Thursday, March 13, 2014

স্বাধীনতার ৪৩ বছর:বিশ্বমানচিত্রে সফল বাংলাদেশ এবং আমাদের দায়বদ্ধতা-সুমি খান

এবারের স্বাধীনতা দিবস হবে অন্যরকম! জাতীয় সঙ্গীত গাইবে জাতীয় সংসদের প্রতিটি সদস্য!  দেশের প্রতিটি মানুষের কন্ঠে বেজে উঠবে আমাদের প্রাণের সঙ্গীত , আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!
দেশের যারা এই দেশ এই পতাকা আর এই ভাষা , কৃষ্টি -সংস্কৃতি  সবকিছুর বিরোধী- একাত্তরে যারা পাকিস্তানী অত্যাচারী ঘাতকদের সহোযোগী ঘাতকের ভূমিকা পালন করেছেন- তাদের বুক কাঁপিয়ে দেবো আমরা এবারের স্বাধীনতা দিবসে!  
  যারা  ধর্মান্ধ অপশক্তির হাতের পুতুল হয়ে নিজের স্বকীয়তা এবং আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়েছেন, তারাও  প্রাণ খুলে জাতীয় সংগীত গাইবেন !
 আমাদের জাতীয় সংগীত , মাতৃভাষা এবং  বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের আত্মপরিচয়। যে আত্মপরিচয় বিলুপ্ত করে দিতে চেয়েছে অন্ধকারের অপশক্তি ।  একটু পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাবো এই অন্ধকারের অপশক্তির শেকড় অনেক গভীরে । এই শেকড় উপড়ে ফেলতে হলে আমাদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
 ১৯২০ সালের আফগানিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের ধর্মান্ধ মানসিকতার  বেশ মিল রয়েছে।  সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' পড়লে  একশ বছর আগের সেই চিত্র খুঁজে পাই- আর উদ্বিগ্ন হই বন্দুক আর মরুময় জীবনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে!
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে , নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল সমাজকাঠামো ঠেকাতে ধর্মান্ধ নপুংসকের দল তাদের পুরনো গোয়েবলসীয় পন্থায়  মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠার   অপচেষ্টায় কাফির'; নাস্তিক’  গালাগাল দিয়ে ইসলামী জলসা আর জুমার নামাজের খুৎবা  সেই যে আল কিন্দী, আল রাজী, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদের দিয়ে শুরু হয়েছিল তখন থেকেই মোল্লারা সব দেশেই, সব যুগেই এই খেলা খেলেছে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, নিজেকে প্রগতিশীল দাবী করা আধুনিক বাংলাদেশী সুশীলরাও এই এক ট্রিকেই কাত। কাবুলিদের মত মজা দেখতে ব্যস্ত। দেশটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সম্পর্কে কোন মাথা ব্যথাই নাই।

দেশে বিদেশে থেকে কিছুটা অংশ এখানে তুলে দিলাম। ঘটনার প্রেক্ষাপট ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আফগানিস্থাকে স্বাধীনতা এনে দেয়া আমানুল্লা খানকে কাফির ঘোষনা করে আফগান মোল্লারা বিভিন্ন উপজাতীদের দিয়ে বিদ্রোহ করিয়েছে। এদের নেতৃত্বে ছিল 'বাচ্চা সকাও' নামে আক্ষরিক অর্থেই এক ডাকাত সর্দার।

কোট শুরু "কিন্তু এস্থলে দেখা গেল, বিদ্রোহের নীল-ছাপটা তৈরী করেছেন মোল্লারা এবং তাঁরা একথাটা সব উপজাতিকে বেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, যদি কোনো উপজাতি 'কাফির' আমানউল্লার বিরুদ্ধে বিদ্রহ ঘোষনা করে, তবে তারা তখন দীন ইসলামের রক্ষাকর্তা। রাইফেল কিম্বা টাকার লোভে অথবা ঐতিহ্যগত সনাতন শত্রুতার স্মরণে তখন যারা আমানঊল্লার পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়বে তারাও তখন আমানঊল্লার মতই কাফির। শুধু যে তারাই তখন দোযখে যাবে তা নয়, তাদের পূর্বতন অধস্তন চতুর্দশ পুরুষ যেন স্বর্গদ্বার দর্শন করবার আশা মনে পোষন না করে।  এ বড় ভয়ঙ্কর অভিসম্পাত। ইহলোকে বক্ষলগ্ন থাকবে রাইফেল, পরলোকে হুরী, এই পুরুষ-প্রকৃতির উপর আফগান-দর্শন সংস্থাপিত। কোনোটাতেই চোট লাগলে চলবে না। কিন্তু প্রশ্ন আমানউল্লা কি সত্যই কাফির?  এবার মোল্লারা যে মোক্ষম যুক্তি দেখাল তার বিরুদ্ধে কোনো শিনওয়ারী কোনো খিগওয়ানী একটি কথাও বলতে পারল না। মোল্লারা বলল, 'নিজের চোখে দেখিসনি আমানউল্লাহ গণ্ডা পাঁচেক কাবুলী মেয়ে মুস্তফা কামালকে ভেট পাঠিয়েছে; তারা যে একরাত জলালাবাদে কাটিয়ে গেল, তখন দেখিসনি, তারা বেপর্দা বেহায়ার মতন বাজারের মাঝখানে গটগট করে মোটর থেকে উঠল নামল?'  কথা সত্যি যে, বিস্তর শিনওয়ারী খুগিয়ানী সেদিনকার হাটবারে জলালাবাদে এসেছিল ও সেখানে বেপর্দা কাবুলি মেয়েদের দেখেছিল। আরো সত্যি যে, গাজী মুস্তফা কামাল পাশা আফগান মোল্লাদের কাছ থেকে কখনো গুড কন্ডাক্টের প্রাইজ পাননি। তবু নাকি এক মূর্খ বলেছিল যে, মেয়েরা তুর্কী যাচ্ছে ডাক্তারী শিখতে। শুনে নাকি শিনওয়ারীরা অট্টহাস্য করেছিল - 'মেয়ে ডাক্তার! কে কবে শুনেছে মেয়েছেলে ডাক্তার হয়! তার চেয়ে বললেই হয়, মেয়েগুলো তুর্কীতে যাচ্ছে গোঁপ গজাবার জন্য!'কে তখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে যে, শিনওয়ারী মেয়েরাই বিনা পর্দায় ক্ষেতে-খামারে কাজ করে, কে বোঝাবে যে, বুড়ীদাদীমা যখন হ্লুদ-পট্টী বাঁধতে কপালে জোঁক লাগাতে পুরুষের চেয়েও পাকাপোক্ত তখন কাবুলী মেয়েরাই বা ডাক্তার হতে পারবে না কেন? কিন্তু এসব বাজে তর্ক, নিষ্ফল আলোচনা' আসল একটা কারণের উল্লেখ কেউ কেউ করেছিলেন। কিন্তু সেটা সত্য, অনুসন্ধান করেও জানতে পারিনি। আমানউল্লা নাকি রাজকোষের অর্থ বাড়াবার জন্য প্রতি আফগানের উপর পাঁচ মুদ্রা ট্যাক্স বসিয়েছিলেন।  'কাবুল বাসিন্দাদের যে রাইফেল দেওয়া হল তারা লড়তে যায়নি?'  আব্দুর রহমান যা বললো তার হুবহু তর্জমা বাঙলা প্রবাদে আছে। শুধু এ স্থলে উলুখড়ের দুখানা পা আছে বলে দু'রাজার মাঝখানে যেতে সে রাজী হচ্ছে না। আমি বললুম, 'তাজ্জবের কথা বলছ আবদুর রহমান, বাচ্চায়ে সকাও ডাকাত, সে আবার রাজা হল কি করে?' আবদুর রহমান যা বলল তার অর্থ, বাচ্চা শক্কুরবার দিন মোল্লাদের হাত থেকে তাজ পেয়েছে, খুতবায় (আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে) তার নাম বাদশা হিসাবে পড়া হয়েছে, আমানউল্লা কাফির সে ফতোয়া প্রচারিত হয়েছে ও বাচ্চায়ে সকাও বাদশাহ হবীবুল্লা খান নাম ধারন করে কাবুল শহর থেকে 'কাফির' আমানউল্লাকে বিতাড়িত করবার জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছেন।
এই চিত্র আমাদের বর্তমান চিত্র। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই পরিস্থিতি কোনভাবেই বেশিদূর যেতে দেয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের  মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা কর্মী চোখে ঠুলি দিয়ে রেখেছে। তাদের মেধার চর্চা না থাকার কারণে তারা হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে এই জঙ্গীদের প্রকাশ্য সমর্থন দিতে পারে। যার কারণে  হেফাজত ১৩ দফা ঘোষণার সুযোগ পেয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা সিদ্ধান্ত নিতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের । বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ অনুধাবন করে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবার দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রলীগের প্রচুর  নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ও অনেক। সন্ত্রাসী টেন্ডারবাজদের দমন করতে ব্যর্থ হলে তার দায়দল এবং দলের নেতা কর্মীদের ই নিতে হবে। যেহেতু রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, তাই তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা অনেক বেশী বৈকি। পাশাপাশি আন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর দায় ও কম নয়। দেশে দীর্ঘদিন  মেধাবী এবং গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চার অভাব দেখা যাচ্ছে। বাম সংগঠন গুলো একেবারেই জনবিচ্ছিন্ন।  এসব দলের মূল নেতা- সংগঠকেরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিলে কতো ভোট পাবেন , তারা নিজেরাও জানেন না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, সর্বহারার রাজনীতির কথা বললেও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক এই নেতা সংগঠকেরা  জনগণের অধিকারের জায়গা থেকে গঠনমূলক কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচী নেন না। অনেক সম্মানিত বলেই যেন এই ব্যক্তিরা আত্মসমালোচনা করেন না কখনোই । কেবল সমালোচনা করাই  যেন এদের রাজনীতির মূল অস্ত্র। আর আমাদের কিছু মানুষ টেলিভিশনের টক শো দেখেই তাদের বাস্তব জ্ঞান বুদ্ধি লুপ্ত করে দেন! তবে বাস্তবতা কখনো কাউকে ছেড়ে দেয় না। ধোপদুরস্ত পাজামা পাঞ্জাবী পরে মার্কস-এঙ্গেলস লেনিন কপচে মনগড়া কথা বললই কি আর তা জনগণ গ্রহণ করে? সেই যুগ অনেক আগেই বাসি হয়েছে। ত্রিপুরার বামসরকারের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র মূখ্যমন্ত্রী । সিপি্্রম এর বাম সরকার সর্বহারার রাজনীতি করে  তিন বার  রাজ্যক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।  আমাদেরই মতো বাংলা এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতি তাদের । তবু সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। এবং তারা মনে করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ এতোটা উন্নয়ন এবং অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এই উপমহাদেশে জঙ্গীবাদ দমনে বড়ো রকমের সফলতা এসেছে।  এই বস্তবতার বিপরীত বক্তব্য দেন যারা, এ দেশের বামদল এবং এসব দলের নেতা কর্মীরা কি তাহলে সঠিক অবস্থান থেকে অনেক দূরে নয় কি?  তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার বিনীত অনুরোধ, চোখ মেলে বাস্তবতা অনুধাবন করুন মাননীয় বাম নেতারা।

বিশ্ব মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ কোনোমতেই যেন দমাতে পারছে না বাংলাদেশকে। বিশ্বের কোনো দেশ এখন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িবলে অপবাদ দেওয়ার সাহস করবে না। জনশক্তি রপ্তানি বাড়তে থাকায় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি- এমনকি রেমিট্যান্সের মাসভিত্তিক রেকর্ড, রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ইতিহাসে রেকর্ড এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে ।
রপ্তানিতেও আইকনে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম। এক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে কলকারখানা বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ বেকারদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বেড়েছে গড় আয়ু, কমেছে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার। শিক্ষা ৰেত্রে সাফল্যও বিরাট, এক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো।
বিশ্বের বাঘা বাঘা  পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে এসেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র ইতিবাচক । এছাড়া দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, চীন-ভারতের পথে বাংলাদেশ। সরকার মনে করছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহৎ ২০টি অর্থনীতি দেশের মধ্যে চলে আসবে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও বেড়েই চলেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ। ৪ বছরের ব্যবধানে এফডিআইয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৬৬ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর (২০১১ সালে) যার পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলারে। যার প্রবৃদ্ধি এর আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ৰেত্রে দৰিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তানের পরেই স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যমতে, ক্রমেই স্থানীয় বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৪টি প্রকল্পে যেখানে স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছিল ২ হাজার ৭৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৪৬টি প্রকল্পে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
রেমিট্যান্সে মাসভিত্তিক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে ২০১২ থেকে এ পর্যন্ত  । প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও গত ৪০ বছরে রেকর্ড হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালের  জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১২ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা অতীতের যেকোনো সময়ের একক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ৬ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩২৩ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  চার দশকে কখনো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ১২ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেনি। এবার আসি গড় আয়ু প্রসঙ্গে। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ১০ বছর বেড়েছে। এখন গড় আয়ু ৫৯ থেকে ৬৯ এ দাঁড়িয়েছে। যা ভারতীয়দের চেয়ে ৪ বছর বেশি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক দূর এগিয়েছে দেশ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে নেমে এসেছে ৩৭ জনে। অথচ ১৯৯০ সালেও এ হার ছিল ৯৭ জন। একই সময়ে মাতৃত্বকালীন উচ্চমৃত্যুহারও কমেছে অনেক। এ সময়ের মধ্যে প্রতি লাখে নারীর মৃত্যু হার  ১৯৪ জন। স্বাস্থ্য খাতের এই বিস্ময়কর উন্নতিকে নব্বই শতকের শেষদিকে জাপানের মেইজি বিপ্লবের সাথে  তুলনা করেছেন অনেকে। ২০০৫ সালে ৯০ শতাংশের বেশি মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিতে ভর্তি হয়, যা ছেলেদের চেয়েও বেশি। অথচ ২০০০ সালেও এ সংখ্যা ছিল  এর অর্ধেক।রপ্তানি ক্ষেত্রে ও বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে বেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১২ সালেরমাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকাশিত  তথ্যমতে, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে যেখানে ৯ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার পণ্যদ্রব্য রপ্তানি হয়েছিল। সেখানে ২০১১-১২অর্থবছরে এ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। রপ্তানির  ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়েছে গার্মেন্ট শিল্প। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে এ খাতে ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার রপ্তানি হলেও ২০১১-১২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০১০-১১) এ খাতে ৯৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছিল।
 কৃষিক্ষেত্রে নানামুখী  উন্নয়ন মূলক পদক্ষেপের কারণে বাম্পার ফলন হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে দেশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে দেশে আউশ, আমন ও বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার টন। ১৭ বছরের ব্যবধানে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ধানের উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪২ হাজার টন। উৎপাদন বাড়তে থাকায় চালের আমদানির পরিমাণও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা এবং  ১৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার চাল আমদানি হয়েছিল। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার চাল। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের বাম্পার ফলন হলেও তারা খরচ তুলতে পারেনি। আনুষঙ্গিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ কারণে ধানের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন একাধিক কৃষক।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে এগুচ্ছে বলে কিছু  আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংস্থা ও পত্রিকা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর , ২০১২ আন্তর্জাতিক স্বায়ত্তশাসিত রেটিং এজেন্সি মুডিস্ এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিএ৩পর্যায়ের। যাকে স্থিতিশীল বলা হয়। সেই সময়ে প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, চীন-ভারতের পথে বাংলাদেশ।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আলাদা হওয়ার সময় দুই দেশেরই জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৬ কোটির মতো। এখন পাকিস্তানের জনসংখ্যা ১৮ কোটি, কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে দেশটি এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তেমন খনিজসম্পদ নেই, নেই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যও।
এছাড়া ১৯৭৫, ১৯৮২ ও ২০০৭ সালে তিন তিনবার সামরিক অভ্যুত্থান আর বিরামহীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরেও দেশটি অর্থনীতিতে ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে। এছাড়া  জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল বলা হয়েছে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
 এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমার এশিয়ার এই চারটি দেশের মাথাপিছু আয় কম হলেও বেশ ক’বছর ধরে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার লক্ষণীয়। প্রতিবেশী  দেশগুলো পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়ে আরো এগিয়ে যেতে পারে ।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর  খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বেশ ইতিবাচক।  এই অগ্রগতির কৃতিত্ব সারা জাতির।
তবু যারা এই বিপুল অর্জন অস্বীকার করেন, তাদের সম্পর্কে একটি প্রবাদ মনে পড়ে,এরা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতেই ভালো বাসেন। 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক দের বিচার, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার , জাতীয় বীর এবং নেতা সহ  দেশের ইতিহাসে যতো কলঙ্কজনক অধ্যায় সব কালিমা মোচনের দায় যেন একক ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ই নিয়েছেন। আর জনগণ হিসেবে আমাদের দায়মুক্তির কোন উদ্যোগ ই নেই! কেবল সমালোচনা আর গালমন্দ করেই দায়িত্ব শেষ! এই জঘন্য সব ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পিত হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেবার মতো সৎসাহস আছে , তা কাজে প্রমাণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
 পরিশেষে বলতে হয়, স্বাধীনতার ৫বছরের মধ্যে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি এবং একাত্তরের ঘাতকদের হাতে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দেয়া হয়েছে। খুনিদের রক্ত মাখা হাতে এদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। যার ধারাবাহিকতা টেনে নিয়েছেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি ক্ষমতায় থেকে ২১ আগষ্টের গ্রেনেড আক্রমনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কে হত্যা করে আবারো এদেশের সূর্য অস্তমিত করার  জঘন্য অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
  তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  দুর্ভাগা  এ জাতির আকাশ থেকে সকল মেঘ সরিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে নেবার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছরের জঞ্জাল কি এতো সহজে সরানো সম্ভব? দলের ভেতরে বাইরে অসংখ্য জঞ্জাল নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী ।  এ কারণে অন্য অনেক সফল রাষ্ট্রনায়কের মতোই কখনো তিনি নন্দিত , কখনো নিন্দিত !  দুর্ভাগ্য আমাদের ,এতো দায়িত্বশীলতা,  এতো সফলতা অর্জনের পর ও  নষ্ট রাজনীতি  ঘাতকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশীদারদের দাপট এখনো  অনেক!!  বাস্তবতা জেনে বা না জেনে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীতা করার  জন্যে বালিতে মুখ গুঁজে “ কিচ্ছু হলোনা এই সাত বছরে...” এমন সর্বনাশা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। গঠনমূলক সমালোচনা দেশের স্বার্থে প্রয়োজন। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে চরম ঋনাত্মক মন্তব্য- নিজেদের স্বাভাবিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। এতে নিজেদের ই ক্ষতি ।  
দেশের  কিছু গণমাধ্যম এবং সুশীল অর্থনীতিবিদেরা  বাস্তবতা অস্বীকার করলেও সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। বাঙ্গালী বীরের জাতি! জয় ছিনিয়ে নিতে জানে! এবারের স্বাধীনতা দিবসে তাই আমাদের  দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা  প্রমাণের সময়।  লাখো কন্ঠে আমরা গেয়ে উঠবো, “ মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন- ওমা আমি নয়নজলে ভাসি,  সোনার বাংলা! আমি তোমায় ভালোবাসি!!” জয় আমাদের সুনিশ্চিত!!
Sumikhan29bdj@gmail.com


No comments:

Post a Comment