Monday, October 22, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান

বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও। সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে। তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো 'হিসেবি' হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।

সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শো তেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন,  জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
সুমি খান, সম্পাদক, সূর‌্যবার্তা নিউজডটকম
http://surjobartanews.com/http:/surjobartanews.com/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%B8/

Sunday, October 21, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান


বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও।সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! 
প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে।
তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো ‘হিসেবি’ হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শোতেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন; জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বিষয়টিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করা হয়,বা তাঁরা সম্পৃক্ত হন। ’চরিত্র ‘ শব্দটি  যেন কখনো নারী কে অাক্রমনের হাতিয়ার না হয়,সেই দাবিতে উচ্চকিত হয়েছেন অনেকে। নিউজরুমে বা বাইরে নারী সাংবাদিকদের ‘এবিউজ’ বা নিপীড়ন করেছেন এমন নীতিনির্ধারক ও নারীর ‘চরিত্র’ সুরক্ষায় সোচ্চার হলেন নারী সাংবাদিক নেত্রীদের সাথে একাত্ম হয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীর সন্তানও নারী সাংবাদিকদের সাথে একাত্ম হলেন, এক্ষেত্রে জামাত প্রশ্ন তুললেন না কেউ।
তবে এই প্রতিবাদে যদি সবাই সততার সাথে অার অন্তর থেকে একাত্ম হয়ে থাকেন,সেটা গণমাধ্যমের জন্যে অবশ্যই শুভ লক্ষ্মণ। যদি তা না ও হয়,তবু অন্তত  নারীর সম্মানের প্রশ্নে নীতিনির্ধারকদের  বিবৃতি অবশ্যই সমাজে একটা ভালো প্রভাব ফেলবে মনে হয়েছিলো অামার।
হঠাৎ তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুকে মাসুদা  ভাট্টি ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হলেন অাবার! লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অনেক লেখার সাথে অামি একমত নই ;চরম বিরোধিতাও করি কখনো কখনো। কিন্তু এদেশের বিরোধিতা করে যুদ্ধাপরাধীরা যদি দেশের পবিত্র মাটিতে থেকে দেশের শ্রেষ্ঠসন্তানদের হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে, একজন লেখিকা তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরও মাতৃভূমির মাটিতে পা দিতে পারবেন না, এ কেমন বিচার?মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে কি তবে  মাথা নত করেছে রাজনৈতিক শক্তি? রাজনীতির হঠকারিতায় তসলিমা তার মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত থাকবেন চিরদিন? কেন কোন প্রতিবাদ অাসেনা তসলিমাকে দেশের মাটিতে ফেরানোর দাবিতে?

অন্যদিকে এখন ক্ষমতাসীন দলের সাথে রাজনৈতিক সখ্য বলেই কি একসময় পাকিস্তানী স্বামীর সাথে সংসার করলেও, তৎকালীন রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে ভূমিকাহীন ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া মাসুদা ভাট্টির সাথে একে একে প্রতিবাদী  হলেন সংস্কৃতিসেবী এবং গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকেরা?  বেদনা অার হতাশা থেকেই হয়তো তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন -কখনো বোবা,কখনো বিপ্লবী কেমন এ খেলা !
মূলত: একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে লেখিকা মাসুদা ভাট্টি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন কে তার জামাত সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে অাখ্যায়িত করেন। এ চরম অন্যায় অাচরণ। পরবর্তীতে অনেকেই মাসুদা ভাট্টির পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। এ ঘটনার পর চরম ক্ষুব্ধ প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে  মাসুদা ভাট্টির কঠোর সমালোচনা করলেন।  এতোটাই ক্ষুব্ধ হলেন তিনি, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাসুদা ভাট্টিকে তিনি ‘চরিত্রহীন ‘ আখ্যা দিলেন!২১ অক্টোবর রোববার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। তসলিমা নাসরিনের লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তাঁর চরিত্র, কী তাঁর আদর্শ আমি জানি না, তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ মহিলা। ‘চরিত্রহীন’ বলতে আমি কোনওদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। ‘চরিত্রহীন’ বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ,অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।
মহিলাটির জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিল। পাকিস্তানির সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো ওকে। ওর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে একটা চিঠি লিখে দাও। লিখে দাও মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশে তোমার পাব্লিশার ছিল, তোমার জন্য আন্দোলন করেছে। ও যদি এখন দেশে ফিরে যায়, ওকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা’।আমি বললাম, ‘মহিলাকে আমি চিনিই না। আর আপনি বলছেন ও আমার পাবলিশার ছিল? আমি মিথ্যে বলি না। আমি মিথ্যে কথা বলতে পারবো না।’ এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাবো জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।
তারপর কী হলো? তারপর ২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘ক’ যখন বাংলাদেশে বেরোলো,আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদি গোষ্ঠি উন্মাদ হয়ে উঠলো আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য, আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালি তো দিতেই লাগলো, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করলো, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।
আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ প্রচুর কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনওদিন করেনি। ক বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে শরীরে ঘিনঘিনে ঘা ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন।
মাসুদাভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?
আজ দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে লড়ছেন কারণ কেউ তাকে চরিত্রহীন বলেছে। যত অশ্লীল শব্দ বাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে নব্বই দশকের শুরু থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনও বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনও সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে কোনওদিন দেখিনি।আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হলো, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হলো, আমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে দিনের পর দিন মিছিল হলো, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করলো, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনও সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দ করেনি। এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনও বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?
তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাসের জবাব দিলেন মাসুদা ভাট্টি । মাসুদা ভাট্টির জবাব তুুুুলে ধরা হলো-
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তসলিমা নাসরিনের দেওয়া স্ট্যাটাসের জবাবে মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন, তসলিমা নাসরিনকে আমি ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি এরকম একটি মোক্ষম সময়কে বেছে নিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভকে প্রকাশ করে ২০ বছর আগে দেয়া আমার একটি বক্তব্যের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।যে সকল ঘটনার উল্লেখ তিনি করেছেন তা ২০০০ সালের এবং তিনি সত্যিই আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন কারণ তখন আমাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। একটি আলোচিত সাক্ষাতকার গ্রহণের পর থেকে আমার সে দেশে টিকে থাকা মুস্কিল হয়ে পড়েছিল এবং তখনও অনেক সাংবাদিক আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন যেমন দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তসলিমা নাসরিন কখনোই আমাকে তার পাবলিশার হিসেবে চিঠি দেননি, দিয়েছিলেন তার একজন ফ্যান বা সমর্থক হিসেবে বর্ণনা করে। খুঁজলে সে চিঠি আমি নিশ্চয়ই পাবো।
যখন তার প্রথম আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘ক’ বের হলো তখন এই বই নিয়ে প্রচারণার অংশ হিসেবেই আমি একটি পুস্তক সমালোচনা লিখি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমার তখন নারীবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা, উদারনৈতিক ও সমতাভিত্তিক সমাজব্যাবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি একাডেমিক লেখাপড়া ছিল না। আমি সমালোচনায় বইটি সম্পর্কে এই কথাই বলতে চেয়েছিলাম যে, একজন ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছা-সম্পর্কের দায় দুপক্ষের সমান এবং তা প্রকাশের আগে অন্যপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন পড়ে – ক বইটি পাঠে আমার তা মনে হয়নি। প্রায় কুড়ি বছর আগের লেখা এবং সেখানে আমি তসলিমা নাসরিনকে কোনো ভাবেই ব্যক্তিগত কোনো আক্রমণ করিনি। করতে পারি না কারণ আমি সবসময় একথাই বলে এসেছি যে, আজকে যে আমরা মেয়েরা অনায়াস-লেখা লিখতে পারছি তার মূলপথ আমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন। অথচ গত কুড়ি বছর যাবত তসলিমা নাসরিন অন্ততঃ কুড়িবারেও বেশি এই প্রসঙ্গে আমাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন তার প্রকাশিত বইতে, লেখায় এবং তার ও আমার জানাশোনা ব্যক্তিবর্গের কাছে।
২০০০ সালের পরে অসংখ্য লেখায় আমি তসলিমা নাসরিনের প্রশংসা করেছি এবং সে কারণে আমাকে সমালোচকরা নতুন তসলিমা নাসরিন আখ্যা দিয়ে আমার বিচার, অপমান এবং ফাঁসিও চেয়েছে। তসলিমা নাসরিন এসব কথা কখনও উল্লেখ করেননি, তিনি সব সময় গত কুড়ি বছর ধরে বহুবার, বহু জায়গায় আমার এই পুস্তক-সমালোচনার কথা উল্লেখ করে আমাকে চরম আঘাত করেছেন। আমি বিরত থেকেছি জনসমক্ষে কিছু বলা থেকে কিন্তু তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে আমি বহুবার একথা বলেছি যে, তার বইয়ের সমালোচনায় আমি যা বলেছি সেটা একেবারেই তার বইয়ে সন্নিবেশিত তথ্যের সমালোচনা, তার ব্যক্তি-সমালোচনা নয়। আমি একথা ২০০৩ সালেই প্রকাশ্যেও লিখেছি, এমনকি যখন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তখন আমি প্রতিবাদ করেছি, লেখকের বিরুদ্ধে মামলা বা বই নিষিদ্ধের দাবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি। আমার সেসব প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সব ভেসে গেছে, থেকে গেছে কেবল সমালোচনাটুকু।এমনকি এই সেদিনও বাংলা একাডেমীতে আয়োজিত লিট ফেস্ট ২০১৭ তে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছি যে, তিনি আমাদের পুরোধা লেখক যিনি পথ দেখিয়েছেন, অনেক শব্দকে ছাপার অক্ষরে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, তিনি মুক্ত করে দিয়েছেন।
তসলিমা নাসরিনের প্রতি আমার কোনো ধরনের বিদ্বেষ, রাগ কখনোই ছিল না। বরং আমার দুঃসময়ে তিনি পাশে ছিলেন সেটা আমি ভুলিনি। তাই বলে তার প্রকাশিত বইয়ের সমালোচনা আমি করতে পারবো না সেটাতো হতে পারে না। হতে পারে তিনি মনে করেছেন যে, আমার সমালোচনাটি কুৎসিৎ ব্যক্তি আক্রমণ, কিন্তু আমি নিজে জানি যে, তখনও আমি সেটা করিনি আর এখনতো আরও করবো না। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে কবার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
তসলিমা নাসরিন তার মতামত দিয়েছেন আমার সম্পর্কে। আমি সে সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা দিতে পারি মাত্র, এর বেশি আর কীই বা করতে পারি? তবে এমন একটি সময়কে ২০ বছর আগে লেখা সমালোচনার (যার জন্য বহুবার তিনি প্রকাশ্যে আমায় গাল দিয়েছেন) জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন যখন আমি কেবল আক্রান্তই নই, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্নটিও তিনি আমলে আনেননি, আমার চেয়ে তার এই নিরাপত্তা-সংকটের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি বোঝার কথা ছিল। আজকে তার দেওয়া চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিয়ে যারা আমাকে তুলোধনুা করছেন তারাই প্রতিদিন তার মাথা চায়, নোংরা আক্রমনে জর্জরিত করে, কখনও বা তাকে দেশছাড়া করতে চায়। কিন্তু আজ আমার বিরুদ্ধে তারই দেওয়া ভীষণ চরিত্রহীন তকমার করাত দিয়ে আমাকে টুকরো টুকেরো করছে। জানি না, এতে কার লাভ কী হলো? কিন্তু কিছু একটা হলো নিশ্চয়ই।এরকম একটি চরম সংকটকালে যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কবলে থেকে একদল মানুষ ন্যয়ের জন্য লড়ছে, তখন মইনুল হোসেনের দেওয়া তকমা ‘চরিত্রহীন’ কে একটি ভীষণ শব্দ জুড়ে দিয়ে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট-কে আরো শক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন – আমি এ জন্যও তার কাছে কৃতজ্ঞ। অগ্রজ লেখক হিসেবে হয়তো এটুকুই আমার প্রাপ্য তার কাছে।
পরিশেষে দু’জনের বক্তব্যের পর সন্দেহ থাকেনা তসলিমার দাবির সত্যতা নিয়ে; তার ক্ষোভের কারণ অাছে বটে। তবে মাসুদা ভাট্টি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন তসলিমার কাছে ; হতাশা ও ব্যক্ত করেছেন।
তবে ঘন কালো মেঘের ছায়া ঢেকে অাছে গণমাধ্যমের অাকাশ! যে অাকাশে নারায়নগঞ্জের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত অাইভিকে একাত্তর টিভির লাইভ শো তে শামীম ওসমান চরম অশ্লীল গালাগাল করে যান উপস্থাপক শাকিল অাহমেদ এর নীরব উস্কানিতে। লাইভ টক শো তে অাইভির চরম অপমানে কেউ সেদিন এগিয়ে অাসে নি তো! গণমাধ্যমের এমন স্বেচ্ছাচারিতাতে প্রশ্ন ওঠে বৈকি, কখনো বোবা অার কখনো বিপ্লবী কেন হবে এ সমাজ  ?  তার মানে এই নয়, মাসুদা ভাট্টির অপমান নীরবে হজম করে যেতে হবে।
একটি সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবাদে মুখর হতে হবে নারীর প্রতিটি অসম্মানে! প্রতিবাদী হতে হবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ।
আমি মনে করি,  গনমাধ্যমে নারীর সম্মানজনক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে হলে চিহ্নিত করতে হবে প্রকৃত সংকট।অাজকের দিনে গণমাধ্যম ক্ষমতার রাজনীতি অার সিন্ডিকেটবাজদের কাছে জিম্মি! ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার হীন প্রতিযোগিতায় মত্ত সাংবাদিক নেতাদের অনেকে সচেতন ভাবে গণমাধ্যমের নারীদের মূলধারা থেকে সরিয়ে রেখেছেন। সমাজের অন্যদের প্রতি তাদের অবজ্ঞা এবং দায়িত্বহীনতা প্রকট;যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! এর থেকে বেরিয়ে অাসার কোন পথ তারা খুঁজে পান না,পেতে ও চান না হয়তো!
এ এক অমানিশার কাল অামরা অতিক্রম করছি, যে বাস্তবতা পেশাদারীত্বকে পায়ে দ’লে হীনতা অার নীচতার প্রতিযোগিতার নগ্ন লড়াইয়ে মগ্ন! জানিনা কবে কাটবে গনমাধ্যমের এ ক্রান্তিকাল!
গণমাধ্যমে নারীর অবস্থান এখনো শক্তিশালী নয়। নারী সাংবাদিকদের অনেকে এখনো নিউজরুমে নানারকম হেনস্থার শিকার হচ্ছে। কোন কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত হচ্ছে সৎ, মেধাবী নারী সাংবাদিকেরা। কেউ তাদের পাশে নেই। কেউ কখনো চাকরিচ্যুত নারী সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায় না।কর্মচ্যূত নারী সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা ও কেউ করেনি; করে না। মেধা ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এতো নেতা নেত্রীদের কেউ কখনো একবারের জন্যেও নারী সাংবাদিকদের কাজের মূল্যায়নের প্রশ্নে সোচ্চার নন।
নারীর পেশাদারীত্ব এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা না করলে নারীর প্রকৃত  মর্যাদা প্রতিষ্ঠা দুরূহ হয়ে যাবে। নারী সাংবাদিকের মেধা, নিরলস শ্রম, সততা এবং নিষ্ঠা এখনো এই পেশায় যথাযথভাবে  মূল্যায়িত হয়নি। নারীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে  নিজেদের ইগো থেকে বেরিয়ে সকলে একাত্ম হয়ে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে অানা জরুরী।বাহিরে অন্তরে সৎ হতে হবে লক্ষ্য অর্জনে।
সাংবাদিকতার দর্শনের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকলে পরিণতি কাউকে ক্ষমা করবেনা।রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা থাকতে পারে সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা রক্ষায় একাত্মতা জরুরী, যা অাজ সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হয়েছে।বাহ্যিক দর্শনের অাধুনিকতা চিন্তা চেতনার পশ্চাদপদতাকে লুকাতে পারে কি??