Saturday, March 9, 2013

আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে... . সুমি খান






মন খুব ই বিক্ষিপ্ত। এভাবে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হারাতে হবে কেন?আর কতো কাল?
ত্বকি..... এই জিনিয়াস ছেলেটা কে মায়ের কোল থেকে বাবার বুক থেকে ছিনিয়ে নিলো যারা- তারা কি জানে তারা এ দেশের কতো বড়ো সর্বনাশ করেছে?
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রিপোর্টিং করতে নারায়ন গঞ্জে ছিলাম দু’দিন। সেমময় রাব্বি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। সন্ত্রাসের জনপদ নারায়নগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করার জন্যে ডা.সেলিনা হায়াত আইভি কে নাগরিক সমাজের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্যে মূল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন রাফিউর রাব্বি ভাই। এতো ত্যাগী, মেধাবী এবং সুসংগঠক দেশে খুব কমই আছে। জামাত শিবির সহ সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অথচ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সংগঠিত করা সম্ভব- তার অনন্য দৃষ্টান্ত রাব্বি ভাই। সেদিন থেকে মিতভাষী এই মানুষ টা কে মনে মনে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি। যে কোন জায়গায় এ্যাসাইনমেন্ট শেষ হয়ে গেলে ও যোগাযোগ থেকে যায় আমার সাথে। একই ভাবে নারায়নগঞ্জের মানুষগুলোর সাথে ও যোগাযোগ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল বদলানোর পর নারায়নগঞ্জের প্রিয় মানুষদের মোবাইল নাম্বার গুলো নেই। নারায়নগঞ্জে হত্যাকান্ড ঘটেছে শোনার পর উদ্বিগ্ন হয়েছি, আমাদের আপন কারো কিছু হয়েছে বুঝতে পেরেছি। জানতে পারলাম রাব্বি ভাইয়ের মেধাবী কিশোর সন্তান কে হত্যা করা হয়েছে। ..... স্তব্ধ, নির্বাক আমি...... চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা। কাইকে বুঝাতে পারবো না বুকের ভেতর সে কী প্রচন্ড ঝড় বয়ে চলেছে। প্রতিবাদের ক্ষোভের আগুন বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিলো।
তখন আমি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পাশে। ৪.৪৮ মিনিটে পরপর বিকট শব্দে ককটেল বিষ্ফোরণ। ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি...আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক আইরিন নিয়াজি মান্না সহ কয়েকজনের অনেকেই নেই। সাংবাদিক শাহিন ছিলেন। অচেনা সাধারণ নারীরা ছিলেন । গগন বিদারী শ্লোগান দিলাম জয়.... বাংলা... !! জামাত শিবির রাজাকার-এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়‍!!এতোটুকু ভয় লাগেনি মনের কোণায়।
মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দেশের শীর্ষ নারী নেত্রীদের...!


চোখ বারবার জলে ভিজে গেলো।হায় দুর্ভাগা দেশ আমাদের। কেন আমাদের সন্তানহারা হতে হলো??এই ফুটফুটে নিষ্পাপ কিশোরের বাবা- মা স্বজনেরাই শুধু নয়; বন্ধু, শিক্ষক সবাইকে শূণ্য করে দেয়া হলো। সারা দেশে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলো ত্বকী!
আজ সকালেই যেতে চেয়েছিলাম নারায়নগঞ্জ, হরতালের কারণে পারলাম না। জানিনা কখন যেতে পারবো। প্রাণপণে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে....
এতোটা শূণ্যতা ... এতোটা বেদনা ...... মনকে শুধু বলি- আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে...
.

Tuesday, March 5, 2013

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন :বিদায় হুগো শ্যাভেজ


প্রায় দুই বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ।



ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো মঙ্গলবার রাতে এই লাতিন নেতার মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমকে জানান।

৫৮ বছর বয়সী শ্যাভেজ ১৪ বছর ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব দেন। এই সাম্যবাদী নেতা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নীতির একজন কড়া সমালোচক।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে মাদুরো বলেন, “আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন।”

দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

গত মাসে কিউবা থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি শ্যাভেজকে।

মাদুরো এর আগে জানিয়েছিলেন, শ্যাভেজের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ভেনিজুয়েলান নেতা ‘কঠিনতম প্রহর’ পার করছেন।
প্রেসিডেন্টের মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণাও দেন তিনি।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের ৩ লক্ষ্য


যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবির কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এজন্য নিজেদের জানা একমাত্র কৌশলটিই তারা ব্যবহার করছে- চালাচ্ছে সহিংসতা, আরো সহিংসতা।

গত কয়েক দিনের এই সহিংসতাকে সামাজিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা স্বতঃস্ফূর্ত কিছু বলা যাবে না। বরং এর পেছনে দেখা গেছে সতর্ক পরিকল্পনার ছাপ। হামলার লক্ষ্যবস্তুও বাছাই করা হয়েছে খুবই পরিকল্পিতভাবে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর যে সহিংসতা শুরু করেছে- তাতে তাদের তিনটি লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই তাদের উদ্দেশ্য।

এর প্রথমটিতে সারা দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে বিপর্যস্ত করে জেলাগুলোর ওপর ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে জামায়াত। হরতালে রেল যোগাযোগ তেমন একটা ব্যাহত হয় না বলে রেলপথকে বেছে নেয়া হয় হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে। পাশাপাশি সড়কপথেও চলে নাশকতা। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; যোগাযোগ কাঠামো ভেঙে দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলা।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার হাতিয়ার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায় জামায়াত। পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে, সদস্যদের হত্যা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চলে। এসব ঘটনা যে অনেক সময় প্রাণঘাতী প্রতিরোধের সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়, সে বিষয়টিকেও আমলে নেয়নি জামায়াত।

১৯৭০-৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গে নকশালরা রাজপথে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল পুলিশকে। আর তার সমাপ্তি ঘটেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে আরো সহিংস জবাবের মধ্য দিয়ে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়, তখন রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ তারা আর মানে না। তখন তারা প্রতিশোধ চায়। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের বহু কর্মী নিহতের ঘটনার একটি ব্যাখ্যা হয়তো এর মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, হিন্দু গ্রাম ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে জামায়াত আবারো ধর্মীয় উন্মাদনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাহবাগের আন্দোলনকর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাকে 'মুরতাদ' ও 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে সেই ‘একই কার্ড’ খেললেও ব্যর্থ হয় জামায়াত। এ ধরনের হামলা যদি প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। হিন্দুরা দেশত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। জামায়াত আশা করেছিল, এভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়ে সবার নজর ঘুরিয়ে দিয়ে তারা হয়তো তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে উত্তাপ এড়াতে পারবে। আর এভাবে জাতীয় পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তারা।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- এই তিন লক্ষ্য পূরণের মধ্য দিয়ে আরেকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে সারা দেশে তারুণ্যের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কক্ষচ্যুত করাই ছিল সেই লক্ষ্য। ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়ে জামায়াত শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনেনি, সরকারকেও চাপে ফেলতে চেয়েছে।

হিসাব কষে জামায়াত হয়তো আশা করেছে, জনজীবনে বিপর্যয় ঘটিয়ে বেসামরিক প্রশাসনকে টলিয়ে দিতে পারলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণের পথ তৈরি হবে। কিন্তু এতে উল্টো ফলও আসতে পারে, যা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী।

Sunday, March 3, 2013

রাজীব হত্যাকারী পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে:সাত দিনের রিমান্ডে


ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এই দলের আরও দুজনকে পুলিশ খুঁজছে।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে।

সাত দিনের রিমান্ডে গ্রেপ্তার ছাত্ররা
ডিবির উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি কার্যালয়ে শনিবার এ ব্যাপারে সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ডিবি পুলিশ মো. ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ (২২), মো. মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজকক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হন। সেই সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতেন।
ডিবির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁদের কিছু ব্লগের ঠিকানা দেন। সেখান থেকেই তাঁরা ‘থাবা বাবা’সহ কয়েকজন ব্লগারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন এবং ‘থাবা বাবা’ নামধারী ব্লগারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগর এলাকার নিজ বাসার সামনের রাস্তায় রাজীবকে খুন করেন তাঁরা।

রাজীবকে হত্যার জন্য দুটি দল গঠন?

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাদের জানিয়েছে। সে ভাষ্য অনুযায়ী, রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনার পর তাঁরা ‘ইনটেল গ্রুপ’ গঠন করেন। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তাঁরা ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। প্রায় এক মাস তাঁরা রাজীবকে অনুসরণ করেছেন।

যেভাবে তাঁরা রাজীবকে খুন করেন

ডিবি পুলিশের কাছে দেওয়া ওই ছাত্রদের ভাষ্যমতে, ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যান এবং ব্লগার রাজীবকে খোঁজা শুরু করেন। এর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রাজীবের বন্ধুদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে তাঁরা রাজীবকে চিনতে পারেন। এরপর এই দলের সদস্য মো. এহসান রেজা রুম্মন শাহবাগ থেকে সাইকেলে করে বাসে ওঠা রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যান। তিনি প্রথম দিন রাজীবের বাসা চিহ্নিত করতে পারেননি। পরে আবার তাঁকে অনুসরণ করে পলাশনগরের বাসাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
এরপর কয়েক দিন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা পলাশনগর এলাকায় রেকি করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা রাজীব কখন বাসায় আসেন, কখন বের হন, কার সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন এবং কী ধরনের কাজ করেন—সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এই দলের সদস্য মো. মাকসুদুল হাসান অনিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি নিজেই বাড্ডা নতুন বাজারের একটি দোকান থেকে চাপাতি ও ছোরা কেনেন। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সদস্যরা সাইকেল ও বাসে চড়ে বিকেল চারটার দিকে পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেন স্কুলব্যাগ, ক্রিকেটের ব্যাট ও বল নিয়ে। তাঁরা গলিতে ক্রিকেট খেলতে থাকেন এবং রাজীবের বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সন্ধ্যার দিকে রাজীব বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মো. মাকসুদুল হাসান অনিক চাপাতি ও ছোরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং একটি চাপাতি রাস্তার মোড়ের পানের দোকানের সামনে ফেলে যান। এলোপাতাড়ি কোপ মো. মাকসুদুল হাসান অনিকের পায়ের জুতায় লেগে পায়ের বুড়ো আঙুলের কিছু অংশ কেটে যায় এবং তিনি কাকরাইলে গিয়ে জুতা জোড়া জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড়ে ফেলে যান। এ ছাড়া তাঁরা একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালায় ফেলে যান।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সরঞ্জাম উদ্ধার

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত দুটি চাপাতি, চারটি ছোরা, একটি বাইসাইকেল, এক জোড়া কেডস, সাতটি বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড় থেকে জুতা জোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালা থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের বিস্তারিত তথ্য

ফয়সালের বাড়ি ঢাকার মাতুয়াইলে। তিনি কোডা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাকসুদুলের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি ম্যাপললিফ থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। এহসানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় ও নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁরা উভয়েই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। নাফিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিভিন্ন এলাকায় অভিযান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এডিসি মশিউর রহমান, এডিসি মানস কুমার পোদ্দার ও জ্যেষ্ঠ এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক দল ঢাকার কাকরাইল, বারিধারা, বসুন্ধরা, পান্থপথ ও খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজীব

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে সাতজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। পলাতক অন্য দুজনকে ধরতে পুলিশ তত্পরতা - See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/news/333300#sthash.ER0PlaLV.dpuf

কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ , সন্তান মোর মা’র:সুমি খান

সম্মানিত বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত রূপ সচেকন মানুষের কাছে উন্মোচিত। সমর্থকদের কাছে তিনি আপোষহীন নেত্রী। ‌এই ‘ ‌দেশনেত্রী’ যদি একবার অন্তত দেশপ্রেম, মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেন এদেশের নিরীহ মানুষ গুলোর প্রাণ বেঁচে যেতো। এভাবে বৌদ্ধমন্দির এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হচ্ছে সারাদেশে , আপনি কি থামাবেন এদের প্লীজ?
এই প্রজন্মের অসীম সাহসী তরুণ ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শাহবাগে দেশপ্রেমিক তরুণেরা প্রায় একমাস বিনিদ্র আন্দোলন করে যাচ্ছে , এই আন্দোলন অহিংস । সহিংস আন্দোলনে অভ্যস্ত রাজনীতি কি আর অহিংস আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারে? না, পারে না। জামাত বিএনপির কার্যক্রমে জনগণ তাই দেখলো । নিরীহ জনগণ কে তাই প্রাণ দিয়ে বুঝতে হচ্ছে এদেশের রাজনীতি এখনো জনমুখী হয় নি।
একতরফা পুলিশ হত্যা , সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি দেখে ও খুনিদের পক্ষে সাফাই গাইছেন, তাদের মদত দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। ফেসবুকে অনেকের কমেন্ট , “আপনি একাত্তরে গণহত্যা দেখেন নি , তাই গণহত্যার কোন সংজ্ঞা আপনার জানা নেই। এ কারণেই আপনি জামাত শিবির চক্রের নির্বিচার হত্যাকে সমর্থন দিয়ে উল্টো অভিযোগ করছেন, সরকার গণহত্যা করছে। একাত্তরে আপনি পাকিস্তানি জেনারেল জাংজুয়া কে কাছে থেকে দেখেছেন । তার প্রতি আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধা থেকে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৭ সালে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাকিস্তান ছুটে গিয়েছিলেন।” তিনি এই দেশ এবং এদেশের মানুষকে কখনো ভালো বেসেছেন কিনা, মানবতার প্রতি তার ন্যুনতম শ্রদ্ধা আছে কিনা- মানুষের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
দৈনিক আমার দেশ এর মাধ্যমে এর সম্পাদক চরম দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান যেভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়াচ্ছেন এর বিরুদ্ধে সরকার এবং দেশের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষকে একসাথে সোচ্চার হয়ে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে অতীতের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে হচ্ছে।
স্বৈরাচারী এরশাদ তার পতনের অন্তিম মুহুর্তে্, ১৯৯০ সালের অক্টোবরে, মওলানা মান্নানের মালিকানাধীন এবং সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবকে ব্যবহার করে স্বৈরচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন নসাৎ করার চেষ্টা করেছিল। মাদ্রাসা শিক্ষক দের টাকা ছিনতাই করে নাকি ইনকিলাব পত্রিকার মালিক হয়েছিলেন মওলানা মান্নান।
যাই হোক্, ১৯৯০ এ অক্টোবরের ৩১ তারিখের দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস-সংক্রান্ত মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে মৌলবাদীরা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারাদেশের হিন্দু উপাসনালয়গুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সেসময়ে আমার নিজের চোখে দেখা চট্টগ্রাম শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিটি হিন্দু জনপদ, মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। কী বিপন্ন সময় কাটিয়েছে নিরীহ মানুষ গুলো।

এসব ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলায় মদতদানকারী দৈনিক ইনকিলাব ও তার অবৈধ মালিক একাত্তরে ডা. আলীম চৌধুরীর হত্যায় সহায়তাকারী মওলানা মান্নানকে কখনও এজন্য জবাবদিহি করতে অথবা শাস্তি পেতে হয়নি। শুধুমাত্র ১৭ দিনের জন্য ইনকিলাবের নিবন্ধন সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছিলো।

ইনকিলাব কে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উস্কানি দেবার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না হবার কারণেই নব্বই য়ের পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে যায়।
মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের উপর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও প্রগতিশীল জনগণের ওপর একের পর এক আঘাত আসতে থাকে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের বাবরি মসজিদ ভাঙার পর, দেশব্যাপী হিন্দু সমাজের ওপর যে বর্বর ও ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে- তা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি ও তাদের দোসরদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের বিভীষিকার কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়।একই ধারাবাহিকতা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কেন ঘটে চলবে? কেন নিরীহ মানুষগুলোকে বারবার সম্ভ্রম, বাড়িঘর, মহামূল্যবান প্রাণ নিয়ে প্রতিমুহূর্তে শংকার মধ্যে দিন কাটাতে হবে?

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে, ২০০১ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু পরিবার এবং মন্দিরে নির্বিচার হামলা,হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিলো তা সভ্যসমাজ বা গণতান্ত্রিক সমাজে নজিরবিহীন।
২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর হামলার পর বহু হিন্দু পরিবারকে প্রাণের মায়া নিয়ে বসতভিটা ছেড়ে, দেশান্তরী হতে হয়েছিল। জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারদের হাতে সম্ভ্রমহানি হওয়া অনেক কে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল কিশোরী পূর্ণিমার প্রতি ভয়াবহ নির্যাতন। বাঁশখালীর জলদিতে দিনমজুর আরতি বালার তিন প্রজন্মকে একসাথে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা এবং একই উপজেলার শীলপাড়ায় এগারোজনকে গানপাউডার ছড়িয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার সরেজমিন রিপোর্ট করতে গিয়ে সেই বীভৎসতা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। এখনো আমার হৃদয় রক্তাক্ত হয় সেসব বর্বরতার চিত্র মনে করে।
যা বলছিলাম, এসব বর্বরতার মূল পরিকল্পনাকারী বাঁশখালীর সাংসদ বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ক্ষমতায় বলীয়ান তার চাচাতো ভাই কালিপুর ইউনিয়নেরআমিন চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে গায়ে হাওয়া দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এই ক’দিন আবার তার নেতৃত্বে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে বাঁশখালীতে। যার কলমের নির্দেশে এই খুনি বর্বর আমিন জামিন পেয়েছে, তিনি কি হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারের উপর আমিনের এই বর্বরতার দায় এড়াতে পারেন? আর যাদের ব্যর্থতার কারণে জাফরুল ইসলাম ২০০৭ সালে আবারও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল রাজনীতিকেরা কি এর দায় এড়াতে পারবেন?

সে সময়ে আমি সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। আমি দেখেছি চট্টগ্রাম শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিটি হিন্দু জনপদ, মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। সংখ্যালঘু এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের জন্যে ২০০১ থেকে ২০০৫ জামাত বিএনপি জোটের পুরো শাসনামল ছিল বিভীষিকাময় ।

পিটিয়ে হত্যা করার সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে চারজন পুলিশ সদস্য নিরস্ত্র ছিলেন। মাদ্রাসার কয়েক শ কিশোরকে সামনে রেখে পেছন থেকে হামলার নেতৃত্ব দেয় জামায়াত-শিবির।

বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হানিফ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেলস্টেশনে হামলার পর তিন-চার হাজার লোক তদন্ত কেন্দ্রে হামলা শুরু করলে আমরা তাদের থামতে বলি। তারা পাথর ছুড়ে মারতে থাকে। আমরা বলি, সামনে এগুলো আমরা গুলি করব। এ সময় তারা উল্টো গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি দেখে আমরা শটগান ও রিভলবারের ৩২টি ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিরাপদে সরে যাই। তখন তারা নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যদের পেটাতে শুরু করে। যে চারজন পুলিশ মারা গেছেন, তাঁরা সবাই নিরস্ত্র ছিলেন।’

পুলিশ জানায়, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলার পর সেদিন সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে তিনজন নিহত হয়। তবে তাদের পরিচয় গতকালও মেলেনি। চার পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বামনডাঙ্গা শহীদ মিনারে শোকসভা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপ-কমান্ডার এম এ আউয়াল। সভার আগে এলাকাবাসী একটি শোক মিছিল করে। তারা পুলিশ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
পরদিন শুক্রবার সকালে জামায়াত-শিবির শান্তিরামে পিটিয়ে মারে যুবলীগের নেতা নূরন্নবীকে। গতকালও ওই বাড়িতে ছিল শোকের ছায়া। নূরন্নবীর বাবা মালে উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলেকে কী কারণে মারল? আমি এর বিচার চাই।’
এ ছাড়া গত দুই দিনে জামায়াত-শিবির হামলা করেছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি আছে। সুন্দরগঞ্জে হামলার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা পুলিশও পৃথকভাবে ঘটনার তদন্ত করছে। গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে বামনডাঙ্গার মানুষ যখন বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবের কথা বলছিলেন, তখনো তাঁদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা ওই তাণ্ডব চলে। রেলস্টেশন মাস্টারের কার্যালয় ও আশপাশের দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ফেরার পথে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জামায়াত-শিবির মাদ্রাসাছাত্রদের নিয়ে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রনজু মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এ কোন দেশ? ২২ বছর ধরে শাড়িকাপড় আর মনোহর সামগ্রীর ব্যবসা করছি। কোনো দিন এমন ভয়াবহতা দেখেননি। প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েক শ লোক এসে আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। চলে লুট। ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে যেসব মালামাল কিনেছি, সব শেষ। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছি।’ বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশেই চা-বিস্কুটের দোকান চালাতেন ৪৪ বছরের মোহামঞ্চদ আলিম। ১৪ বছর ধরে তিনি এখানে দোকান করছিলেন। পুুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর দোকানও। স্টেশনের পাশেই পানের দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা চালাতেন বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। আহাজারি করে জানালেন, তাঁর একমাত্র সম্বল দোকানটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। এই বাজারের হরেন, আয়নাল, শামীম, আলমগীর, গনি—সবাই একই আতংকে আছেন। বৃহস্পতিবারে সবার দোকান পুড়িয়ে দিয়েছ সন্ত্রাসীরা। স্টেশনের আশপাশে থাকা ৩০-৩৫টি দোকানের সবাই কম-বেশি হামলার শিকার হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের টিকিটঘর। স্টেশনমাস্টার আতাউর রহমান জানালেন, নগদ দেড় লাখ টাকাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের বামনডাঙ্গা উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। প্রকৌশলী অফিসের চৌকিদার সাইফুল ইসলাম জানালেন, অফিসের সবকিছুই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ‘রেলস্টেশনে পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সামনে রেখেছিল বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক শ’ কিশোরকে।
রেলস্টেশনে হামলার পর আসরের আজানের সময় জামাত শিবিরের জঙ্গী সন্ত্রাসীরা “নারায়ে তাকবির” বলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা চালায়। পুলিশ ফাঁকা গুলি চালালেও উত্তেজিত শিবির ক্যাডার দের ঠেকানো যায় নি। পুলিশের অস্ত্রের গুলি শেষ হয়ে গেলে পুলিশ পিছু হটে। এ সময়ে হামলাকারীরা চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে। বাবলু ও নাজিম নামে দুই পুলিশের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় তদন্ত কেন্দ্রের পেছনে পড়ে ছিল। অন্য দুই কনষ্টেবল হযরত এবং তোজাম্মেল আহত হন,পরে তাঁরাও মারা যান।’

হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি ১২ বছরের কিশোর ছিলাম। স্বাধীনতার সময়ও এমন তাণ্ডব দেখিনি।’ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতি জামায়াত-শিবিরের এই তাণ্ডব দেখে স্তম্ভিত।’ সাংবাদিকেরা এসব হামলার বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলীর বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইউনুস আলীর সবগুলো ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম কারাগারে। সেক্রেটারি আবদুল করিমের মুঠোফোনও বন্ধ।

বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জে সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রণজিৎ বকসি বলেন, বেলকা ইউনিয়নে দুটি এবং শান্তিরামে তিনটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরজিত কুমার বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শান্তিরাম মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়। এরপর আমার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। স্বাধীনতার এত বছর পরও যদি এভাবে আমাদের বাঁচতে হয়, সেই কষ্ট আমরা কোথায় রাখবো?” দেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিক একই বেদনায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। একই আতংকে সন্ত্রস্ত। মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে এর দায় নিতেই হবে। তার বক্তব্য এই সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি দিয়েছে। এই বিপন্ন পরিস্থিতিতে সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে।
এ প্রসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং সভ্যতা ধ্বংসে মুসলিম ব্রাদারহুড এর অনুসারীদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা এবং তা দমনের ইতিহাস উল্লেখ করতে হয়।
কোন ধর্মীয় পবিত্র স্থানকে “ক্রিমিন্যাল”দের অপরাধীদের আশ্রয়, অপকর্ম অপতৎপরতার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেয়া হয় না কোন দেশেই।
একমাত্র ব্যতিক্রম, বোধহয় বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের লাল মসজিদের কথা। ১৯৬৫ সালে নির্মিত এই মসজিদটির এক ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন জেনারেল জিয়াউল হকের। আমাদের সকলকে, এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, এই জিয়াউল হকই পাকিস্তান নামের এই দেশটিকে কট্টর মৌলবাদী একটি রাষ্ট্র বানিয়ে ছাড়েন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনীকে তাড়াতে তখন আমেরিকা এবং সৌদি আরবের সরাসরি সাহায্য নিয়ে তালেবান, আলকায়েদা এবং ওসামা বিন লাদেনদের মতো দানবদের সৃষ্টি করেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। লাল মসজিদের এই ইমাম মোহাম্মদ আবদুল্লাহও জেনারেল জিয়াউল হককে প্রবলভাবেই সমর্থন দিয়ে যান। আমাদের দেশেও আবদুল মান্নান মালানা প্রবল সমর্থন দিয়ে গেছেন দুই সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদকে।
কিন্তু একটি ফতোয়া দেয়ার কারণে ইমামের পদ থেকে অপসারিত হলেন মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি এই মর্মে এক ফতোয়া দিলেন যে, তালেবানরা আফগানিস্তানে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, জেহাদ করছে, সুতরাং এই তালেবান-জেহাদীদের হত্যায় কোন পাকিস্তানী সৈন্য জড়িত থাকলে তার জানাজা পড়া ‘জায়েজ’ হবে না। সারা দুনিয়ার তাবৎ লোকজন জানে পাকিস্তানের আইএসআই,Ñ ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স, দেশটি চালায় তাদের কাছে তাই এই ফতোয়াÑ দারুণ এক হুমকি হয়ে দাঁড়াল। তালেবানদের সাথে যুদ্ধে মারা গেলে কোথায় তাদের শহীদ হওয়ার কথা, তা না হয়ে জানাজাই পাওয়া যাবে না মৃত্যুর পর; তাহলে পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে, জেহাদে যাবে কেন? বাবা-মা’রাই বা কেন তাদের সন্তানদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে, জেহাদে পাঠাতে চাইবেন?
ইমাম আবদুল্লাহকে অপসারণ করা হলো ঠিকই, কিন্তু তার দুই ছেলে মাওলানা গাজী আবদুল আজিজ এবং মাওলানা গাজী আবদুর রশীদদের নিয়ন্ত্রণে থাকল এই লাল মসজিদ। ২০০৭ সালের ৩ জুলাই, এই লাল মসজিদসংলগ্ন মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা কোন রকমের উস্কানি ছাড়াই পাশের এক সিকিউরিটি পোস্টের পুলিশকে আক্রমণ করে বসল, কিছু অস্ত্রশস্ত্রও লুট করল, আর কয়েকজন সরকারী কর্মচারীকে জিম্মিও করে ফেলল। তারা দাবি তুলল, মহিলাদের লেখাপড়া বন্ধ করতে হবে, টেলিভিশন বন্ধ করতে হবে, ভিডিও দোকান বন্ধ করতে হবে এবং পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, লেখাপড়া কিছুই থাকতে পারবে না। তাদের আরও একটি দাবি, পাকিস্তানে কোন সংখ্যালঘু, ‘মাইনোরিটি থাকতে পারবে না; সকল বিদেশী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পাকিস্তান থেকে তাড়িয়ে বহিষ্কার করে দেশটিকে ‘পবিত্র ভূমি’ বানাতে হবে।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা দেনদরবার চলতে থাকে ৩ জুলাই থেকে। কিন্তু লাল মসজিদের এই সন্ত্রাসীরা ৬ জুলাইতে হত্যা করে ১৮ জন পুলিশ সদস্য এবং একজন বেসামরিক নাগরিককে। তারপরও আলোচনা চলতে থাকে। কিন্তু এই ধর্মান্ধ মোল্লারা “সুইসাইড স্কোয়াডের হুমকি দিতে থাকল। লাঠি হাতে কালো বোরকায় চুল থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা মহিলাদেরও তখন লাল মসজিদে দেখা যায়। ন্যূনতম মানবিক বিবেচনা বর্জিত এই সন্ত্রাসীরা শিশুদেরও বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকল।
সুতরাং যা প্রত্যাশিত তাই হলো! কোন দেশের কোন সরকারই এমন অরাজকতা, নৈরাজ্য মেনে নিতে পারে না; ধর্মের নামে, ধর্মের এমন অপব্যবহার সহ্য করতে পারে না, যদি সেই দেশটি সোমালিয়ার মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র না হয়।
পাকিস্তানের আইএসআই খুব বেশি তৎপর ছিল জেনারেল জিয়াউল হকের জামানায়। তখন ‘ইসলামাইজেশন অব পাকিস্তান’, ‘মিলিটারাইজেশন অব পাকিস্তান’ এবং ‘ইসলামাইজেশন অব আর্মি’ চরমে পৌঁছে। কিন্তু মৌলবাদী এবং ধর্মান্ধদের এত বড় পৃষ্ঠপোষক আইএসআইও মেনে নিতে পারল না লাল মসজিদের এই দখল। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আবার দখলে নিল এই মসজিদটি। কিন্তু এতে ১৭৩ জন মানুষ মারা পড়ল, আর আহত হলো আরও এক হাজার।
ইসলামধর্ম রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সৃষ্ট পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের নামে ব্যবসা করতে দেননি পাকিস্তানের এক জেনারেল, প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ।



১৪০০ হিজরী সালের প্রথম দিন, ১৯৭৯ সালের ২০ নবেম্বর, ভোর ৫টার দিকে যখন মুসল্লিরা ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন জুহায়মান আল ওতাইবি নামের এক পথভ্রষ্ট ধর্মভ্রষ্টের নেতৃত্বে হামলা হয় পবিত্র কাবা শরীফে। তার সাথে চার পাঁচ শ’ উগ্র ধর্মান্ধ ছিল বলে জানা যায়। কাবা শরীফে ঢুকেই তারা কাবা শরীফের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। মিনারের বিভিন্ন জায়গায় উঠে অবস্থান নেয় এবং গোলাগুলো চালাতে থাকে। তখন হজের সীজনও চলছিল। তাই অনেক মুসল্লি আটকা পড়েন পবিত্র ক্বাবা শরীফে।

জুহায়মান আল-ওতাইবি তখন ঘোষণা দেয়, নতুন হিজরী শতাব্দীর পবিত্র দিনে ইমাম মেহেদীর আগমন ঘটেছে।তার দাবিমতে, এই ইমাম মেহেদীর নাম আবদুল্লাহ আল কাহতানী, ওতাইবিরই এক আত্মীয়।
তারা তখন সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অনেক উদ্ভট অভিযোগও আনে, তারা সৌদি রাজপরিবারের উৎখাতও দাবি করে।
তখন সৌদি কিং ছিলেন বাদশাহ খালেদ।
তাঁর বড় ভাই বাদশাহ ফয়সল এক আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে যিনি বাদশাহ হয়েছিলেন। বাদশাহ খালেদের পর যুবরাজ ছিলেন প্রিন্স ফাহাদ এবং তারপর প্রিন্স আবদুল্লাহ।
প্রিন্স খালেদ ১৯৮৩তে মারা যাওয়ার পর বাদশাহ হলেন যুবরাজ ফাহাদ। বাদশাহ ফাহাদ মারা যাওয়ার পর বাদশাহ হলেন যুবরাজ আবদুল্লাহ।এখনো ক্ষমতায় আছেন তিনি।

১৯৭৯ সালের নবেম্বরে কাবা শরীফে যখন হামলা হয়, তখন যুবরাজ ফাহাদ এবং প্রিন্স আবদুল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন সফরে উত্তর আফ্রিকায় ছিলেন।
বাদশাহ খালেদ সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে পবিত্র হারেম শরীফ থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ উৎখাত করার দায়িত্ব দিলেন ডিফেন্স মিনিস্টার প্রিন্স সুলতান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফকে। সৌদি রাজপরিবারের এই দুই সদস্য ওতাইবি এবং তার দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আগে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ বিন বাজের সাথে আলোচনা করলেন। গ্র্যান্ড মুফতি শেখ বিন বাজ এই অভিযান অনুমোদন করতে সম্মতি দিলেন।
সাথে সাথে শুরু হয় জুহায়মান আল ওতাইবিদের উচ্ছেদ অভিযান।
সৌদি সরকারের অনুরোধে পাকিস্তানও তখন একটি কমান্ডো দল পাঠায় কাবা শরীফ উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে। এই অভিযানে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য সামন্তকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের নবেম্বরে এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৭ জন নিহত হয়, আহত হয় প্রায় সাড়ে চারশ’। ওতাইবির পক্ষে নিহত হয় ১১৭ জন। পরে শরীয়া আইন অনুসারে বিচারে ওতাইবিসহ ৬৮ জনের মুন্ডু কেটে নেয়া হয়।

লাল মসজিদ এবং পবিত্র কাবা শরীফ দখলে নিয়ে কেমন অপকর্ম করেছিল দখলদাররা এবং এই দুটি পবিত্র স্থান পরে কেমন করে উদ্ধার করা হয়েছিল, তা জানতে হলে আগ্রহী ব্যক্তি ইন্টারনেটে এই দুটো পবিত্র স্থানের নাম লেখে ‘গুগলএ’ ক্লিক করলে আরও অনেক বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এই ঘটনা দুটোর ওপর অনেক বইপত্রও লেখা হয়েছে। তার তালিকাও ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে।

ধর্মের নামে এই সন্ত্রাসী দখলদারদের আক্রমনাত্মক ভূমিকার কলংকজনক ইতিহাস বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বারবার জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত। জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে লিপিবদ্ধ থাকা উচিত এই ইতিহাস। এই ধর্মব্যবসায়ীদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, কাঁটাবন মসজিদ এবং আমাদের অনেক মসজিদ মাদ্রাসাকে জামায়াত-শিবির এবং তাদের সমমনা দলগুলোর লোকজন ইসলাম ধর্মের নামে কেমন কলুষিত করে চলেছে, তা অব্যাহত থাকতে দেয়া যায় না। যেমন হতে দেয়া হয়নি পবিত্র কা’বা শরীফ এবং পাকিস্তানের লাল মসজিদে।


জানা যায়, পুলিশ হত্যা, থানা ও ফাঁড়ি ভাঙচুর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় শুক্রবার রাতে আনোয়ারুল ইসলাম, আবদুর রউফ, লেবু মণ্ডল নামে তিনজনকে এবং শনিবার জিয়াউর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকালও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। মোতায়েন হয়েছে বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেছেন, হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আমার মনে হয়, হামলাকারীদের তালিকা প্রণয়ন অনেক জরুরী। একথা সত্যি, যে, বাস্তব ক্ষেত্র আমাদের প্রশাসনে জনবল এবং দক্ষতা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে।
এখানে মসজিদে আশ্রয় নিয়ে মসজিদ থেকে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির । এই দেশে একটি পত্রিকা অফিসে আশ্রয় নিয়ে পুলিশ এবং নিরীহ মানুষজনকে টার্গেট করে ভারপ্রাপ্ত ‘বাইচান্স’ এডিটর জেহাদী মাহমুদুর রহমান ধর্মান্ধ মোল্লাদের উস্কায়, হুঙ্কার হুমকি দেয়, গর্জনও করে। দেশের গ্যাসসম্পদ বিক্রি করে নাইকো থেকে কোটি টাকার গাড়ি নেয়া সহ আনলিমিটেড দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং প্রমাণিত ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান, যিনি উচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত একটি ব্যক্তি- কী করে তিনি পত্রিকার সম্পাদক হতে পারেন? রাজীবের হত্যাকারী ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। তারা স্বীকারোক্তি ও দিয়েছে। এবার শহীদ রাজীবের চরিত্র হনন কারী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদনের প্রতিবেদক মাহমুদা ডলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সংবাদপত্র কে ব্যবহার করে এ ধরণের মিথ্যা এবং উস্কানিমূলক প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। পত্রিকায় বিবৃতিদানকারী ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার আবেদন,শুধু বিবৃতি আর কলামে সীমাবদ্ধ নয় আমাদের কাজ। বাস্তবে কাজ করতে হবে। বিচ্ছিন্নতা নয় আর, প্রজন্ম চত্বরের উদ্যোক্তা এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ডা. ইমরান এইচ সরকার এর বিরল এবং সাহসী নেতৃত্ব দেশের কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। এই সাহসী সময়কে ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। নজরুলের ভাষায় বলি, হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কান্ডারী বলো ,ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র।”
আমার ভাই , আমার বোন , আমার মা বিপন্ন । ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে এই সহিংসতা ঠেকাতে। প্রথাগত পুঁথিগত এবং নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে এসে কাজ করতে হবে রাজনীতিবিদদের। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে সকলকে। এর মাধ্যমেই এই উপমহাদেশে ও মুসলিম ব্রাদারহুড বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কবর রচিত হবে।
Sumikhan29bdj@gmail.com