Saturday, March 14, 2020

সাংবাদিক অারিফের মুক্তি চাই- কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানার শাস্তি চাই - সুমি খান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশে জনবান্ধব, মানবিক, দেশপ্রেমিক এবং নারীবান্ধব রাষ্ট্রনায়ক অার কখনো অাসে নি কেউ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই নারীর ক্ষমতায়নে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন। এদেশে নারীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদ পাচ্ছেন - অনেকেই মানতে পারেন নি।দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাই তিনি স্রোতের বিপরীতে প্রভূত কাজ করে গেছেন, এখনো করছেন। এই প্রজন্মের অনেক নারী তাদের গ্রামে প্রথম শিক্ষিত নারী। জেলা প্রশাসক বা ডিসি যে কোন জেলার জন্য ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতার অসদ্ব্যবহার যারা করছেন,তার সংখ্যা প্রচুর। কিন্তু সীমাহীন অসততা অার ক্ষমতার অপব্যবহার যে কারো পতন ডেকে অানে। নারীও তার উর্ধে নয়,সেটা হয়তো ভুলে গেছেন কুড়িগ্রামের ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীন। ৪০ বছরের প্রাচীন পুকুর সংস্কার কাজ শুরু করেই নিজের নামে নামকরণ করলেন!
এ ধরণের যারা ক্ষমতায়ন বা পদ্য়নের সুযোগ পেয়ে তার অপব্যবহার করছেন,তাদের চরম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।অামলা বলে নিশ্চয়ই তারা অাইনের অপব্যবহার করতে পারেন না;তারা নিজেরা ও নিশ্চয়ই কোনভাবেই অাইনের উর্ধে নন!-একের পর এক অন্যায় করে যাবেন, সংবাদকর্মীরা তাদের দায়িত্বপালন করবেন না? দায়িত্ব পালন করলেই তাকে একের পর এক হুমকি দিতে হবে? সন্ত্রাসী অার জেলা প্রশাসকের মধ্যে তফাত থাকলো কোথায়?
পুলিশ, অামলা বা কোন সরকারী কর্মকর্তা কর্মসূত্রে কোন পদে থাকলে, তার নামে পার্ক, পুকুর করতে হবে? ধিক্কার জানাই এ ধরণের নিন্দনীয় অাত্মপ্রচারকারী জেলাপ্রশাসক বা অামলাদের।এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরণের গর্হিত কাজ থামানো যাবে না। তারামণ বিবি বা অগ্নিযুগের কোন বিপ্লবী বা দেশের সমাজের কৃতি ব্যক্তিদের নামে করা হোক সেই সরোবরের নামকরণ।
পুকুরের নাম নিজের নামে করা যায়, সেই খবর ছাপানোর অপরাধে'(?) মধ্য রাতে সাংবাদিককে মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ড্রাগের মিথ্যা মামলা সাজিয়ে মোবাইল কোর্টে এক বছরের জেল দেয়া হলো কেন?
সাংবাদিক আরিফের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন কি 'অপরাধ'? সাংবাদিক অারিফ, তার স্ত্রী এবং শিশু সন্তান দের যে মানসিক চাপ তৈরি করা হলো,তার দায় ডিসি সুলতানা এবং তার ঠ্যাঙারে বাহিনীকে নিতে হবে।তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কুড়িগ্রাম শহরে সরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের অনুদানে পুকুর সংস্কার করে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনের নাম অনুসারে ‘সুলতানা সরোবর’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বইছে সমালোচনার ঝড়। জেলার সচেতন মহলের প্রশ্ন, সরকারি অর্থ ব্যয়ে পুকুর সংস্কার করে জেলা প্রশাসকের নাম কেন দেওয়া হবে?

কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্প থেকে এই পুকুর সংস্কারের জন্য চাল ও সোলার স্ট্রিট লাইট বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. মিজানুর রহমান।

কুড়িগ্রাম শহরের ‘নিউ টাউন পার্ক’ নামে পরিচিত এই পুকুরটি ৪০ বছরের পুরনো। সংবাদে প্রকাশ, ১৯৭৮ সালে কুড়িগ্রাম শহরে এই পুকুর খনন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘নিউ টাউন পার্ক’। পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হতো। পাশাপাশি এর পাড়ে গড়ে ওঠে নার্সারি। সাবেক জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন পুকুরটি সংস্কার করে এর পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন পুকুরটির সংস্কার করেন। পুকুরটি পুনঃখনন করে চারপাশে ওয়াকওয়ে তৈরি করে স্থাপন করা হয় সোলার স্ট্রিট ল্যাম্প।
হঠাৎ ১৪ মে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার ছবিসহ পুকুরের নতুন নাম দেন সুলতানা সরোবর। সেই পোস্ট দেখার পর জেলাজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
মো. মাইদুল ইসলাম মাহিন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘জনগণের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিজের নামে পুকুরের নাম দিয়েছেন, অথচ ডিসি কোয়ার্টারের পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী কছিম উদ্দীনের জমি অধিগ্রহণ করে তাকে ভূমিহীন করা হয়েছে। পুকুরটি কছিম উদ্দীনের নামে বা সৈয়দ শামসুল হকের নামে কিংবা তারামন বিবির নামে হতে পারতো। এতে ডিসির সুনাম বাড়তো।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দশম সংসদের কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার অনুকূলে টিআর কাবিখা’র বরাদ্দ অর্থ থেকে পুকুরটি সংস্কার কাজ করা হয়। এতে প্রায় ১০৪ দশমিক ৫৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২৫টি সোলার স্ট্রিট ল্যাম্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য স্থান থেকে ৩১টি সোলার স্ট্রিট ল্যাম্পের বরাদ্দ কেটে এই পুকুর পাড়ে স্থাপন করা হয়। এছাড়াও জেলার কিছু ব্যক্তি অনুদানও দেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদ দুলাল বোস বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকায় কোনও সংস্কার কাজ করে জেলা প্রশাসক নিজের নামে নামকরণ করতে পারেন না। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে জেলায় এসেছেন।’

রেল, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। জনগণের টাকায় পুকুর সংস্কার হওয়ায় জেলার কোনও কৃতী সন্তানের নামেই এটির নামকরণ করা উচিত।’

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এমন অন্যায় মানতে পারেন নি স্থানীয় তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ।তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদী তরুণেরা।অভিবাদন তাদের।জয় হোক তারুণ্যের! 
ন্যায় বিচার চাই অামরা৷ সাংবাদিক অারিফুল ইসলামের মুক্তি চাই, ডিসি সুলতানা এবং তার ঠ্যাঙাড়ে  বাহিনীর শাস্তি চাই।
sumikhan29bdj@gmail. com