Thursday, October 10, 2019

আবরারদের কেউ হনন করে কেউ হননকারী - জ শ তিমির


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলে যাওয়া কথাগুলি নিয়ে ভাবছিলাম   'দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, দেশ চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয়, তবেই দেশ প্রকাশিত। সুজলা, সুফলা মলয়শীতলা ভূমির কথা যতই উচ্চকণ্ঠে রটান ততই জবাবদিহির দায় বাড়বে, প্রশ্ন উঠবে প্রাকৃতিক দেশ তো উপাদানমাত্র, তা নিয়ে মানবিক সম্পদ কতটুকু গড়ে তোলা হল। মানুষের হাতে দেশের জল যদি শুকিয়ে যায়, ফল যদি যায় মরে, মলয়জ যদি বিষিয়ে ওঠে মরিবীজে, শস্যের জমি যদি হয় বন্ধ্যা, তবে কাব্য-কথায় দেশের লজ্জা চাপা পড়বে না। দেশ মাটিতে তৈরী নয়, দেশ মানুষে তৈরী’' ।

 বাংলাদেশ তথা রাজধানীর শ্রেষ্ঠ মানুষ গড়ার অন্যতম কেন্দ্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বুয়েটে  একটি টর্চার সেল আছে, এই টর্চার সেলে কিভাবে আবরার ফাহাদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল সেটির  বিবরণী পত্রিকাতে পড়তে পড়তে খুন হয়ে যাওয়া ছেলেটির ফেসবুক আইডিতে গেলাম - আবরার সেপ্টেম্বর মাসে ইন্ট্রো অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে ভূমিকাতে লিখেছিলো - 'অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে ''।

কয়েকটি সংবাদপত্রে এসেছে আবরারের পড়ার টেবিলে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পাওয়া গেছে, কয়েকটি স্ট্যাটাস নজরে পড়লো, একাত্তরে বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও কিন্তু বিবিসি মুক্তিবাহিনীর খবর প্রচার করে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর অপপ্রচার আর তাদের মিডিয়াতে শান্ত কাশ্মীরের যে খবর প্রচার করছে একাত্তরে পাকমিডিয়াও একই কাজ করেছিল'আর কয়েকটি পোস্টে দেখা গেলো ভারতকে পানি, গ্যাস ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে  তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, নিজস্ব মতামত।

আমাদের সাথে তার সে মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি নাও মিলতে পারে, আবার মিলতেও পারে ।
কারো মতামত কারো সাথে না মিললে তাকে হত্যা বা নির্যাতন করার কোনো অধিকার বা ক্ষমতা ছাত্রলীগ বা কাউকেই কেউ দেয়নি। কথিত, যে, নিহত ফাহাদের ফেসবুক একাউন্ট ও ইনবক্স ঘেঁটে তার সঙ্গে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া গেছে বলে মনে করেছিল ফাহাদ হত্যার সাথে জড়িত বলে সন্দেহভাজনরা ।
জামাত শিবির বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত করা হয়নি, জামাত  শিবিরের অনেক নেতা কর্মী সদস্যরা  বর্তমান সরকারি দলটিতে যোগদান করেছে, এমন খবর পত্রিকাতে প্রচুর পাওয়া যাবে, কুখ্যাত  যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী দণ্ডিত অপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে  নিবাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, এই বাস্তবের প্রেক্ষাপটে কোন স্পর্ধাতে ঘন্টার পর ঘন্টা অত্যাচার করে  একজন ছাত্রকে হত্যা করলো আরো কয়েকজন ছাত্র ?

এই ছাত্র রাজনীতি আমাদের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৮ এর শিক্ষানীতি, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও  মুক্তিযুদ্ধ, নব্বই এর স্বৈরাচার  বিরোধী গণ আন্দোলন - একের পর এক মাইল ফলক  দিয়েছে স্বর্ণালী ইতিহাসের নেতৃত্বদানকারী নেতা নেত্রী, উত্তরাধিকার নেয়ার সন্তান সন্ততি কেউ কি কোথাও নেই ?

পাকিস্তান আমলে ভারত  বিদ্বেষী রাজনীতির সমর্থনে ছিল এদেশের ২০ শতাংশ মানুষ, বর্তমান বাংলাদেশে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশ, ভারত ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক আজ সেখানে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী  তথা মুসলিমদের নানা ভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে, তবে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখনো পাল্লা ভারী। 

বাংলাদেশে এখন ভারতবিদ্বেষী রাজনীতির সমর্থকের পাল্লা ভারী, বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে  মানুষ যদি হত্যা করতে হয় তাহলে তো বর্তমান বাংলাদেশের আশি ভাগ জনসংখ্যা হাপিশ করার মতো গণ হত্যা যজ্ঞে নামতে হবে, সেটা কি সভ্য বা সুস্থ কোনো চিন্তা চেতনা ? এই চিন্তা বা কর্ম একটি মারাত্মক অপরাধ !

তবে, বিচারহীনতা আমাদের সমাজকে বেপরোয়া করে দিয়েছে, আমরা মানুষের জীবন দিতে পারিনা, মানুষকে দুবেলা খেতে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা ভাবিনা, মানুষের দায়িত্ব নেয়ার কথা ভাবিনা, মানুষের উপকার করার কথা ভাবিনা, কিন্তু স্বার্থে লাগলে খুন করতে,  জীবন কেড়ে নিতে, পিছপা হয়না, প্রয়োজনে জোট বাঁধি ।

ভিন্ন মতের মানুষ হত্যা বাংলাদেশে খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে , দেশের মানুষ ভিন্ন মতের  মানুষ হত্যা কখন স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে অথবা কখন যে পারেনা, সেটা কি বোঝা সহজ !একটু ফ্ল্যাশব্যাক -

১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির নামে জামাত ই ইসলামীর ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেয়া, রিকশার স্পোক কানের ভেতর ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মগজ বের করে আনা, হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলা, কব্জি কেটে নেয়া, কিরিচ, ছোরা, কুড়াল ব্যবহার করে হত্যা করার মতো নৃশংসতা এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কেবল শিবিরের নামের সাথেই যুক্ত ছিল । ৮০ র দশকে ভিন্ন মতের ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম হত্যার কাফেলা  শুরু করে শিবির, মাত্র কয়েকটি উদাহরণ -

১৯৮১: শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।   ১৯৮৪: চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে শিবিরেরকর্মী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা  শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে।  ১৯৮৬ :শিবির ডান হাতের কবজি কেটে নেয় জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা আবদুল হামিদের। পরবর্তীতে ঐ কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।   ১৯৮৮: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মেইন হোস্টেলের সামনে, কলেজের প্রিন্সিপাল ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, ও শত শত শিক্ষাথীদের সামনে ছাত্রমৈত্রী নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। ১৯৮৮:  চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। 

১৯৮৮:  সিলেটে শিবির ক্যাডাররা মুনীর, জুয়েল ও তপনকে বর্বরভাবে হত্যা করে। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯০: ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারম্নককে শিবিরের ক্যাডাররা জবাই করে।  ১৯৯২ : শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং ২৪ জুন তিনি মারা যান।  ১৯৯৩: বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কমীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী ক্রিকেটার জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।  ১৯৯৩: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে ছাত্রদল ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপন সহ ৫ জন ছাত্র নিহত হয়।

১৯৯৪: পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির কমীরা।১৯৯৫ : শিবির কমীরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ্ববতী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার আগে বর্বর শিবির ক্যাডাররা তার হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়।১৯৯৬ : জাসাস রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং

১৯৯৭: চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করার পর পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
১৯৯৮:  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয় তলাপত্রকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। ২০০০: চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১৯৯৯: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এনামুল হকের ছেলে ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মুছাকে শিবিরকমীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।২০০৪: অধ্যাপক মোঃ ইউনুসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাবার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।এলাকাবাসী অনেকেরই মতামত হচ্ছে ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররাই তাকে হত্যা করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্র শিবির তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।২০০৪: বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা হত্যা করে।২০০৬ : বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং রাবি ছাত্র শিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীন সহ আরো দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে অতকিতে হামলা চালিয়ে রাবি’র ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে।   ২০১০: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।

বাংলাদেশে প্রথম বড় রকমের বোমা হামলা হয়েছিল বিএনপি আমলে ১৯৯৯ সালের ৭ই মার্চ৷ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে চালানো বোমা হামলায় সেদিন ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছিলেন ৷ সে বছরেরই ৮ই অক্টোবরে খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় সাত জনকে, আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩০ জন৷ তারপর ২০০১ সালে রমনা বটমূলে নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন, এখনো শরীরে হামলার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক মানুষ ৷ ২০০৫ সালে  দেশের ৬৩টি জেলার পাঁচশ'রও বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ৷

৮০ র দশকে ভিন্ন মতের ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম হত্যার কাফেলা  শুরু করে ইসলামী ছাত্র শিবির, পরবর্তীতে শুধু কওমি মাদ্রাসাগুলোই  নয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও জঙ্গিবাদের কারখানা হিসাবে চিহ্নত হতে থাকে, আনসারুল্লাহ, হিজবুত তাহেরি ও হেফাজতি ইসলামী সহ নানা নামে নানা তরিকতে  ইসলামী উগ্রপন্থী ও জঙ্গিরা ভিন্ন মতের ভিন্ন ধর্মের  মানুষ কোপানো ও হত্যালীলা শুরু করে ফতোয়া দিয়ে তালিকা পাঠিয়ে ৷

২০১৩ সালে  রাজীব হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ২০১৫ সালের ৩০শে মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।২০১৫ সালের ১২ মে ঢাকার বাইরে সিলেটে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাশ, সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন হওয়ার পর তিন মাস না পেরোতেই ঢাকায় আরেক ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টেবর রাজধানীর লালমাটিয়ায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ দুই জনকে কুপিয়ে আহত করা হয় । এর চার ঘণ্টার মাথায় শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট সাভারে ব্লগার আশরাফুল আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  একই কায়দায় ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ২০১৬ ২৬ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে স্লোগান দিতে দিতে দিনের আলোয় পৰ ছেড়ে বেরিয়ে যায় হত্যাকারীর দল ।

এর দুই দিন আগে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১ ৬ তে, এই ফেসবুকে লেখার জন্যেই, রাজধানীতে খুন হয়েছিলেন  অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদ, হত্যা করা হয়েছে শাহজাহান  বাচ্চুকে  ।  প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডেই নিহতদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, অথবা মোটর সাইকেল যোগে দিনের আলোয় এসে  হত্যা করা হয় এবং এখনো কোনোটার বিচার শুরু অথবা শেষ হয়নি ।

বেশ ক বছর হলো আওয়ামী লীগ পুশব্যাক দেখছি বুক ফুলিয়ে  মুসলিম আওয়ামী লীগের দিকে ৷ কারণ তারা দেখেছে,  ধর্ম দিয়ে রাজনীতি খেতো ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় উপমহাদেশ, খেয়েছে পাকিস্তান, স্বাধীন বাংলাদেশের পঁচাত্তর পরবর্তী ফর্মুলা গেছে জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার হাত ধরে ৷

আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাহাত্তরের সংবিধান এবং কওমি দোয়া নিয়ে ইসলামিক বাংলাদেশের সোজা পথে আগে বেড়েছে বর্তমান ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দল  ৷

অথচ, দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা  মৌলবাদ-কূপমণ্ডুকতা থেকে উত্তরণের উৎকৃষ্ট উপায়, আর প্রগতিশীল এবং বামপন্থি নামধারী গোষ্ঠী শুয়োরের  মতো ঘোৎ ঘোৎ আওয়াজ তোলার শক্তি নিঃশেষ করে ফেলেছে বিধায় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সমাজের সর্বস্তরে ধর্মান্ধতা আর ধর্মীয় উগ্রতা প্রতিষ্ঠিত করতে কারো কোনো বেগ পেতে হয়নি  ৷ ক্ষমতাসীন দলে জায়গা হয়েছে জামাত শিবির বিএনপি মাহে কলেমা দিব্যি করে  পেশা ছেড়ে দেয়া জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের ৷

একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনি ও পরিকল্পনাদাতা নেতৃবৃন্দ পার পাননি, ২১ শে আগস্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য  ৷  আবার হাজারো  রাজনৈতিক গুম খুন জোড়া খুন, ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার এখনো হয়নি ৷  দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তারেক রহমানের হাওয়া ভবনও টেঁসে গেছে, তার স্থলাভিষিক্ত  হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বহু কোটিপতি নেতা পাতি নেতাদের ভবন ৷  রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে অবৈধ ব্যবসা, দুর্নীতি, হত্যা, জুলুম  আর জবরদখলে বঙ্গবন্ধুর সেই চাটার দল এখন কোটি গুনে স্ফীত আর শক্তিশালী ৷

জনগণ ই সকল ক্ষমতার উৎস, যে ভুলেছে সে ডুবেছে,  আর জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী হলো তরুণ প্রজন্ম যাদেরকে হত্যার লক্ষ্য ও হত্যাকারী হিসাবে নয়, আমাদের জীয়ন কাঠি হিসাবে আগলে রাখতে হবে আমাদের সামনের দিনের জন্যে নাহলে আলো জ্বালাবার কেউ থাকবে না !
১০ অক্টো, ২০১৯