Friday, August 30, 2013

জঙ্গীবাদের সমর্থনে বানোয়াট তালিকার প্রবর্তক - ঠগ আদিলুর রহমানকে কারা সমর্থন দিচ্ছেন?কী উদ্দেশ্যে? -সুমি খান


শাপলা চত্বরে তান্ডবকারী জঙ্গীদের সমর্থনে বানোয়াট তালিকার প্রবর্তক ঠগ প্রবঞ্চক আদিলুর রহমানকে কারা সমর্থন দিচ্ছেন?কী তাদের উদ্দেশ্য ?
আমাদের চাক্ষুষ ঘটনার অপব্যাখ্যা যারা করে তারা যদি আমাদের অন্ধ সমর্থ্ন পায়- ভেবে দেখতে হবে- আমরা কি আমাদের সন্তানদের মঙ্গল চাই কি-না। বুঝে নিতে হবে আমরা সুস্থ সমাজের পক্ষে নই। শুধু দেশেই নয়- এই শক্তি এখন সর্বগ্রাসী। জঙ্গী টুন্ডা -আনসারুল্লাহর প্রশিক্ষণের কারণে নাফিস এর মতো অসংখ্য মেধাবী সন্তান কুপথে ধাবিত হয়েছে। এর জন্যে অন্যতম দায়ী তাদের দীক্ষা গুরু তেঁতুল শফি-বাবুনগরীদের হত্যাযজ্ঞে সমাজের নীতিনির্ধারকদের সমর্থন। আদিলুর রহমান এবং তার দীক্ষাগুরু মাহমুদুর রহমানের মিথ্যা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে জঙ্গীবাদকে প্রকাশ্য সমর্থন। আর এই সমথর্ন যদি যাদের অঙ্গুলি হেলনে এই বিশ্বরাজনীতি ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে - সেই মার্কিন শক্তির হয়- সন্দেহের আর অবকাশ থাকে না- এদেশ কে কোন্ দিকে ফেলে দেয়া হচ্ছে! এখানেই আমাদের প্রতিবাদ-এখানেই অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি আমরা!
৫মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের জঙ্গীদের হামলায় নিহত পুলিশের রিকুইজিশন গাড়ির চালককেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় নিহত বলে অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।'অধিকার' এর তালিকাভুক্ত ৫মে পুলিশের হামলায় নিহত বলে দাবি করা ৬১ জনের ১ জন সিদ্দিকুর । তিনি ছিলেন পল্টন থানা পুলিশের রিকুইজিশন করা গাড়ির চালক। হেফাজত কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে তিনি নিহত হন । সিদ্দিকুর রহমানের মরদেহ গ্রহণকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সরওয়ার বলেন," সিদ্দিকুর একজন ড্রাইভার । পুলিশের রিকুইজিশন করা গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করেছিলেন ৫ মে। হেফাজত কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে তিনি ওই হামলায় পল্টন এলাকায় মারা যান। এরপর আমি শ্রমিক নেতা হিসেবে তার লাশ গ্রহণ করি। তারপর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করি। "

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গত ৫ মে মধ্যরাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে '৬১ জন' হেফাজত কর্মী নিহত হওয়ার যে তালিকা মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে ,সেই তালিকা অসঙ্গতিপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ছয় ব্যক্তিকেও হেফাজতের বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরে পুলিশের অভিযানে নিহত বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অধিকারের তালিকায় থাকা তিন ব্যক্তি এখনও জীবিত। শুধু তা-ই নয়, তালিকায় পাঁচ ব্যক্তির নাম দু'দফায় লেখা হয়েছে। কোথাও তাদের নামের পূর্ণ অংশ, আবার কোথাও তাদের নামের অর্ধেক অংশ ও পদবি লিখে তালিকা বড়ো করা হয়েছে। মতিঝিলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজার কামাল উদ্দিন খান । তাকেও শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় মৃত বলে ৫৭ নম্বরে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকায় ক্রমিকনম্বরের ভুল সহ অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে।
অধিকারের তালিকায় একটি ক্রমিক নম্বর ভুল হয়েছে। ক্রমিক নম্বর ৯-এর পর ১০ নম্বর বাদ দিয়ে ১১ করা হয়। তালিকার ৬ নম্বরে লেখা হয়েছে নাহিদ; লাশ গ্রহণকারী শাজাহান। নাহিদের বয়স লেখা হয় ২১ বছর। লালগঞ্জ বিল্ডিং গলি, ৭ নম্বর গলি, ঢাকা। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়। একই ব্যক্তির নাম ২১ নম্বর ক্রমিকে লেখা হয়েছে মো. নাহিদ শিকদার, বয়স ২২ বছর। এখানে তার ঠিকানা লেখা আছে_ পিতা-দেলোয়ার শিকদার, গ্রাম-পাতারহাট, থানা-মেহেন্দীগঞ্জ, জেলা-বরিশাল; বাসা-২৭৪ জয়কালী মন্দির। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলার কথা উল্লেখ করা হয়। তালিকার ১৮ নম্বর ক্রমিকে লেখা আছে মাওলানা সিহাবুদ্দিন, বয়স ৩৫ বছর। প্রভাষক গানীয়াতুল মাদ্রাসা, থানা-সীতাকুণ্ড, জেলা-চট্টগ্রাম। ২০ নম্বর ক্রমিকে লেখা হয়েছে মাওলানা শিহাব উদ্দিন, বয়স-৩২ বছর, শিক্ষক_ বগাচতর ফাজিল মাদ্রাসা, গ্রাম-ডোমখালী, ইউনিয়ন-সাহেরখালী, থানা-মিরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম। একইভাবে ২৩ নম্বর ক্রমিকে লেখা আছে মো. সাইদুল বারী, বয়স-১৭ বছর। পরিচয় লেখা হয় মোহাম্মদপুর বাইতুল ফজল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র, গ্রাম-ইউসুফদিয়া, থানা-গালতা, জেলা-ফরিদপুর। একই শিশুকে ৪২ নম্বর ক্রমিকে পরিচয় নিহত হিসেবে দেখিয়ে লেখা হয় হাফেজ সাইদুর রহমান। এখানে বয়স উল্লেখ করা হয়নি। পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম। গ্রাম-ইউসুফদিয়া, থানা-সালথা, জেলা-ফরিদপুর। একইভাবে তালিকাভুক্ত মাওলানা আতাউল্লাহর নাম ১৬ ও ৫৮ নম্বর ক্রমিকে দু'দফায় লেখা হয়েছে। ১৬ নম্বরে তার নাম লেখা হয়েছে হাফেজ আতাউর রহমান। ৫৮ নম্বরে একই ব্যক্তির নাম লেখা হয় মাওলানা আতাউল্লাহ। এমনকি মতিঝিলের হেফাজতের তাণ্ডবের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কামাল উদ্দিনকে অধিকারের তালিকাভুক্ত করা হয়।

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' সম্প্রতি দাবি করে, মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ৫ মে রাতের অভিযানে ৬১ হেফাজত কর্মী নিহত হয়। এ তালিকা পাঁচটি দেশি-বিদেশি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়। পুলিশ অধিকারের তালিকায় থাকা ৬১ ব্যক্তির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে এসব অসঙ্গতি পেয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অধিকারের তালিকার ব্যাপারে এই তদন্ত করে।

গত ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে 'অধিকার'কে চিঠি দেওয়া হয়। অধিকার সরকারকে তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা জানায়, তদন্ত কমিশন গঠন করলে ওই তালিকা কমিশনের কাছে দেবে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ১০ আগস্ট রাতে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে ডিবি। এরপর জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা আদিলুর রহমানকে মুক্তি দিতে সরকারকে চাপ দেয়। শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আড়াই হাজারের বেশি হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করে হেফাজত। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়।


পুলিশ জানিয়েছে, হেফাজতের তাণ্ডবের সময় নারায়ণগঞ্জে নিহত ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী পলাশ (ক্রমিক নম্বর ৫০), পথচারী সাদেক হোসেন, রুবেল, আবদুল হান্নান, মাহফুজ খানসহ ছয়জন ভিন্ন জায়গায় নিহত হয়েছে। সাদেক হোসেনের বাবা রইস মিয়া বলেন, আমার ছেলে ঝাড়ের পানির ফিল্টার দোকানে আনা-নেওয়ার কাজ করত। ৬ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কাঁচপুরে ঝাড় আনতে গেলে হেফাজত-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। সেখানে সে মারা যায়। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অধিকারের তালিকায় তাদের শাপলা চত্বরে নিহত বলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এমনকি অধিকারের ৬১ জনের তালিকার ১৯ জনের কোনো অস্তিত্বই নেই। তারা হলেন_ মো. মাসুম বিল্লাহ, লুৎফুর রহমান, মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, হাফেজ লোকমান হোসেন, আল-আমিন, মাওলানা জুবায়ের, মো. শফিউল্লাহ বাদল, বাবু গাজী, মো. সোহেল, সেকান্দার আলী, ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন ফকির, মো. সুলতান, রাজীব, মাওলানা মুতীয়র রহমান, সাবি্বর, তাহের, সাইদ, জালাল আহমেদ ও সিরাজুল।অধিকারের প্রতিবেদনে তাদের অধিকাংশের নামের সামনে পূর্ণাঙ্গ কোনো ঠিকানা লেখা হয়নি। শুধু জেলার নাম লেখা হয়েছে।

অধিকারের প্রতিবেদনে নিহত বলে উল্লেখ করা তিনজনকে জীবিত পাওয়া গেছে।এদের মধ্যে সোহেল উজানী মাদ্রাসার ছাত্র। বাড়ি-চাঁদপুর। এ ছাড়া রাজশাহীর বাগমারার জাহিদুল ইসলাম সৌরভ ও কুমিল্লার জসিম উদ্দিন রয়েছেন।অধিকারের তালিকায় ৫৭ নম্বর ক্রমিকের জসিম উদ্দিন , ৪৯ নম্বর ক্রমিকের মুতীয়র রহমান ও ৩৬ নম্বর ক্রমিকের জাহিদুল ইসলাম সৌরভকে মৃত বলে দাবি করা হয়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, হেফাজতের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় যে ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে সরকার স্বীকার করেছে, অধিকারের তালিকায় তাদের মধ্যে ৯ জনের নাম রয়েছে। পুলিশের ধারণা, তালিকাভুক্ত অন্যরা পৃথক ঘটনায় পৃথক স্থানে মারা যেতে পারেন। তাদের ব্যাপারেও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

অধিকারের পরিচালক এসএসএম নাসির উদ্দিন এলানের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অধিকারের কার্যালয় থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ থেকে এ তালিকা পাওয়া গেছে।
অধিকারের 'কথিত' তালিকা

৫মে হেফাজতের সমাবেশে শাপলা চত্বরে যারা নিহত হয়েছে বলে দাবি করে অধিকার তালিকা দিয়েছে, তারা হলেন
১. দিনাজপুরের সিদ্দিকুর রহমান
২.দক্ষিণ পাইকপাড়ার একেএম রেহান আহসান
৩. যাত্রাবাড়ীর কাজী রকিবুল হক
৪.গাজীপুর কালীগঞ্জের মো. ইউনূস
৫. মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের দ্বীন ইসলাম
৬. ঢাকার লালগঞ্জের নাহিদ
৭. ফরিদপুরের কোতোয়ালির মো. আল-আমিন,
৮. ময়মনসিংহের ভালুকার মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মোল্লা,
৯. ফরিদপুরের দুর্গাপুরের হাফেজ আল-আমিন ও ফরিদপুরের মধুখালীর হাফেজ সাদ্দাম,
১০. নারায়ণগঞ্জের কটনমিল জামে মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ,
১১. ময়মনসিংহ ফুলপুর থানার সুতিয়াপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমান,
১২. নরসিংদী দাইয়েরপার গ্রামের নজরুল ইসলাম,
১৩. যশোর রায়পাড়া গ্রামের হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু,
১৪. ময়মনসিংহ ফুলপুর সুতিয়াপাড়া গ্রামের হাফেজ আতাউর রহমান,
১৫.ভোলা দৌলতখানের মুহাম্মদ আকবর ইবনে নজরুল ইসলাম
১৬. চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের গানীয়াতুল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা সিহাবুদ্দিন,
১৭. কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার তেলিগাংদিয়া গ্রামের শামসুল আলম,
১৮. চট্টগ্রামের মিরসরাই বগাচর ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সিহাব উদ্দিন,
১৯. বরিশাল পাতারহাটের নাহিদ সিকদার
২০. বরিশাল ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুস মোল্লা
২১. ফরিদপুরের গালতার মোহাম্মদপুর বাইতুল ফজল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সাইদুল বারী
২২. নরসিংদী উত্তর বাখরনগর গ্রামের মোক্তার হোসেন
২৩. গাজীপুর শফিপুর হরিণাহাট গ্রামের মাওলানা শামসুল আলম
২৪. নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগারপার ফোরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ হাসান
২৫. নরসিংদীর মাটিরপাড়ার বকুলতলা গ্রামের হাফেজ মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান জুবায়ের
২৬. কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মাওলানা মাহমুদুল হাসান
২৭. নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলের হাফেজ লোকমান হোসেন
২৮. নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রামারবাগের আল-আমিন
২৯. মুন্সীগঞ্জের বালুচরের সাপেরচর এলাকার মাওলানা জুবায়ের
৩০. গাজীপুরের কালীগঞ্জের দুরবাটি এলাকার শফিউল্লাহ বাদল
৩১. চাঁদপুরের কচুয়ার সেনবাড়ীর দায়চর গ্রামের হাবিবুল্লাহ মুন্সী
৩২. ময়মনসিংহের খলিফার পাড় মাশকান্দা পলিটেকনিক মোড় এলাকার সিরাজুল ইসলাম
৩৩. শরীয়তপুরের নড়িয়ার বাবু গাজী
৩৪. রাজশাহীর বাগমারার নিমাই কাশারীর জাহিদুল ইসলাম সৌরভ
৩৫. চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আনোয়ার
৩৬. চট্টগ্রামের মেখল মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত
৩৭. কুমিল্লার দাউদকান্দির সোহেল
৩৮. বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শিববাদীর কাতলা এলাকার সেকান্দার আলী ফকির
৩৯. একই এলাকার ইবনে মাইজুদ্দিন ফকির
৪০. চাঁদপুরের শেখদী গ্রামের মাহফুজ খান
৪১. ফরিদপুরের সালথা থানার ইউসুফদিয়া গ্রামের হাফেজ সাইদুর রহমান
৪২. নোয়াখালীর মাওলানা আনোয়ার হোসেন
৪৩. বরিশালের মুলাদীর তায়েফা গ্রামের হারুনুর রশিদ
৪৪. রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাবাড়ী এলাকার সুলতান
৪৫. ডেমরার কাজলা ভাঙ্গা এলাকার রাজীব
৪৬. নরসিংদীর রায়পুরার আদিয়াবাদ মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুল হান্নান
৪৭. চাঁদপুর উজানী মাদ্রাসার ছাত্র সোহেল
৪৮. কুমিল্লার মাওলানা মুতীয়র রহমান
৪৯. নারায়ণগঞ্জের মাদানীনগরের ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী পলাশ
৫০. ঢাকার ডেমরার বক্সনগরের সাদেক হোসেন
৫১.ঢাকার ডেমরার রুবেল
৫২. ঢাকার ডেমরার সাবি্বর
৫৩. ঢাকার ডেমরার তাহের
৫৪.ঢাকার ডেমরার আবু সাঈদ
৫৫.কুমিল্লার জসিম উদ্দিন
৫৬. ঢাকার মতিঝিলের জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজার কামাল উদ্দিন খান
৫৭. গাজীপুরের টঙ্গীর মোদাফানা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আতাউল্লাহ
৫৮. পটুয়াখালীর ইব্রাহিম খলিল
৫৯.শরীয়তপুরের জালাল আহমেদ
৬০.কুমিল্লার সিরাজুল ইসলাম।

http://khoborbangla.com/

Thursday, August 29, 2013

আপনাকে ধন্যবাদ- হাসান মাহমুদ



৩১শে আগস্ট ৩০ মুক্তিসন (২০০০ সাল)(৪০ মুক্তিসন ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর ৩১শে আগষ্টে আমি এটা পোষ্ট করি - হাসান মাহমুদ)

আবার এগিয়ে আসছে ভয়াল সেই ৩১শে আগষ্ট। আজ আবার আপনাকে হৃদয়ের গভীরতম স্পন্দন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যেমন জানিয়েছি গত ২৫টি বছরের প্রতিটি ৩১শে আগষ্টে। জানাতে থাকব যতদিন বেঁচে আছি.
আপনাকে দেখেছি মাত্র কয়েক সেকেণ্ড। আপনিও আমাদের দেখছেন মাত্র কয়েক সেকেণ্ড, তাই নিশ্চয় আমাদের কথা আপনার মনে নেই। কিন্তু আপনি যদি ১৯৭৫ সালে ৩১শে আগষ্টে সন্ধ্যায় তেজগাঁ এয়ারপোর্টে (তখনও নুতন এয়ারপোর্ট হয়নি)কর্মরত ইমিগ্রেশন-বস্‌ হয়ে থাকেন, আপনাকে জানাতে চাই আপনাকে আমরা দু’জন কখনো ভুলিনি। পৃথিবীর যেখানেই থাকি এই দিনে আমরা ফোনে সেই দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করি আর আপনার উদ্দেশ্যে বলি - ‘‘আপনাকে অনেক, - অনেক ধন্যবাদ’’।

প্রতিটি বিপ্লবের সরব ধ্বংসের পর আসে প্রতিবিপ্লবের নীরব ধ্বংস। এসেছিল বাংলাদেশেও, একাত্তরের পর। সবার হাতে অস্ত্র - ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তারুণ্য-শক্তি। মতের ভিন্নতা, জেদ, অনভিজ্ঞতা, লোভ আর প্রতিহিংসা-পরায়ণতায় আরো অনেক জীবন ধ্বংস হয়েছিল যা ইতিহাসে জায়গা পায়নি। আমার সদ্য পাওয়া চাকরীটা যায় যায় কারণ অফিসে যাওয়া-আসাও তখন কঠিন। মরিয়া হয়ে আমি আর মঞ্জু দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছি। আর্থিক গরীব দু’টি তরুণ – টাকা, যোগাযোগ, গন্তব্য কিছু ঠিক করা নেই - শুধু চেষ্টা চলে যাবার - অন্য কোথা, অন্য কোনখানে। বিস্তর মহাভারত পার হয়ে ফ্লাইট পাওয়া গেল ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫।
গন্তব্য দুবাই। জায়গাটা মধ্যপ্রাচ্যে এইটুকু শুধু জানি - ওখানে আমাদের কেউ নেই।

হিমালয় টলে গেল ভোর রাতে, সপরিবারে খুন হয়ে গেলেন জাতির পিতা। ফ্লাইট বাতিল।আবার অসহ্য অপেক্ষা। ৩১ আগষ্ট বিকেলে মঞ্জু ছুটে এল - দু ঘন্টা পরে ফ্লাইটের সিট পাওয়া গেছে, এখনি পৌঁছতে হবে এয়ারপোর্ট। বাবা-মা ভাইবোন কেউ জানল না, তড়িঘড়ি সামনে কাপড় যা ছিল আর এমএসসি'র সার্টিফিকেট স্যুটকেসে ভরে ছুট। ততক্ষণে সবাই ভেতরে ঢুকে গেছে - প্লেন ছাড়ে ছাড়ে । ইমিগ্রেশন-ক্লার্কের হাতে পাশপোর্ট টিকিট তুলে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছি। উত্তেজনায় কিছু হার্টবিট মিস হয়ে যাচ্ছে, চোখেমুখে খুব গরম লাগছে - পা দু’টো পাথরের মত ভারী। কারণ, - আমাদের পাশপোর্ট ‘‘খারাপ’’. আমাদের টিকিটও ‘‘খারাপ’’।

লোকটা পাশপোর্ট-টিকিট দুটো লম্বা সময় হাতে ধরে থাকল। তারপর খুব ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। তারপর মরা মাছের চোখের মত ভাবলেশহীন চোখে আমাদের দিকে অপলক তাকাল, - চুপ করে তাকিয়েই থাকল। তার মানে তার অভিজ্ঞ চোখে আমরা ধরা পড়ে গেছি। আমরা জন্ম-ক্রিমিন্যাল নই, পারফেক্ট ক্রাইম করতে পারিনি। ভয় পাবার শক্তিও তখন আমাদের নেই। প্রচণ্ড মানসিক চাপে উত্তেজনায় প্রায় অজ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, ভয়ে আতংকে মঞ্জু শক্ত করে চেপে ধরেছে আমার হাত।
ওদিকে প্লেন ছাড়ে ছাড়ে।


তখন আপনি এলেন, ইমিগ্রেশন চীফ। ঠিক এলেন না, গটগট করে ওদিকে কোথা থেকে কোথা যেন যাচ্ছিলেন। ক্লার্কটা কিউবিক্‌ল থেকে বেরিয়ে আপনার কাছে গেল, আপনি থমকে দাঁড়ালেন। সে আপনাকে পাশপোর্ট-টিকিট দেখিয়ে কি যেন ফিসফিস করল। আমরা তখন দু’টো স্থির মৃতদেহ দাঁড়িয়ে আছি। আপনি আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন - আতংকে ত্রাসে পাথর আমরা আরো পাথর হয়ে গেলাম।

এই ৩৭ বছর পরেও হুবহু এখনো কানে বাজে আপনার জলদগম্ভীর কন্ঠস্বরে জীবনের বরাভয় - ‘‘লেট দেম ট্রাই দেয়ার লাক্‌’।

বলেই আপনি গট গট করে চলে গেলেন। লোকটা ফিরে এসে আমাদের পাশপোর্টে ষ্ট্যাম্প মেরে আমাদের বিদায় করল। ছুটে এসে প্লেনে উঠলাম, প্লেন আকাশে উঠল, বুক তখনো ধ্বকধ্বক করছে। আতংকে উত্তেজনায় মঞ্জুর তখন খুব জ্বর উঠে গেছে, আমার হাত ধরে সে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল - ‘‘এভাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের কি হবে? আমাদের টাকা কই’’?? তখন খোলা বাজারে বিদেশী মুদ্রা বেআইনী ছিল, মঞ্জু কোত্থেকে একশ পাউণ্ড জোগাড় করে এক মাস্তান-চীফকে দিয়েছিল। কথা ছিল তার লোক প্লেনের মধ্যে আমাদের ওই টাকা দেবে। সে টাকা এলনা। তার মানে আমরা কপর্দকশুন্য।



পরের মহাভারত বলে আপনার সময় নেবনা কিন্তু দু’টো কথা বলতেই হবে। দুবাই-ইমিগ্রেশন ক্লার্কের চোখও অভিজ্ঞ ছিল, ধরা আমরা সেখানেও পড়েছিলাম। কিন্তু সেখানে সেই মাঝরাতে আপনার মত ইমিগ্রেশন চীফ ছিলনা যিনি দুটি অনভিজ্ঞ তরুণের সামনে জীবনের দরজা খুলে দেবেন। আমাদের পাশপোর্ট আটক হল, আমরাও আটক হলাম। কেউই বোধহয় জানেনা প্রতিটি বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা জেলখানা থাকে। সারা রাত বন্দী থেকে পরদিন দুপুরে আমরা দুজন সেখান থেকে কিভাবে পালালাম সেকথা থাক, কি অবস্থায় পালালাম সেকথা বলে শেষ করি।

তখন আমাদের (১) পরণের কাপড় ছাড়া কোন কাপড়, স্যাণ্ডেল-টুথব্রাশ-রেজর-চিরুণী কিচ্ছু নেই কারণ স্যুটকেস চিরতরে কোথায় হারিয়ে গেছে, কোনদিনই আর সেগুলো ফিরে পাইনি. (২) কোন শিক্ষা-সার্টিফিকেট নেই, কারণ ওগুলো স্যুটকেসে ছিল, (৩) পকেটে একটা পয়সা নেই, (৪) কোন বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন নেই, (৫) জায়গা চিনি না, (৬) ভাষা জানি না, (৭) ভিসা নেই, কারণ (৮) পাশপোর্টই নেই. আর, এই সবগুলোর চেয়ে আরো অনেক মারাত্মক - (৯)আগষ্টের মধ্যপ্রাচ্য, দোজখের গরম!!

কিন্তু আপনি জেনে রাখুন আপনার শুভেচ্ছা ব্যর্থ হয়নি। সবদিক দিয়ে ভয়াবহ অবস্থা থেকে শুরু করে সেই দুটি তরুণ দানবের শক্তিতে জীবন-যুদ্ধ করেছে এবং পরিপুর্ণ সফল হয়েছে। এখন তারা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দু’টো দেশের বৈধ নাগরিক। সাধারণ মানুষের যা চাইবার তা সবই তারা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয় তারা আপনার ঋণ শোধ করার চেষ্টাও করেছে- বেশ কিছু কিশোর-তরুণদের লাক্‌ ট্রাই করার সুযোগ করে দিয়েছে। যাদেরকে দিয়েছে তাদের অনেকেই আজ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত, - তারাও একদিন পরের প্রজন্মকে সুযোগ করে দেবে। সমাজ এভাবেই এগোয়, মানুষই মানুষের কাজে আসে।

আপনি যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন এই কামনা করে আবারো বলি - আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।

Sunday, August 25, 2013

বাংলা গানের অমরাবতী -প্রথম বাংলা গজল রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেনের ৭৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ



অতুলপ্রসাদ এর উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথের লেখা

বন্ধু, তুমি বন্ধুতার অজস্র অমৃতে
পূর্ণপাত্র এনেছিলে মর্ত্য ধরণীতে।
ছিল তব অবিরত
হৃদয়ের সদাব্রত,
বঞ্চিত কর নি কভু কারে
তোমার উদার মুক্ত দ্বারে।

মৈত্রী তব সমুচ্ছল ছিল গানে গানে
অমরাবতীর সেই সুধাঝরা দানে।

সুরে-ভরা সঙ্গ তব
বারে বারে নব নব
মাধুরীর আতিথ্য বিলাল,
রসতৈলে জ্বেলেছিল আলো।
দিন পরে গেছে দিন, মাস পরে মাস,
তোমা হতে দূরে ছিল আমার আবাস।
"হবে হবে, দেখা হবে' --
এ কথা নীরব রবে
ধ্বনিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে
অকথিত তব আমন্ত্রণে।
আমারো যাবার কাল এল শেষে আজি,
"হবে হবে, দেখা হবে' মনে ওঠে বাজি।
সেখানেও হাসিমুখে
বাহু মেলি লবে বুকে
নবজ্যোতিদীপ্ত অনুরাগে,
সেই ছবি মনে-মনে জাগে।
এখানে গোপন চোর ধরার ধুলায়
করে সে বিষম চুরি যখন ভুলায়।
যদি ব্যথাহীন কাল
বিনাশের ফেলে জাল,
বিরহের স্মৃতি লয় হরি,
সব চেয়ে সে ক্ষতিরে ডরি।
তাই বলি, দীর্ঘ আয়ু দীর্ঘ অভিশাপ,
বিচ্ছেদের তাপ নাশে সেই বড়ো তাপ।
অনেক হারাতে হয়,
তারেও করি নে ভয়;
যতদিন ব্যথা রহে বাকি,
তার বেশি যেন নাহি থাকি


শান্তিনিকেতন, ১৯ ভাদ্র, ১৩৪১

অতুলপ্রসাদ সেন (২০শে অক্টোবর, ১৮৭১- ২৬শে আগস্ট, ১৯৩৪) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তিনি একজন বিশিষ্ট সংগীতবিদও ছিলেন। তাঁর রচিত গানগুলির মূল উপজীব্য বিষয় ছিল দেশপ্রেম, ভক্তি ও প্রেম। তাঁর জীবনের দুঃখ ও যন্ত্রণাগুলি তাঁর গানের ভাষায় বাঙ্ময় মূর্তি ধারণ করেছিল; "বেদনা অতুলপ্রসাদের গানের প্রধান অবলম্বন"।

অতুলপ্রসাদ সেনের পারিবারিক ভিটে দক্ষিণ বিক্রমপুরের মাগর-ফরিদপুর গ্রামে। তিনি ঢাকায় তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্পবয়সেই অতুলপ্রসাদ পিতৃহারা হন। এরপর তাঁর দাদামশায় কালীনারায়ণ গুপ্ত তাঁকে প্রতিপালন করেন। দাদামশায়ের নিকটই সংগীত ও ভক্তিমূলক গানে তাঁর হাতেখড়ি। লক্ষ্মৌতে তিনি যেখানে বাস করতেন তার জীবনকালেই তার নামে ঐ রাস্তার নামকরণ করা হয়। তার উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তার বাড়ী এবং গ্রন্থস্বত্বও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।

অতুলপ্রসাদ বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক। তিনিই প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। তাঁর রচিত বাংলা গজলের সংখ্যা ৬-৭টি।গীতিগুঞ্জ (১৯৩১) গ্রন্থে তাঁর সমুদয় গান সংকলিত হয়।[৪] এই গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণে (১৯৫৭) অনেকগুলি অপ্রকাশিত গান প্রকাশিত হয়। অতুলপ্রসাদের গানের সংখ্যা ২০৮।
অতুলপ্রসাদ সেনের কয়েকটি বিখ্যাত গান হল "মিছে তুই ভাবিস মন", "সবারে বাস রে ভালো", "বঁধুয়া, নিঁদ নাহি আঁখিপাতে", "একা মোর গানের তরী", "কে আবার বাজায় বাঁশি", "ক্রন্দসী পথচারিণী" ইত্যাদি। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক গানগুলির মধ্যে প্রসিদ্ধ "উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী", "বলো বলো বলো সবে", "হও ধরমেতে ধীর"।
তাঁর "মোদের গরব, মোদের আশা" গানটি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। অতুলপ্রসাদের গান "দেবতা", "প্রকৃতি", "স্বদেশ", "মানব" ও "বিবিধ" নামে পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের বিশেষ গুণগ্রাহী ছিলেন। "অতুলপ্রসাদী গান" নামে পরিচিত এই ধারার একজন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

হাসির রাজা ভানু বন্দোপাধ্যায়ের ৯৩ তম জন্মদিন আজ



"মাসীমা, মালপো খামু! "

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যদি সেরা দশটি সংলাপের তালিকা কোনোদিন তৈরি করা হয়, তাহলে ওপরের সংলাপটি নিশ্চিতভাবে তারমধ্যে স্থান পাবে। কোন ছবি, সেটা আপামর বাঙালীর ঠোঁটের ডগায়। এই সেই ছবি, যেখান থেকে সূচনা হয়েছিল বাংলা ছবির এক সোনালী অধ্যায়। কিন্তু সে তো অন্য গল্প। আপাতত যাঁর মুখ দিয়ে এই সংলাপ বেরিয়েছিল, তাঁর কথা স্বল্প-পরিসরে বলা যাক। তিনি আমাদের সবার প্রিয় শ্রী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

পোষাকী নাম ছিল সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়, আর জন্মস্থান? এরকম চোস্ত বাঙাল ভাষা যিনি বলতেন, তিনি যে পূর্ববঙ্গেরই হবেন, সে নিয়েও কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। ভানু জন্মেছিলেন বিক্রমপুর জেলার মুন্সীগঞ্জে � এই সেই বিক্রমপুর, যা কিনা বহু নামজাদা লেখক-শিল্পী-ডাক্তার-মোক্তার-আমলা-হাকিম, এমনকী পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরও জন্মস্থান। এইরকম একটি খ্যাতনামা অঞ্চল থেকেই উত্থান হয়েছিল ভানুর। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হাস্যকৌতুকের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন তিনি।

ভানু জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ২৭শে অগাস্ট। সেন্ট গ্রেগরি�স হাই স্কুল এবং জগন্নাথ কলেজে শিক্ষার পাট শেষ করে কলকাতায় আসেন ১৯৪১ সালে। এখানে এসে তিনি আয়রন এন্ড স্টীল কম্পানি নামে একটি সরকারি অফিসে যোগ দেন, এবং বালীগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে তাঁর দিদির কাছে দু�বছর থাকার পর টালিগঞ্জের চারু অ্যাভিন্যু তে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।

ভানুর অভিনয়-জীবন শুরু হয় ১৯৪৭-এ, �জাগরণ� ছবির মাধ্যমে�দেশ স্বাধীন হওয়ার এই সময়টিকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিজের চাকরিজীবনের শৃংখলামুক্তির জন্যে। সেই বছরই �অভিযোগ� নামে অন্য একটি ছবি মুক্তি পায়। এরপর ধীরে ধীরে ছবির সংখ্যা বাড়তে থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল �মন্ত্রমুগ্ধ�(১৯৪৯), �বরযাত্রী�(১৯৫১) এবং �পাশের বাড়ি�(১৯৫২)।
এরমধ্যে �বরযাত্রী� ছবিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যদিও সেখানে ভানুর উপস্থিতি সামান্যই ছিল।

bhanu banerjee at the 1955 ভানু বাঙালের কিস্স্যা!
১৯৫৫�র উলটোরথ পুরস্কার অনুষ্ঠানে � রাজেন সরকার, সুচিত্রা সেন ও উত্তমকুমারের সাথে।

১৯৫৩ সালে মুক্তি পেল �সাড়ে চুয়াত্তর�, এবং বলা যেতে পারে যে এই ছবির মাধ্যমেই ভানু দর্শকদের নিজের অভিনয়ের গুণে আকৃষ্ট করা শুরু করেন। এর পরের বছর মুক্তি পায় �ওরা থাকে ওধারে��ঘটি-বাঙালের চিরন্তন বচসা নিয়ে এই ছবি, এবং এখানে ভানুর অভিনয় অনবদ্য। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে এই ছবিতে উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন থাকা সত্তেও কিন্তু ভানু তাঁদের পাশে সমানভাবে উজ্জ্বল ছিলেন, বাঙাল গৃহস্বামীর শ্যালক হিসাবে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

with jahar roy and ajit chatterjee1 ভানু বাঙালের কিস্স্যা!
জহর রায় ও অজিত চ্যাটার্জির সাথে।

১৯৫৮ সালটি ভানুর জীবনে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ওই বছরে মুক্তি পাওয়া অনেক ছবির মধ্যে দু�টি ছিল �ভানু পেল লটারি� এবং �যমালয়ে জীবন্ত মানুষ��এর মধ্যে প্রথম ছবিটি থেকে ভানু-জহরের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। গ্রাম্য ভানুর সেই �জহুরে� সম্বোধন এক কথায় অনবদ্য। জহর রায়ের সঙ্গে ভানুর একটা অসম্ভব রসায়ন ছিল, তাঁদের কমিক টাইমিং, সংলাপ বলার ধরন এবং দুজনের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এতটাই ছিল যে সেইসব ছবি যারা না দেখেছেন তাদের পক্ষে অনুধাবন করা শক্ত। অবশ্য ভানু-জহর জুটির ছবি দেখেননি, এরকম বাঙালী মনে হয় খুব বেশি নেই।

�যমালয়ে জীবন্ত মানুষ� বাংলা ফিল্ম ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। কাহিনীর বিশদ বর্ণনায় যাচ্ছি না, কিন্তু স্বর্গে গিয়ে ভানু যখন সব দেবতাদের সঙ্গে কথা চালাচ্ছিলেন, এবং তাঁদের যারপরনাই নাজেহাল করছিলেন, সেই দৃশ্যগুলি একদম সাজিয়ে রাখার মতন। এরমধ্যে চিত্রগুপ্তরূপী জহর রায়ের সঙ্গে ভানুর কথোপকথনগুলি দুর্ধর্ষ। দু�একটি নমুনা পেশ করা যাক -

নমুনা একঃ

ভানুঃ অকালমৃত্যুই যদি হবে, তবে জন্মালো কেন?

জহরঃ আজ্ঞে, ঠিকই তো, আমার সব কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছে!

নমুনা দুইঃ

জহরঃ আজ্ঞে, সে আপনি ঠিক বলেছেন, দেবতারা যত না খাচ্ছেন, তার থেকে বেশি ছড়াচ্ছেন।

ভানুঃ ছড়াচ্ছেন! ছড়ানো বের করছি, একবার ফিরে যাই, কন্ট্রোলের লাইনে চালের জন্য যারা গুঁতোগুতি করছে, তাদের কাছে ব্যাপারটা ফাঁস করে দিচ্ছি; এরপর তারা যখন স্বর্গরাজ্যে এসে হামলা চালাবেন, তখন কত্তারা বুঝবেন ফুড ক্রাইসিস কাকে বলে!

জহরঃ হেঁ হেঁ হেঁ�তা তো বটেই!

ওখানেই নারদরূপী পাহাড়ি সান্যাল যখন সবে গান ধরার আগে গলা সাধছেন, ভানুর বক্তব্যঃ না না, চলবে না, আধুনিক জানা আছে? না জানলেও ক্ষতি নেই, আমি শিখিয়ে নেব�খন, গলা কাঁপাতে পারেন তো?

�যমালয়ে জীবন্ত মানুষ�-এর আরেকটি অসামান্য মুহূর্ত ছিল �হাম-হাম-গুড়ি-গুড়ি নাচ�, যেটা ভানু ঊর্বশী কে শেখাচ্ছিলেন!! বাংলা কমেডি ছবির ইতিহাসে এই দৃশ্যটি অমর হয়ে থাকবে।

১৯৫৯-এ মুক্তি পায় �পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট��এই ছবিতে ভানু নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন, বিপরীতে ছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। শুধুমাত্র কৌতুক-অভিনেতাই যে তিনি নন, সেটা তিনি এই ছবিতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাঁর লিপে দু�টি গানও ছিল এই ছবিতে, এবং সেইসঙ্গে ছিল কিছু সোনায়-বাঁধানো সংলাপ, যেমনঃ আজ্ঞে আমার আসল নাম রমাপদ, কিন্তু বন্ধুরা �পদ�-ছাড়া করেছে!

এই ছবিতেই ছিল পিয়ানোকে টাইপরাইটার ভেবে ভানুর শিক্ষাদান � এরকম হাসির মুহূর্ত বাংলা ছবিতে খুব বেশি নেই।

ben ashite ashio na2 ভানু বাঙালের কিস্স্যা!

১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত �৮০তে আসিও না� ছবিটিতেও ভানু নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন, এবং এখানেও ওনার বিপরীতে ছিলেন রুমা দেবী। এই ছবিতে মান্না দে�র কন্ঠে তাঁর লিপে �তুমি আকাশ কখনো যদি হতে, আমি বলাকার মত পাখা মেলতাম, পাখা মেলতাম�� গানটি খুবই রোম্যান্টিক এবং সেই সঙ্গে মজারও বটে। এই ছবিতেও প্রচুর দমফাটা হাসির মুহূর্ত আছে, পুকুরে ডুব দিয়ে পুনর্যৌবন-প্রাপ্ত হওয়া নিয়ে লোকজনের মধ্যে বিভ্রাট এবং বিতন্ডা খুবই উপভোগ্য। এখানে জহরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় ছিলেন।

smoking a bidi at ভানু বাঙালের কিস্স্যা!
�মিস প্রিয়ংবদা�র সেটে � লিলি চক্রবর্তী ও প্রেমাংশু বোসের সাথে।

১৯৬৭ সালে ভানুর আরো একটি ছবি মুক্তি পায়, �মিস প্রিয়ংবদা� � যেখানে উনি চরিত্রের প্রয়োজনে মহিলা সেজে অতুলনীয় অভিনয় করেন। এখানে ওনার বিপরীতে ছিলেন লিলি চক্রবর্তী।

ভানুর সম্পর্কে আলোচনা �ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট� ছবির উল্লেখ ছাড়া অসমাপ্ত রয়ে যাবে। এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে, এবং ভানু-জহর জুটির শ্রেষ্ঠ ছবি বলা যেতে পারে। এই ছবির প্রথম দৃশ্যে যখন এনাদের আবির্ভাব হয়, সেই প্রথম দৃশ্য থেকেই দর্শককে মাতিয়ে রাখে এই জুটি।


ট্রাক লিস্টঃ

ভানু বন্দোপাধ্যায়\ইলেকশন
ভানু বন্দোপাধ্যায়\এমনও দিন আস্তে পারে-১
ভানু বন্দোপাধ্যায়\এমনও দিন আস্তে পারে-২
ভানু বন্দোপাধ্যায়\কর্তা-গিন্নি
ভানু বন্দোপাধ্যায়\কর্তাবাবুর দেশ ভ্রমণ
ভানু বন্দোপাধ্যায়\কলকাতা ও ভদ্রতা (গৌতম বন্দোপাধ্যায়)
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ঘটক সংবাদ
ভানু বন্দোপাধ্যায়\চন্দ্রগুপ্ত-১
ভানু বন্দোপাধ্যায়\চন্দ্রগুপ্ত-২
ভানু বন্দোপাধ্যায়\টেলিফোন বিভ্রাট
ভানু বন্দোপাধ্যায়\দুর্গা দুর্গতিনাশিনী
ভানু বন্দোপাধ্যায়\নব রামায়ন
ভানু বন্দোপাধ্যায়\নাইকা সন্ধানে -হরিনারায়ন চক্রবর্তী
ভানু বন্দোপাধ্যায়\পরিবার পরিকল্পনা
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ফটিকলাল
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ভানু এলো কোলকাতায় -১
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ভানু এলো কোলকাতায় -২
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ভানু এলো কোলকাতায় -৩
ভানু বন্দোপাধ্যায়\ভানুশ্বরেনান্দ
ভানু বন্দোপাধ্যায়\যুগের অভিযোগ -হরিনারায়ন মুখার্যী
ভানু বন্দোপাধ্যায়\রাজ-জোটক
ভানু বন্দোপাধ্যায়\লর্ড ভনু
ভানু বন্দোপাধ্যায়\সঙ্গীতচয়ন
ভানু বন্দোপাধ্যায়\সাংসারিক প্যাচাল-পবিত্র মিত্র
ভানু বন্দোপাধ্যায়\সার্বজনীন যমপূজা (-হরিনারায়ন চক্রবর্তী)-১
ভানু বন্দোপাধ্যায়\সার্বজনীন যমপূজা (-হরিনারায়ন চক্রবর্তী)-২
ভানু বন্দোপাধ্যায়\সিনেমা বিভ্রাট (পবিত্র মিত্র)
ভানু বন্দোপাধ্যায়\স্পুটনিক
ভানু বন্দোপাধ্যায়\হনুমানের নগরদর্শন
ভানু বন্দোপাধ্যায়\হরিদাস পালের গুপ্তকথা রূপদর্শন
http://www.banglatorrents.com