Friday, August 24, 2012

সাগর-রুনি হত্যায় একাধিক ব্যক্তি অংশ নেয়-রুনির টি-শার্টে ভিন্ন ডিএনএ শনাক্ত: র‌্যাব


ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষা করে এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিষয়ক পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও মেহেরুন রুনির টি-শার্টের পরীক্ষার পর একাধিক ব্যক্তির ডিএনএ সনাক্ত হওয়ায় ওই হত্যাকাণ্ডে যে একাধিক ব্যক্তি জড়িত, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের ডিএনএ সনাক্ত হয়েছে। এছাড়া দু’টি ছুরির একটিতে চার জনের আঙ্গুলের ছাপ এবং অন্যটিতে একাধিক ব্যক্তির হাতের ছাপ পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।

সোহায়েল জানান, এ পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে আলামত পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে এলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।

তিনি আরও জানান, পরীক্ষার জন্য গত মাসেও কিছু আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রুনির চুল, টিস্যু এবং সাগরের রক্তমাখা জামা রয়েছে। সাগর সরওয়ার ও ছেলে মেঘের ডিএনএ পরীক্ষাও চলছে যুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ডের ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবে।

হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট।

গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।

উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় তাদের শিশু সন্তান মেঘও বাসায় ছিল। ঘটনার পর সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ছিল।

তিন মাসেও মামলার কোনো কিনারা করতে না পেরে ডিবি তদন্তে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র‌্যাব সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপর গত ২৬ মে ভিসেরা আলামতের জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তবে তাদের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে। তার গেঞ্জিতে (টি শার্ট) ভিন্ন ডিএনএ পাওয়া গেছে। খুন হওয়ার সময় মেহেরুন রুনির পরনে যে টি-শার্ট ছিল, তা থেকে সংগৃহীত উপাদান পরীক্ষা করে এক ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ-বৃত্তান্ত (প্রোফাইল) পাওয়া গেছে।

আর ওই ডিএনএ কোনো খুনীর হতে পারে বলে ধারণা করছে মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ র‌্যাব। এদিকে রুনির স্বামী সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও ছেলে মেঘের ডিএনএ পরীক্ষা চলছে বলে জানা গেছে।

গত সাড়ে ছয় মাসেও সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের কোন রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় এখন একমাত্র ভরসা করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ডের ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবের পরীক্ষাকেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক ও একটি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পর র‌্যাব খুনিদের শনাক্ত করতে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল। রোডম্যাপ অনুযায়ী সাগর রুনি হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ নমুনাতেই একাধিক ব্যক্তির ছাপ রয়েছে। এর মধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সময় যে ধস্তাধস্তি হয়েছে, তাতেই রুনির টি-শার্টে ওই ব্যক্তির চুল ও হাতের ছাপ লাগে। সাগরের হাত ও পা বাঁধার কাপড়ের নমুনা থেকেও অন্য কারও ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট ও অন্য কাপড়ের নমুনা। গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।

সূত্র জানায়, সাগর-রুনীর ডিএনএ পরীক্ষা রিপোর্টই এখন তদন্তের শেষ ভরসা। এ রিপোর্ট অনুযায়ী খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যখন কোন খুনি শনাক্ত করা সম্ভব হয় না, তখন ক্রাইম সিনই একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সাগর রুনির ক্রাইম সিনকে সেভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি পুলিশ। সিআইডি ও ডিবি বিশেষজ্ঞ দলও ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্রাইম সিন রক্ষা করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ। প্রথমে সাগর রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার ডিবির হাতে ছিল। তিন মাস ডিবি এ মামলায় তেমস কিছু করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র্যাব সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে।

সাগর রুনির ক্রাইম সিন নষ্ট হওয়ায় র্যাবের পক্ষে খুনি শনাক্তকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। গত ২৬ এপ্রিল ভিসেরা আলামতের জন্য দুজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তদন্ত শুরুর পর এখনো এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করে।