Friday, July 27, 2012

আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল:পরাগ ধর

'৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষী পরাগ ধরের (৪৮) জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালে সাকা বলেন, আমি আমার বাবার প্রতিনিধিত্ব করছি। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালের এক কথা প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন দেখেনতো তিনি ডকে আছেন কিনা_ সাক্ষীকে উদ্দেশ করে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন প্রশ্ন করলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী তো তার জবানবন্দিতে একবারও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম বলেননি, বলেছেন তো ফজলুল কাদের চৌধুরীর কথা, তাহলে তো তাকে এখন কবর থেকে তুলে এনে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা দরকার। ট্রাইব্যুনালের এ কথার উত্তরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, আমি তো আমার বাবারই প্রতিনিধিত্ব করছি।
এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরকে বসতে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে জেরা করতে বলেন। ৯ম সাক্ষীর জেরা শেষে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করে দেন।

এর আগে সাক্ষী পরাগধর তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম পরাগ ধর (৪৮)। আমার পিতার নাম মানিক ধর। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল সাত বছর। আমি বিএ পাস করেছি। বর্তমানে একটি ব্যবসা করি। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে যুদ্ধ চলাকালে মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। শুনেছি তখন লুটতরাজ হতো। রাজাকাররা বিভিন্ন ঝামেলা করত। জগৎমল্ল পাড়া, মধ্য গহিরা, সুলতানপুরে ও কুন্ডেশ্বরী এলাকায় আল বদররা গণহত্যা শুরু করেছিল বলে আমি শুনেছি। সাক্ষী পরাগ বলেন, ওই খবর পাওয়ার পরে আমার মা-বাবা ও ভাইসহ আগরতলা হয়ে কলকাতা চলে যাই। ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশে ফিরে আসি। সাক্ষী বলেন, আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল। তা রাজাকার, আল বদর বাহিনীরা লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের আসবাব, দরজা কিছুই ছিল না। আমি শুনেছি ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটেছিল।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি পেশ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (৬২) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. সালেহ উদ্দিন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৭ মে ১০৫ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন শেষ করেছে প্রসিকিউশন। গত ৪ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি ঘটনায় ৭২টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত বছরের ৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ ১৮টি সিডি উপস্থাপন করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল

No comments:

Post a Comment