Monday, December 22, 2014

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় মঙ্গলবার

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় জানা যাবে ২৩ ডিসেম্বর,২০১৪, মঙ্গলবার।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, আটক, ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায়ের মতো ১৬টি অভিযোগে অভিযুক্ত মুসলিম লীগের সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার রায় দিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর এই রায় ঘোষণা করবে। এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন-  বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।সাক্ষ্য, জেরা ও দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২০ অগাস্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল।
 মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাঠান। সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং কায়সার বাহিনীর লোকেরা মাধবপুর বাজার এবং কৃষ্ণনগর গ্রামে ১৪ থেকে ১৫ জনকে হত্যা করে। ওইদিন বিকেলেই তিনি বাড়ির পূর্ব-উত্তর দিকের চার গোপাটে তার বাবাসহ আরো তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর পাশের জমি থেকে মাটি আর ইট পাথর এনে বাবার লাশটি তিনি মাটিচাপা দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাবার লাশের হাড়গোড় উঠিয়ে এনে পারিবারিক কবরস্থানে পুনরায় সমাহিত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষ্য গ্রহণে ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
মোহাম্মদ আলী পাঠান আদালতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে মাওলানা আছাদ আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে সিও অফিসের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করি। একই সাথে থানার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওইদিন মাধবপুরের জগদিশপুর উচ্চ বিদ্যালয়েও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আর এ নিয়ে পরদিন কায়সার বাহিনীর লোকদের সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের বাকবিতন্ডা হয়েছিল বলে সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন সাক্ষী। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিলের পর যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল তখন আমরা জানতে পারলাম ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সৈয়দ কায়সার ছিলেন সেই শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য। মৌজপুরে থাকা অবস্থায় ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে খবর পাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও কায়সারের লোকেরা আমার পিতা ওহিদ উদ্দিন পাঠানসহ আরো অনেককে হত্যা করেছে। বাবাকে মেরে ফেলার পর মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে আব্দুল কুদ্দুস মাখন তাকে মাধবপুর থেকে আগরতলার কলেজ টিলায় নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রশিক্ষণের জন্য তাকে হাপানিয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ট্রেনিং শেষে নভেম্বরে ১১নং সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার ১৫-২০ দিন পর ঢাকা থেকে মাধবপুরের বাড়িতে আসেন মোহাম্মদ আলী পাঠান। এলাকায় এসে মানুষের আহাজারি শুনতে পান। তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন কায়সার বাহিনী এবং পাকিস্তানী সেনারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলেও তিনি তার সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন।সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সাক্ষীকে সংক্ষিপ্ত জেরা করেন আসামীর আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার।
সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দমন অভিযান চালাতেন। পরে স্বাধীনতার ঠিক আগে তিনি আত্মগোপন করেন।
 
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর ১৯৭৮ সালে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হন কায়সারসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীএই। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি বিএনপিতে যাগ দেন এবং হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হন।এরশাদের সময়ে তিনি যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। ১৯৮৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন।

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে সৈয়দ কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীসহ ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর থানা এলাকায় যায়। কায়সারের নির্দেশে ইসলামপুর থানার সামনে জনৈক শাহজাহান চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। একইদিনে একই থানাধীন কাজীবাড়ী এলাকায় নায়েব আলী নামে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজনকে নির্যাতন করা হয়। পরে কাজীবাড়ী এলাকার ১৫টি ঘরবাড়ি লুটপাটও অগ্নিসংযোগ করা হয়।এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সৈয়দ মো. কায়সার তার কায়সার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকায় মাধবপুর বাজারের পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারা বাজারে ১৫০টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লুটপাট করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক কামিনী রায়, বিনোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের সম্পত্তি আগুন দিয়ে ধ্বংস করে। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিলহবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর গ্রামে হামলা চালায় সৈয়দ মো. কায়সার, তার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেখানে অন্তত ৫৫টি ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কায়সারের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অহিদ পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে গুলি করে হত্যা করে।এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে আসামি সৈয়দ মো. কায়সার, তার ‘কায়সার বাহিনী’র ১০/১৫ জন সদস্য এবং ৩০/৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে মাধবপুর বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া এলোপাতারি গুলিতে সাত্তার, বরকত আলীসহ ১৫জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। একইসঙ্গে দেড়শ থেকে দুইশ বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয় তারা।
এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের  ২৯ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকায় আব্দুল আজিজ, আব্দুল খালেক, রেজাউল করিম, আব্দুর রহমান এবং বড়বহুলা এলাকার আব্দুল আলী ওরফে গ্যাদা উল্লাহ, লেঞ্জাপাড়া এলাকার মাজত আলী ও তারা মিয়া চৌধুরীকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
সাতজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনার পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পর হবিগঞ্জ সদরের পুরানবাজার পয়েন্টে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি এম মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলা হয়। এছাড়া লস্করপুর রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
দুইজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনায় পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে  সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৭: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৮: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে সাঁওতাল নারী হীরামনিকে ধর্ষণ করে সৈয়দ কায়সারের বাহিনী। সৈয়দ কায়সার এ সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৯: ১৯৭১ সালের ১৫ মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এদিন আকরাম আলী চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) নামে একজনকে জখমও করেন সৈয়দ কায়সার।
নয়জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যার এ ঘটনায় পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে  সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১০: এরপর ১৩ জুন হবিগঞ্জ সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর অ্যান্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকার হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এ সময় শাহ ফিরোজ আলী নামের একজনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সাবু মিয়া নামের আরেকজনকে অপহরণের পর চালানো হয় নির্যাতন।
এ ঘটনায় হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালের ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার ওপর নির্যাতন চলে। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করে তার বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দয়াল গোবিন্দ রায় ওরফে বাদল কর্মকারের বাড়িতে হামলা চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। লুটপাটের পর ওই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, সহযোগিতা ও সরাসরি ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১২: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী অগাস্টের মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার বেলাঘর ও জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে। এক পর্যায়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়।
এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৩: ১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট হবিগঞ্জের নলুয়া চা বাগান থেকে মহিবুল্লাহ, আবদুস শহীদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নরপতিতে আব্দুস শাহীদের বাড়ি ও রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় এবং কালাপুরের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৪: ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকা থেকে সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আব্দুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৫: অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৬: সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবড়িয়ার ভাটপাড়া থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনা, নূরপুর, ফুলপুর, জেঠাগ্রাম, পাঠানিশা, কুলিতুণ্ডা, আন্দ্রাবহ, তিলপাড়া, কমলপুর, গঙ্গানগর, বাঘি, শ্যামপুর, কুয়ারপুর, নোয়াগাঁও, কুণ্ডা, লক্ষীপুর, করগ্রাম গ্রামের ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে কায়সারের বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর  ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ২০(২), ৩(১) এবং ৪(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।