বিগত ১৬ মে, ২০১২ সালে উত্তরবঙ্গের চাঞ্চল্যকর বিধবা আদিবাসী নারী মরিয়ম মুরমু হত্যাকান্ডের রায় আদালত কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ রাজশাহী আদালত চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আত্মস্বীকৃত ৪ জন আসামির মধ্যে ৩ জনের (আন্দ্রিয়াস মুরমু, যোহন মারান্ডী ও শওকত ইকবাল) মৃত্যুদ- এবং একজনের (ওপর কিস্কু) যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় প্রদান করেছেন। নারী ও শিশু মামলা নং ২৬৬/ এবং জি. আর ১৭৫/২০১১। প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে আসামি আন্দ্রিয়াস মুরমুর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২)/৩০ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোডের ৩৯৪/১-৯ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আন্দ্রিয়াসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। আসামি শওকত ইকবালের বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইকবালকে মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আরেক আসামি জোহান মারান্ডীর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মৃত্যুদ-সহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ১০ হাজর টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। অপরদিকে আসামি ওমর কিস্কুর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ (২) ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবনসহ এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উপরন্তু পেনাল কোডের ৩৯৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য,আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. মোজ্জামেল হক এবং মোবারক হোসেন। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন সৈয়দা মর্জিনা খাতুন পিপি।
আমাদের ছয় ভাই-বোন মধ্যে মরিয়ম ছিল দ্বিতীয়। বাবার লিখে যাওয়া পারিবারিক ইতিহাসে তার জন্ম সাল রয়েছে ১৯৫৩ সাল। লেখাপড়ায় ভালো থাকায় মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই বাবা তাকে রাজশাহীতে অবস্থিত বোলনপুর মিশন বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি যখন নবম শ্রেণী ছাত্রী ছিলেন, সে সময়ই যুদ্ধ শুরু হলে তার আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। স্বভাবত কারণেই তিনি যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা সহকারে সিদ্ধান্ত, আলোচনা এবং কথাবার্তা বলতেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে ভারত থেকে পরিবারের সঙ্গেই প্রত্যাবর্তন করেন এবং বড় বোনের বিয়ের পরই তিনিও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন একই জেলার তানোর থানার চৈতপুর গ্রামের হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে। মরিয়ম মুরমুর শ্বশুর প্রয়াত শীতল মারান্ডীর দ্বিতীয় সন্তান হোপনা মারান্ডী, তার বড় ভাই বিশ্বনাথ মারান্ডী। শ্বশুর শীতল মারান্ডী পৈতৃক সম্পত্তি ছিল যথেষ্ট। মরিয়ম মুরমু-হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে সংসার করার সময়ই নতুন অতিথি হিসেবে আসে পুত্র উইলসন মারান্ডী এবং মেয়ে সন্তান কল্পনা মারান্ডী।
একদা তাদের পরিবারে অন্তর্কলহ শুরু হলে মরিয়ম মুরমু দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি শিমলা দীঘিপাড়াতে চলে আসেন। বাবার বাড়িতে থেকেই তিনি শিশুসন্তান দুটিকে লেখাপড়া করান এবং বিয়েশাদির ব্যবস্থাও করেন। মেয়ে কল্পনার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিসেম্বর ২৭, ২০১০ সালে। আমাদের বোন হত্যাকা-ের পরবর্তীতে স্থানীয় দৈনিক সানশাইন ১৪ জুলাই সম্পাদকীয়তে লিখেছিল '.... মরিয়ম মুরমুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কেবল নৃশংস নয় চরম হিংস্রতাও বটে। এ ধরনের নৃশংসতার রিরুদ্ধে নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। এই হত্যাকা র বিচার কেবল আদিবাসী বলে নয়, একজন মানুষ হিসেবেই হতে হবে। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোট কথা এ হত্যাকান্ডের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সমাজে স্থিতিশীলতার জন্যেই।' মাননীয় আদালত কর্তৃক বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পরও রায় কার্যকরের কোন আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের প্রার্থনা, বহুল আলোচিত মরিয়ম মুরমু হত্যাকান্ডের রায় দ্রুত কার্যকর করলে আদিবাসী সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে; আদালতের প্রতি আদিবাসীদের আস্থা ফিরে আসবে। আমার প্রিয় বোনের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।
ঢাকা বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪২১, ১৭ রমজান ১৪৩৫, ১৫ জুলাই ২০১৪ - See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDdfMTVfMTRfMl8yMF8xXzE2NjYxOQ==#sthash.G9vIcedE.dpuf
৯ জুলাই, ২০১১ সালে দিবাগত রাতে চিহ্নিত এবং পেশাদারি সন্ত্রাসী প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয় যোহন মারান্ডী, আন্দ্রিয়াস মুরমু, ওমর কিস্কু ও শওকত ইকবালরা রাজেন মুরমুর চতুর্দিকে দেয়ালের ঘেরা ঘরে প্রবেশ করে দ্বিতীয় মেয়ে বিধবা মরিয়ম মুরমুকে (৫৮) অস্ত্রের মুখে জিম্মি রেখে নগদ অর্থ লুট করেছে, মায়ের বয়সী বিধবাকে ধর্ষণ করেছে, শারীরিক নির্যাতন ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে এবং ফাঁসির আদলে বরই গ্রামের সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে আত্মগোপনের চেষ্টা করেছে। এরূপ পরিকল্পিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সমগ্র আদিবাসী সমাজে কিংবা বৃহত্তর সমাজেও দ্বিতীয় উদাহরণের নজির নেই।
আমাদের ছয় ভাই-বোন মধ্যে মরিয়ম ছিল দ্বিতীয়। বাবার লিখে যাওয়া পারিবারিক ইতিহাসে তার জন্ম সাল রয়েছে ১৯৫৩ সাল। লেখাপড়ায় ভালো থাকায় মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই বাবা তাকে রাজশাহীতে অবস্থিত বোলনপুর মিশন বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি যখন নবম শ্রেণী ছাত্রী ছিলেন, সে সময়ই যুদ্ধ শুরু হলে তার আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। স্বভাবত কারণেই তিনি যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা সহকারে সিদ্ধান্ত, আলোচনা এবং কথাবার্তা বলতেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে ভারত থেকে পরিবারের সঙ্গেই প্রত্যাবর্তন করেন এবং বড় বোনের বিয়ের পরই তিনিও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন একই জেলার তানোর থানার চৈতপুর গ্রামের হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে। মরিয়ম মুরমুর শ্বশুর প্রয়াত শীতল মারান্ডীর দ্বিতীয় সন্তান হোপনা মারান্ডী, তার বড় ভাই বিশ্বনাথ মারান্ডী। শ্বশুর শীতল মারান্ডী পৈতৃক সম্পত্তি ছিল যথেষ্ট। মরিয়ম মুরমু-হোপনা মারান্ডীর সঙ্গে সংসার করার সময়ই নতুন অতিথি হিসেবে আসে পুত্র উইলসন মারান্ডী এবং মেয়ে সন্তান কল্পনা মারান্ডী।
একদা তাদের পরিবারে অন্তর্কলহ শুরু হলে মরিয়ম মুরমু দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি শিমলা দীঘিপাড়াতে চলে আসেন। বাবার বাড়িতে থেকেই তিনি শিশুসন্তান দুটিকে লেখাপড়া করান এবং বিয়েশাদির ব্যবস্থাও করেন। মেয়ে কল্পনার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিসেম্বর ২৭, ২০১০ সালে। আমাদের বোন হত্যাকা-ের পরবর্তীতে স্থানীয় দৈনিক সানশাইন ১৪ জুলাই সম্পাদকীয়তে লিখেছিল '.... মরিয়ম মুরমুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কেবল নৃশংস নয় চরম হিংস্রতাও বটে। এ ধরনের নৃশংসতার রিরুদ্ধে নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। এই হত্যাকা র বিচার কেবল আদিবাসী বলে নয়, একজন মানুষ হিসেবেই হতে হবে। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোট কথা এ হত্যাকান্ডের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সমাজে স্থিতিশীলতার জন্যেই।' মাননীয় আদালত কর্তৃক বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পরও রায় কার্যকরের কোন আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের প্রার্থনা, বহুল আলোচিত মরিয়ম মুরমু হত্যাকান্ডের রায় দ্রুত কার্যকর করলে আদিবাসী সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে; আদালতের প্রতি আদিবাসীদের আস্থা ফিরে আসবে। আমার প্রিয় বোনের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।
ঢাকা বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪২১, ১৭ রমজান ১৪৩৫, ১৫ জুলাই ২০১৪ - See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDdfMTVfMTRfMl8yMF8xXzE2NjYxOQ==#sthash.G9vIcedE.dpuf
No comments:
Post a Comment