Sunday, August 25, 2013

বাংলা গানের অমরাবতী -প্রথম বাংলা গজল রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেনের ৭৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ



অতুলপ্রসাদ এর উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথের লেখা

বন্ধু, তুমি বন্ধুতার অজস্র অমৃতে
পূর্ণপাত্র এনেছিলে মর্ত্য ধরণীতে।
ছিল তব অবিরত
হৃদয়ের সদাব্রত,
বঞ্চিত কর নি কভু কারে
তোমার উদার মুক্ত দ্বারে।

মৈত্রী তব সমুচ্ছল ছিল গানে গানে
অমরাবতীর সেই সুধাঝরা দানে।

সুরে-ভরা সঙ্গ তব
বারে বারে নব নব
মাধুরীর আতিথ্য বিলাল,
রসতৈলে জ্বেলেছিল আলো।
দিন পরে গেছে দিন, মাস পরে মাস,
তোমা হতে দূরে ছিল আমার আবাস।
"হবে হবে, দেখা হবে' --
এ কথা নীরব রবে
ধ্বনিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে
অকথিত তব আমন্ত্রণে।
আমারো যাবার কাল এল শেষে আজি,
"হবে হবে, দেখা হবে' মনে ওঠে বাজি।
সেখানেও হাসিমুখে
বাহু মেলি লবে বুকে
নবজ্যোতিদীপ্ত অনুরাগে,
সেই ছবি মনে-মনে জাগে।
এখানে গোপন চোর ধরার ধুলায়
করে সে বিষম চুরি যখন ভুলায়।
যদি ব্যথাহীন কাল
বিনাশের ফেলে জাল,
বিরহের স্মৃতি লয় হরি,
সব চেয়ে সে ক্ষতিরে ডরি।
তাই বলি, দীর্ঘ আয়ু দীর্ঘ অভিশাপ,
বিচ্ছেদের তাপ নাশে সেই বড়ো তাপ।
অনেক হারাতে হয়,
তারেও করি নে ভয়;
যতদিন ব্যথা রহে বাকি,
তার বেশি যেন নাহি থাকি


শান্তিনিকেতন, ১৯ ভাদ্র, ১৩৪১

অতুলপ্রসাদ সেন (২০শে অক্টোবর, ১৮৭১- ২৬শে আগস্ট, ১৯৩৪) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তিনি একজন বিশিষ্ট সংগীতবিদও ছিলেন। তাঁর রচিত গানগুলির মূল উপজীব্য বিষয় ছিল দেশপ্রেম, ভক্তি ও প্রেম। তাঁর জীবনের দুঃখ ও যন্ত্রণাগুলি তাঁর গানের ভাষায় বাঙ্ময় মূর্তি ধারণ করেছিল; "বেদনা অতুলপ্রসাদের গানের প্রধান অবলম্বন"।

অতুলপ্রসাদ সেনের পারিবারিক ভিটে দক্ষিণ বিক্রমপুরের মাগর-ফরিদপুর গ্রামে। তিনি ঢাকায় তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্পবয়সেই অতুলপ্রসাদ পিতৃহারা হন। এরপর তাঁর দাদামশায় কালীনারায়ণ গুপ্ত তাঁকে প্রতিপালন করেন। দাদামশায়ের নিকটই সংগীত ও ভক্তিমূলক গানে তাঁর হাতেখড়ি। লক্ষ্মৌতে তিনি যেখানে বাস করতেন তার জীবনকালেই তার নামে ঐ রাস্তার নামকরণ করা হয়। তার উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তার বাড়ী এবং গ্রন্থস্বত্বও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।

অতুলপ্রসাদ বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক। তিনিই প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। তাঁর রচিত বাংলা গজলের সংখ্যা ৬-৭টি।গীতিগুঞ্জ (১৯৩১) গ্রন্থে তাঁর সমুদয় গান সংকলিত হয়।[৪] এই গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণে (১৯৫৭) অনেকগুলি অপ্রকাশিত গান প্রকাশিত হয়। অতুলপ্রসাদের গানের সংখ্যা ২০৮।
অতুলপ্রসাদ সেনের কয়েকটি বিখ্যাত গান হল "মিছে তুই ভাবিস মন", "সবারে বাস রে ভালো", "বঁধুয়া, নিঁদ নাহি আঁখিপাতে", "একা মোর গানের তরী", "কে আবার বাজায় বাঁশি", "ক্রন্দসী পথচারিণী" ইত্যাদি। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক গানগুলির মধ্যে প্রসিদ্ধ "উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী", "বলো বলো বলো সবে", "হও ধরমেতে ধীর"।
তাঁর "মোদের গরব, মোদের আশা" গানটি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। অতুলপ্রসাদের গান "দেবতা", "প্রকৃতি", "স্বদেশ", "মানব" ও "বিবিধ" নামে পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের বিশেষ গুণগ্রাহী ছিলেন। "অতুলপ্রসাদী গান" নামে পরিচিত এই ধারার একজন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

No comments:

Post a Comment