Friday, July 30, 2021

বাংলাদেশে নাশকতা-পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক মাযহার খান-সুমি খান

বাংলাদেশে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাকিস্তান দূতাবাসের এক কূটনীতিক। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও অর্থায়ন করেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর অন্যতম সংগঠকও এই পাকিস্তানি। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে। মাযহার খান নামে ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী ভয়ঙ্কর সব তৎপরতার তথ্য-প্রমাণ পেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চলছে তোলপাড়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সন্দেহও করছেন কেউ কেউ। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি তৎপরতাই শুধু নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন তিনি। এ জন্য পরিচালনা করেন ভারতীয় জাল রুপির এক বিশাল নেটওয়ার্ক। ধরাও পড়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। কিন্তু কূটনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয় ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস। বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় জড়িত এই কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে গোপনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মকর্তার সহযোগী মজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশি একজন নাগরিক গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ধারাবাহিক তদন্তের সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গি তৎপরতা ও জাল রুপি নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিদের কার্যক্রমের ক্রমধারা ও রূপরেখা। পাওয়া গেছে তাদের তালিকা ও কথোপকথনের সারাংশ। ওই প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কড়া ভাষায় পাকিস্তান হাইকমিশনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার ও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশের আসা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে।  

 <a href='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a35ce767' target='_blank'><img src='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=782&n=a35ce767' border='0' alt='' /></a> 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাশকতার সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাসের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায় বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মাযহার খান জাল নোট (রুপি) তৈরি ও সংগ্রহ করে কতিপয় বাংলাদেশি নাগরিকের মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন। এতে তিনি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে আরও নিশ্চিত হন যে, মাযহার খানের সঙ্গে জলিল   আখতার ও মো. মজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের লোকজনের যোগাযোগ    রয়েছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিশেষ করে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, যশোর, বেনাপোল এলাকার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গত ১২ জানুয়ারি রাতে বনানীর মৈত্রী মার্কেট এলাকায় মজিবুর রহমান ও পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে গোপন বৈঠকের সময় আটক করে। ওই সময় মাযহার তার সঙ্গে থাকা বেশ কিছু কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। ছিঁড়ে ফেলা কাগজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা কিছু বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর পান। ওই পাসপোর্টের সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে, পাসপোর্টধারীদের এমন তিন ব্যক্তি রয়েছেন যাদের নাম বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুত করা হিযবুত তাহরীরের তালিকায় আছে। এরপরই গোয়েন্দারা মজিবুর ও মাযহারকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বনানী থানায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে সেদিনই রাত ১০টার দিকে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব সামিনা মাহতাব বনানী থানায় উপস্থিত হয়ে মাযহার খানকে নিজের হেফাজতে নিয়ে যান। অন্যদিকে, মজিবুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত আট থেকে ১০ বছরে ২২ বার পাকিস্তানে ১১ বার ভারত ও ২২ বার থাইল্যান্ডে যাওয়া মজিবুর রহমানের সঙ্গে মাযহার খানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাযহার খানের পূর্বসূরি সহকারী ভিসা কর্মকর্তা। পরবর্তীকালে মজিবুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবিন্দতে জানান, মাযহার খান এক লাখ ৮০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি চালানোর জন্য তাকে দেন। একইভাবে মাযহার আরও ভারতীয় জাল রুপি জাহিদ, ইমরান ও আরও কয়েকজনকে দিয়ে বাজারে ছাড়িয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাযহার খান পাকিস্তান দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করা হয়। মূলত বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে।  
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রের তথ্যমতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানি মোহাম্মদ ইমরানকে আশি লাখ জাল রুপিসহ আটক করা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। ইমরানের পাসপোর্টের ভিসাও ছিল জাল। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ইমরানেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। 
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে ২ বছর দায়িত্ব পালনের বাইরে মোহাম্মদ মাযহার খান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ড, পৃষ্টপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশাল জাল রুপির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। এই নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য মুজিবুর রহমান জঙ্গিসংগঠনগুলোর জন্য অর্থ পাচার কাজে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এ জন্যই তিনি ঘন ঘন ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে আসা-যাওয়া করেছেন। পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রদান না করায় জাল ভিসার সংখ্যা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অতি জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয় বলে জানা গেছে।
০২/০৪/২০১৫