Friday, July 27, 2012

দোষারোপ নয়, দুর্নীতিকে 'না' বলতে হবে :বিভুরঞ্জন সরকার


 মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে সমালোচনা করা হলেও আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, সংবাদপত্রগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত মালিক-সম্পাদকের দ্বারাই। কে, কি লিখবেন সেটাও অনেক সময় পত্রিকা কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে দেন, সরকার নয়। সব কাগজে, সব লেখক খোলামনে সব কিছু লিখতে পারেন না। এটা যে সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। মিডিয়া জগতে এখন যে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, এটা অনেক পাঠকেরই জানা নেই। তাদের পক্ষে সেটা জানা-বোঝার কথাও নয়। আমি খুশি এ কারণে যে, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক আমাকে অন্তত লেখার বিষয় নিয়ে ডিকটেট করেননি। গত ২৩ জুন এবং ৭ জুলাই আমার দুটি লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। লেখা দুটি ছাপা হওয়ার পর পাঠকদের কাছ থেকে যে বিপুল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। আমরা যারা সংবাদপত্রে কলাম লিখি তাদের লেখা পাঠকদের ভালো লাগলে সেটাই আমাদের বড় পুরস্কার।

'যদি নূ্যনতম লজ্জা থাকত' শিরোনামে ৭ জুলাই প্রকাশিত আমার লেখাটিতে একটি তথ্যগত ভুল থাকায় বেশ কজন পাঠক তা ধরিয়ে দিয়েছেন এবং এ ধরনের অসত্য তথ্য উল্লেখ করে পাঠকদের বিভ্রান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি লিখেছিলাম, 'বেগম জিয়া বলেছেন, পদ্মা সেতু ইস্যুতে মহাজোট সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল তার প্রথম শাসন আমলেই।' এ তথ্যটি সঠিক নয়। আমার স্মৃতি আমার সঙ্গে প্রতারণা করায় এ বিভ্রান্তিটি ঘটেছে। আসলে শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের শেষ বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান পেয়েছিল, যা পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট আমলেও অব্যাহত ছিল। এ ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত, এ জন্য আমি লজ্জিত এবং পাঠকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার প্রায় ৪২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এ ধরনের ভ্রান্তি আগে ঘটেছে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে তথ্য উল্লেখের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকার বিষয়টি আমার সবসময় মনে থাকবে। যেসব পাঠক বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ক. মাননীয় সম্পাদকের কাছ থেকে সবিনয় অনুমতি নিয়ে এখানে নিজের ঢোল নিজেই একটু পেটাতে চাই। আশা করি, পাঠক এতে বিরক্তবোধ করবেন না। আমি মনে করি, এটার প্রয়োজন আছে এ জন্য যে, পাঠক কার লেখা পড়ছেন, তার এটা লেখার যোগ্যতা আছে কিনা, সেটা জানা থাকলে লেখাটি সম্পর্কে মতামত গঠনে সহায়ক হয়। লেখক-পাঠকদের যোগসূত্র বা যোগাযোগ একটি বড় ব্যাপার।

লেখার জগতে আমি কোনোভাবেই নবাগত নই। ১৯৭০ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক 'আজাদ'-এর মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করে পরবর্তী সময়ে একাধিক দৈনিক-সাপ্তাহিক কাগজে কাজ করেছি। ১৯৮৪ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রকাশিত হলে ওই কাগজে তারিক ইব্রাহিম ছদ্মনামে রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখেছি, কাগজটি স্বৈরাচারী এরশাদ নিষিদ্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত। তখন সেসব রাজনৈতিক প্রতিবেদন অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে সময় সংবাদপত্রে রাজনৈতিক বিষয়ে খুব বেশি কেউ লেখালেখি করতেন না। তারপর ১৯৯২ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন নতুন পর্যায়ে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ১৯৯৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক 'একতা' (তখন এই সাপ্তাহিকটি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল এবং এর সম্পাদক ছিলেন আজকের 'প্রথম আলো' সম্পাদক মতিউর রহমান) পত্রিকায় কাজ করেছি টানা প্রায় ১০ বছর। নিজের সম্পাদনায় বের করেছি সাপ্তাহিক 'চলতিপত্র'। দৈনিক 'মাতৃভূমি' সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছি দুই বছরের কিছু বেশি সময়। সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম প্রায় পাঁচ বছর। এ ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে অসংখ্য কলাম লিখেছি এবং লিখছি দৈনিক সংবাদ, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, সমকাল, চট্টগ্রামের সুপ্রভাত বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক দেশবন্ধু। এ সময় ঢাকাসহ আরও অনেক পত্রপত্রিকায়। প্রথম আলোতেও দু-চারটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার অবস্থান একেবারে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো মোটেও নয়।

খ. ৭ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত আমার লেখার ভুল তথ্যটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন সম্মানিত পাঠক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, 'মিথ্যা তথ্য দিয়ে জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীর মতো জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন।' বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় একজন লিখেছেন, 'তাদের দুর্নীতির কথা সবাই জানেন।... এখনো প্রমাণ করতে পারেনি।' একজন লিখেছেন, 'আমরা এখন খালেদার দুর্নীতির কথা শুনতে চাই না, কারণ তিনি ক্ষমতায় নেই।' আরেকজন লিখেছেন, 'একজনের দোষ ধরবেন, আরেকজনের কথা কিছু বলবেন না, তা কি হয়।' এ রকম আরও কিছু মন্তব্য ই-মেইলে পেয়েছি। যারা লেখাটির প্রশংসা করেছেন তাদের বক্তব্যগুলো স্বাভাবিক কারণেই উল্লেখ করলাম না। সব পাঠক আমার লেখা পড়ে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, সেটা হতে পারে না। সবাই আমার মতকেই সমর্থন করবেন, সেটাও প্রত্যাশিত নয়। যারা মতামত জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আত্দপক্ষ সমর্থন করে দু-একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি, এতে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে বিবেচনা করে। প্রথমত, স্পষ্ট করে আমি এটা বলতে চাই যে, কাউকে বিভ্রান্ত করার মানসিকতা থেকে আমি কখনোই কিছু লিখি না। আমার বিবেচনায় যেটা সঠিক মনে করি_ তা কার পক্ষে বা বিপক্ষে যায়_ সেটা একেবারেই মনে না রেখে তাই পাঠকদের সামনে তুলে ধরি। কেউ যদি বলেন দালালি করি, তবে সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বিবেকের। ৭ জুলাইয়ের লেখায় তথ্যগত একটি ভুল ছিল, কিন্তু তাতে আমার মূল বক্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে আসেনি বলেই বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে দেশে দুর্নীতি হয়নি, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি, তা কিন্তু নয়। সে সময় সংবাদপত্রে বিএনপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। কিন্তু সরকার সেগুলো কানে নেয়নি এবং পদত্যাগ করার গরজবোধ করেনি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তখন দেশে আন্দোলন গড়ে উঠলে বেগম জিয়া বলেছিলেন, 'শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হয় না।' বেগম জিয়া বর্তমানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলছেন এবং বর্তমান সরকারকে কথায় কথায় পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছেন বলেই আমি বেগম জিয়ার শাসনামলের কথা যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছি। আমি কোথাও বলিনি যে, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি হচ্ছে না, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, সে কথাও আমি বলিনি। একটি সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়, এ সময়কালে সরকারকে গদিচ্যুত করার অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। মেয়াদকালে সরকার যদি জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, ঘুষ-দুর্নীতি দূর না করে তার বিস্তার ঘটায়, সুশাসনের বদলে দেশবাসীকে দুঃশাসন উপহার দেয়, তাহলে পরের নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমেই তাদের বিচার করবে। সরকারবিরোধিতার নাম করে বিদ্বেষ প্রচার করা হলে রাজনীতিতে অযথা উত্তেজনা ছড়ানো ছাড়া তাতে অন্য কোনো লাভ হয় না। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবে, ঘুষ-দুর্নীতির কথা অবশ্যই তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরবে। কিন্তু ঢালাও অভিযোগ উত্থাপন করা কি যুক্তিযুক্ত? বিএনপির আমলের কিংবা বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রমাণ হয়নি_ এটা যদি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে কি প্রশ্ন ওঠে না, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কি প্রমাণ হয়েছে? কেউ হয়তো বলবেন, কেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করার ঘটনাই তো বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বড় প্রমাণ। বিষয়টি কি সত্যি তাই? বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পদত্যাগ দাবি অবশ্যই যৌক্তিক হতো, যদি অতীতে এ ধরনের নজির থাকত। বেগম জিয়ার শাসনামলে সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বলে কি বেগম জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন? বলা হতে পারে, তখন যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল এবং অর্থায়ন বন্ধ রেখেছিল, এটা তো তখন এবারের মতো এত জানাজানি হয়নি। হ্যাঁ, বিষয়টি তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। সেটা কি খুব ভালো কাজ হয়েছিল?

গ. খালেদা জিয়ার আমলে দুর্নীতি হয়েছে বলেই শেখ হাসিনার আমলেও দুর্নীতি হবে_ এটা অবশ্যই কোনো যুক্তি হতে পারে না। বর্তমানের অন্যায়কে জায়েজ করার জন্য অতীতের অন্যায়ের তুলনা করা অবশ্যই উচিত নয়। অতীত দুর্নীতি বর্তমান দুর্নীতির পক্ষের যুক্তি হতে পারে না_ এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বেগম জিয়ার শাসনামলের দুর্নীতির সমালোচনা করে বা বড় করে দেখে শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতির বিষয়টিকে ছোট করা বা আড়াল করার যে কোনো চেষ্টা-অপচেষ্টাকেই আমি ঘৃণা করি। তবে আমার কথা হলো, আমাদের রাজনীতিবিদদের 'ডবল স্ট্যান্ডার্ড' বন্ধ হওয়া উচিত। ক্ষমতায় গিয়ে এক ধরনের আচরণ, আবার বিরোধী দলে থাকলে আরেক_ এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না। বেগম জিয়া বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনার সরকারকে চোর বলবেন, আবার শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থেকে বেগম জিয়ার সরকারকে চোর বলবেন_ এ ধারা আর কতদিন চলবে? এ বৃত্তবন্দী রাজনীতি আমাদের আর কতদিন দেখতে হবে? রাজনীতির এই যে বিষাক্ত বৃত্ত সেটা ভাঙা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর সে জন্যই কেবল সরকারের সমালোচনা নয়, বিরোধী দলেরও সমালোচনা করাটা আমি প্রয়োজন মনে করি। সরকারকে সঠিক পথে আনতে হবে আর বিরোধী দলকে সঠিক পথে আনার দরকার নেই বলে যারা মনে করেন, তাদের সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে।

ঘ. আমি মুক্ত মনে বাহ্বা দিতাম, যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগম জিয়া তার সরকারের সময়কার দুর্নীতি-অনিয়মের কথা স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতেন, অতীতে আমাদের সময় দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা ক্ষমতায় গেলে আর তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার আমল থেকে শেখ হাসিনার সময়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির কারণে যদি পরবর্তী নির্বাচনে ভরাডুবি হয় এবং বেগম জিয়া তথা ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে কি দেশে দুর্নীতি কমবে? বেগম জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-বাড়াবাড়ির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল, তা কি অস্বীকার করা যাবে? যাদের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হয়েছিল? বেগম জিয়া কি এখন দেশের মানুষকে এই নিশ্চয়তা দেবেন যে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক আছে, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না? বেগম জিয়া ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে একটি সৎ সরকার গঠন করে দেশকে সুশাসন উপহার দেবেন_ এটা বিশ্বাস করা হবে কিসের ভিত্তিতে? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও সরকারের অংশ। বেগম জিয়া তার সৎ সহকর্মীদের নিয়ে একটি ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে দেখান না কেন কারা তার দুর্নীতিবিরোধী সরকারে নেতৃত্ব দেবেন? ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি করবেন না, এ প্রতিশ্রুতি দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে দুর্নীতিবাজদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বেগম জিয়া যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে দেশের মানুষ বেশি উৎসাহবোধ করবে। কথায় আছে, 'আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও।'

ঙ. পাঠকদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ, 'জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীরা' যাতে আপনাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। একই সঙ্গে চোখ-কান খোলা রাখবেন 'জ্ঞানপাপী বিএনপি দালাল বুদ্ধিজীবীদের' ব্যাপারেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তারেক রহমানকে 'বিনয়ী, সদাচারী, নির্লোভ ও মিতব্যয়ী' বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। একে তারেক রহমানের যথার্থ মূল্যায়ন বলে দেশের শতকরা কতভাগ মানুষ মনে করে?

শেষ করব, '১৬ কোটি জনগণের একজন' হিসেবে উল্লেখ করে যে পাঠক বন্ধু দীর্ঘ ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন, তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি লিখেছেন, '১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৫.৫ কোটি জনগণ বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারের কিছু কিছু প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আমলার বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে জনকল্যাণকর প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে।' সবই ঠিক আছে, তবে ১৫.৫ কোটি মানুষ এটা মনে করে_ এ পরিসংখ্যানটি পাঠক কোথায় পেলেন? এমন মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনা করলেই কি অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে? পাঠক অবশ্য যথার্থই বলেছেন, 'আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির এই করুণ দশার জন্য ভণ্ড, অযোগ্য রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের পাশাপাশি কুমতলবধারী সাংবাদিক তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও কম দায়ী নন।' পাঠকের এ বক্তব্যের সঙ্গে শতভাগ একমত পোষণ করে আমি বলতে চাই : আসুন আমরা রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা না করে অর্থাৎ দলীয় আনুগত্য পরিহার করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখি এবং সবাই মিলে সোচ্চার কণ্ঠে দুর্নীতিকে 'না' বলি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments:

Post a Comment