Thursday, April 4, 2013

২০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সংসদে বিএনপির দাবি ছিল-দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ধর্মের নামে বাণিজ্য করা দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে


জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সেদিন বিএনপির সংসদ সদস্যরা যা বলেছিলেন-

সাড়ে ষোল বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন বিরোধী দলের মূলতবী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । মসজিদের ইমামতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সামান্য ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে শিবিরের তান্ডব ও নৃশংসভাবে ছাত্র হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে একই ভাষায় বক্তব্য দেন শাসক বিএপির সংসদ সদস্যরা। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সংসদে দাঁড়িয়ে তাদের দাবি ছিল-ধর্মের নামে বাণিজ্য করা দলটিকে আর বাড়তে দেয়া যায় না। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দেশের সেনাবাহিনীতে যেন কোনভাবে এ দলের অনুসারী ঢুকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সুযোগ না পায় সেজন্য নাগরিক সনদের পাশাপাশি বিশেষ সনদ চালুরও দাবি জানান বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
সেদিন এ ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল ৩৩টি মূলতবী প্রস্তাবের নোটিশ দেয়। সংসদের ইতিহাসে এক ঘটনায় এত বেশি সংখ্যক মূলতবী নোটিশ দেয়ার ঘটনাও বিরল। মূলতবী প্রস্তাব হিসাবে বিরোধী দল প্রিভিলেজ চাইলেও সরকারী দল আলোচনায় অংশ নেয়ার দাবি জানালে আলোচনা শুরু হয় ৬২ ধারায়। সরকার ও বিরোধী দলের ক্রমাগত আক্রমনাত্বক বক্তব্যের এক পর্যায়ে জামায়াত নেতা মতিউর নিজামীসহ দলের অন্য সংসদ সদস্যরা সংসদের বৈঠক ত্যাগ করেন।
বিরোধী দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর নিশুতি রাতে জামাত-শিবিরের নারকীয় তান্ডবে নিহত জোবায়ের চৌধুরী রীমু হত্যাকান্ড এবং শতাধিক আহত ছাত্রদের আর্তনাদ বিষয়ক আলোচনা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে আইনগত ব্যবস্থা অবলম্বনের স্বার্থে অবিলম্বে সংসদ মূলতবী করা হোক’।
প্রস্তাব অনুযায়ী রাত ৮ টা ৩ মিনিটে সংসদের বৈঠক মূলতবী হয়ে যায়। আলোচনা শুরু হয় ৮ টা ২০ মিনিটে।
আলোচনা শুরু করে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঘটনার বণর্না করে বলেন, গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিমর্ম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। একাত্তরের মতো জামায়াত আজ দেশকে মেধাশুন্য করতে চায়।
বিএনপির আবদুল আলী মৃধা বলেন, আজকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত শিবির রাতের অন্ধকারে যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে সমস্ত জাতি তার জন্য উদ্বিগ্ন। আজকে এই রগ কাটার দল, গলা কাটার দল পাশের গ্রামে অস্ত্রেও ট্রেনিং করে। আমাদের সন্তান যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে তাদের লেখাপড়া শিখতে দিতে চাইছে না। তারা একাত্তরে পাকবাহিনীকে সহায়তা করে যেভাবে দেশের মানুষকে হরণ করেছিল, তা আবার ঘটাতে চাইছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে যখন রাজনৈতিকভাবে উৎপাদন ও উন্নয়ন শুরু হয়েছে তখন বাংলাদেশকে একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে উদ্যোগ নিয়েছে জামাত-শিবির চক্র।
তৎকালীন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি একটি প্রগতি বিরোধী রাজনীতি। এদেশে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে আসছে। দিনের পর দিন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ছাত্রদের রগ কেটে অমানুষিক অত্যাচার করে হত্যা করছে। আজকে আমরা জানতে চাই, তাদের শক্তির উৎস কোথায়? দু’চারজন বাদে এ সংসদের প্রতিটি সদস্য, ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যরাও এ হত্যাকান্ডের বিচার চায়।
সংসদের হুইপ আশরাফ হোসেন বিরোধী দলকে কটাক্ষ করে বলেন, একযোগে শান্তি প্রতিষ্টায় যে সহায়তা করার কথা ছিল তাদের তা ত্রাা করেননি। জামায়াতে ইসলামী তার ছাত্র সংগঠনের নামে যে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে তা রোধে সহায়তা না করে অনেকে অবস্থাকে সংকটময় করার কাজে লিপ্ত ছিলেন।
তবে এর জবাবে পাল্টা আক্রমন করে জাতীয় পার্টির আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী বলেন, আজকে প্রশ্ন উঠছে সন্ত্রাস বন্ধের ব্যাপারে সরকারের কতটুকু আন্তরিকতা ছিল। আজকে তাদের নিজেদের ঘরে আগুন লেগেছে। জামাত-শিবিরের হাতে তাদের ঘরের ছেলেরা মার খাচ্ছে বলে তাদের মুখে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে খই ফুটছে। যাদের সাহায্যে সরকার গঠন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আজ বাধ্য হয়ে কথা বলছেন।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান ওমর জামায়াতের প্রতি বিষোদগার করে বলেন, আজকে আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম যে, এ প্রস্তাব আনার সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় সদস্য নিজামী সাহেবও দাঁড়িয়েছেন। তার মানে তিনি নিশ্চয় স্বীকার করছেন না যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নারকীয় হত্যাকান্ড তাদের ছাত্র শিবির করেছে। এ অপকর্ম যদি শিবির না করে থাকে তাহলে তিনি যেন দাঁড়িয়ে বলেন যে ওরা ছাত্র শিবির নয়। তিনি বলুন যে, ওই ছাত্রদের ছাত্র শিবির হিসাবে গ্রহন করি না। তাঁর যদি সাহস থাকে, মনে বল থাকে, তিনি এই এখানে বলুন।
জাসদের সংসদ সদস্য পরে বিএনপিতে যোগদানকারী শাজাহান সিরাজ বলেন, আজ আমরা আর একটি মুর্হুতও দেশকে এভাবে চলতে দিতে পারি না। ছাত্রদলের নেতৃত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্ররা আজ এক হয়েছে। জামাত-শিবির ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য ফরিদা রহমান জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচী সর্ম্পূনভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ২২ বছরের রীমুকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা জানতাম, মানুষ গরু ছাগল জবাই করে। এখন জামাত-শিবির নামক একটি দল মানুষ জবাই করতে শুরু করেছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তিনি যেন ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাহলে আমরা খুশি হব, জনগণ খুশি হবে এবং দেশে একটি নিরাপত্তা আসবে।
বিএনপির আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, আজ এ সংসদে জামায়াতে ইসলামীর যেসব সংসদ সদস্য বন্ধুরা আছেন তাদের বিবেককে একটু জিজ্ঞাসা করতে চাই, ধরো, ধরো বিএনপি ধর, জবাই কর, এ সেøাগানটি ইসলামিক না অনৈসলামিক? মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের দুইশ কামরায় অগ্নি সংযোগ করল, লুটপাট করল এগুলো কি ইসলামিক না অনৈসলামিক? আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, ঘুমন্ত অবস্থায় নিরীহ ছাত্রদের এক এক করে রগ কেটে দেয়া কি ইসলামিক না অনৈসলামিক? আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করুন বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং দিয়ে, ক্যাডার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেড়ে দিয়েছেন এটা কি মানবতার বিরোধী না মানবতার পক্ষে? তিনি বলেন, শিবির বহু মায়ের কোল খালি করে দিয়েছে। এ হাউজে আজ যে ঐক্যমতের সৃষ্টি হয়েছে সেই ঐক্যমতের দিকে লক্ষ্য রেখে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হোক।
বিএনপির সংসদ সদস্য আলমগীর কবির ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজনে এ মহান সংসদে বিল আনতে হবে। জামাত-শিবিরের নারকীয় হত্যাকান্ড শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র রাজশাহীর আকাশ-বাতাস মোথিত হয়ে উঠছে। আমি থুথু নিক্ষেপ করে জামায়াতের সমালোচনা করব না। আমি গণতন্ত্রের ভাষায় ঘৃনা প্রকাশ করব, নিন্দা জানাব এবং আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে জামায়াতকে নিন্দা জানাব।
বিএনপির মেজর (অব) আখতারুজ্জামান বলেন, আমি বিরোধী দলের বন্ধুদের বলব, স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী চক্রকে রাজনীতিসহ সব জায়গায় নিষিদ্ধ করে প্রস্তাব আনেন। আপনাদের ভোট দিতে হলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হলেও আপনাদের ভোট দেব। আসুন আমরা আজ তাদের সঙ্গে আর এক কক্ষে না বসার অঙ্গীকার করি।
বিএনপির সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আজকে প্রস্তাব করতে চাই সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, এনএস, আইডিএফআই সহ সকল বাহিনীতে নাগরিক সনদের পাশাপাশি আরও একটি সনদ যোগ করতে হবে। জামাত-শিবিরের কোন সদস্য এ বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে না। তা না হলে বিশ বছর পর তারা এ বাহিনী দখল করে আবার এদেশের ক্ষমতা দখল করবে। একাত্তরে তারা যেভাবে এদেশের মানুষকে হত্যা করেছিল। সেই একই কায়দায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নেতাশুন্য করতে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর আক্রমন করেছিল।
বিএনপির সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট খায়রুল এনাম জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, জামায়াতের উদ্দেশ্য কি? কি কারণে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্র সমাজের ওপর তান্ডব লীলা চালাচ্ছে?
বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়ে বিএনপির জিয়াউল হক বলেন, বিরোধী দলের বন্ধুদের বলতে চাই, আমাদেরকে জোর করে অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে বলবেন না। স্বাধীনতার স্বার্থে রাজনৈতিক স্বার্থে আপনাদের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করি। আমাদেরকে জোর করে জামায়াতের সঙ্গে ঠেলে দেবেন না।
হুইপ শাজাহান মিয়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত শিবির যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে তা বণর্না করার ভাষা আমার জানা নেই। জামাত-শিবির সীমা লংঘন করছে। তারা একাত্তরের নারকীয় ঘটনা আবার ঘটাতে চায়। আজ কোন গোষ্ঠী বিশেষ নয় আমাদের সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে এ জামাত-শিবিরকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার সুযোগ এসেছে।
সব শেষে রাত সোয়া ১২ টায় সংসদ উপনেতা ডাঃ বদরুদোজ্জা চৌধুরী বলেন,উভয় তরফের বক্তব্য খুব কাছাকাছি ছিল। আমি দুঃখিত যে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা এখানে নেই। তাদের এখানে থাকা উচিত ছিল এবং তাদের বক্তব্য কি ছিল সেটা জানতে পারলে আমাদের আরও সুবিধা হত। আমরা তাদের বক্তব্য খন্ডন করতে পারতাম। তিনি বলেন, ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর রাজনৈতি বিশ্বাসের অজুহাতে ধর্মকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে যে বর্বর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তা পৈশাচিক। এটা ইসলাম ধর্মের মূলনীতির বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা বিবেক বিরোধী। এ হত্যাকান্ডে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। রগ কাটা, হাত কাটা, জবাই করা এটা কি ধরনের রাজনীতি? স্বাধীন দেশে এটা চলতে দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের প্রস্তাব সংবিধান দিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করার অবকাশ আছে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিধ্বণি করে সংসদ এ ব্যাপারে দৃঢ় ঘোষণা দেবে এবং সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি! শূন্য ডাকঘর!

হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি! শূন্য ডাকঘর!

সাকা -মীরকাশেম পরিবারের বিপুল বিনিয়োগ: নেপথ্যে জামাত।। ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত


হেফাজতী ইসলামের লংমার্চঃ নেপথ্যের এক ভয়াবহ কাহিনী



ভূমিকাঃ  আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে কথিত আল্লামা শফি’র নেতৃত্বে একটি লং মার্চ ঢাকা অভিমুখে আসছে এই শনিবার ৬-ই এপ্রিল ২০১৩, প্রিয় পাঠকেরা আজকে আপনাদের বলব এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কাহিনী। যা শিউরে উঠার মতো। অন্ধকারের এই শক্তির প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করা হলো।


[অনৈতিক কাজের জন্য লন্ডন শাখার হেফাজতী ইসলামী সংগঠক হামিদী শাহবাগ থেকে গ্রেফতার]

আসলে হেফাজতী ইসলাম যে এই আন্দোলন করবে শুরুতে তার কথা ছিলো না । জামাতের ইমেজ সারা বাংলাদেশে খারাপ থাকায় জামাত হন্যে হয়ে একটা চ্যানেল খুজঁছিলো যাতে অন্য কোনোভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যায় কিনা, দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে। এইসময় লন্ডন হেফাজতী নেতা হামিদীর গ্রেফতার ঘটনা যেন জামাতের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে।জামাতের ভাগ্য ভালোই বলতে হয়।
শাহবাগ আন্দোলনের সময় শাহবাগে ২২ শে ফেব্রুয়ারী শেখ নূরে আলম হামিদী নামক একজন বৃটিশ নাগরিক শাহবাগে এসেছিলেন তার হ্যান্ডি ক্যামেরা নিয়ে । সে সময় হামিদী সেখানকার তরুনদের সিগারেট খাওয়া, পথে বসে জাগ্রত নারীদের গান গাওয়া সহ বিশেষ উদ্দ্যেশ্যমূলক কিছু ভিডিও রেকর্ড করছিলেন। ঠিক সে সময় সেখানে অবস্থানরত তরুনদের সন্দেহ হয় এবং তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে এখানে কি করছে তখন হামিদী ঠিক ঠাক কিছু বলতে পারেনি।
পরে তার সাথে থাকা ক্যামেরা, ভিডিও ডিভাইস ঘেঁটে দেখা যায় হামিদী সেখানে মেয়েদের শরীরের নানা স্থান দূর থেকে ভিডিও করেছেন এবং ক্যামেরাতেও নানান ছবি তুলেছেন। যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি ছেলে সিগারেট খাচ্ছে, একটি মেয়ে স্লোগান দিতে গিয়ে তার ওড়না পড়ে গেছে কিংবা একটি মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বান্ধবীর কাঁধে। ঠিক সে সময়ে ক্লান্ত ঐ বোনের অসতর্ক মুহুর্তে তার শরীরের নানান স্থানের ছবি তুলে হামিদী এগুলো দিয়ে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাতে চেয়েছিলো।


কে এই শেখ নূরে আলম হামিদীঃ

এই হামিদী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামীলীগ আমলে এই হামিদীর নামে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে এলার্ট জারি হয় এবং পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। ১৯৯৯ সালে এই ব্যাক্তি পালিয়ে প্রথমে ভারত তারপর সেখান থেকে তার আরেক ভাইয়ের সাহায্যে যুক্তরাজ্যে যায়।
হামিদীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তার বাবা শেখ খলিলুর রহমান হামিদী বরুনার পীর। হামিদী বরুনা মাদ্রাসায় একসময় শিক্ষকতা করত। হামিদী লন্ডনে মূলত হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছিলো। তাদের এই মাদ্রাসা পূর্ব লন্ডনের প্লাস্টোতে অবস্থিত। এই হেফাজতী ইসলাম লন্ডনে তাদের নাম ধারন করে আঞ্জুমানে হেফাজতী ইসলাম। প্রতি বছর লন্ডনে পহেলা এপ্রিলের মেলাতে এই হেফাজতী ইস্লামের কর্মীরা লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফ্লেট দিত যাতে মানুষ মেলায় না যায়। এটা নাকি ইসলাম বিরোধী কাজ। হেফাজতে ইসলামের অধীনে যত মাদ্রাসা আছে সেগুলোর জন্য এই হামিদী প্রতি বছর রমজানে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বা উৎসবের আগে টিভিতে, রেডিওতে এবং লন্ডনের বিভিন্ন সোর্স থেকে পাউন্ড সংগ্রহ করত।

শাহবাগের তরুনেরা হামিদীকে তার এইসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড সহ হাতে নাতে ধরে গণপিটুনী দেবার চেষ্টা করলে সেখানকার কিছু তরুন তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং হামিদীর কাছ থেকে উদ্ধার করে মহামূল্যবান কিছু ডকুমেন্টস। এইদিকে হামিদীও স্বীকার করে অনেক কিছু। আর এইসব কারনেই হেফাজতী ইসলাম নামে জঙ্গী দলটি ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে প্রতিশোধের নেশায়।



[উপরের ছবিতে জঙ্গী নূরে আলম হামিদীকে দেখা যাচ্ছে]

ডেটলাইন ২৮ শে ফেব্রুয়ারীঃ

সাঈদীর রায় শুনবার পর থেকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার বার বার চেষ্টা চালাতে থাকে বি এন পি’র হাই কমান্ডের মাধ্যমে বড়ো কোন ঘটনা ঘটানোর। এম কে আনোয়ার, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে তারা। বি এন পি’র হাই কমান্ড অনেক আগে থেকেই সাকার উপর নাখোশ। এইদিকে সাদেক হোসেন খোকার একটা গ্রুপ সাকার ব্যাপার বি এন পি 'র হাই কমান্ডকে পুরোপুরি অফ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান সাফ জানিয়ে দিয়েছে সাকার ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে। সব কিছু মিলিয়ে সাকার ছেলে ফাইয়াজ এবং হুম্মাম প্রাণপণে বি এন পি’র হাই কমান্ডে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো খালেদা যাতে একটাবারের জন্য হলেও সাকা'র নাম উল্লেখ করে বিবৃতি দেন।
হুম্মাম শুধু তদবির করার জন্য এম কে আনোয়ারকে ৪৫ লাখ টাকা দেয়। তবে আলতাফ হোসেন এইজন্য কোনো টাকা নেন নি। এরা দুইজন মিলে যখন খালেদার সাথে দেখা করতে যান, তখন এই বিষয়ে খালেদা শুধু শুনে গিয়েছিলেন। দুই নেতা উঠে আসবার সময় খালেদা আলতাফের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, "সালাউদ্দিনকে একটু ঠাট কমাতে বলেন। এইভাবে বি এন পিতে তার জায়গা হবে না।" সাকার পরিবার এ খবর শুনে বুঝতে পারে বিপদের সময় বি এন পি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের দেখা করতে চাইলে হাসিনা সরাসরি বলে দেন, সাকার পরিবারের কেউ যেন তার আশে পাশে কোনোভাবেই না আসে ।




মার্চের প্রথম সপ্তাহঃ

এমন একটা অবস্থায় সাকার অত্যন্ত কাছের লোক মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী সাকার বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদেরের কাছে একটা প্রস্তাব আনে যে হেফাজতী ইসলামের এক নেতাকে সরকার আর শাহবাগের জনতারা খুব অপদস্থ করেছে, এখন সে জেলে। তার ব্যাপারে সাকা যদি হেল্প করতে পারে তাহলে তারা বসতে পারে। সেই সাথে আব্দুর রহমান আরো জানায় যে, হেফাজতী ইসলামী একটা বড়ো সড়ো আন্দোলনে যেতে চায়। এই পুরো আন্দোলোনের জন্য অনেক টাকার দরকার। সাকার ছেলে ফাইয়াজ আবদুর রহমান চৌধুরীকে সরাসরি কথা দেয় না। সে বলে তারা বাবার সাথে কথা বলে তাকে জানাবে।
হেফাজতী ইসলামের প্রধান আল্লামা শফি অনেক আগে থেকেই সাকার কৃপায় চট্রগ্রামে টিকে থাকা লোক। এখন সাকার বিপদে সাকাকে এমন প্রস্তাব করায় তেলে বেগুনে তেঁতে ওঠে সাকার স্ত্রী ফারহাত। তারপরও'' পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে নেই দেখে পিপড়াও লাথি দেয়'', এই বাস্তবতা বুঝে চুপ থাকেন তিনি। সাকাকে এই প্রস্তাব জানানো হলে সাকা তার ছোট ছেলে হুম্মামকে এই ব্যাপারে ইনভলভ্ড হতে বলে এবং জামায়াতে ইসলামীর একটা স্ট্রং লিঙ্ক এখানে কাজে লাগাতে বলে। কারাগারের ভেতরে বসে এই প্রস্তাব শুনে সাকার প্রথম কথা ছিলো “সোদানির পুতেরা তাইলে এখন প্রস্তাব নিয়া আসছে?”



ফাইয়াজ আর হুম্মাম জামাতের সেলিম, রফিকুল,শিবিরের নেতা দেলোয়ার, হেফাজতের মাওলানা রুহী, জুনায়েদ আল হাবিবি এবং আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে একটা গোপন বৈঠকে বসে রাঙ্গুনিয়ার পেনিনসুলা হোটেলে। এই সময় হুম্মাম জামাত শিবিরের তিন নেতা এবং হেফাজতের মাওলানা রুহীকে ও জুনায়েদকে 'আই ফোন- ৫ ' গিফট করে। এই বৈঠকে আসার আগে ফাইয়াজ তারা চাচা গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে শেখ হেলালের সাথে বৈঠক করে নেয়।


যদিও দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃবিরোধের জেরে গিকার সাথে সাকার পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। তবু গিকা এই ব্যাপারে আগের তিক্ততার কথা ভুলে থাকে। কারণ ,গিকার নামেও এখন যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত চলছে। এইদিকে মীর কাশিমের ছেলে আরমানের সাথেও হুম্মামের একটা টেলিকনফারেন্স হয় এবং আরমান পুরো নিশ্চিত করে যে, সে সাকার পরিবারের যে কোনো সিদ্ধান্তের সাথে আছে। সাকার স্ত্রী যোগাযোগ করে তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে ।মহিউদ্দিন সরাসরি কিছু না বললেও তাদের পুরা পরিবারের সাথে আছে বলে জানায় এবং চিন্তা করতে মানা করে। সব কিছু নিশ্চিত করার পর হুম্মাম এবং ফাইয়াজের সাথে জামাত-শিবিরের ওই তিন নেতা, হেফাজত ইসলামীর মাওলানা রুহী এবং সাকার নিকটাত্নীয় মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে মিটিং হয়। মিটিং চলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টার মতো এবং সেখানেই মূলত পরিকল্পনা করা হয় যে, এখন সামনে থেকে সবকিছু করবে হেফাজতী ইসলামী। পেছনে সাপোর্ট দিবে সাকা-গিকার পরিবার, মীর কাশিমের পরিবার এবং জামাত। বি এন পি’কে বোঝানোর দায়িত্ব থাকে আলতাফ হোসেন চৌধুরী আর মীর নাছিরের উপর। মজার ব্যাপার হলো, এই বৈঠকের শেষে মাওলানা রুহী আলাদা ভাবে হুম্মামের কাছে জরুরী ভিত্তিতে ৭ লাখ টাকা ধার চায়। হুম্মাম পরের দিন মাওলানা রুহীকে সাত লাখ টাকা দেয় এবং এই টাকা দিতে যায় নুরুল আমীন নামে হুম্মামের এক কাছের লোক।


কি করতে চায় সাকা এবং আল্লামা শফি?


এই লং মার্চের একটা বড় প্ল্যান ছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বি এন পি’র সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীমকে হত্যা করা। এতে করে দেশে একটা ভয়াবহ বিশৃংখলা তৈরী হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায় দুইজন কয়েদীকে খুন করে পাগলা ঘন্টি বাজানোর পরিকল্পনাও আছে।
এখানে পরিকল্পনা করা হয় কওমী মাদ্রাসার প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হবে। দায়ী করা হবে আওয়ামীলীগ আর বাম দলকে। ঢাকাতে তারা অতর্কিতে হামলা করবে গণ জাগরণ মঞ্চে এবং সেইখানেও তারা হামলা করে কমপক্ষে ৫ জনকে হত্যা করবে। এই দায়িত্বটা নেয় শিবিরের দেলোয়ার। একই সাথে হিজবুত তাহরীর এর একটা বড় অংশকেও সাকার পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে তাদের কার্যক্রম চালাবার জন্য। এই টাকার লেনদেন হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের এক বাড়িতে। হিজবুত তাহরীর প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আত্নঘাতী বোমা হামলায় খুন করবার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো। এই লং মার্চেও এরকম প্রস্তাব আসে। সাকার পরিবার এবং বি এন পি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক'এখনো সময় হয়নি' বলে এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। উলটা তারা ভয় পেয়েছে যে হিজবুত তাহরীর এই লং মার্চে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে আর পুরো লং মার্চের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। হিজবুতীরা যাতে এই ধরনের সহিংস কিছু না করে এই জন্য দফায় দফায় বৈঠক হয় তাজমহল রোডের ওই বাড়িতে। এদের একটা বৈঠক হয় সাকার মেয়ে ফারজিনের গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে।

সাকার মেয়ে ফারজিন তার গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে




[মাওলানা রুহী]

আমার দেশ কার্যালয়ে বৈঠকঃ

[হেফাজতীদের সাথে মাহমুদূর রহমান]
দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে সব সময় পুলিশের নজরদারী থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায়। এই বৈঠকই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতি নির্ধারক বৈঠক। এই বৈঠকে ফরহাদ মজাহার, শওকত মাহমুদ, শিবিরের দেলোয়ার, সাকার ছেলে হুম্মাম, মাওলানা রুহী,আল্লামা সুলতান যওক নদভী,ইনামুল হক কাসেমী, মুফতহি ইজাহারিল হকের ছেলে মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী ( মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের দায়ে গ্রেফতার এবং জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত), মীর কাশেমের ছেলে আরমান এবং আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় অনেক কিছু। এখানে টাকা পয়সা থেকে শুরু করে কিভাবে লং মার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। মীর কাশেম, জামাত এবং সাকার পরিবার মিলে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা খসড়া বাজেট ব্যবস্থা করবে বলে বলা হয় । টাকাটা মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে বলে ঘোষনা দিলে বৈঠকে মাওলানা রুহী এবং হারুন ইজহার বলে এই টাকা সরাসরি যারা যারা আন্দোলন করবে সেইসব দলের নেতাদের আলাদা আলাদা দিতে হবে। মাওলানা রুহী হেফাজতী ইসলামের জন্য একাই ৪৫ কোটি টাকা দাবী করে বসে। এই সময় শওকত মাহমুদ মাওলানা রুহীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে মাওলানা রুহীও পালটা পালটি তর্ক করতে থাকে। এক সময় শওকত মাহমুদ ওই মিটিং ছেড়ে সব হুজুরদের চলে যেতে বললে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ফরহাদ মজাহার, আল্লামা নদভী এবং হুম্মাম মিলে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। মাহমুদুর রহমান এ সময় চুপচাপ ছিলেন। মাহমুদুর রহমান মাওলানা রুহীকে বলেন." আমরা দুইবার আপনাদের বিজ্ঞাপন প্রথম পাতায় দিয়েছি সম্পূর্ন ফ্রি, প্রতিদিন আপনাদের খবর ছাপাচ্ছি প্রথম পেইজে এইটা ভুলে যাবেন না। " মিটিং শেষ হয় ওইদিন রাত ২ টায়। পরে চাইনিজ খাবার আনা হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। হুম্মাম এবং আরমান না খেয়ে চলে যান তাড়া আছে বলে।

১৫ ই মার্চঃ

সাকার পরিবার থেকে একটা সিদ্ধান্ত হয় যে, যারা যারা আন্দোলন করবে তাদেরকে আলাদা ভাবে দল ভিত্তিক টাকা দেয়া হবে। কারন মাহমুদুর রহমানের অফিসে মিটিং থেকেই তারা বুঝতে পেরেছে যে এই হুজুরেরা টাকা না দিলে নড়বে না। এর মধ্যে মাওলানা রুহী ধারের কথা বলে ৭ লাখ টাকাও নিয়েছে হুম্মামের কাছ থেকে। এই একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মীর কাশেমের পক্ষ থেকেও। এইসময় মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল বার বার বলে 'আমার দেশ' এর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে যাতে কিছু করা না হয়। এই নতুন ঝামেলা নিয়ে আবারো সাকার মেয়ে ফারজিনের ক্যাফেতে বৈঠক হয় হুম্মাম, আরমান, মীর হেলাল এবং হেলালের সাথে আসা এক বন্ধু লিটনের। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাহমুদুর রহমানকে ৩ কোটি, দারুল মা'আরিফ চট্রগ্রামের মহাপরিচালক মাওলানা নদভীকে ২ কোটি, কওমী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে ১ কোটি, পটিয়া মাদ্রাসার মহা পরিচালক আব্দুল হালিম বোখারীকে ৫০ লক্ষ এবং হেফাজতী ইসলামকে দেয়া হবে ৪৫ কোটি টাকা এবং জামাত নিজে খরচ করবে বাকী টাকার অংশ তাদের নিজেদের ফান্ড থেকে। সিদ্ধান্ত হয় যে এই পুরা লং মার্চের সব দায় দায়িত্ব থাকবে হেফাজতী ইসলামের কাছে এবং চট্টগ্রাম থেকে পুরো ব্যাক আপ দেবে জামাত-শিবির আর বি এন পি’র সাকা গ্রুপ।

টাকা নিয়ে গ্যাঞ্জাম এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোঃ


কওমী শিক্ষা বোর্ডের মুফতি কাশেমী এই অর্থ নিতে রাজী হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন বর্ষীয়ান মুফতি আব্দুর রহমান। তিনি বুঝতে পারেন এখানে হেফাজতীদের অনেক টাকা দেয়া হচ্ছে সেই তুলনায় তাদেরকে অনেকটা ভিক্ষার মত স্বল্প টাকা দেয়া হচ্ছে। একই ব্যাপার বাকীদের সাথেও হয় এবং এদের সবার সাথে একটা বৈঠক হয় মার্চের ২০ তারিখে সাকার ধানমন্ডির বাসায়। এখানে কোনোভাবেই এদের কাউকে বুঝানো যায় না। পরে বৈঠক শেষ হলে হুম্মাম, ফাইয়াজ, মীর হেলাল বুঝতে পারে যে এই হুজুরেরা টাকার কাঙ্গাল এবং এত টাকা যারা জীবনে চোখেও দেখে নাই তারা সরকারী ভয়েই সরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই পুরো অংশটাই এই লং মার্চ থেকে সরে দাঁড়াবার অবস্থা হলে জামাত এই পুরো সিন্ডিকেট কে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় রাজি করায়। মাহমুদুর রহমানের সাথে শেষ পর্যন্ত ৪ কোটি টাকায় রফা হয় পুরো ব্যাপারটাতেই,আর হেফাজতীদের মোট দেয়া হয় ৪৫ কোটি টাকা।



নিজেদের ভেতর অন্তর্দন্দ্ব ও চরম অবিশ্বাস-কলহঃ

এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু কোনো আদর্শিক আন্দোলন নয় এবং এর সাথে সম্পূর্ণ ভাবেই টাকা পয়সা আর নিজের লাভ জনিত কারন জড়িত। সেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই পুরো গোষ্ঠীর বিভিন্ন মতাদর্শের দলের ভেতর শুরু হয় কোন্দল। সেটাও টাকা নিয়ে। হেফাজতী ইসলাম একসাথে এত টাকা পাবে এইটা কোনোভাবে মানতে পারছে না অন্যান্য দলে গুলো। এবং সে কারনেই কয়েকটা দল আস্তে আস্তে বিভক্ত হয়ে পড়লো। হেফাজতের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি তুলে শেষ মুহূর্তে লংমার্চ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে খবর আসে বিভিন্ন স্থান থেকে। পরে জামাতী ইসলামের মধ্যস্থতায় সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আলেম ফকিহুল মিল্লাত আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান, ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, দারুল মা'আরিফ চট্টগ্রামের মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী মোট ২৫ কোটি টাকায় একটা রফা করে। যার মধ্যে ১০ কোটি টাকাই পাচ্ছে মুফতি আব্দুর রহমান।



এই ঘটনাতে মুফতী কাশেমী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কারন এই ডিল করার সময় তাকে জানানো হয় নাই এবং টাকার ব্যাপারেও তাকে কিছু বলা হয়নি। সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দ্রীয় নেতা ও মুফতি আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠভাজন মুফতি ইনামুল হক কাসেমী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলাদা দল নিয়ে লং মার্চের ঘোষনা দিলে হুম্মাম এবং জামাতের রফিকের মাধ্যমে আবার একটা সুরাহা হয়। কাশেমীকে দেয়া হয় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাশেমি প্রথমে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসায় কঠোর নির্দেশ জারি করেছিলো কেউ যাতে লং মার্চে না যায়, কোনো ছাত্র-শিক্ষক হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। এমনকি বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যাতে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোতে না পারেন। পরে কাশেমী ও আব্দুর রহমানের ভেতর একটা রফা হয় যে,তারা এক সাথে মিলে মিশে কাজ করবে।

এদিকে গত ২৯ মার্চ শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশে চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করলেও তাতে তাঁর দল ও মুরিদরা অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক বারিধারা মাদানিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কাসেমী সাহেবের সাক্ষাৎ-রহস্য এবং বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হেফাজতের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে হিসাব-নিকাশ শেষে চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত লংমার্চে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা এই লংমার্চে দেওয়া সমর্থন বহাল রাখলেও লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও তার সিদ্ধান্তের কথা জানান যে তারা আর এই আন্দোলনে নেই।

কিভাবে অর্থ দেয়া হলোঃ

এখানে উল্লেখ্য যে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা মোটামুটি খসড়া বাজেট করা হয়েছিলো শুরুতেই। এত টাকার বাজেটের মধ্যে যে টাকা জামাত নিজে খরচ করবে তার পরিমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জামাত অবশ্য তাদের এই টাকা শুধু নিজেদের দলের জন্য নয় বরং মুফতি আব্দুর রহমান, কাশেমী এদের খাতে ব্যয় করবে বলে ঠিক হয়। এর মধ্যে ৪৫ কোটি পাচ্ছে হেফাজতী ইসলামী এবং ৪ কোটি পাচ্ছে মাহমুদুর রহমান। বাকী বাজেটের মধ্যে মধ্যে ১০ কোটি পায় মুফতি আব্দুর রহমান, ১ কোটি ৭০ পায় মুফতী কাশেমী, কিছু টাকা টাকা হুম্মাম ডিস্ট্রিবিউট করে বাবু নগর, হাটজাহাজারি সহ আরো কিছু মাদ্রাসায় ও এতিম খানায় এবং সেখানে কওমী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের নিষেধ মেনেও যাতে তারা লং মার্চে শরিক হয় এই চেষ্টা চলতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো মহাপরিচালক আব্দুর রহমানের অগোচরে আরো কিছু টাকা দেয়া হয় ইনামুল হক কাশেমিকে তাদের দফার বাইরে । যাতে করে সে গহিরা, হাটহাজারি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান সহ অনান্য এলাকায় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে শনিবার ব্যাপক নৈরাজ্য করতে পারে । এই টাকার পরিমান নিয়ে দুই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটা সূত্র থেকে বলছে ৮০ লক্ষ, আরেকটা সূত্র থেকে বলছে ১ কোটি। এই টাকা দেয়া হয় বাবুল চৌধুরী নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের পাশের এক রেস্তোরায়।

হেফাজতী ইসলাম সহ সকল শরীকরা কিভাবে লং মার্চ নিয়ে এগোবে:



এইখানে লং মার্চের দুইটা প্ল্যান আছে। প্ল্যান ১ আর ২।
এই দুইটা প্ল্যান পুরো সাজিয়েছে জামাত নেতা রফিক ও সেলিম। ষড়যন্ত্রকারীরা জানে যে সরকার এই মার্চে বাধা দিতে পারে বলে শুরু থেকেই তারা চেয়েছে তাদের নেতা মূল ব্যক্তি আল্লামা শফিকে তারা ঢাকায় নিয়ে আসবে এবং এখানে একটা জমায়েত তারা বৃহস্পতিবার [মার্চ-৪] থেকেই করবে। যদি কোন কারনে আল্লামা শফিকে চট্রগ্রাম থেকে না আসতে দেয় তাহলে তারা ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল ঢাকার একটা অংশে তান্ডব চালাবে।
পরিকল্পনা মতে, জামাতের লোকেরাই জামাতের কিছু তরুন নেতাদের খুন করবে, কিছু মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেবে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আবদুল আলীম কে হিট করবার জন্য তারা এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্নাইপার এনেছে। এই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিতে পারলেই জামাত দেখাতে পারবে যে এই ট্রাইবুনালে আটক যারা তারা নিরাপদ নয় এবং এই বিচারপ্রক্রিয়া প্রহসন। চট্রগ্রামে প্রাথমিক ভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে আব্দুর রহমান চৌধুরী এবং এম এ হাসেম খান। এরা দুইজনই সাকার অত্যন্ত কাছের লোক এবং পুরা ব্যাপারটা এরা শুরু থেকেই তদারকি করছে নিভৃতে। হেফাজতী ইসলাম সহ সব দল বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৫৬ টি টিম বানিয়েছে। এরা বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানা থেকে লং মার্চের সাথে যোগ দেবে। মূলত এই দলটি ঢাকাতে ঢোকার সাথে সাথেই এদের মধ্যে ১৫ টি ইউনিট শুরু করবে তান্ডব। খুলনাতে একটা গ্রুপ নাস্তিক সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিবে এবং এই ঘটনার জের ধরে হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর হবে। এসবের জের ধরে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে একদল হানা দিয়ে পুরো কারাগারে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে দিবে। একাত্তর টিভি, প্রথম আলো কার্যালয় সহ অন্যান্য ভবনে এদের একটা ইউনিট আক্রমন করার পরিকল্পনা ও করা হয়।

মূলত কি উদ্দেশ্যে এই লং মার্চ?

প্রাথমিক ভাবে নূরে আলম হামিদীর অনৈতিক কার্যকলাপের জের ধরে যদিও হেফাজতী ইসলাম এই ব্যাপারটিকে তাদের উপর আক্রমণ হিসেবে নিয়েছে মনে হচ্ছে, পরবর্তীতে এই তথাকথিত ইসলামী দলটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করে।জামাত ও সাকার পরিবার পুরো ব্যাপারটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কৌশল হিসেবেই শুধুমাত্র বিপুল অংকের টাকার জোরে সব কিছু কিনে নেয়। অতি সংক্ষেপে এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলনই বলা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়।

কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দীকে



টানা তিন দিন অচেতন থাকার পর জ্ঞান ফিরলে বিবিসি বাংলার ষ্ট্রিংগার এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী তাকে হত্যা প্রচেষ্টার বর্ণনা দিলেন।

গত রোববার গভীর রাতে নগরীতে কালের কণ্ঠের ব্যুরো কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বিবিসি বাংলা সার্ভিসের এই স্ট্রিংগারকে।


তারপর থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গার গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিবীড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন গৌরাঙ্গ নন্দী। কে বা কারা তার উপর হামলা চালালো, কীভাবে তিনি জ্ঞান হারালেন তা নিয়ে পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও পুলিশ ছিল অন্ধকারে। বুধবার রাতে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর হাসপাতালেই সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন গৌরাঙ্গ।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, কয়রা উপজেলার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সের দুই ব্যক্তি রোববার রাত ৯টার দিকে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে আসে। এ সময় কার্যালয়ে আর কেউ না থাকায় কক্ষের দরজা বন্ধ করে আলাপ শুরু হয়।
তারা কয়রার চিংড়ি ঘের, সম্প্রতি কয়রার আমাদিতে হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

হঠাৎ করেই ওই দুই ব্যক্তি গৌরাঙ্গকে জাপটে ধরেন। তিনি তা প্রতিহতের চেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান।

গৌরাঙ্গ আরো বলেন, “তখন ওই দুই ব্যক্তি আমার মুখে কয়েকটি সাদা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে পানি দিয়ে গিলতে বাধ্য করে। তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখ বেধে দেয়, যাতে চিৎকার করতে না পারি। পরে তারা ব্লেড দিয়ে দুই হাতের কব্জিতে পোঁচ দিয়ে রগ কাটার চেষ্টা করে।”

এরপর আর কিছুই মনে নেই সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দীর। তিনি জানান, এটি ছিল একটি ‘পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টা’।
তবে কারা এর পেছনে রয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।

গৌরাঙ্গ নন্দীর সহকর্মী কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিবেদক কৌশিক দে জানান, ওই রাতে পরিবারের সদস্যরা অনেকক্ষণ পর্যন্ত গৌরাঙ্গ নন্দীর মোবাইল ফোনে ও কার্যালয়ের টেলিফোনে কল করেও সাড়া পাননি। পরে তারা বিষয়টি তাকে জানান।তখন কয়েকজন সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যুরো কার্যালয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে গৌরাঙ্গকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানান কৌশিক।

গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বঙ্গকমল বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই টেবলেট এর প্রভাবে অজ্ঞান হয়ে যান গৌরাঙ্গ নন্দী। তিন দিন চিকিৎসার পর পুরোপুরি তার জ্ঞান ফিরেছে। তবে তাকে উদ্ধারে দেরি হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম

একাত্তরে ‘আল্লামা শফী ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীতে’ ,এখন পাকিস্তানের দোসরদের রক্ষার ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন :সম্মিলিত ইসলামী জোট



“হেফাজতের নেতা আহমদ শফী একাত্তরে পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকারদের সব কাজে সহযোগিতা করেন।”
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী প্রসঙ্গে এ দাবি করলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চবিরোধী হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীকে ‘রক্ষার’ অভিযোগ আসার পর একাত্তরে সংগঠনটির আমিরের ভূমিকা তুলে আনলেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একাত্তরে যখন পাকিস্তানি সেনা আর তাদের দোসররা এ দেশে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছিল, তখন হেফাজতের নেতারা কোথায় ছিলেন?

আহমদ শফী এখন পাকিস্তানের দোসরদের রক্ষার ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন বলেও দাবি করেন জিয়াউল। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের ‘নাস্তিক’ অাখ্যায়িত করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সম্প্রতি সোচ্চার হয় হেফাজতে ইসলাম। গণজাগরণ মঞ্চের চট্টগ্রামে সমাবেশেও বাধা দেয় তারা।

চট্টগ্রামে হেফাজতের সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, “জামায়াত নেতা গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান এবং বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী ও আব্দুল আলিম গংরা মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল।

“ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা যে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই মুসলমান ছিল।”একাত্তরের ওই গণহত্যাকারীরা বাঙালি জাতির ও ইসলামের 'চিরদুশমন' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পবিত্র কুরআনে গণহত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের নামায-রোজা যেভাবে ফরজ করে দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই দলমত নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের বিচার করাও পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।”

‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করায় সরকারকে সাধুবাদ জানালেও যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উস্কানি ছড়াচ্ছে তাদের ‍বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের নেতা।

তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরের ব্লগ ও ব্লগাররা এখনো বহাল তবিয়তে আছে, যদিও এরাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে অন্যের নামে ভুয়া একাউন্ট খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

“পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফের অপব্যবহার করে সাঈদীর মুক্তির ভুয়া মানববন্ধনের ছবি কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেও কাবা শরীফের অবমাননার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি।”

ধর্ম রক্ষার নামে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচি ইসলাম ও কোরআনের বিরোধী বলে মন্তব্য করেন এই মাওলানা।

তিনি বলেন, “তারা মাওসেতুংয়ের মতাদর্শের লংমার্চের ধারক ও বাহক। পবিত্র কোরআন ও ইসলামকে আল্লাহ নিজেই হেফাযত করার ঘোষণা দিয়ে ১৫ নং সূরা হিজরের ৯নং আয়াতে চিরস্থায়ীভাবে ‍বিধান দিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ইন্না নাহনু নাযযালনাজ যিকরা ওয়া ইন্না লাহু লা-হা-ফিজুন, অর্থাৎ ‘আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক’।”

সেখানে আল্লাহর দায়িত্ব পালনের কথা শয়তান ছাড়া কেউ বলতে পারে না, মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সহসভাপতি মুফতি জোবায়েদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ টি এম বাহাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা হাফেজ মাওলানা নুরুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Wednesday, April 3, 2013

জামাত শিবির বনাম মুক্তচিন্তা একটি ক্ষুদ্র বিশ্লেষন: বনলতা সেন


প্রজন্ম ব্লগ, রাজনীতি, সাম্প্রতিক ;ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১৩

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার অনিবার্য ফল হচ্ছে জামাতে শিবিরের উথ্থান। ১৯৭৬ সালে তাদের ধর্মভিত্তক রাজনীতি নিষিদ্ধের অধ্যাদেশ বাতিলে পর যে জামাত তাদের একাত্তর পুর্ববর্তী রাজনীতে ফিরে যায়(বিশেষ অধ্যাদেশ ০৪ মে ১৯৭৬ এবং বাংলাদেশ সংবিধান, ৫ম সংশোধনী, ২২ এপ্রিল ১৯৭৭)।
এ লক্ষ্যে জামাত এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের কতিপয় নেতা ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে ঢাকায় সমবেত হয়ে পরিবর্তিত নাম ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’ ধারণ করে নতুনভাবে কর্মকাণ্ড শুরু করে।
তাদের কর্মকান্ড হয়তো নতুন করে শুরু করেছিল কিন্তু কৌশল ছিল একই। একাত্তরে বুদ্ধিজীবি হত্যায় পাকিস্তানের জেনারেল রাও ফরমান আলী, হামিদ গুল(পরবর্তীতে আইএসআই প্রধান) জামাতের নিজামী, মুজাহিদ, পাক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার কাশেম এবং ক্যাপ্টেন কাইয়ুম ছিল প্রধান। নভেম্বর মাসের কোন এক সময় তারা মওলানা আব্দুল মান্নানের বাসায় বৈঠক করে। এই আলোচনাতেই বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করা হয় বলে ধারণা করা হয়। তারা ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যার মিশন সম্পন্ন করে। কিন্তু পচাত্তর পরবর্তীতে রাজনীতিতে পুর্ণবাসিত হয়ে তারা যে আর কোন “হিট লিস্ট” করেনি সেটা কি ভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি?
জামাত বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ছিল সবসময়েই এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভুমিকা নিয়েও নতুন করে বলার কিছু নেই। পচাত্তর পরবর্তীতে তারা সংগঠিত হতে বেশী সময় নেয় নি যেহেতু তাদের পিছনে ছিল তাদের একাত্তরের দেশী বিদেশী পালনকর্তারা।
সংগঠিত হওয়ার পরে জামাতে অনেক গভীর এবং সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। শিবিরের মাধ্যমে তারা ছাত্র ও যুব সমাজে প্রবেশ করে। আশির দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে আফগানিস্তানের পক্ষে শিবিরের সদস্যসহ অনেক বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করে। এরা কিন্তু আইএসআই এবং আফগান তালেবানদের অধীনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়। এরা প্রায় সবাই পরে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এই যুদ্ধফেররা পরে বাংলাদেশে আইএসআই এর এজেন্টহিসেবে যে কাজ করেনি সেটা কিভাবে নিশ্চিত হবো? শুধু আইএসআই? লস্কর-ই-তৈয়বার এজেন্ট হিসেবেও কাজ শুরু করে। আর এভাবেই আশির দশকের পর জামাত সহ মৌলবাদী সংগঠন এবং তালেবানপন্থীরা সংগঠিত হয়ে এদেশে ধর্মীয় রাজনীতির আড়ালে জঙ্গি সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। এদের টার্গেট ছিল বাংলাদেশকে মৌলবাদী এবং তালেবান রাস্ট্রে পরিনত করা। সব রসুনের গোড়া এক আর সব মৌলবাদী আর তালবান পন্থী সংগঠনের গোড়াও জামায়াত এটাতে কোন ভুল নেই।
তাদের বিপক্ষে যারাই কথা বলতে গিয়েছে তাদেরই তারা লক্ষ্য বানিয়েছে। হয়তো আগের বৈরী সরকার এবং মিডিয়ার কারণে তা আমাদের সম্মুখে আসে নাই। কিন্তু মিডিয়া অবাধ হবার পরে আমরা দেখেছি কিভাবে তাদের বিপক্ষে যারাই আওয়াজ তুলেছে তাদের কিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, সাংবাদিক মানিক সাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা জিহাদ সহ আরো অনেক সাংবাদিক, ছাত্রসেতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে মুরতাদ ঘোষনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগষ্ট ছিল তাদের মরণ কামড়। সর্বশেষ ব্লগার রাজীব হত্যার সকল সন্দেহের তীর জামাতের দিকেই। এবং ১৭ জন ব্লগারের হিট লিস্ট সেই আলামতই বহন করে। তাদের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদী কণ্ঠ তুলেছে তাদের হিট লিস্ট করে হত্যা সেই একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের অসমাপ্ত কাজেরই ধারাবাহিক বর্হিপ্রকাশ।
আর বিভিন্ন সময় মুক্তমনা বুদ্ধিজীবিদের উপর তো হামলা হয়েছেই সাথে করা হয়েছে বিভিন্ন অপপ্রচার। অধ্যাপক জাফর ইকবাল, আহমেদ শরীফ সহ অনেক প্রাজ্ঞজনকে মুরতাদ ঘোষনা করা হয়েছে।
হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। “পাকসার জমিন সাদ বাদ” লিখার পরেই একুশের মাসে তার উপর হামলা করা হয়েছিল।
এছাড়া ২০০০ সালে চট্টগ্রামের এইট মার্ডার, অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী সহ আরো অনেকেই তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। একাত্তরে তাদের টার্গেট যেমন ছিল মুক্তমনা এবং বুদ্ধিজীবিরা তেমন আজকেও সেটা অপরিবর্তনীয় রয়েছে। একাত্তরে তাদের কাছে সকল দেশবাসী ছিল হিন্দু। এই মুহুর্তে তাদের সকল ক্ষোভ ব্লগারদের উপর। ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তারা তাদের পুরোনো মিশন শুরু করেছে।
এই নাস্তিক আর মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যাকান্ড ধারাবাহিকতা হয়তো বাংলাদেশে থাকতে না কিন্তু এটা থেকেছে বিভিন্ন কারণে। এবং জামাত তাদের অপরাজনীতি চালিযে গেছে।
বাংলাদেশে একসময় এমন অবস্থাও ছিল যখন তাদের নাম পর্যন্ত কেউ উচ্চারন করতে ভয় পেত। কিন্তু সময় সবসময় এক রকম থাকে না। এই মুহুর্তে জামাত নিষিদ্ধের জোরালো দাবীতে ফুসে উঠেছে পুরো দেশ। আর জামাত আবির্ভূত হয়েছে তাদর আসল রুপে। পতাকা পুড়ানো থেকে শুরু করে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ। তারে পেছনে এই মুহুর্তে তাদের পরীক্ষিত বন্ধুরা রয়েছে। যারা তাদর সকল কর্মকান্ডে নৈতিক সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে সকল প্রকার সহায়তা জারি রেখেছে। বহুদিন পর দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই রকম পরীক্ষা এর আগে শুধু একাত্তরেই দিয়েছে।
তাই এই মুহুর্তে জামাত শিবিরের রাজনীতি এবং সকল প্রকার কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতেই হবে।