Thursday, December 29, 2022

ফুটবল সম্রাট পেলে চিরনিদ্রায়-সুমি খান

তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী পেলে ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন।

১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ তিনি ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন। ’ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরি বোর্ডের বিচারে বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার পেলে মানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন । ৮২ বছর বয়সে এ ফুটবল সম্রাট  চলে গেলেন সকলকে ছেড়ে। 

পেলে ১৯৭৭ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্রাজিলের রাজনীতিতে অংশ নেন দরিদ্র মানুষদের জন্য নিজেকে নিবেদন করেন। আমৃত্যু ব্রাজিল তথা সারা বিশ্বের  মানবতার  সেবায় কাজ করেছেন। বিভিন্ন কোম্পানীর ব্র‌্যান্ড  ছিলেন পেলে ৷

১৯৫৮ সালে ব্রাজিল প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে পেলের নেতৃত্বে। পর পর চারটি বিশ্বকাপে খেলে তিন বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেলের নেতৃত্বে ব্রাজিল। বিশ্বের আর কোনও ফুটবলারের এ কৃতিত্ব  নেই। 

 সর্বাধিক ৫৪১ টি গোল৷ আর সব রেকর্ড মেলালে ১২৯৭ গোল করেন তিনি৷এক মরশুমে সর্বাধিক ৭৭ টি গোল করার পর ব্রাজিলে পেলেকে জাতীয় নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

স্যান্টোসের কোচকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পায়ের যাদুতে মুগ্ধ করেছিলেন পেলে৷ সেই থেকে স্যান্টোস এফসিতে তাঁর ফুটবল কেরিয়ারের শুরু৷ ১৯৫৬ সালে নিজের কন্ট্র্যাক্ট সাইন করেন তিনি৷ তারপরেই তিনি নিজেদের পেশাদার অভিষেক ঘটান৷ নিজের প্রথম ম্যাচেই গোল করেন ।ব্রাজিলিয়ান লীগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন৷ 

পেলে খেলবেন বলে নাইজেরিয়ান সিভিল ওয়ারের দুটি দল ৪৮ ঘণ্টা ১৯৬৯ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল৷ পেলে এরপর ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলেন৷ কিন্তু ইন্টারমিলান এবং রিয়েল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের জন্য খেলেন৷

১৯৯২ সালে পেলে ইউনেসকো চ্যাম্পিয়ন্স ফর স্পোর্টসে পিছিয়ে থাকা অর্থনীতির শিশুদের খেলার বিকাশের জন্য নিযুক্ত হন৷ কিন্তু ২০০১ সালে এক বিশাল আর্থিক   দুর্নীতিতে তাঁকে ৭ লক্ষ ডলার তছরূপের  জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপে তাঁর যোগদান৷ যাদুকরী খেলার গুণে অসংখ্য আকর্ষণীয় অফার পান। কিন্তু সব প্রত্যাখ্যান করে তিনি স্যান্টোসের সঙ্গেই ছিলেন৷ তাঁর দল ১৯৬২ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টল কাপ এবং ১৯৬৩ সালে কোপা লিবারেটোডরেস জেতেন ।

পেলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বিপুল।মৃত্যুকালে ১০০  মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি রেখে গেলেন ফুটবল সম্রাট ।

তাঁর মার্কেটিং কোম্পানি পেলে স্পোর্টস অ্যান্ড মার্কেটিং ইউনিসেফের থেকে টাকা ধার করেছিলেন একটি প্রীতি ম্যাচের জন্য, যা কখনও খেলা হয়নি৷ পেলে অডিট করে নিজের পার্টনারের বিরুদ্ধে ৪ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেন,তবে তা প্রমাণ করা যায় নি।

পুমা-র (Puma) সহ  অনেকের ব্র‌্যান্ড পেলে অবসর নেবার এক যুগ পরও দশ লক্ষ ডলার করে রোজগার করতেন এনডর্সমেন্টের সুবাদে৷ 

ফুটবলের যাদুকর মারাদোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে হঠাৎ প্রয়াত হন । এবার পেলে ও  চলে গেলেন। দু’বছরের মধ্যে বিশ্ব হারাল সারাবিশ্বে কোটি ফুটবল অনুরক্ত দর্শকের হৃদয়ের রাজা দুই কিংবদন্তী ফুটবল যাদুকরকে।।



১৯৭৭ সালে তিনি অবসরে যান। ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট দিয়েগো মারাদোনার পক্ষে ছিল। ফিফা দু’জনকেই  যুগ্ম ভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে । ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর  পেলের জন্ম। ২০২১ সাল থেকে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে।

 পেলে নামে চেনে বিশ্ব তাঁকে; মায়ের দেয়া নাম এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো নামে দুনিয়া তাকে চেনে না।  

 কাতার বিশ্বকাপের সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ নভেম্বর তাঁকে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ২২ ডিসেম্বর ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে বাড়ি ফেরা হয়নি। বড়দিন হাসপাতালেই কাটিয়েছেন। বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি গণমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তাঁর কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছেন ছেলে এডিসন। 

পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে তাঁর পাশে থেকেও শেষ রক্ষা হল না। চিকিৎসকেরা বাঁচাতে পারলেন না ফুটবল সম্রাটকে।

 চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন পেলে।

৩০ ডিসেম্বর,২০২২