Thursday, October 9, 2014

রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে:সুমি খান



রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে :চট্টগ্রাম, মুম্বই, চেন্নাই ও কাশ্মীরে যোগাযোগের সূত্র



কোলকাতার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নুরুল হাসান চৌধুরীর বর্ধমানের বাড়িতে বোমা বানানোর সময়ে নিহত বাংলাদেশের দুই জঙ্গী শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রী রাজিয়া ও আলিমা পুলিশ হেফাজতে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। এর সূত্র ধরে পলাতক চার জঙ্গীকে খুজছে ভারতের পুলিশ।  হিন্দুস্থান টাইমসের সংবাদে প্রকাশ,  বাংলাদেশে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে দিল্লি।গোয়েন্দা হেফাজতে শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রীরা জানিয়েছেন, দশ বছর আগে বাংলাদেশে জেএমবি’র সদস্যপদ গ্রহণ করে আলিমা ও রাজিয়া। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্থানে। হাতের নাগালে পাওয়া রাসায়নিক দিয়ে কীভাবে প্রাণঘাতী বিস্ফোরক তৈরি করা যায়, সেই পদ্ধতি রাজিয়া ও আলিমা শিখেছিল ওয়াজিরিস্থানের শিকক এলাকায় । সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফেরে তারা। এদিকে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনের সাথে তৃণমূল নেতাদের সংশ্লিষ্টতা উদ্ঘাটন করে এই বোমা হামলা তদন্ত করার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কে ‘জিহাদী দিদি’ সম্বোধন করে এ ঘটনায় রাজ্য প্রধান হিসেবে তার জবাবদিহিতা দাবি করেছেন সিনিয়র বিজেপি নেতা সুব্রাহ্মনীয়াম স্বামী ।  এই বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশী জঙ্গী সম্পৃক্ততার সূত্র নিশ্চিত করতে একই সাথে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের গভীর তদন্ত দাবি করেছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, রাজিয়া ও আলিমার জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকি¯তানের ওয়াজিরিস্থানে। সুন্দরবন দিয়ে নৌপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকেছে বলেও জানতে পেরেছে  ভারতের পুলিশ। একই সাথে জঙ্গিবাদে উঠে আসছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। বর্ধমানের গ্রেনেড কারখানায় বিস্ফোরণ। তার থেকেই মিলল বিশাল এক জঙ্গি নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততোই একের পর এক রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। জঙ্গিযোগের একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে উদ্ধার সিমকার্ডের কললিস্ট খতিয়ে চট্টগ্রাম, মুম্বই, চেন্নাই ও কাশ্মীরে যোগাযোগের সূত্র পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশনের কাছে বর্ধমান বিস্ফোরণের যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ চেয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিস্ফোরণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশের কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ভারতকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা রিপোর্টেই বলা হয়েছে, বর্ধমান-বোমা বিষ্ফোরণ ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গিরা যুক্ত।
 শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে জঙ্গিদমনে জোর তৎপরতা বাড়লে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে  শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডলের স্ত্রী  রাজিয়া, আলিমা ও তাদের সঙ্গীরা। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শে মগজধোলাইয়ের ঘটনায় উঠে আসে বেশ কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও। বর্ধমানের বোমা হামলা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য  বেরিয়ে আসছে। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খয়ড়াগড়ায় বোমা বানাতে গিয়ে  দুই বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।  বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পেছনে বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জঙ্গি তৎপরতা আটকাতে যে প্রশাসনিক যে উদ্যোগ নেওয়া উচিত,পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার তা নেয়নি বলে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে দায়ী করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন , ভারত, বাংলাদেশ , মায়ানমার এবং পাকিস্তানের আল-কায়দা অনুসারীরা সিøপিং সেল পদ্ধতিতে একসাথে সমান্তরাল ভাবে  কাজ করছে। এই পদ্ধতিতে এক বাহিনীর কাজ অন্য বাহিনী জানতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সন্ত্রাসবাদ দমনে ২০০৮-এর ৩১ ডিসেম্বর ভারতে গঠন করা হয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসাবে  তৈরি এনআইএ জাতীয় স্বার্থে সে দেশের যে কোনও প্রান্তে তদন্ত করতে পারে। সাধারণভাবে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চাইলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত শুরু করে এনআইএ। তবে, ভারতের কেন্দ্র  সরকার যদি মনে করে কোনও ঘটনায় রাষ্ট্রের বিরদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে রাজ্যকে অগ্রাহ্য করে এনআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত লাগবে, এই যুক্তিতে বর্ধমান-বোমা হামলা ঘটনার ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)‘র তদন্তে আপত্তি জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এরপরও যদি এনআইএ বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্ত শুরু করে,সেটাই হবে ভারতের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা- যেখানে রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তদন্ত করবে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। বর্ধমান-বোমা বিষ্ফোরণ ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই, খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে শুধুমাত্র রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার বলে দেখা উচিত নয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এনআইএ তদন্ত জর–রি বলে মনে করছেন  ভারতের রাজনীতিক এবং  বিশেষজ্ঞরা।

রাজ্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের নির্দেশে এনআইএ কোনও ঘটনার তদন্ত করছে, এমন নজির এখনও পর্যন্ত ভারতে নেই। ২০১৩ সালের  অক্টোবরে পাটনার গান্ধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদির সভায় বিস্ফোরণের তদন্ত প্রথমে এনআইএ-কে দিতে চায়নি বিহার সরকার। যদিও, পরে এনআইএকে তদন্ত করতে দিতে রাজি হন বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী  নীতীশ কুমার। গত মে মাসে চেন্নাই সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের পর এনআইএ’র তদন্তে আপত্তি জানান তামিলনাড়–র তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। পরে রাজ্যের সম্মতি নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এনআইএ-র গোয়েন্দারা।  রাজ্যের সম্মতি নিয়ে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত চুরাশিটি মামলার তদন্ত করছে ভারতের এনআইএ। রাজ্য সরকারের সম্মতির ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে দুটি ঘটনার তদন্ত করছে এনআইএ। কোলকাতার কলেজ স্ট্রিটে মাওবাদী নেতা সদানলা রামকৃষ্ণকে গ্রেফতার এবং দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহেদিনের নামে ফোন করার ঘটনার তদন্ত করছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।
তদন্ত একটু এগোতেই বোঝা যায় বর্ধমান-কান্ড মামুলি ঘটনা নয়। তদন্তে সিআইডির অধীনে টাস্ক ফোর্স গঠন করে রাজ্য সরকার। বিস্ফোরণের খোঁজখবর করতে গিয়ে রাজ্য পুলিসের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন এনআইএ-র অফিসাররা। ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদে প্রকাশ, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)’র অভিযোগ উড়িয়ে দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব। স্বরাষ্ট্রসচিব এ কথা বললেও তা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বর্ধমানের বোমা বিষ্ফোরণের রিপোর্ট দিয়েছে তারা। তাতে  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘটনার গুরুত্ব বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। নেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও। পুলিসি বাধায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০১ সালের  ২৩ জুলাই ভারতের  তিলজলায় নিজের কারখানার কাছে অপহৃত হন খাদিম কোম্পানীর কর্মকর্তা পার্থ রায়বর্মণ। মুক্তিপণের জন্য শিল্পকর্তার অপহরণের সেই ঘটনার তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান তদন্তকারী দল।
২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গী হামলার ঘটনা এখনো সেই  রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী হামলার সবচেয়ে বড়ো ঘটনা। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে আমেরিকান সেন্টারে হামলা চালায় বাইকে সওয়ার সশস্ত্র জঙ্গিরা। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান আমেরিকান সেন্টারের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী।
২০১৩ সালের একাধিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি তৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের পুলিশ এবং গোয়েন্দা দল। তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ, গত একদশক ধরে ভারতে নাশকতা করে জঙ্গীদের পালানোর পথ হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গকে ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা।অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনায়াসেই পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে ভারতের  বিভিন্ন  প্রদেশে ছড়িয়ে যায় জেএমবি জামায়াতের জঙ্গীরা এ তথ্য জনকন্ঠকে জানিয়েছে জেএমবির জঙ্গীরাও।
ভারতের মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ,হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গকেই যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে ভারতের গোয়েন্দারা। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির একাধিক সিøপিং সেলের সক্রিয়তা নিয়ে বারবার সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় পালাবদলের পর পরিস্থিতির বদল হয় বলে জানায় ভারতের গোয়েন্দারা ।তাদের মতে,  বাংলাদেশে  আ্ওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসনিার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে কঠোরহাতে দমন করে শেখ হাসিনা সরকার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সে সময় বাংলাদেশ থেকে বহু জঙ্গিনেতা পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। গত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি সক্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে মেটিয়াবুরুজের মসজিদ তালাওয়ে এলাকায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দু‘জনের মৃত্যু হয়। ১২ জুলাই ২০১২ তারিখে মেটিয়াবুরুজ বিস্ফোরণের তদন্তে কলকাতায় গ্রেফতার সিমি নেতা হারুণ অররশিদ।২০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাটে গ্রেফতার হুজি জঙ্গি মিজানুর রহমান । ২০১৩ সালের ১৯ ও ২৩ মে দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঁচ আইএসআই চরকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিস।

তার ই ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
বর্ধমান বিস্ফোরণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে গোয়েন্দাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। বর্ধমানের ঘটনায় যুক্ত ভারতের ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন এবং পাকিস্তানের আল কায়দার শাখা আল জিহাদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে অভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরির আদর্শে হাত মিলিয়েছে এই তিনটি জঙ্গি সংগঠন।এই জিহাদি আদর্শেই দীক্ষিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের খাগডাগড়ের ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় নেয়া জঙ্গিরা।
২০১৩ সালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহের সীমান্তবর্তী কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামির কিছু সংগঠক। বাংলাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা হবার গুঞ্জন এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর থেকে জেএমবি এবং হেফাজতে ইসলামির আডালেই জামাত নেতারা জঙ্গীবাদ প্রচার করতে থাকে। তবে শুধুমাত্র স্থলসীমান্ত নয়, সন্ত্রাস আমদানিতে কার্যত অরক্ষিত জলপথকে ব্যবহারের সুযোগও ছাড়েনি জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ, কয়েকমাস আগেই চট্টগ্রাম থেকে জলপথে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র সুন্দরবনের খাঁড়িতে এসেছিল। সে অস্ত্র কোথায় গেল বা কী কাজে ব্যবহার হল তা খতিয়ে দেখছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় চললেও আসাদুজ্জামান খান জনকন্ঠকে বলেন, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি। অফিসিয়ালি জানানোর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২ জুলাই ২০১৪ চিত্পুরের কলকাতা স্টেশন থেকে গ্রেফতার হয় জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি জাহিদ হুসেন। ১৬ অগাস্ট ২০১৪ দিল্লী পুলিস জানিয়েছে আলিপুর জেলে বসেই স্মার্ট ফোনের স্কাইপে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে লস্কর জঙ্গি আর্শাদ খান ও সওকত।
আইমান জাওয়াহিরি গত ছয় মাসে দুইটি ভিডিও বার্তায় জোর আত্মবিশ্বাসে দাবি করেছেন বাংলাদেশে তাদের  বেশ কিছু জঙ্গী সংগঠক রয়েছে। এতে বলা হয়েছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দক্ষিণ এশিয়া শাখা সংগঠিত করে ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশে সমন্বিত জঙ্গী তৎপরতা সংগঠিত করে বাংলাদেশে বড়ো ধরণের নাশকতা করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। তারই প্রমাণ উঠে আসছে একের পর এক বিষ্ফোরণকে কেন্দ্র করে তদন্ত প্রতিবেদনে। এর আগে তৃণমূল নেতা এবং সংসদ সদস্য  ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিপুল আর্থিক বিনিয়োগের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয়  গোয়েন্দাদল।
 ভারত সরকার বিস্তারিত তথ্য জানানোর পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তদন্তে নামবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার  মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেলে তারা পশ্চিমবঙ্গে বোমা হামলায় নিহতদের অনুসন্ধানে মাঠে নামবেন। ০৯.১০.২০১৪

No comments:

Post a Comment