Thursday, April 4, 2013

সাকা -মীরকাশেম পরিবারের বিপুল বিনিয়োগ: নেপথ্যে জামাত।। ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত


হেফাজতী ইসলামের লংমার্চঃ নেপথ্যের এক ভয়াবহ কাহিনী



ভূমিকাঃ  আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে কথিত আল্লামা শফি’র নেতৃত্বে একটি লং মার্চ ঢাকা অভিমুখে আসছে এই শনিবার ৬-ই এপ্রিল ২০১৩, প্রিয় পাঠকেরা আজকে আপনাদের বলব এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কাহিনী। যা শিউরে উঠার মতো। অন্ধকারের এই শক্তির প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করা হলো।


[অনৈতিক কাজের জন্য লন্ডন শাখার হেফাজতী ইসলামী সংগঠক হামিদী শাহবাগ থেকে গ্রেফতার]

আসলে হেফাজতী ইসলাম যে এই আন্দোলন করবে শুরুতে তার কথা ছিলো না । জামাতের ইমেজ সারা বাংলাদেশে খারাপ থাকায় জামাত হন্যে হয়ে একটা চ্যানেল খুজঁছিলো যাতে অন্য কোনোভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যায় কিনা, দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে। এইসময় লন্ডন হেফাজতী নেতা হামিদীর গ্রেফতার ঘটনা যেন জামাতের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে।জামাতের ভাগ্য ভালোই বলতে হয়।
শাহবাগ আন্দোলনের সময় শাহবাগে ২২ শে ফেব্রুয়ারী শেখ নূরে আলম হামিদী নামক একজন বৃটিশ নাগরিক শাহবাগে এসেছিলেন তার হ্যান্ডি ক্যামেরা নিয়ে । সে সময় হামিদী সেখানকার তরুনদের সিগারেট খাওয়া, পথে বসে জাগ্রত নারীদের গান গাওয়া সহ বিশেষ উদ্দ্যেশ্যমূলক কিছু ভিডিও রেকর্ড করছিলেন। ঠিক সে সময় সেখানে অবস্থানরত তরুনদের সন্দেহ হয় এবং তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে এখানে কি করছে তখন হামিদী ঠিক ঠাক কিছু বলতে পারেনি।
পরে তার সাথে থাকা ক্যামেরা, ভিডিও ডিভাইস ঘেঁটে দেখা যায় হামিদী সেখানে মেয়েদের শরীরের নানা স্থান দূর থেকে ভিডিও করেছেন এবং ক্যামেরাতেও নানান ছবি তুলেছেন। যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি ছেলে সিগারেট খাচ্ছে, একটি মেয়ে স্লোগান দিতে গিয়ে তার ওড়না পড়ে গেছে কিংবা একটি মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বান্ধবীর কাঁধে। ঠিক সে সময়ে ক্লান্ত ঐ বোনের অসতর্ক মুহুর্তে তার শরীরের নানান স্থানের ছবি তুলে হামিদী এগুলো দিয়ে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাতে চেয়েছিলো।


কে এই শেখ নূরে আলম হামিদীঃ

এই হামিদী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামীলীগ আমলে এই হামিদীর নামে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে এলার্ট জারি হয় এবং পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। ১৯৯৯ সালে এই ব্যাক্তি পালিয়ে প্রথমে ভারত তারপর সেখান থেকে তার আরেক ভাইয়ের সাহায্যে যুক্তরাজ্যে যায়।
হামিদীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তার বাবা শেখ খলিলুর রহমান হামিদী বরুনার পীর। হামিদী বরুনা মাদ্রাসায় একসময় শিক্ষকতা করত। হামিদী লন্ডনে মূলত হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছিলো। তাদের এই মাদ্রাসা পূর্ব লন্ডনের প্লাস্টোতে অবস্থিত। এই হেফাজতী ইসলাম লন্ডনে তাদের নাম ধারন করে আঞ্জুমানে হেফাজতী ইসলাম। প্রতি বছর লন্ডনে পহেলা এপ্রিলের মেলাতে এই হেফাজতী ইস্লামের কর্মীরা লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফ্লেট দিত যাতে মানুষ মেলায় না যায়। এটা নাকি ইসলাম বিরোধী কাজ। হেফাজতে ইসলামের অধীনে যত মাদ্রাসা আছে সেগুলোর জন্য এই হামিদী প্রতি বছর রমজানে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বা উৎসবের আগে টিভিতে, রেডিওতে এবং লন্ডনের বিভিন্ন সোর্স থেকে পাউন্ড সংগ্রহ করত।

শাহবাগের তরুনেরা হামিদীকে তার এইসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড সহ হাতে নাতে ধরে গণপিটুনী দেবার চেষ্টা করলে সেখানকার কিছু তরুন তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং হামিদীর কাছ থেকে উদ্ধার করে মহামূল্যবান কিছু ডকুমেন্টস। এইদিকে হামিদীও স্বীকার করে অনেক কিছু। আর এইসব কারনেই হেফাজতী ইসলাম নামে জঙ্গী দলটি ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে প্রতিশোধের নেশায়।



[উপরের ছবিতে জঙ্গী নূরে আলম হামিদীকে দেখা যাচ্ছে]

ডেটলাইন ২৮ শে ফেব্রুয়ারীঃ

সাঈদীর রায় শুনবার পর থেকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার বার বার চেষ্টা চালাতে থাকে বি এন পি’র হাই কমান্ডের মাধ্যমে বড়ো কোন ঘটনা ঘটানোর। এম কে আনোয়ার, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে তারা। বি এন পি’র হাই কমান্ড অনেক আগে থেকেই সাকার উপর নাখোশ। এইদিকে সাদেক হোসেন খোকার একটা গ্রুপ সাকার ব্যাপার বি এন পি 'র হাই কমান্ডকে পুরোপুরি অফ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান সাফ জানিয়ে দিয়েছে সাকার ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে। সব কিছু মিলিয়ে সাকার ছেলে ফাইয়াজ এবং হুম্মাম প্রাণপণে বি এন পি’র হাই কমান্ডে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো খালেদা যাতে একটাবারের জন্য হলেও সাকা'র নাম উল্লেখ করে বিবৃতি দেন।
হুম্মাম শুধু তদবির করার জন্য এম কে আনোয়ারকে ৪৫ লাখ টাকা দেয়। তবে আলতাফ হোসেন এইজন্য কোনো টাকা নেন নি। এরা দুইজন মিলে যখন খালেদার সাথে দেখা করতে যান, তখন এই বিষয়ে খালেদা শুধু শুনে গিয়েছিলেন। দুই নেতা উঠে আসবার সময় খালেদা আলতাফের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, "সালাউদ্দিনকে একটু ঠাট কমাতে বলেন। এইভাবে বি এন পিতে তার জায়গা হবে না।" সাকার পরিবার এ খবর শুনে বুঝতে পারে বিপদের সময় বি এন পি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের দেখা করতে চাইলে হাসিনা সরাসরি বলে দেন, সাকার পরিবারের কেউ যেন তার আশে পাশে কোনোভাবেই না আসে ।




মার্চের প্রথম সপ্তাহঃ

এমন একটা অবস্থায় সাকার অত্যন্ত কাছের লোক মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী সাকার বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদেরের কাছে একটা প্রস্তাব আনে যে হেফাজতী ইসলামের এক নেতাকে সরকার আর শাহবাগের জনতারা খুব অপদস্থ করেছে, এখন সে জেলে। তার ব্যাপারে সাকা যদি হেল্প করতে পারে তাহলে তারা বসতে পারে। সেই সাথে আব্দুর রহমান আরো জানায় যে, হেফাজতী ইসলামী একটা বড়ো সড়ো আন্দোলনে যেতে চায়। এই পুরো আন্দোলোনের জন্য অনেক টাকার দরকার। সাকার ছেলে ফাইয়াজ আবদুর রহমান চৌধুরীকে সরাসরি কথা দেয় না। সে বলে তারা বাবার সাথে কথা বলে তাকে জানাবে।
হেফাজতী ইসলামের প্রধান আল্লামা শফি অনেক আগে থেকেই সাকার কৃপায় চট্রগ্রামে টিকে থাকা লোক। এখন সাকার বিপদে সাকাকে এমন প্রস্তাব করায় তেলে বেগুনে তেঁতে ওঠে সাকার স্ত্রী ফারহাত। তারপরও'' পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে নেই দেখে পিপড়াও লাথি দেয়'', এই বাস্তবতা বুঝে চুপ থাকেন তিনি। সাকাকে এই প্রস্তাব জানানো হলে সাকা তার ছোট ছেলে হুম্মামকে এই ব্যাপারে ইনভলভ্ড হতে বলে এবং জামায়াতে ইসলামীর একটা স্ট্রং লিঙ্ক এখানে কাজে লাগাতে বলে। কারাগারের ভেতরে বসে এই প্রস্তাব শুনে সাকার প্রথম কথা ছিলো “সোদানির পুতেরা তাইলে এখন প্রস্তাব নিয়া আসছে?”



ফাইয়াজ আর হুম্মাম জামাতের সেলিম, রফিকুল,শিবিরের নেতা দেলোয়ার, হেফাজতের মাওলানা রুহী, জুনায়েদ আল হাবিবি এবং আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে একটা গোপন বৈঠকে বসে রাঙ্গুনিয়ার পেনিনসুলা হোটেলে। এই সময় হুম্মাম জামাত শিবিরের তিন নেতা এবং হেফাজতের মাওলানা রুহীকে ও জুনায়েদকে 'আই ফোন- ৫ ' গিফট করে। এই বৈঠকে আসার আগে ফাইয়াজ তারা চাচা গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে শেখ হেলালের সাথে বৈঠক করে নেয়।


যদিও দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃবিরোধের জেরে গিকার সাথে সাকার পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। তবু গিকা এই ব্যাপারে আগের তিক্ততার কথা ভুলে থাকে। কারণ ,গিকার নামেও এখন যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত চলছে। এইদিকে মীর কাশিমের ছেলে আরমানের সাথেও হুম্মামের একটা টেলিকনফারেন্স হয় এবং আরমান পুরো নিশ্চিত করে যে, সে সাকার পরিবারের যে কোনো সিদ্ধান্তের সাথে আছে। সাকার স্ত্রী যোগাযোগ করে তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে ।মহিউদ্দিন সরাসরি কিছু না বললেও তাদের পুরা পরিবারের সাথে আছে বলে জানায় এবং চিন্তা করতে মানা করে। সব কিছু নিশ্চিত করার পর হুম্মাম এবং ফাইয়াজের সাথে জামাত-শিবিরের ওই তিন নেতা, হেফাজত ইসলামীর মাওলানা রুহী এবং সাকার নিকটাত্নীয় মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে মিটিং হয়। মিটিং চলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টার মতো এবং সেখানেই মূলত পরিকল্পনা করা হয় যে, এখন সামনে থেকে সবকিছু করবে হেফাজতী ইসলামী। পেছনে সাপোর্ট দিবে সাকা-গিকার পরিবার, মীর কাশিমের পরিবার এবং জামাত। বি এন পি’কে বোঝানোর দায়িত্ব থাকে আলতাফ হোসেন চৌধুরী আর মীর নাছিরের উপর। মজার ব্যাপার হলো, এই বৈঠকের শেষে মাওলানা রুহী আলাদা ভাবে হুম্মামের কাছে জরুরী ভিত্তিতে ৭ লাখ টাকা ধার চায়। হুম্মাম পরের দিন মাওলানা রুহীকে সাত লাখ টাকা দেয় এবং এই টাকা দিতে যায় নুরুল আমীন নামে হুম্মামের এক কাছের লোক।


কি করতে চায় সাকা এবং আল্লামা শফি?


এই লং মার্চের একটা বড় প্ল্যান ছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বি এন পি’র সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীমকে হত্যা করা। এতে করে দেশে একটা ভয়াবহ বিশৃংখলা তৈরী হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায় দুইজন কয়েদীকে খুন করে পাগলা ঘন্টি বাজানোর পরিকল্পনাও আছে।
এখানে পরিকল্পনা করা হয় কওমী মাদ্রাসার প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হবে। দায়ী করা হবে আওয়ামীলীগ আর বাম দলকে। ঢাকাতে তারা অতর্কিতে হামলা করবে গণ জাগরণ মঞ্চে এবং সেইখানেও তারা হামলা করে কমপক্ষে ৫ জনকে হত্যা করবে। এই দায়িত্বটা নেয় শিবিরের দেলোয়ার। একই সাথে হিজবুত তাহরীর এর একটা বড় অংশকেও সাকার পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে তাদের কার্যক্রম চালাবার জন্য। এই টাকার লেনদেন হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের এক বাড়িতে। হিজবুত তাহরীর প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আত্নঘাতী বোমা হামলায় খুন করবার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো। এই লং মার্চেও এরকম প্রস্তাব আসে। সাকার পরিবার এবং বি এন পি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক'এখনো সময় হয়নি' বলে এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। উলটা তারা ভয় পেয়েছে যে হিজবুত তাহরীর এই লং মার্চে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে আর পুরো লং মার্চের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। হিজবুতীরা যাতে এই ধরনের সহিংস কিছু না করে এই জন্য দফায় দফায় বৈঠক হয় তাজমহল রোডের ওই বাড়িতে। এদের একটা বৈঠক হয় সাকার মেয়ে ফারজিনের গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে।

সাকার মেয়ে ফারজিন তার গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে




[মাওলানা রুহী]

আমার দেশ কার্যালয়ে বৈঠকঃ

[হেফাজতীদের সাথে মাহমুদূর রহমান]
দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে সব সময় পুলিশের নজরদারী থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায়। এই বৈঠকই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতি নির্ধারক বৈঠক। এই বৈঠকে ফরহাদ মজাহার, শওকত মাহমুদ, শিবিরের দেলোয়ার, সাকার ছেলে হুম্মাম, মাওলানা রুহী,আল্লামা সুলতান যওক নদভী,ইনামুল হক কাসেমী, মুফতহি ইজাহারিল হকের ছেলে মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী ( মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের দায়ে গ্রেফতার এবং জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত), মীর কাশেমের ছেলে আরমান এবং আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় অনেক কিছু। এখানে টাকা পয়সা থেকে শুরু করে কিভাবে লং মার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। মীর কাশেম, জামাত এবং সাকার পরিবার মিলে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা খসড়া বাজেট ব্যবস্থা করবে বলে বলা হয় । টাকাটা মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে বলে ঘোষনা দিলে বৈঠকে মাওলানা রুহী এবং হারুন ইজহার বলে এই টাকা সরাসরি যারা যারা আন্দোলন করবে সেইসব দলের নেতাদের আলাদা আলাদা দিতে হবে। মাওলানা রুহী হেফাজতী ইসলামের জন্য একাই ৪৫ কোটি টাকা দাবী করে বসে। এই সময় শওকত মাহমুদ মাওলানা রুহীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে মাওলানা রুহীও পালটা পালটি তর্ক করতে থাকে। এক সময় শওকত মাহমুদ ওই মিটিং ছেড়ে সব হুজুরদের চলে যেতে বললে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ফরহাদ মজাহার, আল্লামা নদভী এবং হুম্মাম মিলে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। মাহমুদুর রহমান এ সময় চুপচাপ ছিলেন। মাহমুদুর রহমান মাওলানা রুহীকে বলেন." আমরা দুইবার আপনাদের বিজ্ঞাপন প্রথম পাতায় দিয়েছি সম্পূর্ন ফ্রি, প্রতিদিন আপনাদের খবর ছাপাচ্ছি প্রথম পেইজে এইটা ভুলে যাবেন না। " মিটিং শেষ হয় ওইদিন রাত ২ টায়। পরে চাইনিজ খাবার আনা হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। হুম্মাম এবং আরমান না খেয়ে চলে যান তাড়া আছে বলে।

১৫ ই মার্চঃ

সাকার পরিবার থেকে একটা সিদ্ধান্ত হয় যে, যারা যারা আন্দোলন করবে তাদেরকে আলাদা ভাবে দল ভিত্তিক টাকা দেয়া হবে। কারন মাহমুদুর রহমানের অফিসে মিটিং থেকেই তারা বুঝতে পেরেছে যে এই হুজুরেরা টাকা না দিলে নড়বে না। এর মধ্যে মাওলানা রুহী ধারের কথা বলে ৭ লাখ টাকাও নিয়েছে হুম্মামের কাছ থেকে। এই একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মীর কাশেমের পক্ষ থেকেও। এইসময় মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল বার বার বলে 'আমার দেশ' এর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে যাতে কিছু করা না হয়। এই নতুন ঝামেলা নিয়ে আবারো সাকার মেয়ে ফারজিনের ক্যাফেতে বৈঠক হয় হুম্মাম, আরমান, মীর হেলাল এবং হেলালের সাথে আসা এক বন্ধু লিটনের। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাহমুদুর রহমানকে ৩ কোটি, দারুল মা'আরিফ চট্রগ্রামের মহাপরিচালক মাওলানা নদভীকে ২ কোটি, কওমী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে ১ কোটি, পটিয়া মাদ্রাসার মহা পরিচালক আব্দুল হালিম বোখারীকে ৫০ লক্ষ এবং হেফাজতী ইসলামকে দেয়া হবে ৪৫ কোটি টাকা এবং জামাত নিজে খরচ করবে বাকী টাকার অংশ তাদের নিজেদের ফান্ড থেকে। সিদ্ধান্ত হয় যে এই পুরা লং মার্চের সব দায় দায়িত্ব থাকবে হেফাজতী ইসলামের কাছে এবং চট্টগ্রাম থেকে পুরো ব্যাক আপ দেবে জামাত-শিবির আর বি এন পি’র সাকা গ্রুপ।

টাকা নিয়ে গ্যাঞ্জাম এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোঃ


কওমী শিক্ষা বোর্ডের মুফতি কাশেমী এই অর্থ নিতে রাজী হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন বর্ষীয়ান মুফতি আব্দুর রহমান। তিনি বুঝতে পারেন এখানে হেফাজতীদের অনেক টাকা দেয়া হচ্ছে সেই তুলনায় তাদেরকে অনেকটা ভিক্ষার মত স্বল্প টাকা দেয়া হচ্ছে। একই ব্যাপার বাকীদের সাথেও হয় এবং এদের সবার সাথে একটা বৈঠক হয় মার্চের ২০ তারিখে সাকার ধানমন্ডির বাসায়। এখানে কোনোভাবেই এদের কাউকে বুঝানো যায় না। পরে বৈঠক শেষ হলে হুম্মাম, ফাইয়াজ, মীর হেলাল বুঝতে পারে যে এই হুজুরেরা টাকার কাঙ্গাল এবং এত টাকা যারা জীবনে চোখেও দেখে নাই তারা সরকারী ভয়েই সরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই পুরো অংশটাই এই লং মার্চ থেকে সরে দাঁড়াবার অবস্থা হলে জামাত এই পুরো সিন্ডিকেট কে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় রাজি করায়। মাহমুদুর রহমানের সাথে শেষ পর্যন্ত ৪ কোটি টাকায় রফা হয় পুরো ব্যাপারটাতেই,আর হেফাজতীদের মোট দেয়া হয় ৪৫ কোটি টাকা।



নিজেদের ভেতর অন্তর্দন্দ্ব ও চরম অবিশ্বাস-কলহঃ

এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু কোনো আদর্শিক আন্দোলন নয় এবং এর সাথে সম্পূর্ণ ভাবেই টাকা পয়সা আর নিজের লাভ জনিত কারন জড়িত। সেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই পুরো গোষ্ঠীর বিভিন্ন মতাদর্শের দলের ভেতর শুরু হয় কোন্দল। সেটাও টাকা নিয়ে। হেফাজতী ইসলাম একসাথে এত টাকা পাবে এইটা কোনোভাবে মানতে পারছে না অন্যান্য দলে গুলো। এবং সে কারনেই কয়েকটা দল আস্তে আস্তে বিভক্ত হয়ে পড়লো। হেফাজতের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি তুলে শেষ মুহূর্তে লংমার্চ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে খবর আসে বিভিন্ন স্থান থেকে। পরে জামাতী ইসলামের মধ্যস্থতায় সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আলেম ফকিহুল মিল্লাত আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান, ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, দারুল মা'আরিফ চট্টগ্রামের মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী মোট ২৫ কোটি টাকায় একটা রফা করে। যার মধ্যে ১০ কোটি টাকাই পাচ্ছে মুফতি আব্দুর রহমান।



এই ঘটনাতে মুফতী কাশেমী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কারন এই ডিল করার সময় তাকে জানানো হয় নাই এবং টাকার ব্যাপারেও তাকে কিছু বলা হয়নি। সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দ্রীয় নেতা ও মুফতি আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠভাজন মুফতি ইনামুল হক কাসেমী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলাদা দল নিয়ে লং মার্চের ঘোষনা দিলে হুম্মাম এবং জামাতের রফিকের মাধ্যমে আবার একটা সুরাহা হয়। কাশেমীকে দেয়া হয় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাশেমি প্রথমে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসায় কঠোর নির্দেশ জারি করেছিলো কেউ যাতে লং মার্চে না যায়, কোনো ছাত্র-শিক্ষক হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। এমনকি বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যাতে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোতে না পারেন। পরে কাশেমী ও আব্দুর রহমানের ভেতর একটা রফা হয় যে,তারা এক সাথে মিলে মিশে কাজ করবে।

এদিকে গত ২৯ মার্চ শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশে চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করলেও তাতে তাঁর দল ও মুরিদরা অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক বারিধারা মাদানিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কাসেমী সাহেবের সাক্ষাৎ-রহস্য এবং বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হেফাজতের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে হিসাব-নিকাশ শেষে চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত লংমার্চে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা এই লংমার্চে দেওয়া সমর্থন বহাল রাখলেও লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও তার সিদ্ধান্তের কথা জানান যে তারা আর এই আন্দোলনে নেই।

কিভাবে অর্থ দেয়া হলোঃ

এখানে উল্লেখ্য যে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা মোটামুটি খসড়া বাজেট করা হয়েছিলো শুরুতেই। এত টাকার বাজেটের মধ্যে যে টাকা জামাত নিজে খরচ করবে তার পরিমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জামাত অবশ্য তাদের এই টাকা শুধু নিজেদের দলের জন্য নয় বরং মুফতি আব্দুর রহমান, কাশেমী এদের খাতে ব্যয় করবে বলে ঠিক হয়। এর মধ্যে ৪৫ কোটি পাচ্ছে হেফাজতী ইসলামী এবং ৪ কোটি পাচ্ছে মাহমুদুর রহমান। বাকী বাজেটের মধ্যে মধ্যে ১০ কোটি পায় মুফতি আব্দুর রহমান, ১ কোটি ৭০ পায় মুফতী কাশেমী, কিছু টাকা টাকা হুম্মাম ডিস্ট্রিবিউট করে বাবু নগর, হাটজাহাজারি সহ আরো কিছু মাদ্রাসায় ও এতিম খানায় এবং সেখানে কওমী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের নিষেধ মেনেও যাতে তারা লং মার্চে শরিক হয় এই চেষ্টা চলতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো মহাপরিচালক আব্দুর রহমানের অগোচরে আরো কিছু টাকা দেয়া হয় ইনামুল হক কাশেমিকে তাদের দফার বাইরে । যাতে করে সে গহিরা, হাটহাজারি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান সহ অনান্য এলাকায় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে শনিবার ব্যাপক নৈরাজ্য করতে পারে । এই টাকার পরিমান নিয়ে দুই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটা সূত্র থেকে বলছে ৮০ লক্ষ, আরেকটা সূত্র থেকে বলছে ১ কোটি। এই টাকা দেয়া হয় বাবুল চৌধুরী নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের পাশের এক রেস্তোরায়।

হেফাজতী ইসলাম সহ সকল শরীকরা কিভাবে লং মার্চ নিয়ে এগোবে:



এইখানে লং মার্চের দুইটা প্ল্যান আছে। প্ল্যান ১ আর ২।
এই দুইটা প্ল্যান পুরো সাজিয়েছে জামাত নেতা রফিক ও সেলিম। ষড়যন্ত্রকারীরা জানে যে সরকার এই মার্চে বাধা দিতে পারে বলে শুরু থেকেই তারা চেয়েছে তাদের নেতা মূল ব্যক্তি আল্লামা শফিকে তারা ঢাকায় নিয়ে আসবে এবং এখানে একটা জমায়েত তারা বৃহস্পতিবার [মার্চ-৪] থেকেই করবে। যদি কোন কারনে আল্লামা শফিকে চট্রগ্রাম থেকে না আসতে দেয় তাহলে তারা ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল ঢাকার একটা অংশে তান্ডব চালাবে।
পরিকল্পনা মতে, জামাতের লোকেরাই জামাতের কিছু তরুন নেতাদের খুন করবে, কিছু মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেবে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আবদুল আলীম কে হিট করবার জন্য তারা এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্নাইপার এনেছে। এই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিতে পারলেই জামাত দেখাতে পারবে যে এই ট্রাইবুনালে আটক যারা তারা নিরাপদ নয় এবং এই বিচারপ্রক্রিয়া প্রহসন। চট্রগ্রামে প্রাথমিক ভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে আব্দুর রহমান চৌধুরী এবং এম এ হাসেম খান। এরা দুইজনই সাকার অত্যন্ত কাছের লোক এবং পুরা ব্যাপারটা এরা শুরু থেকেই তদারকি করছে নিভৃতে। হেফাজতী ইসলাম সহ সব দল বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৫৬ টি টিম বানিয়েছে। এরা বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানা থেকে লং মার্চের সাথে যোগ দেবে। মূলত এই দলটি ঢাকাতে ঢোকার সাথে সাথেই এদের মধ্যে ১৫ টি ইউনিট শুরু করবে তান্ডব। খুলনাতে একটা গ্রুপ নাস্তিক সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিবে এবং এই ঘটনার জের ধরে হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর হবে। এসবের জের ধরে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে একদল হানা দিয়ে পুরো কারাগারে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে দিবে। একাত্তর টিভি, প্রথম আলো কার্যালয় সহ অন্যান্য ভবনে এদের একটা ইউনিট আক্রমন করার পরিকল্পনা ও করা হয়।

মূলত কি উদ্দেশ্যে এই লং মার্চ?

প্রাথমিক ভাবে নূরে আলম হামিদীর অনৈতিক কার্যকলাপের জের ধরে যদিও হেফাজতী ইসলাম এই ব্যাপারটিকে তাদের উপর আক্রমণ হিসেবে নিয়েছে মনে হচ্ছে, পরবর্তীতে এই তথাকথিত ইসলামী দলটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করে।জামাত ও সাকার পরিবার পুরো ব্যাপারটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কৌশল হিসেবেই শুধুমাত্র বিপুল অংকের টাকার জোরে সব কিছু কিনে নেয়। অতি সংক্ষেপে এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলনই বলা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়।

No comments:

Post a Comment