Thursday, March 13, 2014

স্বাধীনতার ৪৩ বছর:বিশ্বমানচিত্রে সফল বাংলাদেশ এবং আমাদের দায়বদ্ধতা-সুমি খান

এবারের স্বাধীনতা দিবস হবে অন্যরকম! জাতীয় সঙ্গীত গাইবে জাতীয় সংসদের প্রতিটি সদস্য!  দেশের প্রতিটি মানুষের কন্ঠে বেজে উঠবে আমাদের প্রাণের সঙ্গীত , আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!
দেশের যারা এই দেশ এই পতাকা আর এই ভাষা , কৃষ্টি -সংস্কৃতি  সবকিছুর বিরোধী- একাত্তরে যারা পাকিস্তানী অত্যাচারী ঘাতকদের সহোযোগী ঘাতকের ভূমিকা পালন করেছেন- তাদের বুক কাঁপিয়ে দেবো আমরা এবারের স্বাধীনতা দিবসে!  
  যারা  ধর্মান্ধ অপশক্তির হাতের পুতুল হয়ে নিজের স্বকীয়তা এবং আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়েছেন, তারাও  প্রাণ খুলে জাতীয় সংগীত গাইবেন !
 আমাদের জাতীয় সংগীত , মাতৃভাষা এবং  বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের আত্মপরিচয়। যে আত্মপরিচয় বিলুপ্ত করে দিতে চেয়েছে অন্ধকারের অপশক্তি ।  একটু পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাবো এই অন্ধকারের অপশক্তির শেকড় অনেক গভীরে । এই শেকড় উপড়ে ফেলতে হলে আমাদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
 ১৯২০ সালের আফগানিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের ধর্মান্ধ মানসিকতার  বেশ মিল রয়েছে।  সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' পড়লে  একশ বছর আগের সেই চিত্র খুঁজে পাই- আর উদ্বিগ্ন হই বন্দুক আর মরুময় জীবনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে!
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে , নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল সমাজকাঠামো ঠেকাতে ধর্মান্ধ নপুংসকের দল তাদের পুরনো গোয়েবলসীয় পন্থায়  মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠার   অপচেষ্টায় কাফির'; নাস্তিক’  গালাগাল দিয়ে ইসলামী জলসা আর জুমার নামাজের খুৎবা  সেই যে আল কিন্দী, আল রাজী, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদের দিয়ে শুরু হয়েছিল তখন থেকেই মোল্লারা সব দেশেই, সব যুগেই এই খেলা খেলেছে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, নিজেকে প্রগতিশীল দাবী করা আধুনিক বাংলাদেশী সুশীলরাও এই এক ট্রিকেই কাত। কাবুলিদের মত মজা দেখতে ব্যস্ত। দেশটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সম্পর্কে কোন মাথা ব্যথাই নাই।

দেশে বিদেশে থেকে কিছুটা অংশ এখানে তুলে দিলাম। ঘটনার প্রেক্ষাপট ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আফগানিস্থাকে স্বাধীনতা এনে দেয়া আমানুল্লা খানকে কাফির ঘোষনা করে আফগান মোল্লারা বিভিন্ন উপজাতীদের দিয়ে বিদ্রোহ করিয়েছে। এদের নেতৃত্বে ছিল 'বাচ্চা সকাও' নামে আক্ষরিক অর্থেই এক ডাকাত সর্দার।

কোট শুরু "কিন্তু এস্থলে দেখা গেল, বিদ্রোহের নীল-ছাপটা তৈরী করেছেন মোল্লারা এবং তাঁরা একথাটা সব উপজাতিকে বেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, যদি কোনো উপজাতি 'কাফির' আমানউল্লার বিরুদ্ধে বিদ্রহ ঘোষনা করে, তবে তারা তখন দীন ইসলামের রক্ষাকর্তা। রাইফেল কিম্বা টাকার লোভে অথবা ঐতিহ্যগত সনাতন শত্রুতার স্মরণে তখন যারা আমানঊল্লার পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়বে তারাও তখন আমানঊল্লার মতই কাফির। শুধু যে তারাই তখন দোযখে যাবে তা নয়, তাদের পূর্বতন অধস্তন চতুর্দশ পুরুষ যেন স্বর্গদ্বার দর্শন করবার আশা মনে পোষন না করে।  এ বড় ভয়ঙ্কর অভিসম্পাত। ইহলোকে বক্ষলগ্ন থাকবে রাইফেল, পরলোকে হুরী, এই পুরুষ-প্রকৃতির উপর আফগান-দর্শন সংস্থাপিত। কোনোটাতেই চোট লাগলে চলবে না। কিন্তু প্রশ্ন আমানউল্লা কি সত্যই কাফির?  এবার মোল্লারা যে মোক্ষম যুক্তি দেখাল তার বিরুদ্ধে কোনো শিনওয়ারী কোনো খিগওয়ানী একটি কথাও বলতে পারল না। মোল্লারা বলল, 'নিজের চোখে দেখিসনি আমানউল্লাহ গণ্ডা পাঁচেক কাবুলী মেয়ে মুস্তফা কামালকে ভেট পাঠিয়েছে; তারা যে একরাত জলালাবাদে কাটিয়ে গেল, তখন দেখিসনি, তারা বেপর্দা বেহায়ার মতন বাজারের মাঝখানে গটগট করে মোটর থেকে উঠল নামল?'  কথা সত্যি যে, বিস্তর শিনওয়ারী খুগিয়ানী সেদিনকার হাটবারে জলালাবাদে এসেছিল ও সেখানে বেপর্দা কাবুলি মেয়েদের দেখেছিল। আরো সত্যি যে, গাজী মুস্তফা কামাল পাশা আফগান মোল্লাদের কাছ থেকে কখনো গুড কন্ডাক্টের প্রাইজ পাননি। তবু নাকি এক মূর্খ বলেছিল যে, মেয়েরা তুর্কী যাচ্ছে ডাক্তারী শিখতে। শুনে নাকি শিনওয়ারীরা অট্টহাস্য করেছিল - 'মেয়ে ডাক্তার! কে কবে শুনেছে মেয়েছেলে ডাক্তার হয়! তার চেয়ে বললেই হয়, মেয়েগুলো তুর্কীতে যাচ্ছে গোঁপ গজাবার জন্য!'কে তখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে যে, শিনওয়ারী মেয়েরাই বিনা পর্দায় ক্ষেতে-খামারে কাজ করে, কে বোঝাবে যে, বুড়ীদাদীমা যখন হ্লুদ-পট্টী বাঁধতে কপালে জোঁক লাগাতে পুরুষের চেয়েও পাকাপোক্ত তখন কাবুলী মেয়েরাই বা ডাক্তার হতে পারবে না কেন? কিন্তু এসব বাজে তর্ক, নিষ্ফল আলোচনা' আসল একটা কারণের উল্লেখ কেউ কেউ করেছিলেন। কিন্তু সেটা সত্য, অনুসন্ধান করেও জানতে পারিনি। আমানউল্লা নাকি রাজকোষের অর্থ বাড়াবার জন্য প্রতি আফগানের উপর পাঁচ মুদ্রা ট্যাক্স বসিয়েছিলেন।  'কাবুল বাসিন্দাদের যে রাইফেল দেওয়া হল তারা লড়তে যায়নি?'  আব্দুর রহমান যা বললো তার হুবহু তর্জমা বাঙলা প্রবাদে আছে। শুধু এ স্থলে উলুখড়ের দুখানা পা আছে বলে দু'রাজার মাঝখানে যেতে সে রাজী হচ্ছে না। আমি বললুম, 'তাজ্জবের কথা বলছ আবদুর রহমান, বাচ্চায়ে সকাও ডাকাত, সে আবার রাজা হল কি করে?' আবদুর রহমান যা বলল তার অর্থ, বাচ্চা শক্কুরবার দিন মোল্লাদের হাত থেকে তাজ পেয়েছে, খুতবায় (আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে) তার নাম বাদশা হিসাবে পড়া হয়েছে, আমানউল্লা কাফির সে ফতোয়া প্রচারিত হয়েছে ও বাচ্চায়ে সকাও বাদশাহ হবীবুল্লা খান নাম ধারন করে কাবুল শহর থেকে 'কাফির' আমানউল্লাকে বিতাড়িত করবার জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছেন।
এই চিত্র আমাদের বর্তমান চিত্র। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই পরিস্থিতি কোনভাবেই বেশিদূর যেতে দেয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের  মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা কর্মী চোখে ঠুলি দিয়ে রেখেছে। তাদের মেধার চর্চা না থাকার কারণে তারা হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে এই জঙ্গীদের প্রকাশ্য সমর্থন দিতে পারে। যার কারণে  হেফাজত ১৩ দফা ঘোষণার সুযোগ পেয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা সিদ্ধান্ত নিতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের । বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ অনুধাবন করে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবার দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রলীগের প্রচুর  নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ও অনেক। সন্ত্রাসী টেন্ডারবাজদের দমন করতে ব্যর্থ হলে তার দায়দল এবং দলের নেতা কর্মীদের ই নিতে হবে। যেহেতু রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, তাই তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা অনেক বেশী বৈকি। পাশাপাশি আন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর দায় ও কম নয়। দেশে দীর্ঘদিন  মেধাবী এবং গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চার অভাব দেখা যাচ্ছে। বাম সংগঠন গুলো একেবারেই জনবিচ্ছিন্ন।  এসব দলের মূল নেতা- সংগঠকেরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিলে কতো ভোট পাবেন , তারা নিজেরাও জানেন না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, সর্বহারার রাজনীতির কথা বললেও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক এই নেতা সংগঠকেরা  জনগণের অধিকারের জায়গা থেকে গঠনমূলক কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচী নেন না। অনেক সম্মানিত বলেই যেন এই ব্যক্তিরা আত্মসমালোচনা করেন না কখনোই । কেবল সমালোচনা করাই  যেন এদের রাজনীতির মূল অস্ত্র। আর আমাদের কিছু মানুষ টেলিভিশনের টক শো দেখেই তাদের বাস্তব জ্ঞান বুদ্ধি লুপ্ত করে দেন! তবে বাস্তবতা কখনো কাউকে ছেড়ে দেয় না। ধোপদুরস্ত পাজামা পাঞ্জাবী পরে মার্কস-এঙ্গেলস লেনিন কপচে মনগড়া কথা বললই কি আর তা জনগণ গ্রহণ করে? সেই যুগ অনেক আগেই বাসি হয়েছে। ত্রিপুরার বামসরকারের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র মূখ্যমন্ত্রী । সিপি্্রম এর বাম সরকার সর্বহারার রাজনীতি করে  তিন বার  রাজ্যক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।  আমাদেরই মতো বাংলা এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতি তাদের । তবু সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। এবং তারা মনে করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ এতোটা উন্নয়ন এবং অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এই উপমহাদেশে জঙ্গীবাদ দমনে বড়ো রকমের সফলতা এসেছে।  এই বস্তবতার বিপরীত বক্তব্য দেন যারা, এ দেশের বামদল এবং এসব দলের নেতা কর্মীরা কি তাহলে সঠিক অবস্থান থেকে অনেক দূরে নয় কি?  তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার বিনীত অনুরোধ, চোখ মেলে বাস্তবতা অনুধাবন করুন মাননীয় বাম নেতারা।

বিশ্ব মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ কোনোমতেই যেন দমাতে পারছে না বাংলাদেশকে। বিশ্বের কোনো দেশ এখন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িবলে অপবাদ দেওয়ার সাহস করবে না। জনশক্তি রপ্তানি বাড়তে থাকায় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি- এমনকি রেমিট্যান্সের মাসভিত্তিক রেকর্ড, রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ইতিহাসে রেকর্ড এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে ।
রপ্তানিতেও আইকনে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম। এক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে কলকারখানা বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ বেকারদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বেড়েছে গড় আয়ু, কমেছে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার। শিক্ষা ৰেত্রে সাফল্যও বিরাট, এক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো।
বিশ্বের বাঘা বাঘা  পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে এসেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র ইতিবাচক । এছাড়া দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, চীন-ভারতের পথে বাংলাদেশ। সরকার মনে করছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহৎ ২০টি অর্থনীতি দেশের মধ্যে চলে আসবে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও বেড়েই চলেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ। ৪ বছরের ব্যবধানে এফডিআইয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৬৬ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর (২০১১ সালে) যার পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলারে। যার প্রবৃদ্ধি এর আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ৰেত্রে দৰিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তানের পরেই স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যমতে, ক্রমেই স্থানীয় বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৪টি প্রকল্পে যেখানে স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছিল ২ হাজার ৭৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৪৬টি প্রকল্পে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
রেমিট্যান্সে মাসভিত্তিক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে ২০১২ থেকে এ পর্যন্ত  । প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও গত ৪০ বছরে রেকর্ড হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালের  জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১২ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা অতীতের যেকোনো সময়ের একক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ৬ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩২৩ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  চার দশকে কখনো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ১২ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেনি। এবার আসি গড় আয়ু প্রসঙ্গে। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ১০ বছর বেড়েছে। এখন গড় আয়ু ৫৯ থেকে ৬৯ এ দাঁড়িয়েছে। যা ভারতীয়দের চেয়ে ৪ বছর বেশি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক দূর এগিয়েছে দেশ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে নেমে এসেছে ৩৭ জনে। অথচ ১৯৯০ সালেও এ হার ছিল ৯৭ জন। একই সময়ে মাতৃত্বকালীন উচ্চমৃত্যুহারও কমেছে অনেক। এ সময়ের মধ্যে প্রতি লাখে নারীর মৃত্যু হার  ১৯৪ জন। স্বাস্থ্য খাতের এই বিস্ময়কর উন্নতিকে নব্বই শতকের শেষদিকে জাপানের মেইজি বিপ্লবের সাথে  তুলনা করেছেন অনেকে। ২০০৫ সালে ৯০ শতাংশের বেশি মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিতে ভর্তি হয়, যা ছেলেদের চেয়েও বেশি। অথচ ২০০০ সালেও এ সংখ্যা ছিল  এর অর্ধেক।রপ্তানি ক্ষেত্রে ও বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে বেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১২ সালেরমাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকাশিত  তথ্যমতে, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে যেখানে ৯ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার পণ্যদ্রব্য রপ্তানি হয়েছিল। সেখানে ২০১১-১২অর্থবছরে এ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। রপ্তানির  ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়েছে গার্মেন্ট শিল্প। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে এ খাতে ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার রপ্তানি হলেও ২০১১-১২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০১০-১১) এ খাতে ৯৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছিল।
 কৃষিক্ষেত্রে নানামুখী  উন্নয়ন মূলক পদক্ষেপের কারণে বাম্পার ফলন হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে দেশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে দেশে আউশ, আমন ও বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার টন। ১৭ বছরের ব্যবধানে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ধানের উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪২ হাজার টন। উৎপাদন বাড়তে থাকায় চালের আমদানির পরিমাণও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা এবং  ১৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার চাল আমদানি হয়েছিল। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার চাল। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের বাম্পার ফলন হলেও তারা খরচ তুলতে পারেনি। আনুষঙ্গিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ কারণে ধানের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন একাধিক কৃষক।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে এগুচ্ছে বলে কিছু  আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংস্থা ও পত্রিকা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর , ২০১২ আন্তর্জাতিক স্বায়ত্তশাসিত রেটিং এজেন্সি মুডিস্ এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিএ৩পর্যায়ের। যাকে স্থিতিশীল বলা হয়। সেই সময়ে প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, চীন-ভারতের পথে বাংলাদেশ।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আলাদা হওয়ার সময় দুই দেশেরই জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৬ কোটির মতো। এখন পাকিস্তানের জনসংখ্যা ১৮ কোটি, কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে দেশটি এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তেমন খনিজসম্পদ নেই, নেই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যও।
এছাড়া ১৯৭৫, ১৯৮২ ও ২০০৭ সালে তিন তিনবার সামরিক অভ্যুত্থান আর বিরামহীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরেও দেশটি অর্থনীতিতে ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে। এছাড়া  জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল বলা হয়েছে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
 এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমার এশিয়ার এই চারটি দেশের মাথাপিছু আয় কম হলেও বেশ ক’বছর ধরে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার লক্ষণীয়। প্রতিবেশী  দেশগুলো পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়ে আরো এগিয়ে যেতে পারে ।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর  খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বেশ ইতিবাচক।  এই অগ্রগতির কৃতিত্ব সারা জাতির।
তবু যারা এই বিপুল অর্জন অস্বীকার করেন, তাদের সম্পর্কে একটি প্রবাদ মনে পড়ে,এরা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতেই ভালো বাসেন। 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক দের বিচার, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার , জাতীয় বীর এবং নেতা সহ  দেশের ইতিহাসে যতো কলঙ্কজনক অধ্যায় সব কালিমা মোচনের দায় যেন একক ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ই নিয়েছেন। আর জনগণ হিসেবে আমাদের দায়মুক্তির কোন উদ্যোগ ই নেই! কেবল সমালোচনা আর গালমন্দ করেই দায়িত্ব শেষ! এই জঘন্য সব ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পিত হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেবার মতো সৎসাহস আছে , তা কাজে প্রমাণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
 পরিশেষে বলতে হয়, স্বাধীনতার ৫বছরের মধ্যে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি এবং একাত্তরের ঘাতকদের হাতে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দেয়া হয়েছে। খুনিদের রক্ত মাখা হাতে এদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। যার ধারাবাহিকতা টেনে নিয়েছেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি ক্ষমতায় থেকে ২১ আগষ্টের গ্রেনেড আক্রমনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কে হত্যা করে আবারো এদেশের সূর্য অস্তমিত করার  জঘন্য অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
  তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  দুর্ভাগা  এ জাতির আকাশ থেকে সকল মেঘ সরিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে নেবার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছরের জঞ্জাল কি এতো সহজে সরানো সম্ভব? দলের ভেতরে বাইরে অসংখ্য জঞ্জাল নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী ।  এ কারণে অন্য অনেক সফল রাষ্ট্রনায়কের মতোই কখনো তিনি নন্দিত , কখনো নিন্দিত !  দুর্ভাগ্য আমাদের ,এতো দায়িত্বশীলতা,  এতো সফলতা অর্জনের পর ও  নষ্ট রাজনীতি  ঘাতকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশীদারদের দাপট এখনো  অনেক!!  বাস্তবতা জেনে বা না জেনে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীতা করার  জন্যে বালিতে মুখ গুঁজে “ কিচ্ছু হলোনা এই সাত বছরে...” এমন সর্বনাশা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। গঠনমূলক সমালোচনা দেশের স্বার্থে প্রয়োজন। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে চরম ঋনাত্মক মন্তব্য- নিজেদের স্বাভাবিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। এতে নিজেদের ই ক্ষতি ।  
দেশের  কিছু গণমাধ্যম এবং সুশীল অর্থনীতিবিদেরা  বাস্তবতা অস্বীকার করলেও সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। বাঙ্গালী বীরের জাতি! জয় ছিনিয়ে নিতে জানে! এবারের স্বাধীনতা দিবসে তাই আমাদের  দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা  প্রমাণের সময়।  লাখো কন্ঠে আমরা গেয়ে উঠবো, “ মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন- ওমা আমি নয়নজলে ভাসি,  সোনার বাংলা! আমি তোমায় ভালোবাসি!!” জয় আমাদের সুনিশ্চিত!!
Sumikhan29bdj@gmail.com


Wednesday, March 12, 2014

বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঝড়- সুমি খান


বুকের ভেতর উথাল পাথাল  ঝড়-
ইচ্ছেমতোন মেঘের সাথে  যাবো তেপান্তর...
 আকাশ ভাঙ্গা রোদের তেজে
তোমার প্রেমের 

দিল্লির সাফল্য, বাংলাদেশ নিয়ে সুর কিছুটা নরম করল আমেরিকা

অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রতি যুদ্ধং দেহি মনোভাব থেকে কিছুটা সরে এই প্রথম সুর নরম করল আমেরিকা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মার্কিন বিদেশ দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের সহ-সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল সেনেট-এর একটি বৈঠকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। আওয়ামি লিগ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রত্যাহার করারও প্রয়োজন রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে এই মনোভাবে নয়াদিল্লিও খুশি। বাংলাদেশের বিদেশসচিব সইদুল ইসলাম এই মুহূর্তে আমেরিকায়। সে দেশে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসিনা সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদে তিনি ব্যাখ্যা করছেন মার্কিন কর্তাদের কাছে। গোটা বিষয়টির দিকে অবশ্য সতর্ক ভাবে নজর রাখছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি গ্যারি বাস রচিত ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম’ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী ভূমিকার বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকার সেই ‘নিক্সন-নীতির’ সত্যিই কোনও পরিবর্তন হল কিনা, তা-ই আগে খতিয়ে দেখতে চাইছে সাউথ ব্লক। প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অন্যতম রূপকার রণেন সেন বলছেন, “এ’টি অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। তবে বিষয়টি আচমকা ঘটেনি। বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের তরফে কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। একটু দেরিতে হলেও আমেরিকা অনুধাবন করছে যে জামাতে ইসলামির সঙ্গে আইএসআই-ই ছাড়াও ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলিরও যোগসাজস রয়েছে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা উপজাতিদের নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাতেও যে জামাত যুক্ত এমন খবরও মার্কিন বিদেশ দফতরের কাছে পৌঁছেছে।” বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রজিত মিটারের মতে “বাংলাদেশে বিরোধী দলের সেই রাজনৈতিক জোর যে আর নেই তা স্পষ্ট। আমেরিকা বুঝছে বাইরে থেকে হাওয়া দিয়ে তাদের বেশি ক্ষণ ভাসিয়ে রাখা যাবে না। ইউনূস-এর সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক খারাপ হওয়াটা অবশ্যই আমেরিকাকে খুশি করেনি। কিন্তু আজকের দিনে সব দেশই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, আমেরিকাও।” জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন কিন্তু যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই গোটা বিষয়টি দেখতে চাইছেন। তাঁর কথায়, “কোনও দেশই তার বিদেশনীতি রাতারাতি বদলায় না। কিছু সূক্ষ্ম তারতম্য ঘটায় মাত্র। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা কেন হাসিনা সরকারের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছে, তার কোনও সাময়িক কারণ রয়েছে কি না, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।” আমেরিকা এর আগে বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশে কোনও রকম হিংসা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তারা বরদাস্ত করবে না। আবার ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’-এর লক্ষ্য অর্জন ও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির জন্য হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেছে হোয়াইট হাউস। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ নিয়ে যে সেনেট ‘ব্রিফিং’টি নিশা দেশাই করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আবার নতুন করে দেখার কথা বলা হয়েছে। আমেরিকার কিছু শিল্প সংস্থাও এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সেনেটের উপর চাপ তৈরি করেছে। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ঢাকা দূতাবাস সূত্রে জানানো হচ্ছে, মার্কিন নীতি কিছুটা নরম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত তাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার ৪০.৪ শতাংশ। আমেরিকা বা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ৫০ শতাংশ ভোট পড়লে তাকে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাফল্য বলে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে কিছুতেই ব্যর্থ বলতে পারছে না পশ্চিম বিশ্ব। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দুতাবাস আরও যে একটি রিপোর্ট হোয়াইট হাউসকে পাঠিয়েছে, তাতে আপাত ভাবে সন্তুষ্ট ওবামা প্রশাসন। বাংলাদেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যথেষ্ট ভাল ফল করছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশ্ন, আওয়ামি লিগ সরকার রিগিং-সন্ত্রাস করলে এই প্রার্থীরা কি জিততে পারত? তবে ক’মাস আগেও পরিস্থিতিটা ভিন্ন ছিল। বিএনপি-জামাত জোটের দাবি অগ্রাহ্য করে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে না-দাঁড়িয়েই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। গোটা ঘটনার জেরে হিংসা তুঙ্গে ওঠে। তখনই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে হাসিনার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে সময়ে পশ্চিমের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে যায় নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লক মার্কিন নেতৃত্বকে স্পষ্ট ভাষায় জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিম বিশ্বের উচিত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং হিংসামুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা। জামাতের হিংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য সে দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে কথাও আমেরিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করে নয়াদিল্লি। আমেরিকার এই অবস্থান পরিবর্তনকে তাই নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য বলেও মনে করছে সাউথ ব্লক।

জঙ্গিরা মারে, রাষ্ট্রও মারে, কিন্তু বলা বারণ-শিলাদিত্য সেন


যে ভাবে স্বাধীন চোখে দেখা ও ক্যামেরায় তোলা এই দেশ ও দেশের মানুষ চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়, আমাদের বোধ-অনুভবে সঞ্চারিত হয়, তা মোটেও পছন্দ নয় আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের।
১৩ মার্চ , ২০১৪, ০৪:০৫:০০
‘সেনগাদাল’ ছবির একটি দৃশ্য।
ট্রেনের টয়লেটে ঢুকে নিঃশব্দে কাঁদছিলেন লীনা মনিমেকলাই। ট্রেনটা তখন রামেশ্বরম-এর লম্বা রেল-সেতু পার হচ্ছে। একটু আগেই পুলিশ এসে তাঁকে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেছে। রামনাথপুরমের পুলিশ চৌকি থেকে হুকুম হয়েছে: চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রামেশ্বরম ছেড়ে চলে যেতে হবে। অপরাধ? লীনা ওই অঞ্চলে তামিল জেলে আর উদ্বাস্তুদের নিয়ে ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন। সে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকেই কাঁদছিলেন তিনি। পুলিশচৌকিতে কর্তব্যরত অফিসারকে প্রশ্ন করেছিলেন: এঁদের নিয়ে ছবি করাটা কি অপরাধ? উত্তর পেয়েছিলেন: তর্ক করলে জেলে ঢুকিয়ে দেব।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছবি করছিলেন না লীনা। ছবি তুলতে গিয়েছিলেন সেই সব তামিল ধীবরকে নিয়ে, যাঁরা প্রায়ই নিখোঁজ হয়ে যান সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে, কিংবা ফিরে আসেন মৃত অবস্থায়। অঞ্চলটা রামেশ্বরম-এর ধনুষ্কোডি। এই ধনুষ্কোডি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ষাটের দশকের এক দানবিক ধূলিঝড়ে। শুধু কিছু ধ্বংসস্তূপ আর বালিয়াড়ি নিয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে, তার সংলগ্ন সমুদ্র আদতে সীমান্ত-সমুদ্র ভারত ও শ্রীলঙ্কার। এখান থেকে প্রায়ই মাছমারা’র দল যায় সমুদ্রে, মাছ ধরতে, আর প্রায়ই আক্রান্ত হয় শ্রীলঙ্কার নৌসেনাদের হাতে। কেউ কেউ বেঁচে ফেরেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে, অনেকেই ফেরেন না, লাশ নিয়ে ভাসতে ভাসতে ফিরে আসে নৌকোগুলো। আর আসেন তামিল উদ্বাস্তুরা। শ্রীলঙ্কা থেকে উৎখাত হয়ে পুনর্বাসনের আশায় ঠাঁই গাড়েন ধনুষ্কোডিতে। সম্পন্ন যে-সব তামিল, তাঁরা কবেই, শ্রীলঙ্কায় তিন দশকের রক্তক্ষয় শুরু হওয়ার পরে পরেই চলে গিয়েছেন ইউরোপ বা কানাডায়। বাকি সব নিঃস্ব গৃহহীন, প্রায়ই চলে আসেন এখানে। এদের নিয়েই ছবি করছিলেন লীনা। বাদ সাধে আমাদের দেশের সরকার।
অনেকক্ষণ ধরে থানায় বসে ছবির ফুটেজ দেখিয়ে লীনা তামিল পুলিশ সুপারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি আক্রান্ত তামিলদের ছবি তুলতে এসেছেন। চশমা-চোখে হাসি-হাসি মুখে পুলিশের বড়কর্তাটি কিছুতেই লীনার কথা বিশ্বাস করতে চান না। লীনা মেয়ে বলেই বোধহয় আরও বেশি সন্দিগ্ধ হয়ে খোঁজ নেন, এলটিটিই ছবি বানাতে কতটা সাহায্য করছে লীনাকে, সন্দেহ প্রকাশ করেন, ওই নিখোঁজ নিহত জেলে বা উদ্বাস্তুদেরও নিশ্চয়ই সাহায্য করে এলটিটিই!
এ সমস্তই ধরা আছে লীনার ‘সেনগাদাল’ বা ‘দ্য ডেড সি’ ছবিতে। লীনা মুখ্যত তথ্যচিত্রকার, এটি তাঁর প্রথম ফিচার-ছবি। গোটাটাই ঘটে-যাওয়া বাস্তব, ডকুমেন্টেশনের ধাঁচে তুলে এনেছেন, দরকারে আর্কাইভ থেকে ফুটেজও ব্যবহার করেছেন। ফলে দর্শককে সহ্য করতেই হবে, কী ভাবে মধ্যরাতে ভারতীয় নৌসেনাদের একটি দল এসে ধনুষ্কোডির তটে ঘুমন্ত উদ্বাস্তুদের উপর অত্যাচার চালায়, চেষ্টা করে মেয়েদের ধর্ষণ করতে। শ্রীলঙ্কার উপকূল যেহেতু এ-সমুদ্র থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে, ভারতীয় কূলরক্ষীরা, গোয়েন্দা দফতরের কর্মীরা, পুলিশ প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ ছিন্নমূল মানুষগুলোর ওপর। অন্য দিকে মাঝসমুদ্রে জেলেদের নৌকোয় উঠে, তাঁদের উলঙ্গ করে, গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের রক্তাক্ত করে, বা চোখ বেঁধে গুলি চালিয়ে তাঁদের ‘খতম’ করে তবে স্বস্তি পায় শ্রীলঙ্কার নৌসেনারা। এই তামিলরা দুই রাষ্ট্রেরই চক্ষুশূল।
কিছু দিন আগে মাসখানেকের ব্যবধানে বার দু’য়েক কলকাতা ঘুরে গেলেন লীনা, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আর সল্টলেকে এক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখানোর সূত্রে। বছর দু’য়েক ধরে দেশে-বিদেশে নানা ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখিয়ে চলেছেন, সম্মানও জুটছে সে সুবাদে। কিন্তু এই তামিল পরিচালকের সঙ্গে কথায়-কথায় জানা গেল, সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিতে নারাজ ছিল, কারণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা দু’দেশের সরকারেরই নাকি অবমাননা হয়েছে এ-ছবিতে। অহিংস নিরস্ত্র অসহায় এই তামিলদের কাছে সেনাবাহিনী বা জঙ্গি দুইয়েরই হিংসাত্মক আক্রমণ যে সমান, তা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে ওঠা যায়নি। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় লীনাকে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ছাড়পত্র মেলে শেষ পর্যন্ত। হয়তো উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার খাতিরেই। হয়তো উদারতার একটা গর্ব আছে বলেই। কিন্তু এই কাহিনি বলে দেয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধ-স্বরকে রাষ্ট্র মন থেকে মানতে পারে না।
লীনার এই অভিজ্ঞতার আয়নায় বলিউডকে নতুন করে চিনে নেওয়া যায়। ব্যক্তির বিরুদ্ধ-স্বরকে নগণ্য করে দেওয়ার জন্যে রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রমপ্রসারিত ভূমিকা নিচ্ছে বলিউড। বলিউড তো ইন্ডাস্ট্রি, তার সঙ্গে সরকারের ব্যবসায়িক বিরোধ থাকলেও সরকার যে সামাজিক আদলে রাষ্ট্রকে সাজিয়ে নিতে চায়, তার বিরোধিতায় সাধারণত যায় না বলিউড। বরং চালু সামাজিক কাঠামোর অনুগত দর্শকরুচি তৈরি করে দিতে পারলেই বলিউডের ‘বাজার’ বজায় থাকে। ব্যক্তির স্বতন্ত্র স্বর নয়, সমষ্টির ক্ষমতাকেন্দ্রিকতাতেই তার বিশ্বাস। সিনেমার ভিতর দিয়ে রাষ্ট্রের আধিপত্যকামী আদর্শ বিস্তারে সদারত বলিউড এখন নানা ‘সামাজিক’ বিষয় তুলে আনছে তার ছবিতে।
গত অগস্টে, স্বাধীনতার মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যাড্রাস কাফে’র কথা এক বার মনে করুন। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের পীড়ন-নিধন বা তাদের গৃহহীনতার সমস্যা এ-ছবির ভিত্তিভূমি, অথচ সারা ছবি জুড়ে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর কার্যকলাপ, সেই ‘র’-এর তুখড় প্রতিনিধি জন আব্রাহাম তাঁর অতুলনীয় দক্ষতা সত্ত্বেও জঙ্গি ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে, আর সে-ব্যর্থতায় কেঁদে কেঁদে তাঁর চোখের জল শুকোয় না। জন এ-ছবির মূল অভিনেতা নন, প্রযোজকও, বলেছেন: ‘এ-ছবি প্রতিটি ভারতীয়ের দেখা উচিত শুধু এটা জানা বা বোঝার জন্যে যে ওই ঘটনা কী ভাবে ভারতের রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছিল।’ শ্রীলঙ্কার ছিন্নমূল উদ্বাস্তু দরিদ্র তামিলদের অবলম্বন করে আসলে এ-ছবি ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার প্রচার চালায়, জাতীয়তাবাদের জিগির-তোলা এক সমষ্টিবোধকে জনপ্রিয় করে তোলে।
ব্যক্তির স্বর যে বলিউড-শাসিত ভারতীয় সিনেমায় ক্রমশই কোণঠাসা, তার হাতে-নগদ হালফিল উদাহরণ অজিতা সুচিত্রা ভীরা-র ‘ব্যালাড অব রুস্তম’।
 রুস্তম প্রত্যন্ত মফস্সলের ছোট্ট সরকারি অফিসের সাধারণ কর্মী। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসার থেকে রক্ষণশীল উচ্চবর্গের লোকজন নিয়েই তার দিনযাপন; তবু উন্নয়নের বাইরে পড়ে-থাকা সেই অঞ্চলের নির্জন নিসর্গ, মানুষজনের মুখ আস্তে আস্তে তার স্বপ্ন বা কল্পনার নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। এক ব্যক্তিমানুষের বেঁচে থাকার রাজনৈতিক ভাষ্য যেন এ-ছবি।
অজিতা তেলুগু, হায়দরাবাদের মেয়ে। ছবি নিয়ে কলকাতায় সিনে সেন্ট্রালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন গত নভেম্বরে। লীনার মতো তিনি মূলত তথ্যচিত্রকার, এটিই তাঁর প্রথম ফিচার-ছবি। ইতিমধ্যেই ছবিটি দেখানো ও সম্মানিত হয়েছে নানা চলচ্চিত্র উৎসবে, এ-দেশ ও দেশের বাইরে, ঠাঁই পেয়েছিল অস্কার-এর প্রতিযোগিতাতেও। মুম্বইবাসী অজিতা সযত্নে বলিউড এড়িয়ে চলেন, নিজের গায়ে ‘উওম্যান ডিরেকটর’ লেবেল আঁটতে নারাজ, কথোপকথনে জানালেন, ‘হ্যাঁ, সামাজিক পরিচয়ে আমি এক জন (মেয়ে), কিন্তু সেটা আমার প্রাথমিক পরিচয় নয়। আমি এক জন ব্যক্তি, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়।’
কিন্তু চলচ্চিত্রোৎসব বাদ দিলে লীনা বা অজিতার ছবি কতটুকুই-বা সাধারণ্যে প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ পায়? তেমন কোনও ‘স্পেস’ তো রাখেনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কারণটা শুধুই ব্যবসায়িক কিংবা আর্থনীতিক, না কি রাষ্ট্রীয় শাসন বজায় রাখার কোনও প্রচ্ছন্ন কৌশল? লীনা বা অজিতার মতো পরিচালকের স্বাধীন চোখে দেখা ও ক্যামেরায় তোলা এই দেশ ও দেশের মানুষ যে ভাবে চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়, যে ভাবে আমাদের বোধ-অনুভবে সঞ্চারিত হয়, তা মোটেও পছন্দ নয় আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের। শাসক কিংবা বিরোধী যে পক্ষেই থাকুন-না-কেন তাঁরা, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রভুত্বেরই প্রতিনিধি তাঁরা। নিয়মমাফিক সংসদীয় নির্বাচনের পরেও বোধহয় তার কোনও ব্যত্যয় ঘটবে না।

Monday, March 10, 2014

গণমাধ্যমের ব্যর্থতা এবং উচ্চ আদালতের প্রতি ঔদ্ধত্য- সুমি খান

দৈনিক প্রথম আলো এবং  মিজানুর রহমান খান 'আদালত বিচারব্যবস্থা' নিয়ে মিথ্যাচারপূর্ণ অপব্যাখ্যা পূর্ণ লেখা নিয়মিত লিখেন। একটি ধরা খেলো ! আদালতের বিচারে অপসাংবাদিকতা -তার বিরোধিতা করতে গিয়ে সাংবাদিক সংগঠন এবং সম্পাদকেরা  পুরো কমিউনিটিকে যুক্ত করছেন কেন? চরম দুর্নীতিগ্রস্থ অসাংবাদিক  সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে  ১৫  সম্পাদক জোট বেধেছিলেন।এখন আবার তারা জোট বেধেছেন আদালতের বিরুদ্ধে। প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়টির বাস্তব ভিত্তি কতো টা আছে? সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার মানদন্ড কী?  সাংবাদিকতা পেশা নয়-বাণিজ্য -এটাই প্রমাণ করছেন তো বারবার??

রোকন উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের সম্পর্কে আদালতে যে  বক্তব্য দিয়েছেন সেটি আদালতেই চ্যালেঞ্জ করা হলো না কেন?  রোকনউদ্দিন মাহমুদের অভিযোগ কি  অনেক ক্ষেত্রে সত্য নয়? মাননীয়  সম্পাদকগন, সাংবাদিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে বা আলাদাভাবে আদালতের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন না কেন? ব্যারিষ্টার রোকন যখন তার বক্তব্য দেন তখনতো মিজানুর রহমানের  আইনজীবীও সেখানে ছিলেন, তিনি কি কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন ?? না করলে কেন করেননি?

 আমরা সাধারণ সংবাদকর্মীরা এর চরম বিরোধিতা করি! কিন্তু আমরা বিচ্ছিন্ন - তাই সংঘবদ্ধ অপশক্তি অনেক শক্তিশালী! এরা  অনৈতিক উপায়ে সারা বিশ্বের কাছে এবং সাধারণ পাঠকদের কাছে বেআইনি ভাবে রাষ্ট্র কে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করেন-তবু তথ্য মন্ত্রনালয় এবং সংশ্লিষ্ট দের কাছে ডরম সম্মানিত। আর অন্যায়ের বিরোধিতা কারীরা বরাবর ই সবখানে অবহেলিত! এ কারণেই আমাদের গণমাধ্যম কখনো জনকল্যাণকর বা পেশাদারীত্ব প্রতিষ্ঠায় বারবার ব্যর্থ এবং উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

এভাবে মতিউর রহমান- মিজানুর রহমান সহ চরম মিথ্যাচারের বেসাতি যারা করে এমন  অপসাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা সমাজ কখনো দায়িত্ব নিয়ে কঠোর হয় না। কারণ এরাই সমাজের নিয়ন্ত্রক!!
তবু আমরা মুষ্টিমেয় যারা দেশের প্রশ্নে মানবতার প্রশ্নে নীতির প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে আছি- যতোই নিঃসঙ্গ একাকী হোক্ না কেন -এ লড়াই আমাদের চলবে!  অন্যায় আর অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে  আমরা জোর প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো।  বরাবরের মতোই আদালতের প্রতি আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই! সত্যের জয় হোক্!

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক - সুমি খান

Robi

8 March 2014 18:30:00 PM Saturday BdST
0
 

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। 'ইনস্পায়ারিং চেঞ্জ' বা 'পরিবর্তনকে উত্সাহিত করো’ -এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। বাংলাদেশ সরকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অগ্রযাত্রার মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে 'রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, নারীর সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করি' প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করছে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতি এবং ধর্মকে আলাদা করতেই হবে।সমাজপ্রগতির সংগ্রামে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এর সফলতা সম্ভব নয়। 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চের ৮ তারিখে পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা সমাজ প্রগতির ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এবং  প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন।এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াকু এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সমাজপ্রগতির এই ইতিহাস অনেকের জানা। তবু এ সমাজের নীতিনির্ধারক এবং মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলেরা অনেকে এ বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই যেন ভুলে থাকেন। তাই মগজে শান দিয়ে  মরচে সরানো এবং চিরপ্রণম্য ক্লারা জেটকিন ও তার সতীর্থ সহযোদ্ধাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর  মানসে ইতিহাসের দ্বারস্থ হলাম।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের নারী সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের  পক্ষে আয়োজিত নারী সমাবেশে  জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির  অন্যতম স্থপতি সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ক্লারা  জেটকিন নারীর শ্রমঅধিকারের আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চকে মানবসমাজের বিজয়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যে প্রতি বছর ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।  সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগলো। বাংলাদেশেও  স্বাধীনতার লাভের আগেই  ১৯৭১  সাল থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। 
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান,বেলারুশ,বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,  ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান,  লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া,মন্টিনেগ্রো, রাশিয়া,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,  উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান,  ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়াতে। এছাড়া, চীন,মেসিদোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরা সরকারী ছুটির দিন ভোগ করেন। 

দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে  ১৮৫৭ সালে  নিউইয়র্কে কতো নারী আটক হন, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে কারাগারে ও নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় হলো দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। 

এরও বহু আগে ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে ৬০ বছর আগের পটভূমির বিজয় অর্জিত হয়। তবে যে দাবিতে এই আন্দোলন সমতাভিত্তিক  এবং বৈষম্যহীন কাজের পরিবেশ এখনো আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তাই সেই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এখনো।

 সমাজ প্রগতির সংগ্রামে  ৮ মার্চ রক্তাক্ত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিন। এমন দিনে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণ করা আমাদের প্রতিটি নারী-পুরুষের ই দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। 

যারা ৮ মার্চ কে  নারীকে ‘সুবিধা দেয়ার জন্যে’  বা ‘নারীকে করুণা’ করে ‘বিশেষ কোন দিবস'’ পালন করা হচ্ছে মনে করেন- এখনই তাদের ভুল ভাঙ্গা প্রয়োজন। সে নারী বা পুরুষ যেই হোন-তাদের বিনীত অনুরোধ করি, নারীদিবসের ইতিহাস পড়ুন। অনুধাবন করুন বাস্তব ইতিহাস। যে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী দিবস প্রবর্তন, তার প্রতি  অশ্রদ্ধা পুষে রেখে নারীর প্রতি কোনো বিরূপ চিন্তা সমাজের জন্যে ক্ষতিকর। 

এ কথা গুলোর অবতারণা করছি যৌক্তিক কারণে। নারী  দিবস নিয়ে  সাক্ষাৎকার এবং আলোচনায়  অনেকেই এই দিবস পালনের চরম বিরোধিতা করেন বিভিন্ন সময়ে। এমন কি দেশের সাংবাদিকতায় সুপ্রতিষ্ঠিত অনেক নারীও বলেন, নারীদের জন্যে তারা আলাদা কোন দিবস চান না। এই নারীদের প্রতি বলতে হয় প্রথমতঃ অনেক নারীর  প্রতি নিপীড়ন , রক্তপাত,  তাদের ক্লান্তিহীন  শ্রম,মেধা আর রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের ফসল  সফল নারীদের আজকের এই রমরমা অবস্থা!

‘শুধু নারীর জন্য কোনো একটি দিন’ (?) পালন করে পুরুষের অধিকার খর্ব  (?) করা হচ্ছে মনে করলে ইতিহাস বিকৃতি হবে। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের জাতিসংঘের স্বীকৃতি পর্যন্ত যাদের আত্মদানের ফসল এই মহান নারী দিবস- এই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা বা অজ্ঞতা প্রায় দু’শো বছর আগের এই দিনে  অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে প্রাণ দিতে প্রস্তুত  অকুতোভয় বীর নারী এবং যোদ্ধাদের মহান আত্মদানের প্রতি চরম অবমাননা করা হবে !! 

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই দিনে  চেনা অচেনা প্রতিটি নারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুরুষেরা।  নারীরা সরকারী ছুটি উপভোগ করে প্রিয়জন এবং সন্তানদের সময় দেন। বিজয়ের আনন্দে নারী –পুরুষ একসাথে উদ্ভাসিত হন। আমাদের সমাজে তার কোনো ছায়া নেই। বর্তমান বাম নেতা-কর্মীদেরও সেই চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হতে দেখি না। এ-এক ক্রান্তিকাল যাচ্ছে আমাদের। ইতিহাসের দিকে পিঠ ফিরে থাকা প্রজন্ম যেন কোনো এক কালো দিনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে; দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আলোর নিশানা।

সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন দেখি  কোনো দল বা মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে ফেসবুকে চরম অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয় নারীদের। মতের বিরোধিতা থাকতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে , তাই বলে কোনো নারীর প্রতি অশালীন বা বিরূপ মন্তব্য করা যে কারোর চরম মানসিক বিকারের পরিচয়-- এই সাধারণ সত্যটা এ সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে আর কতো সময় লাগবে?

বর্তমান সরকার নারীর জাগরণে এবং উন্নয়নে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  তবে অনেক পিছিয়ে থাকা মানসিকতা থেকে নিজেদের বের করে আনতে গোড়া থেকে  কাজ করতে হবে। 

 নারীর বিজয় মানবতার বিজয়। এই ইতিহাসের সঠিক প্রচার এবং প্রকাশ  নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠায় জরুরি। রাজধানী  থেকে প্রত্যন্ত জনপদ পর্যন্ত  পথে প্রান্তরে   নারী জাগরণের এবং সমাজ প্রগতির প্রতিটি ইতিহাস পর্যালোচনা এবং প্রচার একটু একটু করে বদলে দেবে নারীর প্রতি সমাজের রক্ষণশীলতাকে।

 পরিশেষে উদাত্ত আহ্বান জানাই , নারী দিবস নিয়ে যারা এখনো ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন –তারা অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করুন শ্রমজীবী নারীদের আত্মদানের এই দিনটিকে। আপনার পাশের নারীটি আপনার বন্ধু , সহযোদ্ধা । আপনার সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং সম্মান  তার প্রাপ্য; করুণা বা অশ্রদ্ধা নয়।  তবেই নারী তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবে।তেমনি নারীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেরণা আর শক্তিতে পুরুষ এগিয়ে নেবে সমাজকে। আলোকের ঝর্নাধারায় ধুয়ে যাক্ যতো কলুষ, যতো ফাঁকি, যতো  গ্লানি !

 নারী-পুরুষ একসাথে  অনন্ত গৌরবে এগিয়ে যাক্ সমাজপ্রগতির পথে!  নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক্!!  Sumikhan29bdj@gmail.com
৮ মার্চ ২০১৪

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
0
 
Bookmark and Share
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F/273184-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95.html#sthash.f1Hu1fLz.dpuf

Sunday, March 9, 2014

খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন রঙ্গ-ড. জিনিয়া জাহিদ,


কনট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
বেশ কয়েক বছর ধরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের নামে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে যাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন না। কোনো প্রশ্ন করলেই তিনি বলেন, "সব প্রশ্নের জবাবইতো এই বক্তব্যে এসে গেছে। আবার কি।"

এ যেন আইএলটিএস পরীক্ষার দুর্বোধ্য কোনো রিডিং প্যারাগ্রাফ থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেয়া।
 
কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অম্লান বদনে তিনি বলে যান, "আরেক দিন, আজ নয়।"
 
এরপরও যদি নাছোরবান্দা ত্যাদড় কেউ কোনো প্রশ্ন করেই যান, তিনি মৃদু হেসে বলেন, "কিছু শুনতে পারছি না।"

জাতির সামনে যদি তিনি বক্তব্যই দেবেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তরই দেবেন না, তবে তাকে সংবাদ সম্মেলন নাম দেয়ার হেতু কি? 
 
পাঁচ তারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন না ডেকে তিনি তো যেকোনো টিভি চ্যানেলের সাথে যোগাযোগ করে ক্যামেরার সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করলেই পারেন। খামাখা সাংবাদিকদের তাহলে আর বসে থেকে সময় নষ্ট করতে হয় না। 
 
সম্ভবত ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে কোনো এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের হাতেগোনা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ আট বছরে বলতে গেলে কোনো সংবাদ সম্মেলনেই কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। 

এত এত মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে, সামনে বসা সাংবাদিকদের যেন সাক্ষী রেখে তিনি তার লিখিত বক্তব্য দিয়ে যান।

সেই বক্তব্য দেবার আগেও তিনি ভালো করে একবার পড়েও দেখেন না। উপদেষ্টাকূল যা লিখে দেন, সেটাই তিনি কোনো রকম যাচাই না করেই হোঁচট খেতে খেতে পড়ে যান। জাতীর উদ্দেশ্যে দেয়া তার বক্তব্যগুলোতে তাই থাকে অসত্য তথ্যের সমাহার। 

এই তো সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনটিতে তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা, গুমের সব ভুয়া তথ্যে ভরপুর একটি বক্তব্য উপস্থাপন করলেন।

তার বক্তব্য ভুল তথ্যে ভরা তা ইতোমধ্যে ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এমন তথ্য বিভ্রাট জাতির  সামনে এভাবে ঘটা করে পরিবেশন করার হেতু কি?

যদিও তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালবাসেন না, তবুও অনেক চাপাচাপির পর দু-চারটা প্রশ্নের উত্তর কখনো সখনো দেন। এর আগে নির্বাচন পরবর্তী একটি সংবাদ সম্মেলনের নামে বক্তব্য পরিবেশন অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশ নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামানো নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, "আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। চাইনা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক।"
 
অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর যুক্তরাজ্য, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশ্ব মাতবরের প্রতিনিধি ড্যান মজিনাসহ সব রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা ঝাঁকে ঝাঁকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করছেন। 
 
কবিতার ভাষায় বলতে হয়, কি কথা তাহাদের সাথে?
 
কি কথা তারা বলছেন, বিস্তারিত না জানলেও অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না যে, নির্বাচন নিয়েই কিছু শলা পরামর্শ হয় তো চলছে। 
 
প্রশ্ন হলো যেখানে খালেদা জিয়া নিজেই জাতির সামনে স্পষ্ট কণ্ঠে বলছেন, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো মোটেই সমর্থন করেন না, সেখানে কি কথা ড্যান মজিনার সাথে?
 
ড্যান মজিনারা কি পারবেন খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসাতে? কেন শুধু শুধু ঘরের ব্যাপার পরকে এনে সালিশ মানা? দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে সুবিধাবাজ ও মতলববাজ মিস্টার মজিনা আর এইসব বিদেশি কূটনীতিকদের এত দৌড়াদৌড়ি ও ছুটাছুটিরই বা অর্থ কি? এত কিসের আগ্রহ? 

এইসব কূটনীতিকরা বা কেন খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাইছেন?
 
বিএনপিকে কিভাবে নতুন করে রাজনৈতিকাঙ্গণে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবেন, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিএনপি নেবে। তবে আমাদের প্রত্যশা হলো, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যগুলো হোক সঠিক ও গঠনমূলক। সংবাদ সম্মেলনের নামে মিথ্যের বেসাতি কোনভাবেই কাম্য নয়। 

জনগণের সামনে দায়সারা ভাবে কোনো কিছু বলে দিয়েই যে পার পাওয়া যাবে না, এই সত্য খালেদা জিয়া যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন তা তার দলের ও দেশের জন্য তত দ্রুতই মঙ্গলজনক হবে।
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AE%E0%A6%A4/273278-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%B0%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97.html#sthash.UvW2KaG5.dpuf