Tuesday, July 24, 2012

আট বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নির্বাচিত উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন




 বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্টপতি জিল্লুর রহমান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেনমঙ্গলবার।  আট বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নির্বাচিত উপাচার্য হয়েছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।গত ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন  ১১ নং সেক্টরে অগ্রজ সেক্টর অধিনায়ক কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের নেতৃত্বে স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও বহু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষা ও গবেষণায় নিবেদিত ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এর আমেরিকায় একটি আবিস্কার পেটেন্টকৃত। শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বহু অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ২০১০ সালে বছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ হিসেবে ঢাকা জেলা প্রশাসক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৩ সালে বিচারপতি ইব্রাহিম স্বর্ণপদক লাভ করেন।
মাতা বেগম আশরাফুন্নেসা ,বাবার নাম মহীউদ্দিন আহমেদ   ১৯৫০ সালে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার কাজলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ৩৭ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত, শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার 
 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগদানের আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৭১ সালে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৭২ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। জাপানের কিয়েতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। 

অনুপ্রাণ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে তার শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৯০ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তার বহু গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। 


 ২০০৭ সালে আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সৃষ্ট ঘটনায় যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার, চোখ বেঁধে রিমান্ডে নির্যাতন এবং ৫ মাস কারাভোগ করেন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।সিএমএম কোর্টে ঐতিহাসিক জবাববন্দি প্রদান এবং আন্দোলনের মাধ্যমে কারামুক্তি লাভ করেন। ২০০৮ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ‘রিমান্ড ও কারাগারের দিনলিপি’ ও ‘সিএমএম কোর্টে জবানবন্দি’ গ্রন্থ দু’টি বিপুলভাবে সমাদৃত হয়।উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০০৪ সালে ‘তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল’ মনোনয়নের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ গবেষণায় যুক্ত আছেন। তার তত্ত্বাবধানে ৩৭জন এম. ফিল ও পিএইচ.ডি গবেষক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইটালি, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপিনস্, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেন। 

প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এই অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডীন এবং  সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ছিলেন। 

 নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৫০ ভোট পেয়ে প্রথম হন অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। ৩৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। একই সংখ্যক ভোট পেয়ে লটারির মাধ্যমে তৃতীয় হন অধ্যাপক নূরুল আলম। এছাড়া প্যানেলের অপর দুই প্রতিযোগী অধ্যাপক আফসার আহমেদ পেয়েছেন ১৮ ভোট এবং শামসুল কবীর খান পেয়েছেন ৩ ভোট।বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট হলে উপস্থিত ৬৮ জন সিনেট সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন সিনেট সদস্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাসির উদ্দিন।
নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম ৩ জন নাম অর্থাৎ অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক নূরুল আলমের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ফলাফল পর্যালোচনা করে জাবির উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাময়িকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানকে উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য জিল্লুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজনের প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান।চলতি বছরের ১৭ মে বৃহস্পতিবার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটকালে রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ণ ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী নিয়োগ দেন। উপাচার্য পদে তার মেয়াদ চার বছর অথবা সিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে তিন জনের প্যানেল থেকে নতুন উপাচার্য নিয়োগ অথবা পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।

২০ মে রোববার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির-এর কাছ থেকে তিনি উপাচার্যের দায়িত্বগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন, বিভিন্ন অনুষদের ডীন, রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভাগীয় সভাপতি, অফিস প্রধান, বিভিন্ন সমিতির নেতা, শিক্ষক, অফিসার, কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

দায়িত্ব গ্রহণকালে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত করার ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় উপাচার্যে দায়িত্ব গ্রহণের ৪৩ দিনের মধ্যে তিনি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ঘোষণা দেন। উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পর শিক্ষকদের একাংশ এ নির্বাচনের বিরোধিতা করে ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলন করে আসছিল।

‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের’ শিক্ষকদের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টের ১৯(১)ক ধারা অনুযায়ী অবিলম্বে ৫ জন জাকসু প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অ্যাক্টের ১৯(১)ই, ১৯(১)এফ, ১৯(১)জি, ১৯(১)আই ধারা অনুযায়ী যে সব সিনেট সদস্যের মেয়াদ এরই মধ্যে উর্ত্তীন হয়েছে সে সব নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সবার জন্য নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার পর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

কিন্তু ১৯ মে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল খায়েরের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও আশুলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। 
আদালতের এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে জলকামানসহ পুলিশি প্রহরায় শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ৬৩ ভোটের মধ্যে ৩৫ ভোট পেয়ে লটারির মাধ্যমে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিকে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছি যে, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর যে অধ্যাদেশ আছে তার আলোকে পরিচালিত করব। তারই ধারাবাহিকতায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে নির্বাচিত তিন জনের মধ্য থেকে আচার্য একজনকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করবেন। আমি আশা করি নতুন উপাচার্য যিনিই হন না কেন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাার মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। সেই লক্ষেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি।”




No comments:

Post a Comment