Saturday, January 11, 2014

আত্মদানের ৮৯ বছর; মাষ্টার 'দা, তোমার দেশ আজো হিন্দু-মুসলিম প্রশ্নে রক্তগঙ্গায় ভাসছে- সুমি খান

'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ,ভয় নাই ওরে ভয় নাই!নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান-ক্ষয় নাই  তার ক্ষয় নাই!"


 লাল সালাম মাষ্টার'দা সূর্যসেন !! বীর চট্টগ্রামের সূর্যসন্তান মাস্টার’দার প্রতি তাঁর আত্মদানের ৮৯ তম দিবসে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। 
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রির ৬৫ জন বিপ্লবী  সহযোদ্ধা নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে পরাধীন অবিভক্ত  ভারতকে চারদিন স্বাধীন রেখেছিলে তুমি । আজ তোমার জয়ে স্বাধীন তোমার বাংলা, তুমি দেখে যেতে পারো নি। তোমার উত্তরসূরিরা তোমার আত্মদান বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে। তোমার বাংলায়  অসাম্প্রদায়িক বাংলা প্রতিষ্ঠার লড়াইযে সোচ্চার তোমার উত্তরসূরীরা। চিরকাল এ বাংলায় অন্যায় অসত্য এবং সাম্প্রদায়িক অন্ধকারের শক্তির পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক ,মানবতার বাংলার ঝান্ডা উড়বে।, যার ভিত গড়ে দিয়েছো তুমি এবং তোমার অপ্রতিরোধ্য সহযোদ্ধা বিপ্লবীরা। 
 মাতৃভূমিকে মুক্ত করার সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের সফলতায় ভীত বৃটিশ সরকার ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে  মাষ্টার'দা সূর্যসেনকে হত্যা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। 
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বর্বর ব্রিটিশ রাজের পুলিশ বাহিনী মাষ্টার'দা র পবিত্র দেহ বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত করেছিলো। সেদিন প্রাণহীন মাস্টার'দা সূর্যসেন ও ব্রিটিশ রাজের কাছে মূর্তিমান আতংক ছিল, এখনো অন্ধকারের শক্তি মাস্টার’দার সাহস ও দেশপ্রেম কে ভয় পায় !!
এ কারণে এখনো এদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি উন্মাদ। সমাজ, সভ্য়তা ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িক বিষে জর্জরিত।
মাষ্টার 'দার জীবনী বারবার পড়তে হবে আমাদের; জানাতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে! সারা দেশে তার ভাস্কর্য স্থাপন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে বীরগাথা!
মাষ্টার'দা  সূর্যসেন। ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের অমর নায়ক। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনসহ বহু বিপ্লবের অধিনায়ক। পুরো নাম সূর্য কুমার সেন। সংক্ষেপে সূর্যসেন নামে অধিক পরিচিত। 'মাষ্টার 'দা' নামে সহযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন। সূর্যকুমার সেন, ডাকনাম কালু, যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত । ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর ব্যক্তিত্ব।

’ হিন্দু- না ওরা মুসলিম?  সাম্প্রদায়িক শক্তি এই প্রশ্ন দিয়ে হিংসা বিদ্বেষ বিভাজনে পরিবার পরিবেশ ,সমাজ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।


২০১৪ সালে মাস্টার'দার আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মাষ্টার'দার বীরগাথা

 মাষ্টার'দার বীরত্বের পথ বেয়ে আমরা আজ পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত। 
স্বাধীন দেশে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে আত্মপরিচয়  বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পেরেছি মাষ্টার'দার আত্মদানের পথ বেয়ে! 
  এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদেন এবং হাসিমুখে ফাঁসিতে আত্মদান করেন।














২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারী  মাস্টার'দার আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন যাঁরা  ইরাবান আলীম অতুলন, ঋতবান আলীম গহন, আলেক্স  আলীম সহ চট্টগ্রাম বাসী



বাংলাদেশে তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সূর্য সেনের স্মরণে বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে “মাস্টারদাসূর্য সেন মেট্রো স্টেশন”






































সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজমনি সেন এবং মাতার নাম শশী বালা সেন। রাজমনি সেনের দুই ছেলে আর চার মেয়ে। সূর্য সেন তাঁদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল।চার মেয়ের নাম বরদা সুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতি ও প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমণি সেনের কাছে মানুষ হয়েছেন। সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ছাত্র এবং ধর্মপ্রাণ গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন।
১৯১৬ সালে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি এই কলেজ়ে তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। 
 মাস্টার’দা সূর্য সেন ১৯১৮ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন। 
৪৯নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের নগেন্দ্রনাথ সেন ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে এসে সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও চারুবিকাশ দত্তের সাথে দেখা করেন। 
সূর্য সেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অম্বিকা চক্রবর্তী পাশাপাশি গ্রামের ছাত্র হিসেবে ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের পরিচিত ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষের দিকে অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে গোপন বিপ্লবী দল গঠন করা হয়। 
এখানে উল্লেখ্য, শুরুতে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দল একটিই ছিল। তারা বাংলার প্রধান দু'টি বিপ্লবী দল "যুগান্তর" এবং "অনুশীলন"- কোনটির সাথে একেবারে না মিশে স্বতন্ত্র কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 
বিপ্লবী নেতা মাস্টার’দা সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী তখন চট্টগ্রাম শহরের দেওয়ানবাজার দেওয়ানজী পুকুরপারে 'সাম্য আশ্রম' প্রতিষ্ঠা করে ওখানে থাকেন।সেখানে গোপনে বিপ্লবীরা জমায়েত হয়। 
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের অন্যতম নেতা চারুবিকাশ দত্ত তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে "অনুশীলন" দলের সাথে যুক্ত হন। এভাবে চট্টগ্রামেও বাংলার অন্যান্য জেলার মত দু'টি বিপ্লবী দল গড়ে ওঠে। দুই দলে বিভক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রামে যে বিপ্লবী দলটি স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কংগ্রেসের প্রকাশ্য আন্দোলনে কোলকাতার "যূগান্তর" দলের সঙ্গে সহযোগিতা করত, সে দলের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ছিলেন সূর্য সেন; সহসভাপতি- অম্বিকা চক্রবর্তী; শহর সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিংহ; গ্রামের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন  নির্মল সেন।  লোকনাথ বলকে ছাত্র আন্দোলন ও ব্যায়ামাগার গঠন সহ বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। 
অনুরূপ সেন বিপ্লবীদলের সংবিধান লিখলেন এবং তাঁকে ও নগেন্দ্রনাথ সেনকে কলকাতার অন্য দলগুলোর সাথে যোগাযোগ এবং অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়।

নাগরখানা পাহাড় খন্ডযুদ্ধ
১৯২০ সালে গান্ধীজী- কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে অনেক বিপ্লবী এই আন্দোলনে যোগ দেন। গান্ধীজীর অনুরোধে বিপ্লবীরা তাদের কর্মসূচি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখেন।সূর্য সেন অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিলেন। 
চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র বিপ্লবী অনন্ত সিংহ ছাত্র ধর্মঘট পরিচালনা করার দায়ে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হন।
মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে বিপ্লবী দলগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। তখন চট্টগ্রাম কোর্টের ট্রেজারী থেকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন নিয়ে যাওয়া হতো। 
১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস  সড়ক এর মোড়ে সূর্য সেনের গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে  রেল শ্রমিকদের বেতন ১৭,০০০ টাকার বস্তা ছিনতাই করেন। ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন পুলিশ খবর পেয়ে বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে বিপ্লবীদের খন্ডযুদ্ধ হয় যা "নাগরখানা পাহাড় খন্ডযুদ্ধ" নামে পরিচিত। সেই সম্মুখযুদ্ধের পর গ্রেফতার হন মাস্টার'দা সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। 

রেলওয়ে ডাকাতি মামলা শুরু হয় সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। অনন্ত সিং  এবং গণেশ ঘোষের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবি ছিলেন। সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী এ মামলা থেকে ছাড়া পেয়ে যান। গ্রেফতার করার পর বিপ্লবীদের উপর নির্যাতনের কারনে কলকাতা পুলিশ কমিশনার টেগার্টকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে বিপ্লবীরা। এ পরিকল্পনার কথা পুলিশ আগে থেকেই জানতে পারে। এ কারনে ২৫ অক্টোবর ১৯২৪ সালে গ্রেফতার হন গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং সহ আরো কয়েকজন। পুলিশকে বার বার ফাঁকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর সূর্য সেন কলকাতার ওয়েলিংটন স্ট্রীটে গ্রেফতার হন। বন্দী হবার পর তাঁকে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়। পরে বোম্বের রত্নগিরি জেলে পাঠানো হয়, সেখান থেকে বেলগাঁও জেলে। ১৯২৭ সালে নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং মুক্তি পান। আর ১৯২৮ সালের শেষভাগে সূর্য সেন ও গণেশ ঘোষ জেল থেকে ছাড়া পান।
বিপ্লবী ভাবধারায় দীক্ষিত সূর্য সেন দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকে একমাত্র তপস্যা হিসেবে নিয়েছিলেন। তাই তিনি বিয়েবিরুদ্ধছিলেন। কিন্তু  স্নাতক পাশ করে চট্টগ্রামে আসার পর থেকেই তাঁর অভিভাবকরা বিয়ের কথা তোলেন। এক পর্যায়ে তাঁর বড় ভাই শিক্ষক চন্দ্রনাথ সেন (সহোদর নয়) ও অন্যান্য আত্মীয়দের বিশেষ অনুরোধে ১৯১৯ সালে তিনি চট্টগ্রামের কানুনগো পাড়ার নগেন্দ্রনাথ দত্তের ষোল বছরের কন্যা পুষ্পকুন্তলা দত্তকে বিয়ে করেন। আত্মীয়-স্বজনের চাপে বিয়ে করলেও মাস্টারদার মনে এ ধারণা ছিল যে, বিবাহিত জীবন তাকে কর্তব্যভ্রষ্ট করবে, আদর্শচ্যুত করবে। স্ত্রীর সংগে একদিনও তিনি কথা বলেন নি।  হিন্দুপ্রথামতে  বিবাহের তৃতীয় দিনে ফুলশয্যা।সেদিন মাস্টার'দা তাঁর বৌদিকে বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন স্ত্রীর সংগে সহবাসে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য।সেদিনই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে আসেন এবং স্ত্রীর সাথে আর কোনদিন দেখা করেন নি মাস্টার’দা। 
১৯২০ সালে গান্ধীজী স্বরাজ এনে দেওয়ার জন্য বিপ্লবীদের কাছ থেকে এক বছর সময় চেয়ে নেন। তৎকালীন বিপ্লবীরা অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী না হলেও গান্ধীজির কথায় অনেকেই সহযোগিতা করেছিলেন।ঘোষিত এক বছর সময়সীমার মধ্যে অহিংস আন্দোলন ভারতের স্বরাজ আনতে ব্যর্থ হলে বিপ্লবীরা আবার সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নেন।
 অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মাস্টার'দা জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলেন এবং নন্দনকাননের প্রাথমিক  বিদ্যালয়ে  শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন। তিনি খ্যাত হন 'মাস্টার'দা 'নামে। এই বিদ্যালয়টিই পরে তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরে একপ্রান্তে বাটালি পাহাড় এলাকায় সরকারি রেলের টাকা লুণ্ঠন করেন বিপ্লবী রা। এই লুণ্ঠনে অংশগ্রহণ করেন অনন্ত সিং, দেবেন দে ও নির্মল সেন। অম্বিকা চক্রবর্তী ও দলিলুর রহমান (পরবর্তীতে তিনি বিশিষ্ট চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন) রেল ডাকাতির সতের হাজার টাকা নিয়ে অস্ত্র কেনার জন্য কলকাতায় চলে যান। সে সময় শুলকবহর এলাকায়  বিপ্লবীদের সদর দপ্তর ছিল। ২৪শে ডিসেম্বর এই দফতরে পুলিশ হানা দেয়। এখান থেকে তাঁরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। তাঁরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।  পালানোর পর মাস্টার'দা প্রথমে নগরকানা পাহাড়ে আশ্রয় নেন। 
পুলিশের হাতে ধরা পড়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলে মাস্টারদা, অম্বিকা চক্রবর্তী ও রাজেন দাস তাঁদের পকেটে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। অন্যান্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মৃতপ্রায় মাস্টারদা ও অম্বিকা চক্রবর্তী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।  পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়েছিলেন, কিন্তু ভালো থাকার সময় সীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে কার্যকারিতা হারিয়েছিল। ফলে এই তীব্র বিষ খেয়ে ও তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসার পর তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ডাকাতির মামলা রুজু করেছিল।  মাষ্টার'দা সহ বিপ্লবীদের পক্ষে ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র্র মোহন  সেন এই মামলা পরিচালনা করেন এবং প্রায় ৯ মাস কারাবন্দী থাকার পর মামলা থেকে তাঁরা খালাস পান।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় একটি অস্ত্রলুটের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মাস্টারদার নাম শোনা যায়। এই কারণে ১ নং বেঙ্গল অর্ডিনেন্স ঘোষণা করে সারা বাংলায় বিপ্লবীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়। শুধু  ২৫ অক্টোবর তারিখেই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২০০ বিপ্লবী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় গ্রেফতার হন নেতাজী সুভাষ, অনিলবরণ রায় প্রমুখ নেতারাও।
 চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের নিয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মাস্টারদা কলকাতা শোভাবাজার এলাকায় আশ্রয় নেন। ওই সময় তাঁরা কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ নিতেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই নভেম্বর সেখানে পুলিশ হানা দেয়। সূর্যসেন গায়ের জামা খুলে খালি গায়ে একটা অপরিষ্কার ময়লা গামছা কাঁধে ফেলে চায়ের কেতলি হাতে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন। পুলিশ তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সাদাসিধেভাবে বলেন, বাবু লোকদের জন্য চা আনতে যাচ্ছি। পুলিশের দারোগা কিছুক্ষণ জেরা করার পর সন্দেহ করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়। 
এর প্রায় একবছর পর ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক মেস থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ‘মুরারিপুকুর ষড়যন্ত্র মামলা’।
এ মামলায় ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দু’বছর তাঁকে মেদিনীপুর প্রেসিডেন্সি জেল, পুনার রায়েরোড়া জেল ও বম্বের রত্নগিরি জেলে কারাবাস করতে হয়।
১৯২৮ সালের শেষের দিকে তাঁর স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা মূমূর্ষু থাকার সংবাদ পেয়ে সূর্যসেন তাঁকে দেখতে আসবার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এই আবেদন মঞ্জুর করা হলে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।তাঁকে নজরবন্দী রাখা হয়।  মাস্টার'দা বাড়ি পৌঁছার পর তাঁর স্ত্রী পুষ্প কুন্তলা মৃত্যুবরণ করেন।এরপরই মাস্টার'দা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তিন মাস শয্যাশায়ী থাকলেন। এ সময় একজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট তাকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন এবং এর বিনিময়ে সংসারের খরচ ব্রিটিশ সরকার চালাবে বলে জানানো হয়।মাস্টার'দা সূর্যসেন তার কোনো জবাব দেন নি। সূর্যসেনের দাদা চন্দ্রনাথ সেন বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন। এরপর একদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয় েসূর্যসেন পালিয়ে যান।কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন।
১৯২৯ সালের প্রথম দিকে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় সূর্য সেনের দলের উদ্যোগে চারটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।১৯৩০ সাল থেকেই তাঁর উদ্যোগে ভবিষ্যৎ সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়।

এরপর থেকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। এর চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল। ১৮ এপ্রিল ১৯৩০, শুক্রবার রাত ৮টা বিদ্রোহের দিন হিসাবে ঠিক হয়। পরে তা দশটা করা হয়। চারটা বাড়ি হতে চারটা দল আক্রমণের জন্য বের হয়। সে রাতেই ধুম রেলস্টেশনে একটা মালবহনকারী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। একদল বিপ্লবী আগে থেকেই রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে নেয়। ফলে চট্টগ্রাম সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্য একটি দল চট্টগ্রামের নন্দনকাননে টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে। হাতুড়ি দিয়ে তারা সব যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে দেয় এবং পেট্রোল ঢেলে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আরেকটি দল পাহাড়তলীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে অস্ত্রাগার দখল করে নেয়। উন্নতমানের রিভলবার ও রাইফেল গাড়ীতে নিয়ে অস্ত্রাগারটি পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়। তবে সেখানে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয়। ৬৫ জন যোদ্ধা নিয়ে প্রায় রাত দশটার দিকে আক্রমণ করে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে অবস্থিত অস্ত্রাগার দখল করেন তাঁরা। তখন তাঁদের পরনে ছিল সেনাবাহিনীর পোষাক। তাঁরা ব্যবহার করেছিলেন কয়েকটি রিভলবার এবং সাধারণ বন্দুক। অস্ত্রাগার ভেঙে তাঁরা মাস্কেট্রি রাইফেল, রিভলবার এবং কার্তুজ লাভ করেন। এই আক্রমণের শুরুতেই তাঁরা টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছিলেন। ফলে আক্রমণের সময়, ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরের অন্য প্রান্তের সৈন্যদের কাছে এই আক্রমণের যথার্থ সংবাদ পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এই সময় বিপ্লবীরা এত দ্রুত আক্রমণ করে দখল করে নেয় যে, সার্জেন্ট ব্লাকবার্ন, কলোন, সার্জেন্ট মেজর ফেরেল-সহ অনেক অফিসার প্রতিরোধ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। বিপ্লবীরা সফলভাবে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন এবং রেল চলাচল বন্ধ করে দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী পুলিশ অস্ত্রাগারের এবং লোকনাথ বাউলের নেতৃত্বে দশজনের একটি দল সাহায্যকারী বাহিনীর অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এই দুঃসাহসী কাজের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ছিলেন বিপ্লবের স্বপ্নপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেন।

 এতে ব্রিটিশ শাসকেরা ভয় পেয়ে যায়। তারা বুঝতে পারেবাংলা মায়ের সন্তানেরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্লো,  প্রায় দেড়শ বছরের মিথ্যা গৌরব ধুলোয় মিশে যায়। 

বিপ্লবীদের কাছে ব্রিটিশ আর্মি পরাজিত হয়ে পিছু হঠে যায়। সফল অভিযানের পর বিপ্লবী দলটি পুলিশ অস্ত্রাগারে সমবেত হয়ে মাস্টারদা সূর্য সেনকে মিলিটারি স্যালুট প্রদান করে। এ সময় সূর্য সেন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করেন। এই আক্রমনে অংশ নেয়া বিপ্পবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষনা দেন। 

মাস্টার’দা তাঁর ঘোষনায় বলেন:"The great task of revolution in India has fallen on the Indian Republican Army. We in Chittagong have the honour to achieve this patriotic task of revolution for fulfilling the aspiration and urge of our nation. It is a matter of great glory that today our forces have seized the strongholds of Government in Chittagong…The oppressive foreign Government has closed to exist. The National Flag is flying high. It is our duty to defend it with our life and blood". 

 ব্রিটিশ পরাধীনতা থেকে বীর চট্টগ্রাম মুক্ত ছিল চারদিন। কিন্তু এরমধ্যে বিপ্লবীদের খাদ্যসংকট দেখা দিল।সূর্য সেন সহ অন্যদের কচি আম, তেঁতুল পাতা, কাঁচা তরমুজ এবং তরমুজের খোসা খেয়ে কাটাতে হয়। সূর্য সেন সহ ছয়জন শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবীকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার ৫,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষনা করে।

 ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল বিপ্লবীরা যখন জালালাবাদ পাহাড়ে ( বর্তমানে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পাহাড়) অবস্থান করছিল সে সময় সশস্ত্র ইংরেজ সৈন্যরা তাঁদের আক্রমণ করে। দুই ঘন্টার প্রচন্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন নিহত হয়। জালালাবাদ যুদ্ধের পর বিপ্লবী নেতাদের ধরার জন্য রেলস্টেশন, স্টীমারঘাট থেকে শুরু করে সব জায়গায় অভিযান চলছিলো। বিপ্লবীরা তখন বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে আত্মগোপন করেছিলো।

মাস্টার’দা সূর্য সেন ১৬ জন বিপ্লবীকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে ছিলেন। এর মধ্যে অনন্ত সিং পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দেন এবং কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে এদের বিরুদ্ধে অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলা শুরু করে। মামলা শুরু হওয়ার পর অসুস্থ অম্বিকা চক্রবর্তী পটিয়া থানার চক্রশালা গ্রামে গ্রেপ্তার হন। অম্বিকা চক্রবর্তী এবং সেসময় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য বিপ্লবীদের নিয়ে দ্বিতীয় অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলা শুরু হয়। প্রায় ১৯ মাস বিচারের পর ১৯৩২ সালের ১লা মার্চ অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলার রায়ে অনন্ত সিং, লোকনাথ বল এবং গনেশ ঘোষসহ ১২ জনকে দ্বীপান্তর বাসের আদেশ দেয়া হয়। অপর মামলায় অম্বিকা চক্রবর্তীর প্রাণদন্ডের আদেশ হয়, পরে হাইকোর্টে আপিলের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। 

রায়ের পর সূর্য সেনকে ধরার জন্য পটিয়া এবং গোমদন্ডীতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। ব্রিটিশ সরকার ৫০০০টাকার দ্বিগুণ ১০,০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে মাস্টার’দা কে গ্রেফতার করবার জন্যে।১৯৩২ সালের ১৩ জুন রাত ৯টায় পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তাঁকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরনকে গুলি করে সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন কিন্তু নির্মল সেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

 ব্রিটিশ সৈন্যরা সশস্ত্র যুদ্ধে মাস্টার'দার বাঙ্গালী সহযোদ্ধাদের কাছে  গোহারা হেরে ইংরেজ সরকার  মাস্টার’দা কে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে।  সেই পুরস্কারের লোভে ১৯৩৩ সালে আত্মগোপনে তাঁর বাড়িতে অবস্থানের সময় মাস্টার'দার প্রতিবেশী নেত্র সেন বিশ্বাসঘাতকতা করে মাস্টার’দা কে ধরিয়ে দেন পুলিশের হাতে ।ধরা পড়েন বিপ্লবী মাস্টার'দা সূর্যসেন। 

মাস্টার'দা কে ধরিয়ে দেয়ার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বিশাল আকৃতির মাছ কিনে  এনে  রান্না করে খাওয়ার সময়ে সেই মাছের মাথার পাশেই বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেনের খন্ডিত মস্তক পড়ে থাকে। মাস্টার'দা কে ধরিয়ে দেবার দন্ড এভাবেই ভোগ করতে হয় বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেনকে।

১৯৩৩ সালের মার্চে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। প্রতিবারই ফাঁস হয়ে যায় তাদের গোপন পরিকল্পনা। 
সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তকে বিচারের জন্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। 
১৪ আগস্ট ১৯৩৩ সালে সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনাল সূর্য সেনকে ১২১ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করে। ওই একই ধারায় তারকেশ্বর দস্তিদারেরও প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়। কুমারী কল্পনা দত্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।সূর্য সেনকে কনডেম সেলে কড়া পাহারায় নির্জন কুঠুরিতে রাখা হত। 

ফাঁসিতে দন্ডিত হবার আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে সূর্য সেন পেন্সিলে লেখা একটি বার্তা পাঠান। ধরে নেওয়া হয় এটি জীবদ্দশায় মাস্টারদার শেষ চিঠি। সে বার্তায় তিনি লেখেন “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা”। তাঁর ভাষায় “ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো’।
সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ তাদের আত্মীয় স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী পোড়ানোও হয়নি। ফাঁসির পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে তৎকালীন ৪ নম্বর স্টিমারঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহের বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন কোনো স্থানে ফেলে দেয়া হয়।
অস্ত্রাগার লুন্ঠন  মামলায় ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে মামলার রায় ঘোষনা করে। এবং ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারী তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। 
অস্তমিত হয় বীরত্বের মহান সূর্য! 

যিনি রচনা করে গেছেন এমন ইতিহাস  যা চিরদিন বাঙ্গালীর শৌর্য আর গৌরবের প্রমাণ হয়ে জ্বলজ্বল করবে বিশ্ববাসীর কাছে, নিপীড়িত মানুষের অন্তরে !!মাষ্টার দা সূর্যসেন চিরজীবী হোন।

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল- 

"আমার শেষ বাণী – আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার 
বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো সময়।
কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্র্যহীন আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বন্ধুরা – এগিয়ে চল, এগিয়ে চল – কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোনো দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলধা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদিমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।
আমাদের সংগঠনে বিভেদ না আসে– এই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে।বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক বন্দেমাতরম্।
চট্টগ্রাম কারাগার, ১১ জানুয়ারি ১৯৩৪ সকাল ৭টা।"


পরিশেষে বলতে হয়,  মাষ্টার'দা,  আপনার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আজ  'সংখ্যালঘু- সংখ্যাগুরু' প্রশ্নে সন্ত্রাস আর হত্যায় রক্তাক্ত! তবু আমরা বিশ্বাস করি,  স্বাধীনতার পতাকা হাতে সাম্য  আর পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য আপনার বীরত্বপূর্ণ লড়াই নতুন প্রজন্মের চেতনায় অগ্নিমশাল জ্বালাবেই।   মাস্টারদা সূর্যসেন অমর . চিরজীবী । মাষ্টার'দা, আপনার আত্মোৎসর্গের এই দিনে জানাই প্রণতি আর  শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রত্যাশা করি আমাদের নতুন প্রজন্ম আপনার আদর্শে দীক্ষা নেবে-  আপনার দীক্ষা আপনার আত্মদান ব্যর্থ হতে পারে না!
শত প্রণাম তোমার চরণে মাস্টার'দা সূর্য সেন!!!!

১২ জানুয়ারী ,২০১৪
পুনলিখন-১২ জানুয়ারী,২০২৩ 
সুমি খান, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
মাস্টার’দা সূর্যসেন ফাউন্ডেশন
সূর্য  মানসিক স্বাস্থ্যসহায়তা ও সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট

Thursday, January 9, 2014

আগামী সরকারের জন্য ১০ নম্বর বিপদ সংকেত: আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী


৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনটা কেমন কাটল? রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, 'ভালোয় মন্দে আলোয় আধারে গিয়েছে মিশি।' এই নির্বাচন গণতন্ত্রের ব্যাকরণসম্মতভাবে হয়নি। কিন্তু গণস্বার্থ ও স্বাধীনতার পরিপূরকভাবে হয়েছে। এই নির্বাচনের বৈধতা হয়তো সীমাবদ্ধ, কিন্তু নৈতিকতা নয়। নৈতিক দিক থেকে এই নির্বাচনটির অনুষ্ঠান ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলা, তার স্বাধীনতার আদর্শ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এই নির্বাচনের বিকল্প ছিল দেশে গণতন্ত্রের মুখোশে জঙ্গিবাদের প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের আবার অঘোষিতভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক কলোনিতে পরিণত হওয়া। যার পরিণাম ফল হতো মার্কিন ড্রোন হামলার সম্প্রসারিত এলাকা হওয়া।

এই সত্যটি এখন এক শ্রেণীর মতিভ্রষ্ট সম্পাদক, সাংবাদিক, টক শোর বক্তা, সুধীসমাজের নেতা নিজেদের স্বার্থে অথবা অপরের স্বার্থে অস্বীকার করতে পারেন, কিন্তু ইতিহাস একদিন সাক্ষ্য দেবে, শেখ হাসিনা একজন নারী রাজনীতিক ও সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুসারী হয়েও এই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যে অসম সাহস ও অটল মনোবলের পরিচয় দিয়েছেন, তা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গণতন্ত্র ও গণরাজনীতিকে সুরক্ষা দিয়েছে।

বিভিন্ন ফ্রন্টে এত শত্রুর বিরুদ্ধে এত কম লোক যুদ্ধের জন্য দাঁড়িয়েছে- এমন নজির সাম্প্রতিক বিশ্বে বিরল। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ সেই নজির স্থাপন করেছে। ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি বলেছেন, 'গণতন্ত্র কেবল মেষশাবক হলে টিকে থাকতে পারত না। আত্মরক্ষার জন্য তাকেও মাঝেমধ্যে বাঘের মূর্তি ধারণ করতে হয়।' 
আমার মতে, বাংলাদেশকে বিএনপির সাম্প্রদায়িকতা ও জামায়াতের হিংস্র ধর্মান্ধতা থেকে রক্ষার জন্য হাসিনা সরকার যদি সত্য সত্যই আসল বাঘের মূর্তি ধারণ করত, তাহলেও আপত্তি করার কিছু ছিল না।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলে যে নতুন সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে এবং অনতিকাল পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন সরকার গঠিত হবে, তাকে আগাম অভিনন্দন জানাই। প্রার্থনা করি, এবারের নির্বাচনের নৈতিকতার শক্তিতে তারা যেন বৈধতার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এবং দেশ ও জাতিকে শুধু সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করা নয়, প্রকৃত সুশাসন (good governance) উপহার দিতে পারে।

গত পাঁচ বছর মহাজোট সরকার দেশের জন্য অভূতপূর্ব উন্নয়নের কাজ সমাধা করেও যে জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি, তার বড় কারণ, কিছু যোগ্য মন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রিসভায় অসংখ্য অযোগ্য, অসৎ ও অনভিজ্ঞ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এক বিরাটসংখ্যক আওয়ামী এমপির দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সন্ত্রাসে তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া। ফলে শেষদিকে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, এই শ্রেণীর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনরোষের ভয়ে যেতে পারতেন না।

২০০৮ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় দফার মন্ত্রিসভায় সদস্যদের নামের তালিকা দেখেই যেমন কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলাম, আজও তেমনি আগামী সরকারের সদস্যদের নামের তালিকা দেখার আগেই আরো বেশি কঠোর ভাষায় শেখ হাসিনাকে সতর্ক করতে চাই। কারণ এবার যদি মন্ত্রিসভা গঠনে বা উপদেষ্টা নিয়োগে তিনি আগেরবারের নীতি অনুসরণ করেন, তাহলে তা হবে নিজের জন্য, তাঁর সরকারের জন্য ও তাঁর দলের জন্য 'ফ্যাটাল মিসটেক' বা চূড়ান্ত ভুল।

শেখ হাসিনা আমার চেয়েও ভালো করে জানেন, এবারের নির্বাচন দুটি গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে নির্বাচনযুদ্ধ ছিল না। ছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের নব্য দোসরদের মরিয়া হয়ে ক্ষমতা দখলের সন্ত্রাস ও বর্বরতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির প্রতিরোধ। ফলে শেখ হাসিনাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বীকৃত কোনো কোনো পন্থা এড়িয়ে চলতে হয়েছে। তাতে দেশপ্রেমিক জনগণের আপত্তি থাকার কথা নয়। যদি কারো আপত্তি থাকে আগামী সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে নৈতিকতার ভিত্তি দৃঢ় করে তা শেখ হাসিনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। আর এই নৈতিকতার ভিত্তি জোরদার করার একমাত্র পথ জনগণকে তাদের পছন্দসই একটি সৎ ও যোগ্য সরকার এবং সেই সরকারের সুশাসন উপহার দেওয়া।

নির্বাচন তরীটি কোনোমতে ঠেলেঠুলে তীরে নিয়ে আসতে পারায় আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা যেন না ভাবেন, তাঁরা বিপদ ও সংকটমুক্ত হয়েছেন। সামনে আরো বড় বিপদ ও বড় লড়াই অপেক্ষা করছে। আমি আগেও বলেছি, জনসমর্থন না থাকলে কেবল সন্ত্রাস দ্বারা কোনো আন্দোলনে সাফল্য লাভ করা যায় না। বিএনপি-জামায়াতও তাই সাফল্য লাভ করতে পারেনি। এ জন্য নির্বাচনের পরও তারা থেমে থাকবে, তা নয়। সর্বশক্তি নিয়ে তারা মরণছোবল দেওয়ার চেষ্টা করবে।

এই চেষ্টা করার প্রমাণ, নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি হরতাল ডেকেছে। এই হরতালে জনগণের সমর্থন না থাকলেও তারা সন্ত্রাসী জামায়াতিদের কাজে লাগাচ্ছে। আবার অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও নির্যাতন দ্বারা প্রশাসন অচল করতে না পারুক, দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় বাড়িয়ে তুলবে। এই সন্ত্রাস যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে জনগণের ধৈর্যের সীমা ভেঙে যাবে। তারা সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে এবং বিক্ষুব্ধ হবে। চাইলে কি তাদের একটা বড় অংশ সন্ত্রাসমুক্ত হওয়ার আশায় সন্ত্রাসীদের সমর্থন জানাতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে আগামী সরকার চরম বিপদে পড়বে। তাদের জন্য রাজনৈতিক আবহাওয়া দপ্তরের দশ নম্বর বিপদ সংকেত আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি।

এই বিপদ সংকেত অগ্রাহ্য করা শেখ হাসিনা ও তাঁর আগামী সরকারের জন্য হবে চরম ভ্রান্তি। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে তারা নির্বাচনবিরোধী সন্ত্রাসের মোকাবিলা করেছে। এটা ছিল তাদের জন্য সাত, আট বা ৯ নম্বর বিপদ সংকেত। এখন নির্বাচনের পর তাদের জন্য যে বিপদ সংকেত দেখা যাচ্ছে, তা দশ নম্বরের। এই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ, পুলিশ ও র‌্যাব মাঠে নামিয়ে কাজ হবে না। জামায়াতি সন্ত্রাসীরা এখন অনেক বেশি সশস্ত্র ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তারা এতটাই সংগঠিত যে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক করাত এনে বড় বড় গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে। কলকাতায় একটি কাগজে খবর দেখেছি, এই জামায়াতি সন্ত্রাসীরা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলে গিয়ে মাওবাদী ও সাবেক নকশালপন্থী সন্ত্রাসীদের কাছে বোমা বানানো ও অন্যান্য সন্ত্রাসের ট্রেনিং নিচ্ছে। ভারত সরকার সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও তাদের ঠেকাতে পারছে না।

বাংলাদেশের আগামী সরকারকেও তাই কৌশল পাল্টাতে হবে। এই কৌশলটি হবে শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা নয়, এই সন্ত্রাস দমনের জন্য জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা। গত পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত যেমন তাদের সন্ত্রাসের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি; তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারও পারেনি এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার ছিল ব্যর্থ। অধিকাংশ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপি ছিলেন জনগণের কাছে দুর্নীতি ও অন্যান্য অসাধু কার্যকলাপের জন্য বিতর্কিত, এমনকি নিন্দনীয়। তা ছাড়া আওয়ামী লীগও সংগঠন হিসেবে এখন অত্যন্ত দুর্বল। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আগের সুনাম ও প্রতিষ্ঠা নেই সাধারণ মানুষের কাছে।

আমি বয়সে বড় হয়েও শেখ হাসিনার পায়ে পড়ি। এবার যেন মন্ত্রিসভা গঠনে তিনি জেদ, কানকথা ও চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় না দেন। যোগ্যতা ও সততাকে মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগের মাপকাঠি করেন। সাধারণ মানুষের পছন্দসই ও আস্থাভাজন ব্যক্তিদের দ্বারা একটি ছোট অথচ কর্মক্ষম মন্ত্রিসভা গঠন করেন। উপদেষ্টার সংখ্যা যেন পাঁচজনের বেশি না হয় এবং তাঁরা বিতর্কিত ব্যক্তি না হন। আল্লাহর দোহাই শেখ হাসিনা, এবার যেন ঢাকা ক্লাবে বসে যাঁরা সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢুলু ঢুলু চোখে 'সরকারি দায়িত্ব পালন' করেন, তাঁদের কোনো কারণেই মন্ত্রিসভায় স্থান না দেন।

দেশের সামরিক ও অসামরিক প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াত আমলে ঢুকে পড়া অনেক 'সাবোটিয়ার' আছে। তা সত্ত্বেও এবার আমাদের সেনাবাহিনী, অসামরিক প্রশাসন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার প্রমুখ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্বাচিত সরকারের প্রতি যে আনুগত্য ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে, তা অতুলনীয়। 

সন্ত্রাসী-হামলা ঠেকাতে বহু পুলিশ আত্মদান করেছে। আগামী সরকারকে তাদের দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা ও আনুগত্যেরও মূল্যায়ন করতে হবে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে প্রশাসন ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং তা পারবে একটি দক্ষ, যোগ্য ও সৎ সরকার।

শেখ হাসিনা যদি এবার একটি সৎ ও দক্ষ সরকার দেশবাসীকে উপহার দিতে পারেন, তাহলে বর্তমান নির্বাচনের বৈধতার সীমাবদ্ধতা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আর যে 'হিজ মাস্টার্স ভয়েসের' মতো এক শ্রেণীর মিডিয়া ও টক শোর অবিরাম প্রলাপোক্তি তা-ও বন্ধ হবে। সন্ত্রাস যত সিংহমূর্তি ধারণ করুক, তাকে লেজ গুটিয়ে পালাতে হবে। শেখ হাসিনা, দেশকে একটি মোটামুটি অনেস্ট গভর্নমেন্ট উপহার দিন, যে গভর্নমেন্ট দেশকে সুশাসন দিতে পারবে। রাতারাতি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে, তা বলি না। কিন্তু আগামী সরকার তার শুভ সূচনা করুক।

নির্বাচনের দিনটি পার হওয়া গেছে। কিন্তু নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তার জন্য আগাম দশ নম্বর বিপদ সংকেতও দেখতে পাচ্ছি। দেশপ্রেমিক চক্ষুষ্মান ব্যক্তিমাত্রই তা দেখতে পাচ্ছে। আবারও বলি-

সামনে আছে ঝড় তুফান

শেখ হাসিনা, সাবধান!! 

(কালের কণ্ঠে প্রকাশিত)

Sunday, January 5, 2014

পোষ্টমর্টেম নির্বাচন - সুমি খান

এভাবে মানুষকে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করে পিটিয়ে হত্যা করে ও ভোট দেয়া ঠেকাতে পারলো না সন্ত্রাসী রা.....


 প্রাণভয়ে ভোটাররা অনেকেই যায় নি ভোট কেন্দ্রে। অনেকে দ্বিধান্বিত... তার ওপরে আবার অবরোধ-হরতাল। 

 আমার ভাইয়া কৃতি গবেষক চিন্তাবিদ হাসান মাহমুদ জানালেন, ইংল্যাণ্ডে ২১% ভোটারের ভোটে সরকার গঠন হয়েছিল কবে যেন, কিন্তু ওসব দেশে, ক্যানাডাতেও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম লোক ভোট দেয়. আমাদের জন্য কমপক্ষে ৪০% হলে চলে যায় বোধহয় ।

3:30 PM - আজ এ পর্য্যন্ত নিহত ১৩জন ও মোট ১৮১০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫২ টি স্থগিত। 

3:00 PM - SAME AS BEFORE. খুলনায় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ২০% 

2:30 PM - মোট নিহত ১২জন। সি-ই-সি জানাচ্ছে মোট ভোট কেন্দ্র ১৮১০৮ টি, স্থগিত ১৪৩ - স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে ২৪ শে জানুয়ারীর মধ্যে আবার নির্বাচন হবে. 

2:00 PM - এখনো এ পর্য্যন্ত নিহত ৯ জন ও মোট ১৮২০৮ টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪০টি স্থগিত। অর্থাৎ ভোট গ্রহণ চলছে ৯৯.২৫% কেন্দ্রে, স্থগিত ০.৭৫% কেন্দ্রে। 

1:30PM - এখনো মোট ১৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - এ পর্য্যন্ত নিহত ৯ জন - বেশী সহিংস এলাকার মধ্যে আছে ফেনী, মুন্সিগঞ্জ, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, রংপুর ও নীলফামারী। শুধু চোখ-খোলা চেহারা-ঢাকা নেকাবী নারী-ভোটারও দেখা গেছে - দক্ষিন এশীয় ২ দেশের পর্য্যবেক্ষক দল সন্তুষ্ট। 

1:00 PM - এখনো মোট ১৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - এ পর্য্যন্ত সর্বমোট নিহত ৮জন - কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে - বোমা বানাতে গিয়ে শিবির আহত, ব্যালট বাক্স ছিনতাই-এর সময় যুবদল নেতা গুলিবিদ্ধ ইত্যাদি।... 

12:45 PM - (১) বেগম খালেদা জিয়া জাতির প্রতি ভিডিও বার্তা দিতে পারেন। (২) পার্বতীপুরে জামাতের হামলায় এক আনসার নিহত। (৩) সামগ্রিকভাবে নারী-ভোটারের উপস্থিতি বেশী। 

12:30 PM - এখনো মোট ১৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত; নীলফামারীতে ডিমলা ও জলঢাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ২জন জামাত নেতা নিহত। দেশে সর্বমোট ভোটকেন্দ্র কতো কেউ জানাবেন? 

12 NOON - বিভিন্ন জায়গায় নিহত ৬ - এখনো মোট ১৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - ফেনীতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই চেষ্টায় পুলিশের গুলিতে নিহত একজন 

11:30 AM - মোট ১৪০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত 

11:15 AM - মোট ১৩৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত.. সর্বমোট ১৪৭ আসন, ভোটার সাড়ে ৪ কোটি। দেশে সর্বমোট ভোটকেন্দ্র কতো তা বলতে পারছি না. 

11:00 AM - মোট ১৩৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, আহত, কয়েকজন নিহত, ককটেল সহ আটক কয়েকজন - পটুয়াখালীর খাসেরহাট স্কুলের ভোটকেন্দ্র থেকে ২২টি ককটেল সহ অন্যান্য জায়গায় ককটেল, ভারী বোমা ও পেট্রল বোমা উদ্ধার।

ব্যালট ছিনতাই আগুন দেয়া সহ সর্বাত্মক সহিংসতার মধ্যে চলছে ভোট - মোট ৩৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - আজিমপুরে রাস্তায় পড়ে থাকা ককটেলে শিশু আহত - BD time 10 AM.

10:15 AM - জামাতের শক্তি বিশেষে কোন জায়গায় হিংস্রতা বেশী ও ভোট স্থগিত, অন্যান্য জায়গায় ভোট ভালই চলছে। কেউ জানেন সারা দেশে সব মিলিয়ে কতো ভোট কেন্দ্র? 

রংপুর ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টায় ২জন নিহত। 

10:22 AM - মোট ১২৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত - এ পর্য্যন্ত মোটামুটি ৫% ভোট দেয়া হয়েছে - খুলনার পুলিশ কর্মকর্তা। ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্য্যন্ত। কোথাও কোথাও শীত প্রচণ্ড 
10:30 AM - মোট ১৩৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত -