Saturday, October 11, 2014

মানবের কর্মবিশ্বের সাধক শিল্পগুরু এস এম সুলতানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ-সুমি খান

শেখ মোহাম্মদ সুলতান, যিনি এস. এম. সুলতান নামে সমধিক পরিচিত, (১০ আগস্ট, ১৯২৩ - ১০ অক্টোবর, ১৯৯৪) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।তাঁর জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তাঁর শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণীর দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তাঁর ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে তাঁকে এশিয়ার ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে। 

 
এস. এম. সুলতান ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্টে তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোরের নড়াইলের মাছিমদিয়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিলো এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ মেছের আলী, তিনি পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। তাঁকে বিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো অতোটা সামর্থ্য তাঁর বাবার ছিলো না। বহু কষ্ট হওয়াসত্ত্বেও তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তিনি এখানে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এরপর স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। রাজমিস্ত্রীর কাজ করার পাশাপাশি তিনি সেই দালানগুলোর ছবি আঁকতেন। ১০ বছর বয়সে যখন তিনি স্কুলে পড়েন তখন ড: শাম্যপ্রসাদ মুখার্জ্জী স্কুল পরিদর্শনে এসে তাঁর আঁকা ছবি দেখে প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিলো ছবি আঁকা শিখবেন, এজন্যে দরকার হলে কলকাতায় যাবেন। কিন্তু এরকম আর্থিক সঙ্গতি তাঁর পরিবারের কখনোই ছিলোনা। এসময় তাঁর এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। জমিদারের সাহায্য নিয়ে সুলতান ১৯৩৮ সালে কলকাতা যান।


তাঁর ইচ্ছা ছিলো কলকাতায় গিয়ে অর্থ উপার্জনের কোনো চেষ্টা করার পাশাপাশি চিত্রশিল্পের শিক্ষা চালিয়ে যাবার। এই ইচ্ছা নিয়েই তিনি প্রথমে ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের কলকাতার বাড়িতে উঠেন। এসময় তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দী, সুলতানকে সব ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তাঁর গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিলো। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর চেষ্টায় তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। এখানে তিনি তিন বছর পড়াশোনা করেন। পাশ করে একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

আর্ট স্কুলে পড়লেও সেখানকার বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি তাঁর জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলোনা। তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে এবং ছন্নছাড়া। প্রকৃতিকে তিনি সবসময় রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছেন। আবার যান্ত্রিক নগর জীবনকে সেরকমই ঘৃণা করেছেন। ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর অব্যবহিত পরেই বেরিয়ে পড়েন এবং উপমাহাদেশের পথে পথে ঘুরে তাঁর অনেকটা সময় কেটে যায়। তখন ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্য ছিলো ভারতে। তিনি ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে তা সৈন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবেই তিনি সেসময় জীবনধারণ করেছেন। মাঝে মাঝে তাঁর ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে পার্থিব বিষয়ের প্রতি যে অনীহা এবং যে খামখেয়ালীপনা ছিলো তাঁর কারণে সেই ছবিগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর কোনো আলোকচিত্রও এখন পাওয়া যায় না। এছাড়া তিনি কখনও এক স্থানে বেশি দিন থাকতেন না। তিনি বলেন:
একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেলো। '৪৮-এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি।
 
তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তাঁর আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর এস এম সুলতান কিছু দিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে কিছুদিন থেকেই করাচি চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর চাকুরি করেছিলেন। সেখানে চাকুরিরত থাকা অবস্থায় তাঁর সাথে পরিচয় হয় চুঘতাই এবং শাকের আলীর মত বিখ্যাত শিল্পীদের। এর কিছু আগে ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো এবং বোস্টনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। এরপর লন্ডনেও তিনি প্রদর্শনী করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে আবার নড়াইলে ফিরে আসেন। এবার এসে তিনি শিশু শিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন যা নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিলো। শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় তুলেছিলেন। এছাড়া সেখানে "নন্দন কানন" নামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং "নন্দন কানন স্কুল অব ফাইন আর্টস" নামে[১] একটি আর্ট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন।
অনেকটা সময় তাঁর নড়াইলেই কেটে যায়। ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি প্রায় সকলের অজ্ঞাতেই ছিলেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তাঁর কিছু শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তাঁর আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অবশ্য আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে বাধ্য হোন। তাঁর কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিলো তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে একটি বড় আকারের নৌকাও তৈরি করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিলো শিশুরা সেই নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে।[৫] আশির দশকের শেষদিকে তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তাঁর সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সে বছরেরই আগস্ট মাসে নড়াইলে ঘটা করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালেরই ১০ আগস্ট তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিলো। অনেক শিল্পীই সেখানে নব নব শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এস এম সুলতান সেসময়ও নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। এর কারণ অবশ্য গ্রামীণ জীবনের প্রতি তাঁর চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতা। তাঁর শিল্পকর্মের স্বরূপটিও খুঁজে পাওয়া যায় এই গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। তাঁর সে সময়কার ছবিগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এর কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য হলো[৫]:
আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা...। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। ...আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রু্গ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।
তাঁর ছবিতে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপলাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তাঁর এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রুর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তাঁর এরকম দুটি বিখ্যাত ছবি হচ্ছে: হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল(১৯৮৮)।
১৯৭৬ সালে তাঁর আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তাঁর শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং জটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাঁর অনেক ছবিরই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রুক্ষেপ করতেন না।
এস এম সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর তেমন কোনো অনুসারী ছিলোনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তাঁর মতো করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তাঁর মতো মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তাঁর কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিলো তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তাঁর জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন:
তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিলো জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিলো 'আধুনিকতা', অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে।
শিল্পী এস এম সুলতান শেষ জীবনে বলে গিয়েছেন:
আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
 

সিডও সনদে সংরক্ষণ-প্রত্যাহার জরুরী -সুমি খান


“কেউ নারী হয়ে জন্মায় না। তাকে নারী করে তোলা হয়…” নারীবাদের বেশিরভাগ সমর্থক সিমন দ্য ব্যুভেয়ারের এই অসামান্য পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত। নারী-পুরুষ হয়ে জন্মানো  এখনো কারো নিজের কৃতিত্ব নয় । ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা যদি এমন কিছু আবিষ্কার করেন, হয়তো তখন স্বেচ্ছা জন্মের সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু  এখনো নেই। 
তবে সমাজপতিদের নির্দেশনায় 'সভ্যসমাজ' একটি কন্যাশিশুকে ফ্রক পরিয়ে, পুতুল খেলতে দিয়ে, ঘরকন্নায় ব্যস্ত রেখে, ঘরের কোণে আটকে রেখে ধীরে ধীরে  একটি ' অনুগত নারী' হিসেবে গড়ে তোলে।
এর বিরুদ্ধে সঙঘবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং  সমান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার সংঘবদ্ধ আন্দোলনের ইতিহাস  সমৃদ্ধ হলেও খুব প্রাচীন নয়।

 গত শতকের বিশের দশকে আমেরিকার নারীরা ভোটাধিকার অর্জন করে। এর ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে নারী সমাজে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টি হয়। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান নারী-পুরুষের সমঅধিকারের দাবিতে বিশ্বের নানা প্রান্তে আন্দোলন গড়ে তোলে। 

ক্লারা জেটকিন, জার্মান সমাজতান্ত্রিক দলের নারী শাখার অন্যতম নেত্রী, ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে প্রথম নারী দিবস পালনের কথাটি উত্থাপন করেন। তিনি প্রস্তাব দেন প্রত্যেক দেশে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিবস থাকা প্রয়োজন । সেই সম্মেলনে ১৭টি দেশ থেকে আসা শ’খানেক নারী ক্লারা জেটকিনের এই প্রস্তাবে সমর্থন জানান।


এর ভিত্তিতেই গত শতাব্দীর প্রথম দিকে, ১৯ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলেও পরে, ১৯১০ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর, ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলন। এই সম্মেলনে ১৯৭৬-১৯৮৫ সময়কাল ‘‘নারী দশক’’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে জাতিসংঘ নারীর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালটি ‘‘আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ’’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ‘সিডও সনদ’ বা নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসন সনদ পরিগৃহীত হয়। এ সনদকে

 বলা হয় ‘উওম্যানস বিল অব রাইটস’।এতে ৩০ টি ধারা রয়েছে।এর ১ থেকে ১৬ নম্বর ধারা পর্যন্ত নারী -পুরুষের সমতা-সংক্রান্ত নীতিমালা বর্ণিত আছে। 

বাংলাদেশে নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর অব্যাহত চাপের মুখে সরকার ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর সিডও সনদ স্বাক্ষর করে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঐতিহাসিক স্বাক্ষর করার সময়ে ৩ টি ধারার ৪ টি উপধারা সম্পর্কে সংরক্ষণমূলক নীতি অবলম্বন করে বাংলাদেশ। ধারাগুলো হচ্ছে– ২, ১৩.১ (ক), ১৬.১ (গ), (চ)। ২ নম্বর ধারাতে বর্ণিত আছে– বৈষম্য বিলোপের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক যথাযথ নীতি ও পদ্ধতি গ্রহণ। সনদের ২ ধারার সাতটি উপধারায় সংবিধান ও অন্যান্য আইনে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন, বৈষম্য নিষিদ্ধ করার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ আইনগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা আছে। এছাড়া রয়েছে সমানাধিকারের আইনগত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠায় আদালত, ট্রাইব্যুনাল এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে যে কোনো বৈষম্যমূলক কাজের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা,নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে বিদ্যমান এমন আইন, বিধান, সংশোধন বা বাতিল করার জন্য আইন প্রণয়নসহ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এমন সব ফৌজদারি বিধিবিধান বাতিল। ধারা ১৩ .১(ক) পারিবারিক কল্যাণের অধিকার। ১৬.১ (গ) ধারায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়। আর এই ধারা (চ) অনুচ্ছেদে অভিভাবকত্ব, সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়কত্ব ও পালক সন্তান গ্রহণ অথবা জাতীয় আইনে যেখানে অনুরূপ ধরনের ধারণা বিরাজমান রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও দায়িত্ব, সব ক্ষেত্রেই সন্তানের স্বার্থ হবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত চারটি অনুচ্ছেদ সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের আন্দোলনে নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে নারী সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ২ ও ১৬.১ (গ) অন্য দুটি ধারার ওপর থেকে আপত্তি তুলে নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। 

 ২টি ধারার সংরক্ষণসহ সিডও সনদের স্বীকৃতি মূল সনদের চেতনার সঙ্গে কোনভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জাতিসংঘের নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডওর গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করার জন্য আইন কমিশন সরকারকে সুপারিশ পাঠিয়েছে ২০১৩ সালে। এর বিপরীতে সরকার এখন পর্যন্ত এ সুপারিশ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং কমিশনকেও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
 
আইন কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশে বলা হয়েছে, ধারা ২ পুরোটি কোন্ অর্থে 'কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী' তার ব্যাখ্যা দেয়নি বাংলাদেশ। অন্য কোনো মুসলিম রাষ্ট্র পুরো ২ ধারাটি 'কোরআন-সুন্নাহবিরোধী' বলে চিহ্নিত করেনি, তা প্রত্যাখ্যান করেনি। এই সনদের সিগনেটরি অন্যান্য দেশ, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইডেন, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস এই শর্ত সংরক্ষণের বিরোধিতা করে আপত্তিও জানিয়েছে। ধারা ১৬ (১) গ বিষয়ে বলা যায়, এ ধারা সম্পূর্ণভাবে 'কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক শরীয়াহবিরোধী' বলা যাবে না। কেননা দেশে প্রচলিত আইনেই নারীর অনেক অধিকার রয়েছে।
  কমিশনের সদস্য শাহ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৯৬ সালের 'আইন কমিশন আইন' অনুযায়ী কোনো বিষয়ে কমিশন সুপারিশ দিলে সরকার প্রতি বছর সংসদের প্রথম অধিবেশনে কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন সংসদে পেশ করবে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আইন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হলেও এ দুটি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবস্থান হচ্ছে, ‘‘সিডও সনদ বিষয়ে আইন কমিশনের সুপারিশ আমরা পেয়েছি। তবে তা এখনও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। চার বছর পরপর প্রতিবেদন পাঠানোর বাধ্যবাধকতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ সিডও কমিটির কাছে বাংলাদেশকে প্রতিবেদন পাঠানোর কথা। সরকার সে প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। সংরক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
অন্যান্য বারের মতো সরকার সর্বশেষ প্রতিবেদনেও (২০১০) সিডও কমিটির কাছে সংরক্ষণ প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এবারও সরকার বলেছে, সংরক্ষণ প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে। অন্যদিকে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে জেনেভায় জাতিসংঘ সিডও কমিটির ৪৮তম অধিবেশনে সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় সম্পর্কে সিডও কমিটি সমাপনী সভায় বরাবরের মতো বাংলাদেশ সরকারকে সংরক্ষণ প্রত্যাহারের তাগিদ দিয়েছে।
পারিবারিক বিষয়ে সমন্বিত আইন না থাকায় মুসলিম আইন, খ্রিস্টান আইন ও হিন্দু আইন ইত্যাদি ধর্মীয় আইন দ্বারা ওই সব ধর্মের অনুসারীরা তাদের পারিবারিক বিষয়াদি পরিচালনা করে এবং প্রতিটি ধর্মীয় পারিবারিক আইনেই নারীর প্রতি চরম বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। ১৬ ধারার সংরক্ষণ এরূপ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে উৎসাহিত করেছে বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে, সিডও সনদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা হচ্ছে ২ নম্বর ধারাটি। ১৬ এবং ২ নম্বর– এই ধারা দুটো অনুমোদন না করার ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণির যুক্তি হচ্ছে, এগুলো ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। 

অন্যান্য অনেক মুসলমান অধ্যুষিত দেশ সিডও সনদের সম্পূর্ণ অনুমোদন দিলেও, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (যেহেতু ইসলামিক রিপাবলিক নয়) কেন সংরক্ষণ ব্যতীত অনুমোদন দিতে পারছে না সেটাই আশ্চর্যজনক। বাংলাদেশ  'শরীয়া আইন' দ্বারা পরিচালিত নয়।
 আমাদের সংবিধানের ১০ , ১৯, ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ সমূহ শোষণমুক্ত এবং নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের কথা বলে।
সিডও সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও অবস্থা পর্যালোচনামূলক দায়িত্বের অংশ হিসেবে প্রতি ৪ বছর পরপর সিডও কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাংলাদেশ সরকার হয়তো সংরক্ষণ সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ অবস্থান পরিবর্তন করবে– এমন আশা করছেন সিডও নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। সংরক্ষণ প্রত্যাহার করলেই সত্যিকার অর্থে কার্যকর হবে সিডও সনদ। 

 

নারী দিবস, সিডও সনদের বার্ষিকী পালনের আয়োজনের জৌলুসের পাশাপাশি নারীর অবস্থান ও অবস্থা পরিবর্তনে আন্তরিক প্রয়াস কাম্য। কেননা লিঙ্গবৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রধানতম হাতিয়ার।


Thursday, October 9, 2014

রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে:সুমি খান



রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে :চট্টগ্রাম, মুম্বই, চেন্নাই ও কাশ্মীরে যোগাযোগের সূত্র



কোলকাতার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নুরুল হাসান চৌধুরীর বর্ধমানের বাড়িতে বোমা বানানোর সময়ে নিহত বাংলাদেশের দুই জঙ্গী শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রী রাজিয়া ও আলিমা পুলিশ হেফাজতে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। এর সূত্র ধরে পলাতক চার জঙ্গীকে খুজছে ভারতের পুলিশ।  হিন্দুস্থান টাইমসের সংবাদে প্রকাশ,  বাংলাদেশে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে দিল্লি।গোয়েন্দা হেফাজতে শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রীরা জানিয়েছেন, দশ বছর আগে বাংলাদেশে জেএমবি’র সদস্যপদ গ্রহণ করে আলিমা ও রাজিয়া। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে। হাতের নাগালে পাওয়া রাসায়নিক দিয়ে কীভাবে প্রাণঘাতী বিস্ফোরক তৈরি করা যায়, সেই পদ্ধতি রাজিয়া ও আলিমা শিখেছিল ওয়াজিরিস্থানের শিকক এলাকায় । সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফেরে তারা। এদিকে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনের সাথে তৃণমূল নেতাদের সংশ্লিষ্টতা উদ্ঘাটন করে এই বোমা হামলা তদন্ত করার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কে ‘জিহাদী দিদি’ সম্বোধন করে এ ঘটনায় রাজ্য প্রধান হিসেবে তার জবাবদিহিতা দাবি করেছেন সিনিয়র বিজেপি নেতা সুব্রাহ্মনীয়াম স্বামী ।  এই বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশী জঙ্গী সম্পৃক্ততার সূত্র নিশ্চিত করতে একই সাথে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের গভীর তদন্ত দাবি করেছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকি¯তানের ওয়াজিরিস্থানে। সুন্দরবন দিয়ে নৌপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকেছে বলেও জানতে পেরেছে  ভারতের পুলিশ। একই সাথে জঙ্গিবাদে উঠে আসছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। বর্ধমানের গ্রেনেড কারখানায় বিস্ফোরণ। তার থেকেই মিলল বিশাল এক জঙ্গি নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততোই একের পর এক রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। জঙ্গিযোগের একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে উদ্ধার সিমকার্ডের কললিস্ট খতিয়ে চট্টগ্রাম, মুম্বই, চেন্নাই ও কাশ্মীরে যোগাযোগের সূত্র পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশনের কাছে বর্ধমান বিস্ফোরণের যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ চেয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিস্ফোরণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশের কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ভারতকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা রিপোর্টেই বলা হয়েছে, বর্ধমান-বোমা বিষ্ফোরণ ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গিরা যুক্ত।
 শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে জঙ্গিদমনে জোর তৎপরতা বাড়লে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে  শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রী  রাজিয়া, আলিমা ও তাদের সঙ্গীরা। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শে মগজধোলাইয়ের ঘটনায় উঠে আসে বেশ কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও। বর্ধমানের বোমা হামলা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য  বেরিয়ে আসছে। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খয়ড়াগড়ায় বোমা বানাতে গিয়ে  দুই বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।  বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পেছনে বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জঙ্গি তৎপরতা আটকাতে যে প্রশাসনিক যে উদ্যোগ নেওয়া উচিত,পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার তা নেয়নি বলে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে দায়ী করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন , ভারত, বাংলাদেশ , মায়ানমার এবং পাকিস্তানের আল-কায়দা অনুসারীরা সিøপিং সেল পদ্ধতিতে একসাথে সমান্তরাল ভাবে  কাজ করছে। এই পদ্ধতিতে এক বাহিনীর কাজ অন্য বাহিনী জানতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সন্ত্রাসবাদ দমনে ২০০৮-এর ৩১ ডিসেম্বর ভারতে গঠন করা হয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসাবে  তৈরি এনআইএ জাতীয় স্বার্থে সে দেশের যে কোনও প্রান্তে তদন্ত করতে পারে। সাধারণভাবে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চাইলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত শুরু করে এনআইএ। তবে, ভারতের কেন্দ্র  সরকার যদি মনে করে কোনও ঘটনায় রাষ্ট্রের বিরদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে রাজ্যকে অগ্রাহ্য করে এনআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত লাগবে, এই যুক্তিতে বর্ধমান-বোমা হামলা ঘটনার ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)‘র তদন্তে আপত্তি জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এরপরও যদি এনআইএ বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্ত শুরু করে,সেটাই হবে ভারতের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা- যেখানে রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তদন্ত করবে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। বর্ধমান-বোমা বিষ্ফোরণ ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই, খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে শুধুমাত্র রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার বলে দেখা উচিত নয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এনআইএ তদন্ত জর–রি বলে মনে করছেন  ভারতের রাজনীতিক এবং  বিশেষজ্ঞরা।

রাজ্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের নির্দেশে এনআইএ কোনও ঘটনার তদন্ত করছে, এমন নজির এখনও পর্যন্ত ভারতে নেই। ২০১৩ সালের  অক্টোবরে পাটনার গান্ধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদির সভায় বিস্ফোরণের তদন্ত প্রথমে এনআইএ-কে দিতে চায়নি বিহার সরকার। যদিও, পরে এনআইএকে তদন্ত করতে দিতে রাজি হন বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী  নীতীশ কুমার। গত মে মাসে চেন্নাই সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের পর এনআইএ’র তদন্তে আপত্তি জানান তামিলনাড়–র তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। পরে রাজ্যের সম্মতি নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এনআইএ-র গোয়েন্দারা।  রাজ্যের সম্মতি নিয়ে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত চুরাশিটি মামলার তদন্ত করছে ভারতের এনআইএ। রাজ্য সরকারের সম্মতির ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে দুটি ঘটনার তদন্ত করছে এনআইএ। কোলকাতার কলেজ স্ট্রিটে মাওবাদী নেতা সদানলা রামকৃষ্ণকে গ্রেফতার এবং দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহেদিনের নামে ফোন করার ঘটনার তদন্ত করছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।
তদন্ত একটু এগোতেই বোঝা যায় বর্ধমান-কান্ড মামুলি ঘটনা নয়। তদন্তে সিআইডির অধীনে টাস্ক ফোর্স গঠন করে রাজ্য সরকার। বিস্ফোরণের খোঁজখবর করতে গিয়ে রাজ্য পুলিসের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন এনআইএ-র অফিসাররা। ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদে প্রকাশ, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)’র অভিযোগ উড়িয়ে দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব। স্বরাষ্ট্রসচিব এ কথা বললেও তা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বর্ধমানের বোমা বিষ্ফোরণের রিপোর্ট দিয়েছে তারা। তাতে  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘটনার গুরুত্ব বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। নেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও। পুলিসি বাধায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০১ সালের  ২৩ জুলাই ভারতের  তিলজলায় নিজের কারখানার কাছে অপহৃত হন খাদিম কোম্পানীর কর্মকর্তা পার্থ রায়বর্মণ। মুক্তিপণের জন্য শিল্পকর্তার অপহরণের সেই ঘটনার তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান তদন্তকারী দল।
২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গী হামলার ঘটনা এখনো সেই  রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী হামলার সবচেয়ে বড়ো ঘটনা। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে আমেরিকান সেন্টারে হামলা চালায় বাইকে সওয়ার সশস্ত্র জঙ্গিরা। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান আমেরিকান সেন্টারের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী।
২০১৩ সালের একাধিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি তৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের পুলিশ এবং গোয়েন্দা দল। তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ, গত একদশক ধরে ভারতে নাশকতা করে জঙ্গীদের পালানোর পথ হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গকে ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা।অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনায়াসেই পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে ভারতের  বিভিন্ন  প্রদেশে ছড়িয়ে যায় জেএমবি জামায়াতের জঙ্গীরা এ তথ্য জনকন্ঠকে জানিয়েছে জেএমবির জঙ্গীরাও।
ভারতের মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ,হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গকেই যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে ভারতের গোয়েন্দারা। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির একাধিক সিøপিং সেলের সক্রিয়তা নিয়ে বারবার সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় পালাবদলের পর পরিস্থিতির বদল হয় বলে জানায় ভারতের গোয়েন্দারা ।তাদের মতে,  বাংলাদেশে  আ্ওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসনিার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে কঠোরহাতে দমন করে শেখ হাসিনা সরকার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সে সময় বাংলাদেশ থেকে বহু জঙ্গিনেতা পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। গত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি সক্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে মেটিয়াবুরুজের মসজিদ তালাওয়ে এলাকায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দু‘জনের মৃত্যু হয়। ১২ জুলাই ২০১২ তারিখে মেটিয়াবুরুজ বিস্ফোরণের তদন্তে কলকাতায় গ্রেফতার সিমি নেতা হারুণ অররশিদ।২০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাটে গ্রেফতার হুজি জঙ্গি মিজানুর রহমান । ২০১৩ সালের ১৯ ও ২৩ মে দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঁচ আইএসআই চরকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিস।

তার ই ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
বর্ধমান বিস্ফোরণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে গোয়েন্দাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। বর্ধমানের ঘটনায় যুক্ত ভারতের ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন এবং পাকিস্তানের আল কায়দার শাখা আল জিহাদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে অভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরির আদর্শে হাত মিলিয়েছে এই তিনটি জঙ্গি সংগঠন।এই জিহাদি আদর্শেই দীক্ষিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের খাগডাগড়ের ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় নেয়া জঙ্গিরা।
২০১৩ সালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহের সীমান্তবর্তী কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামির কিছু সংগঠক। বাংলাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা হবার গুঞ্জন এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর থেকে জেএমবি এবং হেফাজতে ইসলামির আডালেই জামাত নেতারা জঙ্গীবাদ প্রচার করতে থাকে। তবে শুধুমাত্র স্থলসীমান্ত নয়, সন্ত্রাস আমদানিতে কার্যত অরক্ষিত জলপথকে ব্যবহারের সুযোগও ছাড়েনি জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ, কয়েকমাস আগেই চট্টগ্রাম থেকে জলপথে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র সুন্দরবনের খাঁড়িতে এসেছিল। সে অস্ত্র কোথায় গেল বা কী কাজে ব্যবহার হল তা খতিয়ে দেখছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় চললেও আসাদুজ্জামান খান জনকন্ঠকে বলেন, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি। অফিসিয়ালি জানানোর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২ জুলাই ২০১৪ চিত্পুরের কলকাতা স্টেশন থেকে গ্রেফতার হয় জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি জাহিদ হুসেন। ১৬ অগাস্ট ২০১৪ দিল্লী পুলিস জানিয়েছে আলিপুর জেলে বসেই স্মার্ট ফোনের স্কাইপে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে লস্কর জঙ্গি আর্শাদ খান ও সওকত।
আইমান জাওয়াহিরি গত ছয় মাসে দুইটি ভিডিও বার্তায় জোর আত্মবিশ্বাসে দাবি করেছেন বাংলাদেশে তাদের  বেশ কিছু জঙ্গী সংগঠক রয়েছে। এতে বলা হয়েছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দক্ষিণ এশিয়া শাখা সংগঠিত করে ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশে সমন্বিত জঙ্গী তৎপরতা সংগঠিত করে বাংলাদেশে বড়ো ধরণের নাশকতা করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। তারই প্রমাণ উঠে আসছে একের পর এক বিষ্ফোরণকে কেন্দ্র করে তদন্ত প্রতিবেদনে। এর আগে তৃণমূল নেতা এবং সংসদ সদস্য  ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিপুল আর্থিক বিনিয়োগের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয়  গোয়েন্দাদল।
 ভারত সরকার বিস্তারিত তথ্য জানানোর পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তদন্তে নামবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার  মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেলে তারা পশ্চিমবঙ্গে বোমা হামলায় নিহতদের অনুসন্ধানে মাঠে নামবেন। ০৯.১০.২০১৪