Tuesday, July 24, 2012

‘কবি মেহেরুন নেসাকে হত্যা করেন কাদের মোল্লা’ - কাজী রোজীর সাক্ষ্য



ঢাকা, ২৪ জুলাই: জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন কবি কাজী রোজী। একাত্তরে নিহত কবি মেহেরুন নেসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন কাজী রোজী। তারা একই এলাকায় থাকতেন।কবি রোজী এ মামলায় ৪র্থ নারী সাক্ষী। এর আগে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৩ জন নারী ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দেন। এছাড়া মামলায় প্রথমে দুইজন পুরষ মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিচারপতি বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এ কবি রোজী বলেন, ১৯৭১ সালে মিরপুরে অবাঙালি ও বিহারিরা বাঙালিদের ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করত। এ থেকে রেহাই পেতে একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তিনি সেই কমিটির সভাপতি ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কবি মেহেরুন  নেসা সদস্য ছিলেন।

কাজী রোজী বলেন, ২৫ মার্চ সকালে তিনি খবর পান তাঁর ও মেহেরুন নিসার বাসায় হামলা হতে পারে। তিনি মেহেরুন নেসাকে খবর পাঠান ও নিজে মিরপুর থেকে চলে যান। কিন্তু পরিবার নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় মেহেরুনরা মিরপুরেই থেকে যান

আসামির কাঠগড়ায় কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে কাজী রোজী জবানবন্দিতে বলেন, এরপর ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মাথায় সাদা বা লাল পট্টি বেঁধে কবি মেহেরুন নেসার বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা মেহেরুন, তাঁর মা ও দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।জবানবন্দিতে কবি রোজী বলেন, গুলজার নামের একজন অবাঙালি ও আরেকজন বিহারির কাছে তিনি মেহেরুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার নির্মম বর্ণনা শোনেন।

জবানবন্দি শেষে কাজী রোজীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক। আগামী বৃহস্পতিবার তাকে আবার জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধের ঘটনায় গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, গণহত্যা, আগুন লাগানো, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ৬টি অভিযোগে কাদের মোল্লার বিরদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৩(১), ৩(২)(এ)(এইচ) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, কবি মেহেরুন নেসা সহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পল্লবীর আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাত জনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খান বাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরো দু’টি গ্রামের অসংখ্য লোককে হত্যার ঘটনা।

১৯৭১ সালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর জামায়াতের  সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। 
 মামলাটি করেছিলেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ খান। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশন প্যানেল। ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করলে গত  ২০ জুন মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ৩ জুলাই থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ  

No comments:

Post a Comment