Wednesday, November 6, 2013

জনমত যাচাই ॥ স্টার -আলোর ষড়যন্ত্রের যবনিকার অন্তরালে- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



স্টিভেন্স কলিন্স লন্ডনের একজন মধ্যবয়সী শিশু সাহিত্যিক। শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি লেখেন। শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক নানাধরনের মজার লেখা লেখেন। অনেকটা আমাদের ড. জাফর ইকবালের মতো। ড. ইকবাল কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও যেমন বড়দের জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক কলাম লেখেন স্টিভেন্স কলিন্সও তেমনি বড়দের জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয়েও লেখালেখি করেন। তবে ড. জাফর ইকবাল বাংলাদেশে যতটা জনপ্রিয়, স্টিভেন্স কলিন্স বিলেতে এখনও ততটা বিখ্যাত নন। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় অধুনালুপ্ত ইনার লন্ডন এডুকেশনাল অথরিটিতে (ওখঊঅ) কাজ করার সময়।
কলিন্সের নামটি এখানে এ জন্যই উল্লেখ করলাম যে, ইলিয়াতে একসঙ্গে চাকরি করার সময় তিনি আমাকে মজার মজার বই পড়তে দিতেন। এগুলো সবই কূটনীতি এবং কূটষড়যন্ত্রে দক্ষ ইউরোপের বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে লেখা। অনেক বিস্ময়কর তথ্য, অজানা কথা এদের সম্পর্কে বইগুলোতে পেয়েছি। যাদের নিয়ে এ বইগুলো লেখা তাঁরা হলেন- বিসমার্ক, মেকিয়াভেলি, রাশপুটিন, কুইসলিং, গোয়েবলস, কিসিঞ্জার প্রমুখ।
জার্মানির নাৎসি নায়ক গোয়েবলস সম্পর্কে লেখা একটি বইয়ে এমন তথ্য পেয়েছি, যা আমার আগে জানা ছিল না। তাঁকে ‘অসত্য প্রচারণা’র গুরু বলেই এতকাল আমরা জানতাম। কিন্তু জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজেও তিনি যে নানারকম কৌশলের আবিষ্কর্তা, তা জানতাম না। ইউরোপে নির্বাচনের আগে বা কোন বড়রকম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থাটি তখন মাত্র উদ্ভাবিত হয়েছে এবং মূলত সংবাদমাধ্যম তা ব্যবস্থা করছে। গোয়েবলস সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য এ ব্যবস্থাটিকেও নাৎসি দলের নির্বাচন জয়ে ব্যবহারের কৌশল হিসেবে কাজে লাগান।
হিটলারের নাৎসি পার্টির অবস্থা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে একেবারেই ভাল ছিল না। এই দলের পেছনে জনসমর্থন মোটেই ছিল না। হিটলার ও নাৎসি পার্টি কোনদিন ক্ষমতায় যাবে, এ কথা কেউ বিশ্বাস করত না। নাৎসি দলকে তখন একমাত্র সাহায্য যোগাত আমেরিকা। রাশিয়ায় তখন কমিউনিস্ট বিপ্লব সফল। সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। ধনবাদী আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব কমিউনিস্ট জুজুর নামে ভীত। সাম্যবাদী বিপ্লব বুঝি ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিপ্লব ঠেকা দেয়ার জন্য আমেরিকার অর্থে ও সাহায্যে ইতালি ও জার্মানিতে দুই প্রাক্তন সোস্যালিস্ট নেতা মুসোলিনী ও হিটলার ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। জন্ম হয় বিশ্ব শতকের হিংস্র ফ্যাসিবাদের। পরবর্তীকালে কমিউনিজম ঠেকানোর জন্য আমেরিকা যেমন ইসলামিক টেরোরিজমের এবং তালেবানদের জন্ম দিয়েছিল, গত শতকের কুড়ির দশকে তেমনি কমিউনিজমকে ঠেকানোর জন্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিল।
আমেরিকার অনুসরণ করেছিল ব্রিটেনের ধনিক-বণিক এলিট ক্লাসও। ইউরোপে তখন ফ্যাসিবাদের উত্থানের পর্ব শুরু হয়েছে। সেদিক থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজের এলিট শিক্ষকরা পর্যন্ত স্লোগান তোলেন- লাল বা কমিউনিস্ট হওয়ার চাইতে মৃত্যু হওয়া ভাল।
লন্ডনের ‘টাইমস’, ‘ডেইলি মেইল’সহ বড় বড় দৈনিকগুলো কমিউনিজমের ভীতি প্রচার করে ফ্যাসিবাদের জয়গান গাওয়া শুরু করেছিল।
এতকিছু করার পরও ইতালি বা জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট দলগুলো তেমন জনসমর্থন পায়নি। সোস্যালিস্ট ও কমিউনিস্ট দল ছিল প্রভাবশালী দল। কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল প্রচ- বিবাদ। এ সময় হিন্ডেনবার্গ ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর। বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতোই জার্মানিতে তখন একটি দুর্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ চলছে। বর্তমান বাংলাদেশের মতোই সুবিধাবাদী এলিট ক্লাস ও বুদ্ধিজীবীরা হিন্ডেনবার্গ সরকারের নিত্য সমালোচনা এবং নাৎসি দলকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দানে ছিল ব্যস্ত। ক্ষমতায় আসার আগেই হিটলারের নাৎসি দলের ব্রাউন শার্ট বাহিনীর ক্যাডাররা জনজীবনে সন্ত্রাসের দ্বারা ভীতি সৃষ্টি শুরু করে। দুটি নিরপেক্ষ বহুল প্রচারিত দৈনিক হিটলারের ভার্সাই চুক্তিবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনদানের নামে কার্যত নাৎসি দলকে সমর্থন দেয়া শুরু করে এক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশে ঢাকার দুটি ‘নিরপেক্ষ’ মিডিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সমর্থনদানের নামে বিএনপিকে সমর্থন দান লক্ষ্য করার মতো।
তার পরও প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর ইউরোপে ফ্যাসিবাদ তেমন জনসমর্থন লাভ করতে পারেনি। হিটলারের নাৎসি পার্টি ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে এমন সম্ভাবনা ছিল কম। যদিও জার্মানির সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার বড় অংশ, মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরোক্র্যাসির একটি শক্তিশালী মহল হিটলারকে ক্ষমতায় আনার জন্য চ্যান্সেলর হিন্ডেনবার্গের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে চলছিল (এ সম্পর্কে অভিসন্ধিৎসু পাঠক বিখ্যাত মার্কিন লেখক লুই ফিশারের ‘ফল অব দ্য থার্ড রাইখ’ নামক বিখ্যাত নিবন্ধটি সংগ্রহক করে পড়ে দেখতে পারেন)।
সন্ত্রাস, মিথ্যা প্রচার এবং ইহুদীবিদ্বেষ ছড়িয়েও (বাংলাদেশে বর্তমানে যেমন সন্ত্রাস, মিথ্যা প্রচার ও ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়) নাৎসি পার্টির জনসমর্থন বাড়াতে না পেরে হিটলার তাঁর প্রচার উপদেষ্টা গোয়েবলসকে একদিন ডেকে পাঠান। লন্ডনের স্টিভেন্স কলিন্সের কাছ থেকে পাওয়া বইটিতে এই কাহিনীটি আমি পেয়েছি। গোপন বৈঠকে গোয়েবলসকে হিটলার জিজ্ঞাসা করলেন, আসন্ন নির্বাচনে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতাও দেখাতে না পারলে তো চ্যান্সেলর হিন্ডেনবার্গ আমাকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য ডাকবেন না। ভোটদাতাদের মনে সন্ত্রাস সৃষ্টির সঙ্গে, সেনাকর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের পূর্ণ সমর্থন পেলেই ব্রাউন শার্টের ক্যাডাররা ভোটের বাক্স নাৎসি দলের পক্ষে ভোটে ভরিয়ে ফেলতে পারবে। এটা করার উপায় কী?
গোয়েবলস বলেছেন, ‘আমাদের সমর্থন ও সাহায্যদানের ব্যাপারে জেনারেল এবং সুশীল সমাজের একটা অংশের মধ্যে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। এটা দূর করতে পারে ব্রিটিশ ও আমেরিকান সরকারের চাপ। এই চাপ তাঁরা যাতে সৃষ্টি করেন, সেজন্য আমি একটি উপায় উদ্ভাবন করেছি।’ হিটলার জিজ্ঞাসা করলেন, সে উপায়টা কী? গোয়েবলস বললেন, ‘কমিউনিজম বিশ্ব জয় করে ফেলবে এই ভয়ে সারা ধনবাদী পশ্চিমা জগত এখন কম্পিত। এই ভয়টা তাদের মনে আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।’
গোয়েবলস হিটলারকে জানালেন, তিনি জার্মানির কয়েকটি বড় মিডিয়াকেই হাত করেছেন। তাঁরা অত্যন্ত কৌশলের সাহায্যে জার্মানিতে জনমত সমীক্ষা চালাবে এবং তার ফল প্রকাশ করবে। আজ একটি কাগজ তা করবে, দুই দিন পর তা আরেকটি কাগজ করবে। তাদের জনমত সমীক্ষার ফল হবে একই ধরনের। অর্থাৎ তাতে বলা হবে, জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে জার্মানিতে নির্বাচন হলে জার্মান সোস্যালিস্ট অথবা কমিউনিস্ট পার্টি বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তাহলে গোটা ইউরোপে কমিউনিজমের প্রভাব ছড়াবে। ক্যাপিটালিজম হুমকির সম্মুখীন হবে। এ অবস্থা একমাত্র ঠেকাতে পারে জার্মানির ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট পার্টি (নাৎসি)।
কিন্তু তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ইউরোপ-আমেরিকার শক্তিশালী দেশগুলোর সহযোগিতার অভাবে এখনও শক্তি অর্জন করতে পারছে না।
হিটলারকে গোয়েবলস অভয় দিয়েছিলেন, এ জনমত যাচাইয়ের ফলসহ জার্মানিতে কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের ভীতিটি লন্ডন ও ওয়াশিংটনের মনে ঢুকিয়ে দিতে পারলে তারা অবশ্যই জার্মান সিভিল এ্যান্ড মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাসি এবং এলিট ক্লাসের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করবে। তারা যাতে নাৎসি দলকে বৈধ-অবৈধ যে কোন পন্থায় ক্ষমতা দখলে সাহায্য যোগায়। কুড়ির দশকে গোয়েবলসের এ কৌশল সফল হয়েছিল। জার্মানিতে মিডিয়ায় আগামী নির্বাচনে সোস্যালিস্ট অথবা কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় যাওয়ার ষোলোআনা সম্ভাবনা সম্পর্কে এমনভাবে জনমত যাচাইয়ের ফল প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল যে, লন্ডন ও ওয়াশিংটনের এস্টাবলিস্টমেন্টে এবং অভিজাত সুশীল সমাজে আরও বেশি কমিউনিস্ট জুজুর ভয় ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা ‘বেটার ডেড দ্যান রেড’ স্লোগান তুলে কার্যত ইউরোপে ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থানকে সমর্থন দিতে থাকেন। সেই ইতিহাস আগেই তুলে ধরেছি। ইতিহাসের কী বিচিত্র বিধান! গত শতকের গোড়ার দিকে কমিউনিজম ঠেকানোর জন্য এ্যাংলো আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ইউরোপে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিল। পশ্চিমা গণতন্ত্র পরে সেই ফ্যাসিবাদের দ্বারাই আক্রান্ত হয়। গত শতকেরই শেষদিকে পশ্চিমা ধনতন্ত্র বিশেষ করে আমেরিকা কমিউনিজম ঠৈকানোর নামে ‘ইসলামী টেরোরিজমের’ জন্ম দেয়। এখন সেই টেরোরিজমের সঙ্গেই আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব যুদ্ধরত এবং আমেরিকা তাতে ক্রমশ হতবল এবং তার অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে।
এবার একুশ শতকের বাংলাদেশের ২০১৩ সালে ফিরে আসি। আগামী নির্বাচনের অনুষ্ঠান যথাসময়ে হতে যাচ্ছে কিনা, বিএনপি ও তার ১৮ দলীয় জোট তাতে যোগ দেবে কিনা, তা এখনও বিতর্কের বিষয় কিন্তু নিরপেক্ষতার ভেকধারী দুটি পত্রিকা ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ অতি কাছাকাছি সময়ে দুটি জনমত যাচাইয়ের ফল প্রকাশ করে এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে যে, জনমত বিপুলভাবে বিএনপির পক্ষে। সুতরাং নির্বাচনে বিএনপির জয় অনিবার্য। ‘প্রথম আলোতে’ আওয়ামী লীগের পক্ষে জনসমর্থনের যে হার দেখানো হয়েছিল, ‘ডেইলি স্টারে’ তা আরও বিরাটভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জরিপ কতটা সঠিক অথবা সঠিক নয়, সে বিতর্কে আমি যাব না। এটা একটি গড়পড়তা হিসাব গোয়েবলস হিটলারকে বুঝিয়েছিলেন, ওই সময় জার্মানির বিভিন্ন এলাকায় জনমত ছিল বিভিন্ন ধরনের। ভার্সাই চুক্তির ফলে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত এলাকায় নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা ছিল। আবার কোন কোন এলাকায় কমিউনিস্ট ও সোস্যালিস্টসহ অন্যান্য দলের জনপ্রিয়তা ছিল। গোয়েবলসের নির্দেশে কয়েকটি মিডিয়া এই বিভিন্ন এলাকার জনমত সমীক্ষাকে গড়পড়তা হিসাবে ফেলে দেখান, নির্বাচনে কমিউনিস্টদের বিরাট জয় হবে। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ও আমেরিকান সরকারের মনে ভয় ঢোকানো। এই গড়পড়তা হিসাবের একটা গল্প এখানে বলি- পাঠকদের এই গল্পটি জানা।
তিন পন্ডিত সাঁতার জানেন না, গেছেন একটি খাল পার হতে। গিয়ে দেখেন এক চাষীও খালের পাড়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। পন্ডিতরা বললেন, তুমি খাল পার হচ্ছো না কেন? চাষী জানান, সে সাঁতার জানে না। খালের পানি কোথাও গভীর কোথাও অগভীর। গভীর পানিতে পড়লে সে ডুবে মরবে। পন্ডিতরা জানতে চাইলেন, পানির গভীরতা কী রকম। চাষী বললেন, কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান, কোথাও মাথা ডুবে যাবে।পন্ডিতরা তখনি পানির গভীরতার গড়পড়তা হিসাব করতে বললেন। হিসাব কষে দেখলেন, গড়পড়তা পানির গভীরতা হাঁটু সমান। তাঁরা চাষীকে বললেন, দূর বোকা মূর্খ, তুই গড়পড়তা হিসাব জানিস না; তাই খাল না পেরিয়ে বসে আছিস। এই দ্যাখ আমরা কিভাবে খাল পার হই। পন্ডিতেরা মালকোচা মেরে খালে নামেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর পানিতে ডুবে মারা যান।

সম্প্রতি প্রকাশিত ডেইলি স্টারের নির্বাচনসংক্রান্ত জনমত যাচাইয়ের ফলটি লক্ষ্য করলেও দেখা যাবে, জনমত গ্রহণের জন্য জামায়াতের প্রধান্যমূলক এলাকাগুলো বেছে নেয়া হয়েছে এবং ‘আপনি কাকে ভোট দেবেন’ এই প্রশ্ন না করে ‘নির্বাচনে কারা জয়ী হবে’ এই ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে। উত্তরদাতা এখন বাজারে যে জনরব- ‘বিএনপি জয়ী হবে’ তার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি কোন দলকে ভোট দেবেন জিজ্ঞাসা করা হলে তাকে হয়ত ভাবতে হতো।
তবু এই জনমত যাচাইয়ের ফল নিয়ে আমি বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু দেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দুটি পত্রিকায় এই ঘন ঘন সমীক্ষা প্রকাশ কেন সেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছি। যবনিকার অন্তরালে আসল ঘটনা কী? সাংবাদিকতা পেশার আড়ালে মাহফুজ আনাম তাঁর দোসর মতিউর রহমানের মতো ‘কনস্পিয়েটর’ চরিত্রের নন, তাঁকে আমার কাছে কনফিউজড চরিত্রের লোক মনে হয়। তথাপি তাদের এই যুক্ত উদ্যোগের লক্ষ্যটা কী? বিএনপিকে নির্বাচনে জেতানো? আমি যতদূর জানতে পেরেছি, তা মোটেই নয়। এর পেছনে আরও গভীর উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, যা বলার জন্য জনমত-সমীক্ষাসংক্রান্ত গোয়েবলসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পুরনো ইতিহাস আগে তুলে ধরেছি। বর্তমান বাংলাদেশেও সেই একই ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে ‘আলো-স্টারের’ জনমত সমীক্ষার খেলায় ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পোলারাইজেশন ঘটেছে দুটি স্পষ্ট ধারায়। এক ধারায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, যাকে বলা হয় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিবির। অন্য ধারায় রয়েছে মুখে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক আদর্শের বিরোধিতা না করলেও এই আদর্শের বিরোধী শিবির। প্রথম শিবিরটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। অন্য শিবিরটিতে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের জন্ম গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে। বিএনপির জন্ম সেনা ছাউনিতে। প্রতিষ্ঠাতাও একজন সেনা শাসক। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সেনা শাসন প্রবর্তনের জন্য সেনা শাসকরা সমর্থন খুঁজতে বাধ্য হয়েছিলেন ’৭১-এর পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি, ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি এবং এককালে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত একদল বিভ্রান্ত বামদের কাছ থেকে। এদের সম্মিলনেই বিএনপির রাজনৈতিক দল হিসেবে অভ্যুদয়।

গোড়ার দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধী অথচ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক অথবা তাতে অংশগ্রহণ করেছেন এমন কিছু নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ এখনও আছেন। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানে মুসলিম লীগ যেমন সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক ও কট্টর রক্ষণশীল নেতৃত্বের হাতে চলে যায়, বাংলাদেশে তেমনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি ধীরে ধীরে তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হারায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবীণ নেতা ও কর্মীরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী জামায়াত জনগণের কাছে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বিএনপির ভেতরে আশ্রয় নেয়। ড্রাক্যুলার কামড়ে যেমন জীবিত মানুষ ড্রাকুলা হয়ে যায়, তেমনি জামায়াতের বাহুবন্ধনে বিএনপি ধীরে ধীরে ড্রাকুলা হয়ে যায়। বিএনপির এই চরিত্র বিচ্যুতি সম্পূর্ণ হয় তারেক রহমান সাবালক হয়ে কার্যত বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর। তিনি প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত একই পরিবারের লোক।’ ফলে তারেকের ইচ্ছায় ও মদদে বিএনপিকে জামায়াত সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলে। দেশের রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সম্পূর্ণ হয়। বিএনপিতে ধীরে ধীরে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শের বিরোধী গোত্রগুলো সম্মিলিত হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুসারী অধিকাংশ ডান ও বাম রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতির এই পোলারাইজেশনটা স্পষ্ট ছিল। এই দুই শিবিরের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাতও কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এই বিরোধ দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাধারণ বিরোধ নয় যে, তা দুপক্ষ সংলাপে বসলেই মীমাংসা হয়ে যাবে। এজন্য এই দুই শিবিরের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি সূত্র আবিষ্কৃত এবং দুই শিবির কর্তৃক তা স্বীকৃত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই সূত্রটি এখনও আবিষ্কৃত না হওয়ায় সংঘাত ক্রমশ হিংসাত্মক চরিত্র ধারণ করছে।

ভারতে জন্ম নেয়া জামায়াত সৌদি আরব ও আমেরিকার মদদপুষ্ট একটি উগ্র এবং সন্ত্রাসী ধর্মান্ধ দল। ১৯৭১ সালে তারা বাংলাদেশে বিদেশী হানাদারদের গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার চেষ্টা করে। স্বাধীন বাংলাদেশেও যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দন্ডের মুখোমুখি হয়ে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নির্মম সন্ত্রাস, রক্তপাত, হত্যাকা- দ্বারা গণতান্ত্রিক শিবিরকে ধ্বংস করতে চাইছে। বিএনপির গণতান্ত্রিক পরিচয়কে তারা কভার হিসেবে ব্যবহার করছে। জামায়াতের এই কার্যকলাপে বিএনপি সহজে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে এখন ইচ্ছুক পার্টনার।

এটা একাত্তরের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট সংঘাত, এটা দুইটি রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে সাধারণ মতপার্থক্য কিংবা কেবল ক্ষমতার হাতবদলের লড়াই নয়। এটা সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের লড়াই। একাত্তরে এই প্রতিবিপ্লবী গণবিরোধী শক্তি গণহত্যায় শরিক হয়েছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পদানত রাখার জন্য, বর্তমানে তারা একই হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বা তালেবান রাষ্ট্র বানানোর জন্য। দুর্ভাগ্যক্রমে বিএনপি এখন এই অসুর শিবিরের নেতা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তার গণতান্ত্রিক চরিত্রের সব ত্রুটিবিচ্যুতি, স্খলন পতন নিয়ে অসুর বিনাশের অসাম্প্রদায়িক শিবিরের নেতা।

দেশের রাজনীতির এই স্পষ্ট বিভাজনটি এখনও সাধারণ দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। তার কারণ বিএনপি-জামায়াতের প্রচারযন্ত্রের ক্রমাগত গোয়েবলসীয় মিথ্যা প্রচার। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এই মিথ্যা প্রচার শুরু হয়েছিল। বলা হয়েছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র, ভারতের দালালেরা এই ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’ কিন্তু এই মিথ্যা প্রচার হালে পানি পায়নি। কারণ, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া কর্মীরা ছিলেন তখন অত্যন্ত সজাগ ও সক্রিয়। কিছু ভাড়াটে ও দালাল বুদ্ধিজীবী ছাড়া সকলেই মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার জবাব দেন এবং অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশের ভেতরে সক্রিয় এই বুদ্ধিজীবীদের হানাদার পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের দোসর জামায়াত দুই দফায় (মার্চ ও ডিসেম্বর ’৭১) নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই পাইকারি বুদ্ধিজীবী হত্যার ফলে বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি ও উদারচিন্তার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয় তা এখন পর্যন্ত দূর হয়নি। স্বাধীনতা-উত্তর নব্য বুদ্ধিজীবী শ্রেণী গড়ে ওঠে। স্বাধীনতাপরবর্তী যে নতুন নতুন সামাজিক ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভের দরজা খুলে যায়, তার বদৌলতে এই নতুন এলিট ক্লাস বা সুশীল সমাজ তৈরি হয় এবং তাদের একটা বড় অংশ সহজেই ভিজিলেজ্ড ক্লাস হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নীতিবর্জিত চরম সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী হয়ে ওঠে। এরাই এখন দেশের মিডিয়া, টেলিভিশনের টকশো ইত্যাদি দখল করে আছে এবং সাধারণ মানুষকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করে চলেছে।

দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিপক্ষের শিবিরের যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের রাজনীতি, এক্ষেত্রে এই বুদ্ধিজীবীরা একাত্তরের বুদ্ধিজীবীদের মতো সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারতেন এবং দেশের মানুষকে এই অপশক্তির দ্বারা সৃষ্ট বিভ্রান্তির কুয়াশা থেকে মুক্ত করে একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার বাংলার ভবিষ্যত রক্ষা করতে পারতেন। এজন্য তাদের আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়াবার কোন দরকার ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের শত্রু ও মিত্রদের মধ্যে আজ যে রাজনীতির পোলারাইজেশন, তাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তারা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে পারতেন।
তারা তা করেননি। তারা দেশী-বিদেশী নানা সুযোগসুবিধা, আর্থিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির লোভে নিরপেক্ষতার একটি মুখোশে নিজেদের ঢেকে দেশের দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতির মাঝখানে যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন তা প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য ক্ষতিকারক এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার জন্য চৌদ্দ আনা দায়ী। এখন আমেরিকাই বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। তার হাতেই সর্বপ্রকার খ্যাতি, সুযোগসুবিধা ও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির স্বর্গরাজ্যের চাবিকাঠি। মেফিস্টোফিলিস ও ফার্ডসেটর কাহিনীর মতো আমাদের বুদ্ধিজীবীদের এই অংশটি অন্য আরও পাঁচটা উন্নয়নশীল দেশের মতো এই মহাপরাক্রমশালী বিশ্ব ধনবাদ ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেদের বিবেক বিক্রি করে বসে আছেন।
অনুন্নত ও দরিদ্র বিশ্বের মানুষ সহজেই কমিউনিজম ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে ঝোঁকে। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলোর নির্বাচিত সরকারগুলোও সহজে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে পরাশক্তির আজ্ঞাবহ হতে চায় না। সেজন্য বড় বড় নন গবর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন (এনজিও) এবং দারিদ্র্য বিমোচনের নামে মাইক্রোক্রেডিট সিস্টেম বা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার প্রবর্তন। প্রমাণিত হয়েছে, বহু দেশেই বড় বড় এনজিও হচ্ছে নির্বাচিত সরকারের পাল্টা আরেকটি সরকার। তারা বিদেশী অর্থ ও সাহায্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাহায্যদাতা দেশগুলো কোন দেশের নির্বাচিত সরকারকে দুর্নীতিপরায়ণ, ব্যর্থ সরকার আখ্যা দিয়ে এনজিওগুলোকেই দেশের ও গরিবের ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখায়। এসব এনজিওর দেশীপ্রধানদের নাইটহুড, নোবেল পুরস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত করে তাকে দেশের মানুষের কাছে পরম সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি করে তোলার চেষ্টা হয়।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোন দলেরই নির্বাচিত সরকারকে পশ্চিমা ধনবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের পছন্দ নয়। আওয়ামী লীগ এক সময় সমাজতন্ত্রের কথা বলেছে এবং তার একটা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা ছিল এবং এখনও ছিঁটেফোঁটা রয়ে গেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতিতে আল কায়দা, তালেবানদের প্রভাব রয়েছে বলে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ভয় করে। যতদিন তাদের এই ভয় ছিল না, ততদিন তারা (আমেরিকা) জামায়াতকে ‘আধুনিক গণতান্ত্রিক মুসলিম রাজনৈতিক দল’ বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে এবং বিএনপিকে ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ২০০১ সালের নির্বাচনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ্যান মেরি পিটার্সের নির্লজ্জ, প্রকাশ্য ভূমিকা স্মরণ করা যেতে পারে। এই পশ্চিমা অভিভাবকদের নির্দেশেই বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজটি, তাদের মুখপত্র একাধিক মিডিয়া বিএনপি-জামায়াতকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য প্রথমে প্রচ্ছন্নভাবে, তারপর প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করে। ঢাকার ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সহসা আবিষ্কার করেন, ‘বাংলাদেশে সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনর্প্রবর্তক।’
মাহফুজ আনাম লেখাপড়া জানা লোক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন সার্বভৌম পার্লামেন্টের সংজ্ঞা কিভাবে দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না তা ভাবতে আমার কষ্ট হয়। যে পার্লামেন্টে বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে না; জাতীয় বাজেট ভোটাভুটির ভিত্তিতে পাস হয় না; পাস করেন সর্বক্ষমতাসম্পন্ন প্রেসিডেন্ট, তাকে কি বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সেই পার্লামেন্টকে কি সার্বভৌমত্বের অধিকারী পার্লামেন্ট বলা হয়? যদি বলা যায়, তাহলে আইয়ুবের আমলে কি পাকিস্তানে বহুদলীয় সরকার ও স্বাধীন সার্বভৌম পার্লামেন্ট ছিল? পাকিস্তানে আইয়ুবের শাসনামলকে তাহলে কেন সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনামল বলা হয়? তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনই বা কেন করতে হয়েছিল?


একদিকে মাহফুজ আনামের ভূমিকা, অন্যদিকে ২০০১ সালেই সদ্য প্রকাশিত প্রথম আলোর সম্পাদক হিসেবে মতিউর রহমানের ভূমিকাটি স্পষ্ট হতে থাকে। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির মধ্যে যে রাজনীতির পোলারাইজেশন ঘটছে এবং আওয়ামী লীগ তার সব ভুলত্রুটি, পতন স্খলন সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিবিরের নেতা এই সত্যটি থেকে দেশবাসীর চোখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একই দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে বিএনপির তালপ্রমাণ অপরাধকে আওয়ামী লীগের তিলপ্রমাণ অপরাধের সমান করে দেখাতে থাকেন এবং প্রচার করতে থাকেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরোধ কেবল ক্ষমতা দখলের বিরোধ এবং দুজনই একই চরিত্রের নেত্রী। এই প্রচারণার আড়ালে মতিউর রহমানের সমর্থনের পাল্লাটা ছিল বিএনপির দিকেই। এখনও আছে।

২০০১ সালের এই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পরিবর্তিত। ভারত-আমেরিকা মৈত্রী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। টেরোরিজম দমনে তা ইসলামিক হোক আর আঞ্চলিক হোক, দুটি দেশই জোটবদ্ধ। আমেরিকায় ওবামা প্রশাসন আগের প্রশাসনের মতো বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর সুপ্রসন্ন নয়; অবশ্য বিরূপও নয়। তবে তালেবান ও আফগান জঙ্গীদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক বুঝতে পেরে জামায়াত সম্পর্কে তাদের আগের মোহ নেই। জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিএনপি সম্পর্কেও ওবামা প্রশাসন সন্দিহান। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজেনা সাহেব তাঁর নিয়োগ কর্তাদের এই সন্দেহ ভঞ্জনের জন্য চেষ্টা তদবির করছেন। কিন্তু এখনও পেরে উঠছেন না।

মৌলবাদী সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কটি বুঝে ওঠার পরেই তাদের আবার ক্ষমতায় বসানোর জন্য ওয়াশিংটন আগের মতো উৎস্যুক নয়। তার ওপর আবার নতুন মিত্র ভারতের চাপ আছে। তাই আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের দল না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্ষমতায় থাকাটাকে আমেরিকা সমর্থন দিয়েছে, হয়ত এখনও দিচ্ছে।
তার আগে তারা চেষ্টা করেছিল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে মাইনাস টু ফর্মুলা অনুযায়ী সামরিক বাহিনীর সহায়তায় একটি অনির্বাচিত সিভিল সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে। ফলে বাংলাদেশের কথিত সুশীল সমাজে, বিগ এনজিওগুলোতে, ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ এতদিনের ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। নোবেল পুরস্কার গলায় ড. ইউনূস নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে এগিয়ে আসেন। দেশী-বিদেশী শক্তিশালী মহলের এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তবে প্রচেষ্টাটি পরিত্যক্তও হয়নি।

২০১৪ সালের নির্বাচন সামনে নিয়ে আমাদের এই সুশীল সমাজ, বিগ এনজিও ও তাদের ক্রোড়াশ্রিত মিডিয়া আবার নতুন আশায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা জানে, ওয়াশিংটনের কাছে আওয়ামী লীগ পছন্দের দল নয়। তবু দেশটি জঙ্গীবাদের কবলে যাবে এই ভয়ে ওয়াশিংটন-দিল্লী দুই শক্তিই আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চাইছে। বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে তাদের মনে এখনও প্রচন্ড ভয় -তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ প্রশ্রয় পাবে। এখন কিভাবে তাদের এই মনোভাব বদল করে বাংলাদেশের কথিত সুশীল সমাজের বহুদিনের স্বপ্ন অনির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা দ্বারা তারা ক্ষমতায় যেতে পারেন এবং সেজন্য ওয়াশিংটন ও দিল্লীর সমর্থন ও সাহায্য আদায় করতে পারেন সেটাই তাদের একমাত্র ভাবনা।

তাদের এই উদ্দেশ্যটি পূরণের জন্য বাংলাদেশে ‘আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে জনসমর্থন হারিয়েছে’ এবং ‘বিএনপির জনসমর্থন হু হু করে বাড়ছে’ এই প্রচার। এই লক্ষ্যেই ঘন ঘন জনমত সমীক্ষার ফল প্রচার করা হচ্ছে। যাতে বিদেশী বড় শক্তিগুলো ভয় পায় যে, আওয়ামী লীগের বদলে এবার বিএনপি (কোলে বসে জামায়াত) ক্ষমতায় আসবেই এবং বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদের অভ্যুত্থান ঘটবে। এই আশঙ্কা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এখনই যুদ্ধের মাঠ থেকে সরিয়ে অনির্বাচিত একটি সরকার দেশটিতে ক্ষমতায় বসানো দরকার।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে জার্মানির গোয়েবলসও এভাবে নাৎসিদের ক্ষমতায় আনার জন্য কমিউনিস্টদের নির্বাচন জয়ের ভয় দেখিয়ে ব্রিটেন ও আমেরিকার সমর্থন তাদের দিকে টেনে এনেছিল এবং এই ভয় দেখানোর কাজে সাজানো জনমত সমীক্ষাকে কাজে লাগিয়েছিল। আমাদের কথিত সুশীল সমাজ অবশ্য নাৎসি দল নয়। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন, জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে বিদেশী শক্তির স্বার্থে ও তাদের সমর্থনে ক্ষমতায় যাওয়া।
তবে এভাবে একটি এনজিও-নিয়ন্ত্রিত সরকার প্রতিষ্ঠা দ্বারা তারা ক্ষমতায় যেতে না পারলে নির্বাচনে বিএনপির দিকেই তাদের সমর্থন থাকবে। ড. ইউনূস ইতোমধ্যেই সে পথ তাদের দেখিয়েছেন। কারণ, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এই এলিট ক্লাসের স্বার্থ সুবিধা যতটা রক্ষা পায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তা রক্ষা পায় না। নীতি ও আদর্শ এই সুশীল সমাজ থেকে বহুদিন আগে বিদায় নিয়েছে।

Monday, November 4, 2013

Daily Times - Leading News Resource of Pakistan - Bangladesh War Crime Tribunal: a forum for Pakistan bashing?

Daily Times - Leading News Resource of Pakistan - Bangladesh War Crime Tribunal: a forum for Pakistan bashing?

বাংলাদেশে সেই সব পাকিস্তানীরা -প্রফেসর আবদুল মান্নান




ইমরান খান, বিশ্বনন্দিত পাকিস্তানের ক্রিকেটার । যে ক্রিকেটকে ভালবাসে সে ইমরান খানকে ভাল না বেসে পারবে না । বর্তমানে সেই ইমরান খান পাকিস্তানের একজন উদীয়মান রাজনীতিবিদ । তেহরিখ-ই-ইনসাফ নামে একটি দল করেছিলেন বেশ আগে। পাকিস্তানে এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে তার এই দল গড়ার পিছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল । তালেবানদের সাথে তার সখ্যতা এখন ওপেন সিক্রেট । তাদের সাথে সমঝোতা করে তার দল খাইবার-পাখতুন খাওয়ায় সরকার গঠন করেছে । তার দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান খাকওয়ানি, যিনি আগে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, তার একটি লেখা গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান হতে প্রকাশিত ডেইলি টাইমস পত্রিকায় ‘Millions of Pakistan Supporters in Bangladesh-especially in the BNP’ (বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানি সমর্থক-বিশেষ করে বিএনপিতে) শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে । খাকওয়ানি পাকিস্তান রাজনীতিতে বেশ একটি পরিচিত নাম এবং নিয়মিত বিভিন্ন টিভি টকশোতে অংশ গ্রহণ করেন এবং তালেবানদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন ।
সম্প্রতি প্রকাশিত খাকওয়ানির লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার । তার মতে যারা এই বিচারের সমর্থন করেন তারা এই বিষয়ে তাদের একপেশে বক্তব্য উত্থাপন করেন এবং ইদানিং দেখা যাচ্ছে তা হতে গণমাধ্যমও বাদ যাচ্ছে না । তিনি এই ব্যাপারে সম্প্রতি ডেইলি ষ্টার পত্রিকায় একটি মন্তব্য প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন যা এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি । ডেইলি স্টার তা প্রকাশ করবে কী না তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার কারণ তাদের নিজস্ব একটি সম্পাদকীয় নীতিমালা আছে (মন্তব্য এই লেখকের) ।
পত্রিকাটি সম্প্রতি আগামী নির্বাচন নিয়ে এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় একটি জরিপের ফলাফল ছেপেছে যাতে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ধরাশায়ী করে ফেলেছে । তা নিয়ে বিভিন্ন টকশোতে কিছু লোকজন রাতের ঘুমও হারাম করে ফেলছে । কিন্তু ডেইলি ষ্টার এই কথাটি চেপে গেছে যে এশিয়া ফাউন্ডেশন সারা বিশ্বে নিন্দিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র অর্থায়নে পরিচালিত একটি অঙ্গ সংগঠন । সিআইএ দেশে দেশে তাদের নাযায়েজ কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে অসুবিধা মনে করলে এশিয়া ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থাকে কাজে লাগায় । ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে সামনের নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তার জন্য সিআইএ ইতোমধ্যে তাদের চাকা সচল করে ফেলেছে । এই সম্পর্কে আওয়ামী লীগ কতটুকু সতর্ক বা ওয়াকিবহাল তা আমার সন্দেহ আছে । এই জরিপ সম্পর্কে আগামীতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইলো । ফিরে আসি খাকওয়ানির লেখায় ।
খাকওয়ানির মতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিষয়টি বাংলাদেশের সামনের নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । তার মতে এই ব্যাপারে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের দূতাবাস আত্মরক্ষা মূলক ভূমিকা পালন করছে । গত ৪২ বছরে বাংলাদেশ সুযোগ পেলেই পাকিস্তানকে ধোলাই (bashing) করে । এর জন্য তারা কিছু দিনকে বেছে নেয় । এর মধ্যে আছে একুশে ফেব্রুয়ারী, শেখ মুজিবের জন্ম দিন (মার্চ ১৭), ২৫ মার্চ (বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমন), ২৬ মার্চ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস), ১৫ আগষ্ট (শেখ মুজিবের হত্যা ও জাতীয় শোক দিবস), ১৬ ডিসেম্বর (ঢাকার পতন ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর আত্মসমর্পন) ।
বাংলাদেশে পাকিস্তানের অনেক সমর্থক আছে, বিশেষ করে বিএনপিতে । অন্যান্য স্বাধীনচেতা মানুষও পাকিস্তানকে সমর্থন করে এবং কাউকে না কাউকে এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে যাতে মানুষ মুদ্রার অন্যপিঠও দেখতে পায় । খাকওয়ানি লিখেছেন এই সব বিষয় নিয়ে তার পক্ষে কথা বলা তেমন একটা সহজ নয় কারণ তিনি একজন পাকিস্তানি এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বন্ধু । তিনি লিখেছেন ‘আমি সে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দৃষ্টিভঙ্গির সম্মান করি কারণ তারা সেই দেশের সম্মানিত নাগরিক কিন্তু আমি প্রার্থনা করবো আমার দৃষ্টিভঙ্গিগুলি তারা গুরুত্ব সহকারে নেবেন ।’ তিনি স্বীকার করেছেন অতীতে পাকিস্তানি শাসকরা তাদের নিজস্ব জনগণের উপর অনেক অবিচার করেছে । তিনি প্রশ্ন রেখেছেন এই সব অবিচার কী কোন ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক সৃষ্ট নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় যন্ত্র দেশের জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ? তিনি তার দ্বিতীয় প্রশ্নে জানতে চেয়েছেন পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর সে দেশের শাসকবর্গ (সামরিক ও বেসামরিক) দেশটিকে কী ভাবে শাসন করেছে? রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বন্টন কী বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে ? মানুষের দারিদ্র কী কমেছে ? বাংলাদেশের জনগণের প্রতি খাকওয়ানি শেষ প্রশ্ন রেখে জানতে চেয়েছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত দশজন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলালে বাংলাদেশের হিসেব অনুযায়ী যে লক্ষ লক্ষ শোকার্ত মানুষ ও একাত্তরে শহিদ (শব্দটি আমার) মানুষ আছে বলে বলা হচ্ছে তারা কী তৃপ্ত হবেন বা শান্তি পাবেন? তিনি এই ঘাতকদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন আওয়ামী লীগের কী উচিৎ হবে না তাদের জন্য একটি নিরপেক্ষ বিচারের ব্যবস্থা করা ?
খাকওয়ানি তার পারিবারিক বন্ধু সাকাচৌর দন্ডে ভীষণ ব্যথিত হয়েছেন এবং তার বিচারের স্বচ্ছতা ও প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন তার বিরুদ্ধে যে সকল সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে তার সবটাই ছিল বানোয়াট । তার মতে পাকিস্তান হতে যদি সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে সে দেশে যাওয়ার সুযোগ থাকতো তা হলে সাকাচৌ সুবিচার পেত । তিনি বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিচারপতি শামিম হাসনাইনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন তাকে অন্যায় ভাবে এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে দেয়া হয়নি । বাস্তবে কথাটা সত্য নয় কারণ রেওয়াজ, আইন অনুযায়ী তার সরাসরি সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ থাকার কথা নয় । সাকাচৌ সম্পর্কে খাকওয়ানি ভূয়সি প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন শেখ হাসিনা তাকে তার একজন শক্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করেন বলে তাকে একাত্তরে গণহত্যা পরিচালনা করার অপরাধে অন্যায়ভাবে এই বিচারের মুখোমুখি করেছেন । তার পিতা শেখ মুজিব, যিনি বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধে’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কখনো এই ধরণের বিচারের কথা চিন্তা করেন নি । সেই দেশের প্রতিষ্ঠাতারা অনেক বেশী দূরদর্শী ছিলেন এবং তারা যে ধরণের দেশ গড়বেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা গড়ার দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন । খাকওয়ানির শেষ কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ এই সব করে দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করেছে এবং সেই বিভক্তিটা ৪২ বছর পর আরো প্রকট হয়েছে ।
খাকওয়ানির প্রতিবেদন সম্পর্কে কয়েকটি কথা । বিএনপিতে যে পাকিস্তানি সমর্থক আছে তা এখন কোন গোপন বিষয় নয় । তাঁর এই মন্তব্যটি একশত ভাগ সত্য । আমার এক অগ্রজ বলেন বাংলাদেশের জনসংখ্যা দশকোটি । জানতে চাই বাকি ছয়কোটির কী হলো? তার সোজা উত্তর তারা সকলে পাকিস্তানি । তার মন্তব্যটা একটু রূঢ় হলেও বাস্তব সত্য । পাঠক নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন হরতাল নামক নৈরাজ্যের দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে চরম সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তারা কারা? দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের জন্য দীর্ঘ চল্লিশ বছর অপেক্ষা করেছে । এই যাত্রায় শেখ হাসিনা আর তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে এই বহু প্রতীক্ষিত বিচার কাজটি শুরু করতে । সামনের নির্বাচনে জয় পরাজয় জনগণ নির্ধারণ করবেন কিন্তু শেখ হাসিনা আর তার দলকে ইতিহাস মনে রাখবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যটি শুরু করার জন্য । সাকাচৌ খাকওয়ানির পারিবারিক বন্ধু হতে পারেন কিন্তু সাকার একাত্তরের অপরাধের জন্য তার একবার নয় একশত বার ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল । শেখ মুজিব এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান নি কথাটি মোটেও সত্য নয় । তিনি ১৯৭২ সনে দালাল আইন করেছিলেন এবং এই আইনের অধীনে কয়েক হাজার অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল যার মধ্যে সাকার বাবা ফকাও ছিলেন । এই আইনে কয়েক হাজার অপরাধীদের বিচার চলছিল । অনেকের সাজাও হয়েছিল । বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সনের ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল জিয়া সেই আইন বাতিল করে সকল ঘাতক দালালদের মুক্তি দিয়েছিলেন । ১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন প্রণয়ন করেছিলেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করার জন্য । কিন্তু বিচার কাজ শুরু করার পূর্বেই পাকিস্তানি এজেন্টরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল । জিয়া সেই ঘাতকদের পুরষ্কৃত করেছিলেন । বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিভাজন তা ১৯৭৫ সালের পরই সৃষ্টি হয়েছিল তাতে শেখ হাসিনার কোন অবদান নেই । বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে হাজার গুন ভাল আছে এটি সারা বিশ্বে স্বীকৃত । তা খাকওয়ানি আর তার দলের মতে যারা এদেশে পাকিস্তানের সমর্থক তাদের চোখে না পরারই কথা । এই দেশের মানুষ আরো ভাল থাকতো যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করতো । তবে খাকওয়ানিকে ধন্যবাদ এদেশে পাকিস্তানি সমর্থকদের পুনরায় সনাক্ত করার জন্য।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নভেম্বর ৪, ২০১৩
সূত্র : কমিউনিটি নিউজ, জাপান

পাকিনেতা ইসহাক খান খাকওয়ানী বললেন -বিএনপি পাকিস্তান প্রেমী , সাকা নিরপরাধ : সুমি খান


“বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষ পাকিস্তান ভালোবাসে । বিএনপি তার মধ্যে প্রধান। একাত্তরে সালে সাকা চৌধুরী লাহোরে ছিলেন, কোন অপরাধ করেন নি” - গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান ডেইলি নিউজে প্রকাশিত লেখাটিতে এভাবেই ঘাতকদের পক্ষে সাফাই গাইলেন একাত্তরের ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বন্ধু ইসহাক খান খাকওয়ানী। তিনি পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী হেভিওয়েট রাজনীতিক।
‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ‘এর প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান । জনশ্রুতি আছে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএস আই য়ের নির্দেশনায় তিনি দলটি গঠন করেছেন। এই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান খাকওয়ানী সম্প্রতি বাংলাদেশের পাকিপ্রেমীদের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আত্মকথন লিখেছেন। বিপুল সম্পদশালী জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক খান খাকওয়ানী পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং রেলওয়ে মন্ত্রী ছিলেন। আফগানিস্তানের নানগড় এলাকার উপজাতি খোগওয়ানি গোত্রভুক্ত ‘খাকওয়ানি’ জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক পেশায় ইঞ্জিনীয়ার। মীর মর্তুজা ভুট্টোর সাথে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দেবার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার অভিষেক। ২০০২ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন। ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল পোলোর আ্যাম্বেসেডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রশ্ন আসতে পারে, এই সম্পদশালী ব্যক্তিটি রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ় করার জন্যেই কি আইএসইইয়ের বার্তাবাহকের কাজ করছেন?
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা , ধর্ষণ , বুদ্ধিজীবিহত্যা এবং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যারা অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের প্রতি ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন,পাকি সরকারের বেতনভুক্ত সেই ঘাতকদের বিচারপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই গাত্রদাহের সৃষ্টি করেছে পাকিদের। এর বাইরে থাকতে পারেন নি খাকওয়ানী । নিরপেক্ষতা দেখাতে লেখায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সম্মান করার ভান করেছেন তার লেখার একটি লাইনে, যা হাস্যকর বটে!
তিনি এক দিকে স্বীকার করেছেন বালুচিস্তানসহ ৫টি প্রদেশের পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অপশাসনে বিদ্রোহ করছে স্খানীয় জনগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতি এ দেশের মানুষের প্রতি স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনের নৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করলেন ইসহাক খান খাগওয়ানী। স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একাত্তর পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে তুলনা করেছেন পরাধীন জাতির সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার । একে ‘পাকি ঔদ্ধত্য’ না বলে পারা যায় না!
একাত্তরের ঘাতকদের প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি একাত্তরের গণহত্যা , ধর্ষন সহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির সাথে তার একাত্মতা প্রমাণ করে ঘাতকদের পক্ষে তাদের এক এবং অভিন্ন শক্ত অবস্থান!
পারিবারিক বন্ধু সাকা চৌধুরীকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে গিয়ে ইসহাক খান তার লেখার শেষ দিকে এসে স্বীকার করলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সংগঠক।তবে ইসহাক খানের দাবিমতে বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ই চান নি! তিনি একদিকে একাত্তরে সাকা চৌধুরীর অপরাধ অস্বীকার করলেন, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর উদারতা বলে উল্লেখ করলেন! স্ববিরোধিতা একেই বলে।
ইসহাক খান বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সম্পাদকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আক্ষেপ করেছেন ডেইলী ষ্টারের সম্পাদকের কাছে পাঠানোর পর ও তার লেখা এখনো প্রকাশ হয়নি বলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালৈর প্রতিটি রায়ের সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম পাকিস্তান কে ধুয়ে ফেলে- এটাও তার ক্ষোভের কারণ। এর পর ও তার আশাবাদ মুদ্রার অন্যপিঠ দেখে। তার গভীর পর্যবেক্ষণ বলে, মুদ্রার অন্যপিঠ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং সাধারন অনেক মানুষ মানসিক ভাবে এখনো পাকিস্তানের পক্ষেই অবস্থান করছে। তার আশাবাদ , তার পারিবারিক বন্ধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি আওয়ামী লীগ এবং তার অনুসারীরা অনুকম্পা দেখাবে। এবং এটা বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দল এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ‘পাকিপ্রেম’ ভালো লাগার নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত ।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সশরীরে উপস্থিত থেকে বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করেছেন অনেক নিরীহ মানুষ কে । সা কা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে দানবীর শিক্ষানুরাগী সমাজহিতৈষী নূতন চন্দ্র সিংহ কে। প্রত্যক্ষদর্শী সালাহউদ্দিন আহমেদ সা কা চৌধুরীর টর্চার সেলে বন্দী ছিলেন। তার অত্যাচারেরর শিকার। প্রাণে বেঁচে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক ১৮ বছর বয়সে ফকা-সাকার বর্বর নির্যাতনে নিহত হন একাত্তরে। প্রত্যক্ষদর্শী তার বোন জোহরা বেগম। তিনি জাতীয় আর্টির সাবেক সাংসদ হারুণ অর রশীদের স্ত্রী। জ্যোৎস্নাবালা র সামনে সাকা চৌ দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দিয়ে জ্রোৎস্নাবালার স্বামী, ভাশুর সহ তার পরিবারের ২৮ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছে । জ্যোৎস্নাবালা কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুঁজো হয়ে বেঁচে ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। তার ইন্টারভিউ আছে। আদালতে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। আপনি এই নিরীহ সাধারণ মানুষ গুলোর চোখের জল , স্বজন হারানোর বেদনা, গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রনা,সাকা চৌধুরীর বর্বর নির্যাতনে নিহত দের স্বজন অথবা আহত দের কান্না এবং তথ্য প্রমাণ সহ আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান ইসহাক খানের কানে পৌঁছেনি । যারা হত্যাকারীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাদের কানে কোন মানবিক বাণী পৌঁছাবে না – এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই সাকা চৌধুরীর সহপাঠী কোন এক বিচারপতি শামীমের দাবি ই তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছে। এ যেন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী! এরকম ভয়ংকর খুনির পক্ষ নিলে ধর্মেও সইবে না।পাকিদের আবারো জানিয়ে দেবে এদেশের মানুষ -বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তিরিশ লাখ বাঙ্গালীর ঘাতক জারজদের কখনো ক্ষমা করবে না।
Sumikhan29bdj@gmail.com

Sunday, November 3, 2013

টেলিসংলাপ নিয়ে ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ কৌশলে নেমেছে বিএনপি:আবেদ খান


আমি সেই গল্পটির সারাংশ দিয়েই শুরু করি, যে গল্পটি সম্ভবত প্রায় সবাই জানেন, কিন্তু সবাই মানেন-এমনটি বলতে পারব না। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট কথা বলে রাখি। আমার একটি লেখার শুরুতে ব্যবহার করা রূপকথার সারাংশ নিয়ে কোন এক মহলের কেউ কেউ অগ্নিশর্মা হয়ে বলেছেন, আমি নাকি ওই রূপক রূপকথায় এক শীর্ষ রাজনীতিককে সরাসরি কটাক্ষ করেছি! রবীন্দ্রনাথ তাঁর অচলায়তন কাব্যনাট্যে বলেছেন, ‘কথা বলি আমরা, আর মানে তো করে ওঁরা।’ কেউ যদি ক্রোধ বা হতাশার বশে সবকিছু নিজের ঝাঁপিতে ভরেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে এমন অজ্ঞতার জন্য অনুকম্পা ছাড়া আর কি করতে পারি? এটাও এক রাজার গল্প। রাজা তাঁর পাচককে তাঁর জন্য বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যবস্তু রন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাচক শত পদের সুস্বাদু খাদ্য রন্ধন করল বটে, কিন্তু শত ব্যঞ্জনের প্রতিটির প্রধান উপাদান ছিল-জিহ্বা। রাজা পরম তৃপ্তি ভরে ভোজন সম্পন্ন করে পাচককে উপযুক্ত পারিতোষিক দিয়ে বললেন, ‘বেশ! আগামীকাল তুমি বিশ্বের নিকৃষ্টতম বস্তু রন্ধন করে আমাকে মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করো।’
পর দিনও অন্যভাবে শত ব্যঞ্জন রন্ধন করা হলো, এবং সেই শত ব্যঞ্জনের মূল উপাদানও ছিল-জিহ্বা। রাজা বিস্মিত হয়ে পাচককে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এইরূপ রন্ধনের কারণ কি?’ পাচক উত্তর দিলো-‘মহারাজ! জিহ্বা এমন একটি বস্তু যা সুন্দররূপে ব্যবহার করলে মানুষ ধন্য ধন্য করে, এবং কদর্যভাবে ব্যবহার করলে মানুষ নিন্দা করে। জিহ্বা বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করে, আবার শত্রুকে বন্ধুকে রূপান্তরিত করে। কেবল জিহ্বার সঠিক ব্যবহার দ্বারাই অনেক অসাধ্য কর্মসম্পাদন সম্ভব, আবার এই জিহ্বার অপব্যবহার দ্বারাই অনেক সুন্দর পরিবেশ বিষবৎ হয়ে উঠতে পারে। মহাত্মন! জিহ্বার অসুন্দর ব্যবহার মহাযুদ্ধের কারণ ঘটায়, আবার সুচারু ব্যবহার মহাযুদ্ধের অবসান ঘটায়। আর এই উপাদানটির সুব্যবহারের জন্য কোন প্রকার অর্থনাশের আশঙ্কা নেই।’
রাজা পাচকের কথায় এবং যুক্তিতে মোহিত হয়ে তাকে সহ¯্র স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করলেন।
২.
দুই নেত্রীর সাম্প্রতিক ফোনালাপে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে। এমন কি দেশের বাইরেও গিয়ে পড়েছে এই ঝড়ের ঝাপটা। শুধু দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরাই নন, বিভিন্ন কূটনীতিক মহলেও এই ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে। সবচাইতে বিস্ময়কর ব্যাপার হলোÑ ক) এই দুই জনই হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকা-ের প্রধান ব্যক্তি। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং অপরজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন এই রাষ্ট্রীয় প্রধান নির্বাহীর পদে দ্বিতীয়বার উপবেশ করেছেন এবং অন্যজন দু’বার পূর্ণমেয়াদে ও একবার অতি স্বল্প মেয়াদে এই শীর্ষ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
খ) দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কার্যরত বিভিন্ন বিদেশী কূটনীতিক এমন একটা প্রচারণা চালিয়েছিলেন যে, দুই নেত্রীর বাক্যবিনিময় ঘটলেই বুঝি-বা সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নাগরিক সমাজের একাংশ এই নিয়ে প্রবল রব তুলেছিলেন বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে, টকশোতে এবং পত্রপত্রিকায়Ñযার ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের মনে প্রচ- কৌতূহল দানা বেঁধেছিল যে, দুই নেত্রীর মধ্যে কি ধরনের কথাবার্তা হয়! কাজেই তিন-চার দিন ধরে ক্রমাগত মিডিয়ায় এই দুই নেত্রীর ফোনালাপের প্রচার মানুষের প্রত্যাশাকে শ্বাসরুদ্ধকর পর্যায়ে উন্নীত করে ফেলেছিল।
গ) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল হরতাল-কেন্দ্রিক সহিংসতার কারণে। অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে সাধারণ মানুষের আশা ছিল যদি আলোচনায় একটা কিছু বেরিয়ে আসে, তাহলে হয়ত পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
ঘ) মানুষের আরও আগ্রহ ছিল আরেকটি বিষয়ের দিকে, তা হলোÑমুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই প্রধান জোট, বিশেষ করে দুই নেত্রী অনড় অবস্থানে রয়েছেন। যদি দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং আলোচনার সূত্র ধরে কোন পক্ষ যদি নিজে কিঞ্চিৎ নমনীয় হয়ে অপর পক্ষকে নমনীয় হতে সাহায্য করেন, তাহলে হয়ত বা রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটতে পারে।
কিন্তু এই বাক্যবিনিময়ের ফল বরং উল্টোটাই হলো। দুই পক্ষের অনমনীয়তা বৃদ্ধির ফলে, বৃদ্ধি পেল মানুষের হতাশা এবং অনিশ্চয়তার আশঙ্কা। দুই নেত্রীর বলয় থেকে আপন-আপন দৃষ্টিকোণের আলোকে এই ফোনালাপের ব্যাখ্যা দেয়া হতে থাকল। দুই শিবিরের অনুসারী বুদ্ধিজীবীরা নিজ নিজ নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা এবং অপর পক্ষের নিন্দাভাষণে মুখর হয়ে মিডিয়ার মাইক্রোফোন এবং পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠা উত্তপ্ত করে ফেললেন। আর মানুষের নিরাশা ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক নিরাসক্তির দিকে ধাবিত হতে থাকল। কূটনীতি পাড়ার কূটনীতিকরা বিস্ময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করলেন এবং পরিমাপ করতে শুরু করলেন আমাদের দেশের শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিকদের রুচিবোধ এবং শিষ্ঠাচারের মাত্রা।
৩.
কথা উঠেছে, মিডিয়ার এই সংলাপ প্রকাশের বিষয়টি বিধিসম্মত অথবা শিষ্ঠাচারবর্জিত হয়েছে কিনা। এই নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে রীতিমতো আক্রমণাত্মক যুক্তিপ্রদর্শন করা হচ্ছে। ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অতিশয় আত্মরক্ষামূলক, যা মাঝেমধ্যে আত্মসমর্পণমূলক বলে মনে হয়, তেমনভাবে বিএনপির অভিযোগের জবাব দেয়া হচ্ছে। একমাত্র তথ্যমন্ত্রী বাদে আর কাউকে যথাযথ যুক্তি দিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর স্পষ্ট উত্তর আছে এবং উত্তরটি পরিষ্কার। প্রথমত, কেন বলা হচ্ছে যে, এটা প্রধানমন্ত্রী করেছেন? যে দু’জন ফোনে কথা বলছিলেনÑতাঁরা দু’জনেই বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই পৃথকভাবে হলেও তাঁদের প্রতিটি ফোনালাপ, তা তাঁরা যেখানেই কথা বলুক না কেন, মনিটরিং নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এটা জানেন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর এটা বিলক্ষণ জানার কথা। বিরোধীদলের নেতারা এবং তাঁদের শুভাকাক্সিক্ষগণ যখন প্রশান্তির হাসি হেসে বলেন, তাঁদের নেত্রী সব সাফ সাফ বলে দিয়েছেন এবং দারুণভাবে জিতে গেছেন তখন তো বলতেই হয় তিনি জানতেন এই সংলাপ মনিটরিং করা হচ্ছে এবং এটা বাজারে ছড়ানো হবে। কাজেই তিনি তো তাঁর মতো করে সবকিছু পাখির বুলির মতো বলে গেছেন। তাঁদের প্রতিপক্ষ মহল যদি অভিযোগ করেন, এটা বাজারে ছাড়ার ব্যাপারেও তাঁদের অদৃশ্য হাত আছে, তা তাঁরা অস্বীকার করবেন কি করে? হ্যাঁ, ওঁরা বলতে পারেন, যে সব এজেন্সি এ কাজ করে থাকে সে সব এজেন্সির কার্যক্রম তো সরকারের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেয় সব কিছু নির্ভর করে। অতি উত্তম। তাহলে বিডিআর বিদ্রোহের সময় যেসব ভিডিও টেপ ছড়িয়ে গেল সর্বত্র, এমন কি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের ক্যান্টনমেন্টের দরবার হলে সেনা অফিসারদের সঙ্গে কথোপকথন যে অডিও প্রচারিত হলোÑসেটা কারা করেছিল? কেন করেছিল? এ ব্যাপারে তো বিরোধীদলের নেতারা জানতে চায়নি কিভাবে এটা প্রকাশিত ও প্রচারিত হলো ইন্টারনেটে। বরং তাঁরা এই বিষয়টিকে ধরেই তাঁদের রাজনৈতিক শত্রুতা চালিয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, দুই নেত্রীর সংলাপ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কোথায়? সরকারের কঠোর সমালোচক দেশের সর্বাধিক পঠিত প্রভাবশালী দৈনিকে। ওই দৈনিকটি এমনভাবে কাটছাঁট করে সংলাপের আংশিক বিবরণ প্রকাশ করেছিল, যা বিরোধীদলীয় নেত্রীর পক্ষে যায়। এতে কি বিরোধীদলের নেতারা চাপা হাসি হাসেননি? পরে যখন একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল পুরো কথোপকথনটি প্রচার করে বসল এবং তাতে সংলাপের পরিবর্তে রূঢ় বাক্যানল বর্ষণের ব্যাপারটি দর্শকশ্রোতাদের স্তম্ভিত করল, তখন তাঁরা অফেন্সিভ পলিসি গ্রহণ করে পুরো দায়টি উল্টো দিকে ঠেলে দিল। আর আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার একটা বদঅভ্যাস আছেÑঅন্যের কৃতিত্ব দখল করা এবং নিজেকে জাহির করার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা। দু-একটা টিভি চ্যানেল যখন স্বপ্রণোদিতভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংলাপের অডিও টেপ সংগ্রহ করে প্রচার করে দিল, তখন তো উচিত ছিল তাঁদের চুপ করে পরিস্থিতি অনুধাবন করে সেটা দলীয়ভাবে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তা না করে এর দায়িত্বটা তথ্য মন্ত্রণালয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের ঘাড়ে নিল। এর ফলে নির্বুদ্ধিতার যত প্রকার কুফল হয়, সবই তাঁকে ভোগ করতে হলো।
তৃতীয়ত, এই সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষনেতাই অবগত ছিলেন না। তাঁদের এমন অনেকের সঙ্গে আমার দেখা কিংবা কথা হয়েছে যাঁরা এতে শুধু হতাশ বা বিব্রতই নয়, রীতিমতো রুষ্ট এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁদের কারও কারও ধারণা দেশনেত্রী আর তাঁদের পরামর্শের তোয়াক্কা করেন না। সবল পরামর্শদাতার প্যানেল নিয়মিত তাঁকে পরিচালনা করছে। মূলত তিনি তাদেরই হাতে বন্দী। তারা যা বলবে, তাই করতে হবে। তারা যদি সংলাপ না চায়, তবে সংলাপ হবে না। তাঁরা যদি বলে হরতাল দিতে হবে, তবে হরতাল দেয়া হবে। তারা যদি বলে তাদের লোকজনের মুক্তির দাবি করতে হবে, তবে তাই করা হবে। একজন বিএনপি নেতা তো বলেই ফেললেন, আমরা পুতুলের সংসারের সদস্য ছাড়া আর কিছু নই। মাঝেমধ্যে যখন আমাদের নেতাদের সঙ্গে বসা হয়, তখন শুধু ওই প্যানেলের পাঠানো সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
চতুর্থত, যাঁরা স্বকর্ণে শুনেছেন কিংবা বিস্তারিত পাঠ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝেছেন ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট সম্পর্কে কি ধরনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞ পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, জামায়াত দীর্ঘদিন যাবৎ ১৪ ডিসেম্বর তারিখে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করত শুধু এটা দেখানোর জন্য যে, এটা তাদের কাজ নয়, আওয়ামী লীগের কাজ। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এবং বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রাণদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ব্যঙ্গোক্তি ছিলÑপার্থ নামের ওই হিন্দুটাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই বেরিয়ে যাবে কারা এবং কাদের পরিকল্পনায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অথচ এই নিজামীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্তি প্রমাণিত হয়েছে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র দিয়ে। এসব থেকেই তো বোঝা যায় ফোনালাপে উচ্চারিত নিষ্ঠুর মন্তব্যের মুসাবেদা কোন মহল থেকে করা হয়েছিল।
পঞ্চমত, সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। অনেকে এর প্রকাশ করা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। একজন উচ্চপর্যায়ের নেতা বলেছেন, এটা প্রচারের ব্যাপারটি যদি আমাদের জানা থাকত তাহলে তো ম্যাডাম এভাবে কথা বলতেন না। কি দাঁড়ায় এর অর্থ? তিনি রূঢ় কথা বলবেন টেলিফোনেÑএটাই তাহলে পূর্ব নির্ধারিত ছিল? তিনি কথা বলতে দেবেন না এবং গড়গড় করে বলে যাবেনÑএটাই কি ঠিক করা ছিল? লাল টেলিফোনকে কালক্ষেপণের এবং বিষয়বস্তুকে গৌণ করার জন্য ব্যবহার করা হবেÑএটাই কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল?
৪.
তার পরও আমার ধারণা সংলাপ হবে, আলোচনা হবে এবং ফল একটা আসবেই। জামায়াত সবকিছু মিসমার করার জন্য যত চেষ্টাই করুক না কেন, যেহেতু বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল এবং মাঠপর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা যেহেতু সম্ভাব্য বিজয়ের প্রত্যাশায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু তারা দীর্ঘসময়ের জন্য নির্বাচনী এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাইবে না। কারণ তাঁদের অনেকের পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেয়ার শক্তি থাকবে না। আর আমার সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে সেই বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিÑ‘তুমি অধমÑতাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’ সংলাপের দরজাটা উন্মুক্ত হোক। সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপ যদি শুরু হয় তো হোক না। আলোচনা সিঁড়ি বেয়ে উঠুক না ওপরের দিকে। ব্লেইম গেমের কূটকৌশলটা এবার বন্ধ হোক না। মানুষকে কষ্ট দেয়ার, মানুষ মারার, গাড়ি পোড়ানোর, বৃক্ষবিনাশের এবং শিক্ষাঙ্গনগুলো অচল করার সর্বনাশা হরতাল, কলকারখানা, হাটবাজার বন্ধ করার হরতালকে বিদায় দেয়া যায় না দু’পক্ষের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে? প্রধানমন্ত্রী না হয় আরেকবার ডাকলেনই চায়ের কিংবা নৈশভোজের আমন্ত্রণে। সেখানে তো তিনি অনায়াসে দেশ-জাতি এবং গণতন্ত্রের স্বার্থের বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারবেনই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বৃহৎ যে হয় সে পায় মহত্বের অধিকার।
যেই জিহ্বা নিয়ে এই লেখা শুরু করেছিলাম সেই জিহ্বাতেই প্রত্যাবর্তন করি। আগেই বলেছি এই জিহ্বাই অনেক সুন্দরকে অসুন্দর করে, আবার শত্রুকে মিত্রে পরিণত করে। সুবচন নির্বাসনে না দিয়ে সুবচনের অধিষ্ঠান ঘটানো হোক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। তাহলে রাজনীতিও বাঁচবে, রাজনীতিকও বাঁচবেন।

লেখক : সাংবাদিক