Tuesday, May 15, 2018

”প্রসিকিউটর হিসাবে তুরিন যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ আনএথিক্যাল “- ওয়াহিদুল হক

 একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার দায়ে গ্রেফতার ওয়াহিদুল হক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ”আকস্মিক ভাবে তুরিন আফরোজ ফোন করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেন এবং পরবর্তীতে প্রসিকিউটর হিসাবে যেসব কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ আনএথিক্যাল ।”

তার মোবাইল ফোনে থাকা দুই অডিও রেকর্ডের কারণে ফেঁসে গেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।আইনমন্ত্রী দেশে ফিরলেই পরবর্তী পদক্ষেপ ।

রাজধানীর গুলশান থেকে গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করে গুলশান পুলিশ। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করার পর সেটি পরীক্ষা করতে গিয়ে দুটি অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। অডিওতে তার সঙ্গে তুরিনের যোগাযোগের তথ্য ছিল। অডিও রেকর্ড আইনমন্ত্রী  শুনেছেন। আইনমন্ত্রী দেশে ফিরলেই পরবর্তী পদক্ষেপ  নেয়া হবে বলে জানা যায় ।

তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে ৷  আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠক, মামলার নথি তার কাছে হস্তান্তর ও মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলা৷
অভিযোগের প্রমাণ ও অডিও রেকর্ড এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু৷ প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷

গুলশান থানার ওসি অডিও রেকর্ড দুটি কপি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেন৷ পরে সংস্থা তা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে দিলে তুরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন,আমরা এ ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছি।আমাদের জন্যে এ ধরণের আচরণ একেবারেই অপ্রত্যাশিত । তিনি বলেন , তুরিন আফরোজ নিজেই আগ্রহী হবার পর  ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটরের নির্দেশ ক্রমে এই মামলাটি তাকে দেয়া হয় গত নভেম্বরে । কিন্তু এ পর‌্যন্ত তিনি কোন কাগজপত্র ফেরত ও দেন নি তার দায়িত্বের ব্যাপারে কোন অগ্রগতি ও তদন্ত কমিটিকে জানান নি।

তিনি আরো জানান , দুটি অডিওর মধ্যে একটি টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড৷ এটি চার মিনিটের মতো৷ অন্য অডিওটি ওই গোপন বৈঠকের, প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার মতো৷
গোলাম আরিফ টিপু বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে৷ তিনি দোষী হলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে৷

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বুধবার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছেন৷ আসামি ওয়াহিদুল হকের মামলার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান৷ গত বছর তদন্ত শুরু হওয়ার পর ১১ নভেম্বর তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়৷

অভিযোগ উঠেছে, ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতারের আগে গত নভেম্বরে তুরিন আফরোজ প্রথমে তাকে টেলিফোন করে দেখা করার সময় চান৷ এর পর একটি হোটেলে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন তিনি৷

তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, তাদের টেলিফোনে কথা হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। আর পর দিন ঢাকার গুলশানের  অলিভ গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর গোপন কক্ষে বৈঠকটি হয়। সেখানে তুরিন আফরোজ, তার সহকারী ফারাবি, আসামি ওয়াহিদুল হকসহ মোট পাঁচজন ছিলেন৷
তিনি জানান, টেলিফোন রেকর্ডে তুরিন আফরোজ জানিয়েছেন যে তিনি বোরকা পরে ওই হোটেলে যাবেন৷ তার সঙ্গে থাকবে সহকারী ফারাবি, যাকে তিনি নিজের স্বামী পরিচয়ে সেখানে নিয়ে যাবেন৷
বৈঠকের অডিও রেকর্ডে কী আছে জানতে চাইলে সানাউল হক বলেন, যা বলা সম্ভব তাই বলছি৷ বৈঠকে তুরিন আফরোজ মামলার মেরিট নিয়ে আসামির সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলেন এবং মামলার পুরো ডকুমেন্টের এক সেট ফটোকপি আসামিকে হস্তান্তর করেন৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবি বারবার ওয়াহিদুল হকের কাছে তার আর্থিক অবস্থার কথা জানতে চান৷ ওয়াহিদুল হককে বলেন, “আপনি তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে চাকরি করেছেন৷ আপনার তো অনেক টাকা-পয়সা থাকার কথা৷”

তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সানাউল হক বলেন, এখানে আসলে তিনটি বিষয় বিবেচ্য৷ আসামির সঙ্গে গোপনে ছদ্মবেশে দেখা করা, তাকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা এবং মামলার মেরিট নিয়ে আসামির সঙ্গে আলোচনা করা৷ এর কোনোটিই তিনি করতে পারেন না৷ আইন মন্ত্রণালয় এখন পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে৷ আসামি মামলার ডকুমেন্ট পাবে আদালতের নির্দেশে৷ প্রসিকিউটর ব্যক্তিগতভাবে আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারেন না৷ এমনকি মামলার মেরিট নিয়েও আসামির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না প্রসিকিউটর৷

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য তুরিন আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি । তবে তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেছেন, আমি তদন্তের জন্য যে কোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারি৷ আর আমি যা করেছি, আমার ঊর্ধ্বতনদের জানিয়ে করেছি৷ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে৷

সানাউল হক বলেন, তুরিন আফরোজ মামলার তদন্তকারী নন৷ তদন্ত করছেন উপপরিচালক মতিউর রহমান৷ সুতরাং তুরিন আফরোজের তদন্তের প্রশ্নই ওঠে না৷ তা ছাড়া তিনি আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠক করবেন বা দেখা করবেন– এটি আমাদের বা চিফ প্রসিকিউটরকে জানাননি৷ জানালেও অনুমতি পেতেন না৷ কারণ এটি বেআইনি৷ মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেকজন প্রসিকউটর রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তুরিন আফরোজকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷

তবে প্রসিকিউটরদের নিয়োগ দেয় সরকার৷ তাই তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে আইন মন্ত্রণালয়৷
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে যদি তুরিন আফরোজ চূড়ান্তভাবে দোষী প্রমাণিত হন,প্রসিকিউশনে কোনো প্রভাব পড়বে না৷

ফিরলো না মেয়েটি - সুমি খান

৭.৪৮ সকাল,  মঙ্গলবার ১৫ মে ২০১৮

হার্মোনিকা ঠোঁটে আলপথ ধরে এঁকে বেঁকে চলে গেলো মেয়েটি
কেউ তাকে মনে রাখেনি-
বিশুদ্ধতায় ডুবে যাওয়া
চলিত রীতির অচলায়তন ভাঙ্গা মেয়েটি কে কোথাও খুঁজে পেলো না কেউ-
আশালতার আত্মদান  নিভৃতে হারিয়ে যায়
নন্দী  ডাক্তার দের দেশত্যাগের ইতিহাস যার বুকে রক্ত ঝরাতো-

নিউজরুমে খবরের খোল নলচে পাল্টে মিথ্যার বেসাতি
যাকে দুমরে মুচড়ে দিতো-
মেয়েটি হারিয়ে গেলো -

লু হাওয়া কদমবুচি দিয়ে যায়
জননীর চরণে- কে ও?
তবে কি ও এসেছিলো?

পৌরুষের সংস্কারে আপাদমস্তক সুরক্ষিত সমাজ

মায়ের চাদর সুরক্ষিত করে নিপীড়ককে

বাবার ভাঙ্গা চশমারর কাঁচে জলের ফোঁটা
কাজল স্যারের চশমার ফাঁক গলে নেমে আসা
ফার্স্ট ব্র্যাকেট আর লাফিয়ে পড়া থার্ড ব্র্যাকেট এর গলাগলি-
যোগ বিয়োগের সাথে গুণ ভাগের দলাদলি
এসেছিলো-সীমন্তিনী
নীরব সমর্পনে অন্য জীবনে
আকাশসীমার শেষে দিগন্তবিস্তৃত
ময়রাপাড়ার মাঠ পেরিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে
হার্মোনিকার সুর ছড়িয়ে চলে যাবার পথে আর পিছু তাকায় নি

সীমন্তিনীদের ফিরতে নেই
 তাই বুঝি  আর ফেরে নি সেই মেয়েটি

Monday, May 14, 2018

কালো বোরকার তালগাছে উন্মত্ত মাতঙ্গিনী -সুমি খান

রাজভোগের ভাগ নিতে
ঘাতকের দুয়ারে
কালো নেকাব!
আহা,  পাকিসেনার সাথে এমন খাস মোলাকাত!
বেরসিক কালবোশেখি ঝড়!

 বিশ্বাস আর ঘাতকের মিলিত  বিষাক্ত শ্বাস
 তবু তালগাছ-আর তালগাছ
মূলে নির্মূলে  মিলে যায় ঘাতকের অট্টহাসি-
ভেসে যায় মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝরা শত শত প্রাণ-

তিরিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার এতো জোর?

স্যুপের বাটিতে ওঠা ঢেউ ছলকে পড়ে
ওয়েটারের পোষাকেরআড়ালে
সিধু কানুর বুকের কাছটায় !
নীরব চোখের জলে ভেসে যায়
শত শত সাঁওতাল শহীদের রক্তাক্ত আত্মা!

কোটি টাকার হিসেব কষে বেভুল কালো কোট
অন্তর্ভেদী বিষাক্ত হাওয়ার তোড়ে
মেতে ওঠে মিথ্যার ওজরেরা -

দু'পাতার কাগজটি নির্বিকার হস্তান্তর-
সিধু কানুর নীরব রক্তাক্ত চোখে আগুন ঝরে -
মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝড়া বুকের রক্তে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে!

কালো বোরকার পকেট কি ফাঁকাই রয়ে গেলো?
নাকি জমেছে যতোটা -
তারো চেয়ে বেশি জমবে গ্লানি আর ক্লেদ
কিছু নাই তবু খেদ-
নিন্দার ভার ঝেড়ে ফেলে
কান কানা রমজান !
শুধু জাগে সংশপ্তকের নির্ঘুম প্রহর!

ধর্মের কলে কালবোশেখি ঝড়-
মাতৃমুক্তি পণ করে সত্যনিষ্ঠ
উন্মত্ত মাতঙ্গীনি মাতে সমররঙ্গে
ভয় কী মরণে!

সকাল ৮টা ৩৫
১৫ মে ২০১৮