Thursday, July 17, 2014

জামাতের সহিংস জঙ্গী তৎপরতা বাংলাদেশের জন্যে সবচেয়ে বড়ো হুমকি - সুমি খান


জামাতের সহিংস তৎপরতাকে সবচেয়ে বড়ো হুমকি মনে করে জামাতের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীর অবস্থান এবং কর্মকান্ড কড়া নজরদারীতে আনছেন দেশের গোয়েন্দারা। জনকন্ঠের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। 

  রাজনৈতিক ইসলাম প্রচারণা এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সারা দেশে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে যেসব সংগঠন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে, চুড়ান্ত বিচারে তাদেরই জঙ্গী বলে মনে করেন  এদেশের গোয়েন্দারা। এই তালিকায় সন্দেহের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে গণহত্যা , ধর্র্ষণ ,নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে একাত্তরে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেয় জামাত । সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে সুনির্দিষ্ট অপরাধের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।   গোয়েন্দা তথ্যমতে ,এই বিচার কাজ ঠেকাতে বারবার সহিংস পথ বেছে নিচ্ছে  জামাত। একই সাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি এবং হরকাতুল জেহাদ ও চালিয়ে যাচ্ছে  তাদের কার্যক্রম । তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী অনেক আধুনিক এবং সক্রিয় হবার কারণে বড়ো ধরণের নাশকতা ঘটার কোন আশংকা নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মর্কতারা। গোয়েন্দা বিশেষ শাখার 
অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন,  জঙ্গী দলগুলোর উপর সরকারের কঠোর নজরদারী এবং নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে দেশে এই মুহুর্তে বড়ো ধরণের সহিংসতার আশংকা  নেই বলা যায়। তবে জামাতকে আমরা  সবচেয়ে বড়ো জঙ্গী সংগঠন এবং দেশের জন্যে বড়ো ধরণের হুমকি মনে করছি। 

 গোয়েন্দা বিশেষ শাখার এসপি  আইনুল বারী  বলেন ,২০১০ সালের মধ্যে জিহাদী  গণজাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা ছিল হিযবুত তাহরীরের ,যা কার্যত: ব্যর্থ ই হয়েছে।  এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের  ভাবগুরু জসীমউদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশের ইংরেজী মাধ্যম এবং  অনলাইন ভিত্তিক জঙ্গী তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ তরুণদের কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশের মাদ্রাসা গুলোতে ইসলামের ধর্মীয় দিক দীক্ষা না দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে ইসলাম, কোরান , হাদীস এবং শরীয়ার অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কিশোর তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যা দেশের জন্যে আশঙকাজনক এমন তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তবে যেখানেই লিফলেট বিলি হচ্ছে , সেখানেই হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এমন দাবি করলেন  এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এছাড়া ২৯ জুুন রমনা বটমূলের মামলায় রায়ে  জ্গংী দল হুজির ৮ জনকে মৃত্যুদন্ডে এবঙ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করার কারণে জ্গংীরা অনেকে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা থেকে  পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা ।

২০১১ সালের শেষে  জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম (হুজি) কে নিষিদ্ধ করার পর হুজির পক্ষ থেকে আদালতে রীট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো বলে জানান দীর্ঘদিনের জঙ্গী অভিযানে অভিজ্ঞ  গোয়েন্দা কর্মকর্তা আইনুল বারী। 

তবে ২০১০ সালে হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হবার পর তাদের অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রশিক্ষণ থেমেছে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি গোয়েন্দারা। বরং অন্যান্য নামে ছোট ছোট জ্গংী দল গঠন করে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এসব জঙ্গীরা । এদের আর্থিক সহায়তা এসেছে মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। তবে জামাতের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল অর্থের এসব ফান্ডে এতোদিন সরকারী কোন মনিটরিং না থাকার কারণে জামাত সহ অন্যান্য  জঙ্গী সংগঠন গুলো  বাংলাদেশে তাদের সন্ত্রাসনির্ভর ইসলামী প্রচার প্রচারণা অবাধে চালাতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। 

দেশের মাদ্রাসা গুলোতো র‌্যাডিক্যাল ইসলাম বা রাজনৈতিক ইসলাম প্রচারণা মূলক পাঠ্যসূচী নিয়ন্ত্রনে আনার সুপারিশ উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের রিপোর্টে। এ প্রসংগে আইনুল বারি জনকন্ঠকে বলেন, “ ইসলাম ধর্ম এবং কোরানে  ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। দেশের তরুণ প্রজন্ম কে ধর্মীয় বিভ্রান্তি এবং ধর্মকে ব্যবহার করে সহিংসতা থেকে দূরে রাখতে হলে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরী।”

  দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জঙ্গী এবং নাশকতামূলক  রাষ্ট্র্রদ্রোহী তৎপরতার অভিযোগে এ পর্যন্ত  হিযবুত ত্ওাহীদের ৭০২ এবং জামাতের ৩২০ সদস্য গ্রেফতার রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুন খিলগাঁও থানা পুলিশ নাশকতা মূলক কর্মকান্ডের সন্দেহে একই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে জামাতের ছাত্রী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ২৪ জন তরুণীকে। গ্রেফতারকৃত তানজিনা বিনতে খায়ের, ফারজানা আক্তার রুনা, শাসুন্নাহার, , ফাতেমা জান্নাত , আতিয়ার জাহান, সুবাইতা সারা , মমতা হেনা,  আয়েশা আক্তার, সালমা নাসরিন, ফাতিমা ফারহানা, ফারহানা আক্তার, ফারজানা বেগম, হাফিজা সিদ্দিকা , শামীমা আক্তার , উম্মে হাবিবা, সুমাইয়া আফরোজ, জাকিয়া খান মুন্নি , নূরজাহান আক্তার, মারজানা আক্তার, সুমাইয়া খাতুন, রওনক জাহান, মাহবুবা ইসলাম, ইসরাত জাহান ইমা  বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । এরা রাজধানীর মতিঝিল, লালবাগ, বনানী, গুলশান সহ বিভিন্ন জোনে রাজধানীকে ভাগ করে এসব জোনের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসিক এলাকায়  মওদুদীবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রচারণা  চালিয়ে সাধারন মানুষকে সহিংসতার দিকে  ঠেলে দেয়। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে  তথ্য প্রমাণ সহ সাতদিন পর আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। তিনি জনকন্ঠকে জানান , গ্রেফতারকৃতদের কাছে ইসলামী জ্গংীবাদের বই পাওয়া গেছে , সেসব আদালতে উপস্থাপন করা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিকল্পিত ভাবে তারা জড়ো হয়েছিলো সেই বাড়িতে যেখান থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে তাদের। জিহাদের নামে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করলে, তারা  পুলিশের কাজে বাধা দেয় বলে  অভিযোগ আনা হয় চার্জশীটে। 

কারাগারের ভেতর থেকে এবং আদালতে হাজিরার সময়ে  জঙ্গী নেতা কর্মীরা তাদের দলের নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে এমন অভিযোগ পেয়ে কারাগারে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিআইডি কর্মকর্তা। 

আইনুল বারি বলেন , জামাতের  রাজনৈতিক স্যাবোটাজ মূলক কর্মকান্ড এখন আমাদের জন্যে সবচেয়ে বড়ো হুমকি বলে সারা দেশে জামাতে ইসলামীর কর্মতৎপরতা নজরদারীতে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ### ১৮.০৭.২০১৪  http://dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-07-18&ni=179380
sumikhan29bdj@gmail.com

No comments:

Post a Comment