Saturday, January 17, 2015

'আহা হতে পারতাম যদি তোমার মত মালাউন' - জ.শ. তিমির

'মানুষ হিসেবে তোমার সীমানায় পৌঁছাব এমন স্পর্ধা কখনও করিনি পোষন,
গৌরী শৃঙ্গের পানে বিস্ময়াহত চেয়ে থাকি ।তোমার স্মৃতি
চিরকাল বহন করে সঞ্জীবনী গুণ,
 আহা হতে পারতাম যদি তোমার মত মালাউন ।'
শওকত ওসমান

পিতা অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত খ্যাতনামা খেলোয়াড় ছিলেন। মা ইন্দুপ্রভা দাশগুপ্ত , আর মামা ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ । আদি বাড়ি বিক্রমপুরের গাউপাড়া গ্রামে।  সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সংগঠন, ও রাজনীতি, যেখানেই বিচরণ করেছেন ঋষিত্বের স্বাক্ষর একেছেন । নীতি, আদর্শের প্রতি দৃঢ়চেতা এই মানুষ দেশ, মানুষ ও সমাজের প্রতি সঁপে দিয়েছিলেন তার মৃত্যুহীন প্রাণ।অসাম্প্রদায়িক,  শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, প্রগতিশীল  সমাজ  এবং নতুন প্রজন্ম গড়ার প্রত্যয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন অবিরাম। গত ১৫ ই জানুয়ারী ছিল ঋষিতুল্য এই ব্যক্তি রনেশ দাশগুপ্তর জন্মতিথি। 
অগ্নিযুগ - ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামীদের  সম্পর্কে রনেশ দাশগুপ্ত তার ‘আইরিশ, বাংলা, সিয়ান ও ক্যাসি’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘(আইরিশ) স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক টেরেন্স ম্যাকসুইনি কারাগারে রাজনৈতিক মর্যাদা আর দেশের মুক্তির দাবিতে পঁচাত্তর দিন অনশন করে প্রাণ দিয়েছিলেন। ইংরেজ রাজত্ব উচ্ছেদের প্রচেষ্টায় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বাংলার যতীন দাস একই ধরনের দাবিতে কারাগারে চৌষট্টি দিন অনশন করে যখন প্রাণ দিলেন, তখন বাংলার যৌবনের মর্মভূমিতে যতীন দাস ম্যাকসুইনি যমজ ভাইয়ের মতো আসীন হয়েছিলেন।
১৯৪০ সালে “প্রগতি লেখক-শিল্পী সঙ্ঘ” যাদের প্রচেষ্ঠাতে গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে  একজন  রনেশ দাশগুপ্ত আর আরেকজন শহীদ সোমেন চন্দ । ১৯৪৭ সালে ৪৭ এর দাঙ্গা প্রতিরোধে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সেই মহামারীর তান্ডবের বিরুদ্ধে সারা বাংলা রুখিয়া দাড়াও' এর  ঐতিহাসিক প্লাটফর্মে তার  সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসে মুদ্রিত ।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষাকে উর্দু ও ইংরেজির সাথে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ডাকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে । ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠিত হওয়ার পর ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহম্মদ তোয়াহ, আবুল কাশেম, রনেশ দাশগুপ্ত, অজিত গুপ্ত প্রমুখ নেতাদের উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পালিত সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়  ১৯৪৮ সালের সাধারণ ধর্মঘট ছিল ভাষা আন্দেলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এদেশে প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে নেতৃত্বদান কালে বঙ্গবন্ধু পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন।
 
রনেশ দাশগুপ্ত জেলে নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে ‘কবর’ নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ‘কবর’ নাটকটি তাদের চেষ্টায় কারাগারে মঞ্চস্থ হতে পেরেছিল। স্বাধীনতার মূল প্রেরণা শক্তি যে ভাষা আন্দোলন সেই ভাষা আন্দোলনের চেতনায় দীপ্ত হয়ে ১৯৫২ সালের ২ মে দৈনিক সংবাদ-এর পাতায় আত্মপ্রকাশ করে খেলাঘর | প্রগতিশীল সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে সুন্দর আগামী বিনির্মাণের লক্ষ্যে সেদিন কবি হাবীবুর রহমান, শহীদুল্লাহ কায়সার, রনেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, জহির রায়হানসহ আরো অনেক প্রগতিশীল বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ মিলে জন্ম দিয়েছিলেন খেলাঘর| তিনি উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম| 
গোটা পাকিস্তানি আমলে তিনি বহুবার কারাবাস করেছেন। কারামুক্তির পর ১৯৫৫ সালে তিনি ‘সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার চাকরি গ্রহণ করেন। এ পত্রিকাকে ব্যাপক অর্থে প্রগতির মুখপত্র করে তুলতে তার অবদান ছিল বিরাট।সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেছেন।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় কিছু অনুষ্ঠান যেসব বুদ্ধিজীবী নিয়মিত অনুষ্ঠান সিরিজে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন জামিল শারাফি ছদ্দনামে- সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্ত (দৃষ্টিপাত এ)|
ইতিবাচক এই আজন্ম যোদ্ধা রনেশ দাশগুপ্ত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের স্কেচ দেখে বলেছেন কখনো মনে হয়নি মানুষ মরে যাচ্ছে শুধু,  বরং মনে হতো মানুষ বেঁচে উঠতে চাইছে।’