Monday, September 23, 2013

শেখ হাসিনা, প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ- ওয়ান অব দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: স্যার ডেভিড ফ্রস্টের শেষ সাক্ষাৎকার


সমসাময়িক পরিস্থিতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অবদান, রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা। শুক্রবার রাত দু'টায় খ্যাতিমান ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার ডেভিড ফ্রস্টের নেয়া এ সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎকারগ্রহণে অনন্য কীর্তিধারী কীর্তিমান এই সাংবাদিকের নেয়া কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সর্বশেষ আলেখ্য ছিল এটি । বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শীর্ষক তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা ও দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারও নেন প্রখ্যাত এই সাংবাদিক। ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে ধারণ করা এই সাক্ষাৎকারে উঠে আসে দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা, দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, নির্বাচন ও রাজনীতির নানা কথা।
তথ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর কিছু দুর্লভ ফুটেজ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বিমান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পা রাখার ফুটেজও আছে। ফ্রস্টই প্রথম বিদেশী সাংবাদিক, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের নেতা হিসেবে দেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাক্ষাৎকার নেন। তথ্যচিত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ডেভিড ফ্রস্ট হাইকমিশনার ও তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেছিলেন। দীর্ঘ ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এ তথ্যচিত্রের শুরুতেই বলা হয়, শেখ হাসিনা, প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ। ওয়ান অব দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ডেভিড ফ্রস্টের নাম। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারেই এদেশবাসীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার বিষয়টি। সাক্ষাৎকার নিতে কখনও বঙ্গবন্ধুর অফিসে, কখনও তার বিখ্যাত সেই ছোট্ট নীল সরকারি গাড়িতে, কখনও ৩২ নম্বর বাড়ির শোয়ার ঘরে, বারান্দায় বা লনে গেছেন ফ্রস্ট। বঙ্গবন্ধুও ব্যস্ততার মধ্যে ডেভিড ফ্রস্টের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারটি বিবিসিতে প্রচারিত হওয়ার পর পরই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ নতুনভাবে সৃষ্টি হয়।
এবার বাংলাদেশের মাটিতে এসে প্রথমেই ব্রিটিশ এ প্রবীণ সাংবাদিক ছুটে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। এ বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বাধীনতার পরাজিত শত্র“দের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সেখানে এখনও জাতির পিতার রক্তের দাগ লেগে আছে, বীভৎস হত্যাযজ্ঞের আলামতগুলো এখনও স্পষ্ট। ডেভিড ফ্রস্ট ঘুরে ঘুরে সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের আলামত প্রত্যক্ষ করেন এবং তার সঙ্গে থাকা আল জাজিরার প্রতিনিধিরা ডকুমেন্টারির জন্য প্রয়োজনীয় ফুটেজও সংগ্রহ করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় যান ডেভিড ফ্রস্ট। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে গিয়েই প্রধানমন্ত্রীর পর বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এরপর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থানকালে ব্রিটিশ এ সাংবাদিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শুক্রবার রাত দুটার দিকে আল জাজিরাতে প্রচারিত হয় এক ঘণ্টার এ সাক্ষাৎকার।

ডেভিড ফ্রস্ট : যুক্তরাজ্যের কেন্টে ১৯৩৯ সালের ৭ এপ্রিল জন্ম নেন ডেভিড ফ্রস্ট। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা, টেলিভিশন উপস্থাপনা, রম্য লেখনীসহ বিভিন্নধর্মী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন বিবিসিতে কাজ করার পর ২০০৬ সালে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার জন্মলগ্নে এর সঙ্গে যুক্ত হন ফ্রস্ট। তিনিই একমাত্র টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনরত আটজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দায়িত্বে থাকা সাত মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও সাক্ষাৎকার নেয়ার অনন্য কীর্তি স্থাপন করেন তিনি। ৩১ আগস্ট চৌকস এই সাংবাদিকের মৃত্যু হয়।

No comments:

Post a Comment