Saturday, July 19, 2014

রজনীকান্ত ও একটি গানের জন্মকথা -ফরিদ আহমেদ

বাংলা গানের পাঁচ দিকপালের একজন রজনীকান্ত। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো তার গানও সমৃদ্ধ করেছে বাংলা গানকে।১৮৬৫ সালে সিরাজগঞ্জে জন্ম তার। দীর্ঘ আয়ু তিনি পান নি। মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রবীন্দ্র প্রতিভার তীব্র উদ্ভাসন তখনও হয় নি। তুমুল জনপ্রিয় দ্বিজেন্দ্রলাল রঙ্গমঞ্চ কাঁপাচ্ছেন নাটক ও নাট্যসঙ্গীতে। অতুলপ্রসাদ তখন লক্ষ্ণৌ শহরে লচা-ঠুংরির ধাঁচে বাংলা গান বাঁধছেন।  নজরুলের তখনও আগমন ঘটে নি। এমনই এক সময়ে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নীরবে বিদায় নেন রজনীকান্ত। তখনও তার বিধাতার প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই, অভিমান নেই। গলার ক্যান্সারে কথা বন্ধ, তারপরেও অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে লিখছেন,

‘আগুন জ্বেলে, মন পুড়িয়ে
দেয় গো পাপের খাদ উড়িয়ে
ঝেড়ে-ময়লা-মাটি, করে খাঁটি
স্থান দেয় অভয়-শ্রীচরণে।’

রজনীকান্তের জীবিতকালে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিতর্কিত লেখক, দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন রবীন্দ্র অনুরাগীদের ঘৃণা ও সমালোচনার পাত্র, অতুলপ্রসাদ তার সমাজ বহির্ভূত প্রণয়-পরিণয়ের কারণে ছিলেন উপেক্ষিত ও পরবাসী। একমাত্র রজনীকান্ত ছিলেন অসমালোচিত, অজাতশত্রু, অনিন্দিত। তাকে যে সবাই ভালবাসতো একথা তিনি নিজেও লিখে গেছেন।

'আমাকে দেশসুদ্ধ লোকে কেমন করে যে ভালোবাসলে তা বলতে পারি না। আমার মলিন প্রতিভাটুকুর কত যে আদর করলে।'

গানই ছিলো তার প্রাণ। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থাকার সময়েও ক্রমাগত গান গেয়ে গেছেন তিনি, লিখেছেন, সুর করেছেন। হাসপাতালের শেষ শয্যায় থাকার সময়ে দেখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ এলে শুনিয়েছিলেন গান।

সুস্থ যখন ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান গাইবার সক্ষমতা ছিলো তার। কেউ একজন তার সম্পর্কে লিখে গেছেন, 'রজনীকান্তের গান গাহিবার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। ক্রমাগত পাঁচ-ছয় ঘণ্টা একসঙ্গে গান গাহিয়াও তিনি ক্লান্তি বোধ করিতেন না। তন্ময় হইয়া যখন স্বরচিত গান গাহিতেন তখন তিনি আহার-নিদ্রা, জগৎ-সংসার সবই ভুলিয়া যাইতেন, বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইতেন।'

কণ্ঠের এই অতিব্যবহারই হয়তো কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার জন্ম দেয় তার।

অন্যের গান গাওয়ার চেয়ে স্বরচিত গানের প্রতিই তার আগ্রহটা বেশি ছিলো। সে কারণে কিশোর বয়স থেকেই নিজে গান বাঁধার চেষ্টা করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তার। তাঁকে ভেবেচিন্তে গান লিখতে কেউ দেখে নি কখনো।

এ বিষয়ে বাসুমতী পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেন লিখেছেন, 'এক রবিবারে রাজশাহীর লাইব্রেরিতে কিসের জন্য যেন একটা সভা হইবার কথা ছিল। রজনী বেলা প্রায় তিনটার সময় অক্ষয়ের বাসায় আসিল। অক্ষয় বলিল, 'রজনীভায়া, খালি হাতে সভায় যাইবে? একটা গান বাঁধিয়া লও না।' রজনী যে গান বাঁধিতে পারিত, তাহা আমি জানিতাম না; আমি জানিতাম, সে গান গাহিতেই পারে। আমি বলিলাম, 'এক ঘণ্টা পরে সভা হইবে, এখন কি গান বাঁধিবার সময় আছে?' অক্ষয় বলিল, 'রজনী একটু বসিলেই গান বাঁধিতে পারে।' রজনী অক্ষয়কে বড় ভক্তি করিত। সে তখন টেবিলের নিকট একখানি চেয়ার টানিয়া লইয়া অল্পক্ষণের জন্য চুপ করিয়া বসিয়া থাকিল। তাহার পরেই কাগজ টানিয়া লইয়া একটা গান লিখিয়া ফেলিল। আমি তো অবাক। গানটা চাহিয়া লইয়া পড়িয়া দেখি, অতি সুন্দর রচনা হইয়াছে। গানটি এখন সর্বজন পরিচিত-

তব চরণ নিম্নে উৎসবময়ী শ্যাম-ধরণী সরসা;
উর্ধ্বে চাহ অগণিত-মণি-রঞ্জিত নভো-নীলাঞ্জনা,
সৌম-মধুর-দিব্যাঙ্গনা শান্ত-কুশল-দরশা।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ছিলেন রজনীকান্তের পরম হিতাকাঙ্ক্ষী। রজনীকান্তের গানগুলো নিয়ে সংকলন প্রকাশের ইচ্ছা ছিলো তার। রজনীকান্ত তখন রবীন্দ্রনাথের অনুমোদন পেয়ে গেছেন। তারপরেও তার গীত সংকলন প্রকাশের জন্য সংশয়ে ছিলেন অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। এর মূল কারণ সুরেশচন্দ্র সমাজপতি। এই ভদ্রলোক খুব নির্দয় সমালোচক ছিলেন। গান প্রকাশ করলেই তার সমালোচনার তীক্ষ্ণ বাণ দিয়ে রজনীকান্তকে ঘায়েল করে ফেলবেন, এই ভয় তাড়া করে ফিরতো অক্ষয়কুমারকে।

এর থেকে পরিত্রাণের আশায় এক বুদ্ধি বের করেন অক্ষয়কুমার। একদিন জলধর সেনকে দিয়ে তার বাড়িতে সমাজপতিকে নিমন্ত্রণ জানালেন। রজনীকান্তের পরিচয় প্রকাশ না করেই তাকে গান গাইতে বসিয়ে দেওয়া হয়। এক বসাতেই রজনীকান্ত মুগ্ধ করে ফেলেন সমাজপতিকে।

অক্ষয়কুমার সেই ঘটনা নিয়ে লিখেছেন, 'প্রাতঃকাল কাটিয়া গেল, মধ্যাহ্ন অতীত হইতে চলিল, সকলে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সংগীত সুধাপানে আহারের কথাও ভুলিয়া গেলেন। কাহাকেও কিছু করিতে হইল না; সমাজপতি নিজেই গানগুলি পুস্তকাকারে ছাপাইয়া দিবার কথা পাড়িলেন।'

আর এর ফলে প্রত্যন্ত রাজশাহী থেকে রজনীকান্ত এসে পরিচিত হয়ে যান কেন্দ্রভ‍ূমি কলকাতায়।

রজনীকান্তকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। একটা গানের জন্ম বৃত্তান্ত শোনানোর জন্যই এতো কিছু ভূমিকা।

স্বদেশী আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী গান রচিত হয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলাল লিখেছেন অকাতরে, লিখেছেন অতুলপ্রসাদ, লিখেছেন রবীন্দ্রনাথও। রজনীকান্তেরও একটা স্বদেশী গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সে সময়। হাটে-মাঠে-ঘাটে, সবখানে গানটি গাওয়া হতো তখন। সেই গানের জনপ্রিয়তা আজতক একই রকমই রয়েছে। গানটি আমাদের সবারই জানা। ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’। এই গানটির সুরকার দু’জন। রজনীকান্ত ও জলধর সেন। জলধর সেনের ভাষ্যেই এ গানের জন্ম কাহিনি শুনি আমরা।

'তখন স্বদেশীর বড় ধুম। একদিন মধ্যাহ্ন একটার সময়  আমি 'বসুমতী' আপিসে বসিয়া আছি, এমন সময় রজনী এবং  শ্রীমান অক্ষয়কুমার সরকার আপিসে আসিয়া উপস্থিত। রজনী সেই দিনই দার্জিলিং মেলে বেলা এগারোটার সময় কলিকাতায় পৌঁছিয়া অক্ষয়কুমারের মেসে উঠিয়াছিল। মেসের ছেলেরা তখন তাহাকে চাপিয়া ধরিয়াছে, একটা গান বাঁধিয়া দিতে হইবে। গানের নামে রজনী পাগল হইয়া যাইত। তখনই গান লিখিতে বসিয়াছে। গানের মুখ ও একটা অন্তর লিখিয়াই সে উঠিয়া দাঁড়াইয়াছে। সকলেই গানের জন্য উৎসুক; সে বলিল – 'এই তো গান হইয়াছে, চল জলদার ওখানে যাই। একদিকে গান কম্পোজ হউক, আর একদিকে লেখা হউক।' অক্ষয়কুমার আমাকে গানের কথা বলিলে - রজনী গানটি বাহির করিল। আমি বলিলাম 'আর কই রজনী?' সে  বলিল,  'এইটুকু কম্পোজ করিতে দাও, ইহারই মধ্যে বাকিটুকু হইয়া যাবে।' সত্য সত্যই কম্পোজ আরম্ভ করিতে করিতেই গান শেষ হইয়া গেল। আমরা দুইজনে তখন সুর দিলাম। গান ছাপা আরম্ভ হইল; রজনী ও অক্ষয় ৩০/৪০ খানা গানের কাগজ লইয়া চলিয়া গেল।

সন্ধ্যার সময় … বসিয়া আছি , এমন সময় দূরে গানের শব্দ শুনিতে পাইলাম। গানের দল ক্রমে নিকটবর্তী হইল। তখন আমরা শুনিলাম, ছেলেরা গাহিতেছে, 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই।' গান শুনিয়া সকলে ধন্য ধন্য করিয়াছিল;  তাহার পর ঘাটে মাঠে পথে নৌকায় দেশ-বিদেশে কতজনের মুখে শুনিয়াছি।'
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়
মাথায় তুলে নে রে ভাই;
দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের
তার বেশি আর সাধ্য নাই।

ঐ মোটা সুতোর সঙ্গে, মায়ের
অপার স্নেহ দেখতে পাই;
আমরা, এমনি পাষাণ, তাই ফেলে ঐ
পরের দ্বারে ভিক্ষা চাই।

ঐ দুঃখী মায়ের ঘরে, তোদের
সবার প্রচুর অন্ন নাই;
তবু, তাই বেচে কাচ, সাবান, মোজা,
কিনে কল্লি ঘর বোঝাই।

আয়রে আমরা মায়ের নামে
এই প্রতিজ্ঞা করব ভাই;
পরের জিনিস কিনব না, যদি
মায়ের ঘরের জিনিস পাই।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Thursday, July 17, 2014

জামাতের সহিংস জঙ্গী তৎপরতা বাংলাদেশের জন্যে সবচেয়ে বড়ো হুমকি - সুমি খান


জামাতের সহিংস তৎপরতাকে সবচেয়ে বড়ো হুমকি মনে করে জামাতের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীর অবস্থান এবং কর্মকান্ড কড়া নজরদারীতে আনছেন দেশের গোয়েন্দারা। জনকন্ঠের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। 

  রাজনৈতিক ইসলাম প্রচারণা এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সারা দেশে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে যেসব সংগঠন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে, চুড়ান্ত বিচারে তাদেরই জঙ্গী বলে মনে করেন  এদেশের গোয়েন্দারা। এই তালিকায় সন্দেহের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে গণহত্যা , ধর্র্ষণ ,নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে একাত্তরে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেয় জামাত । সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে সুনির্দিষ্ট অপরাধের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।   গোয়েন্দা তথ্যমতে ,এই বিচার কাজ ঠেকাতে বারবার সহিংস পথ বেছে নিচ্ছে  জামাত। একই সাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি এবং হরকাতুল জেহাদ ও চালিয়ে যাচ্ছে  তাদের কার্যক্রম । তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী অনেক আধুনিক এবং সক্রিয় হবার কারণে বড়ো ধরণের নাশকতা ঘটার কোন আশংকা নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মর্কতারা। গোয়েন্দা বিশেষ শাখার 
অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন,  জঙ্গী দলগুলোর উপর সরকারের কঠোর নজরদারী এবং নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে দেশে এই মুহুর্তে বড়ো ধরণের সহিংসতার আশংকা  নেই বলা যায়। তবে জামাতকে আমরা  সবচেয়ে বড়ো জঙ্গী সংগঠন এবং দেশের জন্যে বড়ো ধরণের হুমকি মনে করছি। 

 গোয়েন্দা বিশেষ শাখার এসপি  আইনুল বারী  বলেন ,২০১০ সালের মধ্যে জিহাদী  গণজাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা ছিল হিযবুত তাহরীরের ,যা কার্যত: ব্যর্থ ই হয়েছে।  এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের  ভাবগুরু জসীমউদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশের ইংরেজী মাধ্যম এবং  অনলাইন ভিত্তিক জঙ্গী তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ তরুণদের কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশের মাদ্রাসা গুলোতে ইসলামের ধর্মীয় দিক দীক্ষা না দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে ইসলাম, কোরান , হাদীস এবং শরীয়ার অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কিশোর তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যা দেশের জন্যে আশঙকাজনক এমন তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তবে যেখানেই লিফলেট বিলি হচ্ছে , সেখানেই হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এমন দাবি করলেন  এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এছাড়া ২৯ জুুন রমনা বটমূলের মামলায় রায়ে  জ্গংী দল হুজির ৮ জনকে মৃত্যুদন্ডে এবঙ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার কারণে জ্গংীরা অনেকে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা থেকে  পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা ।

২০১১ সালের শেষে  জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম (হুজি) কে নিষিদ্ধ করার পর হুজির পক্ষ থেকে আদালতে রীট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো বলে জানান দীর্ঘদিনের জঙ্গী অভিযানে অভিজ্ঞ  গোয়েন্দা কর্মকর্তা আইনুল বারী। 

তবে ২০১০ সালে হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হবার পর তাদের অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রশিক্ষণ থেমেছে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি গোয়েন্দারা। বরং অন্যান্য নামে ছোট ছোট জ্গংী দল গঠন করে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এসব জঙ্গীরা । এদের আর্থিক সহায়তা এসেছে মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। তবে জামাতের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল অর্থের এসব ফান্ডে এতোদিন সরকারী কোন মনিটরিং না থাকার কারণে জামাত সহ অন্যান্য  জঙ্গী সংগঠন গুলো  বাংলাদেশে তাদের সন্ত্রাসনির্ভর ইসলামী প্রচার প্রচারণা অবাধে চালাতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। 

দেশের মাদ্রাসা গুলোতো র‌্যাডিক্যাল ইসলাম বা রাজনৈতিক ইসলাম প্রচারণা মূলক পাঠ্যসূচী নিয়ন্ত্রনে আনার সুপারিশ উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের রিপোর্টে। এ প্রসংগে আইনুল বারি জনকন্ঠকে বলেন, “ ইসলাম ধর্ম এবং কোরানে  ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। দেশের তরুণ প্রজন্ম কে ধর্মীয় বিভ্রান্তি এবং ধর্মকে ব্যবহার করে সহিংসতা থেকে দূরে রাখতে হলে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরী।”

  দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জঙ্গী এবং নাশকতামূলক  রাষ্ট্র্রদ্রোহী তৎপরতার অভিযোগে এ পর্যন্ত  হিযবুত ত্ওাহীদের ৭০২ এবং জামাতের ৩২০ সদস্য গ্রেফতার রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুন খিলগাঁও থানা পুলিশ নাশকতা মূলক কর্মকান্ডের সন্দেহে একই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে জামাতের ছাত্রী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ২৪ জন তরুণীকে। গ্রেফতারকৃত তানজিনা বিনতে খায়ের, ফারজানা আক্তার রুনা, শাসুন্নাহার, , ফাতেমা জান্নাত , আতিয়ার জাহান, সুবাইতা সারা , মমতা হেনা,  আয়েশা আক্তার, সালমা নাসরিন, ফাতিমা ফারহানা, ফারহানা আক্তার, ফারজানা বেগম, হাফিজা সিদ্দিকা , শামীমা আক্তার , উম্মে হাবিবা, সুমাইয়া আফরোজ, জাকিয়া খান মুন্নি , নূরজাহান আক্তার, মারজানা আক্তার, সুমাইয়া খাতুন, রওনক জাহান, মাহবুবা ইসলাম, ইসরাত জাহান ইমা  বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । এরা রাজধানীর মতিঝিল, লালবাগ, বনানী, গুলশান সহ বিভিন্ন জোনে রাজধানীকে ভাগ করে এসব জোনের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসিক এলাকায়  মওদুদীবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রচারণা  চালিয়ে সাধারন মানুষকে সহিংসতার দিকে  ঠেলে দেয়। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে  তথ্য প্রমাণ সহ সাতদিন পর আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। তিনি জনকন্ঠকে জানান , গ্রেফতারকৃতদের কাছে ইসলামী জ্গংীবাদের বই পাওয়া গেছে , সেসব আদালতে উপস্থাপন করা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিকল্পিত ভাবে তারা জড়ো হয়েছিলো সেই বাড়িতে যেখান থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে তাদের। জিহাদের নামে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করলে, তারা  পুলিশের কাজে বাধা দেয় বলে  অভিযোগ আনা হয় চার্জশীটে। 

কারাগারের ভেতর থেকে এবং আদালতে হাজিরার সময়ে  জঙ্গী নেতা কর্মীরা তাদের দলের নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে এমন অভিযোগ পেয়ে কারাগারে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিআইডি কর্মকর্তা। 

আইনুল বারি বলেন , জামাতের  রাজনৈতিক স্যাবোটাজ মূলক কর্মকান্ড এখন আমাদের জন্যে সবচেয়ে বড়ো হুমকি বলে সারা দেশে জামাতে ইসলামীর কর্মতৎপরতা নজরদারীতে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ### ১৮.০৭.২০১৪  http://dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-07-18&ni=179380
sumikhan29bdj@gmail.com

Wednesday, July 16, 2014

আমার বোন মরিয়ম মুরমু হত্যাকান্ডের বিচারের রায় কার্যকর করা হোক -মিথুশিলাক মুরমু

বিগত ১৬ মে, ২০১২ সালে উত্তরবঙ্গের চাঞ্চল্যকর বিধবা আদিবাসী নারী মরিয়ম মুরমু হত্যাকান্ডের রায় আদালত কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ রাজশাহী আদালত চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আত্মস্বীকৃত ৪ জন আসামির মধ্যে ৩ জনের (আন্দ্রিয়াস মুরমু, যোহন মারান্ডী ও শওকত ইকবাল) মৃত্যুদ- এবং একজনের (ওপর কিস্কু) যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় প্রদান করেছেন। নারী ও শিশু মামলা নং ২৬৬/ এবং জি. আর ১৭৫/২০১১। প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে আসামি আন্দ্রিয়াস মুরমুর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২)/৩০ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোডের ৩৯৪/১-৯ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আন্দ্রিয়াসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। আসামি শওকত ইকবালের বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইকবালকে মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আরেক আসামি জোহান মারান্ডীর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ১০ হাজর টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। অপরদিকে আসামি ওমর কিস্কুর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবনসহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য,আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. মোজ্জামেল হক এবং মোবারক হোসেন। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন সৈয়দা মর্জিনা খাতুন পিপি। 


৯ জুলাই, ২০১১ সালে দিবাগত রাতে চিহ্নিত এবং পেশাদারি সন্ত্রাসী প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয় যোহন মারান্ডী, আন্দ্রিয়াস মুরমু, ওমর কিস্কু ও শওকত ইকবালরা রাজেন মুরমুর চতুর্দিকে দেয়ালের ঘেরা ঘরে প্রবেশ করে দ্বিতীয় মেয়ে বিধবা মরিয়ম মুরমুকে (৫৮) অস্ত্রের মুখে জিম্মি রেখে নগদ অর্থ লুট করেছে, মায়ের বয়সী বিধবাকে ধর্ষণ করেছে, শারীরিক নির্যাতন ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে এবং ফাঁসির আদলে বরই গ্রামের সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে আত্মগোপনের চেষ্টা করেছে। এরূপ পরিকল্পিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সমগ্র আদিবাসী সমাজে কিংবা বৃহত্তর সমাজেও দ্বিতীয় উদাহরণের নজির নেই।



আমাদের ছয় ভাই-বোন মধ্যে মরিয়ম ছিল দ্বিতীয়। বাবার লিখে যাওয়া পারিবারিক ইতিহাসে তার জন্ম সাল রয়েছে ১৯৫৩ সাল। লেখাপড়ায় ভালো থাকায় মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই বাবা তাকে রাজশাহীতে অবস্থিত বোলনপুর মিশন বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি যখন নবম শ্রেণী ছাত্রী ছিলেন, সে সময়ই যুদ্ধ শুরু হলে তার আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। স্বভাবত কারণেই তিনি যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা সহকারে সিদ্ধান্ত, আলোচনা এবং কথাবার্তা বলতেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে ভারত থেকে পরিবারের সঙ্গেই প্রত্যাবর্তন করেন এবং বড় বোনের বিয়ের পরই তিনিও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন একই জেলার তানোর থানার চৈতপুর গ্রামের হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে। মরিয়ম মুরমুর শ্বশুর প্রয়াত শীতল মারান্ডীর দ্বিতীয় সন্তান হোপনা মারান্ডী, তার বড় ভাই বিশ্বনাথ মারান্ডী। শ্বশুর শীতল মারান্ডী পৈতৃক সম্পত্তি ছিল যথেষ্ট। মরিয়ম মুরমু-হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে সংসার করার সময়ই নতুন অতিথি হিসেবে আসে পুত্র উইলসন মারান্ডী এবং মেয়ে সন্তান কল্পনা মারান্ডী। 


একদা তাদের পরিবারে অন্তর্কলহ শুরু হলে মরিয়ম মুরমু দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি শিমলা দীঘিপাড়াতে চলে আসেন। বাবার বাড়িতে থেকেই তিনি শিশুসন্তান দুটিকে লেখাপড়া করান এবং বিয়েশাদির ব্যবস্থাও করেন। মেয়ে কল্পনার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিসেম্বর ২৭, ২০১০ সালে। আমাদের বোন হত্যাকা-ের পরবর্তীতে স্থানীয় দৈনিক সানশাইন ১৪ জুলাই সম্পাদকীয়তে লিখেছিল '.... মরিয়ম মুরমুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কেবল নৃশংস নয় চরম হিংস্রতাও বটে। এ ধরনের নৃশংসতার রিরুদ্ধে নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। এই হত্যাকা র বিচার কেবল আদিবাসী বলে নয়, একজন মানুষ হিসেবেই হতে হবে। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোট কথা এ হত্যাকান্ডের  বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সমাজে স্থিতিশীলতার জন্যেই।' মাননীয় আদালত কর্তৃক বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পরও রায় কার্যকরের কোন আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের প্রার্থনা, বহুল আলোচিত মরিয়ম মুরমু  হত্যাকান্ডের  রায় দ্রুত কার্যকর করলে আদিবাসী সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে; আদালতের প্রতি আদিবাসীদের আস্থা ফিরে আসবে। আমার প্রিয় বোনের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। 


ঢাকা বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪২১, ১৭ রমজান ১৪৩৫, ১৫ জুলাই ২০১৪ - See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDdfMTVfMTRfMl8yMF8xXzE2NjYxOQ==#sthash.G9vIcedE.dpuf

Tuesday, July 15, 2014

বাংলাদেশে হুমকি আছে আইএসআইএসের, নির্দেশনা নেই সরকারের- সুমি খান



বিশ্বজুড়ে আলোচিত জঙ্গী সংগঠন আইএসআইএস ( ইসলামিক স্টেট অব ইরাক লেভেন্ড এ্যান্ড সিরিয়া)-এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চারটি গোপন সুন্নি মুসলিম জঙ্গী সন্ত্রাসী দল। এদের ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়া। এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা আরব লীগের জন্য নতুন হুমকি। এক যুগ আগের ইসলামী সন্ত্রাসী জঙ্গী দল জেমা’ ইসলামিয়ার চেয়ে অনেক বড় হুমকি মনে করা হচ্ছে আইএসআইএস’কে।

 আল-কায়দার সহযোগী এই জঙ্গী দল আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের কাছে সরাসরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছিল। প্রকাশ্য প্রচারও সেই সময়ে তারা শুরু করেছিল । এখন আইএসআইএস ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ব্রাসেলসে ন্যাটো বিদেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, আইএসআইএস-এর সশস্ত্র বিদ্রোহ এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। এই সংগঠনের ডাকা জিহাদে অংশ নিতেই বাংলাদেশের রাকিব আহ্বান জানিয়েছেন। আর লন্ডনের আইটিভি বলেছে, বাংলাদেশ থেকেও জেহাদীরা ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলে পৌঁছে গেছে ।


মাত্র ১০ বছর বয়সে বাংলাদেশ ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে লন্ডনে গিয়েছিল আবদুল রাকিব আমিন। আরও দু’জনের সঙ্গে রাকিবকে আল-কায়েদার পক্ষে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান সংবলিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে সম্প্রতি।  স্কাই টিভি এবং অন্যান্য মিডিয়ায় প্রচারিত এই ভিডিও নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিবিসিসহ ব্রিটিশ মিডিয়ায় হৈচৈ চলছে।http://www.lbc.co.uk/british-jihadist-was-prayer-caller-at-mosque-92627

আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে গঠন করা হয়েছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড দ্যা লেভান্ট এন্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)। সংগঠনটি সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তে একটি খাঁটি মুসলিম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। এই স্বপ্ন পূরণে তারা দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের জিহাদে যুক্ত করছে নানান প্রলোভন দেখিয়ে।
আইএসআইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে তার জঙ্গী সংগঠনে সন্ত্রাসী ‘জিহাদী’ নিয়োগ দিয়ে ইরাকের পথে তাদের নিয়ে অভিযান করার সংবাদ প্রকাশ্যে প্রচারিত করেছে ভিড্ওি বার্তার মাধ্যমে। এই বার্তাকে এলার্ট হিসেবে নিয়ে ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এ নিয়ে জোর তৎপর হলেও বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে এখনও যেন অন্ধকারেই বসবাস করছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আইএসআইএস-এর কার্যক্রম নিয়ে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।

‘জিহাদ ছাড়া আর কোন জীবন নাই’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তায় আইএসআইএস-এর সিনিয়র সংগঠক আবু মুতা’না আল ইয়েমিনী ব্রিটেন থেকে সম্প্রতি বলেছেন-বাংলাদেশ, ইরাক, কম্বোডিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যে আমাদের ভাইয়েরা অবস্থান করছেন। এই ভিডিওর সূত্র ধরে ফিলিপিন্সে শুক্রবার ১১ জুলাই গ্রেফতার হয়েছেন আইএসআইএস’র সদস্য অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রবার্ট সেরেন্টোন্ওি। তার বিরুদ্ধে জঙ্গী কর্মকা-ে ফিলিপিন্সের নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার অভিযোগ এনেছে ফিলিপিনো সরকার । ফিলিপিন্স পুলিশের কাছে রবার্ট তার জঙ্গী তৎপরতার কথা স্বীকার করেছে। তার তথ্যমতে সুন্নি মুসলিমদের আরও চারটি গোপন জঙ্গী সংগঠন সম্প্রতি সংগঠিত করা হয়েছে, যারা দক্ষিণ এশিয়াতে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রস্তুত। রবার্টের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৫ মালয়েশীয়কে ফিলিপিন্স পুলিশ খুঁজছে, যারা ফিলিপিন্সে গিয়ে তাদের নেতা আবু সাত্তাফের সঙ্গে আত্মগোপন করে আছে। এদের একজন লতফি আরিফিন । তিনি মালয়েশিয়ার হার্ডলাইন ইসলামী দল পিএএস’র সদস্য ছিলেন। ফেসবুকে তার ২৪ হাজার ৭শ’ ৯৬ ফলোয়ার আছে।

এসব বিষয় নিয়ে এখনও কোন তদন্ত শুরু করেনি বাংলাদেশের গোয়েন্দারা । এ ব্যাপারে কথা বলতে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাননি বলে জানান র‌্যাবের ্এডিজি লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান।

আইএসআইএস প্রধান বোগদাদীর মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গীদের ভাষা আর বাংলাদেশের জঙ্গীদের ভাষা এক। ‘তাগুতি সরকার’, ‘জল্লাদ’ নামে গণতান্ত্রিক সরকার এবং প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের চিহ্নিত করে হত্যার টার্গেট করার ভয়াবহতা থেকে মুক্ত নই আমরা ।

বাংলাদেশ এবং শান্তিকামী বিশ্বের জন্য এখন নতুন হুমকি এই জঙ্গী দল। একই সঙ্গে এদের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নেতা আবদুল রাকিব আমিন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ‘জিহাদী’ রাকিবের ভিডিও পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সিরিয়ায় যুদ্ধ করাই কেবল তাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা জর্ডান, লেবানন ও ইরাকেও যাবে। আর এ জন্য সারাবিশ্ব থেকে জিহাদী আমদানি করছে। তারা বাংলাদেশ থেকেও জেহাদী সংগ্রহ করার দাবি করেছে।

সিরিয়ায় বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র হাতে রাকিবের ছবি ‘ডেইলি মিরর’ প্রথম প্রকাশ করে, যা আইটিভি ২৬ জুন সম্প্রচার করেছে।

গার্ডিয়ানের রিপোর্টে প্রকাশ, ইরাকী প্রধানমন্ত্রী মালিকি নিশ্চিত করেছেন যে, সিরীয় যুদ্ধবিমান ইরাকে আইএসআইএস-এর অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানী সামরিক বাহিনীর পরস্পর বিরোধী উপস্থিতির পটভূমিতে গতকাল ওই বিমান হামলা শুরু হয়।
রাকিবরা বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড গিয়ে বাসা নিয়েছিল অ্যাবারদিনের ফ্রগহল এলাকায়। প্রথম দু’বছর সে পড়েছিল সানিব্যাংক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তাকে পাঠানো হয় সেন্ট মাচার একাডেমিতে। একাডেমিতে দ্বিতীয় বছর কাটানোর পরে তার পিতা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিল। তার বন্ধুদের মতে তার বাবা-মা লক্ষ্য করেছিলেন যে, রাকিব বড় বেশি পাশ্চাত্যঘেঁষা হয়ে পড়েছে। দু’বছর বাংলাদেশে কাটিয়ে রাকিব অ্যাবারদিনে ফিরে আসে। তখন তার বন্ধুরা লক্ষ্য করে রাকিবের মধ্যে একটি পরিবর্তন এসেছে। রাকিব দাড়ি রাখতে শুরু করেছে, বেশি ধার্মিক হয়ে পড়েছে। এরপর সে তার পরিবারের সঙ্গে লেসেস্টারে চলে যায়।

বাংলাদেশী কিশোর রাকিব বেড়ে উঠেছিল অ্যাবেরদিন শহরে। সে যে স্কুলে পড়েছে সেখানকার একজন সাবেক ছাত্র সম্প্রতি লন্ডনের প্রেস এ্যান্ড জার্নাল নামের একটি পত্রিকায় রাকিবের সঙ্গে অতীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, ২৫ বছরের এই যুবককে তার চালাক ছেলে বলেই মনে হয়েছে।
যে ভিডিওতে আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসা গ্রুপ জিহাদী পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তাতে রাকিবের অংশ নেয়ার বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। আইএসআইএস এখন ইরাকের বেশিরভাগ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে জিহাদী নিয়োগের আহ্বান সংবলিত ভিডিও সিরিয়ায় ধারণ করা হয়েছে। রাকিবের বন্ধু আরও বলে, রাকিব স্কটিশ গান গাইতে পারত । সে সব সময় মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করত। তার এটা ভালই বোঝার কথা যে,এই ভিডিও প্রকাশ পাবে এবং ব্রিটেনে সেটা দেখানো হবে । বন্ধুবান্ধবরা তাকে এতে দেখবে। এবং এটা অনুমান করে তার ভাল লাগারই কথা। সর্বশেষ তাকে ১৮ মাস আগে দেখেছে তার বন্ধু।

অ্যাবেরদিন স্পোর্টস ভিলেজে সে তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছিল। আমি আর কখনই তার বন্ধু থাকতে পারি না। তবে তাকে যদি কখনও রাস্তায় দেখা পেয়ে যাই তাহলে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করব, কেন তুমি এমন করলে? আমি সত্যি বুঝতে পারি না, মাত্র ১৮ মাসের ব্যবধানে রাকিবের জীবনে এমন কী ঘটল, যাতে সে এমন করে বদলে যেতে পারল? আমি তার কাছে জানতে চাইব, তাকে ওরা নিয়োগ করেছে, নাকি সে নিজ থেকে ওদের দলে গিয়ে নাম লিখিয়েছে। কখনও কখনও আমরা যখন বেড়াতে বের হতাম তখন পথে লোকে তাকে ‘বর্ণবাদী’ বলে টিটকিরী দিত তখন কোন কোন ঘটনায় তাকে রুখে দাঁড়াতে দেখেছি।
এতদিন জঙ্গী পুষে এখন সতর্ক হয়েছে ব্রিটেন। সৌদি আরব বেড়াতে গিয়েছিলেন একটি মসজিদের ইমাম। তাকে আর লন্ডনে ফিরতে দেয়া হয়নি।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের মসজিদগুলোতে যাতে র‌্যাডিকেল বাণী প্রচার না করা হয় সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা যতটা প্রশস্তিতে আছেন, বাস্তবতা ততটা প্রশস্তিসূচক নাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের কাউন্টার টেররিজম টিমের সতর্ক এবং জরুরী পদক্ষেপ দমন করতে পারে এদেশে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর সকল অপতৎপরতা- এমন মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। সারা বিশ্বে মৌলবাদী আছে, এদেশেও আছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নামে একই দল এরা। এদের দমন করতে হলে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন ইতিহাসবিদ এবং গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলেও রাজনীতিতে এভাবে ধর্মের ব্যবহার ছিল না, যা সাম্প্রতিকতম সময়ে আমরা তথাকথিত প্রগতিশীল দলগুলোর মধ্যেও দেখতে পাচ্ছি। যতদিন রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ হবে না, মুসলিম বিশ্বে অস্ত্র এবং সন্ত্রাসের ব্যবহার বন্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে বাধ্য করা হবে না ততদিন সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এই সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠীর অস্ত্র এবং সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হয়েই থাকবে।  দৈনিক জনকণ্ঠ ১৩ .০৭.২০১৪ 

স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় ॥ পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা-সুমি খান


পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নেই ২ বছর ॥ ১২ হাজার তালিকাভুক্ত শরণার্থীর ভূমিবিরোধ মেটেনি
সুমি খান॥ ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার। এর পরে বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ মোট ৯ বছরের অধিক রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও নানান জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রয়াস। যে কারণে পূর্ণ বাস্তবায়নের সঙ্কট এখনও মেটেনি। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এর সঙ্কট ও সমাধান। 
গত ৪০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে এক ধরনের স্বার্থান্বেষী চক্র গড়ে উঠেছে। পার্বত্য সীমানা এলাকা ঘিরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান এবং অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাচার চক্র ব্যাপক সক্রিয়। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকার ভূমির দখল নিয়ে গড়ে উঠেছে নানান ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং এ সব এলাকায় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পথে এই স্বার্থান্বেষী মহলগুলো বড় রকমের বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। 
আদিবাসীদের অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে গঠিত আদিবাসী সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপিসহ সাতজন সংসদ সদস্য খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি বিজিবি ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টার এলাকা স্থাপনকে কেন্দ্র করে ১০ জুন ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন সোমবার এবং মঙ্গলবার। খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা ফেরার পথে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার আদিবাসীদের জন্য ক্ষতিকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। জনকণ্ঠের সঙ্গে সাক্ষাতকারে দৃঢ়ভাবে এ কথা জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, এখনও আদিবাসীদের সঙ্গে সরকারের বড় রকমের শূন্যতা রয়ে যাওয়ার মূল কারণ তিনটি পার্বত্য জেলায় ভারত থেকে প্রত্যাগত উপজাতীয় পুনর্বাসিত জনসাধারণের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ২০০১’-এর বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা। ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, এই সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে আমরা দ্রুততম সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করব।
উল্লেখ্য, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ২০০১-এর ৫ ধারা অনুযায়ী কমিশনের চেয়ারম্যানের মেয়াদ ৩ বছর। এই পদে সর্বশেষ চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর মেয়াদ শেষে অবসরে যান ১৯ জুলাই ২০১২ সালে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে গত দুই বছর। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি অনুসারে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার তালিকাভুক্ত শরণার্থীর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ এখনও থমকে আছে। কমিশনে অন্তর্ভুক্ত তিন ক্যাটাগরির উপজাতি সদস্যদের কমিশনে অনুপস্থিতি এবং বিচার কাজের পুরো সময় অনুপস্থিতির কারণে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকার পরও ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন কমিশনের পক্ষে সম্ভব হয়নি বলে জাতীয় সংসদে গত ৩ জুলাই জানালেন শামসুর রহমান শরীফ এমপি।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আশির দশকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার পরবর্তীতে এরশাদ আদিবাসীদের বিতাড়িত করে বাঙালী সেটেলারদের পুনর্বাসিত করেছিল তিন পার্বত্য এলাকায়। প্রায় ১৫ হাজার আদিবাসীকে দেশে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবন দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারই উদ্যোগী হয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার আদিবাসীদের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক তা করতে সচেষ্টÑ এই আস্থা এবং বিশ্বাস রাখতে হবে। 
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রধান সঙ্কট তৈরি করেছে শান্তিচুক্তি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারের অভ্যন্তরে পরস্পরবিরোধী দুইটি মতÑ বললেন ইতিহাসবিদ এবং আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তার মতে, সরকারের দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারক এবং কর্মচারীদের মধ্যে দুই রকমের অভিমত রয়েছে। একটি অংশ মনে করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সর্বৈবভাবে বাস্তবায়ন প্রয়োজন, অন্য অংশটি মনে করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালীদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে এবং জাতীয় স¦ার্থের সঙ্গে আপোস করা হবে। অধ্যাপক মেসবাহ কামালের মতে, দ্বিতীয় ধারার মতানুসারীরা আশু লাভালাভে অধিক গুরুত্ব দেয় এবং এক ধরনের জাতিভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। এরা যথেষ্ট শক্তিশালী বলে, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে এরা বড় অন্তরায় বলে মনে করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে এখানে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ স্বার্থ তৈরি হয়েছে গত ৪০ বছরে। এদের সংখ্যা মুষ্টিমেয় হলেও তারা জাতীয়তাবাদী ছায়াকে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষায় ব্যবহার করছে।
কখনও সভ্যতার উন্নয়ন, আবার কখনও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে আদিবাসীদের বার বার উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের দখলকৃত ভূমি থেকে। শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির ক্রমাগত লঙ্ঘন এবং ধারাবাহিক নিপীড়ন ঠেকাতে প্রয়োজনে যা করার করবÑ সময় বলে দেবে’Ñ বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। গত ১ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ একতরফাভাবে পাস, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন এবং রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির চরম লঙ্ঘন করেছে দাবি করে এ কথা বললেন তিনি।
চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ বছর পরও চুক্তির মৌলিক বিষয় বার বার লঙ্ঘন করছে সরকার এমন অভিযোগ করে সরকারের পার্বত্য জনবিরোধী এই তিন উদ্যোগ বাতিল না করলে সরকারকে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকতে হবে বলে গত ১৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সন্তু লারমা। 
চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ বছর পরও চুক্তির মৌলিক বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতি) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয় ও কার্যাবলী কার্যকরকরণ এবং এ সব পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু এবং প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জায়গা জমি প্রত্যার্পণ ও পুনর্বাসন, সেনা শাসন অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার অস্থানীয়দের প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পার্বত্য এলাকার জুম্ম জনগণকে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সন্তু লারমা। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত কোন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ সংবিধিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা লঙ্ঘন করেছে সরকার। গত ৭ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে গবেষক শিক্ষাবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন. সরকারের সঙ্গে আমরা কোন বিরোধে জড়াতে চাই না। তবে বার বার নিরীহ আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা বন্ধ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাবুছড়ায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে ১০ জুন আদিবাসী উচ্ছেদ ঘটনার গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানোসহ ৫টি সুপারিশ করা হয়। 
এ প্রসঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, আদিবাসী বিষয়ক ককাসের সঙ্গে বৈঠক করে এই দাবি পেশ করেছেন সন্তু লারমা। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। আবার আমরা সন্তু লারমার সঙ্গে বসব এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এই সঙ্কট দ্রুত নিরসনের চেষ্টা করব।