সমাজ প্রগতির সংগ্রামে নিবেদিত প্রতিটি মানুষের প্রতি এ অন্ধ মৃত সমাজের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা-অন্ধকারের শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টির ভেতরে বাইরে প্রতিটি সর্বনাশ ঠেকানোর মানবিক প্রয়াস মাত্র!
Friday, December 18, 2020
আমাদের সুপারম্যান বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য শত বছরের বীরযোদ্ধা বাঘা যতীনের আবক্ষ মূর্তি সারা দেশে হোক-সুমি খান
Sunday, November 22, 2020
মুজিবের পরিবারকে আশ্রয় দানে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতবিরোধিতা- খুশবন্ত সিংকে জিয়া
প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক খুশবন্ত সিং ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
জিয়ার কাছে আমার শেষ প্রশ্ন ছিল তার দেশে ক্রমবর্ধমান ভারতবিরোধী মনোভাব সম্পর্কে।
অনেক দেয়ালের ওপর স্লোগান লেখা -‘ভারতীয় কুকুর, হঠে যাও’, ‘বাংলাদেশের ওপর থেকে হাত গুটিয়ে নাও’।
আমি জিয়ার কাছে জানতে চাই যে, তিনি তার দেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপের কোনো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করতে পারেন কিনা।
তিনি যা বললেন, তা হলো ভারত সরকার কর্তৃক বাঘা সিদ্দিকী ও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান।
আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য দায়ী একজনকেও কেন গ্রেফতার করা বা শাস্তি প্রদান করা হয়নি?
আমার প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করলেন না; বরং অধৈর্যের মতো তার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। আমি জানতাম, সাক্ষাৎকারের সময় শেষ হয়েছে।
সেই সন্ধ্যায় আমিই ছিলাম জিয়ার শেষ দর্শনার্থী।
জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়ার বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য উল্লেখ করেছেন খুশবন্ত সিং।
তিনি যখন জানতে চান বঙ্গবন্ধুর কোনো ঘাতককে কেন গ্রেফতার করা বা শাস্তির বিধান করা হয়নি, তাঁর এ প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য না করে জিয়া অস্থিরভাবে হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন বলে লিখেছেন খুশবন্ত সিং।
শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দু'জনের সঙ্গেই আমার অনেকবার সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার জানামতে শুধু বাঙালি মুসলিম হওয়া ছাড়া তাদের উভয়ের মধ্যে আর কোনো বিষয়ে মিল ছিল না।
মুজিবের উচ্চতা ছিল একজন বাঙালির গড় উচ্চতার চেয়ে বেশি, তাঁর ছিল শরীর মাংসল এবং পরনে থাকত ঢিলেঢালা পোশাক। জিয়া আকৃতিতে খাটো, তার শরীর হালকা-পাতলা হলেও গঠন চাবুকের মতো শক্ত। একবার তার দেহরক্ষী আমাকে বলেছিলেন, ‘তাঁর এক মুষ্টাঘাত কোনো মানুষকে বেহুঁশ করে ফেলতে পারে।’
মুজিব অত্যন্ত আন্তরিক, উষ্ণ-হৃদয়ের, বহির্মুখী এবং কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলেন; জিয়া সুদূরের, গম্ভীর এবং অল্প কথা বলেন।
মুজিবের দফতর মুঘল আমলের প্রাচ্যদেশীয় দরবারের মতো : কয়েক ডজন মানুষ কার্পেটের ওপর, সোফা ও চেয়ারের ওপর ছড়িয়ে বসে থাকে, দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। সারাক্ষণ একটির পর একটি টেলিফোন বাজে; তিনি ফোনে কথা বলার পাশাপাশি উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যিনিই তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাঁর সামনে টেবিলে রাখা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। পুরো বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ।
জিয়ার অফিস তার মতোই শীতল। ওয়েটিং রুমে তাঁর সচিব ও নিরাপত্তা কর্মীরা বিচক্ষণতার সঙ্গে আপনাকে মার্জিত কথাবার্তার মধ্যে ব্যস্ত রাখেন এবং তাদের সতর্ক দৃষ্টি খুঁজে ফিরে আপনার কাছে কোনো গোপন অস্ত্র আছে কিনা।
একসঙ্গে একজনের বেশি দর্শনার্থীকে তিনি স্বাগত জানান না এবং সময় মেনে চলেন স্টপওয়াচের মতো।
জিয়ার রুমে হুট করে অঘোষিতভাবে প্রবেশ করার সাহস কারও নেই।
কোনো টেলিফোনও বাজে না।
আপনার প্রশ্নগুলো বাতাসে জমে থাকবে;
জিয়াউর রহমানের নির্দিষ্ট-পরিমিত উত্তর আপনার জমাট প্রশ্নগুলোকে গলাতে পারবে না।
মুজিব আপনাকে আলিঙ্গন করবেন এবং দ্বিতীয় সাক্ষাতে আপনার তাঁর ‘পুরনো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করবেন।
জিয়া তার শীতল হাতে আপনার সঙ্গে হাত মেলাবেন এবং চিনতে পারার স্বীকৃতি হিসেবে অস্পষ্ট, ম্লান হাসবেন।
মুজিব নিজের সম্পর্কে স্বয়ং তৃতীয় পুরুষে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছেন’, এবং আপনার কাছেও অনুরূপ সম্বোধন আশা করবেন।
জিয়া কখনো তার মুখ খোলেন না, অথবা তার সঙ্গে কাউকে খুব ঘনিষ্ঠ হতে দেন না।
তিনি সবসময় ‘মিস্টার’, ‘প্রেসিডেন্ট,’ ‘স্যার’ ছিলেন।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার দুই বছর পর তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়।
সামরিক একনায়কদের ব্যাপারে আমার আপত্তি ও নেতিবাচক মনোভাব ছিল এবং এমন একজনের প্রতি ভিন্ন ধরনের বিতৃষ্ণা ছিল, যিনি মুজিবের ঘাতকদের শাস্তি বিধান করার পরিবর্তে তাদের কূটনৈতিক দায়িত্বে ন্যস্ত করার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন।
তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অতিবাহিত করা সপ্তাহে ঢাকার পরিবেশের যতটুকু দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, তাতে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি।
মাত্র কয়েক বছর আগেও যে এলোমেলো নগরীতে বিরাজ করছিল চরম বিশৃঙ্খলা, সেখানে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় গড়ে ওঠা শপিং সেন্টার ও মার্কেটগুলো দেখে সমৃদ্ধির সুস্পষ্ট লক্ষণ বোঝা যায়।
দেশটিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঢাকার বাইরে পল্লীগুলোকে আরও সবুজ, আরও পরিচ্ছন্ন এবং আমি আগে যেমন দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী মনে হয়েছে।
আমি জিয়াকে একথা বলার পর তাকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট মনে হয় এবং তিনি তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের সময় প্রলম্বিত করেন।
করিডোর দিয়ে আমার কয়েক গজ সামনে বিশালদেহী দু'জন দেহরক্ষীর অবস্থানের মাঝখান দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন।
তখনই আমি লক্ষ্য করলাম যে আকৃতিতে তিনি কতটা খাটো ছিলেন- পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি। জিয়া হাই-হিল জুতা পরতেন।
(খুশবন্ত সিং এর ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য রিডিকুলাস’ থেকে)
Monday, November 16, 2020
সৎসাহস আপনাকে বাঁচাবে; ঘাতকের কাছে আত্মসমর্পন কখনো নয়-সুমি খান
ঘাতক কখনো ক্ষমার ভাষা বোঝেনা,সেই বোধবুদ্ধি তার লুপ্ত- মনে রাখবেন, বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান!
Friday, September 18, 2020
উদ্বাস্তু : অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
আর দেরি নয়, বেরিয়ে পড় বেরিয়ে পড় এখুনি।
ভোররাতের স্বপ্নভরা আদুরে ঘুমটুকু নিয়ে
আর পাশে ফিরতে হবে না।
উঠে পড় গা ঝাড়া দিয়ে,
সময় নেই-
এমন সুযোগ আর আসবে না কোন দিন।
বাছবাছাই না ক’রে হাতের কাছে যা পাস
তাই দিয়ে পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে নে হুট ক’রে।
বেড়িয়ে পড়,
দেরী করলেই পস্তাতে হবে
বেরিয়ে পড়-
ভূষণ পাল গোটা পরিবারটাকে ঝড়ের মতো নাড়া দিলে।
কত দূর দিগন্তের পথ-
এখান থেকে নৌকা ক’রে ষ্টিমার ঘাট
সেখান থেকে রেলষ্টেশন-
কী মজা, আজ প্রথম ট্রেনে চাপাবি,
ট্রেন ক’রে চেকপোষ্ট,
সেখান থেকে পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-
ছোট ছোলেটা ঘুমমোছা চোখে জিঞ্জেস করলে,
সেখান থেকে কোথায় বাবা?
কোথায় আবার! আমাদের নিজের দেশে।
ছায়াঢাকা ডোবার ধারে হিজল গাছে
ঘুমভাঙা পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে উঠল।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাল সেই ছোট ছেলে,
দেখলে তার কাটা ঘুড়িটা এখনো গাছের মগডালে
লটকে আছে,
হাওয়ায় ঠোক্কর খাচ্ছে তবুও কিছুতেই ছিঁড়ে পড়ছে না।
ঘাটের শান চ’টে গিয়ে যেখানে শ্যাওলা জমেছে
সেও করুণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় যাবে?
হিজল গাছের ফুল টুপ টুপ ক’রে এখনো পড়ছে জলের উপর,
বলছে, যাবে কোথায়?
তারপর একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মত ধান হয়েছে-
লক্ষীবিলাস ধান-
সোনা রঙ ধরবে ব’লে। তারও এক প্রশ্ন- যাবে কোথায়?
আরো দূরে ছলছলাৎ পাগলী নদীর ঢেউ
তার উপর চলেছে ভেসে পালতোলা ডিঙি ময়ূরপঙ্খি
বলছে, আমাদের ফেলে কোথায় যাবে?
আমারা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু?
এ জন্মের কেউ নই? স্বজন নই?
তাড়াতাড়ি কর- তাড়াতাড়ি কর-
ঝিকিমিকি রোদ উঠে পড়ল যে।
আঙিনায় গোবরছড়া দিতে হবে না,
লেপতে হবে না পৈঁঠে-পিঁড়ে,
গরু দুইতে হবে না, খেতে দিতে হবে না,
মাঠে গিয়ে বেঁধে রাখতে হবে না।
দরজা খুলে দাও, যেখানে খুশি চলে যা’ক আমাদের মত।
আমাদের মত! কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
তা জানিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আছে কী?
সব আছে। অনেক আছে, অঢেল আছে-
কত আশা কত বাসা কত হাসি কত গান
কত জন কত জায়গা কত জেল্লা কত জমক।
সেখানকার নদী কি এমনি মধুমতী?
মাটি কি এমনি মমতামাখানো?
ধান কি এমনি বৈকুন্ঠবিলাস?
সোনার মত ধান আর রুপোর মতো চাল?
বাতাস কি এমনি হিজলফুলের গন্ধভরা
বুনো-বুনো মৃদু মৃদু?
মানুষ কি সেখানে কম নিষ্ঠুর কম ফন্দিবাজ কম সুবিধাখোর?
তাড়াতাড়ি করো, তাড়াতাড়ি করো-
ভূষণ এবার স্ত্রী সুবালার উপর ধমকে উঠল:
কী কত বাছাবাছি বাঁধাবাঁধি করছ,
সব ফেলে ছড়িয়ে টুকরো-টুকরো ক’রে এপাশে-ওপাশে বিলিয়ে দিয়ে
জোর কদমে এগিয়ে চলো,
শেষ পর্যন্ত চলুক থামুক ট্রেনে গিয়ে সোয়ার হও,
সোয়ার হতে পারলেই নিশ্চিন্তি।
চারধারে কী দেখছিস? ছেলেকে ঠেলা দিল ভূষণ-
জলা-জংলার দেশ, দেখবার আছে কী!
একটা কানা পুকুর
একটা ছেঁচা বাঁশের ভাঙা ঘর
একটা একফসলী মাঠ
একটা ঘাসী নৌকো-
আসল জিনিস দেখবি তো চল ওপারে,
আমাদের নিজের দেশে, নতুন দেশে,
নতুন দেশের নতুন জিনিষ-মানুষ নয়, জিনিস-
সে জিনিসের নাম কী?
নতুন জিনিসের নতুন নাম-উদ্বাস্তু।
ওরা কারা চলেছে আমাদের আগে-আগে-ওরা কারা?
ওরাও উদ্বাস্তু।
কত ওরা জেল খেটেছে তকলি কেটেছে
হত্যে দিয়েছে সত্যের দুয়ারে,
কত ওরা মারের পাহাড় ডিঙিয়ে গিয়েছে
পেরিয়ে গিয়েছে কত কষ্টক্লেশের সমুদ্র,
তারপর পথে-পথে কত ওরা মিছিল করেছে
সকলের সমান হয়ে, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে,
পায়ে-পায়ে রক্ত ঝরিয়ে-
কিন্তু ক্লান্ত যাত্রার শেষ পরিচ্ছেদে এসে
ছেঁড়াখোঁড়া খুবলে-নেওয়া মানচিত্রে
যেন হঠাৎ দেখতে পেল আলো-ঝলমল ইন্দ্রপুরীর ইশারা,
ছুটল দিশেহারা হয়ে
এত দিনের পরিশ্রমের বেতন নিতে
মসনদে গদীয়ান হয়ে বসতে
ঠেস দিতে বিস্ফারিত উপশমের তাকিয়ায়।
পথের কুশকন্টককে যারা একদিন গ্রাহ্যের মধ্যেও আনেনি
আজ দেখছে সে-পথে লাল শালু পাতা হয়েছে কিনা,
ড্রয়িংরুমে পা রাখবার জন্যে আছে কিনা
বিঘৎ-পুরু ভেলভেটের কার্পেট।
ত্যাগব্রতের যাবজ্জীবন উদাহরণ হয়ে থাকবে ব’লে
যারা এত দিন ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চড়েছে
সাধারণ মানুষের দুঃখদৈন্যের শরিক হয়ে
তারাই চলেছে এখন রকমারি তাকমার চোপদার সাজানো
দশঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে
পথচারীদের হটিয়ে দিয়ে, তফাৎ ক’রে দিয়ে
সমস্ত সামনেওয়ালাকে পিছনে ফেলে
পর-ঘর বিদেশী বানিয়ে।
হ্যাঁ, ওরাও উদ্বাস্তু।
কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে
কেউ উৎখাত আদর্শ থেকে।
আরো আগে, ইতিহাসেরও আগে, ওরা কারা?
ঐ ইন্দ্রপুরী-ইন্দ্রপ্রস্থ থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ের দিকে-
মহাভারতের মহাপ্রস্থানের পঞ্চনায়ক ও তাদের সঙ্গিনী
স্ব- স্বরূপ- অনুরূপা-
যুদ্ধ জয় ক’রেও যারা সিংহাসনে গিয়ে বসল না
কর্ম উদযাপন ক’রেও যারা লোলুপ হাতে
কর্মফল বন্টন করল না নিজেদের মধ্যে,
ফলত্যাগ করে কর্মের আদর্শকে রেখে গেল উঁচু ক’রে,
দেখিয়ে গেল প্রথমেই পতন হল দ্রৌপদীর-
পক্ষপাতিতার।
তারপর একে একে পড়ল আর সব অহঙ্কার
রূপের বিদ্যার বলের লোভের-আগ্রাসের-
আরো দেখাল। দেখাল-
শুধু যুধিষ্ঠিরই পৌছয়
যে হেতু সে ঘৃণ্য বলে পশু বলে
পথের সহচর কুকুরকেও ছাড়ে না।
Friday, September 11, 2020
ছাত্র ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ চাই- সুমি খান
আওয়ামী লীগের সমর্থন বা বিরোধিতা ভিন্ন বিষয়। তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে মেলানো হবে কেন?? সেটা কোন সুস্থ রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দর্শন হতে পারে না- এটুকু বোধ কি বর্তমান নেতৃত্বের নেই??
ঢাবি শিক্ষক বিএনপি নেতা- একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের পত্রিকা ইনকিলাব এবং জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখাতে বিএনপি নেতা মোরশেদ তার নেতা জিয়াকে 'মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে 'সপরিবারে ভারতে পলায়নকারী ' হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং যায় যায় দিন পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে 'জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিথ্যের চাষের অংশ হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন মোর্শেদ হাসান খান।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, 'আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে(?) চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও(?)। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে 'ত্রাতারূপে'(?) আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। "দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত"(??) এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। "
স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান লেখেন, 'দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে 'বাক-স্বাধীনতা' বলতে কিছুই ছিল না। '
একইভাবে ২০১৬ সালের ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘স্মৃতিময় জিয়া’ শিরোনামে এক লেখায়ও মোর্শেদ হাসান খান একই ধরনের বক্তব্য লিখেন।
তার বক্তব্য কি মিথ্যার বেসাতি নয়?? ষড়যন্ত্র মূলক নয়??
তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিল ছাত্রলীগ।
কিন্তু আমার প্রশ্ন,ছাত্রলীগ একা কেন প্রতিবাদ করবে?
এই দাবি কি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালীর নয়?
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অন্যায়, অপরাধ কখনো সমর্থনযোগ্য নয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সকল প্রগতিশীল শক্তি মাঠে নামবেন না কেন?
জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামের কলামে ইতিহাসবিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন মোর্শেদের লেখার প্রতিবাদ করে নি??
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। তাদের সাথে একাত্ম ছাত্র ইউনিয়ন ও!!
আজ ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সংগঠনের বিবৃতি প্রথম আলো, এনটিভি অনলাইন সহ অনেক মিডিয়া ছাপালো!
ভয়ঙ্কর এই ইতিহাস বিকৃতিকারীকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের দাবি করছে আমার তিন প্রজন্মের দায়িত্বশীল ভুমিকায় সমৃদ্ধ প্রাণের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ??
হায় রে রাজনীতির দুরাচার!!
কেন বাম নেতা কর্মীরা একাত্তরের ঘাতক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পুনর্বাসনকারী ঘাতক জিয়ার রাজনীতি লালন করবে??
এই রাজনীতি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তো নয়ই, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থনে লালিত।
ছাত্র ইউনিয়নের এই বিবৃতি দেশমাতৃকার প্রতি কতো বড়ো অসম্মান - সেই বোধ ও কি তাদের বিলুপ্ত??
ধিক্কার জানাই এমন বিএনপিপ্রেমী নেতৃত্বকে!
একে কখনো মুক্তচিন্তা বা freedom of speech বলে না। তাহলে তো পৃথিবীকে কোন অপরাধই নেই!
অপরাধীকে সমর্থন freedom of Speech?? হতে পারে না কখনো!
ইতিহাস বিকৃতিকারীকে সমর্থন করে ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করলো ছাত্র ইউনিয়ন।
রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরশাসক এবং ঘাতক জিয়া বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করেছে খালেদ মোশাররফ সহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে! সেসব ভয়াবহ ইতিহাস কি একক ভাবে শুধু আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে?
সেসব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব কি বাম দলগুলোর নয়??
জিয়ার ষড়যন্ত্রে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা যদি তর্কের খাতিরে বাদ ও দিই, জিয়ার ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কারাগারে জিয়ার পেটোয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে বর্বরভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের অসহায় পরিবার গুলোর হিসাব কখনো নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন??
খালেদার শাসনামলে জামাত বিএনপির বর্বর নির্যাতনে নিহতদের কতোটা খবর নেন তারা? কখনো প্রতিবাদ করেছেন??
বরং জিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধের 'মহানায়ক' সাজানোর ষড়যন্ত্র কে সমর্থন দিচ্ছে!!
বলিহারি এসব নষ্ট রাজনীতির!! দেশকে ভালোবেসে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরুন আপনারা। গঠনমূলক প্রতিবাদে গর্জে উঠুন।
ইতিহাস বিকৃতকারীর প্রচলিত আইনে সাজা দাবি না করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করবেন কেন?? কোন্ উদ্দেশ্যে??
এই ছাত্র ইউনিয়নের জন্য আমার ছাত্রজীবন আমি উৎসর্গ করি নি।
এবং এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বকে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে মনে করি না!
ধিক্কার জানাই কোন 'প্রগতিশীল শক্তি'র এমন সিদ্ধান্তের!!
একই সাথে এমন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ দাবি করছি!!
সুমি খান, সকাল ১১টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০