Wednesday, October 2, 2019

মা দিবসে অামার মা

মা অামার  অকপট, অকৃত্রিম অশেষ ভালোবাসা, মানবতার সেবা আর প্রাণ খোলা হাসির প্রাণপ্রাচুর্যে ভরিয়ে রাখেন চারপাশের জগৎ সংসার! অথচ নিজে কখনো জানতেই পারলেন না ‘মায়ের কোল’ কাকে বলে-;মায়ের অাদর ‘ কাকে বলে, জানলেন না। মায়ের ছোঁয়া ই পেলেন না কখনো আমার মা !  অাম্মুর জন্মের তিন দিনের দিনই  অাম্মুর জন্মদাত্রী মা জাহান অারা বেগম টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রয়াত হন।জন্মানোর পর পর ই আমার মা  নূরজাহান খান মা হারানোর গভীরতম শূন্যতায় ডুবে গেলেও যেন অন্য কাউকে  সেই বেদনা পেতে না হয়, সেই প্রচেষ্টা করে যান চিরকাল। যে কারণে আম্মুর অাশে পাশে  নানান জাতি, বর্ণ গোত্রের অনেক মানুষ তাঁর অাদরে স্নেহে ধন্য শত শত সন্তান -আকুল  হয়ে তাঁকে ‘মা’ বলেই ডাকেন ! অামি অাম্মুর অযোগ্য কন্যা! অাজ মা দিবসে অাম্মু অামাকে  প্রাণ ভরে অাশীর্বাদ করে  বললেন, "তুমি অামার মা, অামি যেমন তোমার মা...অনেক ভালো থেকো.."!  অাম্মু, এতো ভালো কেন, তৃমি? অামি যেন তোমার সত্যিকার মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারি।তুমি শতায়ু হয়ে এমন করেই পূর্ণতায় ভরিয়ে রাখো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে!

আমার গহনের মাতৃত্বের পূর্ণতার ২০ বছর

মাতৃত্বের পূর্ণতা হয়তো একেই বলে। মায়েদের খুব বেশি কিছু অথবা কিছুই চাওয়ার থাকে না।  অনেক কষ্টের অশ্রুধারায় অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমার গহন আজ ২০ বছর পূর্ণ করলো। Full Scholarship নিয়ে IUB তে ভর্তি হবে।  ১৯৮৭ সাল থেকে লেখালিখি করি। 'নারী' হবার দোষে সংবাদপত্রে চাকরি হলোনা। ফ্রিল্যান্স কাজ করে অনেক কাভার স্টোরি করলাম।  অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করলাম। ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের সাড়া জাগানো ইংরেজী মাধ্যম স্কুল CGS য়ে যখন চাকরি শুরু  করি purely breastfeeder baby গহন তখন ৭ মাস বয়স।  সেই সাতসকাল থেকে দুপুর,  মা ছেলে দু'জনেরই অনেক কষ্ট হতো। ওর জন্য ছুটে অাসতে হতো। চাকরি ছেড়েই দিলাম একদিন। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে ভালো রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগে এতোটুকু দ্বিধা করিনি কখনো। ১৯৯৭ য়ের ৩০ নভেম্বর থেকে ১৯৯৯ য়ের ডিসেম্বর এক রাত ও ঘুমাইনি।  ২ বছর যতো কষ্টই হোক, অামার সন্তানদের কখনো ফ্যাশান বা বিলাসিতা দেখাতে  বা নিজের ঘুম নিশ্চিন্ত করার জন্যে বেবিকট য়ে রাখিনি, ফিডার ( Feeder)  দেইনি। অামাদের অভিভাবক অামাদের বাপ্পু ডাক্তার কামাল এ খান অামাদের শৈশব থেকেই বাচ্চাদের ওয়াকারে হাঁটানো শিখানো বিপদ্জজনক বলে মানা করেছিলেন অামার মা'কে। মা তাই অামাদের ওয়াকারে হাঁটানো শেখান নি। শিশুর কোমরের হাড়ে চাপ পড়ে বলে অামিও চারপাশের মানুষের মতো 'দেখানোপনা' র স্রোতে ভেসে ওয়াকার (Walker)  দিয়ে বাচ্চাদের হাঁটা শিখাইনি।বিছানার পাশ ধরে দাঁড় করাতাম, খেলনা দিচ্ছি দেখিয়ে বিছানার দুইপাশে হাঁটাতাম। বাড়ির বড়োদের হাত ধরে একটু একটু হাঁটতো। রাতে বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছি। কখনো কোন কৃত্রিমতায় অামার বাচ্চাদের বড়ো করিনি। গহনকে নিয়ে একবার চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেছি একলাই। অামার কোলে গহনকে দেখে কার্ডিওলজিস্ট এসসি ধর বললেন, " নিশ্চয়ই ব্রেস্টফিডার বাচ্চা? বাচ্চার মুখ দেখলেই বোঝা যায়।  তুমি  ওর শারীরিক অার মানসিক  ভিত গড়ে দিলে। খুব মেধাবী হবে এই বাচ্চা। অারে, গরুর দুধ তো গরুর বাচ্চার জন্যে, মানুষের বাচ্চা তো মায়ের দুধ খাবে।" ধীমান 'দা (ডা. ধীমান চৌধুরী)  সতর্ক করেছিলেন ৫বছর বয়সের নীচে চিপস, কোক ফান্টা দিলে ব্রেনে এফেক্ট হতে পারে, যা পরে প্রভাব পড়বে। তাই বাচ্চাদের ৮/৯ বছর বয়স পর্যন্ত কোক ফান্টা বা চিপস খেতে দেইনি।  এর পর মেহমান দের দেখে কোক ফান্টা খেতে চাইতো গহন, তাই  একটু পানি মিশিয়ে দিতাম। কয়দিন অাগে পর্যন্তও গহন পানি মিশিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতো। কতো স্মৃতি মনে পড়ছে অাজ! অনেক না বলা রইলো, কিছু বলি অাজ।
জ্যেষ্ঠ সন্তান অতুলনকে  কাজীর দেউড়ি বাসা থেকে রিক্সায় করে ফুলকিতে অানা নেয়ার সময়ে ছোট্ট গহন অামার বুকে ঘুমাতো।  ফুলকির দরজায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের ভেতরে ঢুকাতেন বীরেন'দা। কয়েক বছর পর গহন হাঁটছে, বড়ো হচ্ছে দেখলেন। একদিন বললেন, "এই বাচ্চাটা একদম অাপনার বুকের মাঝেই বড়ো হয়েছে। দেখবেন দিদি, ও কখনো অাপনাকে ছেড়ে যাবেনা। "  অতুলনকে ৪ বছর বয়সে বৃটিশ কাউন্সিলে ভর্তি করলাম YLC course য়ে। ১৯৯৮ সালে ২/ ৩/৪ মাসের গহন কে বৃটিশ কাউন্সিলের তক্তপোষে  শুইয়ে রাখতাম। অতুলনকে শেলফ থেকে বই নামিয়ে চেয়ারে বসে পড়াতাম।  তখন ইঞ্জিনীয়ার্স ইইন্সটিটিউট ভবনে  বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী।  মাতৃভূমি,  মানবতা,  পেশাদারীত্ব অার সন্তান সমান্তরাল রেখে এই সংসার সমরাঙ্গনে  ঠকেছি অার ঠেকেছি বারবার। তবু তো মাতৃত্ব সবার উপরে। সন্তান প্রতিপালনে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে চায় একজন মা। ২০০৪ সালে জামাত বিএনপি'র সন্ত্রাসীরা হামলা করলো, ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে বাচ্চারা খুব কষ্ট পেলো। অতুলন খুব কাঁদতো,  মুখের সামনে অাসতে পারতো না। গহন ওর মাটির টেরাকোটার ছোট্ট পুতুল গুলো এনে দিতো অামি যেন বিছানায় শুয়ে খেলতে পারি, অামার মমন যেন  ভালো থাকে।  জামাত বিএনপি  সসরকারের পুলিশ গ্রেফতার করলো যেদিন,  গহনের প্রচন্ড জ্বর সেদিন।  ছোট্ট গহন তার মায়ের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে পুলিশের জীপের পেছন পেছন ছোট্ট ছোট্ট পায়ে অাস্তে অাস্তে হেঁটে চলে গিয়েছিলো অনেক দূর। প্রতিবেশী  হরিজন পললীর লোকেরা গহনকে নিয়ে পৌছে দিয়েছিলো বাসায়। প্রতিটি সংকটে  অামার সন্তানেরা অামার বুকের মাঝে, অামার পাশে থেকেছে। অামি ইটিভিতে যোগ দেবার পর ২০০৭ সালের শুরু থেকে সেই ৯  বছর বয়স থেকে মায়ের সান্নিধ্য থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত থেকে সপ্তাহশেষে শুক্রবার অামি চট্টগ্রামে এলে মায়ের উমে নাক ডুবিয়েছে।  ইটিভি তে যোগ দেবার সময়ে অামার চট্টগ্রামে  কাজ করবার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ সেই কথা অার রাখেন নি। দুস্তর বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে যেন চোখ মেলে দেখছি অামার সকল সুখদুঃখে র সাথী অামার নাড়িছেঁড়া ধন অামার গহন।  যখন অামার বুকে মাথা রাখে অামার কনিষ্ঠ সন্তান গহন,  জগতের সকল সুখ যেন অামায় ঘিরে রাখে।  মানবতায় উৎসর্গিত হোক তোমার জীবন,  বাবাধন!  এদেশের মাটি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষ কোটি মানুষের পবিত্র রক্তে স্নাত মনে রেখেই নিজেকে সুকঠিন দায়িত্ব পালনে  নিবেদিত রেখো সেই প্রতিদান পরবর্তী প্রজন্মে ফিরিয়ে দিতে।  ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ নির্যাতন, পাকিস্তানী শাসক শোষকদের নিপীড়ন নির্যাতন সয়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে  অকাতরে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন যাঁরা, তাঁদের মহান অাত্মদানের ইতিহাস পৌঁছে দিও প্রজন্মান্তরে তৃণমূ্ল থেকে বিশ্বসভায়। জ্ঞানে, মেধায় অনেক বড়ো হবে,কঠোর পরিশ্রম অার সততায়  জিনে নিও বিশ্ব। Celebrating 20th Birthday of My lovely  younger Son Writban.