Thursday, January 25, 2018

সফল নেতা শেখ হাসিনা, কুর্নিশ তোমায়- সুমি খান

একটা স্বাধীন দেশ -একটা সূর্যরাঙ্গা সকাল আর একটা পতাকা-এই তো! এ আর এমন কী! না, অনেক কিছুই! সখিনা বিবির ভাঙলো কপাল, সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর। দানবের মতো চিৎকার করতে করতে শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এলো! ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হল। রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র। ছাই হল গ্রামের পর গ্রাম।

বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করেছিলো একটি বা অনেক কুকুর। শকুনেরা ব্যবচ্ছেদ করেছিলো লাশের পর লাশ! কতো যে অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিয়েছিলো পিতামাতার লাশের ওপর। আর সেই অবুঝ শিশুটি পিতামাতার ঘাতকদের বিচারের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনেছে ৪৪ বছর! আর যুদ্ধজয়ী ক্লান্ত খোকার প্রতীক্ষায় নুয়ে পড়া লতাটার কুমড়ো ফুল শুকিয়ে গেছে অনেকদিন! ঝরে পড়েছে ডাঁটা; পুঁইলতাটা নেতানো, মায়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চোখ শুধায়-“খোকা এলি?’ ঝাপসা চোখে মা তাকায় উঠোনে, উঠোনে যেখানে খোকার শব শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন, মা’র চোখে চৈত্রের রোদ পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের। শহীদ জননীর চোখের চৈত্রের রোদের তেজ আমাদের জননন্দিত রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখে। বর্বর আত্মম্ভরী ঘাতকদের একের পর এক বিচারের মুখোমুখি করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করলেন শেখ হাসিনা!

পেশাগত কাজে এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শুরু থেকেই পর্যবেক্ষণ করছি। এই বিচারে নিয়োজিত তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটরদের অনেক কাজের সাথে আমি সম্পৃক্ত। এই ঘাতকদের বর্বর নির্যাতনের শিকার আমার পিতার রক্তশপথে আমি নিজেকে এ কাজে উৎসর্গ করেছি অনেক আগেই। আর তাই বার বার আভূমি নত হয়ে কুর্নিশ করি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে।

যিনি বারবার আমাকে দৃপ্ত শপথে পুনর্জীবিত করেন। এ দেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির বিরুদ্ধে হাজারো লক্ষ ষড়যন্ত্র চলমান। পাশাপাশি ঘাতকদের বিচারও চলমান। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশে বিদেশে অনেক খ্যাতিমান সাংবাদিক, সম্পাদক এবং নীতিনির্ধারকেরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করেছেন। আমি দ্বিধাহীন চিত্তে গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের প্রত্যেককে সেই শুরু থেকেই বারবার বলে এসেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতোক্ষণ বেঁচে আছেন, তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের শপথে একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতকদের ফাঁসি তিনি কার্যকর করবেনই।

বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে আমাদের এ বীর রাষ্ট্রনায়ক শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে উচ্চারণ করেন- “এই বাংলাদেশের কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ করতে চাইলে তারাও যুদ্ধাপরাধী।” সত্যি, একাত্তরের ডিসেম্বরের ১০ তারিখের পর দেশের এ প্রান্তে ও প্রান্তে পরাজয় নিশ্চিত জেনে যারা তালিকা করে এদেশকে মেধাশূন্য করতে শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের একের পর এক হত্যা করেছে-সেই ঘাতকদের কখনো রাষ্ট্রপতি, কখনো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীত্ব , কখনো বা শর্ষিনার পীরের মতো ঘাতককে ‘স্বাধীনতা পদক’ দিয়ে হায়েনার মতো হা-হা-হা করে হেসেছে! আর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হাতের নির্দেশে রাস্তায় নামিয়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের ।

আমার বাবার মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারা চোখের জলে ভেসে রাজপথ কাঁপিয়েছন প্রতিবাদে। যাদের বঙ্গবন্ধু দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছিলেন, তাদের স্বজনদের কর্মসংস্থান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চোখের জলে ভেসে যে বীরাঙ্গনাদের যুদ্ধশিশুদের সন্তানের কাগজে কলমে আক্ষরিক অর্থে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, সেই বীরাঙ্গনা এবং তাদের সন্তানদের পথের ভিখারীতে পরিণত করেছিলো যারা, কমরেড মণিসিংহসহ এ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের স্বজনদের জন্যে বঙ্গবন্ধু যে বাড়ি দিয়েছিলেন, সেই বাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে কোথাও নজরুল একাডেমী , কোথাও বা জামাতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান করে ৯৯ পয়সার বিনিময়ে শত বছরের লীজ দিয়েছে।

দেশ বিরোধী, পাকি সাপের বিষধারী সেই সাবেক রাষ্ট্রনায়কেরা আজ তাদের কলঙ্কিত পায়ে আমাদের মহান স্মৃতিসৌধ, বধ্যভূমি এবং শহীদ মিনারে যাচ্ছে, মহান শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হাতে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দিচ্ছে- সে কি লোক দেখানো নয়? এই বোধোদয় আমাদের কবে হবে? আর তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা যথারীতি একাত্তরের ঘাতক পুনর্বাসনকারী রাজনৈতিক দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে নির্ভীক কন্ঠে বারবার বলে যেতে হয়, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে আবার স্মৃতিসৌধে যান তিনি! এ তো লোক দেখানো এবং মানুষের চোখে ধুলি দেয়ার চেষ্টা মাত্র।” যে মুক্তিযোদ্ধারা এই যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে স্মৃতিসৌধে যায়,তাদেরও এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত বললেন প্রধানমন্ত্রী। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের পুনর্বাসনকারীদের সাথে বসবাস করে নিজেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করা চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কী হতে পারে।

প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা না ও থাকতে পারেন, রাজাকার আমৃত্যু রাজাকার।’ গত পয়লা নভেম্বরে ‘পাকিস্তানী সাপের বাচ্চারা কিলবিল করছে’ শিরোনামে জাহিদ নেওয়াজ খানের কলামের একটি অংশ এখানে তুলে ধরা জরুরী। “খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক স্বার্থে আর জামায়াত তার যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাঁচানোর লক্ষ্যে হেফাজতকে মাঠে নামালেও সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, আর কোনো গণজাগরণ যাতে না ঘটে সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারও তলে তলে হেফাজতকে উস্কানি দিয়েছে।

সরকারের পক্ষে হেফাজতকে জমি-জিরেত এবং অন্য সুবিধা দেয়ার কথা বাদ দিলেও তাদের তাণ্ডবের বিচার না হওয়া এর এক বড় প্রমাণ। এভাবে হেফাজত নামের সাপটিকে দুধকলা দিয়ে পোষ মানিয়ে আর বাংলাদেশে সব ধরণের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বটবৃক্ষ যে জামায়াত, তার নেতাদের ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচারের মুখোমুখি করে সরকার আপাতঃ দৃষ্টিতে বড় বড় সাপগুলোকে ঝাপিতে পুরে ফেলতে পারলেও তাদের বাচ্চা আর জ্ঞাতি গোষ্ঠি কখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে, কখনো আনসার আল ইসলাম পরিচয়ে, কখনো আইএস বা আল কায়েদার উপমহাদেশীয় শাখার নাম উল্লেখ করে ঠিকই বিষের ছোবল অব্যাহত রেখেছে।”

আর এই বাস্তবতা উপলব্ধি করলে অপশক্তি ঠেকানো খুব কঠিন নয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বক্তব্যে বঙ্গকন্যা হুংকার দিলেন, আগামীতে আর সেই চেষ্টা করতে পারবে না। তাদের বিষদাঁত একে একে ভেঙ্গে দিচ্ছি, ভেঙ্গে দেবো!” একেই বলে বাপকা বেটি! স্যালুট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! ঠিক এই প্রত্যয়ে বারবার জেগে উঠি দৃপ্ত শপথে।

আজকের বিশ্বে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত সত্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ একের পর এক শেষ করে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ অনুকরণীয় এবং অনুসরনীয় রাষ্ট্রের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহ-সভাপতি কৌশিক বসু বলে গেছেন, বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে চীনের সমপর্যায়ের। পাকিস্তান পরিত্যাজ্য করার সাহসী ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের ধৃষ্টতা দিনে দিনে কতোটা বাড়ছে, তা দৃশ্যমান। ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান জনগণকে একাত্তরে বাঙ্গালী নিধনের মতো করেই নিজেদের দেশে বালুচিস্তানের নিরীহ মানুষ নিধন যজ্ঞে মেতেছে। বালুচ ভাষার বদলে উর্দু ভাষা বলতে বাধ্য করছে তাদের। তুমুল আন্দোলন চলছে বালুচ জনগণের। এই পরিস্থিতিতেও পাকি গোয়েন্দা সংস্থা এখনো বাংলাদেশকে তাদের মতো ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তার প্রমাণ ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা ফারিনা আরশাদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ। গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও থেকে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এদের একজন পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএ’র চর ইদ্রিস শেখ। পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী পাকি –বাংলা জঙ্গী ইদ্রিস শেখের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা যায়, জেএমবিকে নিয়মিত টাকা দিতেন পাকি দূতাবাসের কর্মকর্তা ফারিনা আরশাদ। জঙ্গী ইদ্রিস আদালতে জানিয়েছে, ২০০২ সালে সে করাচির রাজনৈতিক দল পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়।

২০০৭ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় এসে প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে। ২০১২ সালের পর এয়ার টিকিটিং ও ভিসা প্রসেসিংয়ের ব্যবসা করতে গিয়ে বাবুল এবং পরবর্তীতে তার মাধ্যমেই কামাল নামে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আ্ইএসআই’র এজেন্টের সাথে পরিচয় হয়। ঘনঘন টিকিট করিয়ে দেয়ার কারণে বাবুলের কাছে তার অনেক টাকা বাকি পড়ে।

একপর্যায়ে বাবুল পাকিস্তানে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সে ফারিনা আরশাদের মোবাইল নাম্বার দেয়। ইদ্রিসের স্বীকারোক্তি থেকে প্রকাশ, নিয়মিত জামায়াতকে অর্থায়ন করার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নিষিদ্ধ হবার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে বিপন্ন করার জন্যে আরো কয়েকটি জঙ্গী সংগঠন তৈরি জরুরী হয়ে যায় পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ এর জন্যে। তারই অংশ হিসেবে জেএমবিকে বেছে নেয় তারা। এরই অংশ জেএমবি’র পাঁচ জনের দল গঠন করে সৃষ্টিশীল মুক্তচিন্তার অধিকারী, ধর্ম যাজক, বিদেশী সমাজহিতৈষী, সুফি বাদী ব্যক্তি, শিয়া মসজিদ এবং মন্দিরে একের পর এক হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে হামলা চালিয়ে আসছে।

এ্ই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাল মুদ্রার ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। পাকিস্তান থেকেই বিমানে করে আনা হচ্ছে জাল ভারতীয় রুপি। পাকিস্তানি এয়ার লাইনসের বিমানে করে বাংলাদেশে সেই জাল মুদ্রা আনে। জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্যে বাংলাদেশ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে কিছুদিন পাকিস্তানি বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। বাংলাদেশ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেন।

আকর্ষণীয় পাকি কর্মকর্তা ফারিনা আরশাদের সাথে মদ এবং নারীর লোভে লালায়িত দেশের শীর্ষ আমলা, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব্বে নিয়োজিত অনেকে অনৈতিক ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়েছেন এমন প্রমাণও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে ফারিনা আরশাদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ বিষয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জঙ্গী ইদ্রিস শেখ।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, শুধু সরকার পতনের ভয়াবহ জঙ্গী নাশকতাই নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে আইএসআই। যা কার্যকর করতে গুটি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে পাকি নারী কূটনীতিক। এর আগে জঙ্গী ও জাল মুদ্রার ব্যবসার অভিযোগ এনে ২০১৪ সালে পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। অভিযোগের পর তড়িঘড়ি করে তাকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। এরপর জঙ্গী ও জাল মুদ্রার ব্যবসাসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এবং জনগণকে ধ্বংসের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ফারিনাকে।

ইদ্রিস দাবি করে, বাবুলের মাধ্যমেই মূলত তার ফারিনার সঙ্গে পরিচয়। আইএসআই এর ষড়যন্ত্রে যুক্ত হবার কিছু দিন পরই ঢাকা বিমানবন্দরে জাল ভারতীয় রুপিসহ ধরা পড়েছিলো ইদ্রিস। পরবর্তীতে প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে জামিন পেয়ে যায় ইদ্রিস এবং বাবুলের মাধ্যমে পাকি দূতাবাসে ফারিনা আরশাদের কাজে সম্পৃক্ত হয়।

ইদ্রিসের দাবি, সে প্রথমে পাকিস্তানের এক স্কুল শিক্ষক শাহনাজ বেগমকে বিয়ে করেছিল। ওই ঘরে মোহাম্মদ আদিল নামের এক ছেলে রয়েছে। পরে ২০০০ সালে দেশে ফিরে সে পাশের গ্রামের মনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করে। ইদ্রিসের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারিতে। এই সংসারে তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনার নেপথ্যে আইএসআই নিয়োজিত পাকি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নাম আদালতে নথিভুক্ত হচ্ছে পাকিজঙ্গীদের স্বীকারোক্তিতেই। এতে আবারো প্রমাণিত হলো পাকি দূতাবাসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে বসেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক নাশকতার কর্মকাণ্ডে অর্থ যোগান দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি বলেছেন, এদেশে জঙ্গীবাদের কোন ঠাঁই হবে না। প্রথম বারের মতো রাষ্ট্রের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বললেন, এদেশে নাস্তিকদের ও স্বাধীন মত প্রকাশ এবং স্বাধীনভাবে বাঁচবার অধিকার রয়েছে। কাউকে হত্যা করার কোন অধিকার জঙ্গীদের দেয়নি কেউ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম, এর কাছে এমন বক্তব্যই প্রত্যাশিত। একই সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জগদ্দল পাথরের মতো গেড়ে বসা রাজাকার আলবদরের বশংবদদের নির্মূলের সময় এসেছে। তবে প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিবাদ-বিচ্ছিন্নতার মেঘ কাটবে কি কখনো? সত্যিকার অর্থে একের পর এক ষড়যন্ত্র্র প্রমাণিত হবার পরও এদেশে পাকি দূতাবাসের কার্যক্রম সক্রিয় রাখার প্রয়োজন রয়েছে কি?

দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং এ দেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সুগভীর ষড়যন্ত্র ঠেকানো জরুরী। আর তা করতে হলে পাকি দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরী। প্রাণের চেয়ে প্রিয় এই মাতৃভূমি সুরক্ষা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার প্রয়েোজনে দৃঢ়পণে এই মেঘ কাটিয়ে পাকিস্তানি সাপের বাচ্চাদের নির্মূলে একাত্ম হতে হবে সকলকে।

(১৫ নভেম্বর , ২০১৫ চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত )