয়েই। পরে গরুগুলোর প্রকৃত ক্রেতারা সেখানে এলেও গরু খুঁজে না পাওয়ায় ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

কোরবানির ঈদের দিন বিকেলে ফার্মের মালিক ল্যারি, তার স্ত্রী ও মেয়েকে কাঁদতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফার্মের কর্মচারী, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে চোখ মুছতে দেখা যায়। ল্যারির মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘দেখুন, আমার বাবা খুব মর্মাহত ব্যাপারটি নিয়ে। আমরাও দুঃখিত খুব। আমরা পরিবারের সবাই আজকে এখানে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিলাম কোরবানি ঈদ উপলক্ষে। এখানে আমরা সবাইকে খাবার, স্ন্যাক্স, পানি ফ্রি খাইয়েছি। বাচ্চাদের জন্য খেলার পার্ক দিয়েছিলাম আমাদের নিজ খরচে। আর দেখুন বিনিময়ে আমরা কি পেলাম? আমরা আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’’

ঈদের পরের দিনও সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেখানে কোরবানি দিচ্ছেন। আবার অনেকেই আগের দিনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া মানুষ, যারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। সাংবাদিকদের দেখে তারা ছুটে আসেন এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। তারা অনুরোধ জানান, সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করার জন্য; ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। এদিনও ফার্মের মালিক ল্যারি সামসকে বিষণ্ণ দেখায়।

‘‘কেউ এসে বললেন, গরুটি আমার আর আপনি তা কেটে দিয়ে দিলেন কেন? কেন আগে টাকা নিলেন না?’’ এমন প্রশ্ন করলে ল্যারি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষ। পারলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি, না পারলে চুপ থাকি। কোনো মানুষ ঈদের দিনে যা আল্লাহকে কোরবানি দেবেন সেটা নিয়েও প্রতারণা করবেন তাই কি হয়? এ-ও কি সম্ভব? আমার মনে কখনো এই চিন্তাই আসেনি যে কোনো মুসলমান তার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এমন তামাশা করতে পারে! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না। তারা হয়তো আবার ফিরে এসে আমার টাকাটা দিয়ে যাবেন, আমার বিশ্বাস এমনই!’’

ল্যারি জানান, ‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। আমিও তাদের কেনা গরুগুলো দেখাই। কিন্তু তারা ফার্মের সব থেকে বড় গরুগুলো তাদের বলে দাবি করেন। এতে যারা প্রকৃত ক্রেতা তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। এতে আমার এখানে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়। আসল ক্রেতাদের আমার আবার নতুন করে গরু এনে দিতে হয় এবং সেগুলো নতুন করে কাটতে কাটতে অনেকের রাত ১২টা বেজে যায়!’’

‘‘আপনি পুলিশ ডাকলেন না কেন?’’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, ঈদ আনন্দের, খুশির। এই দিনে পুলিশ ডেকে আমি কারোর আনন্দ মাটি করতে চাইনি। আমার তো সব রেকর্ড আছে। কারা এগুলো করেছেন তার তালিকা আছে। কিন্তু আমি কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি না আপাতত। তারা হয়তো জানেন না ‘কোরবানি’ মানে কি? কিন্তু আমি তো জানি। তারা টাকা না দিলে আমি মনে করবো এটা আমার জন্য স্যাক্রিফাইস! কেউ চাইলে আমি সব তথ্য দিতে পারি। আমার ১৫ হাজার ডলার লোকসান হয়েছে আজ, এতে আমার কোনো কষ্ট নেই। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন।’’

তবে ল্যারি জানান, ‘‘দ্বিতীয় দিনে কোরবানি দিতে আসা মুসলমানেরা অনেক ধর্মপ্রাণ। তারা জানেন, ত্যাগের মহিমা কি! এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম আজ দেখা যায়নি।’’

এ কথা বলে প্রাণ খুলে হাসতেও দেখা গেলো তাকে। তিনি সাংবাদিকদের নিউজটা করার অনুরোধ জানান।

সেখানে ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক পারভেজ ও মেট্রো ওয়াশিংটন বিএনপির সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে প্রবাসে থেকেও আমরা কোরবানি দিতে পারছি।’’ তবে দু`জনেই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। সেখানে কমিউনিটির নেতা, সাংবাদিক কবি বাবুল নকরেকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক


নয়া দিল্লি, অক্টোবর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সফরের প্রথম দিনে ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বিজেপি নেত্রী সুষমা এই উদ্বেগের প্রতি সহমর্মী হয়ে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার দুপুরে নয়া দিল্লি পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকালে দিল্লির ৮ নম্বর সবদরজং সড়কে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবনে যান তিনি।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন তাজ প্যালেসে যান। তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু সেখানে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা সীমান্তে হত্যা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা বলেছেন। জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কমে এসেছে। তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি (লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা) এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসা উচিৎ বলে মনে করেন।”

সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে তা দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে খালেদাকে জানিয়েছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা।

বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন জানান।

“সৌহার্দ্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে সুষমা স্বরাজ বাসার আঙিনায় এসে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানান।”

দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার ওপর দুই নেতা আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে সুষমা বলেন, ভারতের বিরোধী দল বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তিনি।

সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া দিল্লির যোগাযোগের অংশ।

অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়ে শমসের মবিন বলেন, “এই বিষয়ে খালেদা জিয়া লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান আশা করে বিএনপি।”

এজন্য দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের প্রতি সুষমা স্বরাজ একমত পোষণ করেন বলে শমসের মবিন জানান।

বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আরো বেশি বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চান বিরোধীদলীয় নেতা।

খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে সন্ধ্যায় হোটেলে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।

ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।

বিরোধীদলীয় নেতা সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।

দুপুরে নয়া দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে পৌঁছলে খালেদাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপ হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাস কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।

ভারত সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা রাব্বানী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।

খালেদার এই সফরের সংবাদ জানাতে তার সঙ্গে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ।

সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রেসসচিব জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০৬ সালে ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর। বিডিনিউজ