Friday, August 2, 2013

নিঃসঙ্গ জামায়াত:সৈয়দ বশির


জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায়ে দলটির সামনে আর তেমন পথ খোলা নেই। বিশেষত এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিলে তাদের আর কিছুই করার থাকছে না।

নির্বাচন কমিশনকে এই রায় বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে দ্রুত রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দরকার জামায়াতের। তা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সামনের কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না তারা।

এই দুঃসময়ে জামায়াত মূলত নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন।

পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য জামায়াত নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নৃশংসতার ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ করলেও আজ তারাও এই ইসলামী দলটির ব্যাপারে নিজেদের হাত গুটিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘জামায়াত নিয়ে যা ঘটছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’।

এর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে যে নৃশংসতা হয়েছে তার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না পাকিস্তানের বর্তমান সরকার। তাই জামায়াতকে তার নিয়তির ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন নওয়াজ শরীফের সরকার। তিনি নিজেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপারে খুব স্বাচ্ছন্দ্য নন, ১৯৯৯ সালে সেনাবাহিনীর হাতেই ক্ষমতাচ্যুৎ হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র থাকতে চাওয়ায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের পক্ষে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চায় না তারা। কারণ এটা পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে খারাপ প্রচারণা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

নওয়াজ শরীফ হয়তো এখনো একাত্তরের ঘৃণ্য বর্বরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবছেন না। কারণ তাতে সেনাবাহিনীর মধ্যে আবারো বৈরী মনোভাব তৈরি হতে পারে, যা তিনি সামাল দিতে সক্ষম নাও হতে পারেন। জামায়াতের পক্ষে কেন দাঁড়াবে! তারা বাংলাদেশে খুব একটা জনপ্রিয় নয় এবং কখনো নিজেদের একার পক্ষে ক্ষমতায় আসারও সম্ভাবনা নেই। তাহলে পাকিস্তানকে অজনপ্রিয় করা কেন, জামায়াতের পক্ষে দাঁড়ালে যা তৈরি হতে পারে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়ার যথেষ্ট বিবেচনা বোধ সম্পন্ন নওয়াজ।

এবার আসা যাক জামায়াতের অভ্যন্তরীণ মিত্রদের বিষয়ে। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রচারণার অংশ হিসেবে বিএনপি ও তার শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে পারেন।

কিন্তু বিএনপির জন্য এমন বড় কোনো কারণ নেই যে, তারা জামায়াতে সমর্থনে এগিয়ে আসবে এবং তার নিবন্ধনের জন্য লড়াই চালাবে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সামরিক শাসন মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর থেকে নির্বাচনে জয় পেতে জামায়াতকে দরকার হয়েছে বিএনপির। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থান বিএনপির জন্যও একটা বড় ধরনের বোঝা, যেহেতু এমন একটি দেশে তারা ক্ষমতার লড়াইয়ে আছে যেখানে ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিবারই ক্ষমতাসীনরা হেরেছে।
jamat-2
নিবন্ধন হারিয়ে জামায়াত যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে তাহলে কী ঘটবে? জামায়াতের ভোটাররা কি আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে! সম্ভবত কখনো তা হবে না। জামায়াতের ভোটারদের সামনে বিএনপিকে ভোট দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।

তাই ‘সরকার বিচার বিভাগকে প্রভাবিত’ করছে- এই সাধারণ সমালোচনার বাইরে জামায়াতের নিবন্ধনের জন্য বিএনপি বড় ধরনের কোনো হট্টগোল সৃষ্টি করবে না বলে ধারণা করা যায়। ব্যক্তিগতভাবে অনেক বিএনপি নেতা, বিশেষত যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা হয়তো জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে খুশি হয়েছেন। বিতির্কিত মিত্রকে ছাড়া বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিজেদের মতো করে লড়তে পারবে।

অন্য সব ইসলামপন্থী দল, যাদের সাধারণত জামায়াতের সহোদর হিসেবে দেখা যায় তাদের বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া যাক। হেফাজতে ইসলামসহ তাদের অনেকে এতে সন্তুষ্ট হতে পারে। কারণ এতে জামায়াত এতোদিন কট্টরপন্থী ইসলামী রাজনীতির যে প্রতিনিধিত্ব করতো তার সেই সীমিত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এই রাজনীতির পরিসর।

জামায়াত দৃশ্যের বাইরে চলে গেলে কট্টরপন্থী রাজনীতির জায়গা অন্যদের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং তাদের এটাকে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হবে। প্রকৃতপক্ষে হেফাজতের মতো কিছু গ্রুপ এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।

সত্যি বলতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার নতুন প্রজন্মের কাছে জামায়াতের আসল চেহার উন্মুক্ত করেছে। গণমাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ার খবর প্রকাশ হওয়ায় তা জাতির ঘৃণ্য ইতিহাসকে এই প্রজন্মের সামনে তুলে এনেছে। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা যে কোনো গর্বিত বাংলাদেশি তার রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে রক্ষা করতে চাইবে। ইতিহাসের বিপরীতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার জন্য দলটি কখনো এদেশের মানুষে হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবে না। এমনকি যারা কট্টরপন্থী ইসলামী রাজনীতির সমর্থক তারাও একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকাকে বাইরে রেখে ওই রাজনীতি করতে চায়। এদের মধ্যে জামায়াতের নতুন প্রজন্মও রয়েছে, যারা এমন একটি দল চান- সম্ভবত নতুন একটি- যাতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ তাদের সঙ্গী হবে না।

এদিকে জামায়াত নিবন্ধন হারালে তাতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হবে ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটানোর, যা কিছুটা থমকে পড়েছে সরকারের পক্ষ থেকে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দেয়ার মধ্য দিয়ে। কারণ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনমনে যে বিতৃষ্ণা তৈরি হয় তা দূর করার গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারে এই চেতনার জাগরণ।

তাই জামায়াত এখন নিজেকে নিঃসঙ্গ ও বন্ধুহীন অবস্থায় দেখছে। এই দলটি কি এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে একটি সন্ত্রাসী দলে পরিণত হবে, দীর্ঘদিন ধরে যে আশঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে। এ প্রশ্নের উত্তর কেবল সময়ই দিতে পারবে।

সৈয়দ বশির : সৈয়দ বশির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কলাম লেখক

সমকাল :: যেভাবে কবিতা এলো :: শামীম আজাদ

সমকাল :: যেভাবে কবিতা এলো ::

Tuesday, July 30, 2013

ঝাঁসির রানী লক্ষ্মী বাঈয়ের দৈনন্দিন জীবন


আরিফ ইকবাল হোসেন

যে ভারতমাতা সদা ভুলের প্রতি দয়া ও মহানুভবতা দেখিয়ে বলেছেন ‘আমি দিব!’, ‘আমি দিব!’ সেখানে লক্ষ্মী বলেছিলেন, ‘আমি দিব না! আমি আমার ঝাঁসি ছেড়ে দিব না! কেউ আমার ঝাঁসি কেড়ে নিতে পারবে না; যার সাহস আছে সে চেষ্টা করতে পারে!’ঝাঁসির দুঃসাহসী রানী এ আহ্বানের মাধ্যমেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। ইংরেজদের বিতাড়িত করে ঝাঁসির রানী শুরু করেছিলেন তার রাজ্য শাসন। এ ইতিহাস আমাদের সবারই মোটামুটি জানা। কিন্তু লক্ষ্মীর দৈনন্দিন জীবনের কতটুকুই বা আমরা জানি। চলুন তাহলে জানা যাক।

জানা যায়, লক্ষ্মী বাঈ সকাল পাঁচটার সময় উঠে সুগন্ধি আতর দিয়ে স্নান করতেন। সাধারণত ধবধবে সাদা চান্দেরী শাড়ি পরে তার নিয়মিত প্রার্থনায় বসতেন। স্বামীর মৃত্যুর পরও মাথায় চুল রাখার অপরাধে জল ঢেলে প্রায়শ্চিত্ত করতেন; তুলসী পূজা করতেন তুলসীবেদিতে। তারপর দরবারের গায়করা যেখানে গান করতেন, সেখানে করতেন পার্থিব পূজা। পুরাণিরা পুরাণ পাঠ করা শুরু করতেন। তারপর সিরদাররা ও আশ্রিতরা এলে তিনি তাদের অভিবাদন জানাতেন।

সকালে যে সাড়ে সাতশ মানুষ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতেন তাদের মধ্যে একজনও উপস্থিত না থাকলে তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তির ফলে পরের দিন তিনি তার না আসার কারণ জানতে ভুলতেন না। ভগবানের পূজা করার পর আহার করতেন। আহারের পর, এক ঘণ্টার বিশ্রাম নিতেন যদি না কোনো জরুরি কাজ থাকতো।

লক্ষ্মী বাঈ সকালের উপহার সামগ্রী তার সামনে আনার জন্য আদেশ করতেন যেগুলো রুপার থালার উপর রেশমি কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকতো। যেগুলো তিনি পছন্দ করতেন তা গ্রহণ করতেন, বাকিগুলো কোঠিওয়ালাকে (উপহারশালার মন্ত্রী)- প্রজাদের মধ্যে বণ্টনের জন্যে দেওয়া হতো। সাধারণত তিনটের সময় পুরুষের পোশাকে তিনি দরবারে যেতেন। গাঢ় নীল রঙের জামা, পায়জামা ও মাথায় একটি সুন্দর পাগড়িসদৃশ টুপি পরতেন। কোমরে জড়িয়ে রাখতেন একটি নকশা করা দোপাট্টা, যার পাশে থাকত মূল্যবান রত্নখচিত তলোয়ার। এই বেশভূষায় তাকে গৌরীর মতো দেখাত।

মাঝে মাঝে তিনি নারীর পোশাকও পরতেন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আর কখনো নথ অথবা সেরকম কোনো অলংকার পরেন নি। তার হাতে থাকতো হীরার বালা, গলায় মুক্তার ছোট মালা এবং কনিষ্ঠ আঙুলে একটি হীরার আংটি। তার চুলগুলো পিছনে বাঁধা থাকতো। সাদা অন্তর্বাসের সাথে তিনি একটি সাদা শাড়ি পরতেন। এভাবেই তিনি কখনও পুরুষবেশে, কখনও নারীবেশে দরবারে উপস্থিত হতেন।

দরবারে সমবেত ব্যক্তিরা কখনই তার সাক্ষাৎ পেত না। কেননা তার বসার কক্ষটি ছিল আলাদা এবং এটি দিয়ে শুধু দরবারের সভাকক্ষেই প্রবেশ করা যেত। স্বর্ণালঙ্কিত দরজাগুলো সুতি ছিট কাপড়ের সোনালি পর্দায় ঢাকা থাকতো। সেই রুমে তিনি নরম বালিশে ঠেস দিয়ে কোমল গদিতে বসতেন। দরজার বাইরে সবসময় দু’জন ভৃত্য রুপার গদা নিয়ে উপস্থিত থাকতো। রুমটির বিপরীতে লক্ষ্মণ রাও দিওয়ানজী গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। তার পাশে বসতেন দরবারের রেজিস্ট্রার।

প্রখর বুদ্ধিমতী বাঈজি তার সামনে আনা যে কোনো বিষয় খুব দ্রুত উপলব্ধি করতে পারতেন এবং তার আদেশগুলো হতো স্বচ্ছ, নির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই আইন প্রণয়ন করতেন। আইন প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন এবং অধিকার ও অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে যোগ্যতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। রানী ভক্তির সঙ্গে মহালক্ষ্মীর পূজো করতেন। প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার দেবীর মন্দিরে যেতেন যা পদ্ম ফুলে ভরা খালের পাড়ে অবস্থিত ছিল।

একদিন বাঈ মন্দির থেকে ফেরার পথে দক্ষিণ ফটক অতিক্রম করার সময় হাজার হাজার ভিক্ষুক তার পথ আটকে হাঙ্গামা বাধায়। তাই তিনি তার মন্ত্রী, লক্ষণ রাও পাণ্ডেকে এর কারণ অনুসন্ধান করতে বলেন। তাকে জানানো হলো যে মানুষগুলো খুবই দরিদ্র এবং অত্যধিক ঠাণ্ডায় কাবু, তাই তারা বাঈজীকে সদয়ভাবে তাদের অবস্থা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে।

বাঈজি এই দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য কষ্ট অনুভব করেন এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে আদেশ জারি করেন যে, চারদিন পর ভিক্ষুকদের একত্র করে তাদের প্রত্যেককে একটি মোটা জামা, একটি টুপি ও একটি সাদা বা কালো কম্বল দেওয়া হবে। তার পরের দিন শহরের সব দর্জিকে টুপি ও জামা তৈরির আদেশ দেওয়া হলো। নির্দিষ্ট দিনে ঘোষণা দেওয়া হলো রাজপ্রাসাদের সামনে সব ভিক্ষুকদের জড়ো হতে। দরিদ্র জনগণকেও এতে শামিল করা হলো। বাঈ সবাইকে কাপড় দিলেন এবং তারা খুশিমনে বিদায় নিলো।

নাথে খানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় যখন আহতদের শহরে আনা হলো তখন বাঈজি তাদের ক্ষতস্থানে পট্টি বাঁধার সময় জোর করে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতি তাদের ব্যাথার উপশম ঘটালো এবং তাদের সুস্থতা কামনায় তার দয়া ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণে তারা নিজেদের ধন্য মনে করলো। রানী তাদের দুর্দশা দেখে পীড়িত হলেন, তাদের অলংকার ও মেডেল দিলেন, অভিনন্দন জানালেন এবং হতাশ হওয়ার পরিবর্তে সহানুভূতি দেখালেন আর মনে অনুভব করলেন, এরা রানীর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবে।

বাঈজীর মহিমা বর্ণনাতীত। বিশেষ বিশেষ দিনে তিনি কখনো পালকি আবার কখনো ঘোড়ার পিঠে চড়ে মহালক্ষ্মীর মন্দির দর্শনে যেতেন। পালকিতে যাওয়ার সময় সোনালি পর্দা এবং সোনালি ফিতা দিয়ে বাঁধা নকশী কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকতো। যখন তিনি পুরুষ পোশাকে ঘোড়ার পিঠে যাত্রা করতেন, তখন তার পেছনে একটি সরু ও সুন্দর বাট্টি ভাসতো যা তাকে চমৎকারভাবে মানাতো।

সামরিক সঙ্গীত পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার জাতীয় পতাকা তার সামনে সামনে বহন করা হতো। দু’শ ইউরোপীয় পতাকা তাকে অনুসরণ করতো এবং একশ ঘোড়াচালক তার সামনে ও পাশে থাকতো। পালকির সঙ্গে আসতোত কারভারিস, মন্ত্রী, সামন্তপ্রভু ও ভাইয়া সাহেব উপসেনের মতো অন্য অফিসার। বাকিরা ঘোড়া নয়তো পায়ে হেঁটে তাকে অনুসরণ করতেন।

মাঝে মাঝে ফৌজদল যাত্রার সহগামী হতো। বাঈজি রাজপ্রাসাদ থেকে যাত্রা শুরুর সময় কেল্লার চৌঘাদা থেকে সুরেলা দেশপ্রেমের সঙ্গীত তৈরি করা হতো। দেশপ্রেমের আগুন সব সময় তার মনে জ্বলজ্বল করতো। আর তিনি যুদ্ধে তার দেশের সম্মান এবং শ্রেষ্ঠতার জন্য গর্ব বোধ করতেন। একটি দেশের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় এমন প্রতিমা মেয়েকে রানী হিসেবে পাওয়া। এমন সৌভাগ্য ইংরেজদের কখনোই হয়নি। পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে লক্ষ্মীর দৈনন্দিন জীবনের এতটুকুই জানা যায়।
লেখক: আরিফ ইকবাল হোসেন, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


Monday, July 29, 2013

কেউ বাধ্য করেনি স্বজাতিরই বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে- জামাতিরা সগর্জনে ছুটল কতল করতে--পাকিস্তানের বুকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নি:সঙ্গ লড়লো আনোয়ার-মখদুম-হাশিম: তোমাদের লক্ষ সালাম- হাসান মাহমুদ


অজানা একাত্তর


একাত্তরের মার্চ-এপ্রিলে পাকিস্তানি সৈন্যদের আকস্মিক আক্রমণে ছিন্নভিন্ন পূর্ব পাকিস্তান, ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যা-গণধর্ষণে রক্তে আর্তনাদে ভেসে যাচ্ছে দেশ। বহু মাইল স্রেফ পায়ে হেঁটে সীমানা পেরোচ্ছে লক্ষ লক্ষ আতংকিত গ্রামবাসী বুড়ো বাবা-মা’কে নিয়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে। গ্রামবাংলার ধুলিধুসরিত পথে হাতে মাথায় ঘটি-বাটি নিয়ে গরু-ছাগলের রশি ধরে হাজার হাজার পথযাত্রীর ভীড়ে রাস্তায় বৃদ্ধার মৃত্যু রাস্তায় জন্মানো বাচ্চা। কে বিশ্বাস করবে সেই দাবানলের মধ্যে একাত্তরের এপ্রিলে রাজশাহীর ওপারে মুর্শিদাবাদ শরণার্থী শিবিরে এক কাপড়ে উপস্থিত এক পাঞ্জাবী তরুণ!চারদিকে তুমুল হৈ হৈ, ছুটে এসেছে ভারতীয় সৈন্যেরা। কি? না, আমার বাড়ী লাহোর কিন্তু আমি শরণার্থী, আমাকে খেতে দাও থাকতে দাও। ভাঙ্গা-বাংলায় কথা বলছে সে।

‘‘তারপরে কেটে গেছে কত শত কাল, তবু যেন মনে হয় সেদিন সকাল’’।
সাঁইত্রিশ বছর আগে ঘটনার ঘনঘটায় উন্মত্ত জীবন আজ গল্প হয়ে গেছে। বয়সের সব ঝড় বোধহয় এভাবেই থেমে যায় একদিন।

কটা বেড়াল-চোখ কাঁচা সোনা রঙ্গের সুঠাম সুদর্শন তরুণ আনোয়ার শাহেদ খান। যেন সিনেমার নায়ক। সাতষট্টি সালে ইÏটারউইং স্কলারশীপ নিয়ে লাহোর থেকে ফিজিক্স-এ অনার্স পড়তে এসেছিল, থাকত ফজলুল হক হলে। আমি তখন বায়োকেমিষ্ট্রিতে - ওই ফজলুল হক হলেই। কি করে যেন বন্ধুত্ব হল নিবিড়, নিবিড় থেকে নিবিড়তর। খেয়াল করতাম আমার কাছে কাছে থেকে অনুসন্ধিৎসু চোখে সে নিরীক্ষণ করছে আমাদের ওপরে পশ্চিমের নিপীড়ন আর শোষণ। আমি তখন ছাত্রলীগের চির-দুর্ভেদ্য দূর্গ ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং হল-সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, উন্মত্ত দিন কাটছে রাস্তায় শ্লোগানে মিছিলে, বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইতিহাস। কাছে থেকে থেকে দেখে দেখে আনোয়ার বুঝতে পারছে কেন আমাদের ছয় দফা, কেন ওদের এত উন্নতি আর আমাদের এত অবনতি। তার শের-শায়েরীর কাব্যিক মন ঠিকই ধরেছে ইসলামের নামে পাকিস্তানী রাজনীতির বিভৎস ঠকবাজী। তারপর সত্তরের নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে এল বিসুভিয়াসের বিস্ফোরণে। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে আমি আওয়ামী লীগের পোলিং এজেÏট, আমার সাথে উপস্থিত থেকে আনোয়ার স্বচক্ষে দেখল জনতার ভৈরব গর্জন। মৃদু হেসে পরিহাস করে বলল - ‘‘আব হাম্‌ আপকো অওর রোক্‌ নেহি সাক্‌তে’’ - আর আমরা আপনাদের ঠেকাতে পারব না।

তারপর সে স্বচক্ষে দেখল পঁচিশে মার্চের তা¨ব, জানল গণহত্যা, গণধর্ষণ। সময়ের জঠরে তখন জন্ম-যন্ত্রণায় নড়ে উঠছে পাকিস্তানের মাটিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিশ্বাস্য ভ্রূণ। পঁচিশে মার্চে বাজপাখীর আক্রমণে মুরগীর বাচ্চার মতন জাতি ছিটকে গেল চতুর্দিকে। সবাই ছুটল গ্রাম-জননীর সুবিশাল আশ্রয়ে, জননীও আগ্রহী হাত বাড়িয়ে কোটি সন্তানকে তুলে নিল তার সøেহ কোলে। কিন্তু আনোয়ার যাবে কোথায়? এখানে তো ওর কেউ নেই, দেশটা ওর চেনাও নেই। কেউ কেউ বলল আর্মির ব্যারাকে যেতে - ওটাই ওর নিরাপদ জায়গা। কিন্তু প্রাণের নিরাপত্তার চেয়েও সৈন্যদের প্রতি ঘৃণা তখন তার অনেক বেশী। আরেক বন্ধুর বাবা তখন রাজশাহীতে চাকরী করেন, সিলেটে বাড়ী। তার সাথে কোনমতে রাজশাহী পৌঁছুল আনোয়ার, তারপরে ঘাতক সৈন্যদলের ধাক্কায় সবাই সীমানা পেরিয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদে শরণার্থী শিবির। মে মাসে সেনাপ্রহরায় রাজশাহী ফেরা, সেনাপ্রহরায় ঢাকা এবং পরের মাসে সটান লাহোরে বাবা-মায়ের কোলে।

তারপর সে আমাদের পক্ষে হাতে তুলে নিল তার যুদ্ধের অস্ত্র, কলম। ইতিহাসে এই একটা অস্ত্র অসাধ্যসাধন করেছে বারবার। অত্যাচারীরা যে অস্ত্রকে সবচেয়ে বেশী ভয় করেছে তা হল এই, - কলম। আমাদের জীবন-মরণ মুক্তিযুদ্ধের অজানা অধ্যায় শুরু হল পাকিস্তানেও। ‘‘পদ্মা সুরখ হ্যায়’’ (রক্তাক্ত পদ্মা) নামে পশ্চিমা প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রের পঁচিশ বছরের ঠকবাজী ও একাত্তরের গণহত্যা-গণধর্ষণের ওপর আনোয়ারের চাক্ষুষ নিবন্ধ ছাপা হচ্ছ্রে প্রতিদিন একসাথে লাহোরের দৈনিক মুসাওয়াত ও করাচীর দৈনিক ডন’-এর গুজরাটি সংস্করণে, ক্রমাগত তিরিশ দিন। হৈ হৈ পড়ে গেল দেশে। জামাতিরা ওকে কতল করার খোলাখুলি ঘোষণা দিয়ে দিল - সগর্জনে ছুটল ওকে কতল করতে। ছুটে এল সামরিক সরকারের পুলিশ আর গোয়েন্দা, নিজদেশে পরবাসী আনোয়ার লুকিয়ে গেল আন্ডারগ্রাউন্ডে।

আমাদের তবু দেশ ছিল গ্রাম ছিল, স্বাধীন বাংলা সরকার ছিল বেতার ছিল, চারদিকে সংগ্রামী জাতি আর মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতি ছিল, আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল, শেষ সম্বল হিসেবে ভারতে আশ্রয় ছিল, ওর কি ছিল চতুর্দিকে অগণিত শত্রু ছাড়া? আকস্মিক আক্রান্ত হয়ে আমাদের তো যুদ্ধ ছাড়া উপায় ছিলনা, কিন্তু ওকে তো কেউ বাধ্য করেনি স্বজাতিরই বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে নামতে! এমনকি আমাদের সাথে ওর তো যোগাযোগও ছিলনা! তবু লড়ল আনোয়ার, পাকিস্তানের বুকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিঃসঙ্গ একা। হিংস্র সরকারের গণহত্যা-গণধর্ষণ তুলে ধরা, বাবা-মা ভাইবোন থেকে দুরে - চাকরী নেই উপার্জন নেই খাবার নেই থাকার জায়গা নেই - একে আমি ‘‘পাকিস্তানের মাটীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’’ বলব না তো কি বলব?

এ হল লাহোর। আর করাচীর মখ্‌দুম?

একাত্তরের প্রথম দিকে জাহিদ মখদুম করাচীর প্রাণবন্ত তুখোড় ছাত্রনেতা। নির্বাচনে আমাদের বিজয়ের বিরুদ্ধে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্র টের পেয়েই সে ছাত্রসমাজকে নিয়ে যুদ্ধে নামল। মিটিং মিছিলের শ্লোগান, দেয়ালে দেয়ালে হাজারো পোষ্টার, সংসদের সামনে বিক্ষোভ, চীৎকারে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে তুলল করাচী। একের পর এক বিদ্রোহী নিবন্ধ লিখতে লাগল সিন্ধী দৈনিক ‘‘ইবারত’’-এ। দেশ-শাসন করার জন্য তোমাদের সৈন্যদলে নেয়া হয়নি, জনগণের পয়সায় হাতে অস্ত্র দেয়া হয় নি। নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তান জিতেছে, লক্ষ্মী ছেলের মতো তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যাও। প্রমাদ গুনল ভুট্টো, প্রমাদ গুনল সরকার। এদিকে শুরু হয়ে গেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আক্রমণ, ধীরে ধীরে কাদায় পড়ছে নাপাক বাহিনী। ওদিকে সমন জারী হল গ্রেপ্তারের, পালাতে গিয়ে ধরা পড়ল মখদুম। তারপর লারকানা, জেকোবাবাদ, শুক্কুর আর হায়দ্রাবাদ কারাগারে তার শরীরের ওপর নেমে এল কেয়ামত। স্বীকার করো তুমি ভারতের গুপ্তচর, টাকাপয়সার লেনদেন আছে। স্বীকার করো তোমার সাথে বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন যোগসুত্র আছে। লোহার রডের প্রহার, ইলেক্ট্রিক শক্‌, অন্ধকার সলিটারি কনফাইনমেÏেট ঘুমহীন, কখনো খাবারহীন পানিহীন বন্দী জাহিদ মখদুম। কতোদিন? মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়মাসের পরেও কিছুদিন। অথচ ‘‘ভুল করেছি’’-র মুচলেকা সই করলেই তাকে ছেড়ে দেয়া হত - তার উঁচু সে মাথা সে কখনো নোয়ায় নি।

একেও আমি ‘‘পাকিস্তানের মাটীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’’ বলব না তো কি বলব?

শুধু ওরাই নয়, খুঁজলে কাশ্মীরের হাশিম আর আশরাফ, করাচীর গোলাম মুহাম্মদ ল’ুন কিংবা মকবুল বাট-এর মতো অনেক নামই পাওয়া যাবে। একাত্তরে আমাদের সমর্থন করে চাকরী হারিয়েছেন উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা শাফা’য়াত হাসনায়েন। স্বাধীনতার পরে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তী পুরুষ ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ - ক্ষমা চেয়ে গেছেন। ওদের লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবি-সুশীল সমাজ অনেকবারই ক্ষমা চেয়েছে আমাদের কাছে। সেদিনও চাইলেন টরÏেটা আন্তর্জাতিক শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে ক্যানাডা লেখক-সংস্থার কর্তাব্যক্তি মুনীর সামী। বললেন, - ‘‘যে দানবের হাত পা’ ভেঙ্গে তোমরা বেরিয়ে গেছ সেই একই দানবের যাঁতাকলে আমরা এখনও পিষ্ট হচ্ছি। জানিনা পাকিস্তানের কপালে কি আছে’’।

‘‘মানুষের মন চায় মানুষেরই মন’’ - কবিগুরু। তাইতো আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে এতো দেয়া নেয়া, তাইতো বম্বের সিনেমায় অভিনয় করেন পাকিস্তানী সালমা আগা, ‘‘শত্রুর দেশে’’ কনসার্ট করেন মেহদি হাসান আর তাঁর সম্পর্কে সে দেশের উচ্চতমা পদ্মশ্রী বলেন - ‘‘উন্‌কা গলে মে ভগওয়ান ঝরতা হ্যায়’’ (‘‘উনার কন্ঠে স্রষ্টা উৎসারিত হন’’ - লতা মুঙ্গেশকর) ।
তাইতো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসন গানে গানে টাকা তোলেন, ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মন্ত্রণাসভা বসে এলিফ্যাÏট রোডের বাটা’র ম্যানেজার অডারল্যা¨ সাহেবের বাসায়। তাইতো বাংলার গায়ক সুমন চট্যার্জী সুদুর নিকারাগুয়া’র স্যান্দিনিস্তা গণযুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নেয় এস-এল-আর হাতে, রবিশংকরের সেতারে ক্যারিবিয়ান পল্লীসংগীত আর পশ্চিমা কর্ড, হলিউডের ছবিতে জাকির হূসেন আর মেঘ রাগিনীর সা-রে-মা-পা-ণি-র্সা আর চীনা ভাষায় গেয়ে ওঠেন বাঙ্গালীনি সাবিনা ইয়াসমিন। আশ্চর্য্য নয় ? এত আগুনের মধ্যেও পুরষ্কারপ্রাপ্ত ইসরাইলী ডিরেক্টর অ্যামস্‌ গিতাই-এর ছবিতে অভিনয় করেন পুরষ্কারপ্রাপ্ত প্যালেষ্টাইনী অভিনেতা ইউসুফ আবু ওয়ার্দা, ইসরাইল-প্যালেষ্টাইনের নাট্যকর্মীরা একসাথে নাটক করেন। তাইতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলিম ‘‘বৌদি’’ আর হিন্দু ‘‘মা’’য়ের সÞমরক্ষায় বুকের রক্ত ঢেলে হিন্দু আর মুসলিম যুবক ইতিহাসে রেখে যায় মহামিলনের আর্ত আহ্বান।

এরই নাম মানবতার শক্তি, সংস্কৃতির শক্তি। তাই তো ইতিহাসের প্রতিটি বার্লিন-প্রাচীর এত ভঙ্গুর, এত ক্ষণস্থায়ী। এপারে এক ফোঁটা রক্তের পাশাপাশি ওপারে এক ফোঁটা অশ্রু গড়ায় এটা ইতিহাসের সত্য - তা সে বার্লিনই হোক, ইংল্যা¨-আয়ার্ল্যা¨ই হোক, বিভক্ত বাংলা-পাঞ্জাব-কাশ্মীরই হোক, ইসরাইল-প্যালেষ্টাইনই হোক বা পাকিস্তান-বাংলাদেশই হোক। পিন্ডির অলিগলির ঠেলাগাড়ীতে ফল-সব্জী নিয়ে যে ঘর্মাক্ত লোকটা হাঁক দিয়ে বিক্রী করে বেড়ায় সে আমাদের শত্রু নয়। কোহাটের পাহাড়ে যে লোকটা পাথর ভাঙ্গে, যে নারীরা বাচ্চার হাত ধরে ঝিলাম-চেনাব-বিয়াস-সিন্ধু থেকে কাঁখে কলসীভরা পানি টানে তারা আমাদের শত্রু নয়। পাকিস্তানের মসজিদে নামাজে ব্রাশ ফায়ারে যারা রক্তাক্ত মরে পড়ে থাকে তাদের সাথে আমাদের নয়শ’ কুড়িটি বধ্যভুমির তফাৎ সামান্যই। আমাদের সবার শত্রু এক, এবং তারা কারা তা আমরা ভালো করেই জানি। এবং একাত্তরে তাদের পদলেহী ‘‘হাস্যমুখে দাস্যসুখে বিনীত জোড়কর, প্রভুর পদে সোহাগমদে দোদুল কলেবর’’ (কবিগুরু) বাংলাদেশী পিশাচরা কারা তা এদিকে আমরাও জানি ওদিকে আনোয়ার-মখদুমরাও জানে।

এ দানবকে পরাস্ত করা কঠিন, হিমালয়-বিজয় বা উত্তাল সমুদ্র-বিজয়ের মতই কঠিন। সুদুর নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি’র সাথে সুদুর নেপালের তেনজিং নোরপে’র মিলন ছাড়া এ দুর্গম হিমালয়-বিজয় অসম্ভব। সুদুর পর্তুগালের ভাস্কো-ডা গামা’র সাথে সুদুর ইয়েমেনী সমুদ্র-বিশারদ আবদুল মজিদের মিলন ছাড়া এ দুর্দান্ত সমুদ্র-বিজয় অসম্ভব। আজ যখন দানবের হাতে আছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মানবের সংগ্রামও তাই আন্তর্জাতিক না হয়ে উপায় নেই। তাই যখন আমাদের সাথে পাকিস্তানেও দাবী ওঠে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই তখন মনে পড়ে সেই একাত্তরেই কয়েকজন পাকিস্তানী বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ওই পাকিস্তানের মাটিতেও, - ক’জন জানে!

অগ্নিবীণার দুর্দম বাদক! অসাধ্যসাধনের অদম্য সাধক!! বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদক তোমাদের কপালে জোটেনি কিন্তু কোটি জনগণের তরফ থেকে তোমাদের লক্ষ সালাম।

- See more at: http://www.hasanmahmud.com/2012/index.php/all-articles/articles-in-bangla/literature/47-ojanaekattor#sthash.tQ9tfUvl.dpuf

Sunday, July 28, 2013

সৌদী বোগদাদীর উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গি সালাউলের টাকা ও ত্রাণ বিতরণ- সুমি খান




কক্সবাজার: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন সম্প্রতি কারামুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি হাফেজ সালাউল ইসলাম।

রোববার সকাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গাদের মধ্যে এসব টাকা ও ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, সৌদি নাগরিক আহমদ বোগদাদী ও তার ছেলে সাদ নিজামী, রোহিঙ্গা নেতা জালাল এবং মনজুর।

প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কারামুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি হাফেজ সালাউল ইসলামের অতিথি হিসেবে সৌদি নাগরিক আহমদ বোগদাদী গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজার এসে কলাতলীর আবাসিক হোটেল ওশান প্যারাডাইসে অবস্থান করছেন।

রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাকে সঙ্গে নিয়ে সালাউল ইসলাম অর্ধশত রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে নগদ সাত হাজার টাকা বিতরণ করেন। একই সঙ্গে প্রায় শতাধিক লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ বিতরণ করেন।

এদিকে, বিকেলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে তারা কক্সবাজার শহরের মুহুরী পাড়ার জঙ্গি এলাকা হিসেবে পরিচিত হাফেজ সালাউলের মাদ্রাসায় বৈঠক করেন।

সূত্র আরো জানিয়েছে, অপর এক সৌদি নাগরিকের তত্ত্বাবধানে আরেকটি দল প্রায় তিন ট্রাক মালামাল কলাতলীর আরেক আবাসিক হোটেল হানিমুন রিসোর্টে মজুদ করে রেখেছে। সোমবার এসব ত্রাণ বিতরণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে টেকনাফের একটি মাদ্রাসায় গোপন বৈঠককালে পুলিশের হাতে আটক হন রোহিঙ্গা জঙ্গি সালাউল।
তার বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিন পেয়ে পুরোদমে জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। রোববার ত্রাণ বিতরণকালে সৌদি নাগরিককে সেনাবাহিনীর অতিথি বলেও প্রচারণা চালাচ্ছেন সালাউল।এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি তিনি অবহিত নন। খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বাংলানিউজ