Friday, July 27, 2012

রেমিটেন্স পাঠানো ১৮ প্রবাসীকে সিআইপি সম্মাননা দেয়া হচ্ছে

সরকার প্রবাসীদের সিআইপি (অনাবাসী) সম্মাননা দিতে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম বারের মতো সরকারের এ উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে প্রবাসী মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ১৮ প্রবাসীর নাম নির্বাচন করেছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয় দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৮ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করে। ক্যাটাগরি দুটি হলো- বাংলাদেশি পণ্য আমদানি ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি। প্রথমটি হলো বিদেশে অবস্থান করে দেশের পণ্য নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যারা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি হলো- বিদেশে কাজে অবস্থান করছেন এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো সরকার প্রথম ক্যাটাগরির জন্য নির্ধারণ করেছে ১৩ জন এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে নির্ধারণ করেছে ৫ জন।
প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা পণ্য আমদানি ক্যাটাগরিতে ১৩ জন হলো- বেলায়েত হোসেন, তিনি অবস্থান করছেন সৌদি আরবে; আরব আমিরাতে অবস্থানকারী নুরুল আলম ও মুহাম্মদ আলী; অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত সিনথিয়া রহমান, ইটালিতে কর্মরত জাহাঙ্গীর মো. হোসেন, ইমরান ফরাজী ও মো. ইদ্রিশ আলী; রাশিয়াতে কর্মরত মো. মাহবুবুল আলম; যুক্তরাজ্যে কর্মরত ড. এমজি মৌলা মিয়া ও মোহাম্মদ আ. রহিম; সৌদি আরবে কর্মরত মো. লিয়াকত আলী ও কাজী নুরুল আলম এবং কুয়েতে কমরর্ত প্রবাসী মো. আবদুল্লাহ।
বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে- ওমানে কর্মরত মো. শাহজাহান মিয়া ও মেহেরুন্নেশা আক্তার; আরব আমিরাতে কর্মরত রেজাউল আজিম ও এএইচএম তাজুল এবং রাশিয়াতে কর্মরত মনোয়ারা হোসেন।
মোট ১৮ প্রবাসীর মধ্যে ৩ জন হলেন মহিলা। ১৫ জন পুরুষ। দেশের উন্নয়নে অন্যান্য সব পেশার মতো বিদেশে গমনেও নারীরা পিছিয়ে নেই। দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তারই স্মারক হিসেবে ৩ মহিলাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
এসব প্রবাসীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে দেশে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ও দেশের উন্নয়নে অবদানের দিক বিবেচনা করে। এসব রেমিটেন্স বিভিন্ন সময় দেশে পাঠানোর ফলে সরাসরি বা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের পর এখন নানা দিক পর্যালোচনা চলছে। অন্য কোন ইস্যু না থাকলে এসব ব্যক্তিদেরই চূড়ান্ত করা হবে। এবং রাষ্ট্রীয় সিআইপি (আনাবাসী) সম্মাননা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কৃষির পরই দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখছেন বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা। এসব প্রবাসীর বাংলাদেশের পতাকা খচিত একটি পাসপোর্ট ছাড়া কিছুই দেয়া হয় না। অথচ দেশে প্রতি বছর এ বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছে। এসব টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা ইতিবাচক রাখতে সমর্থ হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসে ১১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন। এ পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন। যা দেশের অর্থনীতির বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। অদক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পকিল্পনা গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়াও শুরু করে। প্রবাসীদের টাকা বৈধ চ্যানেলে আনার জন্য সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো টাকা যাতে কোনভাবে নষ্ট না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, যারা ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যায়। পরিবার-পরিজন ছাড়া হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দেশে টাকা পাঠায়, তারা দেশের সত্যিকারের বীর। তাদের সম্মান দেখানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রবাসীদের এ সম্মাননার মধ্য দিয়ে প্রবাসীরা সম্মানিত বোধ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা বৈধপথে টাকা পাঠাতে অনুপ্রাণিত হবে বলে তারা মনে করেন 

আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল:পরাগ ধর

'৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষী পরাগ ধরের (৪৮) জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালে সাকা বলেন, আমি আমার বাবার প্রতিনিধিত্ব করছি। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালের এক কথা প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন দেখেনতো তিনি ডকে আছেন কিনা_ সাক্ষীকে উদ্দেশ করে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন প্রশ্ন করলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী তো তার জবানবন্দিতে একবারও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম বলেননি, বলেছেন তো ফজলুল কাদের চৌধুরীর কথা, তাহলে তো তাকে এখন কবর থেকে তুলে এনে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা দরকার। ট্রাইব্যুনালের এ কথার উত্তরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, আমি তো আমার বাবারই প্রতিনিধিত্ব করছি।
এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরকে বসতে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে জেরা করতে বলেন। ৯ম সাক্ষীর জেরা শেষে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করে দেন।

এর আগে সাক্ষী পরাগধর তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম পরাগ ধর (৪৮)। আমার পিতার নাম মানিক ধর। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল সাত বছর। আমি বিএ পাস করেছি। বর্তমানে একটি ব্যবসা করি। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে যুদ্ধ চলাকালে মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। শুনেছি তখন লুটতরাজ হতো। রাজাকাররা বিভিন্ন ঝামেলা করত। জগৎমল্ল পাড়া, মধ্য গহিরা, সুলতানপুরে ও কুন্ডেশ্বরী এলাকায় আল বদররা গণহত্যা শুরু করেছিল বলে আমি শুনেছি। সাক্ষী পরাগ বলেন, ওই খবর পাওয়ার পরে আমার মা-বাবা ও ভাইসহ আগরতলা হয়ে কলকাতা চলে যাই। ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশে ফিরে আসি। সাক্ষী বলেন, আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল। তা রাজাকার, আল বদর বাহিনীরা লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের আসবাব, দরজা কিছুই ছিল না। আমি শুনেছি ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটেছিল।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি পেশ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (৬২) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. সালেহ উদ্দিন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৭ মে ১০৫ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন শেষ করেছে প্রসিকিউশন। গত ৪ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি ঘটনায় ৭২টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত বছরের ৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ ১৮টি সিডি উপস্থাপন করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল

দোষারোপ নয়, দুর্নীতিকে 'না' বলতে হবে :বিভুরঞ্জন সরকার


 মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে সমালোচনা করা হলেও আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, সংবাদপত্রগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত মালিক-সম্পাদকের দ্বারাই। কে, কি লিখবেন সেটাও অনেক সময় পত্রিকা কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে দেন, সরকার নয়। সব কাগজে, সব লেখক খোলামনে সব কিছু লিখতে পারেন না। এটা যে সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। মিডিয়া জগতে এখন যে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, এটা অনেক পাঠকেরই জানা নেই। তাদের পক্ষে সেটা জানা-বোঝার কথাও নয়। আমি খুশি এ কারণে যে, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক আমাকে অন্তত লেখার বিষয় নিয়ে ডিকটেট করেননি। গত ২৩ জুন এবং ৭ জুলাই আমার দুটি লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। লেখা দুটি ছাপা হওয়ার পর পাঠকদের কাছ থেকে যে বিপুল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। আমরা যারা সংবাদপত্রে কলাম লিখি তাদের লেখা পাঠকদের ভালো লাগলে সেটাই আমাদের বড় পুরস্কার।

'যদি নূ্যনতম লজ্জা থাকত' শিরোনামে ৭ জুলাই প্রকাশিত আমার লেখাটিতে একটি তথ্যগত ভুল থাকায় বেশ কজন পাঠক তা ধরিয়ে দিয়েছেন এবং এ ধরনের অসত্য তথ্য উল্লেখ করে পাঠকদের বিভ্রান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি লিখেছিলাম, 'বেগম জিয়া বলেছেন, পদ্মা সেতু ইস্যুতে মহাজোট সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল তার প্রথম শাসন আমলেই।' এ তথ্যটি সঠিক নয়। আমার স্মৃতি আমার সঙ্গে প্রতারণা করায় এ বিভ্রান্তিটি ঘটেছে। আসলে শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের শেষ বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান পেয়েছিল, যা পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট আমলেও অব্যাহত ছিল। এ ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত, এ জন্য আমি লজ্জিত এবং পাঠকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার প্রায় ৪২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এ ধরনের ভ্রান্তি আগে ঘটেছে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে তথ্য উল্লেখের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকার বিষয়টি আমার সবসময় মনে থাকবে। যেসব পাঠক বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ক. মাননীয় সম্পাদকের কাছ থেকে সবিনয় অনুমতি নিয়ে এখানে নিজের ঢোল নিজেই একটু পেটাতে চাই। আশা করি, পাঠক এতে বিরক্তবোধ করবেন না। আমি মনে করি, এটার প্রয়োজন আছে এ জন্য যে, পাঠক কার লেখা পড়ছেন, তার এটা লেখার যোগ্যতা আছে কিনা, সেটা জানা থাকলে লেখাটি সম্পর্কে মতামত গঠনে সহায়ক হয়। লেখক-পাঠকদের যোগসূত্র বা যোগাযোগ একটি বড় ব্যাপার।

লেখার জগতে আমি কোনোভাবেই নবাগত নই। ১৯৭০ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক 'আজাদ'-এর মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করে পরবর্তী সময়ে একাধিক দৈনিক-সাপ্তাহিক কাগজে কাজ করেছি। ১৯৮৪ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রকাশিত হলে ওই কাগজে তারিক ইব্রাহিম ছদ্মনামে রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখেছি, কাগজটি স্বৈরাচারী এরশাদ নিষিদ্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত। তখন সেসব রাজনৈতিক প্রতিবেদন অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে সময় সংবাদপত্রে রাজনৈতিক বিষয়ে খুব বেশি কেউ লেখালেখি করতেন না। তারপর ১৯৯২ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন নতুন পর্যায়ে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ১৯৯৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক 'একতা' (তখন এই সাপ্তাহিকটি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল এবং এর সম্পাদক ছিলেন আজকের 'প্রথম আলো' সম্পাদক মতিউর রহমান) পত্রিকায় কাজ করেছি টানা প্রায় ১০ বছর। নিজের সম্পাদনায় বের করেছি সাপ্তাহিক 'চলতিপত্র'। দৈনিক 'মাতৃভূমি' সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছি দুই বছরের কিছু বেশি সময়। সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম প্রায় পাঁচ বছর। এ ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে অসংখ্য কলাম লিখেছি এবং লিখছি দৈনিক সংবাদ, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, সমকাল, চট্টগ্রামের সুপ্রভাত বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক দেশবন্ধু। এ সময় ঢাকাসহ আরও অনেক পত্রপত্রিকায়। প্রথম আলোতেও দু-চারটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার অবস্থান একেবারে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো মোটেও নয়।

খ. ৭ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত আমার লেখার ভুল তথ্যটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন সম্মানিত পাঠক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, 'মিথ্যা তথ্য দিয়ে জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীর মতো জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন।' বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় একজন লিখেছেন, 'তাদের দুর্নীতির কথা সবাই জানেন।... এখনো প্রমাণ করতে পারেনি।' একজন লিখেছেন, 'আমরা এখন খালেদার দুর্নীতির কথা শুনতে চাই না, কারণ তিনি ক্ষমতায় নেই।' আরেকজন লিখেছেন, 'একজনের দোষ ধরবেন, আরেকজনের কথা কিছু বলবেন না, তা কি হয়।' এ রকম আরও কিছু মন্তব্য ই-মেইলে পেয়েছি। যারা লেখাটির প্রশংসা করেছেন তাদের বক্তব্যগুলো স্বাভাবিক কারণেই উল্লেখ করলাম না। সব পাঠক আমার লেখা পড়ে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, সেটা হতে পারে না। সবাই আমার মতকেই সমর্থন করবেন, সেটাও প্রত্যাশিত নয়। যারা মতামত জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আত্দপক্ষ সমর্থন করে দু-একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি, এতে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে বিবেচনা করে। প্রথমত, স্পষ্ট করে আমি এটা বলতে চাই যে, কাউকে বিভ্রান্ত করার মানসিকতা থেকে আমি কখনোই কিছু লিখি না। আমার বিবেচনায় যেটা সঠিক মনে করি_ তা কার পক্ষে বা বিপক্ষে যায়_ সেটা একেবারেই মনে না রেখে তাই পাঠকদের সামনে তুলে ধরি। কেউ যদি বলেন দালালি করি, তবে সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বিবেকের। ৭ জুলাইয়ের লেখায় তথ্যগত একটি ভুল ছিল, কিন্তু তাতে আমার মূল বক্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে আসেনি বলেই বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে দেশে দুর্নীতি হয়নি, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি, তা কিন্তু নয়। সে সময় সংবাদপত্রে বিএনপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। কিন্তু সরকার সেগুলো কানে নেয়নি এবং পদত্যাগ করার গরজবোধ করেনি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তখন দেশে আন্দোলন গড়ে উঠলে বেগম জিয়া বলেছিলেন, 'শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হয় না।' বেগম জিয়া বর্তমানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলছেন এবং বর্তমান সরকারকে কথায় কথায় পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছেন বলেই আমি বেগম জিয়ার শাসনামলের কথা যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছি। আমি কোথাও বলিনি যে, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি হচ্ছে না, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, সে কথাও আমি বলিনি। একটি সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়, এ সময়কালে সরকারকে গদিচ্যুত করার অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। মেয়াদকালে সরকার যদি জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, ঘুষ-দুর্নীতি দূর না করে তার বিস্তার ঘটায়, সুশাসনের বদলে দেশবাসীকে দুঃশাসন উপহার দেয়, তাহলে পরের নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমেই তাদের বিচার করবে। সরকারবিরোধিতার নাম করে বিদ্বেষ প্রচার করা হলে রাজনীতিতে অযথা উত্তেজনা ছড়ানো ছাড়া তাতে অন্য কোনো লাভ হয় না। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবে, ঘুষ-দুর্নীতির কথা অবশ্যই তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরবে। কিন্তু ঢালাও অভিযোগ উত্থাপন করা কি যুক্তিযুক্ত? বিএনপির আমলের কিংবা বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রমাণ হয়নি_ এটা যদি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে কি প্রশ্ন ওঠে না, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কি প্রমাণ হয়েছে? কেউ হয়তো বলবেন, কেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করার ঘটনাই তো বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বড় প্রমাণ। বিষয়টি কি সত্যি তাই? বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পদত্যাগ দাবি অবশ্যই যৌক্তিক হতো, যদি অতীতে এ ধরনের নজির থাকত। বেগম জিয়ার শাসনামলে সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বলে কি বেগম জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন? বলা হতে পারে, তখন যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল এবং অর্থায়ন বন্ধ রেখেছিল, এটা তো তখন এবারের মতো এত জানাজানি হয়নি। হ্যাঁ, বিষয়টি তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। সেটা কি খুব ভালো কাজ হয়েছিল?

গ. খালেদা জিয়ার আমলে দুর্নীতি হয়েছে বলেই শেখ হাসিনার আমলেও দুর্নীতি হবে_ এটা অবশ্যই কোনো যুক্তি হতে পারে না। বর্তমানের অন্যায়কে জায়েজ করার জন্য অতীতের অন্যায়ের তুলনা করা অবশ্যই উচিত নয়। অতীত দুর্নীতি বর্তমান দুর্নীতির পক্ষের যুক্তি হতে পারে না_ এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বেগম জিয়ার শাসনামলের দুর্নীতির সমালোচনা করে বা বড় করে দেখে শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতির বিষয়টিকে ছোট করা বা আড়াল করার যে কোনো চেষ্টা-অপচেষ্টাকেই আমি ঘৃণা করি। তবে আমার কথা হলো, আমাদের রাজনীতিবিদদের 'ডবল স্ট্যান্ডার্ড' বন্ধ হওয়া উচিত। ক্ষমতায় গিয়ে এক ধরনের আচরণ, আবার বিরোধী দলে থাকলে আরেক_ এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না। বেগম জিয়া বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনার সরকারকে চোর বলবেন, আবার শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থেকে বেগম জিয়ার সরকারকে চোর বলবেন_ এ ধারা আর কতদিন চলবে? এ বৃত্তবন্দী রাজনীতি আমাদের আর কতদিন দেখতে হবে? রাজনীতির এই যে বিষাক্ত বৃত্ত সেটা ভাঙা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর সে জন্যই কেবল সরকারের সমালোচনা নয়, বিরোধী দলেরও সমালোচনা করাটা আমি প্রয়োজন মনে করি। সরকারকে সঠিক পথে আনতে হবে আর বিরোধী দলকে সঠিক পথে আনার দরকার নেই বলে যারা মনে করেন, তাদের সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে।

ঘ. আমি মুক্ত মনে বাহ্বা দিতাম, যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগম জিয়া তার সরকারের সময়কার দুর্নীতি-অনিয়মের কথা স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতেন, অতীতে আমাদের সময় দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা ক্ষমতায় গেলে আর তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার আমল থেকে শেখ হাসিনার সময়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির কারণে যদি পরবর্তী নির্বাচনে ভরাডুবি হয় এবং বেগম জিয়া তথা ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে কি দেশে দুর্নীতি কমবে? বেগম জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-বাড়াবাড়ির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল, তা কি অস্বীকার করা যাবে? যাদের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হয়েছিল? বেগম জিয়া কি এখন দেশের মানুষকে এই নিশ্চয়তা দেবেন যে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক আছে, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না? বেগম জিয়া ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে একটি সৎ সরকার গঠন করে দেশকে সুশাসন উপহার দেবেন_ এটা বিশ্বাস করা হবে কিসের ভিত্তিতে? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও সরকারের অংশ। বেগম জিয়া তার সৎ সহকর্মীদের নিয়ে একটি ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে দেখান না কেন কারা তার দুর্নীতিবিরোধী সরকারে নেতৃত্ব দেবেন? ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি করবেন না, এ প্রতিশ্রুতি দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে দুর্নীতিবাজদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বেগম জিয়া যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে দেশের মানুষ বেশি উৎসাহবোধ করবে। কথায় আছে, 'আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও।'

ঙ. পাঠকদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ, 'জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীরা' যাতে আপনাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। একই সঙ্গে চোখ-কান খোলা রাখবেন 'জ্ঞানপাপী বিএনপি দালাল বুদ্ধিজীবীদের' ব্যাপারেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তারেক রহমানকে 'বিনয়ী, সদাচারী, নির্লোভ ও মিতব্যয়ী' বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। একে তারেক রহমানের যথার্থ মূল্যায়ন বলে দেশের শতকরা কতভাগ মানুষ মনে করে?

শেষ করব, '১৬ কোটি জনগণের একজন' হিসেবে উল্লেখ করে যে পাঠক বন্ধু দীর্ঘ ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন, তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি লিখেছেন, '১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৫.৫ কোটি জনগণ বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারের কিছু কিছু প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আমলার বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে জনকল্যাণকর প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে।' সবই ঠিক আছে, তবে ১৫.৫ কোটি মানুষ এটা মনে করে_ এ পরিসংখ্যানটি পাঠক কোথায় পেলেন? এমন মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনা করলেই কি অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে? পাঠক অবশ্য যথার্থই বলেছেন, 'আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির এই করুণ দশার জন্য ভণ্ড, অযোগ্য রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের পাশাপাশি কুমতলবধারী সাংবাদিক তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও কম দায়ী নন।' পাঠকের এ বক্তব্যের সঙ্গে শতভাগ একমত পোষণ করে আমি বলতে চাই : আসুন আমরা রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা না করে অর্থাৎ দলীয় আনুগত্য পরিহার করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখি এবং সবাই মিলে সোচ্চার কণ্ঠে দুর্নীতিকে 'না' বলি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টিতে লিপ্ত বিএনপি ও জামায়াতপন্থি সাবেক আমলারা

রাকিব উদ্দিন
জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কতিপয় সাবেক আমলা। অস্থিরতা সৃষ্টিতে তারা মহাজোট সরকারের সুবিধাবঞ্চিত আমলাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বর্তমানে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা আমলাদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে নানাভাবে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন তারা। এ ধরনের অপকর্মে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী কিছু বুদ্ধিজীবী।
তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি সম্পর্কে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ইতোমধ্যে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে। সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং ওএসডি কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দু'টি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘি্নত ও জনপ্রশাসনে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারেন এমন অভিযোগে গত ১৯ জুলাই চারদলীয় জোট সরকারের এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৩৭ জন সাবেক অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের সচিবালয়ে প্রবেশের আজীবন নিরাপত্তা পাস বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই আরও কিছু সাবেক আমলার সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই তাদের তালিকা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে রাজধানীতে প্রকাশ্যে সেমিনারের আয়োজন করেন 'রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশন' নামে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী সাবেক আমলারা। ওই সভায় বর্তমানে ওএসডি ও এবার পদোন্নতি বঞ্চিত কিছু আমলাও উপস্থিত ছিলেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এখন ওই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা গতকাল 'সংবাদ'কে বলেছেন, 'কর্মহীন থাকার ফলেই কিছু কর্মকর্তা নানা ফাঁদে পড়ছেন। তাই ওএসডি কর্মকর্তাদের পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে পদোন্নতি বঞ্চিতদের জন্য আপাতত কোন সুখবর নেই'।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সুবিধাভোগী আমলারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবহারের অজুহাতে নিয়মিত সচিবালয়ে ঢুকেন। তারা সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে বসে সুবিধাবঞ্চিত ও ওএসডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেন এবং সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হন। তাই এখন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে নিয়মিত কারা আসেন, এসে কী করেন তার তীক্ষ্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।
সচিবালয়ে প্রবেশে সাবেক যেসব আমলার নিরাপত্তা পাস বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসএম আবদুল হালিম, সাবেক সচিব এনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক যোগাযোগ সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এসএম জহুরুল ইসলাম, সাবেক তথ্য সচিব ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব খন্দকার ফজলুর রহমান, আবু মো. মনিরুজ্জামান খান, সাবেক শ্রম সচিব আবদুল মতিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন আহমেদ, এম মতিউর রহমান, সাবেক যুব সচিব ক্যাপ্টেন (অব.) সুজা উদ্দিন আহমেদ, শেখ এনায়েত উল্লাহ খান, এম ইব্রাহিম হোসেন, সাবেক আইন সচিব আলাউদ্দিন সর্দার, এটিএম আতাউর রহমান, কাজী আবুল কাসেম, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আবদুর রশিদ সরকার, সাবেক তথ্য সচিব জাফর আহমেদ চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, সাবেক তথ্য সচিব আতম ফজলুল করিম অন্যতম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ৬০০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওএসডি আছেন। তাদের মধ্যে দুজন সচিব, ৩৩ অতিরিক্ত সচিব, ১৪৪ যুগ্ম সচিব আছেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সচিবালয়সহ জনপ্রশাসনে চার হাজার ৬৪৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন

Wednesday, July 25, 2012

রিজওয়ানা হাসান ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন




ঢাকা, জুলাই ২৫  - এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বুধবার র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি ২০১২ সালে পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালানোর স্বীকৃতি হিসেবে রিজওয়ানাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।  রিজওয়ানা হাসান ছাড়াও এ বছর কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও তাইওয়ানের ছয়জন র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ৩১ অগাস্ট ফিলিপাইন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। তারা সবাই একটি সনদ, একটি পদক ও নগদ অর্থ পাবেন ।  

 একাদশ বাংলাদেশি রিজওয়ানা , যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাচ্ছেন। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ (১৯৭৮), রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮) অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০০৪), প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (২০০৫), এঞ্জেলা গোমেজ (১৯৯৯), ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫) ও সিডিডির এর নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান (১৯৮৮) ম্যাগসেসে পুরস্কার পান । 

ম্যাগসেসে পুরস্কার জয়ের ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা বলেন, “এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, এই স্বীকৃতি তাদের সবার।” আনন্দিত রিজওয়ানা বলেন, যে কাজ তিনি করে যাচ্ছেন, এই স্বীকৃতি তার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিল। 

রিজওয়ানা গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালে তিনি পরিবেশের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘গোল্ডম্যান পুরস্কার’ পান। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘টাইম’ ‘এনভায়রনমেন্টাল হিরো’র তালিকায় তাকেও রাখে। 

পেশায় আইনজীবী রিজওয়ানার জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও হলিক্রস কলেজের পড়াশুনা শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পাস করার পর তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিতে (বেলা) যোগ দেন। 


নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালানোয় জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. কামারুজ্জামান:কামারুজ্জামানের ‘যুদ্ধাপরাধের’ দ্বিতীয় সাক্ষী

একাত্তরে একটি হিন্দু বাড়ি দখল করে আল বদর ক্যাম্প বসিয়ে নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালানোয় জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. কামারুজ্জামানের ভূমিকা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্ণনা করেছেন এক সাক্ষী মোহন মুন্সী 

ট্রাকভর্তি লাশ নিয়ে কামারুজ্জামানকে দেখার কথাও জানান মোহন মুন্সী। মুক্তিবাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে যে আল বদর বাহিনী মারছে, তার নজির হিসেবে ট্রাকভর্তি লাশ শেরপুর জেলা শহরের বাসিন্দাদের দেখাতে কামারুজ্জামান নিয়ে যান  তিনি। কামারুজ্জামানের কাছে গোলাম আযমের কাছ থেকে টেলিগ্রাম আসত বলেও জানান মোহন মুন্সী 

বুধবার সাক্ষ্য দেওয়া মনোয়ার হোসেন খান, যিনি মোহন মুন্সী নামে পরিচিত, ওই আল বদর ক্যাম্পের পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। ৬৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তি বর্তমানে শেরপুরের একটি বিদ্যালয়ের কর্মচারী। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের ‘যুদ্ধাপরাধের’ দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে একাত্তরের ঘটনা বর্ণনা করেন সাদা শ্মশ্র“মণ্ডিত ও মাথায় টুপিধারী মোহন মুন্সী। মানবতাবিরোধী সাত ধরনের অভিযোগে এই ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার চলছে। 

মোহন মুন্সী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ১৭/১৮ দিন পর কামারুজ্জামান এলাকার মানুষদের ডেকে বলেন, জামালপুর থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ডেকে আনছেন। পরদিন কামারুজ্জামান ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে ভোরে চলে যান এবং দুপুরেই ফেরেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নির্যাতনের মুখে বিপুল সংখ্যক হিন্দু দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই রকম একটি দলকে কামারুজ্জামান ও তার সঙ্গীরা আটকে লুটপাট চালায় বলে জানান মোহন মুন্সী। 

এই দলের সুরেন সাহার বাড়ি দখল করে কামারুজ্জামান দখল করে সেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে আল বদর ক্যাম্প স্থাপন করে বলে সাক্ষ্যে বলা হয়। ওই ক্যাম্পেরই পাহারাদার ছিলেন মোহন মুন্সী। 

আল বদর ক্যাম্পের পাহারাদার হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মোহন মুন্সী বলেন, তিনি দাদার দরজির দোকানে কাজ করতেন। একাত্তরের শুরুতে আধা সামরিক বাহিনীতে কাজ পাওয়ার কথা শুনে তিনিও এসেছিলেন। পরে তিন মাস তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সময় কোনো টাকা দেওয়া না হলেও খাবার দেওয়া হত। 

মোহন মুন্সী ভেবেছিলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তারা আনসার বাহিনীতে যোগ দেবেন। কিন্তু ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ওই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাদের আল বদর বাহিনীতে ভিড়িয়ে দেওয়া হয়।  আল বদর বাহিনীতে যোগ দিতে তার কাছে স্থানীয় যুবকরা এলে  মোহন মুন্সী  তাদের ফিরিয়ে দিতেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও আল বদর বাহিনী ছেড়ে দেন। 

ক্যাম্পের পাহারাদার থাকার সময় গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ট্রাইব্যুনালকে জানান মোহন মুন্সী। তাকে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর রিয়াজের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন কামারুজ্জামান। 

“মেজর রিয়াজ না আসা পর্যন্ত মোস্তফাকে আটকে রাখতে বলেন কামারুজ্জামান। ওই সময় মোস্তফাকে বেঁধে বেদম মারধর করে আল বদর সদস্যরা,” বলেন মোহন মুন্সী। এরপর কামারুজ্জামান ও নাসির (কামারুজ্জামানের সহযোগী) মোস্তফাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। পরে তারা দুজন ক্যাম্পে ফিরলেও মোস্তফাকে ফিরতে দেখেননি সাক্ষী। “নাসিরকে বলতে শুনি, কমান্ডার এখন ভালোই গুলি করেন, নিশানা এখন অনেক ভালো,” বলেন মোহন মুন্সী। সাক্ষীর বক্তব্যে স্পষ্ট, কামারুজ্জামান ও নাসির ওই ব্যক্তিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। 
। সাক্ষীর বক্তব্য দেওয়ার পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার তাকে পুনরায় জেরা করা হবে। 

Tuesday, July 24, 2012

ব্রিটেনে বসবাসরত অবৈধ বাঙ্গালিরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরলে স্পেশাল ট্রেনিং দেবে ব্রিটিশ হাইকমিশন

সিলেট, ২৪ জুলাই : ব্রিটেনে বসবাসরত অবৈধ বাঙ্গালিরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরলে স্পেশাল ট্রেনিং দেবে হাইকমিশন। এর মাধ্যমে তারা তাদের স্কিল ডেভেলপ করতে পারবে এবং চাইলে দেশে কাজে লাগবে অথবা অন্য কোন দেশে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে।মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট চেম্বার নেতৃবৃন্দের সাথে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি দলের মতবিনিময় সভায় একথা জানানো হয়।

সভায় ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সিলেটে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন হচ্ছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানসম্মত কর্মী দিতে বৃটিশ হাইকমিশন প্রস্তুত রয়েছে।তারা আরো বলেন, সিলেটে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। যারা ব্রিটেনে অবস্থান করছেন, তাদেরকে দেশে বিনিয়োগের জন্য আমরা উদ্বুদ্ধ করব। 

মতবিনিময় সভায় সিলেট চেম্বার সভাপতি বলেন, সিলেটে শিল্প, ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চেম্বার বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছেন ইউকে বর্ডার এজেন্সি’র এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মিচেল স্মিথ, ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের মাইগ্রেশন ডিরেক্টর রাচেল অকেথ, মাইগ্রেশন ডেলিভারি অফিসার স্টিভ আসখাম ও ব্রিটিশ হাই কমিশন সিলেট অফিসের হেড রিফুল জান্নাত। চেম্বার নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চেম্বার সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল হক, সহ-সভাপতি হাজী ইফতেখার আহমদ সোহেল, পরিচালক তারেক আহমদ, মো. লায়েস উদ্দিন, এজাজ আহমদ চৌধুরী, পিন্টু চক্রবর্তী, এনামুল কুদ্দুস চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান ভূট্টো, মো. মামুন কিবরিয়া সুমন, মো. এমদাদ হোসেন, তাহমিন আহমেদ ও মুশফিক জায়গীরদার প্রমুখ।

‘কবি মেহেরুন নেসাকে হত্যা করেন কাদের মোল্লা’ - কাজী রোজীর সাক্ষ্য



ঢাকা, ২৪ জুলাই: জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন কবি কাজী রোজী। একাত্তরে নিহত কবি মেহেরুন নেসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন কাজী রোজী। তারা একই এলাকায় থাকতেন।কবি রোজী এ মামলায় ৪র্থ নারী সাক্ষী। এর আগে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৩ জন নারী ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দেন। এছাড়া মামলায় প্রথমে দুইজন পুরষ মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিচারপতি বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এ কবি রোজী বলেন, ১৯৭১ সালে মিরপুরে অবাঙালি ও বিহারিরা বাঙালিদের ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করত। এ থেকে রেহাই পেতে একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তিনি সেই কমিটির সভাপতি ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কবি মেহেরুন  নেসা সদস্য ছিলেন।

কাজী রোজী বলেন, ২৫ মার্চ সকালে তিনি খবর পান তাঁর ও মেহেরুন নিসার বাসায় হামলা হতে পারে। তিনি মেহেরুন নেসাকে খবর পাঠান ও নিজে মিরপুর থেকে চলে যান। কিন্তু পরিবার নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় মেহেরুনরা মিরপুরেই থেকে যান

আসামির কাঠগড়ায় কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে কাজী রোজী জবানবন্দিতে বলেন, এরপর ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মাথায় সাদা বা লাল পট্টি বেঁধে কবি মেহেরুন নেসার বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা মেহেরুন, তাঁর মা ও দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।জবানবন্দিতে কবি রোজী বলেন, গুলজার নামের একজন অবাঙালি ও আরেকজন বিহারির কাছে তিনি মেহেরুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার নির্মম বর্ণনা শোনেন।

জবানবন্দি শেষে কাজী রোজীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক। আগামী বৃহস্পতিবার তাকে আবার জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধের ঘটনায় গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, গণহত্যা, আগুন লাগানো, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ৬টি অভিযোগে কাদের মোল্লার বিরদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৩(১), ৩(২)(এ)(এইচ) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, কবি মেহেরুন নেসা সহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পল্লবীর আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাত জনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খান বাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরো দু’টি গ্রামের অসংখ্য লোককে হত্যার ঘটনা।

১৯৭১ সালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর জামায়াতের  সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। 
 মামলাটি করেছিলেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ খান। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশন প্যানেল। ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করলে গত  ২০ জুন মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ৩ জুলাই থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ  

আমেরিকার কত শতাংশ মানুষ মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা রাখেন- তা জানেন না ড্যান ডব্লিউ মজিনা


বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যা নিয়ে উদ্বেগ জানালেন ঢাকায় মার্কিণ রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা তিনি বললেন, এই ধরণের হত্যাকান্ড বন্ধে স্বরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবেবাংলাদেশের ৫১ শতাংশ মানুষেরই মানবাধিকার সম্পর্কে কোন ধারণা নেই বলে দাবি করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত 

হিউম্যান রাইট্ ওয়াচ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যখন উদ্বিগ্্ন তখন আমেরিকার কত শতাংশ মানবাধিকার সম্পর্কে জানেন - এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনআমেরিকার কত শতাংশ মানুষ মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা রাখেন তা তিনি জানেন না   মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে এসব কথা বলেন মার্কিণ রাষ্ট্রদুত এসময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . মিজানুর রহমান

মজিনা বলেন, বাংলাদেশে ্যাব দিনে দিনে মানবাধিকারের বিষয়ে সচেতন হচ্ছে এজন্য আমেরিকা একজন বিশেষজ্ঞ দিয়েছেন যেন তারা মানবাধিকারের বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানে বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ্যাবের সব কাজ যেন আইনের মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয়

বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন কি কি করছে সেসম্পর্কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনকে জানানোর পরামর্শ দিয়ে মজিনা বলেন, তাহলে হিউম্যান রাইটস সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন তৈরিতে তা সহায়ক হবে