Sunday, September 17, 2017

মোস্তফা,ওয়াজিউল্লাহ আর বাবুলের আত্মদানের স্বীকৃতি দিন শিক্ষামন্ত্রী



১৯৫৯ থেকে ২০১৭! শিক্ষা দিবসের দাবি এখনো হিমাগারে।শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই আন্দোলনের সাতের দশকের লড়াকু যোদ্ধা। ৫৮ বছর পরও তিনি বাস্তবায়ন করলেন না শিক্ষা দিবসের মূল দাবী কুদরাত ই খুদা শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়ন, বিজ্ঞানভিত্তিক একমুখী শিক্ষা। অন্ধকারের শক্তি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে।হাতে রক্তাক্ত খঞ্জর।ধর্ম নিয়ে ব্যবসাতে নামিয়ে দিয়েছে অাপামর ছাত্রছাত্রীকে।
১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ক্ষমতা দখলের ২ মাসের মধ্যে জেনারেল আইয়ুব খান শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরিফকে প্রধান করে শিক্ষা কমিশন গঠন করে।

সেই কমিশন ১৯৫৯ সালের আগস্ট মাসে ২৪ অধ্যায়ে বিভক্ত বিশাল শিক্ষা রিপোর্ট প্রণয়ন করে, যা ছাত্রদের চরম স্বার্থবিরোধী।
সেই কালো রিপোর্টের অধিকাংশ সুপারিশ গ্রহণ করে পাকিস্তান সামরিক সরকার তা বাস্তবায়ন শুরু করলে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সৃষ্টি হয় একের পর এক ইতিহাস। প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের শুরু থেকেই ছাত্রদের শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র সংগঠনগুলো এই জনবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রাজপথে নামে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপি হরতাল আহ্বান করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে দেশব্যাপি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। সে দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ, বাবুল। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানের ছাত্রসমাবেশ থেকে শিক্ষানীতি বাতিল, হত্যার বিচারসহ ছাত্রসমাজের উত্থাপিত দাবি মানার জন্য চরমপত্র ঘোষণা করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন স্থগিত করে। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ৬৬’র ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় গভীর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সেদিন ছাত্রসমাজই পালন করেছিল নতুন ইতিহাস নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা, যার ধারাবাহিকতা আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে একটি শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, যাতে শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য শিক্ষা রিপোর্টের মতোই ছাত্রসমাজ তথা জনগণের মঙ্গল করার মতো কিছুর প্রতিফলন তাতে ঘটেনি।
সব সরকারই মুক্তবাজার অর্থনীতির দর্শনকে ধারণ করে ধনিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি প্রণয়ন করে, যার মধ্যে শিক্ষানীতি অন্যতম।
সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সার্বজনীন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১৯৭৫ সালে জাতির পিত্ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে বর্বরোচিত হত্যার মধ্যে দিয়ে সমাজবিধ্বংসী জগাখিচুড়ি মার্কা নীতিহীন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ছিল গণমুখী, সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের। স্বাধীনতার ৪০ বছর এবং ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলনের ৫০ বছর পরও এদেশের ছাত্রসমাজকে শিক্ষার অধিকার আদায়ে নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ’
১৯৭৫ এর পরের সরকার গুলো ‘টাকা যার শিক্ষা তার’ নীতি বাস্তবায়িত করেছে
’৫২-র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, যার অনিবার্য পরিণতিরূপে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, তেমনিভাবে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রসমাজ সর্বগ্রাসী শিক্ষা সঙ্কট উত্তরণে গঠনমূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে পরবর্তী প্রজন্মকে বিজ্ঞানমুখী, মানবতার শিক্ষা ও দীক্ষার দ্বার উন্মোচিত করবে। এই হোক মহান শিক্ষা দিবসের এবারের শপথ!
sumikhan29bdj@gmail.com