Tuesday, September 24, 2013

যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রশ্নবিদ্ধ সহমর্মিতা - আঞ্জুমান ইসলাম ও ওমর শেহাব

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (AI) বিশ্বের নামকরা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অন্যতম। এসব সংগঠনসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক এনজিও হঠাৎ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা (!!!) প্রকাশ করে আসছে।ব্যাপারটি বেশ আশাজাগানিয়া হত যদি তারা এর পাশাপাশি বিশ্বজিৎ বা ত্বকী হত্যাকাণ্ড ও এর সুষ্ঠু বিচার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চাপের মুখে রাখত কিংবা ফটিকছড়ি-রামুতে বর্বরোচিত তাণ্ডব বা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন ও আগ্রাসনের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারায় সরকারকে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করত।

কিন্তু তা না করে দেখা গেল গত এক বছরে তারা তাদের অধিকাংশ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের জন্মের সময়ে নির্বিচারে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে শুধুমাত্র তাদের ‘মানবাধিকার’ কোনোভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে আলোকপাত করে। বিষয়টি আশ্চর্যজনক বটে!

আরও আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল প্রত্যেক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ের আগে ও পরে প্রায় চার দশক ধরে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াত-শিবির যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে অমানবিক নৃশংসতা দেখাচ্ছে, সেগুলোকে ‘রাষ্ট্র, বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি’ বলে উল্লেখ না করে, শুধুমাত্র গোলাম আযমের রায়কে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ দেখানোর প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিয়াল্লিশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেঁধে মুক্তিযুদ্ধের যে ভিকটিমরা ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায্য বিচার ও সাজা দেখার অপেক্ষায় আছেন– সেই নিপীড়িত নর-নারী, আত্মীয়-পরিজনদের উপর ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া এসব মানবাধিকার সংস্থার ব্যাপারে আমরা তাই আগ্রহ বোধ করলাম। তাদের সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখলাম এবং যা পেলাম তা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক।

উদাহরণ দেওয়া যাক। রাজাকার সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে ডিবি পুলিশ অপহরণ করেছে এ কথা কোত্থেকে জানল সে ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জিজ্ঞেস করলে ওরা ডেভিড বার্গম্যানের সূত্র দিয়ে থাকে।
ডেভিড বার্গম্যানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি শুধুমাত্র সাঈদীর আইনজীবী ব্যরিস্টার রাজ্জাকের জুনিয়র হাসানুল বান্না সোহাগকে তার সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। সোহাগের বস ব্যারিস্টার রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন এটি তাকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে!


২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত ওমর শেহাবের করা অ্যানালাইসিস “The missing links of the Bali abduction allegation”-এ এই দুর্বল সূত্রের দুষ্টচক্রটি (circle of reference) স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। পাঠক-পাঠিকাদের সুবিধার জন্য আমরা সেই প্রবন্ধ থেকে এই দুর্বল সূত্রের দুষ্টচক্রটির একটি ছবি তুলে ধরলাম।



সুখরঞ্জন বালীর কথিত অপহরণের ব্যাপারে কোন প্রতিষ্ঠান কাকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করছে তার ছবি। প্রশ্নবোধক চিহ্নটি হল একটি ভুতুড়ে সূত্র।
এখন দেখা যাক এই দুষ্টচক্রে অংশগ্রহণকারীদের কাজের সময়ের ব্যবধানের একটি ছবি।

সুখরঞ্জন বালীর কথিত অপহরণের সংবাদ প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকাশিত প্রতিবেদনের সময়ের ব্যবধান ও তথ্যসূত্রের পরম্পরার একটি চিত্র।

বিদেশি মানবাধিকার ও দাতা সংস্থার এ ধরনের উন্নাসিক ও একপেশে আচরণ আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আশার ব্যাপার হল গত বিয়াল্লিশ বছরে জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তাদের এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে তাদের সেই তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা আমরা অনেক আগেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি– অধিকার, আইন, নৈতিকতা, সভ্যতা, সমাজ এসব ব্যাপারে তাদের অষুধ গেলাই আমাদের একমাত্র কাজ নয় বরং আমাদের কাছ থেকেও তাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

উদাহরণস্বরূপ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কর্মকাণ্ডের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রতিবেদনের গুণগত মান যে কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সমমান এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিখ্যাত পত্রপত্রিকাগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।

প্রসঙ্গক্রমে, ইকোনমিস্টের সেই প্রতিবেদনের কথা বলা যায় যেটিতে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে তুলনা করার জন্য বহুল-বিতর্কিত নাজি সেনাপতি আইখম্যানের বিচারের কথা তুলে ধরা হয়। যদিও আন্তর্জাতিক আইনের অনেক টেক্সট বইয়ে এ বিচারকে বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই তুলে ধরা হয়।

একইভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রামাণ্য ছবি উপগ্রহের মাধ্যমে তুলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশ করলেও, কয়েকদিন পরে মাত্র কয়েকশ মাইল দূরে রামুতে মুসলমান সন্ত্রাসীরা বৌদ্ধমন্দির ও জনবসতিতে যখন স্মরণকালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটাল তখন আর তাদের উপগ্রহ ছবি তোলার জন্য আমাদের আকাশে আসেনি!

বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বেশকিছু সংশয় দেখা দেওয়ায় আমরা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিলাম যে মানবাধিকার সংস্থা ও এর কর্মীরা আসলে একে অপরের থেকে কতটুকু বিচ্ছিন্ন ও প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করে যে একটি সংস্থার বা কর্মীর রিপোর্টের তথ্যকে আরেকটি সংস্থা তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। সে সঙ্গে বর্তমানের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিতর্কিত কাজকর্ম যা বিভিন্ন সময়ে উচ্চমহলে নাড়া ফেলেছে তা নিয়েও কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

এটা বলার অবকাশ রাখে না দুর্বল ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে নৈতিক সমর্থন দানের জন্যে ১৯৭৮ সালে রবার্ট বারনেস্টাইনের নেতৃত্ব হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আগে অবশ্য হেলসিংকি ওয়াচ ( Helsinki Watch) নামের এ সংগঠনের কাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ব্লকের কর্মকাণ্ড হেলসিংকি ঘোষণার (Helsinki Accord) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনটিতে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রবার্ট বারনেস্টাইন থেকে শুরু করে টাইম ম্যাগাজিনসহ উল্লেখযোগ্য প্রায় সব মিডিয়াই একমত হয় যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু জনগোষ্ঠী বা দলের মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করার কারণে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

কোনো দেশের “সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততাবিহীনভাবে কাজ করার নীতি” নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অনুদান গ্রহণ করার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদেরই প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট বারনেস্টাইনে দ্বারা।কাকতালীয়ভাবে এর পর থেকে মুসলিমপ্রধান দেশের, বিশেষ করে ইসলামিস্ট সংগঠনগুলোর কাছে ভীষণ গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের। এইচআরডব্লিউ প্রধান কেনেথ রথের কাছে নানান দেশ থেকে খোলা চিঠিও দেওয়া শুরু এই অভিযোগ করে যে কেন কেনেথ রথ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলছেন।এমন অভিযোগও করা হয় যে ইসলামের নামে মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড নারীদের স্বাধীন চলাফেরাতে যে বাধা দিচ্ছে তার পক্ষেই সাফাই গাইছেন কেনেথ রথ। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিককালে নানান প্রশ্নবিদ্ধ মানুষকে অ্যাডভাইজরি বোর্ডে নিয়োগ দিয়ে যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে সংস্থাটি। আমেরিকান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য ও প্রকাশ্য নাৎসি সমর্থক মার্ক গার্লেস্কোকে (Marc Garlesko) সেখানে নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।এখন আবার শাওয়ান জাবারীন (Shawan Jabarin), যাকে ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্ট ‘ড. জেকিল ও মিস্টার হাইড’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, জাবারীন প্রকাশ্যে নিজেকে মানবাধিকারকর্মী বলে দাবি করলেও আসলে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য– এ নিয়োগকে বছর দুয়েক আগে বারনেস্টাইন রীতিমতো ‘হোঁচট খাওয়ার মতো’ বলে উল্লেখ করেছেন।ইরাকের রাসায়নিক অস্ত্র ও নার্ভ গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ আছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যা প্রকারান্তরে বুশের ইরাক আক্রমণের পক্ষে রায় দেয়। তাদের দেওয়া সেই ঘোষণাটি পরবর্তীতে শতভাগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। মিথ্যা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুরু হওয়া ইরাক যুদ্ধের ৬ লাখ অকারণ মৃত্যুর (আমরা মনে করি এগুলো হত্যাকাণ্ড) দায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কখনওই স্বীকার করেনি।

এ বছর আবার কেনেথ রথ ও তার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে “Martin Ennals” মানবাধিকার পুরষ্কারের জন্যে ফাইনালিস্টদের তালিকায় ‘মনা সাইফ’ নামে জঙ্গি-সমর্থক বলে অভিযুক্ত একজনকে নমিনেশন দেওয়ার। এ রকম বহু একপেশে ও উদ্বেগজনক তথ্য যে কেউ পেতে পারেন “Controversies about HRW” লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই।এছাড়া সচেতন স্বেচ্ছাসেবকরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সমালোচনা (Criticism of Human Rights Watch) শীর্ষক একটি সমৃদ্ধ নিবন্ধ লিখে রেখেছেন এবং নিয়মিত হালনাগাদ করে যাচ্ছেন।তাই এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনায়যাব না।

কিন্তু কেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এ বর্তমান অবস্থান ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড– বিশেষ করে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে অহেতুক সহমর্মিতা কি নিছকই কাকতালীয়?

একটু বিশদ অনুসন্ধানী তথ্য দিচ্ছি নিচে এসব মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও ও সাংবাদিকের অর্থের উৎস ও পারস্পরিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে। এটি এখনও কোনো সম্পূর্ণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নয়। আমরা এটিকে মনে করি কৌতূহলের প্রথম ধাপ। আমাদের বিশ্বাস এই তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলোর কাজকর্ম বিচারের সময় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন কিছু উপাদান যোগ করবে।

১৯৮৭ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তদানীন্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আরিয়াহ নাইয়ার তার ডেপুটি হিসেবে কেনেথ রথকে নিযুক্ত করেন। ১৯৯৩ সালে নাইয়ার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ছাড়েন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী জর্জ সোরসের ওপেন সোসাইটি ইন্সটিটিউট (OSI)-এর প্রধান হিসেবে যোগ দিতে। আর নাইয়ারের স্থলাভিষিক্ত হন রথ। এখন পর্যন্ত কেনেথ রথই সংগঠনটির প্রধান।ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট হচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সবচেয়ে বড় অর্থ যোগানদানকারী সংস্থা। ২০১১ সালে আরিয়াহ নাইয়ার ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটউটের পক্ষ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে। মজার ব্যাপার হল, নাইয়ারের স্ত্রী ইভেট নাইয়ার নোবেলবিজয়ী বাংলাদেশি ড. মুহম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের একজন।ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটউটের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ সোরস হচ্ছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনের অ্যাডভাইসারি কমিটির সদস্য– আমেরিকা এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া।

কাকতালীয়ভাবে কি না আমরা জানি না, জর্জ সোরসেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান “সোরস ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট” গ্রামীণ টেলিকমকে ১০.৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করে। গ্রামীণ ব্যাংকের দাতাগোষ্ঠীর মধ্যেও জর্জ সোরস ও তার প্রতিষ্ঠান ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটউট অন্যতম এবং সোরস নিজেও মাইক্রো ক্রেডিট ও মাইক্রো ফিন্যান্সের একজন বিশাল প্রমোটার।/b>

জর্জ সোরস কতখানি ক্ষমতাধর তা বোঝানোর জন্যে বোধহয় একটি তথ্যই যথেষ্ট। সোরস হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম ২০ ধনীর একজন যিনি ক্লিনটন পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তার সোরস ফাউন্ডেশন ও ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটউটের তরফ থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলার দান করেছেন তিনি শুধু ২০১২ সালেই।

অন্যদিকে ইউরোপভিত্তিক আরেকটি বিশাল দাতা সংস্থা হল সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্ট (Sigrid Rausing Trust)। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ৯৪,১৮,৪০০ ডলার অনুদান পায় এই সংস্থাটির কাছ থেকে। সিগ্রিড রেয়্যুসিং (যার নামে সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্ট) নিজেই আবার ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অব হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমেরিটাস মেম্বার। মজার ব্যাপার হল সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্টের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে ‘বিশেষ সম্মানিত’ একজন হলেন কেনেথ রথ যিনি কিনা আবার ১৯৯৩ সাল থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অর্থাৎ নির্বাহী পরিচালক!!!

সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্টের একজন ট্রাস্টি জশুয়া মেইলম্যান। এই মেইলম্যান কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন এমেরিটাস বোর্ড মেম্বার। জশুয়া মেইলম্যানের নাম এলে ড. ইউনূসের নাম একটু নিতেই হবে। কারণ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মেইলম্যান আর ড. ইউনূস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জশুয়া মেইলম্যান গ্রামীণ টেলিকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা।
তার প্রতিষ্ঠিত অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল টাইডস ফাউন্ডেশন, থ্রেশল্ড ফাউন্ডেশন ও মেইলম্যান ফাউন্ডেশন, সোস্যাল ভেঞ্চার নেটওয়ার্ক, যেগুলো থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নিয়মিত মোটা অঙ্কের অনুদান পায় এবং যার প্রায় প্রত্যেকটিই গ্রামীণ পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত।


ইদানিং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে বিতর্কিত সাংবাদিক ব্যক্তিত্বের তথ্যসূত্র দিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে রিপোর্টগুলো করে, তিনি হলেন ডেভিড বার্গম্যান। প্রথমত ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ডেভিড বার্গম্যান সেন্টার ফর কর্পোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি (Centre for Corporate Accountability) বলে একটি সংগঠনের প্রধান ছিলেন। সংগঠনটি ২০০৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি টাকা) অনুদান পায় সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্ট থেকে।
এখানে আবার চলে আসে সেই ড. ইউনূসের নাম। ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী সারা হোসেন এবং সে সঙ্গে ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটেস গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের আইনজীবী। শুধু তাই-ই নয়, ড. কামাল হোসেনকে গ্রামীণ পরিবারের ‘বিশেষ’ বন্ধু হিসেবে ফ্রেন্ডস অব গ্রামীণ (Friends of Grameen)-এর তালিকায় অনারারি কমিটিতে (Honorary committee) উল্লেখ করা হয়েছে।


আবার আসা যাক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাপারে। ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এই তিন বছরেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে সাত লাখ পাউন্ড (১০ কোটি টাকা) অনুদান পায় সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্টের কাছ থেকে। সিগ্রিড রেয়্যুসিং নিজে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমিরেটাস মেম্বারও।

অন্যদিকে জর্জ সোরস ও তার ওপেন সোসাইটি ইন্সটিউটের কাছ থেকেও নিয়মিতভাবে অনুদান পায় অ্যামনেস্টি। সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্ট আবার জর্জ সোরসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন সংস্থাকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অনেক প্রকল্পেই একে অপরের দাতা-সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যখন অতিমাত্রায় গুম, খুন, আর সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছিল বাংলাদেশে। আর সে সময় কয়েকবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তদানীন্তন প্রধান আইরিন খান বাংলাদেশে ‘পারিবারিক’ সফরে এসেছিলেন। অথচ নিজের আপন চাচাতো বোনের শাশুড়ি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ‘অফিসিয়াল’ মিটিং করে এ নিয়ে তাকে ‘শক্ত করে’ কিছু বলেননি।

বিমল কান্তি শীলসহ বাঁশখালির ভিকটিমদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে তাদের হয়ে বিচার দাবি বা অন্যান্য বিচার-বহির্ভূত হত্যা বন্ধ বা তদানীন্তন বিরোধী দলীয় নেত্রীর উপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে সোচ্চার প্রতিবাদও করেননি আইরিন। শুধু তাই নয়, চাচাতো বোন যোবায়দা রহমানের স্বামী তারেক রহমান তখন ছিলেন ক্ষমতাসীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ সফরের সময় তারেক রহমানের সঙ্গেও একটি ‘অফিসিয়াল’ সাক্ষাত করতে দেখা যায়নি আইরিন খানকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, আইরিন তখন তাদের সঙ্গে মিটিং না করলেও তারেক-যোবায়দা দেশছাড়ার পরপরই ‘অফিসিয়াল’ সফরে এসে ২০০১ থেকে ২০০৬-এ ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে চাপ দেওয়া শুরু করলেন।

উপরের আলোচনাতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ব্যাপারে খুবই ছোট্ট একটা চিত্র আমরা তুলে ধরলাম যাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রকম আর্থিক ও আদর্শগত স্বার্থ দ্বারা প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। (খুব সরলভাবে বললেও) এটা স্পষ্ট যে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িত মানুষরাও সমালোচনার উর্ধ্বে নন।

তাই আজকে আসলেই সময় এসেছে এটা ভেবে দেখার যে মানবাধিকার সংস্থা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ সংক্রান্ত রিপোর্টগুলো কতটুকু নিরেপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রেক্ষাপট থেকে লেখা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ যোগসূত্রগুলো হয়তো নিদেনপক্ষে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।আর আমাদের ভাগ্য খুব খারাপ হলে, হতে পারে যে সূত্রগুলো সব আসলে একই সূতোয় গাঁথা!

যেটাই হোক না কেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে তাই আমরা অনুরোধ করব, বাংলাদেশের বাইরে থেকে প্রকাশিত হলেই বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে বললেই কোনো সংবাদ বা মন্তব্যকে ঢালাওভাবে স্বার্থহীন, নিরপেক্ষ বা স্বাধীন বলে রায় না দিয়ে দায়িত্বশীলতার খাতিরে আগে একটু যাচাই করে দেখুন, আসলেই তাতে কতটুকু পেশাদার ও নিরপেক্ষ মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে।

একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে, যে দেশের জন্ম মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ গণহত্যা দিয়ে, যে দেশের রাষ্ট্রভাষা জনসংখ্যার বিচারে গোটা বিশ্বে সপ্তম– সে দেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলোও কিন্তু কম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়।

ড. আঞ্জুমান ইসলাম : পানি পরিশোধন ও পরিবেশ প্রকৌশলী। ওমর শেহাব : ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচ-ডি অধ্যয়নরত।
বিডিনিউজ

Monday, September 23, 2013

শেখ হাসিনা, প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ- ওয়ান অব দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: স্যার ডেভিড ফ্রস্টের শেষ সাক্ষাৎকার


সমসাময়িক পরিস্থিতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অবদান, রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা। শুক্রবার রাত দু'টায় খ্যাতিমান ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার ডেভিড ফ্রস্টের নেয়া এ সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎকারগ্রহণে অনন্য কীর্তিধারী কীর্তিমান এই সাংবাদিকের নেয়া কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সর্বশেষ আলেখ্য ছিল এটি । বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শীর্ষক তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা ও দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারও নেন প্রখ্যাত এই সাংবাদিক। ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে ধারণ করা এই সাক্ষাৎকারে উঠে আসে দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা, দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, নির্বাচন ও রাজনীতির নানা কথা।
তথ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর কিছু দুর্লভ ফুটেজ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বিমান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পা রাখার ফুটেজও আছে। ফ্রস্টই প্রথম বিদেশী সাংবাদিক, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের নেতা হিসেবে দেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাক্ষাৎকার নেন। তথ্যচিত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ডেভিড ফ্রস্ট হাইকমিশনার ও তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেছিলেন। দীর্ঘ ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এ তথ্যচিত্রের শুরুতেই বলা হয়, শেখ হাসিনা, প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ। ওয়ান অব দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ডেভিড ফ্রস্টের নাম। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারেই এদেশবাসীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার বিষয়টি। সাক্ষাৎকার নিতে কখনও বঙ্গবন্ধুর অফিসে, কখনও তার বিখ্যাত সেই ছোট্ট নীল সরকারি গাড়িতে, কখনও ৩২ নম্বর বাড়ির শোয়ার ঘরে, বারান্দায় বা লনে গেছেন ফ্রস্ট। বঙ্গবন্ধুও ব্যস্ততার মধ্যে ডেভিড ফ্রস্টের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারটি বিবিসিতে প্রচারিত হওয়ার পর পরই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ নতুনভাবে সৃষ্টি হয়।
এবার বাংলাদেশের মাটিতে এসে প্রথমেই ব্রিটিশ এ প্রবীণ সাংবাদিক ছুটে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। এ বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বাধীনতার পরাজিত শত্র“দের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সেখানে এখনও জাতির পিতার রক্তের দাগ লেগে আছে, বীভৎস হত্যাযজ্ঞের আলামতগুলো এখনও স্পষ্ট। ডেভিড ফ্রস্ট ঘুরে ঘুরে সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের আলামত প্রত্যক্ষ করেন এবং তার সঙ্গে থাকা আল জাজিরার প্রতিনিধিরা ডকুমেন্টারির জন্য প্রয়োজনীয় ফুটেজও সংগ্রহ করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় যান ডেভিড ফ্রস্ট। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে গিয়েই প্রধানমন্ত্রীর পর বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এরপর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থানকালে ব্রিটিশ এ সাংবাদিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শুক্রবার রাত দুটার দিকে আল জাজিরাতে প্রচারিত হয় এক ঘণ্টার এ সাক্ষাৎকার।

ডেভিড ফ্রস্ট : যুক্তরাজ্যের কেন্টে ১৯৩৯ সালের ৭ এপ্রিল জন্ম নেন ডেভিড ফ্রস্ট। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা, টেলিভিশন উপস্থাপনা, রম্য লেখনীসহ বিভিন্নধর্মী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন বিবিসিতে কাজ করার পর ২০০৬ সালে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার জন্মলগ্নে এর সঙ্গে যুক্ত হন ফ্রস্ট। তিনিই একমাত্র টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনরত আটজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দায়িত্বে থাকা সাত মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও সাক্ষাৎকার নেয়ার অনন্য কীর্তি স্থাপন করেন তিনি। ৩১ আগস্ট চৌকস এই সাংবাদিকের মৃত্যু হয়।

সিরিয়ায় ‘যৌন জিহাদ’ করছেন তিউনিসিয়ার নারীরা!


তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লতিফ বেন জেদদৌ বলেছেন, তাঁর দেশ থেকে বহু নারী সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়ে সেখানকার সরকারবিরোধী ইসলামপন্থীদের ‘জিহাদে’ যোগ দিয়েছেন। তবে ওই নারীরা অস্ত্র নিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন না। ‘জিহাদ-আল নিকাহ’ হিসেবে পরিচিত যুদ্ধকালীন সাময়িক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাঁরা মুজাহিদদের ‘উদ্দীপ্ত’ করে পরোক্ষভাবে ‘জিহাদ’ করছেন। ‘হাফিংটন পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেন জেদদৌ বলেন, ‘তিউনিসিয়া থেকে সিরিয়ায় যাওয়া ওইসব নারী ২০, ৩০, ১০০ জনের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হচ্ছেন। জিহাদ আল নিকাহর নামে অবাধ যৌনাচার শেষে গর্ভবর্তী হয়ে দেশে ফিরছেন।’ তবে সিরিয়ার জিহাদিদের ঔরসজাত সন্তান পেটে নিয়ে এ পর্যন্ত কতজন তিউনিসিয়ায় ফিরেছেন, সে ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
সুন্নি সালাফিপন্থী কিছু আলেমের মতে, যুদ্ধকালীন সাময়িক বিবাহ বা ‘জিহাদ আল নিকাহ’ বৈধ। এই ধরনের ‘জিহাদি বিবাহ’তে কোনো মুসলিম নারী কোনো মুজাহিদকে বিয়ে করে তাঁর যৌনসঙ্গী হতে পারেন। আবার দ্রুতই তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। এই ধরনের সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী এক দিনে একাধিক পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে পারেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিদ্রোহীদের দলে যোগ দিতে তিউনিশিয়ার বিপুলসংখ্যক তরুণ এখন সীমান্ত পাড়ি দিতে চান। এমন ছয় হাজার তরুণকে গত মার্চে আটকানো গেছে বলে জানান তিউনিশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার খবর থেকে জানা যায়, গত ১৫ বছরে তিউনিশিয়ার কমপক্ষে এক হাজার তরুণ জিহাদিদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় গেছেন। মূলত তাঁরা তুরস্ক ও লিবিয়া হয়ে ওই দেশগুলোতে গিয়ে জিহাদিদের সঙ্গে ভিড়েছেন।