Friday, April 12, 2013

শতবর্ষী আলোকবর্তিকা বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে


শতবর্ষী আলোকবর্তিকাসম বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। শহীদ মিনারে ঢাকার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনোদবিহারী চৌধুরীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এ সময় বিউগলে বিদায়ের করুণ সুর বাজানো হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ রাখা হবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
আজ শুক্রবার দুপুরে বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর মরদেহ কলকাতা থেকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর বিনোদবিহারী চৌধুরীর মরদেহ গ্রহণ করেন।প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ কথা জানান।
চারটার পরে বিনোদবিহারীর মরদেহ রাখা হবে চট্টগ্রামের যাত্রামোহন সেন মিলনায়তনে মাস্টারদা সূর্য সেনের আবক্ষমূর্তির পাদদেশে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। রাতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী বিনোদবিহারীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে নগরের অভয়মিত্র শ্মশানে।
গত বুধবার রাতে ১০৩ বছর বয়সে বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী কলকাতার ফর্টিজ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি শেষ ইচ্ছায় বাংলাদেশে তাঁকে সমাহিত করার কথা জানিয়ে গেছেন বলে জানান তাঁর ছেলে সৌমশুভ্র চৌধুরী।
জীবন ও কর্ম:
বিনোদবিহারী চৌধুরীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। তাঁর মা শ্রীমতী রমা রানী চৌধুরী। পিতা কামিনীকুমার চৌধুরী। ১৯২৯ সালে পি সি সেন সারোয়াতলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে রায়বাহাদুর বৃত্তি পান।
১৯২৭ সালে ১৬ বছর বয়সে বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী থাকাকালে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ‘ভারতীয় সাধারণতন্ত্র বাহিনীর’ সদস্য হিসেবে অংশ নেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বিনোদবিহারী অন্য চার সহযোদ্ধার সঙ্গে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনসের অস্ত্রাগার দখল প্রচেষ্টায় অংশ নেন। দখলের পর তাঁরা দেশীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং সূর্য সেনকে রাষ্ট্রপতি করে ‘অস্থায়ী গণতন্ত্রী বিপ্লবী সরকারের’ ঘোষণা দেন। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল জালালাবাদ যুদ্ধেও অংশ নেন বিনোদবিহারী। ওই যুদ্ধে তাঁর গলায় গুলিবিদ্ধ হয়। ব্রিটিশ সরকারকে তাঁকে জীবিত বা মৃত ধরতে পাঁচ শ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
বিনোদবিহারী ১৯৩৩ সালে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে ছিলেন। ভারতের রাজপুতনার দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশন পেয়ে বিএ পাস করেন। ১৯৩৮ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর আবার তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়। প্রায় এক বছর গৃহবন্দী থাকাকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি ইংরেজিতে এমএ ও বিএল (আইন) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিনোদবিহারী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পাঞ্চজন্য পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। এ সময় তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় বিনোদবিহারী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি।
১৯৪৮ সালে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস নেতা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক পৃথক নির্বাচনের বদলে যুক্ত নির্বাচনের আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান দেশের সব রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করলে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিনোদবিহারী অবসরে যান। ১৯৬৯ সালে স্বৈরশাসনবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে তিনি অংশ নেন। ১৯৭১ সালে কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

শুরুতে সাংবাদিকতা ও আইন পেশায় যোগ দিলেও পরে তাতে আর যুক্ত থাকেননি। শেষ জীবনে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন শিক্ষকতাকে। প্রায় শতবর্ষ বয়স পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের মোমিন সড়কের বাসায় তিনি ছাত্রদের পড়িয়েছেন।
দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের পর নানা সামাজিক-রাজনৈতিক উত্থান-পতন টলাতে পারেনি মহান এই বিপ্লবীকে। ১৯৬৮ সালে তাঁর দুই ছেলে সুবীর চৌধুরী, বিবেকানন্দ চৌধুরী কলকাতায় স্থায়ী হন। কিন্তু এই বিপ্লবী সস্ত্রীক বাংলাদেশে থেকে যান। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর হারান ৭০ বছরের দাম্পত্যজীবনের সঙ্গী বিভারানী চৌধুরীকে। বিনোদবিহারীর জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে মোমিন সড়কের বাসাতেই।
স্বাধীন বাংলাদেশে বিনোদবিহারী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তবে দেশের সব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে ছিলেন অগ্রবর্তী সৈনিক। স্বৈরাচারবিরোধী, জঙ্গিবাদবিরোধী ও সামাজিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এই অগ্নিপুরুষ।
২০০০ সালে বিনোদবিহারী স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া পেয়েছেন ১৯৯৯ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা, ১৯৯৮ সালে ভোরের কাগজ সম্মাননা, শহীদ নতুনচন্দ্র স্মৃতিপদক।

Wednesday, April 10, 2013

অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর শতবছরের গৌরবোজ্জ্বল বিপ্লবী অধ্যায়ের অবসান



চলে গেলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথী ও চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী পরলোক গমন করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।বিপ্লবী বিনোদন বিহারী চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। তার প্রয়াণের খবরে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই অগ্নিপুরুষ। গত ১০ জানুয়ারি ছিল তাঁর ১০৪ তম জন্মদিন। চট্টগ্রামকে আঁকড়ে থাকা এই মানুষটির শেষ ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় স্থানেই যেন তাঁর শেষকৃত্য হয়।

শতবছরের আগুনঝরা দিন

বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী জন্মেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। পিতা কামিনী চৌধুরী একজন আদর্শবান আইনজীবী ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বদেশি এবং ব্রিটিশবিরোধী প্রথম অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ফটিকছড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন সভা সমিতিতে তিনি যেতেন, সঙ্গে নিয়ে যেতেন শিশুপুত্র বিনোদকে। ১৯২৯ সালে বিনোদ চৌধুরী প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং রায়বাহাদুর বৃত্তিলাভ করেন।

বিনোদ চৌধুরীর লেখাপড়ার মতো দেশপ্রেমে প্রথম হাতেখড়ি হয় ফটিকছড়ি বোর্ড স্কুলে পড়ার সময় পিতার কাছে। বিপ্লবী জীবন শুরুর পর একে একে পরিচয় হয় সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার, মধুসূদন দত্ত, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু গুহ, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেনসহ অনেকের সঙ্গে। বিপ্লব সম্পর্কিত অনেক বই পড়ে ফেলেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকাকালে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের লড়াইয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার পর বিপ্লবীরা নিকটবর্তী পাহাড়ে অবস্থান নেন।

২২ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম কার্যত স্বাধীন ছিল। মাস্টারদার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান নেন। ইংরেজ সৈন্যরা পাহাড় ঘিরে ফেলে। ৫৪ জন বিপ্লবী মাস্টারদার নেতৃত্বে ও লোকনাথ বলের সেনাপতিত্বে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হন। লোকনাথ বল যুদ্ধের একটা ছক তৈরি করেন, পাহাড়ের তিন দিকে কে কোথায় অবস্থান নেবেন, কীভাবে যুদ্ধ করবেন-সব বুঝিয়ে দেন। শত্রুপক্ষ যেন পাহাড়ে উঠতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। সে অনুযায়ী যুদ্ধ চলে। ইতিমধ্যে বারোজন বিপ্লবী শহীদ হন, বিনোদ বিহারী চৌধুরী সহ আহত হন কয়েকজন। গুলি তার গলার একদিকে ঢুকে বেরিয়ে গেছে অন্যদিকে। রক্তক্ষরণের ফলে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। অভুক্ত বিপ্লবীরা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিপ্লবীদের জালালাবাদ পাহাড়ের অবস্থান ত্যাগ করতে হয়। আহত, রক্তাক্ত বিনোদ চৌধুরী পশ্চিম দিকে রওয়ানা দিয়ে অতি কষ্টে এসে পৌঁছান কুমিরার এক আত্মীয় বাড়িতে। এখানে গোপনীয়ভাবে তার চিকিৎসা চলে। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এদিকে এসে পড়ে নতুন বিপদ। গান্ধীজীর নেতৃত্বে লবণ আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় সেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। আত্মীয় বাড়ির লোকেরা শংকিত হন। তারা সিদ্ধান্ত নেন বিনোদ চৌধুরীকে সরিয়ে নিতে হবে। তাকে বউ সাজতে হয়, লাল পাড়ের শাড়ি, হাতে শাঁখা ও চুড়ি পরে বউ সেজে বাড়ি থেকে বের হন, পৌঁছে যান শহরের চাক্তাই। পথে পুলিশের সামনে পড়তে হয় দুবার। ওদিকে বিনোদ বিহারীর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। জীবিত বা মৃত অবস্থায় ধরিয়ে দিতে পাঁচশ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়।
বাবার পরামর্শে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। মামার সঙ্গে রওয়ানা হন ভারতের মধ্যপ্রদেশের চিন্ডুয়ারা জেলার জুনার দিয়া কয়লা খনিতে। পরিচয় গোপন করে কয়লা খনিতে দিনে এক টাকা মাইনেতে একটা চাকরিও জুটে গেল বিনোদ বিহারী চৌধুরীর। সকাল-বিকাল যারা কয়লা খনিতে যাওয়া-আসা করতেন তাদের নাম, সময় নির্দিষ্ট ফরমে লিখে রাখাই তার কাজ। মধ্যপ্রদেশ থেকে পালিয়ে চাকরির সন্ধানে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়ান বিনোদ চৌধুরী। ঝাড়খন্ডেও ছিলেন কিছুদিন। অতঃপর চলে আসেন ঢাকায়। এক ব্যক্তির আশ্রয়ে থাকতেন তাঁতিবাজারের তিনতলা এক বাড়ির নিচতলায়। কয়েকদিন ছিলেন কার্জন হল ও ফরিদপুরে। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের কারো কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হয়, এমনকি মাস্টারদার সঙ্গেও। তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন আর পিয়নের চাকরির জন্য ঘুরবেন না, তার কাজ চট্টগ্রামে। তার মতে, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী চট্টগ্রাম।

বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ফিরলেন বটে, তবে তার প্রিয় মাস্টারদার সান্নিধ্যে নয়, নিক্ষিপ্ত হন জেলে। সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা নিজেও ১৯৩৩-এর ২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়ে যান। বিপ্লবীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ব্রিটিশ সৈন্যরা। একে একে ধরা পড়তে লাগলেন বিপ্লবীরা। সঙ্গে সঙ্গেই বিচার কাজ শুরু হয়। এ বছর ১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারকেশ্বরের ফাঁসির আদেশ হয়, নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৯৩৪-এর ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কারাগারের একই ফাঁসি মঞ্চে সর্বাধিনায়ক মাস্টারদার সঙ্গে বিপ্লবী তারকেশ্বরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার আগে একই কারাগারে ভিন্ন সেলে বন্দী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আরেক বিপ্লবীর অনুরোধে মাষ্টার 'দা কে গান শোনাতে হয়। বিনোদ বিহারী চৌধুরী গেয়ে উঠেছিলেন, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে , তবে একলা চলো রে...."

বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯৩৩-এর জুন মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও পাঁচ বছর চট্টগ্রাম জেল, কলকাতা প্রেসিডেন্সি ও বহরমপুর জেল এবং দেউলি বন্দীশিবিরে কারাজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৩৮ সালের শেষদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এক বছরের মাথায় ব্রিটিশ সরকার তাকে এক বছর গৃহবন্দী করে রাখে। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের মধ্যে অনেকেই জেল-দ্বীপান্তর থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও বিনোদ বিহারী চৌধুরী কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি এ সময় চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সহসম্পাদক ছিলেন। এ সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ব্রিটিশবিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলনের প্রস্তুতিকালে তিনি আবার গ্রেফতার হন। ১৯৪১ থেকে ৪৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেল, ঢাকা জেল এবং হিজলি ও খোকশা বন্দীশিবিরে আটক থাকার পর ১৯৪৫-এর শেষ দিকে ছাড়া পান। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় এক বছর চট্টগ্রাম কারাগারে বিনা বিচারে তাকে কাটাতে হয়। জেলখানা, বন্দীশিবির ও গৃহবন্দী অবস্থায় জীবনের বারোটি বছর অতিবাহিত করেন বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় অনেকের মতো বিনোদ চৌধুরী দেশত্যাগ করেননি। তিনি পাকিস্তানে কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হন। ১৯৪৮ সালের পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের নির্বাচনে কংগ্রেস দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। সে সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আসন নির্ধারিত ছিল ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের (একাত্তরে শহীদ) নেতৃত্বে বিনোদ চৌধুরী প্রমুখ নেতা আন্দোলন করেন প্রচলিত ধর্মীয় ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের পরিবর্তে যুক্ত নির্বাচন আদায়ের জন্যে। বিনোদ চৌধুরী ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইউব খান সামরিক আইন জারি করে রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করলে বিনোদ চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দু’শ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের মিজোরাম দিয়ে কলকাতায় উপস্থিত হন। রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং সেন্টারে পাঠান এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে ভারত সরকারের সহায়তায় বহু সংখ্যক প্রাইমারি স্কুল খুলেন।
কোলকাতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে থাকবার সুযোগ ছেড়ে মাষ্টার'দার দীক্ষা অনুসরণ করে যে মাতৃভূমির জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন , সেই মাতৃভূমিতেই ফিরে এলেন আবার । নিয়েজিত করলেন দেশ গড়ার কাজে।
নামমাত্র সম্মানীতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। দুই পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ২৮ বছর বয়সে কোলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বড় ছেলে ক্যন্সার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যায়। কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী বিভা চৌধুরী এ মারা যান। এতো শোক সয়ে ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সকলকে প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করতেন এই বিপ্লবী। বড় ছেলে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যান। পুত্রবধু উপালি চৌধুরী এবং একমাত্র নাতি সোমশ্রভ্র চৌধুরী কোলকাতাতেই থাকেন।বড় পুত্রের শেষকৃত্যে কোলকাতা গিয়ে আর চট্টগ্রামের মাটিতে ফিরতে পারলেন না এই মহান বিপ্লবী। তার মহাপ্রয়ানে আমরা শোকাহত। এ মহান বিপ্লবীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

“তরুণ সমাজ যেন অসাম্পদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে ”-১০৩ বছরে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী




(ছবি র ক্যাপশন- ২০০৮ সালে তার রোগমুক্তি কামনা করে আমাদের সময়ে প্রকাশিত কলাম পড়ছেন। ছবি- সুমি খান)
সুমি খান: “অহিংস সত্যম শ্রেয়ং শৌচ সংযম সেবচ । এই ছোট্ট কথা টি বাংলাদেশের ই এক মনীষী মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর। তিনি বৈষ্ঞব ছিলেন । আমেরিকায় এক সভায় যোগ দিয়ে এই কথাটি বলেছিলেন। যা আমেরিকাবাসীকে মুগ্ধ করে। আমাকেও মুগ্ধ করে। এই কথাটি মনে মনে উচ্চারণ করে আমি মানসিক শক্তি আনার চেষ্টা করি। আজ আমার ১০৩ তম জন্মদিনে দৈনিক আমাদের সময়ের মাধ্যমে আমার তরুণ ভাইবোন দের বলি , এই গুণ গুলো যদি মানুষের থাকে তবে আমরা নিজেদের সত্যিকার মানুষ বলে প্রমাণ করতে পারি।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আমাদের তরুণ সমাজ যেন অসাম্প্রদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে।এই তাদের কাছে আমার একমাত্র নিবেদন।
মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আজ ১০৩ বছরে পদার্পন করলেন।সকাল আটটা থেকে তার বাসায় অনুরাগী ভক্তরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় শুভেচ্ছা জানাবেন।
১৯০৯ সালের ১০ জানুয়ারী বোয়ালখালীর উত্তরভূর্ষী গ্রামে জন্ম নেন। ফটিকছড়ি করোনেশন স্কুলের মেধাবী ছাত্র রামকৃষ্ঞ বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯২৭ সালে বিপ্লবে দীক্ষা নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের গোপন বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন এই বিপ্লবী।১৮ এপ্রিল ১৯৩০ অস্ত্রগার লুঠ অভিযানে মাস্টারদার সাথে অংশ নেন। ২১ এপ্রিল ১৯৩০ জালালাবাদ যুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
ব্যক্তিজীবনে তার স্ত্রী বিভা চৌধুরী বীর কন্যা প্রীতিলতার কর্মস্থল চট্টগ্রামের অপর্ণা চরণ গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৯ সালে মারা যান। দুই ছেলে সুবীর চৌধুরী ও বিবেকানন্দ চৌধুরী। সুবীর চৌধুরী ৩০ বছর বয়সে কোলকাতায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আরেক ছেলে বিবেকানন্দ কোলকাতায় এক ব্যাংকে চাকরী করেন।তার স্ত্রী উপালী চৌধুরী সহ চট্টগ্রামে এসেছেন বাবার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে।বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর নাতি সোমশুভ্র চৌধুরী আর্কিটেক্ট ।কোলকাতার এক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
অধ্যাপিকা ড. রীতা দত্ত বলেন , বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী তার একমাত্র পুত্র, নাতির মায়া এবং কোলকাতার নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি ত্যাগ করে নিজ ভূমি চট্টগ্রামে থেকে গিয়ে এই বিপ্লবী যে দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছেন তা যেন আমাদের নতুন প্রজন্ম অনুসরণ করে।
এই বিপ্লবীর পুত্র বিবেকানন্দ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, “আমার বাবার এদেশে থেকে যাওয়ার পেছনে একটি ইতিহাস আছে।তাই বাবাকে আমাদের কাছে নিতে কখনো জোর করিনি।দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের একটি শপথ ছিল যে যেখানে আছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে থেকে যাওয়া।অনেক কমিউনিষ্টের জন্যেও এই শপথ রক্ষা সম্ভব হয়নি। এই যাওয়াটা অযৌক্তিক ও নয়।
আজীবন নির্লোভ নি:স্বার্থ এবং ত্যাগী এই বিপ্লবী ' স্বাধীনতা পদক 'এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অনুদানের সব টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন এই বিপ্লবী। এর মধ্যে এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিন লাখ টাকা এবং অন্যান্য অনুদান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন মাস্টারদা সূর্যসেন স্মারক বক্তৃতার জন্যে। সেই অনুদান এখনো ছাত্রদের হাতে দেয়া হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করলেন মহান এই বিপ্লবী। #### সুমি খান/ ০৯/০১/১২

Monday, April 8, 2013

ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে মওদুদী


মওদুদী
(কৈফিয়ত: আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন। ‘তাফহীমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।)

কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরীর জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ

“তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল।”
(সূরা তওবা ৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলতঃ মুসলমানদের থেকেই এজেন্ট তৈরী করে। যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিৎনা তৈরী করে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খেলাফসহ অসংখ্য কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক ভারত উপমহাদেশের এ ধারার অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী। স্বয়ং আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে এই মওদুদী।

তার সেই অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মাত্র ৫টি ক্ষুদ্র প্রমাণ নিম্নরূপঃ
১) আল্লাহ পাক সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
২) ফেরেশতা সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)
৩) আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)
৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।”(নাঊযুবিল্লাহ)(তরজমানুস্‌ সুন্নাহ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)
৫) সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “সাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(দস্তরে জামাতে ইসলামী, ৭ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, সব মুফতী-মাওলানাদের ইজমা তথা ঐক্যমতে উপরোক্ত আক্বীদাধারী ব্যক্তি মুসলমান নয় বরং মুরতাদ। আরো উল্লেখ্য যে, মওদুদী’র মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মুখপত্রে বলা হয়েছিল, “মরহুম (মওদুদী) তার ভিন্ন আঙ্গিকে শিয়া মতবাদ প্রচলনেও সহায়তা করেছেন।”
(সাপ্তাহিক শিয়া, লাহোর, ১৯৭৯ ইং, ৫৭ সংখ্যা ৪০/৪১; খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ১২)
বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ঠ ফল আশা করা যায় না তেমনি ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার উপরোক্ত আক্বীদাগুলো মুসলমানদের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপই উন্মোচন করে। আর আল্লাহ পাক বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে পবিত্র কালামে ইরশাদ ফরমান,

“আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” (সূরা আন্‌ নিসা ১০৮)
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি :
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]


হযরত মুছা (আ.) সম্পর্কে:
“নবী হওয়ার পূর্বে মুছা(আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, ৩১ পৃ.]
“মুছা(আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” [তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫]
হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে:
“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িক ভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড, ৫৫৮ পৃ.]
হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড(সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.]
হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউসুফ (আ.)- ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে:
“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত: নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়।এখানে একটি সুক্ষ বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৪র্থ সংস্করন ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন অক্টোবর ১৯৯১ইং]
“বস্তুত: নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শ:ই মানভীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষনের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” [তাফহিমুল কোরআন ২য় খন্ড, ৩৪৩-৩৪৪ পৃ. সংস্করন ১৯৯০ইং]

“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেন নি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা : ৩২৭ পৃ.]

” অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শ:ই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৫ম সংস্করন ১৯৫ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ২৮ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]

আসুন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু কথা জেনে নেই
১.মওদুদী সাহেব বলেছেন: “প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন” (তাফহীমাত: ২য় খন্ড, পৃ:৪৩)
২. হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। (তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)
৩.সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এমনকি অনুকরণ-অনুসরণের যোগ্যও নন।(দস্তুরে জামাতে ইসলামী, পৃ, ০৭)
৪.হযরত আবু বকর (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন। (তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: ২২,)

৫.হযরত আলী (রা.) অন্যায় কাজ করেছেন (খেলাফত ও মুলুকিয়াত: ১৪৩)
*হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছেন মওদুদী জামাত পথভ্রষ্ট; তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী।

এই বইগুলো দেখুন-
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ -মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন(১১/১, বাংলাবাজার, ঢাকা)
১২. আহসানুল ফতোয়া
যাদের সত্য যাচাইয়ের প্রয়োজন তারা ইচ্ছে করলেই তা করতে পারেন।
লক্ষ্য করুন এবং বিবেচনা করুন :—-
১. মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী হওয়ার দাবি মিস্টার মওদুদীর
মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য শুনে নদভী সাহেব মিস্টার মওদুদীকে সম্বোধন করে পুনঃ লিখলেন, ‘আপনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে জাওয়াব দিয়েছেন, তাতে একথা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, আপনি মুজাদ্দিদে কামিল বা ইমাম মাহদী হওয়ার দাবিকে অস্বীকার করেন না।’ (ইজাহে ফতওয়া, ৮৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদীর অভিপ্রায় ছিলো, দুর্ভাগ্যবশত মুজাদ্দিদরূপে নিজেকে জাহির করার সুযোগ না পেলেও পরবর্তীকালে তার রেখে যাওয়া জামাতে ইসলামীর পালিত শিষ্যগণ তার মুজাদ্দিদরূপে জাহির হওয়ার স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করবেন। তাই তো দেখতে পেলাম, মিস্টার মওদুদীর ইন্তেকালের পরপরই জামাতের গোপন নেতা মাও. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এক সভায় মিস্টার মওদুদীকে মুজাদ্দিদ বলে ঘোষণা দিয়ে ফেললেন। তার বক্তৃতার ক্যাসেট এখনও আমাদের নিকট বিদ্যমান।
মিস্টার মওদুদী শুধু মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী হিসেবে জাহির হওয়ার স্বপ্নই দেখেনি, বরং একজন খোদমোখতার বা স্বয়ংসম্পন্ন মুজতাহিদ হওয়ারও আকাঙ্খা করেছিলো। এদিকেই ইঙ্গিত দিয়ে সে বললো, ‘পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণের কার্যবলীতে যে এজতেহাদী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, বর্তমান যুগে সে শক্তি যথেষ্ট নয়। বরং বর্তমানে তাজদীদী খেদমত আঞ্জাম দেয়ার জন্য এক নতুন এজতেহাদী শক্তির প্রয়োজন। তাই বর্তমান পরিসি’তিতে এমন এক স্বয়ংসম্পন্ন মুজতাহেদের প্রয়োজন, যিনি পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণের ইলম ও পথের অনুসারী হবেন না। যদিও ফায়দা অন্বেষণ তিনি প্রত্যেকের থেকেই করবেন। (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন)
২. ইসলামী চাল-চলন সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদ-প্রকৃতি চাল-চলন ইত্যাদি গ্রহণ করবে। এসব ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করবে না। (এমদাদুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন, আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করাতে দোষ নেই। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, ছফর সংখ্যা, ১৩৬৯ হিজরী)
৩. দাড়ি রাখা সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কেটে ছেঁটে এর কম করা হারাম। (বুখারী শরীফ, ৭৫ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, ১২৯ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ শরীফ ২২১ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্টির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। (নাউযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা)
৪. সুন্নত সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত, আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র আমাদের অনুকরণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নত। (বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, ১০৮৪)
মিস্টার মওদুদী বলে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত, আখলাককে সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরনের বিদয়াত ও মারাত্মক ধর্ম বিগড়ন। (নাউযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
৫.সিনেমা সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সিনেমা দেখা নাজায়িয ও হারাম। (কিফায়াতুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, প্রকৃতরূপে সিনেমা দেখা জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২য় খণ্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা)
৬. নামায, রোযা ইত্যাদি সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, দ্বীনের আসল মকছুদ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কায়েম করা। ইসলামী হুকমত উক্ত মকছুদ অর্জনে সহায়ক। (শরহুল আকায়েদ, ৩০৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, দ্বীনের আসল মকছুদ ইসলামী হুকুমত। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদতই উক্ত মকছুদ অর্জনের মাধ্যম। (নাঊযুবিল্লাহ) (আকাবেরে উম্মত কী নজরমে, ৬৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদীর উপরোক্ত মন্তব্যের ফল এই দাঁড়ায় যে, ইসলামী হুকুমত অর্জিত হলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতের কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু মকছুদ অর্জিত হলে মাধ্যমের আর প্রয়োজন থাকে না। (নাঊযুবিল্লাহ)

৭.যাকাত সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য-
ইসলাম ধর্ম বলে, যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকীর (দরিদ্রকে মালিক বানানো) জরুরী। (মাকছুত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকীর জরুরী নয়। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, যিলহজ্জ সংখ্যা, ১৩৭৫ হিজরী)
৮. যাকাতের টাকা সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, মসজিদ, কূপ, পুকুর ইত্যাদি প্রভৃতির নির্মাণ কার্যে যাকাতের টাকা ব্যবহার করা জায়িয নেই। (কিফায়াতুল মুফতী, ৪র্থ খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, মসজিদ, কূপ, পুকুর প্রভৃতির নির্মাণ কার্যে যাকাতের টাকা ব্যবহার করা জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, যিলহজ্জ সংখ্যা, ১৩৭৫ সংখ্যা)

৯.যাকাতের মাল হতে আপন ভাতা গ্রহণ সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্যইসলাম ধর্ম বলে, ইসলামী হুকুমতের পক্ষ হতে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিই কেবল যাকাতের মাল হতে আপন ভাতা পাওয়া যোগ্য। (আহছানুল ফতওয়া, ৪র্থ খণ্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, ইসলামী হুকুমতের নির্ধারণ ছাড়াই যদি কোন ব্যক্তি, দল বা জামায়াত যাকাত আদায়, গণনা ও বণ্টনের জন্য দাঁড়ায় তবে সেও আপন ভাতা যাকাতের মাল হতে গ্রহণ করতে পারবে। (নাঊযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২য় খণ্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা)
১০.সাহরী সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সাহরীর শেষ সীমা সুবহে সাদিক। সুবহে সাদিক হওয়ার পর পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (তিরমিযী শরীফ, ১২৫ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, সাহরীর জন্য এমন কোন শেষ সীমা নির্দিষ্ট নেই, যার কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট এদিক ওদিক হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (নাঊযুবিল্লাহ) (তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা)
মুখে এক আর অন্তরে আরেক। ইসলামের পরিভাষায় এদের বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিক যে কারণে দো-দেল বা দো-যবান হয় তার পিছনে মূল কাজ করে স্বার্থগত প্রবণতা তথা দুনিয়ার লিপ্সা। এ লিপ্সা হতে পারে প্রভাব প্রতিপত্তির, হতে পারে অর্থের, হতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতার। সারা জীবন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শিরক বলে আজ নিজামী-সাঈদী গং সেসব কাজই সমর্থন করছে। পাশাপাশি মদের দাম কমানোসহ মদের কারখানার অনুমতি দিলেও বা আমেরিকা-আফগানিস্তানসহ ইরাক আক্রমণ করলেও সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করে গেছে, ইসলামের নাম ভাঙিয়ে আকাশ ফাটানো শ্লোগানধারী বর্ণচোরা ঐ মহলটি। তবে যে কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণচোরা ঐ মহলটি জন্মগতভাবেই পেয়েছে গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং বদলানোর প্রবণতা তথা মুনাফিকী খাছলত।
হাদীছ শরীফ-এ মুনাফিকদের চারটি খাছলত বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি হলো- ১. কথা বললে মিথ্যা বলা, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করা।
হাদীছ শরীফ-এর এ ভাষ্য অনুযায়ী তথাকথিত জামাতে ইসলামীর জন্মদাতা মওদুদী কোন্ পর্যায়ের মুনাফিকরূপে সাব্যস্ত হন তা বিচারের জন্য পাঠকের নিকট নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ও বক্তব্য (প্রথম পর্যায়ে ইসলামী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রচেষ্টায় নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে এবং পরবর্তিতে তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে) যা চরম নির্লজ্জতার, বেহায়াপনার ও নগ্ন স্বার্থবাদিতার জ্বলন্ত প্রমাণ এখানে পেশ করা গেলো-

নারী ও আইন পরিষদঃ
মাওলানা মওদুদী মাসিক তরজুমানুল কোরআন ১৯৫২ সালে আগস্ট সংখ্যায় পাকিস্তানের জন্য কতিপয় সাংবিধানিক প্রস্তাব পেশ করে। উক্ত প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধে কোন কোন মহল থেকে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তার উত্তর সে তরজুমানুল কোরআনের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রদান করে। তন্মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল, ‘কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্য হওয়া উচিত নয়’ তার এই প্রস্তাবের উপর। এর উত্তরে মাওলানা মওদুদী যা কিছু লিখেছে, তা মাসিক আল ফুরকানেও ১৯৫২ সালে লিপিবদ্ধ হয়। যার বিবরণ নিম্নরূপ:
প্রথম পর্যায় (যখন মাওঃ মওদুদীর ইসলামী দলের প্রতিষ্ঠা পাবার পথে প্রচেষ্ট)
একটি অভিযোগ আমার এই প্রস্তাবের উপর উত্থাপন করা হয় যে, “কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্যা হওয়া উচিত নয়।” এ প্রসঙ্গে আমার নিকট প্রশ্ন করা হয় যে, সেটা কোন্ ইসলামী নীতি, যেটা নারীদেরকে সদস্যা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে?
কুরআন-হাদীছের সেই নির্দেশ কোনটি, যেটা আইন পরিষদের সদস্যপদ পুরুষদের জন্যই রিজার্ভ বলে সাব্যস্ত করে? উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের আগে, এটা জরুরী মনে করি, যে আইন পরিষদের সদস্য পদের জন্য নারীদের নিয়ে আলোচনা চলছে, তার সঠিক ধরন ও স্বরূপ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।
উক্ত পরিষদসমূহের নাম ‘আইন পরিষদ’ রাখার কারণে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে, উক্ত পরিষদসমূহের কাজ কেবল আইন তৈরি করা। এ ভুল ধারণা পোষণ করে মানুষ যখন দেখতে পায় যে, ছাহাবায়ে কেরামের যুগে মুসলিম নারীগণও আইন-বিষয়ক মাসয়ালার আলাপ-আলোচনা, গবেষণা, মত প্রকাশ সবকিছু করতেন এবং অনেক সময় স্বয়ং ‘খলীফা’ তাঁদের মতামত জেনে নিয়ে সে অনুসারে কাজও করতেন তখন তারা আশ্চর্যান্বিত হয় যে, বর্তমানে ইসলামী নীতিমালার নাম নিয়ে এ ধরনের ‘পরিষদে’ নারীদের অংশগ্রহণকে কিভাবে গলদ বলা যেতে পারে। কিন্তু, আসল ঘটনা হলো এই যে, বর্তমান যুগে যে সব পরিষদ উক্ত নামে আখ্যায়িত হয়, সেসবের কাজ কেবল আইন তৈরি করা নয়।
বরং বাস্তব ক্ষেত্রে উক্ত পরিষদই সমগ্র দেশের প্রশাসন ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে, মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দেয়, আইন- শৃঙ্খলার যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে এবং যুদ্ধ, শান্তি ও চুক্তি সন্ধি সবকিছুর চাবিকাঠি তারই হাতে থাকে।
এ হিসেবে উক্ত পরিষদের স্থান কেবল একজন আইনজ্ঞ ও মুফতির স্থান বিশেষ নয়, বরং সমগ্র দেশের নেতৃত্বেরই বিশেষ স্থান। কোরআন মানুষের জীবনে এ বিশেষ স্থান ও দায়িত্ব কাকে দিয়ে থাকে এবং কাকে দেয়না, তা একবার পাঠ করে দেখুন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা নিসা’-এর ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন,
“পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ পাক একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ পাক যা রক্ষণীয় করেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হিফাযত করে।”
মহান আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় ‘কওয়ামিয়্যাত’ বা ‘কর্তৃত্বের’ গুরু দায়িত্ব ও জিম্মাদারী পুরুষকেই প্রদান করেছেন এবং নেক্কার নারীদের দু’টি বৈশিষ্ট্যের বিষয় বর্ণনা করেছেন,
১. তারা যেন আনুগত্যপরায়ণা হয় এবং
২. পুরুষদের অনুপসি’তে সে সব বস্তুকে হিফাযত করে যেগুলোকে মহান আল্লাহ পাক হিফাযত করতে চান।
আপনি হয়তো বলবেন যে, এটা তো পারিবারিক জীবনের জন্য বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন প্রসঙ্গে তো বলা হয়নি। কিন্তু, এখানে জেনে রাখা দরকার যে,
প্রথমতঃ ‘পুরুষগণ নারীদের সরদার বা নেতা’ এটা সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে। ‘ফিলবুয়ুত’ বা ‘গৃহভ্যন্তরে’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তাই এ হুকুমকে কেবল পারিবারিক জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায়না।
দ্বিতীয়তঃ আপনার একথা যদি মেনেও নেয়া যায়, তবু আমি (মওদুদী) জিজ্ঞেস করছি, যাকে পরিবার বা গৃহে নেতৃত্বের স্থান বা জিম্মাদারী প্রদান করা হয়নি বরং অধীনস্থ (অনুগতা)-এর স্থানে রাখা হয়েছে, আপনি তাকে সমস্ত গৃহের একত্রিত রূপ অর্থাৎ সমগ্র রাষ্ট্রে অধীনস্থতার পর্যায় থেকে তুলে নিয়ে নেতৃত্বের স্থানে নিয়ে যেতে চান? গৃহের নেতৃত্বের চেয়ে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তো অনেক বড় এবং উচ্চ পর্যায়ের জিম্মাদারী। এখন আল্লাহ পাক সম্পর্কে আপনার কি এই ধারণা যে, তিনি নারীকে তো একটি গৃহের নেতা বা সরদার করছেন না, কিন্তু লাখ লাখ ঘরের একত্রিত রূপ রাষ্ট্রের তাকে নেতা করবেন?
পবিত্র কোরআন পরিষ্কার ভাষায় নারীদের কর্মপরিধি নির্ধারিত করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
“তোমরা গৃহভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৪)
তারপর আপনি বলবেন যে, এ আদেশ তো নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত নারীদেরকেই দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমার (মওদুদী) প্রশ্ন হলো যে, আপনার পবিত্র ধারণায় নবী পরিবারের নারীদের মধ্যে কী কোন বিশেষ দোষত্রুটি ছিল, যার কারণে পরিবারের বাইরে কোন দায়িত্ব পালনে তাঁরা অযোগ্য ছিলেন? এদিক দিয়ে অন্যান্য নারীরা কি তাঁদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলো? কুরআনের এ পর্যায়ের যাবতীয় আয়াত যদি কেবল নবী পরিবারের জন্যই অবতীর্ণ হয়, তবে কি অন্যান্য মুসলিম নারীদের ‘তাবাররুজে জাহেলীয়্যাত’ বা জাহেলীয়্যাত যুগের সাজে বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে? তাদের জন্য কি বেগানা পুরুষদের সাথে এমন ভাবে কথা বলার অনুমতি রয়েছে, যাতে তাদের অন্তরে লোভ লালসার সৃষ্টি হয়? মহান আল্লাহ পাক কী নবী পরিবার ব্যতীত অন্যান্য মুসলিম পরিবারকে ‘রিজস’ বা ‘অপবিত্রতা’ লিপ্তাবস্থায় দেখতে চান?
এবার আসুন হাদীছের দিকে।
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের ধনী শ্রেণী কৃপণ হবে, যখন তোমাদের যাবতীয় কাজে কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে চলে যাবে, তখন তোমাদের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তর ভাগ অধিক কল্যাণকর হবে।” (তিরমিযী)
“হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলো যে, (ইরানী) পারস্যের জনগণ কিসরার কন্যাকে (মেয়ে) তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছে, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনো সাফল্য অর্জন করতে পারে না, যে জাতি স্বীয় কাজকর্মের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বভার একজন নারীর হাতে সোপর্দ করে।” (বুখারী ও তিরমিযী)
উপরোক্ত হাদীছ দু’টি মহান আল্লাহ পাক-এর বাণী ‘পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’- এর প্রকৃত ব্যাখ্যা বর্ণনা করে। এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা নারী জাতির কর্ম পরিধির বহির্ভূত বিষয়। একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়, তাহলো নারীদের কর্মপরিধি কি? এ প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদীছ শরীফটি পরিষ্কার ব্যক্ত করে যে,
“…. এবং নারী তার স্বামীর গৃহ এবং তার সন্তানদের হিফাযতকারিনী। তাদের সম্পর্কে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” (আবূ দাউদ)

পবিত্র কুরআন শরীফ-এর বাণী ‘এবং তোমরা তোমাদের গৃহসমূহেই অবস্থান করবে’ এর সঠিক ব্যাখ্যা এটাই যা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেলো। এর অতিরিক্ত ব্যাখ্যায় রয়েছে সে সব হাদীছ, যেগুলোতে নারীদেরকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কাজ গৃহবহির্ভূত ফরয ও ওয়াজিব থেকেও নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে।
‘জুমুয়ার নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানদের অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু, চার ব্যক্তি ব্যতীত: গোলাম, নারী, ছেলে-মেয়ে ও অসুস্থ ব্যক্তি।”(আবু দাউদ)

“হযরত উম্মে আতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানাযার সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে।” (বুখারী)

“যদিও আমাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গীর পক্ষে আমাদের নিকট শক্তিশালী যৌক্তিক প্রমাণাদিও রয়েছে এবং কেউ চ্যালেঞ্জ করলে সেগুলো পেশও করতে পারে, কিন্তু প্রথমতঃ এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ আমরা কোন মুসলমানের এ হক বা অধিকার স্বীকারও করি না যে, সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট আহকাম শুনার পর সেমতে আমল করার আগে এবং আমল করার জন্য শর্ত হিসেবে যুক্তি সংক্রান্ত প্রমাণাদির দাবি করবে।
কোন মুসলমান যদি সত্যিকার অর্থে সে মুসলমান হয়, তবে প্রথমে হুকুম মোতাবেক আমল করা তার দরকার এবং পরে স্বীয় মনমস্তিষ্ককে আশ্বস্ত করার জন্য যুক্তিপ্রমাণ তালাশ করতে পারে। কিন্তু সে যদি বলে, আমাকে আগে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করো, অন্যথায় আমি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুম মানবো না, তা হলে আমি তাকে মুসলমান বলেও গণ্য করবো না। তাকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান তৈরির অধিকারী হিসেবে গণ্য করা তো অনেক দূরের কথা। শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে, তার স্থান ইসলামের গণ্ডিবহির্ভূত, অন্তর্ভুক্ত নয়।”

(সূত্রঃ মাওঃ মওদুদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্ত। লেখকঃ মনজুর নোমানী)
উল্লেখ্য মাওলানা মওদুদী এ প্রবন্ধে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত করেছে যে, ইসলাম এবং ইসলামী শরীয়তে কোন নারীর জন্য আইন-পরিষদের সদস্য হওয়ার অবকাশ নেই, আর এটা ইজতেহাদী (তথা অনুমানভিত্তিক) মাসয়ালাও নয়, বরং এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট বিধান ও নির্দেশাবলী রয়েছে এবং কোন মুসলমান (সত্যিকার) মুসলমান হওয়ার জন্য এটা শর্ত যে, এ হুকুমকে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া। কিন্তু এর মাত্র কয়েক বছর পর মওদুদী এক চিঠিতে যা লিখে,
মওদুদীর পরবর্তী বক্তব্য (তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে)

পত্র নং- ৮৯
শ্রদ্ধেয়,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার পত্র পেয়েছি। আমাদের মত যুলুম ও স্বৈরাচারী নীতির প্রচলন থাকা মস্তবড় গুনাহ। এর পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে তা হবে একটি বড় বিপদকে দূর করার জন্য ছোট বিপদের সাহায্য গ্রহণ করা, যার অনুমোদন শরীয়াতে আছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

খাকসার আবুল আলা
প্রাপক, আব্দুল হাই সাহেব, সুলতানপুর, আজমগড়, ইন্ডিয়া।
মন্তব্য: এ চিঠিতে সে বলেছে যে স্বৈরাচার পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহন ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে নারী নেতৃত্ব গ্রহণের অনুমোদন শরীয়তে আছে। অথচ ১৯৫২ সালের ‘মাসিক তরজুমানুল কোরআন’ ও ‘মাসিক আল ফুরকান’ পত্রিকায় সেই লিখেছে নারী নেতৃত্ব কোন ইজতিহাদী মাসয়ালা নয়। অর্থাৎ কোন মাওলানা, কোন শাইখুল হাদীছ, কোন খতীব, কোন মুফাস্সিরে কুরআন, কোন মুফতির কিয়াস, পর্যালোচনা মতামত বা অভিমত খাটানো এখানে চলবে না। বড় খারাপ মোকাবিলায় ছোট খারাপ গ্রহণ এ জাতীয় কথা এখানে বলা চলবে না।
মওদুদীর ভাষায়: “শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে তার স্থান ইসলাম গণ্ডীবহির্ভূত; অন্তর্ভুক্ত নয়।” অর্থাৎ মাওঃ মওদুদীর ফতওয়া অনুযায়ীই সে ইসলামের গণ্ডীবহির্ভূত। অন্তর্ভুক্ত বা মুসলমান সে নয়। বরং হাদীছ শরীফ-এর বিচারে স্পষ্ট মুনাফিকই তাকে বলা যায়।
এখানে উল্লেখ্য, ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোথি আর্কাইভ’ নামক বইয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সি.আই.এ’র এজেন্ট।
ফিরআউনের কাহিনীও মওদুদীর প্রতি প্রযোজ্য হয়। একবার মানুষের ছুরতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এসে ফিরআউনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোন মনিব যদি কোনো গোলামকে তার প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি দেয় পরবর্তিতে সে গোলাম যদি উক্ত মনিবের বিরোধিতা করে তাহলে তার কি শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ফিরআউন তখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলেছিল তাকে লোহিত সাগরের পানিতে চুবিয়ে মারা উচিত। আল্লাহ পাক আপন কুদরতে ফিরআউনের মুখেই তার শাস্তির কথা উল্লেখ করিয়েছিলেন। তদ্রুপ তথাকথিত ইসলামী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর হাক্বীকত কী তা কুদরতময় আল্লাহ পাক তার হাত দিয়েই লিখিয়েছেন। এর প্রমাণ স্বরূপ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর আরো চিঠির উল্লেখ করা যায়। যেমন মওদুদী বলে:
পত্র- ৮৭, ২১শে নভেম্বর, ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আল্লার যমীনে আল্লার আইন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পথ থেকে বর্তমান একনায়কত্ব হটানো ছাড়া এ উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে না। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোনা বাস্তব পন্থা নেই। এ সময়ে যদি তৃতীয় একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্টের জন্যে দাঁড় করানো হয় তবে এটা প্রকৃতপক্ষে আইয়ুব খানকে একনায়কত্বে প্রতিষ্ঠিত রাখারই প্রচেষ্টা হবে।
খাকসার আবুল আলা
প্রাপক কাযী নাসীর আহমদ সাহেব নারুওয়াল।
পত্র- ৮৮, ২১শে নভেম্বর- ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার পেশকৃত প্রস্তাব শরীয়াতের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। জাল ভোট গ্রহণ করা অথবা টাকা দিয়ে ভোট কেনা এ দেশের জন্যে এমন ধ্বংসাত্মক যেমন ক্ষতিকর একনায়কত্ব। এ পন্থায় যারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে তাদের দ্বারা কোনো সংস্কার ও কল্যাণধর্মী কাজ হতে পারে না।

খাকসার, আবুল আলা
প্রাপক, আবু নোমান, শিয়ালকোট।
(সূত্র: মওদুদীর পত্রাবলী: আধুনিক প্রকাশনী)
মন্তব্য: ৮৮ নং চিঠিতে মওদুদী মন্তব্য করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ৮৭ নং প্রশ্নে উল্লিখিত “এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোন বাস্তব পন্থা নেই।” এই বক্তব্যও পরাজয়েরই পথ।
কারণ মওদুদী নিজেই স্বীকার করেছে নারী নেতৃত্ব হারাম এটা কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা সরাসরি ছাবেত। এর মধ্যে মানুষের ইজতিহাদ করার কিছু নেই। এটা স্পষ্ট হারাম। যে হালাল বলবে সে মুসলমানই থাকবে না। তাহলে সে হারাম পথে যদি বিজয় আসেও সে হারাম পথে আইয়ুব খান তথা একনায়কতন্ত্রকে যদি ঠেকানো যেতো তাহলেও মওদুদীর ভাষ্যানুযায়ী তা হত পরাজয়। কারণ তা হারাম পথে তথা অবৈধ পন্থায়।
আর মওদুদী নিজেও স্বীকার করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। কিন্তু কার্যত মওদুদী সেই হারাম পথেই গিয়েছে এবং তার কথিত পরাজয়ের পথেই তার কবর রচিত হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত জামাতে ইসলামী অদ্যাবধি সে পরাজয়ের পথে তথা হারাম পথেই রয়েছে। যা তাদের স্বীকারোক্তিতেও বিদ্যমান।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এসোসিয়েশন অফ মাওলানা সাঈদী সাপোর্টাস- এর বিশেষ বুলেটিন ‘মূলধারার’ সাথে সাক্ষাৎকারে সাঈদী যা বলেছে,

প্রশ: আপনে সর্বদা নারী নেতৃত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন? অথচ ৯১ এর নির্বাচনের পর নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিলেন কেন?

উত্তর: আমরা নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অতীতেও বক্তব্য রেখেছি। এখনো আমরা সে অবস্থান থেকে সরে যাইনি। জনগণকে সবসময়ই বুঝাচ্ছি ইসলামে নারী নেতৃত্ব স্বীকৃত নয়। নারী নেতৃত্বকে আমরা সমর্থন দেইনি।
কিন্তু পাঠক! ৯১-এ বি.এন.পির সাথে আঁতাত এবং বর্তমান জোট নেত্রীর সক্রিয় অনুসরণ-অনুকরণ তথা একাত্মতা দ্বারা সাঈদীর উপরোক্ত কথার সত্যতা কত চরম মিথ্যা তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাও বোধ হয় সুস্থ মানুষের নেই। মূলত এহেন চশমখোর গোষ্ঠীর পক্ষেই সম্ভব ৭১-এর মত রাজাকারগিরি করা, নারী-ধর্ষণ হত্যা ও লুটতরাজের মহোৎসব করা। কারণ আসলে তো এরা ইসলাম করে না। করে ইসলামের লেবেল এঁটে স্বার্থের রাজনীতি। স্বার্থের জন্যই আজ নারী নেতৃত হারাম বলে কাল হালাল বলে।
আর এরূপ স্বার্থবাদী রাজনীতি করে বলেই দে. হো সাঈদী নিউইয়র্ক থেকে ‘৯০ সালে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায়’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছে
প্রশ্ন: গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পর আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে আপনি কি বলেন?
সাঈদী (মুচকি হেসে): রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা শেষ কথা বলে কিছু নেই। (অর্থাৎ ইসলামকে এরা রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে ইসলাম হিসেবে মানে না এবং এরা অন্যান্য দুনিয়াবী রাজনীতিবিদদের মতই) বাস্তবেও তাই হয়েছে। বেশি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ৯৯-এ বিএনপির সাথে আঁতাত করেছে। তাদের নিজামী বলেছে ইসলাম কায়েমের জন্য নয় বরং আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য তারা নির্বাচন করেছে। অথচ এ নির্বাচনকে তারা আখ্যা দিয়েছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। এর জন্য মাল, অর্থ-সময় সব কিছু দেয়াকে তারা জিহাদ বলে উল্লেখ করেছে।
কাজেই ধর্মের নামে এভাবে ধোঁকা প্রতারণা, মুনাফিকী আর কত দিন। হাদীছ শরীফ-এ এদেরকে যমীনের নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এদের কাছে না যেতে এবং কাছে আসতে না দিতে বলা হয়েছে। তাহলে তারা আমাদের গুমরাহ করতে পারবে না তাও বলা হয়েছে।
তাহলে মুসলিম পাঠকগন এখন কি বলবেন?
{মূল-আবদুস সবুর}
http://www.somewhereinblog.net/blog/shakeer/29677519

Sunday, April 7, 2013

গণমাধ্যমকর্মীদের উপর সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ





নাদিয়া শারমীনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী সাংবাদিকদের উপর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে রবিবার বিকেল ৪ টায় নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নারী সাংবাদিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের উদ্যোগে এ মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।কর্মসূচি থেকে বক্তারা ঢাকায় নারী সাংবাদিককে মারধর, হয়রানিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

চট্টগ্রামে হেফাজতের সমাবেশের সময় শুক্রবার মারধরের শিকার হন একাত্তর টিভির চার সাংবাদিক। ওইদিন হেফাজতকর্মীরা নাজেহাল করেন সাংবাদিক সুমি খানকেও।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ে তোলার শপথে তরুণসমাজ সহ দেশপ্রেমিক আপামর জনতা রাজপথে পথে নেমেছে। ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে  তালেবানি রাষ্ট্রে পরিনত করতে চাইছে।
বক্তারা আরো বলেন, নারী ছাড়া একটি দেশ সভ্য জাতিতে পরিনত হতে পারে না, নারীর অবদান ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারে না। নারীর অবদান অস্বীকার করে যারা, নারীকে অবদমিত করে রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তুলতে হবে।
সাংবাদিক সুমি খান’র সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী নূরজাহান খান, মহিলা পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক লতিফা কবির, অধ্যাপক আলেক্স আলীম, সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, লতিফা রুনা, সাবেক ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান, গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার, প্রীতম দাশ, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহ সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ, ছাত্র ফ্রন্টের আল কাদেরি জয়, সুমন দত্ত, সাফকাত আনোয়ার, সুজন বর্মন প্রমূখ। সমাবেশে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নারী বাদী ছড়া আবৃত্তি করেন অধ্যাপক আলেক্স আলীম ও কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান। সমাবেশ শেষে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠার হাতে নির্যাতিত ও হামলায় আহত সাংবাদিকদের তালিকা করে পরবর্তীদে কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলে জানান হয়।
সমাবেশে বক্তরা আরো বলেন,  স্বাধীনতার বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশের সার্বভৌমত্ব, বাঙালির অস্তিত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক প্রগতিগামী বাংলাদেশ তথা মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।