Friday, July 27, 2012

রেমিটেন্স পাঠানো ১৮ প্রবাসীকে সিআইপি সম্মাননা দেয়া হচ্ছে

সরকার প্রবাসীদের সিআইপি (অনাবাসী) সম্মাননা দিতে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম বারের মতো সরকারের এ উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে প্রবাসী মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ১৮ প্রবাসীর নাম নির্বাচন করেছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয় দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৮ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করে। ক্যাটাগরি দুটি হলো- বাংলাদেশি পণ্য আমদানি ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি। প্রথমটি হলো বিদেশে অবস্থান করে দেশের পণ্য নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যারা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি হলো- বিদেশে কাজে অবস্থান করছেন এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো সরকার প্রথম ক্যাটাগরির জন্য নির্ধারণ করেছে ১৩ জন এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে নির্ধারণ করেছে ৫ জন।
প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা পণ্য আমদানি ক্যাটাগরিতে ১৩ জন হলো- বেলায়েত হোসেন, তিনি অবস্থান করছেন সৌদি আরবে; আরব আমিরাতে অবস্থানকারী নুরুল আলম ও মুহাম্মদ আলী; অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত সিনথিয়া রহমান, ইটালিতে কর্মরত জাহাঙ্গীর মো. হোসেন, ইমরান ফরাজী ও মো. ইদ্রিশ আলী; রাশিয়াতে কর্মরত মো. মাহবুবুল আলম; যুক্তরাজ্যে কর্মরত ড. এমজি মৌলা মিয়া ও মোহাম্মদ আ. রহিম; সৌদি আরবে কর্মরত মো. লিয়াকত আলী ও কাজী নুরুল আলম এবং কুয়েতে কমরর্ত প্রবাসী মো. আবদুল্লাহ।
বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে- ওমানে কর্মরত মো. শাহজাহান মিয়া ও মেহেরুন্নেশা আক্তার; আরব আমিরাতে কর্মরত রেজাউল আজিম ও এএইচএম তাজুল এবং রাশিয়াতে কর্মরত মনোয়ারা হোসেন।
মোট ১৮ প্রবাসীর মধ্যে ৩ জন হলেন মহিলা। ১৫ জন পুরুষ। দেশের উন্নয়নে অন্যান্য সব পেশার মতো বিদেশে গমনেও নারীরা পিছিয়ে নেই। দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তারই স্মারক হিসেবে ৩ মহিলাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
এসব প্রবাসীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে দেশে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ও দেশের উন্নয়নে অবদানের দিক বিবেচনা করে। এসব রেমিটেন্স বিভিন্ন সময় দেশে পাঠানোর ফলে সরাসরি বা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের পর এখন নানা দিক পর্যালোচনা চলছে। অন্য কোন ইস্যু না থাকলে এসব ব্যক্তিদেরই চূড়ান্ত করা হবে। এবং রাষ্ট্রীয় সিআইপি (আনাবাসী) সম্মাননা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কৃষির পরই দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখছেন বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা। এসব প্রবাসীর বাংলাদেশের পতাকা খচিত একটি পাসপোর্ট ছাড়া কিছুই দেয়া হয় না। অথচ দেশে প্রতি বছর এ বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছে। এসব টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা ইতিবাচক রাখতে সমর্থ হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসে ১১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন। এ পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন। যা দেশের অর্থনীতির বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। অদক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পকিল্পনা গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়াও শুরু করে। প্রবাসীদের টাকা বৈধ চ্যানেলে আনার জন্য সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো টাকা যাতে কোনভাবে নষ্ট না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, যারা ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যায়। পরিবার-পরিজন ছাড়া হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দেশে টাকা পাঠায়, তারা দেশের সত্যিকারের বীর। তাদের সম্মান দেখানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রবাসীদের এ সম্মাননার মধ্য দিয়ে প্রবাসীরা সম্মানিত বোধ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা বৈধপথে টাকা পাঠাতে অনুপ্রাণিত হবে বলে তারা মনে করেন 

No comments:

Post a Comment